বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 15..+16..
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
…
— Just shut up….. 😡😡 আমার বাড়িতে থেকে। আমার খেয়ে… ঘুমের মধ্যে চুমু খাওয়া না।😡😡 কাকে ভেবেছিলে তুমি…?? আজ তোমার শখ মিটাব আমি😡
বলেই তুরের দিকে এগোতে থাকে…..
— আমার কথাটা তো শুনুন। আমি কাউকে ভেবে কিছু করিনি।
— তাহলে এতক্ষন যা ছিল সেগুলো কি?😡
— বিশ্বাস করুন আমি বুঝতেই পারিনি সেটা আপনার ঠোঁট ছিল। যদি জানতাম তাহলে প্রমিস কিস তো বাড়ির ধারে চুমোও খেতে চাইতাম না😥
— তাহলে একটু আগে যা করছিল তা কি ছিল।
তুর কি বলবে বুঝতে না পেরে মাথা নিচু করে রাখে।
— আমি আপনাকে ভাবিনি…
— তাহলে কাকে ভেবেছিলে.. 😡
তুর যেতে যেতে দেয়ালের সাথে মিশে যায় আর তীব্র একদম ওর কাছ গেশে দাড়ায়…. তুর যেতে যাইলে দেয়ালে হাত রেখে তীব্র ওকে আটকে দেয়….
— কিহলো কথা বলছ না যে? কাকে ভেবেছিলে চুমো খাওয়ার জন্য…. 😡
— ছিহ আমার কি এখনো চুমো খাওয়ার বয়স হয়েছে । আপনি তো বলতেন আমি নাকি বাচ্চা…. 😕
— সেটা কয়েকদিন আগেও ছিলে কিন্তু এখন নেই।
তীব্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুর বলে উঠে..
— আচ্ছা একটা কথা জানতে চাইব?
— কিহহহ… [ ভ্রু কুচকে ]
— আচ্ছা আপনার বয়স ৪০/৫০ এর বেশি হবে তাই না? আর এইজন্য আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কারন আপনার বুড়ো হয়ে গেছেন আর আপনাকে কেউ বিয়ে করবে না…🙄
কথাটা শুনে অবাক চোখে কিছুক্ষন তুরের দিকে তাকিয়ে থাকে তীব্র.. মানে তীব্রকে দেখে ওর সত্যি এমনটা মনে হয়? তুরের এই কথায় ও থমকে যায়।
— What the… আমাকে দেখে তোমার কি মনে হয় [ অনেক জোরে ধমক দিয়ে ]
— সিউর হওয়ার জন্যই তো জিজ্ঞেস করলাম😥
— just shut up…..
তীব্র রেগে তুরকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে চলে। প্রচন্ড মেজাজ গরম হয়ে গেছে তীব্রের। তাই ও শাওয়ার নিতে বাথরুমে গেল। একটা টাওয়াল পরে শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এলো তীব্র। প্রচন্ড রাগ লাগছে মেয়েটার উপর। ও কিনা ৪০/৫০ বছরের বুড়ো বলছে।
তীব্র প্রচন্ড রেগে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায়। তারপর তুরের রাগ আয়নার সামনে নিজের উপর দেখায়….
— যে ড. রায়হানের জন্য সবাই পাগল। আর এই মেয়ে কিনা বলছে আমি বিয়ে করার জন্য কোনো মেয়ে পাব না। কারন আমি বুড়ো হয়ে গেছি….
তীব্র নিজেকে ভালোভাবে দেখে নেয়। এই ২৮ বছরের বয়সে কখনো কারো থেকে এমন কথা শুনেনি তীব্র। আয়নায় নিজেকে দেখে একজন সুঠাম দেহের ব্যাক্তিত্ব সম্পুর্ন মনে করছে নিজেকে। যে কাউকে জন্য পাগল করার মত এবিলিটি আছে ওর। কিন্তু ওই মেয়েটা।
আয়না থেকে সরে যাওয়ার পর আবার দাড়ায় তার সামনে দাড়ায়….. তারপর নিজের মনেই জিজ্ঞেস করে….
— মেয়েটি কি সত্যি ভুল বলেছে। ২৮ বছরেও কোনো মেয়ের সাথে নিজেকে জড়ানো হয়নি। মনের দিক দিয়ে কি সত্যি সত্যি বুড়ো হয়ে গেছিস নাকি ড. রায়হান। বিজন্যাসম্যান তীব্র মুডি হলেও ড. রায়হান তো নয়….. কলেজ ক্রাশ আজ একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে বুড়ো হয়ে গেছিস…… [ নিজের মনে হেসে উঠে তীব্র ] যাই হোক মেয়েটার উপর রাগ করে লাভ নেই…..
তারপর তীব্র রেডি হয়ে আবার তুরের রুমে যায়। গিয়ে দেখে তুর বসে আছে মন খারাপ করে।। আর কি জানি ভাবছে…..
— [ চিন্তা করো না তুর। তুমি এখান থেকে জীবিত বের হবে না মৃত সেটা ডিসাইড করছে তায়ানের সুস্থ্য হওয়ার উপর। তায়ান যদি সুস্থ্য হয়ে যায় তাহলে তায়্যিরাতকে ওর কাছে ফিরিয়ে দেব। আর যদি তায়ানের কিছু হয় তাহলেও তুমি মুক্তি পাবে তবে এই ঘর থেকে না এই পৃথিবী থেকে। ভেবেছিলাম তায়্যিরাতকে শিয়াল- কুকুরের আহার বানাব। কিন্তু তায়ানকে দেখে বুঝেছি ও কতটা চায় তার তায়্যিরাতকে । নিজের শেষ ইচ্ছায় তোর সুখের কথা বলেছে। তাই তোমার বাচা মরা এখন তায়ানের উপর……. ]
;– আরে তীব্র দাড়িয়ে আছেন কেন ভিতরে আসুন….
তুরের ডাকে তীব্রের ধ্যান ভাঙে। ও বাজের নজরে তুরকে দেখতে দেখতে বিছানায় এসে বসে। তুর নিজের মত করে টুকাটুকি করছিল। তীব্র কিছুই বুঝতে পারছে না। তুরের এমন বিহেভ যে সব কিছু স্বাভাবিক। ও তুরের এতটা কাছে অথচ তুরের তেমন কোনো রিয়েকশন নেই। যেন তীব্র ওর পাশে তার জন্য তুরের কিছু আসে যায় না। বরং ওর কথা বলার সঙ্গী তীব্র……
তীব্রের ব্যাপারটা ভালো লাগল না। ও উঠে যেতে ধরে ঠিক তখনি তুর ওর হাত টেনে ধরে…. অবাক হয়ে তীব্র তুরের দিকে তাকায়… তীব্রের চোখে চোখ পরতেই তুর খুব করুন কন্ঠে তীব্রকে বলে উঠে…..
— এমনিতে ত আমি কোনো মানুষের সাথে কথা বলতে পারি না। শুধু ওই রোবো ক্যাট ছাড়া আপনি এসেছেন বলে ও এখন অফ করা। কিভাবে কথা বলব। একটু বসে আমার সাথে কথা বলুন না।
— দেখ তুর….. [ গম্ভীর গলায় ]
_- প্লিজ মানা করবেন না। এই একটা অনুরোধ রাখুন। আমারো তো ইচ্ছে হয় কোনো মানুষের কাছ থেকে বাইরের জগৎ টাকে শুনতে চাওয়ার। বন্ধ ঘরে বাস করি বলে কি সেইটুকুও চাইতে পারি না। [ আটকে আসা কান্না করা গলায়। ]
তুরের এই আকুতি ফেলতে পারল না তীব্র…… ওর পাশে বসে পড়ল। তুর নিজের মনে শুধু কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু তীব্র তা শুনছে কিনা তার কোনো খেয়াল নেই। তীব্র অবাক চোখে তুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছেনা। কোথাও একটা কিন্তু রয়ে গেছে তীব্রের। হিসেব টা কিছুতেই মিলাতে পারছে না। এটা কি সেই তুর? যে মেয়ে কিছুদিন আগেও ওকে ভয় পেত। ও থাকত বলে ধম বন্ধ হয়ে যেত মেয়েটার। এই টা কি সেই মেয়েটাই.…… বড্ড অচেনা লাগছে। এত দ্রুত কেন এই পরিবর্তন টা।
তখনি তুরের একটা প্রশ্ন তীব্রের ভিতরটাকে নাড়িয়ে দেয়।
— আচ্ছা আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে? মানে আপনি কি কোনোদিন কাউকে ভালোবেসেছেন?
