#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 05..+6.
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
….

তীব্র নেই ভেবে গলার দাগে হাত দিয়ে মেঝেতে পাতা বিছানায় শুয়ে পরে তুর। এতক্ষন যা যা করছিল সবটাই গাড়িতে বসে নিজের ল্যাপটপে দেখছিল তীব্র। তুরের নিজের গলা আর কাধ দেখতে দেখে বুঝল তার বন্দীনী তার দেওয়া চিহ্নকেই দেখছিল। তুরের শরীরে নিজের দেওয়া রেখা দেখে ল্যাপটপটা বন্ধ করে গাড়ির ছিটে মাথা রেখে প্রশান্তির নিশ্বাস ছাড়ল তীব্র। এটা ভেবে তার তুর, বন্দীনি হয়ে তার হয়ে আছে। হ্যা তার তুর। কিছুদিন আগে না থাকলেও কয়েকঘন্টার ব্যবধানে তুরের উপর আলাদা একটা অধিকার বোধ জন্ম নিয়েছে তীব্রের। ৩ মাস আগেও যেটা জোর মনে হত। সময়ের ব্যবধানে তা এখন অধিকারে পরিনত হয়েছে তীব্রের। তুরের উপর অজান্তেই এখন অধিকার শুধু তীব্রের। কারন তুর যে তার #বন্ধ_দরজায়_বন্দিনী…. নয় তীব্রের #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤………….
,

,
,
,

,
,
,
,

[ আপনারা এটাই ভাবছেন আসলে ৩ মাস আগে কি হয়েছিল যার কারনে তীব্রের সাথে তুরের ভাগ্যটা এভাবে জুড়ে গেল। আর তীব্র এমন করছেই বা কেন? ভালোবেসে না অন্যকারন………. আসলে কি হয়েছিল। চলুন একটু ৩ মাস আগের অতীত থেকে ঘুরে আসি….

তুরের লাইফে তীব্র নামের অভিশাপের প্রকাশ ঘটে খুব অদ্ভুত ভাবে। কোন একটা ঝড়ের চেয়ে কম ভাবে না। মাঝ নদীতে উঠা কোন এক অজানা ঝড়……যা তুরের সাজানো সুন্দর জীবনটাই পাল্টে দিল…..
,
,
,
৩ মাস আগের কথা……..

বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান তুর। তাই খুব আহ্লাদী হয়েই বড় হয়ে উঠেছে। এবার HSC exam দিয়েছে। রেজাল্ট এখনো বের হয়নি। পরীক্ষার পর সবার মত তুর ও একদম ফ্রি ছিল। সারাদিনের কাজ ছিল ঘোরাঘুরি, শপিং পার্লার, রুপচচ্চা, মোবাইল নিয়ে টিপাটিপা করা আর মায়ের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে ঝগড়া করা। নিজের কাজিনদের মধ্যেও তুর বেশ জনপ্রিয় কারন ওর দুষ্টমি স্বভাব আর দর্শীপনার জন্য। সবাই খুব ভালোবাসে ওকে। কাজিনরা তুর বলতে পাগল।

সবকিছু ঠিক ছিল তুরের জিবনে। কলেজ শেষ হবার পরেও সব ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হত তুরের। সবাই মিলে ভালোই সময় কাটাতো। তবে প্রেম ভালোবাসা বলতে তেমন কিছুই ছিল না। সবকিছুই ফান মনে হত। কেউ প্রেম করতে দেখল টিজ করত। আর তুরকে কেউ ভালোবাসার কথা বললে সেটা মজার ছলে ফান ভেবে উড়িয়ে দিত। তবে কারো সাথে খারাপ বিহেভ করত না। ফানি ভাবেই না করে দিত যাতে কারো গায়ে লাগে না। সেটা জানা সত্ত্বেও তুরের ক্লাসের অনেকেই ওকে প্রোপোজ করেছিল। তবে তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল যারা না করা সত্ত্বেও তুরকে বার বার বলত। কিন্তু প্রতিবারই তুর হাসির ছলে তা উড়িয়ে দিত।

