#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 21
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
…….
,

তুর আর সানি বাইকে উঠে বাইকে স্টার্ট দিল.।। তীব্র ওখানে পৌছানোর আগেই ওরা চলে গেল। কিন্তু তীব্র ওকে ধরার জন্য ওর পিছু নিল…. ওর মাথায় একটাই চিন্তা আজকে তুরকে পেলে তীব্রকে ছেড়ে আসার শাস্তি ওকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেবে।। তবে তীব্রের রাগটা বাড়িয়ে দিচ্ছে তুরের সাথে থাকা ছেলেটা….

তীব্র ওদের পিছু নিতে থাকে। কিন্তু সানি বাইকে যাওয়ার কারনে একটা ছোট রাস্তার মধ্যে ঢুকে যায়। যার কারনে তীব্র আর যেতে পারে না। বাইরে নেমে কিছু করবে তার আগে তো দের বাইক মিলিয়ে যায়।

তীব্র গাড়ি থেকে নেমে ওদের খুজতে থাকে কিন্তু পায় না। যার কারনে ও রেগে গিয়ে গাড়িতে প্রচন্ড জোরে ঘুশি মারে।

— আর কতদিন আমার থেকে লুকিয়ে থাকবে তুমি তুর। ধরা তো তোমাকে পরতেই হবে। সে আজ নাহক কাল। আমি যতটা না ছটফট করছি তার হাজার গুন বেশি হবে তোমারটা….

তারপর তীব্র রিদ্ধকে ফোন করে…

— হ্যালো স্যার….

— তুর এই শহরেই আছে। পুরো শহর টা এক করে হলেও তুরকে খুজে বের করো।

— কিন্তু আপনি এতটা সিউর হলেন…..

— কারন আমি নিজ চোখে তুর কে দেখেছি। এখন যা বলছি তাই করো।

ফোনটা কেটে দিল তীব্র….
,
,
,

,
,
,,

,
,
— গিয়ে কি বলব তায়ান…

— জানিনা। কিন্তু সান্তনা দেওয়ার হলেও তো আমাদের যেতে হবে। ওনারা এক বুক আশা নিয়ে বসে আছে শুধুমাত্র তুরকে খুজে পাওয়ার জন্য।

তোয়া আর তায়ান দুজনে তুরের বাড়ি এসেছে। প্রায় ৬ মাস হয়ে গিয়েছে তুর নিখোঁজ । ওরাই ওনাদের আশা দিয়ে রেখেছেন। তুরকে পাওয়ার আশাই ওনারা এখনো বেচে আছে। তুরের বাবা তাও নিজেকে শক্ত রাখতে পেরেছে নিজের কষ্ট টা প্রকাশ করতে পারে না। আর পারবেই বা কি করে ওনার স্ত্রী শয্যাশায়ী। মরে বেচে আছে বলতে যা বোঝায় আরকি। সম্পুর্ন ভাবে অসুস্থ। তুরকে ফিরে পাবেন বলতে গেলে এই আশায় নিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। প্রতিবার তোয়া আসতেই তুরকে পাওয়ার আশা করেন কিন্তু সেই আশা নিমিষেই মিলিয়ে যায় যখন শোনে তুরকে পাওয়া যাচ্ছে না।

— জানি তোয়া। কিন্তু আমাদের এছাড়া আর কিছুই করার নেই। এটা তুমিও ভালো করেই জানো। আমরা কোন দিক দিয়ে ওকে খোজা বাকি রাখিনি৷

কথাটা শুনে তোয়ার মত শক্ত মেয়েও কান্নায় ভেঙে পরে। তায়ান ওকে বুকে জড়িয়ে নেয়।

— প্লিজ তোয়া তোমাকে শক্ত থাকতে হবে।।তুমি যদি এভাবে ভেঙে পরো তাহলে ওনাদের কে সামলাবে। ওনাদের মনের জোর ত তুমি তোয়া।

— আমি যে ক্লান্ত। ৬ মাসে ওকে খোজার জন্য আমি কম চেষ্টা করিনি।

— আচ্ছা এবার ভিতরে চলো…

_- আচ্ছা তায়ান আমরা যদি ওনাদের আমাদের সাথে আমার বাড়ি নিয়ে যাই ভালো হবে না। এখন তো চাচা অফিসে যান না। ওখানে সবার সাথে থাকলে যদি মন ভালো হয়….

— আমারো তাই মনে হয়।

ওরা ভিতরে যায়….

ওদের দেখে তুরের মা কান্নায় ভেঙে পরে। তুরের কথা জিজ্ঞেস করতেই কিছু বলতে পারে না ওরা। সামনে কিছু না বললেও লুকিয়ে চোখে পানি ফেলতে থাকে তুরের বাবা।

তারপর তোয়া ওনাদের নিজেদের সাথে নিয়ে যেতে যায়। কিন্তু ওনারা রাজি হয় না।একপ্রকার জোর করেই তোয়া আর তায়ান ওদের নিজেদের সাথে নিয়ে যায়।
,
,
,
,

,
,

,
,
,

ওদিকে তীব্র অনেক দিন পর একটা দরকারী কাজে হাসপাতালে গেছে। অনেক দ্রুত ও নিজের কেবিনে গিয়ে কিছু একটা নিয়ে বেড়িয়ে যায়। তীব্র কতটা টেনশনে ছিল সেটা অরুনের নজর এড়ায়নি। তীব্র বেড়িয়ে যাওয়ার পর অরুন ওর রুমে ঢোকে। তারপর তীব্রের কাগজপত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে থাকে। কিন্তু তেমন কিছুই খুজে পায় না। বড্ড বিরক্ত লাগে অরুনের। ও কেবিন থেকে বেড়োতে যাবে ঠিক তখনি আসে তুষা। ওকে দেখে বেশ ঘাবড়ে যায় অরুন….