— মানে… এগুলা আবার কি রকম প্রশ্ন… [ কিছুটা বিচলিত হয়ে ]
— না মানে সবার লাইফে তো এমন কেউ না কেউ থাকে যাকে সে ভালোবাসে। আপনার লাইফেও তাই থাকার কথা?
—- না নেই [ বেশ রেগে + উত্তেজিত হয়ে ] আমি কাউকে ভালোবাসিনা। আর না কাউকে বাসব বুঝতে পেরেছ তুমি? 😡
— হুমম…. [ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ] তা আপনি জানতে চাইবেন না আমার লাইফে কেউ ছিল কিনা। আমি কাউকে ভালবাসি কিনা…
তীব্রের উত্তরটা অজানা না। কারন তায়ান তায়্যিরাতের রিলেশন ২-৩ বছরের। আর তীব্র ওকে না দেখলেও ও সবটা জানে। আর এটাও জানে তুরকে এটা জিজ্ঞেস করলে তুর কি বলবে।
— তা জেনে আমি কি করব? 😡
এইটা শুনে তুর তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। তারপর একটা চাপা অভিমান থেকে বলে উঠে…..
— যাক বাবা যাকে ফিজিক্যাল রিলেশনের জন্য নিয়ে এসেছেন তার অতিতটা জেনে নিবেন না। আর মনে আদো কেউ ছিল কিন। আচ্ছা মনের কথা বাদ দিন। সেটা জেনে আপনার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আদো তাকে অন্যকেউ স্পর্শ করেছে কিনা। সেটা যাচাই করবেন না। আপনাদের মত লোকেরা তো তাই করে। কাউকে নিয়ে এসে নিজেদের খেলনা পুতুলের মত নিয়ে খেলে। আপনি তাই করবেন? শুধু কয়দিন আগে আর পরে……
কথাটা তীব্রের গায়ে কাটার মত বাধে। ও ভালো করেই বুঝতে পারছে তীব্রকে কটাক্ষ করার জন্য কথাটা বলেছে তুর। কিন্তু আজ কিছু বলার নেই ওর। কিন্তু খুব রাগ লাগছিল তুরের উপর। কিন্তু এখন বলা যাবে না। তাই নিজেকে শান্ত করে সেখান থেকে চলে যেতে চাইল তীব্র।
কিন্তু তীব্রের যাবার পথেই বাধ সাধল তুর। ও তীব্রের মুখোমুখি তীব্রের সামনে গিয়ে দাড়ায়…..
— কি হয়েছে তোমার? পথ ছাড়ো আমার। [ অনেকটা বিরক্তি নিয়ে বলল কথাটা ]
— সব সময় তো যাই যাই করেন। এবার না হয় আমার একটা কথা রাখেন।
তীব্রের দিকে আলত পায়ে এগিয়ে যায়। তীব্র কিছুই বুঝতে পারছে না। তুরের পা যত কদম সামনে এগোও তীব্রের ততটাই পিছায়…..এই প্রথম কেমন অন্যরকম লাগছে তীব্রের। হার্ট বিট বেড়ে গেছে অনেকটা। তীব্র যেতে যেতে হঠাৎ দেয়ালে ধাক্কা খায়। যার খেয়াল নেই তীব্রের।
তীব্রের প্রচন্ড বেড়ে যাওয়া হার্টবিট তুরের কানে আসছে। তীব্রের এই অবস্থা দেখে তুর হালকা হাসে। তুর ঠিক ওর হৃদপিণ্ডের উপর হাত রাখে।
— এতটা হার্টবিট তো ভয়েও বাড়ে না। by the way… আপনি কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন।
— stop this nonsense…. সড়ো…
তীব্র ওকে ছেড়ে যেতে নেয়। তখনি তুর বলে উঠে…..
_- একদিন তো চলেই যাব। হয় আমি চলে যাব। নয়তো আপনি নিজেই আমাকে ছুডে ফেলে দেবেন। এখন দেখার অপেক্ষা সেটা কবে?
— তুমি কি এসব বলতে চাও। আর এর জন্য আমাকে আটকে রেখেছ…..
— আমি আপনাকে আটকে রেখেছি। সিরিয়াসলি….
বেশ জোরেই হো হো করে হেশে দেয় তুর। তুরের সেই হাসিতে একটা জমে থাকা কান্না আর তীব্রের উপর একরাশ অভিযোগ ছিল বুঝতে বাকি রইল না তীব্রের। কেমন একটা অপরাধ বোধ কাজ করল তীব্রের।
— আপনার সত্যি মনে হয় তীব্র। আপনি না চাইলে আপনাকে আটকে রাখার শক্তি আমার থাকতে পারে। যে মেয়ে নিজের আপনার বন্দীনী হয়ে আছে সে আপনাকে কি করে আটকাবে…..
নিরব হয়ে আছে তীব্র… ওর নিরবতায় তুর বলে উঠে ……
— আমার একটা কথা রাখবেন প্লিজ…
নিশ্চুপ তীব্র..
— ভাববেন না এমন কিছু বলব না যেটা আপনি করতে চাইবেন না। কারন আমি জানি আমি মরেও গেলেও আপনি আমাকে এই খান থেকে বের হতে দেবেন না। আর মরে গেলে কি নিজের ইচ্ছায় তো মরার সুযোগ ও নেই। আমার সব ইচ্ছা-অনিচ্ছা এখন আপনার দাসত্ব করে।
— জানই যখন তাহলে বলো না।আর এসব নিয়ে আক্ষেপ করাটাও বন্ধ করো।
চলে যেতে নেয়। কিন্তু তুরের কান্নার সুরের আর্তনাদ থামিয়ে দেয় তীব্রকে।
— তীব্র…. [ আটকে আসা কন্ঠে ] আমাকে একটু বাইরের খাবার আনিয়ে দেবেন। বেচে থাকার জন্য এই শুকনো খাবার আর পারছি না খেতে। এটা খাব না, ওটা খাবনা বলে বায়না করব না। শুধু আমাকে বাইরে থেকে কিছু খাবার এনে দিন। শুধু ভাত হলেও চলবে……
বলেই হুহু করে কেদে উঠে তুর….. তারপর বেশ জোরেই কান্না করে তীব্রের পায়ের কাছে বসে পরে…..
— প্লিজ তীব্র আমার এই কথাটা রাখুন। এসব খাবার আর নামছে না আমার গলা থেকে। বিগত ৪ মাস যাবত আমি এসব খাবার খাচ্ছি। অনেক বার বলতে ইচ্ছে হয়েছে কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি। কিন্তু আজ পারলাম না। হয় আমাকে একটু খাবার এনে দিন নয়তো বিষ ।
তীব্রের পায়ের কাছে বসে অঝোরে কাদতে থাকে তুর। তীব্রের ব্যস্ততা এতটাই ছিল যে ও ভুলেই গেছে ওকে বিগত ৪ মাসের যত খাবার দিয়েছে তা পাওরুটি, জ্যাম, ফ্রুটস এবং অন্যান্য খাবার ছিল। যাতে ওর শরীরে কোনো কিছুর অভাব না হয়। কিন্তু এটা ভুলে গিয়েছিল তা দিয়ে শুধু পেট ভরায় কিন্তু মনের খোড়াক না। যেকোনো মানুষের পক্ষে কয়েকদিনের বেশি এসব খাবার খাওয়া সম্ভব না। একজন ডক্টর হিসেবে খুব ভালো করেই জানে। আর সেখানে একটানা ৩-৪ মাস সেটা আসলেই কষ্টকর….
কিন্তু তবুও ও নিজেকে শক্ত করে নিল। বেশ কঠোর গলায় বলল….