কিন্তু তাদের মধ্যে একজন ছিল যে তুরকে শুধু বলাতে সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং ওকে অনেকবার ইমোশনালী ব্লাক মেইল করতে চেয়েছে। কিন্তু তা তুর তা কোনোমতে এড়িয়ে গেছে। শেষে পরীক্ষার আগ দিয়ে ছেলেটা ওকে ডিস্টার্ব করতে শুরু করে পরীক্ষায় খারাপ হবে ভেবে তুর ওদিকে মন দেয় না। কিন্তু পরীক্ষার শেষের দিন জানায় ও যদি রাজি না হয় তাহলে ও নিজের ক্ষতি করে দেবে সেদিন কথাটা শুনে প্রচন্ড রাগ লাগে তুরের ও গিয়ে ছেলেটাকে থাপ্পড় মারে…. আর বলে….

— জিসান তোর কাছে নিজের জিবনের দাম না থাকতে পারে, নিজের পরিবারের আদর ভালোবাসার, তোকে কষ্ট করে বড় করার মুল্য না থাকতে পারে কিন্তু আমার আছে। যার কাছে নিজের জিবনের মুল্য নেই সে আমার কি মুল্য দেবে।

— তুর আমি সত্যি..

— আর একটাও কথা বলবি না জিসান। তোর বাবার অনেক ক্ষমতা থাকতে পারে। একমাত্র সন্তান তুই তোর বাবার। তাই নিজেকে পাবনার পাগল প্রুভ না করে সুস্থ মানুষের মত থাক….

— আমি তোকে চাই তুর।

— একদম ফালতু কথা বলবি না। রাস্তায় এসব সিনক্রিয়েট করে নিজের ফ্যামিলির সন্মান নষ্ট করার ইচ্ছে তোর আছে কিন্তু আমার নেই। তোর যা ইচ্ছে করতে পারিস😡

তারপর সেখান থেকে রেগে চলে যায় তুর। এর পর আর জিসানের সাথে ওর দেখা হয় না। পরীক্ষার পর ফ্রেন্ডের সাথে ঘোরাঘুরি করলেও জিসানকে আর কখনো দেখেনি ও…….
,
,
,

,
,
,
,
,
,

,তুরের জিবনে এটাই প্রথম কোনো সমস্যা ছিল। কিন্তু সেই অব্দিও সব ঠিক ছিল। নিজের লাইফে প্রচন্ড হ্যাপি ছিল তুর। কিন্তু সবটা যেন বদলে গেল সেদিন যেদিন তুরের লাইফে তীব্র নামের অভিশাপের প্রকাশ ঘটে …….

সেদিন ছিল ওর চাচাত বোনের বিয়ে। হঠাৎ করেই বিয়েটা ঠিক হয়ে গিয়েছিল। সব ওর বোন এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে পরে। হঠাৎ করে এভাবে সাদামাটা বিয়ের মানেই খুজে পায় না তুর। বলা নেই কওনা নেই বিয়ে। প্রচন্ড খারাপ লাগে তুরের। কারন একটাই কাজিনদের মধ্যে তুরকে সবচেয়ে বেশি ওই ভালোবাসে। তাই ও এভাবে চলে যাবে মানতে কষ্ট হয় তুরের। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তুর মন খারাপ করে গেল। গিয়ে দেখে তেমন কোনো আয়োজন হয়নি। মোটামুটি ঘরোয়া ভাবে। অথচ কতই না ইচ্ছে ছিল জাকজমক ভাবে ওর বোনের বিয়ে করার যাতে তুর অনেক মজা করবে। কিন্তু সব মাঠে মারা গেল। পরে গিয়ে জানত পারল যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সে নাকি বিদেশ চলে যাবে তাই এত তাড়াহুড়ো। আর তাতে ওর বোনের সন্মতি দেখল। যাতে কিছুটা হলেও রাগ কমলো। কারন দুলাভাইয়ের ছবি দেখে পছন্দ হলো তুরের…. তাই ওরা নিজেদের মত আনন্দ করতে লাগল।

কিন্তু বিপত্তি বাধল পার্লারের লোকজন নিয়ে। যাদের ডেকেছিল তারা এসে পৌছায়নি। তাদের মধ্যে একজন এসে বলল যেহেতু বিয়ের সিজন তাই এক্সট্রা এখানে আসতে পারবে না। ওনারা যদি চায় তবে পার্লারে গিয়ে সাজতে পারে। সবাই খুব ঝামেলায় পরে গেল। তখনি নিমী বলে উঠল…

— আচ্ছা সামনেই তো পার্লার । যেতে ১০ মিনিট ও লাগবে না। আমরা ওখানে যেতেই পারি। এমনিতে অনেক দেরি হয়েছে এত শর্ট নোটিশে কেউ আসবে না।

সবাই ওর কথা চিন্তা করে ভেবে দেখল তাই ঠিক হবে। ওরা মিলে পার্লারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। ওরা সবাই যাবার সময় পার্লারের সেই মেয়েটা তুরকে ডেকে বলল…..