— তুমি এখানে কি করছ অরুন? 😡

— তোমার ড. রায়হান কি করতে এসেছিল তাই জানতে এসেছি৷

— সমস্যা কি তোমার অরুন? সবসময় তুমি ওর পিছে পরে থাক কেন?

অরুন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

— কিহল কথা বলছ না কেন? ওর সাথে তোমার সমস্যা কি? তুমি আমাকেও ওর পাশে সহ্য করতে পারো না। কেন অরুন?

— কারন আমি চাই না ওর জন্য তোমার কোনো ক্ষতি হোক।

— enough is enough arun… তুমি আমাকে ভালোবাস তারমানে এটা নয় তুমি ওর ব্যাপারে বাজে কথা বলতে পার। আমরা সবাই একসাথে কয়েক বছর যাবত আছি আর তুমি…

— হ্যা। আর তাই আমি তোমার চেয়ে ওকে ভালো করে চিনি। ও যে কি করতে পারে তার আমি ধারনাও করতে পারি না। আর তার জন্যই আমি তোমাকে ওর কাছাকাছি দেখতে পারি না।

[ তুষাকে শক্ত করে ধরে। এটা দেখে তুষা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়। তারপর অনেকটা অবাক চোখেই ওকে বলে ]

— পাগল হয়ে গেছ তুমি অরুন। ও তোমার চেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে বলে হিংসা করো তুমি ওকে। আর তাই ওকে সহ্য করতে পারো না।

কথাটা বলে বেড়িয়ে যায় তুষা। অরুন ওকে ডাকলেও ও শোনে না।

— তোমরা ওকে এখনো চিন্তে পারোনি তাই এমনটা বলছ যদি জানতে তাহলে এমনটা বলতে পারতে না। ও নিজে যতটা নরমাল দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন আমি জানি ও নরমাল নয়। একটা নরমাল মানুষের ভাবনা চিন্তে, বিহেভ এরকম হবে না। কখনো ওকে খারাপ কিছু করতে দেখেনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস ও যদি খারাপ কিছু করে সেটা চরম ভয়ংকর। কারন ওই মানুষটার মনে মায়া মমতা ভালোবাসা বলতে কিছু সেই। যেটা আছে সেটা হচ্ছে লোক দেখানো কিছু আবেগ.….

তখনি সেদিনের কথা মনে পরে যায়। তখন তীব্র আর অরুন দুজনেই মেডিকেলে নতুন। তখনি একটা লাশ নিয়ে আসা হয়। লাশটার পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল তা বলার বাইরে। যেকোন মানুষের পক্ষে সেটা দেখা জঘন্য একটা ঘটনা। সেই লাশটার জন্য অরুন নিজেরে গা গুলিয়ে প্রায় অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেদিন তীব্রকে দেখে বড্ড অবাক হয়ে গিয়েছিল অরুন। কোনো রকম বাচ বিচার ছাড়া ও লাশটার কাজ গুলো দেখেছিল যেন ওর কোনো প্রভাব পরেনি।

কোন স্বাভাবিক মানুষ এতটা সহজে এটা করতে পারে কিনা জানা নেই অরুনের। অদ্ভুত লাগছিল। কিন্তু তারপর থেকে ও তীব্রের কাজ গুলো খেয়াল করত। আর এই কয়েকবছরে ওর তীব্রের ব্যাপারে যতটা বুঝতে পেরেছে ও নিজে ডাক্তারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাতে ও স্বাভাবিক নয়। ওর প্রতিটা কাজ সবার চেয়ে আলাদা। কিন্তু সাধারন মানুষ এরকম ভাবতে পারে কিনা জানেনা। এমনকি সবার অজান্তেই ও তীব্রের ব্রেনের কন্ডিশন পরীক্ষা করেছে। তীব্রের ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল ঠিক তখন…..

আর তার পরীক্ষার রেজাল্টে ও সত্যি অবাক। কারন ওর ধারনাই সঠিক। তীব্রের ব্রেনের কন্ডিশন স্বাভাবিক মানুষের মত না। অনেকটা ভিন্ন। আচরনে প্রকাশ না পেলেও তীব্রকে ওর সত্যি একটা সাইকো মনে হয়………

কিন্তু তীব্রের কোনো কাজের সাথে মিল খুজে পায় না। ওর সমস্ত কাজ এতটাই নিখুঁত হয়। যার থেকে কোন কিছু বের করা অরুনের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

সবকিছু ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অরুন
।ফ্রেন্ড হিসেবে যেমন ওকে ভালোবাসে তেমনি ওর এসব কথা ভাবলে শিউরে ওঠে ও….