— তোমাকে যেই খাবারটা দেওয়া হয় সেটাই অনেক। সবকিছু পেয়ে গেছো তাই ভালো লাগছে না তাইনা।
এই কথা শুনে অবাক হয়ে তীব্রের দিকে তাকায়। মানুষের নির্দয়তার কথা ও শুনেছে কিন্তু আজ দেখেও নিল। কি আসত যেত ওকে একটু খাবার এনে দিলে। তুরের বুঝতে বাকি রইল না অপাত্রে দান করেছে ও….. তুর আর বেশি কিছু বলল না। শুধু নিজের চোখের পানি গুলো মুছে নিলো।
— আচ্ছা.…..
তারপর গিয়ে একটা কাথা শরীরে জড়িয়ে ওদিক ফিরে শুয়ে পড়ল তুর। তীব্র ওখানেই ছিল বুঝতে পারল তুর নিজের কান্নাটাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। এখানে আসার প্রথম দিকে তুরকে কাদতে দেখলেও তারপর কয়েকমাসে তুরকে কাদতে দেখেনি তীব্র। কিন্তু আজকে এভাবে মেয়েটা কাদল তাও একটু খাবারের জন্য……. একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল তীব্র। তারপর বাইরে চলে গেল।
ওদিকে তুর নিজের কান্নাটা দেখাতে চায় না তীব্রকে। এতদিন সেটা আটকে রাখলেও আজ যেন না চাইতেও তা বুক ফেটে বেড়িয়ে আসছে। এভাবে কাদতে কাদতে একসময় ঘুমিয়ে পরে তুর।
,
,
,
,
,
,
,
হঠাৎ কিছুর শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তুরের। তুর উঠে বেশ অবাক হয় কারন দরজাটা খোলা। তুর ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে বুঝতে পারছে না। সত্যি কি দরজা খোলা। ওর আস্তে আস্তে দরজার কাছে যায়। হ্যা সত্যি দরজা খোলা। তাহলে তীব্র কি ভুল করে খোলা রেখে গেল নাকি ইচ্ছে করে। বুঝতে পারল না তুর। ও কি বাইরে যাবে নাকি যাবেনা। যদি তীব্র জেনে যায় তাহলে…… তাহলে কি হবে??
এসব ভাবতে ভাবতে তুর কখন বেড়িয়ে আসে নিজেও জানে না। বাইরে আসতেই অবাক হয়ে যায় তুর। অদ্ভুত ভাবে সাজানো বিশাল ডায়নিং….. তুর অবাক চোখে সবটা দেখতে থাকে তখনি কারো আওয়াজ শুনতে পায়…..
— যদি ভেবে থাকো তুমি পালাতে পারবে তাহলে এটা তোমার ভুল ধারনা।
তুর ওদিকে তাকিয়ে দেখে তীব্র হাত গুজে দাড়িয়ে আসে। তারপর তীব্র তুরের দিকে এগিয়ে আসে। এটা দেখে তুর কিছুটা মাথা নিচু করে নেয়। তীব্র এসে তুরের থুতনি ধরে উচু করে।
— তুমি এই ৪ মাস ভদ্র হয়ে থেকেছ বলে এটা তোমার পুরুষ্কার মনে করো। তীব্র কখনো কারো পাওনা দিতে লেট করে না। তাই তোমারও করিনি আজ থেকে তুমি এখানে আসার পার্রমিশন পেলে।
তুর চুপ করে তাকিয়ে আছে। অনেকটা স্বাভাবিক লাগছে তীব্রকে । তখনকার কঠোরতা নেই ওর মাঝে কেমন একটা কোমলতা বিরাজ করছে।
— আর হ্যা তুমি বাইরের খাবার খেতে চেয়েছিলে তাই না। হুমম দেব তোমায়। এতটাও হার্টলেস নই আমি। [ বাকা হেশে ] তবে একটা শর্তে..…
— কি শর্তে….
তীব্র গিয়ে তুরকে সামনে ঘুড়িয়ে ওর কাধে থুতনি রাখে…..
— আমি রান্না করব। আর আমার সাথে হেল্প করবে তুমি…. রাজি।
— সত্যি আপনি রান্না করবেন…..
— হুমম… তাও তোমার জন্য মুচকি হেসে। [ তুরের কানে চুমো দিয়ে ]
— কিন্তু আমার জন্য কেন করবেন?
এইটা শুনে বাকা হাসে তীব্র। তারপর তুরকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। তুরের কোমর পেচিয়ে তুরকে একেবারে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়….. একহাত দিয়ে ওর গাল ধরে তুরের মুখে ফু দেয়….. তাতে তুর চোখ বন্ধ করে নেয়….
তখন তীব্র তুরের কানে কাছে গিয়ে বলে…
— তুমি আমার জন্য খুব স্পেশাল তুর। তোমার কাছ থেকে অনেক এক্সপেকটেশন আমার। যা তোমাকে পুরন করতে হবে। বুঝলে…..
— মানে….
হালকা হাসল তীব্র….
— সত্যি তুমি কতটা বোকা তুর। একদম বাচ্চাই রয়ে গেলে। [ তুরের নাক টেনে ] একটা ছেলে একটা মেয়েকে কেন নিজের কাছে রাখে জানো। যখন একটা ছেলে একটা মেয়েকে চায়। আর তোমাকেও তো চাই আমি…..
— তীব্র আপনি….
— হুসসস…. আমার হেল্প করবে না। [ মৃদু হেশে ]
,
,
,
,
,
,
তারপর তীব্র তুরকে এক প্রকার টেনে নিয়েই ক্রেচেনে ঢোকে…..
— বলো কি কি রাধতে পারো তুমি?
এই কথা শুনে তুর আমতা আমতা করতে থাকে….
— তারমানে কিছুই পারো না।😤
— হুমম…
— 😅 its ok…. আজ আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব কেমন?
— তীব্র আপনি….
— তীব্র সব পারে। প্রান যেমন বাচাতে পারে তেমনি মারতেও পারে৷ যখন যেটা দরকার আরকি….
— মানে.??
— কিছুনা। এদিকে এসো।
তারপর তীব্র তুরকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর সবকাজ ধরে ধরে নিজের হাতে করায়। তুর অবাক চোখে তীব্রকে দেখতে থাকে। যেন নতুন কাউকে দেখছে। তীব্র তুরের হাতে কাজ করছে আর তুর ব্যস্ত হয়ে পরেছে তীব্রকে দেখতে….
— এভাবে দেখ না। কেমন জানি লাগে…
তীব্র তুরকে নিজের সাথে মিশিয়ে তুরের হাতেই সব কাজ শেষ করায়। বেশি কিছু না তবে মোটামুটি রান্না করে।
— তুর….
— হুমম….
— এগুলো সার্ভ করে দেও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি কেমন?
মিষ্টি একটা হাসি উপহার দেয় তুর। তারপর তীব্র ফ্রেশ হতে চলে যায়। তুর ও নিজের মত করে খাবার রেডি করে রাখে…..
— বাহ সব রেডি হয়ে গেছে।
— হমম….
— খুব ভালো। নেও শুরু করো।
— আপনি খান….
— আমি প্রতিদিন খাই। আজ না হয় তুমি খাও….
তুর কোনো কথা না বলে একটা চেয়ার টেনে বসে পরে… যেই খাবারটা মুখে নিতে নেয়। কিন্তু তার আগেই তীব্র ওর হাত ধরে ফেলে….. তুর অসহায় চোখে ওর দিকে তাকায়……
— এভাবে দেখছ কেন? জানোনা বড়রা আর বুড়োরা আগে খায়….
বলেই খাবারসহ তুরের সব আঙুল মুখে পুরে নেয়। এটা দেখে তুরের প্রায় কান্নার অবস্থা। এতদিন পর খেতে পেল তাও দিল না। 😥এটা দেখে তীব্র হালকা হাসল…..
— টেস্ট ঠিক আছে এবার খেয়ে নেও।।
এটা শুনে তুর আর একমিনিট দেরি করল না। যতটা পারল খেয়ে নিয়ে ওখানেই বসে রইল। তীব্রের মনে হলো কত জনমের অভুক্ত রেখেছিল তুরকে রাক্ষসের মত সব খেয়ে নিল। তুরের খাওয়া দেখে ওর আর খাওয়া হলো না।
খাওয়া শেষে তুর নিজের রুমে যায়। ঠিক তখনি পিছন থেকে তীব্র ওকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গোজে। তুর ছাড়াতে চাইলে আরো শক্ত করে তুরকে জড়িয়ে ধরে।
— ভালোবাস আমাকে…??