—আপু আপনি কিন্তু খুব সুন্দর। আপনিও আসুন। সবাই যাচ্ছে আপনিও ওনাদের সাথে আসুন।

ব্যস তুর কে আর পায় কে? তবে ওর সাজতে না, সাজ দেখতে ভাল লাগে তাই তুর এক নিমিষেই রাজি হয়ে গেল। তুরকে রাজি হতে দেখে মেয়েটা হালকা ম্লান হাসি দিল। ওরা কাজিন সবমিলিয়ে ৬ জন ছিল সাথে ওদের ফুপি। তারপর বাইরে বেড়িয়ে গাড়িতে করে যেতে চাইলে পার্লারের মেয়েটি বলল সামনেই পার্লার তাই এখন সময় নষ্ট না করে রিকশা নিলেই হয়। ব্যাপারটা বেশ মজার ছিল। রাত প্রায় ৮টা তাই ওরা ৩টা রিকশা ঠিক করে বেড়িয়ে পড়ল।

সামনের টায় বিয়ের কনে, ফুপি, পরের টায় ৩জন, আর শেষের টায় তুর, ননী, আর নিমী। অবশেষে ওরা পার্লারে পৌছায়।

সবাই নিজেদের সাজ খোজে বিজি হয়ে পরে। ঘড়ির কাটা কখন ৮ টা থেকে ১১টায় চলে যায় তার কোনো খবর থাকে না। মেয়েদের সাজ বলে কথা। ওদিকে বর পক্ষ এসে বসে আছে। ফুপির মোবাইলে কল আসছে। এটা দেখে বেশ মজা লাগছে তুরের….

— তোদের বিয়েতে এত ভেজাল আমার বিয়েতে দেখিস আমি বিয়ের আগেই সবকিছু রেডি করে রাখব যাতে কোনো সমস্যা না হয়।

— আহা তোর বর ভেজাল করলে তোকে মারবে নাকি। [ ননী ]

— একদম না😡 আমার বর দুনিয়ার বেস্ট হবে। আমাকে মারা তো দুরে থাক ধমক ও দিবে না।।😘 ভালোবেসে ভরে রাখবে আমাকে।

— চুপ কর আতুর ঘর। দেখিস তোর না বিয়েই হবে না।।😁

— বিয়ে হবে না মানে🙄 তাইলে আদর সোহাগ করবে কে?

— বাহহ.. জামাইয়ের সোহাগ খাওয়ার এত শখ। [ ননী ]

— তাইলে.. 😎 জামাই আদর করব বইলা কথা। নাইলে জামাইরে আচলে থুরি ওড়নায় বানতাম কেমতে?

— যাহহ দোয়া কইরা দিলাম তোর বিয়ে হবে না।🤣🤣 [ নীমি ]

— নীমি😡😡

— আচ্ছা আদর খাওয়ার যখন শখ তাইলে তুই বিয়া ছাড়াই জামাইর আদর খাবি😁 [ নীমি ]

— বিয়া ছাড়া মানে🙄

— ওরে আতুর ঘররে কেউ বুঝা😀😀

— চুপ করবি তোরা😤

এভাবেই ওদের মাঝে হাসি মজা চলতে থাকে। সবাই সাজলেও তুর সাজতে চায়নি। কিন্তু সবাই সেজেছে তাই ও না করেনি। তবে পার্লারের সবচেয়ে সিম্পল সাজটাই দিয়েছে। তবুও ওর দেখে সবাই পঞ্চমুখ।

— আজ তুরের বিয়েও দেওয়া যাবে 😁 কিরে বিয়ে করবি?