,
,

,
,
,

,
সারাটা দিন সানির অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে তুর। পুরো দিন বাইকে করে ঘুরিয়েছে। সানি রেগে কিছু বলতেও পারে না। কিছু বললেই মায়ের ধমকি দেখায়। সানির ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে এখানে পুতে রেখে বাড়ি চলে যায়। কাজটা এত সহজ নয় এটা ভেবেই পিছিয়ে যায়।

রাতের দিকে তুরকে নিয়ে বাড়ি ফেরে সানি। বাড়ি ফিরতেই তুর ফ্রেশ হতে চলে যায়। আনি ওর মাকে ডাকতেই ওর মা বাড়ি নেই। দারোয়ানের কাছ থেকে জানতে পারে ওনার কোন বান্ধবী হাসপাতালে তাই আজ ফিরবে না। এইটা শুনে একটা শয়তানি দেয় সানি। আজকে এই মেয়েকে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াবে সানি কি জিনিস। অনেক জালিয়েছে। সব শোধ তুলবে। ফ্লাটে গিয়ে মায়ের রুমে ঢুকেই দেখে ও ঘুমিয়ে গেছে। এটা দেখে আরো বেশি রেগে যায় ও। ইচ্ছে করছে হাতের লাঠিটা দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেই। কিন্তু পরে আবার ভাবে থাক ঘুম থেকে উঠলে নাহয় মারবে।

তাই ওর ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় পাশের সোফায় বসে পরে সানি।

,
,
,
,
,
,
,
,
,
এদিকে তুরকে না পেয়ে পাগলের মত করছে তীব্র। না চাইতেও কি করছে নিজেও জানে না। তুরকে একবার দেখার জন্য যেন মরে যাচ্ছে । মনে হচ্ছে এর চেয়ে তুর যদি ওকে মেরে ফেলতে চাইত তাহলে হয়তো বেশি ভালো হত ওর জন্য। আর যাই হোক এই অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না। এই যন্ত্রণা থেকে বাচার জন্যই তুরকে নিজের বন্দীনী করে রেখেছিল। কিন্তু তুর যাওয়ার পর তা যেন আরো বেড়ে গেছে। রিদ্ধ বা অন্যকেউ ভয়ে ওর সামনে আসছে না। তুর যাওয়ার সময় ওর ঘুমগুলো সাথে নিয়ে চলে গেছে।

তীব্র যেখানে তুরকে আটকে রেখেছিল নিজের বাড়িতে ফাকা রুমে। সেই রুমেই ওর রাত গুলো কাটছে। দেয়াল গেশে বসে সিগারেট টানছে তীব্র। তুরের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো যত মনে পরছে ততই যেন হৃদয়ের ক্ষতটা আরো গভীর হয়ে উঠছে। সিগারেটের ধোয়ায় বদ্ধ রুমে নিজের ফুসফুসকে পুড়িয়ে চলেছে ও। আর অঝোরে পানি পরছে দুচোখ বেয়ে। মদেও যখন নেশা হলো না তখন একগাদা ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিল । আর বসে থাকতে পারল না। এতগুলো পিল খেয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই মাটিতে লুটিয়ে পরল। চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। নেশা হয়ে গেছে কিন্তু সামান্য টুকু ঘুম নেই চোখে। তুর যে শুধু বন্দীনী ছিল না। ওর মায়াবী নিষ্পাপ মুখটা ওর ঘুমের কারন ছিল। যা এখন আর নেই।

উপুড় হয়ে মেঝেতে থাকতে পারল না। কাশিতে বুক ফেটে যাচ্ছে। সোজা হয়ে আধো চোখ মেলে উপরে দিকে তাকাল তীব্র । দুচোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। শুন্যতায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওর মা যখন মারা গিয়েছিল ঠিক তখনি শুধু এমন লেগেছিল। আর আজ লাগছে। মাঝখানে কতগুলো বছর কেটে গেছে হিসেব নেই। মায়ের যাওয়ার পর তায়ান ওকে সামলেছে কিন্তু বাচার ইচ্ছে জেগেছে ৩ মাস তুরের কাছে থাকার পর। ৩ মাস ওকে আটকে রাখলেও কখনোই মনে হয়নি ওর জন্য এমন লাগবে। ৩ মাস পর বুঝতে পারে ওকে শুধুমাত্র নিজের বন্দীনী করতে চায়না তীব্র
।বরং নিজের করে চায় আর তাইত তুরের সাথে নিজেকে জরাতে দুবার ভাবেনি। কিন্তু তীব্রের সাজানো আশা মুহুর্তেই শেষ করে দিল।
,
,
,

,
,

,
,
,

,
ওদিকে তুর ঘুমের ঘোরে এক নাগাড়ে বলে চলেছে…

— আমি আপনার সাথে থাকতে চাইনা। আপনি শুধু আমাকে কাদান। আমি চাইনা আপনাকে। ভালোবাসলেও চাইনা। ছেড়ে দিন আমাকে যেতে দিন….