তুর চুপচাপ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
— না মানে… [ আমতা আমতা করে ]
তুরের তোতলানীতে বাকা হাসে তীব্র……
— তোমার চোখ বলে দিচ্ছে তুমি আমাকে ভালবাস…. যদি লজ্জা পেয়ে থাকো তাহলে বলতে হবে না।
— এরকম কিছু না। [ হাত ঘষতে ঘষতে ]
— তারমানে কি আমি ভুল?
— নাহহ মানে….
এবার হো হো করে হেশে উঠে তীব্র…… তুরকে কাছে এনে কোলে তুলে নেয়৷
— কি হলো কোলে তুললেন কেন? 🙄
— তুমি জান ভালবাসা কাকে বলে? ভালোবাসার ডেফিনেশন কি?
— ভালোবাসার আবার ডেফিনেশন হয় নাকি?
— দুনিয়ায় সবকিছু ডেফিনেশনে হয়। আর তোমার মনে আমার জন্য যে ফিলিংসটা বাসা বেধেছে আজকে আমি তোমাকে তার মানে বলব।
— কারন আমিও তোমাকে ভালোবাসতে চাই তুর….
— দেখুন আপনার কথার আগা মাথা পাচ্ছি না আমি। তাই আমাকে ছাড়ুন।
তুরকে আরো শক্ত করে ধরল তীব্র….
— ভেবে দেখ ছেড়ে দিলে কিন্তু চরম মুল্য দিতে হবে তোমাকে, তার দোষ আমাকে দিতে পারবে না।
— আগে নিচে নামান।
— ওকে….
তুরকে নিচে নামালেই তুর সরে যেতে নেয়। কিন্তু তীব্র ওকে টেনে শক্ত করে ওর কোমর চেপে ধরে…… ওকে নিজের মধ্যে মিশিয়ে নেয়।
— আবার কি হল?
— ওইযে বলেছি.. ডেফিনেশন অফ লাভ…..
তারপর তীব্র নিজের একহাত তুরের কোমরে রাখে আরেকহাত ওর ঘাড়ে। তুরের ঠোঁটের দিকে এগোতে থাকে…..আর তুরের খুব আনইজি ফিল হতে থাকে।
— আপনি….
— হুসসস…. তোমার না কিসের অনুভুতি জানার ইচ্ছে ছিল। আজ নাহয় তা বুঝে নিও।।
— মানে…. [ ঢোক গিলে ]
তীব্র ওর ঠোঁটের কাছে আসতেই তুর চোখ বন্ধ করে নেয়। ঠিক তখনি তুর নিজের ঘাড়ে সুচ ফোটার আভাস পায়। সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঘাড় চেপে ব্যাথায় আর্তনাদ করে ঘাড়ে হাত দিতেই তীব্র ওকে ছেড়ে দেয়। আর তুর ছটফট করে মেঝেতে বসে পরে। এটা দেখে তীব্র ও তুরের সাথে মাটিতে বসে পরে…. বেশ চিন্তিত হয়েই তুরের গালে হাত দিয়ে বলে উঠে….
— কি হয়েছে তোমার?
— জানিনা তীব্র। কিন্তু মনে হলো ঘাড়ে কিছু ফুটল।
— কই দেখি।
তারপর জায়গাটা দেখে বলল কই কিছু নাই তো।
— জানিনা। কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে মনে হয় ছিড়ে যাচ্ছে। [ দুহাতে মাথা চেপে ধরে। ] তীব্র আর কিছু বলার আগেই তুরের সামনে সবটা ঝাপসা হয়ে আসে। আর ও ওখানেই জ্ঞান হারায় ]
এটা দেখে তীব্র ওর পাশে বসে ওর পালস চেক করে। তারপর নিজের হাতে থাকা পিনটা একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে পিনটা রেখে বাথরুমে গিয়ে নিজের হাতটা ভালোভাবে ওয়াস করে নেয়। তারপর টাওয়ালে মুছে বেড়িয়ে আসে।
তারপর তুরকে কোলে তুলে মেঝেতে করা বিছানায় শুইয়ে নিজেও ওর পাশে শুয়ে পরে।
— ভালো যখন বেসেছ তার দাম তো তোমাকে দিতে হবে তুর বেবি। ভালোবাসা অনেক দামী বস্তু। এভাবে সস্তায় যদি পেয়ে যাও তার মুল্য কি? ভালোবাসতে অনেক যন্ত্রনা সইতে হবে। আর তাই এইটুকু তো তোমাকে সইতেই হবে। তায়ানকে অনেক বার নিষেধ করেছি শুনেনি আমার কথা। তোমাকে বলেছি তুমিও সেই বোকার মত এক কাজ করলে। ভালোবাসার এত কাঙাল কেন তোমরা…… সে যাই হোক আমার তো আমার কাজ নিয়ে কথা। সেটা পুরন হলেই হলো।
তারপর তীব্র তুরের দিকে ফিরে তুরের গালে হাত রাখে।
— এখন থেকে আমি যা বলব সেটাই তোমার কাছে সত্যি হবে তুর। দিনকে রাত বললে তুমি তাই মানতে বাধ্য। আজ থেকে তুমি পরিপুর্ন ভাবে আমার বন্দীনী। আর এটাই তার অভিশেখ……. বেশি কষ্ট না হলেও অনেকটা সময় দিতে হয়েছে…. and thanks to you robo cat…. তুমি না থাকলে এতটা সম্ভব ই হতো না।
তীব্র রোবো ক্যাটটাকে এমন ভাবে ফাংশন করে রেখেছিল যাতে তুরের প্রত্যেকটা কথা তীব্রকে ঘিরেই হয়। যাতে তুরের মনে হয় তীব্র ওকে ভালোবাসে আর তুর নিজেও তীব্র কে ভালোবেসে ফেলেছে। একজন ম্যাডিক্যাল সাইন্সের স্টুডেন্ট হওয়ার কারনে তীব্র মানুষের ব্রেনের ফাংশন সম্পর্কে অবগত। আর বিশেষ করে তুরের বয়সী মেয়েদের ব্রেনের ব্যাপ্তি কেমন, কিসে তারা দ্রুত এট্রাকট্রেট হয় তীব্র তা খুব ভালোভাবেই জানে….. আর তাই রোবো ক্যাটকে দিয়ে তীব্র দীর্ঘ সময় নিয়ে একপ্রকার তুরের ব্রেন ওয়াস করে। আর তুর যখন কাল ওর সাথে ওরকম বিহেভ করে তখন তীব্রের বুঝতে বাকি থাকে না ও ওর কাজে সাফল্যের সাথে উত্তির্ন হয়েছে।
তীব্র তুরের নাকে মুখে আঙুল দিয়ে ছুইয়ে দিতে থাকে।
— জানোতো তুর বেবি ডক্টরি নাকি মহত পেশা। ডক্টর রা নাকি অনেক দয়ালু আর নরম মনের মানুষ হয়। কিন্তু যারা এটা ভাবে তারা ভুলে যায় এই ডক্টর রাই দিনে হাজার হাজার লাশ দেখতে দেখতে নিজের ভিতরের অনুভুতি মরে যায়। আর সবচেয়ে যেটা মজার সেটা হলো সবচেয়ে বড় অভিনেতা হলো ডক্টররা কেননা ওরা মরা দেখতে দেখতে এতটাই অবস্থ যে কেউ মারা গেলে সামান্য কষ্ট টুকু হয়না কিন্তু যখন পেসেন্টের গার্জিয়ানদের সামনে আসে তখন কিন্তু ঠিক ভারী উদাস মুখ করে অভিনয় করে…. সত্যি বলতে ওদের চেয়ে বেশি হার্টলেস কেউ হয় না। যেমন আমাকেই দেখ এই হাতে কত মানুষকে বাচিয়েছি জানিনা। আবার কত মানুষ মরেছে তাও জানিনা। দুইটাই আমার দায়িত্ব। তায়ান আমাকে বলত আমার নাকি ডক্টর হওয়া উচিত না কেননা আমি হার্টলেস। আর ডক্টর হলে নাকি পাথর হয়ে যাব। আজ তার পরিচয় নিজেই পেলাম। এতদিন হয়ে গেল অথচ তোমার কষ্টে নিজের খারাপ লাগা আনতে পারিনি৷ যেটা এসেছে তা হচ্ছে নিজের নিষ্ঠুরতার প্রতি আক্ষেপ।
তারপর কিছুক্ষন চুপ থাকে তীব্র…..