— হ্যারে তুই তো বিয়ের জন্য তৈরি শুধু বরের বাকি। যদি পাইয়া যাই তাহলে তোর বিয়েও পাক্কা।

— আমি না আমার বিএফ ছাড়া কাউকে বিয়ে করব না। আর ও যদি আজকে আসে তাহলে ওর সাথেই পালিয়ে যাব। কারন আমার পক্ষে এত সব কিছু মেনে বিয়ে করা পসিবল না। you know i am different 😎😎

— বয়ফ্রেন্ড তোর। 🙄🙄

— আসতে বলেছি দেখে নিস। আজকেই পালাব
এমনি এমনি কি এই পেত্নী সাজ দিছি😁😁 [ মজা করে। ]

তারপর ওরা সেজে গুজে বাড়ি ফিরতে যায়। বেশ রাত হয়ে গিয়েছে তাই রাস্তা প্রায় ফাকা। তাই ওরা রিকশা নিয়ে ফিরে আসতে চায়। সবার পিছনের গাড়িতে থাকে তুর আর ওর দুই কাজিন। আর বাকিরা সামনে। বিয়ের সবকিছু নিতে ওদের রিকশা একটু পিছয়ে পরে।

রাতে শহর হলেও রাস্তাটা খানিকটা নিরব। কিন্তু ৩জন বেশ হাসি খুশি হয়েই ফিরছে আর তুরকে টিজ করছে। ঠিক তখনি ওদের সামনে একটা কালো মাইক্রোবাস থামে। ওরা কিছু বুঝে উঠার আগেই কিছুলোক এসে ওদের গাড়িতে তুলে নেয়।

তারপর আর ওদের কিছু মনে থাকে না। ওদের ৩জনকে বেহুশ করে ফেলে লোকগুলো। নিয়ে যায় নিজেদের সাথে……
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.

— স্যার ছেলেটার অবস্থা ভালো না। বেশ খারাপ অবস্থায় আছে। ওর বাবার সাথে কথা হয়েছে। ওর মা নাকি অজ্ঞান হারিয়ে ওখানেই ভর্তি। ছেলেটার চিকিৎসা চলছে কিন্তু ডক্টর কিছু বলছে না। বাচবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

এতক্ষন ধরে সোফায় বসে থুতনি ভর দিয়ে কথাগুলো শুনছিল তীব্র। ওর অবস্থা খারাপ তীব্র তা ভালো করেই জানে। তীব্র তা দেখেই এসেছে….

— ওর বাবাকে ফোন দেও।

তীব্রের কথায় ওর বাবার কাছে ফোন দেয়। কল ধরতেই ওপাশ থেকে কারো ভেজা রাগী কন্ঠের আওয়াজ পায় তীব্র।

— আংকেল ওর অবস্থা কেমন?

— সবটাই তো জানো? [ নিজেকে সামলে ]

— আপনি কি চান? যে বা যারা আপনার ছেলের এই অবস্থার জন্য দায়ী তাকে কি শাস্তি দিতে চান বলুন?

— আমি শুধু আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই। আর কিছু চাওয়ার নেই। শুধু এত টুকুই বলব সে কোনদিন ভালো থাকবে না।

— খেয়াল রাখবেন ওর। [ ফোনটা কেটে দেয় তীব্র। তারপর খুব শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে……..

— মেয়েটা কোথায়?

— স্যার। [ ঢোক গিলে ] স্যার মেয়েটাকে এখানে আনা হয়েছে। কিন্তু ওর সাথে আরও দুইটা মেয়েকেও আনা হয়েছে। কারন ওরা বুঝতে পারেনাই কোন মেয়েটাকে আনতে হবে।

— হুমম…. আমি মেয়েটিকে দেখতে চাই।

— জি স্যার।
,
,

,
,,
,

,
,
,
,
,

তীব্রের সামনে মুখে ফাসির আসামির মত কালো কাপর বেধে হাত দুটো পিছনে বাধা বসে আছে ননী, নীমি আর তুর।

— ওদের মুখের কাপর সরাও। [ গম্ভীর সুরে ]

_- ওদের মুখের কাপর সড়ালো কিন্তু কেউ তীব্রকে দেখতে পেল না। কারন ৩ জনের চোখ আগেই কালো কাপর দিয়ে বাধা হয়েছিল। তখনি তীব্র গম্ভীর গলায় আবার বলে উঠে…

— তোমাদের মধ্যে তায়্যিরাত কে?