তুর যখন এসব আওরাসছিল সানির ঘুমটা ভেঙে গেল। তুরের উঠার আশায় বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পরেছিল নিজেই জানে না। তুরের কথায় ঘুম ভেঙে গেল। তুর কি বলছে বুঝার জন্য তুরের কাছে গেল। তুরের মুখের কাছে কান পাতল। কিন্তু আবছাতে কি বলছে স্পষ্ট বুঝল না। শুধু মনে হলো ও কাউকে দুরে সরিয়ে দিতে চাইছে।

সানি বিরক্ত হয়ে উঠে যেতে চাইল তখনি তুরের দিকে নজর লাগল। হঠাৎ মনের মাঝে শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল। একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ও তুরের বেশ খানিকটা কাছে গেল। হঠাৎ নিজের উপর গরম নিশ্বাস পেয়ে হুরের ঘুমটা ভেঙে গেল। ও চোখ খুলে তাকাতেই সানিকে নিজের খুব কাছে দেখতে পেল। ও চিতকার করতে গেলেই সানি ওর মুখ চেপে ধরে….

— কিহল জান চিতকার করছ কেন? আমি না তোমার বয়ফ্রেন্ড। বয়ফ্রেন্ড কাছে আসলে বুঝি এমন করতে হয়….

তুর ভয়ে চুপসে গেছে ।আসেপাশে আন্টিকে দেখতে পাচ্ছে না। কান্না করেই যাচ্ছে….

— হুসস.. একদম চুপ। নাহলে কিন্তু মেরেই ফেলব…

— প্লিজ এমন করবেন না। আমার কাছে আসবেন না।

কাদতে কাদতে দুরে সরতে চাইল কিন্তু সানি ওর হাত বিছানায় চেপে ধরল…

— তা কেন গো? যাকে বিএফ বিএফ করে মর সে কাছে আসলে দুরে যেতে কেন বলছ….

বলেই তুরের দিকে এগিয়ে যায়। তুর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা অন্য দিকে ফিরে খুব জোরে একটা চিতকার করে…

— তীব্র….. আপনি কোথায়…??

তুরের চিতকার শুনে সানি ওকে ছেড়ে দেয়।আর তুর গুটিশুটি মেরে বিছানার এক কোনে বসে কাপতে থাকে….. এইটা দেখে পানি গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। তুর না ধরলে একটা ধমক দেয়.. আর তুর সাথে সাথে এক নিমিষেই পানিটা খেয়ে নেয়। সানি ওর হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে টেবিলে রেখে আবার গিয়ে সোফায় বসে হাত ডলতে থাকে। রাগে গা জলে যাচ্ছে। আর ওদিকে তুর কাদতে থাকে….

— আরে ও মিস ড্রামা কুইন তারাতারি কাদুন আমার কিছু প্রশ্ন আছে… 😡😡

কিন্তু তুর কেদেই চলেছে…এটা দেখে সানির রাগ আরো বেড়ে যায়।

— মাইয়া তোরে তো আমি… [ যেই লাঠিটা নিয়ে এসেছিল সেই লাঠিটা নিয়ে তুরের কাছে যায় ] ওই কানদা থামা নাইলে আজকে…. সালা তুই আমারে যত প্যারা দিছোস আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড কে আমি এতটা সহ্য করছি কিনা জানিনা।। কিরে বলবি..…

আবার মারতে গেলে তুর এবার ভ্যা ভ্যা করে কেদে দেয়।

— সালার এই মাইয়া গুলার সমস্যা কোথায়? কোনো কথা সোজা ভাবে শুনতেই চায় না।। ওই থাম…. থাম… বলছি😡😡

তুর এবার কিছুটা শান্ত হয়। এটা দেখে সানি চেয়ার টেনে ওর সামনে বসে…

— এবার বল তোর নাম কি? আর এই তীব্রটাই বা কে? আর মরার জন্য বিয়ের সাজে আমার গাড়ির নিচে আসলি কেন? জানিস তুই মরলে কি হইত….😡😡 কিরে বল….

তুর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

— এই দেখ আমি জানি তুই নাটক করছিস। তোর মেমোরি ফিরে এসেছে। কারন যতই তুমি আমারে বিএফ বিএফ করোনা কেন? আমারে জালাইয়া মারলেও আমার হালকা টার্চ ও করোনাই।

এবার তুর মুখ খুলল…

— সরি সানি ভাইয়া…

— its ok… কিন্তু ভাইয়া টাইয়া বলিস না। কোনো মাইয়া বলে না। তাই শুনতে কেমন জানি লাগে…. আচ্ছা এবার বল তুই কে, আর এই তীব্র কি তোর বিএফ, আর বিয়ের দিন কি পালাইছিস নাকি…. বাড়ি না গিয়ে আমার মাথা খাস কেন?

এটা শুনে তুর কাদো কাদো মুখ করে বলে..

— আমার নাম তুর। আসলে আমার বাড়ির পাশে একটা বখাটে গুন্ডা আমাকে বিয়ে করতে চাইত আমি রাজি হইনি। তাই ৬ মাস আগে আমাকে কিডন্যাপ করে। আমাকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে চায়। আমি রাজি হইনাই তাই আটকে রাখছে। তাই সেদিন বাধ্য হয়ে বিয়েতে রাজি হওয়ার কথা বলে সুযোগ বুঝে পালাই আর তখনি আপনার গাড়ির সামনে….

— তা তোর সাথে খারাপ কিছু করছিল নাকি?