— খেলার আসল মজা এবার আসবে তুর বেবি।দেখা যাক কথা কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়…. সেটা তায়্যিরাত পর্যন্ত যায় নাকি তুরের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে….
,
,#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 16…….
,
সকালে ঘুম ভাঙতেই অসহ্য ব্যাথায় মাথা চেপে ধরে উঠে বসে তুর। মাথাটা ছিড়ে পরে যাচ্ছে। মাথার চুল গুলো ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তুরের……
হঠাৎ করেই মাথা ছেড়ে নিজের দিকে নজর যায়। তুরের সমস্ত জামাকাপড় এলোমেলো বয়ে আছে। হঠাৎ করে এমন কিছু দেখবে তার আশা করেনি তুর। সবটা বোঝার চেষ্টা করতে গলাটা যেন শুকিয়ে আসছে তুরের। কি হয়েছে, কেন হয়েছে না ও বুঝতে পারছে না। আর না বুঝতে চাইছে। কিন্তু শরীরের অসহ্য ব্যাথা সবটা ওকে জানান দিয়ে যাচ্ছে কি হতে পারে…..
সবটা বুঝে উঠার আগেই তুরের গলাটা আটকে আসে। কালকের কথা মনে পরতেই শুধু এতটুকু মনে পরে তীব্র যখন ওর কাছে আসছিল তখন তুর জ্ঞান হারায়। তারপর…… আর ভাবতে পারল না তুর। না চাইতেও প্রচন্ড বেগে কেদে উঠে তুর…. তার মানে তীব্র সেদিন যা বলেছিল তা সত্যি করে দিল। সত্যি ও….. আর কিছু বলতে পারল না তুর….. প্রচন্ড জোরে কান্না করে দিল…..
তখনি ওর সামনে তীব্র এসে দাড়ায়। তুর উপরের দিকে তাকাতেই দেখে তীব্র শান্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে….. তীব্রকে দেখে নিজের চোখ নামিয়ে গায়ে জড়ানো চাদরটা আরো জড়িয়ে নেয় তুর।
এটা দেখে তীব্র ওর পাশে বসে। তুর তীব্রের দিকে না দেখেই নিচে তাকিয়ে কাদতে থাকে। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর। তীব্র তো জানত ও তীব্রকে ভালোবাসে তাহলে কেন করল এমন? তীব্র ওর কাধে হাত রাখতেই ও সরতে চায় কিন্তু পারে না। চাদরে আটকে যায়। তীব্র বুঝতে পারে তুর হয়তো এটা স্বপ্নেও ভাবেনি। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তীব্র……
আর তুরের কান্নার বেগটা বেড়ে যায়। তীব্র তুরের মাথাটা ধরে নিজের বুকের মধ্যে রাখে। তুর নিজেকে ছাড়াতে আরো জোরে আকড়ে ধরে তীব্র…..
— যেই বুকে রাখতে চেয়েছি সেইখান থেকে পালাতে চাইছ।
তুর কোনো কথা বলল না। আর এটাও বুঝল তীব্র ওকে ছাড়বে না। তাই ওখানেই চুপচাপ তীব্রের বুক ভেজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল তুর। তীব্র ও কোনো রিয়েক্ট করল না। দেয়াল গেশে বসে তুরের মাথায় হাত বুলাতে লাগল…… একসময় তুর নিজেও তীব্রের বুকে মিশে গেল….. কান্নার বেগ বেড়ে হিচকি উঠে গেল….
এবার তীব্র বলে উঠল…..
— কিহল কাদছ কেন?
নিরব হয়ে গেছে তুর।
— আমাকেও বলবে না কাদছ তুমি? যাকে ভালোবাস তাকে নিজের কান্নার কারনটা বলতে পারছ না। তাহলে কেমন ভালোবাস….
এবার তুর কেদে কেদে বলেই উঠল….
— কেন করেছেন এমন আপনি না আমাকে ভালোবাসেন?
— কোনো সন্দেহ আছে? তোমাকে ভালোবাসি না।
— তাহলে কেন করলেন এমনটা? এটা তো ভালোবাসা নয়? ভালোবাসার মানুষের সাথে কেউ এরকম করে…..
হালকা হাসল তীব্র… আচ্ছা তোমার আর আমার সম্পর্ক কি অন্য মানুষের মত। সেটা কি অন্য সবার মত করে ঠিক করা হয়েছে…
— জানিনা….
— তোমাকে বলেছিলাম না তোমাকে ভালোবাসার মানে বলব। মানে Definition of love….
— হুমম….
— আচ্ছা তুর আমাদের মধ্যে কি কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
— নাহহহ…. কিন্তু কেন?
-_ তুমি কি আমাকে আগে থেকে চিন্তে বা আমাদের মধ্যে কি আগে সম্পর্ক ছিল।
— না কিন্তু আপনি এসব কেন জিজ্ঞেস করছেন…..
— কারন তোমার সাথে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই যেটা আছে সেটা শুধু অনুভুতি আর সেটা শুধু ভালোবাসার।
তীব্রের এমন কথায় তুর চুপ হয়ে গেল কিন্তু তীব্র কি বুঝাতে চাইলো বুঝতে পারল না। তীব্র একহাত দিয়ে আরো শক্ত করে তুরকে বুকে জড়িয়ে আরেকহাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে……
— জানো মেডিক্যাল সাইন্সের মতে প্রেম আর ভালোবাসার অর্থ কি?
তুর চুপ করে বসে আছে। ভালোবাসতে গেলে ভালোবাসার ডেফিনেশন হয়তো কেউ জানতে চাইবে না। কিন্তু তীব্র তুরকে শোনাতে চায়.।।।।।
— মেডিকেল সাইন্সে মতে প্রেম আর ভালোবাসার ডেফিনেশন হচ্ছে… “শারীরিক আনন্দ কেটে যাবার পরে যদি কোন মানুষের সাথে তোমার আজীবন থাকতে ইচ্ছা করে তাহলে সেটা হচ্ছে ভালোবাসা আর যদি সেরকম ইচ্ছা না করে মানুষটির মোহ কেটে যায় তবে তা প্রেম। ”
কিন্তু তোমার আর আমার মধ্যে যেহেতু কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না তাহলে যেটা হলো সেটা নাম ভালোবাসা।
— বিয়ে ছাড়া তো তাহলে ভালোবাসা কোনোদিন বৈধ হতে পারে না। সেইজন্য তো ইসলাম ধর্মে বিয়ের ভালোবাসাকে শ্রেষ্ঠ আর বিয়ের আগে ভালোবাসাকে হারাম বলে গন্য করা হয়েছে…..
— হুমম….
— তাহলে কেন করলেন এমন? এর দ্বারা তো এটাই বুঝায় আমাদের ভালোবাসা বৈধ না অবৈধ…..
এই প্রশ্নের উওর আর দিতে পারল না তীব্র। কারন উত্তরটা ওর কাছে নেই।
— এই অনুভুতি যাই হোক না কেন তুর শুধু মনে রেখ তোমার আর আমার সম্পর্কটা সবার মত স্বাভাবিক নয়… [ গম্ভীর গলায় ]
— আপনি না বললেও আমি জানি তীব্র….
— কি জানো?