তিনজনে এদিকে ওদিকে তাকাল।

তীব্র আবার জিজ্ঞেস করল। ওর কন্ঠ শান্ত থাকলেও অদ্ভুত এক ভয়ংকর গাম্ভীর্য বিদ্যমান ছিল। যা শুনলে আত্না কেপে উঠে।

— কিহল কে তায়্যিরাত…

খুব জোরে চিল্লিয়ে। ভয়ে ওরা ৩ জন কেদেই দিল। তখন কাপা কাপা ঠোঁটে তুর বলে উঠল.. আমি…

তুরের জবাব পেয়ে তীব্র শান্ত ভাবে বলে উঠল।

— ভয় পেও না তোমাকে তোমার বয়ফ্রেন্ডের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি। তুমি তোমার ফ্যামিলি, আর ওনারা কষ্ট পাবে বলে কিছু বলতে পারো নি। তাই এইজন্যই তোমাকে এখানে আনা। [ বাকা হেসে ]

ওর কথায় তুর আকাশ থেকে পড়ে। কিসব বলছে লোকটা। তারমানে… ও কিছু বুঝে উঠার আগেই তীব্র বলে…

— তায়্যিরাত কে রেখে বাকি মেয়েদের নিয়ে যাও।

ননী আর নিমী বেশ ভয় পেয়ে যায়। কোথায় নিয়ে যায়। কিন্তু ওদের মনে এটাও হয় তবে কি তুর সত্যি সত্যি নিজের বয়ফ্রেন্ডের কাছে যাওয়ার জন্য ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে মিলে প্লান করল। কিন্তু কেন? তুর সত্যি ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যাবে।

ওদের তুরের থেকে আলাদা করা হয়। আর তুরকে ওখানেই ফেলে রাখা হয়…..

,
,
,
,

গম্ভীর ভাব নিয়ে বসে আছে তীব্র। তখনি ওর পিএ এসে বলে উঠে….

— স্যার তিনজনের কি করব? ওই লোকগুলো তো এসে যাবে।

কিছুক্ষন চুপ থেকে তীব্র বলে উঠল…..

_- আমার যা করার ওই শুধু ওই মেয়েটার সাথে করব? বাকিদের স্বাভাবিকভাবে বাড়ি পাঠিয়ে দেও যেন ওদের মনে হয় এটা কোনো কিডন্যাপিং নয়।

— ওরা যদি ওই মেয়েটার কথা জিজ্ঞেস করে?

— এটাও কি তোমাকে বলে দিতে হবে? ওদের ব্যাপারটা এমন ভাবে বুঝাও যাতে ওরা বাসায় গিয়ে বলে মেয়েটি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালাবে বলে এতকিছু করেছে… মানে মেয়েটি আগে থেকেই সব জানত? আমি চাইনা কোনো ঝামেলা হোক। যাতে ওর পরিবার নিজেই ওর বিমুখ হয়ে ওকে খোজার চেষ্টা না করে….

— ওকে…. [ বলে চলে যায় ]

— নিজের ফ্যামিলির সন্মান, ভালোবাসা আদরের জন্য আরেকজনের প্রানের কোনো দাম নেই। যে পরিবারের জন্য এমন করেছিস সেই ফ্যামিলি তোকে ধুরছাই করবে? কোনোদিন তোকে ফিরেও দেখবে না।

,
,
,
,

,
,
,
,
কিছুক্ষন পর তীব্রের কাছে কিছু লোক আসে। তীব্র ওদের দেখে পায়ের উপর পা তুলে ড্রিংকসের গ্লাসে সিপ দিল। দুজন লোক এসে তীব্রের পাশে দাড়াল….

— স্যার আপনি যেই মেয়েটিকে নিতে আসতে বলেছেন তাকে নিতে এসেছি। যদি মেয়েটিকে আমাদের পছন্দ হয় তবে আপনাকে ভালো এমাউন্টও প্রে করতে রাজি আছি। তবে যদি সুন্দরী না হয় তবে…..