*– আরে নাহহ… বেচারা এইদিক থেকে ভালো ছিল। আমি রাজি হওয়াতে এত খুশি হইছিল যে আমি কখন পালাইছি বুঝতেই পারে নাই।

— ও তারমানে বেচারা গুন্ডারে ছ্যাকা দিলি। বেচারা…

— ইসস ও যে আমারে ৬ মাস আটকাই রাখছে. তার বেলায়… [ ভেংচি কেটে ]

— এই তুই আবার কথা কস.… [ আবার মারতে যায় ] মাইয়া বদমাইশ একটা পোলারে ধোকা দিয়া মজা হইতাসে। যদি আটকাইয়া না রাখত আমি নিজে গিয়া তুইলা দিতাম। সে যাই হোক… এই তীব্র কে তোর বিএফ….

— না…

— তাইলে কি?

তুর চুপ…

— ওই চুকলির বাচ্চা কথা ক…

— এই চুকলি কিসের নাম😡 দুনিয়ায় কোনো নাম ছিলনা?

— আরে ছ্যামরি তোরে পারলে বুড়িগঙ্গায় ডুবাই দেই আবার নাম। সে যাই হোক আমি চুকলি ডাকতাম…. এবার বল তীব্র কে?

— আমার ক্রাশ… 😥😥 আর বলবেন না আমি ওই ছেলেটার জন্য পাগল ছিলাম। যেদিন ব্যাটারে প্রোপোজ করমু সেদিন গুন্ডা আমারে তুইলা নিয়া গেছে গা😭😭

-_ ও থাম তাইলে… আচ্ছা তাইলে আমার বাসায় কেন?

— আসলে আমার বাসায় গেলে যদি জাইনা যায়। তাই আপনার বাসায় থেকে গেলাম। প্রথমে ভয় লাগলেও আন্টিকে দেখে নিশ্চিন্ত হলাম।

— সেটা ঠিক… কিন্তু তোকে আমার বাসায় রাখা যাবে না। নাইলে আমার মা আমার বাচ্চা কাচ্চার মা তোকে বানাই ছাড়ব। যা আমি চাইনা। যাই হোক আমি এখন যাই…

— আচ্ছা.….

— আর ওই চুকলি…. তোর কোনো আত্নীয় স্বজন নেই যার কথা ওই গুন্ডা জানে না।।

— হুমম আমার চাচা। ওনার বাসা।

— তাইলে রেডি হো কাল দিয়া আসব।

— আচ্ছা….

সানি যেতেই তুর নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে পরল…

— সরি সানি আমি মিথ্যে বলতে চাই নি। কিন্তু সত্যিটা বলতে পারব না। আমি বাসায় গেলে তীব্র আমাকে খুজে পাবে না। সে তো হোটেল থেকে আমাকে কিনে নিয়ে গিয়েছিল। সে কি করে জানবে আমি কোথায় থাকি। কিন্তু আমি বাড়ি কিভাবে ফিরব তাই বুঝতে পারছি না। কি বলব আমি তাদের এই তাদের মেয়ে বাধ্য হয়ে নিজের সন্মান হারিয়েছে। যাই হোক আগে তোয়া আপুর সাথে কথা বলতে হবে। জানিনা বাবা মায়ের কি অবস্থা….

চোখ বন্ধ করতেই সানির তখনকার কথা মনে পরে গেল মুহূর্তে সব কিছু ধোয়াসে হয়ে গেল। ও উঠে বসে কাপতে লাগল… যে লোকটা ওর এত বড় ক্ষতি করল। ওর সন্মান নষ্ট করল। ভয়ে কিনা ও সেই লোকটাকে ডাকল আরেকজনের হাত থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য…….

কি করল না করল সেই ভেবেই রাতটা কেটে গেল।

,
,
,
,
,
,
,
,
,

সকাল বেলা তুর আর সানি সবকিছু রেডি করে নিয়েছে তখনি ওর মা আসে।

— কিরে কোথায় যাচ্ছিস ওকে নিয়ে…

পরে সানি ওর মাকে সবটা বুঝিয়ে বলল। তুর চলে যাবে ভেবে খুব কষ্ট পেয়েছে একদম নিজের মেয়ে করে রেখেছিলেন।

— নিজের মেয়ে ভেবে রেখেছিলাম। ভুলে যাস না আমাকে। মাঝে মাঝে আসিস। আর হ্যা তুই যদি চাস আমি তোর মা বাবার সাথে কথা বলব তোকে যাতে সানির বউ… আমার সানি ভালো ছেলে….

— মা…. 😡😡

তারপর ওরা বিদায় নিয়ে চলে যায়। যাবার সময় প্রচন্ড কাদে তুর নিজেও…. তারপর বিদায় দিয়ে চলে আসে….

গাড়িতে বসে….

— সানি মা জাতি কত অদ্ভুত তাইনা। নিজের সন্তানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

— ওই চুকলি এত ইমোশনাল কথা বলিস না।এমনি প্যারায় আঁছি….
,
,
,

,
,
,
,
,
,

তারপর ওরা তুরের চাচার বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়েই দরজা নক করতেই সবাই অবাক হয়ে যায় ওকে দেখে। ওর বাবা মাকে খবর দিতেই ওনারা তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় তুরকে দেখতে আসে। মেয়ের গালে কপালে অসংখ্য চুমো একে জড়িয়ে কান্না করে দেয়। তাদের সাথে তুর নিজেও কান্নায় ভেঙে পরে আজ ৬মাস বাদে বাবা মায়ের সাথে দেখা….