— এইটাই আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না। আর সেইটা আপনি নিজেই বলেছেন। তাহলে আমি তো আপনার জন্য মোহ তাই না।
— তুমি আমার জন্য ঠিক কি তা এখন বুঝতে এসো না তুর। সেটা তুমি বুঝতে পারবে না আর না আমি তোমাকে বোঝাতে পারব।
— [ আর কিছু বোঝার নেই আমার তীব্র। আমি না আপনি আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছেন আপনার লাইফে আমি ঠিক কি? কিন্তু আপনি হয়তো বুঝতে পারেননি আমি আপনাকে কি ভেবেছিলাম।]
নিজের মনে কথাগুলো ভেবে শুকিয়ে যাওয়া চোখের দু-ফোটা পানি ছেড়ে দিল। তারপর চোখ বন্ধ করে তীব্রের বুকের মাঝেই পরে রইল। কারন তুর এতদিনে বুঝে গেছে আর যাই হোক তীব্র না চাইলে ও কোনোদিন তীব্রের হাত থেকে ছাড়া পাবে না। আর না ও চিরকাল তীব্রের বুকে থাকতে পারবে। একদিন না একদিন হয় তীব্র ওকে ছুড়ে ফেলে দেবে নয়তো নিজেই তীব্রের কাছ থেকে চলে যাবে। তবে সেটা কবে তা জানে না।
এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত তুর তীব্রের বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে যায়। তীব্র বুঝতে পারে মেডিসিনের প্রভাব এখনো কাটেনি। আর তুর যা ভাবছে সেরকম কিছুই হয়নি। মেডিসিনের প্রভাবে ওর ওরকম লেগেছে। আর এইটা বিশ্বাস করানোর জন্য তীব্র ওসব করেছে।
— I am sorry tur… কিন্তু আমার কাছে কিছু করার নেই। আমি সবকিছুকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছি না চাইতেও সবটা নিজের কাছেই উলট পালট হয়ে গেছে। চেয়েও সবটা ঠিক করতে পারব না। তাই আমি বাধ্য হলাম মিথ্যে একটা বিষয় ইয়ে তোমার মন ভাঙতে। জানি তোমার চোখে অনেকটা নিচে নেমে গেছি। কিন্তু তাতে সত্যি আমার কিছু আসে যায় না। আমার যা চাই তা তো আমি নিয়েই ছাড়ব…..
তারপর তুরকে শুইয়ে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে…..
,
,
,
,
,
,
,
,
,
কয়েকঘন্টা পর তীব্র রুমে ফিরে এসে দেখে তুর শুয়ে আছে। তীব্র তুরের পাশে বসতেই তুর চোখ খুলে আবার বন্ধ করে নেয়। এইটা দেখে তীব্র বলে উঠে…..
— তুর আমাকে যেতে হবে….
এইটা শুনে তুর উঠে বসে। তারপর ঠোঁটের কোনে একটা মিষ্টি হাসির রেখা ফুটিয়ে তোলে। তুরের পুরো চোখ মুখ ফুলে আছে। বুঝতে পারল নিরবে কাদার ফল….
— আমাকে কয়েকদিনের জন্য যেতে হবে…
— এতে আমাকে বলার কি আছে। না মানে এর আগে তো কখনো বলেনি। আপনার ইচ্ছে হলে এসেছেন আপনার ইচ্ছে হলে চলে গেছেন.…….
তীব্র বুঝল চাপা কষ্ট গুলো তুরের মুখ থেকে অভিমান হয়ে ঝরছে…. কিন্তু ও আর কথা বাড়াল না।
— আসছি….
আসছি কথাটা শুনে তুরের বুকের ভিতর মোচর মারে। তীব্র চলে যাবে ভেবেছিল কিন্তু এখন চলে যাবে সেটা ভাবেনি। ও খুব করুন চোখে তীব্রের দিকে তাকায়। তীব্র উঠার আগেই তুর খুব জোরে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। তুরের এমন করাটা আশা করেনি তীব্র। ওর হাত ঘামছে। আজ তুরের কান্নাটা ওর বুকের ভিতর ঝড় তুলেছে….নিজেকে চেয়েও শক্ত করতে লারছে না তীব্র…. আর না কিছু বলতে লারছে। তাই তুরকে জড়িয়ে ওভাবেই বসে থাকে ও। তুরকে দুর্বল করতে নিজেই যেন দুর্বল হয়ে পরছে মেয়েটার প্রতি…..
বেশ কিছুক্ষন পর তুর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে থাকে…. এইটা দেখে তীব্র থুতনি ধরে তুরের মুখটা উচু করে।
— কি হয়েছে?
— কিছুনা….
— তাহলে কাদছ কেন?
— আমার একটা কথা রাখবেন?
কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে…..
— কিহ??
— আপনি এই রুমের ক্যামেরা গুলো খুলে রাখবেন? প্লিজ…..
— কিন্তু…..
— প্লিজ….
আর না করতে পারল না তীব্র। ওর এই করুন সুর উপেক্ষা করার শক্তি নেই ওর। তাই নিজেই ঘরের ৪টি ক্যামেরা খুলে রাখল……
— যাও আজ তোমার কথাই রাখলাম।
তুর শুধু মাথা নাড়ল। আর তীব্র হালকা হাসল। তারপর তুরের কাছে গিয়ে ওর কপালে ভালোবাসার সিগ্ধ পরশ ছুইয়ে দিল। তুরের থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এসে বলল……
— ভালোবাসতে তুমিও শিখে গেছ… [ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ]
,
,
,
,
,
,
,
,
তারপর তীব্র এয়ারপোর্টে উদ্দেশ্য গাডিতে বসে পরে। গাড়িতে নিজের ল্যাপটপ অন করে। তুর রুমে ৪টি ক্যামেরার কথা জানলেও রোবো ক্যাটের মধ্যে যে ক্যামেরা লাগানো সেটা জানত না। তীব্র তুরের কথাও রাখল আর নিজের কাজ ও করল। কিন্তু কেন তুর ক্যামেরা খুলতে বলল সেটা জানা প্রয়োজন….
তীব্র ক্যামেরা অন করতেই তুরকে দেখতে পায়। আর দেখেই বুকের মাঝে একটা কামর মারে তীব্রের। বিছানায় বসে হাটুতে মুখ গুজে অঝোরে কাদছে তুর। তারমানে তুর নিজের কান্না আড়াল করতে….. ভাবতেই রেগে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দেয় তীব্র।
— তোমাকে আর এভাবে কষ্ট পেতে হবেনা তুর। যা যা তুমি সয়ে তার সম্পুর্ন আমি ফেরত দেব তোমায়।
৷
,
,
,
,
,,
,
পরের দিন তীব্র দেশে ফিরে সোজা হসপিটালে যায়৷ হাসপাতালে গিয়ে ডিরেক্ট তুষার কাছে যায়। বেশ বিচলিত তীব্র….
— কি হয়েছে তীব্র….এমন দেখাচ্ছে কেন?
— আমি ডিরেক্ট এয়ারপোর্ট থেকে আসছি। তাই এমন লাগছে…
— কিন্তু তুই বাড়ি না গিয়ে….
— আমি বাইরে থেকে যে মেডিসিন আনতে দিয়েছিলাম তা পৌঁছেছে?
— হুমম… কাল সন্ধ্যায় চলে এসেছ। তোর জন্য কিছু করিনি আমি।
— গুড…. রেডি কর। আমি আর অপেক্ষা করতে চাই না।
— ব্যাপারটা রিক্স হয়ে গেল না। আমি জানি এটা তায়ানের জন্য ভালো নাহলে এতটা এক্সপেন্সিভ মেডিসিন তুই আনতি না। কিন্তু যদি এটাতে কাজ না হয় তাহলে…..
— ৪ মাস তো দেখলাম আর কত? এবার এই রিক্সটা নিতেই হবে।
তুষা আর কিছু বলতে পারল না। তীব্র তায়ানকে ইনজেকশনটা দিতে গিয়েও পারছে না। ওর হাত কাপছে। হয় এতে ওর জ্ঞান ২৪ ঘন্টার মাঝে ফিরবে। কিন্তু যদি রিয়েকশন হয় তবে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু এই রিক্সটা তীব্রকে নিতেই হব।
তীব্রের হাতের কাপুনি দেখে অরুন গিয়ে ইনজেকশনটা ধরে…
— আমি দিয়ে দিচ্ছি.…
তীব্র আর কিছু বলে না। তায়ানের শরীরে ইনজেকশনটা পুশ করায় অরুন। তুষার মেশিনে চেক করে বলে ওর বডি সেটা নিচ্ছে…. এইটা ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে তীব্র…. তখনি অরুন বলে…
— এখনি নিশ্চিত হওয়ার কিছু নেই। সব কিছুর 50/50….২৪ ঘন্টার আগে কিছুই বলে যাবে না। তখনি তীব্র পরে যেতে নেয়। অরুন তুষা দুজনেই ওকে ধরে…. তারপর তুষার জোর করে রাতে ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়…
পুরো রাত তীব্রের নির্ঘুম কেটে যায়। কাল কি হবে সেটা ভেবে দুচোখের পাতা এক হয় না। একটা ভয় কাজ করছে সাথে তায়ানের ভালো হওয়ার আশা……. এভাবে থাকতে থাকতে কখন চোখ বুজে আসে তীব্রের নিজেও বুঝতে পারে না।
,
,
,
,
,
,
,
,
সকালে মোবাইলের রিংটনে তীব্রের ঘুম ভাঙে….. তুষার কল দেখে দ্রুত পিক করতেই তুষা ওকে যেতে বলে। আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দেয়। দ্রুত এক গাদা টেনশন কোনো মতে হসপিটালে যেতেই তুষা ওকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়। আরো ঘাবড়ে যায় তীব্র…. ও দ্রুত তায়ানের কেবিনে যেতেই অরুন বলে উঠে….