তখনি খুব জোরে একটা আওয়াজ হয় কেপে উঠে সবাই। শব্দটার দিকে তাকাতেই দেখে ওর চাচা মানে তোয়ার বাবা রাগে ফুসছে। আর সানি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে একবার তুরের আরেকবার ওর চাচার দিকে তাকাল….

— অসভ্য ছেলে একটা মেয়েকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য কিডন্যাপ করা। এত সাহস….

সানি আর তুর দুজনেই অবাক ওনাদের কথা শুনে। আর ননী আর নিমীকে দেখে আরো অবাক। কারন ওদের ৩ জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে ওর চাচার কথায় বুঝতে পারছে সানিকে ওরা তুরের সেই বিএফ ভাবছে।

— [ সালা ওই মাইয়ার কথার সাথে এদের তো কোনো মিল নাই। মাইয়া বলতাসে তুইলা নিয়ে গেছে আর ওনারা বলতাসে আমি পালাই গেছি। ব্যাপারটা কি? তারচেয়েও বড় কথা আমার মায়ের মত এনারা মনে হচ্ছে আমাকে জামাই ভাবছে। কিন্তু ১ম থাপ্পড় খেয়ে বুঝতে পারছি এখানে জামাই আদর কেমন হবে। কিন্তু এখন আমাকে এখন থেকে পালাইতে হবে 😴😴]
,
,
,
,

,
,
,
,
,
,
,
ওদিকে রিদ্ধ বেশ ভয় নিয়েই তীব্রের কাছে যায়….

— স্যার…

রিদ্ধের ডাকে কোনমতে নড়ে উঠে তীব্র কিন্তু সাড়া দেয় না। এটা দেখে রিদ্ধ বুকে সাহস নিয়ে বলে উঠে …

— স্যার তুরকে পাওয়া গেছে….

তুরকে পাওয়া গেছে কথাটা শুনেই তীব্রের বন্ধ থাকা রক্ত লাল চোখ জোরা মেলে তাকায়….. তীব্রের সাড়া না পেয়ে রিদ্ধ আবার বলে উঠে…

— স্যার তুর এখন ওর চাচার বাড়িতে। আর একটা ছেলে ওর ওকে দিয়ে গেছে। আর যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে ওই ছেলেটা নাকি তুরের বিএফ আর….

— কি.. [ গম্ভীর গলায় ]

— স্যার যেই ছেলেটাকে ওর বয়ফ্রেন্ড বলছে তুর এতদিন ওই ছেলেটার সাথেই ছিল। যার যেহেতু ওনারা ওই ছেলেকে তুরের বয়ফ্রেন্ড ভাবছে তাই ওনারা….

— কিহহহ…

— তুরের বি….

— এখান থেকে যাও। আর গাড়ি বের করো আমি বেরোব….

আর কিছু না বলেই রিদ্ধ বেড়িয়ে গেলো।

,
,
,
ওদিকে তুর আর সানিকে বসিয়ে রাখা হয়েছে ওরা কেন পালিয়ে গেল? যার আগা মাথাও কেউ জানে না। তুরের বাবা মা মেয়েকে ফিরে পেয়েই খুশি কিন্তু চাচা না। ওনাদের মান সন্মান নষ্ট করেছে।

— তুমি কি করো এখন…

— জি ইঞ্জিনিয়ারিং….

— পালিয়েছ ৬ মাস বিয়ে করোনি কেন?

— আসলে যাওয়ার পরদিন আমার মায়ের কাছে চুকলি মানে তুরকে রেখে একটা কাজে বাইরে যেতে হয়েছিল তাই…..

— তা বিয়ে না করে ফিরে এলে কেন?

— [ ধুর বাবা বিয়ে করব না বলেই তো আনছি। 😡😡 ] আসলে আমি তো চাইছিলাম কিন্তু তুর আপনাদের চায় তাইনা তুর… 😁😁

— হম্ম… [ মাথা নাড়ায় ]

— তাহলে এখন বিয়ে করবে তুরকে..

বেশম খায় সানি। আর তুরের তো যেন দম আটকে আসছে…..

— আসলে আমার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করতে এখনো ৬ মাস টাইম লাগবে… তো…

— আচ্ছা.

হাফ ছেড়ে বাচল দুজন। সানি কোনো মতে বেড়োয়.. এখানে এসে যা বুঝল কেউ ওকে মানুষ বলে গন্য করতে চাচ্ছে না। বেজায় রেগে গেছে ও এখনি চলে যাবে। কিন্তু তার আগে তুরের সাথে কথা বলাটা জরুরি…. কিন্তু কোথায় তুরকে পারছে না। পরে একজনের কাছ থেকে জানতে পারে তুর তোয়ার রুমে.. ও গিয়ে রুমে ঢুকতেই তোয়া হকচকিয়ে যায়।

তারপর ওকে দেখে বেড়িয়ে যায়। তুর জানালার সামনে বসে ছিল। সানি ওর কাছে যায়।

— দেখ চুকলি আমি আর পারছি না। অনেক হেল্প করেছি বিশ্বাস কর আমি আর পারব না। এরকম থাপ্পড় সিনিনের বাবাও আমাকে দেবেনা। আমি এই মুহুর্তে চলে যাব। তাই বলতে এলাম… [ চলে আসতে নেয় ]

— ধন্যবাদ সানি। আমার জন্য এতটা করেছেন তাই।

— করেছি আর পারব না। এবার আমি বিদায় হই… নাইলে তোকে ফিরিয়ে দিয়ে লাভ নেই। বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।

— আচ্ছা… [ আলত হেসে ]

— তবে একটা কথা এবার নাহয় পড়াশোনার কথা বলে বেচে গেছি। কিন্তু তোর চাচা আমার গুষ্টির পিন্ডের সবকিছু রেখে দিয়েছে মানে ৬ মাস পর কি হবে?

— বিয়ে করে নেবেন🤣🤣🤣

— ওই চুপ। যতসব ফালতু কথা। তোর মত ধোকাবাজকে কখনো না।

এইটা শুনে তুর চুপ হয়ে যায়। সানি এটা বুঝতে পারে। যাই হোক ও তো ইচ্ছে করে বিয়েতে রাজি হইনি। আর বাধ্য হয়েই ওর সাথে মিথ্যে বলেছে।

— তা আপনার সেই ক্রাশ তীব্রের কথা ভাবছেন নাকি…

— ধরো তাই… [ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ]

— ওরে মাইয়া রে। আচ্ছা সে যাই হোক আজ আসি। সাবধানে থাকিস… [ তুরের নাক টেনে। ] আচ্ছা এখন যাই মা চিন্তা করবে। আর এখন আসি লাগলে বলিস…

তারপর চলে আসে। দোতলায় জানালার সামনে এতক্ষন যা হয়েছে তা পুরোটাই গাড়ির মধ্যে বসে দেখেছে তীব্র…

_- অপেক্ষা করো তুর আজকে রাতেই তুমি আমার দেখা পাবে। অনেক অপেক্ষা করেছ আমার জন্য আরেকটু করো। তোমার আর আমার দুজনের অপেক্ষাই আমি শেষ করব…..
,
,
,
,
,
,
,
,

,
,
আজ অনেকদিন পর তুর ওদের সবার সাথে একসাথে খেতে বসেছে। সানি সেই দুপুরে চলে গেছে। অনেক কষ্ট করেই গেছে। কেউ ছাড়তে চাইছিল না। সানির যা যা বলেছে তা সত্যি নাকি মিথ্যে এসব জেনেই ওর চাচা ওকে যেতে দিয়েছে। দুপুরে ওদের সাথে কোনোমতে খেয়ে পালিয়েছে।

এখন রাত …..সবাই তুরকে সানির কথা জিজ্ঞেস করছ। রাতের খাবার খেয়ে সবাই মিলে একসাথে হয়েছে। কিন্তু ওদের কোনো কথার জবাব তুরের কাছে নেই। ওকে চুপচাপ থাকতে দেখে ওরা নিজেদের মত আড্ডা আর টিভি দেখছে। আর তুর চুপচাপ এক কোনে বসে আছে। সবার সাথে আছে তবুও কোথাও একটা শুন্যতা। ৬ মাস এক পরিবেশে অভ্যস্ত ছিল। একজনের অভ্যাসে অভ্যস্ত ছিল। তার অন্যায় দাবীতে অভ্যস্ত ছিল। সবটা এত তাড়াতাড়ি বদলে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবে এই ভেবে তুরের মনে শান্তি লাগছে, ওকে আর যাই হোক কোনো তীব্র কোনো মতেই খুজে পাবেনা। যেই মেয়েকে ও কিনে নিয়ে গিয়েছিল সেই মেয়ের বাড়ি কোথায় তাতো তীব্রের জানার কথা না।

তখন তোয়া গিয়ে পাশে বসে ওকে ডাক দেয়। তুর ভাবনার জগৎ থেকে বাইরে আসে…

— এই তুর আর কতক্ষন বসে থাকবি। ওরা সবাই ঘুমোতে চলে গেছে। তুই আমার সাথে ঘুমাবি… তোর তো একা ঘুমাতে ভয় লাগে…

তুর গিয়ে তোয়ার বুকে মাথা রাখে।

— না আপু এখন আর লাগেনা। বরং একা না ঘুমালে ঘুম আসে না। অভ্যাস হয়ে গেছে।

— তাই নাকি। সানি চলে গেছে বলে মন খারাপ….

— আপু আমাকে একটু তোমার বুকের মাঝে ঘুমাতে দেবে। মায়ের কাছে যেতাম কিন্তু ওনার শরীরের অবস্থা ভালো না। আমি গেলে ঘুম বাদ দিয়ে মাথা হাতাবে। তাই ঘুমের ঔষধ দিয়ে এসেছি।

— পাগলী। আচ্ছা আয়….

তোয়া তুরকে নিয়ে শুইয়ে ওর মাথায় বিলি কেটে দেয়। তুর আস্তে আস্তে ঘুমের কোলে ঢোলে পরে…. তোয়া ওর কপালে চুমো একে দেয়। কাজিন হলেও ছোট বেলা থেকে তুরকে ও সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।

— আমি জানিনা তুর তুই কেন এমন করলি? তবে এটা বুঝতে পারছি তুই কিছু লুকাচ্ছিস….