— ওয়েলকাম ড. রায়হান আপনার শত্রু জ্ঞান ফিরে পেয়েছে….
তীব্র ধীর পায়ে তায়ানের কাছে যেতেই তায়ান উঠে বসতে গিয়ে পরে যেতেই তীব্র ওকে জড়িয়ে ধরে….
— কিরে কেমন আছিস…..
— ভালো… [ খুশিতে তীব্রের চোখ জল জল করছে ]
— ভালো? কিভাবে মনে তো হচ্ছে বুড়ো হয়ে গেছিস….
তায়ানের মুখে বুড়ো কথাটা শুনে তীব্রের তুরের কথা মনে পরে যায়..
— কিরে কি ভাবছিস?
_- না কিছুনা।
তখনি তায়ান আবারো জড়িয়ে নেয় তীব্রকে।
— সেই আমাকে মরতেও দিলি না।
— কি করে দিতাম তুই আমার কলিজার একটা অংশ..
তায়ান তীব্রকে ছেড়ে দেয়। তারপর একটু নিচু স্বরেও জিজ্ঞেস করে….
— তায়্যিরাত কেমন আছে? ও কি নিজের ভুলটা বুঝতে পারেনি।
ওর কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায় তীব্র….
— ১ম কথা ও যা করেছে সবটা ইচ্ছে করে। আর ২য় তো তোর এই অবস্থার জন্য ও দায়ী।
— তুই ভুল ভাবছিস….
— আমার আর কিছু বলার নেই। আমি তোকে আগেও সাবধান করেছি। কিন্তু….
— আচ্ছা বাদ দে… তোর জন্য যে মেয়েটি দেখেছি এবার তোর সাথে তার বিয়ে দিয়ে ছাড়ব আমি। আমি তোর জন্য ওকেই ঠিক করে রেখেছি তুই তো নিজে আর….
তখনি তুষা বলে উঠে….
_- তোর কষ্ট করতে হবে না। সে নিজেই একটা মেয়েকে দেখে পা পিছলেসে….
— বাজে কথা বন্ধ কর তুষা [ তীব্র ]
— কথাটা সত্যি…. [ তায়ান ]
— একদম। কিন্তু দেখ মি. মুডি মানতেই চাইছে না।
— আরে ওরকম কিছু না।
— বললেই হলো কিভাবে মেয়েটাকে দেখছিল জানিস….
— তুষা… 😡😡😡
— আচ্ছা ঠিক আছে থাম তোরা… ওর যাকে ভালো লাগবে তার সাথেই বিয়ে দেব নাহলে আমার পছন্দের মেয়ের সাথে… [ তায়ান ]
তীব্র আর কিছু না বলে বেড়িয়ে যায়।
,
,
,
,
,
,
,,
তায়ানকে এখন সম্পুর্ন বেড রেষ্টে থাকতে হবে। কিন্তু ও তায়্যিরাতের সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়ে গেছে। তীব্র সব বুঝেও না বোঝার ভান করছে আর তায়ান বলতে পারছে না।
,
,
,
৷
,
,
,
,
,
,
এভাবে কেটে যায় কয়েকদিন…..
সকালে তীব্র হসপিটালে যায়। কিছু ফাইলের কাজে রিদ্ধ তীব্রের সাথে দেখা করতে হাসপাতালে যায়।
রিদ্ধ কেবিনে বসে আছে। তখনি তীব্র আসে…
— কি হয়েছে?
— স্যার এগুলোতে সাইন লাগবে….
তীব্র ফাইলে সাইন করতে থাকে তখনি রিদ্ধ বলে উঠে…..
— জানেন স্যার আপনি নাই তাই সবটা আমাকে হ্যান্ডেল করতে গার্লফ্রেন্ডটাকে সময় দিতে পারিনা। তাই ভাবতাসে আমি নাকি প্রেম করতাসি… 😥😥
— ভালো তো ব্রেক আপ করে নেও….
— কি বলেন স্যার🙄🙄।
তীব্র সাইন করে ফাইল রিদ্ধকে দেবে তখন রিদ্ধ বলে….
— আচ্ছা স্যার তায়্যিরাত কেমন আছে….??
তীব্র কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি তুষা হাপিয়ে কেবিনে ঢুকেই বলে.।।।
_- রায়হান তায়্যিরাত এসেছে তায়ানের সাথে দেখা করতে….
কথাটা শুনেই রিদ্ধ বিস্ফোরিত চোখে তীব্রের দিকে তাকায়…..
— স্যার….
৪ মাস আগে যে মেয়েটাকে বিদেশ নিয়ে গিয়েছিল সে কিভাবে….. রিদ্ধের অবাক হওয়ার কারন তীব্র বুঝতে পারছে। কিন্তু তীব্রের শান্ত থাকার কারন বুঝতে পারল না রিদ্ধ….. কিন্তু রিদ্ধকে আরো অবাক করে দিয়ে তীব্র বলল….
— ওকে তায়ানের কাছে নিয়ে যা তুষা। তায়্যিরাতকে আমি নিজেই ডেকেছি। কারন তায়ান ওর জন্য পাগল হয়ে গেছে….
তীব্রের এমন কথায় রিদ্ধের জ্ঞান হারাবার উপক্রম। তায়্যিরাতকে ও ডেকেছে মানে। তাহলে কি ওকে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব….. তুষা চলে যেতেই বাকা হেসে তীব্র রিদ্ধের দিকে তাকায় ….
— সারাদিন গার্লফ্রেন্ডের ব্রেক আপের ভয় করলে এমনি বুঝতে পারবে না।
বলেই তায়ানের কেবিনে যায় তীব্র। আর রিদ্ধ ওর পিছে পিছে…. তীব্রের এখন ওর জন্য একটা প্রশ্ন যার কোনো উত্তর নেই রিদ্ধের কাছে….
,
,
,
,
,
তীব্র কেবিনে ঢুকে দেখে একটা মেয়ে তায়ানকে জড়িয়ে ধরেছে। তীব্রকে দেখে মেয়েটা তায়ানকে ছেড়ে দিয়ে দুরে গিয়ে দাড়ায়,.. রিদ্ধ অবাক চোখে মেয়েটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে….. কিন্তু কিছুতেই তায়্যিরাতের সাথে মেলাতে পারছে না। এদিকে তীব্রের আচরন স্বাভাবিক যেন কিছু হয়নি। তখনি মেয়েটি বলে উঠল …..
— সরি ড. রায়হান। আমার করা একটা ভুলের জন্য তায়ানের এই অবস্থা….
তায়্যিরাতের কথায় হালকা হাসল তীব্র….
— আমাকে নয় তায়ানকে বলো। তুমি আর তোমার বাবা যা করেছে তা আমার না ওর সাথে।
_- হুমম কিন্তু তার জন্য আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।।। তাই না। তবে আর কষ্ট করতে হবে না। এবার তায়ানের সব আমি দেখব।
মেয়েটির গলায় অদ্ভুত এক জোর দেখল তীব্র। আর সেটা কিসের ইঙ্গিত হতে পারে তাও বুঝে নিল।
— কষ্ট করব আর তার মূল্য নিব না।
— মানে….
-_ মানে [ হালকা হেশে ] আমার পারিশ্রমিক আমি এক দিক থেকে ঠিক উসুল করে নিয়েছি। এই যে আমার বন্ধুর মুখের হাসি….
কথাটা তীব্র বলল ঠিকি কিন্তু তায়্যিরাতের কেমন একটা লাগল….. কথা ঘুড়িয়ে তীব্র বলো উঠল….
— যার জন্য তায়ানকে মৃত্যুর দাড়ে পাঠালে সেই বিয়েটা কেন করলে না তায়্যিরাত ইসলাম তোয়া…..
কথাটা শুনে তোয়া থমকে গেল। তায়ানের ও একি প্রশ্ন….. তোয়া নিজেকে সামলে শুধু এটাই বলল….
— আমার লাইফের সবচেয়ে প্রিয় একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছি তাই নতুন জিবনে লা রাখতে পারিনি….
কথাটা শুনে তায়ান প্রিয় জিনিসটা নিজেকে মনে করলেও তীব্রের অন্য কিছু মনে হল। হালকা হাসল ও। আর ওদিকে রিদ্ধের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সেদিন কাকে তুলে আনতে গিয়েছিল আর কাকে এনেছে। আর এই মেয়েটি তায়ানের গার্লফ্রেন্ড হলে যে মেয়েটিকে নিয়ে গেছে সে কে? আর তীব্র যদি জানে তাহলে ওই মেয়েটার সাথে এমন করল কেন?
_- এসব বাদ দেও তোয়া… সবটা ঠিক হয়ে গেছে তাই অনেক… [ তায়ান ]
— সেইটাই…. [ তীব্র ]
— আচ্ছা তোয়া তুর কোথায় ওকে নিয়ে আসলে না কেন? অনেকদিন দেখিনা ওকে…. জানো আমি ঠিক করেছি তুরকে আমার এই ফ্রেন্ডের বউ বানাব….
এইটা শুনে তোয়া আড়ালে নিজের চোখের জল মুছে নেয় তারপর বলে…
— কি যে বলো। ও তোমার ফ্রেন্ডের চেয়ে বয়সে কত ছোট জানো। আর ওর সাথে কিভাবে…. [ ধরা গলায় ]
তীব্র তখনি বলে উঠে….
— আমারো ইন্টারেস্ট নেই ওনার বোনের উপর। শেষে দেখা যাবে আমাকেও ধোকা দিয়ে দেবে।
— তুইনা। তোয়া ওর কথায় কিছু মনে করো না।।
— আচ্ছা তোরা কথা বল আমি আসছি….
বলে তীব্র বেড়িয়ে যায় আর সাথে সাথে রিদ্ধ….. তীব্র নিজের কেবিনে ঢুকতেই রিদ্ধ তীব্রকে বলে উঠে…..
— এসবের মানে কি স্যার….
— কিসব?
— তুর তোয়া….
— মানের কি আছে…. ও তায়্যিরাত ইসলাম তোয়া তায়ানের গার্লফ্রেন্ড আর আমরা যাকে তোয়া ভেবে তুলে নিয়েছিলাম ও তোয়ার কাজিন তায়্যিরাত ইবনে তুর ছিল। ব্যাস আর কি? ওদের নামের অদ্ভুত মিলের জন্য তোমাদের কনফিউশান হয়ে গিয়েছিল..….
— আপনি কখন জানলেন আমরা ভুল মেয়েকে তুলে এনেছি…
— যখন প্রথম আমি তুরকে দেখেছিলাম ঠিক তখন…..
— তারমানে আপনি প্রথম থেকে জানতেন ওই মেয়েটি তায়ানের গার্লফ্রেন্ড নয়।
— হুমম জানতাম। আর জানতাম বলেই সেদিন আমি তুরকে ওই লোকগুলোর হাতে তুলে দেয়নি। কিন্তু তোমাদের একটা ভুলের কারনে মেয়েটা ওই লোকগুলোর কাছে চলে যায়। যার দাম দিতে আমাকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেতে হয়েছে।
—- তারমানে সেদিন যদি তোয়া থাকত…
— তাহলে যা বলেছিলাম তাই হত ওই মেয়েটার সাথে। এতদিনে কোথায় থাকত কেউ জানেনা।
— মানে আপনি জেনে বুঝে…
— আচ্ছা তোমার মাথার মধ্যে কি সামান্য কমন সেন্স নেই নাকি। আমার ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ডকে আমি নিজের কাছে কেন রাখব। আর কেনই বা নিজের প্রাইভেট বাডিতে নিয়ে যাব।
রিদ্ধের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
— আপনি কিভাবে বুঝলেন ওইটা সেই তুর না।
বাকা হাসল তীব্র… রিদ্ধের নকটা ধরল।
— একটা কথা বলো। তোমার নক একদিনে ১ সেঃমিঃ হবে…
— না…
— কিন্তু ১সেমি নক কি ছোট হবে…
—- হ্যা….
— ব্যাপারটা ওইরকম….. কারন ওকে যখন আমি প্রথম দেখি তখনি বুঝেছি ভুল হয়েছে তোমাদের কারন তায়ানের সাথে ওর রিলেশন ২-৩ বছরের। as a doctor ওই মেয়েটাকে দেখেই বুঝেছি মেয়েটার বয়স ১৮ বেশি হবে না। সো এই মেয়েটি সেই তায়্যিরাত নয়…..
অবাক হয়ে গেল রিদ্ধ….
— তাহলে ওই মেয়েটাকে এই ৪ মাস আটকে রেখেছেন কেন? কিসের প্রতিশোধ…..
— সেটা তোমার না জানলেও চলবে…
— কিন্তু স্যার…
— রিদ্ধ…
— ওকে স্যার…. [ রিদ্ধি চলে যায় ]
— সবকিছুর কারন প্রতিশোধ হয়না। দাবার গুটির চালে কি হয় কে বলতে পারে….
তারপর নিজের চোখ বন্ধ করে সবটা একবার দেখে নেয় তীব্র……
সেদিন তোয়ার বিয়েতে পার্লারের ওই মেয়েটাকে তীব্র পাঠিয়েছিল। কিন্তু ওরা যেহেতু তোয়াকে চিন্ত না তাই অনেকটা বিয়ের পোশাকে থাকা তুরকেই বউ ভেবে নিয়ে যায় ওরা। বিয়েটা সাদা মাটা হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল। আর তোয়া তেমন সাজেনি। কিন্তু নামের মিল থাকার কারনে তীব্র তায়্যিরাতের কথা জানতে চাইলে তুর হাত তোলে। আর তুরকে রুমে আটকে রাখা হয়। রাতে যখন তীব্র যখন বাড়ি ফেরে আর তুরের তৃষ্ণায় কথা শুনে ওর কাছে গিয়ে ওকে দেখে বেশ অবাক হয় এতটা অল্প বয়সী একটা মেয়েকে দেখে। তীব্র কিছুতেই মেলাতে পারছিল না। কারন ও জানত তায়্যিরাত অর্নাস ৩য় বর্ষে পরে। যা এই মেয়েটার পক্ষে অসম্ভব। পরে তীব্র নিজেই তোয়ার বাড়িতে খবর নেয়। আর ওর ধারনাই ঠিক হয়। আর এটাও শোনে তোয়ার বিয়েটা ভেঙে গেছে। এটা শুনে প্রশান্তির নিশ্বাস ছাড়ে। কিন্তু এসে জানতে পারে যে মেয়েটিকে মানে তুরকে আনা হয়েছিল তাকে ওই লোকগুলো নিয়ে গেছে। পরে তীব্র ওকে নিয়ে আসে ঠিকি কাউকে জানতে না দিয়েই যে এই তুর সেই তায়্যিরাত নয়। ওকে ফিরিয়ে দিতে গিয়েও দেয়না তীব্র…… কিন্তু কিভাবে রাখবে কেন রাখবে বুঝতে পারে না। গাই তুরকে ও নিজের #বন্ধ_দরজার_তুমি🖤 করে রাখে…… ]
নিজের চোখ মেলে তাকায় তীব্র…..
— Sorry…. But I need this girl. তোমাকে আমার প্রয়োজন তুর। জানি অনেকটা অন্যায় হয়ে গিয়েছে…. বাট আমি হেল্পলেস……
চলবে