তারপর তোয়া নিজেও ওর পাশে শুয়ে পড়ল…..
,
,
,

,,

,
,
,

,ঘুমের মাঝে হঠাৎ তুর কারো গরম নিশ্বাস পায়। মনে হচ্ছে কেউ ওর খুব কাছে….. নিশ্বাসের উষ্ণতা আর সেই নিশ্বাসের মালিকের শরীর থেকে বেড়িয়ে আসা মৃদু ঘ্রানটা তুরের কাছে অপরিচিত নয়। হাজার বার অনুভব করেছে ও……

হঠাৎ করে অনুভুতি টা যেন আরো প্রখর হতে লাগল। তুরের নিজের শ্বাসও বেড়ে গেছে। ও ঘুমের মাঝে নাকি ঘোরের মাঝে বুঝতে পারছে না। অনুভুতি অস্তিত্বটা যতটা পাচ্ছে ততটাই অস্থির হয়ে পরছে তুর। একপ্রকার অস্থিরতা নিয়েই তুর অনুভূতির অস্তিত্বটাকে ধরতে হাত বাড়াল। ডান হাত তার দখলে তাই বাম হাত দিয়েই তাকে স্পর্শ করল। তুরের হাতটা তার নাক মুখে পরতেই পিলে চমকে উঠল …. অস্থিরতা আরো বেড়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে অস্থির কন্ঠেই বলে উঠল…….

— তী… তী…তীব্র…..

কথাটা শুনেই অদ্ভুত এক হাসি ফুটে উঠল তীব্রের ঠোঁটে। এখনি নিজের চোখ বন্ধ করে আছে তুর। কিন্তু তীব্রকে চিনে নিতে ওর একটু কষ্ট হয়নি।

— তুমি ভাবলে কি করে তীব্র তার বন্দীনীকে এত তাড়াতাড়ি মুক্তি দেবে।

— আপনি তীব্র নন…. আমি স্বপ্ন দেখছি। একটা ভয়ংকর স্বপ্ন। কারন তীব্রের জানার কথা না আমি কোথায়… [ চোখ বন্ধ করেই শক্ত করে ওর শার্টের কলার ধরে কাদতে শুরু করে তুর ]

— বিশ্বাস না হলে চোখ খুলেই দেখ। এত ভয় কেন আমাকে তুর। যার কাছে এতদিন থাকলে তাকে ফাকি দিয়ে চলে এলে সে বুঝি তোমাকে ধরতে চাইবে না। আর তোমার খোজ পাওয়া নিয়ে কথা। তুমি ভাবতেও পারবে না তোমার জন্য তীব্র কি করতে পারে।

এইটা শুনে তুর নিজের চোখ খোলে…. আর মুহূর্তেই থমকে যায়। সত্যি ওর সামনে তীব্র। ও তীব্রের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে তীব্র নিজের হাত তুরের পিঠের নিচে দিয়ে একটানে উঠিয়ে ওকে নিজের বাম কাধে রাখে… বাম হাত দিয়ে ওকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তুর চিতকার করতে চাইলে ওর মুখ চেপে ধরে…..

— তোমার কি মনে পালিয়ে রক্ষা পেয়ে গেছ এই তীব্র তোমাকে আর খুজে পাবে না। তোমার কথায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম তুমি কি করলে…. ছেড়ে এলে আমাকে?

তুর কান্নায় ভেঙে পরে। শ্বাস আটকে আসছে। তীব্র ওর মুখের থেকে হাত সরিয়ে ওর মুখ থেকে লেপ্টে যাওয়া চুল গুলো সরিয়ে দেয়। তুর চেয়েও নিজেকে ছাড়াতে পারেনা।

-_ আর কি চাই আপনার তীব্র এবার তো আমাকে মুক্তি দিন।

এইটা শুনে আরো শক্ত করে আকড়ে ধরে তুরকে…..

— তোমার কি মনে হয় তুর, আমি যেই মেয়েকে এনে নিজের বন্দীনী করে রেখেছি সে তুমি হয়ে গেছ…. না তুর । আমি তুর নামের এই মেয়েটাকে [ তুরের গালে হাত দিয়ে ] নিয়ে এসেছি যাকে নিজের বন্দীনী করেছি। তাকে আপন করে নেওয়ার জন্য।

— আমি যেতে চাই না আপনাকে। আপনি পারবেন না তীব্র। [ কাদতে কাদতে ]

— হাসালে তুর যে তোমার বাড়িতে তোমার রুমে তোমার বেডে এসে তোমাকে নিজের মাঝে টেনে নিতে পারে সে তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবে না। আর আমার কাজটা তুমি আরো সহজ করেছো তুর..… এখন যদি তোমাকে আমি নিয়ে যাই সবাই ভাববে তুমি ওই ছেলেটার সাথে চলে গেছ। তখন সবাই ওই ছেলেটাকে ধরবে.….

— তীব্র না। আপনি এমনটা করতে পারেন না।

— তোমারও উচিত হয়নি আমাকে ঠকানোর। এর শাস্তি তো তোমায় পেতে হবে।

— তীব্র…

তীব্র তুরের গালে, কপালে, নাকে ঠোঁটে অজস্র ছোট ছোট চুমো আকতে থাকে। যাতে নিজেকে তীব্রের হাত থেকে ছাড়ানোর ছটফটানি টাও বেড়ে গেছে। কিন্তু তীব্র ওকে ছাড়ার বদলে নিজের স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে তুরকে।

তখনি ……
,
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here