— তোমরা ভুলে যাচ্ছ তোমরা কার সাথে কথা বলছ? [ গম্ভীর গলায় ] আমি কোনো দালাল নই যে তোমাদের কাছে মেয়েদের বিক্রি করব। আমি শুধুমাত্র ওই মেয়েটিকে তোমাদের দিয়ে দিচ্ছি। যাতে ও কোনোদিন ভদ্র সমাজের মুখ দেখতে না পারে…

— ওকে স্যার… আপনি যদি এটা চান তবে আমরা আপনাকে 100% গ্যারান্টি দিচ্ছি ওই মেয়ে যদি আমাদের পাঠানো সবচেয়ে ভাল জায়গায় ও পরে তাহলে সেটা নরকের চেয়ে কম হবে না।

— ওকে কেউ খুজে পাবে নাতো।

— স্যার। আমাদের কাজই এটা। আর আমরা ইন্টারন্যাশনাল human traping এর সাথে জড়িত। সব মেয়েদের বিদেশে পাঠানো হয়। আর মেয়েটা যদি সুন্দরী হয় তবে তো কথাই নেই। ইন্টারন্যাশনাল মার্রকেটে সেটা কতটা ভ্যালুএবল হতে পারে তা আপনার ধারনার বাইরে…..

ওদের সাথে কথা বলতেও তীব্রের ঘৃনা হচ্ছে।সেটা তুরের উপর রাগের চেয়ে বেশি না। তীব্র তুরের জন্য ওই রকম কিছু চিন্তা করেছে। ওর শুধু তুরকে কোনো জঘন্য জায়গায় পাঠাতে চায় যাতে ও পচে মরে।

— ওকে নিয়ে তোমরা কি করবে তা জেনে আমার লাভ নেই। শুধু একটা কথা মনে রেখ মেয়েটি যেন কোনোদিন এদেশে ফিরতে না পারে। বাচার জন্য যেন মরতে চায়।

— স্যার বাংলাদেশের বর্ডার পার হলে ও কোন দেশে যাবে তা আমরা নিজেরাও বলতে পারব না। শুধু এতটুকু বলব আপনি যা বলছেন তার চেয়েও খারাপ কিছু হবে। কারন এই জগত কেউ বাচতে পারে না। সবাই মরেই বাচে… [ অট্টহাসিতে ফেটে পরে ] তবে স্যার মেয়েটার প্রতি এরকম রাগের কারন জানতে পারি।

তীব্র রাগী চোখে ওদের দিকে তাকায়….

— যেটা বলা হয়েছে শুধু সেইটুকু কর…

— সরি স্যার….

তীব্র কিছু না বলে চলে যায় সেখান থেকে।। তখনি লোক দুটো নিজেদের মধ্যে বলা শুরু করল…

— ওই তোর কি দরকার ছিল এসব জিজ্ঞেস করার। আমাদের মেয়ে দরকার পেয়ে গেলেই হলো। আর তা পাচ্ছি বিনা পয়সায়। এখন মেয়েটাকে দিয়ে যা পাবো তাই লাভ….

— তারপরেও শুধু শুধু একটা মেয়েটাকে কেউ বিদেশে চালান করতে চায়।

— দেখ গিয়ে কোনো কান্ড ঘটিয়েছে তা ঢাকার জন্য এত কিছু। হয়ত এখানে থাকলে সবাই জেনে যাবে।

— তা ঠিক।

— এখন চল আগে কাজ সেড়ে নি। মেয়েটাকে দেখে আসি। ভালো লাগলে তো ভালোই আর না লাগলেও সমস্যা নেই। যা পাব তাই।

— কিন্তু ফ্রিতে কি ভালো কিছু পাব।

— আগে তো দেখি….

তারপর দুজন মিলে তুরের কাছে গেল।
,
,
,
,

,
,
,
,
,

চোখ বাধা থাকার কারনে তুর কিছু দেখতে পায় না। কিন্তু হঠাৎ সবটা শান্ত হয়ে যাওয়ার কারনে ওর কলিজা শুকিয়ে আসে।

— নিমী, ননী তোরা কি এখানে আছিস?

কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। তাই তুর আবার জিজ্ঞেস করল, ” এখানে কেউ কি আছে”? কিন্তু কারো সাড়া পেল না। এবার তুর খুব ভয় পেয়ে গেল। কি করবে বুঝতে পারল না। নিজের অজান্তেই ভয়ের কারনে তুরের গলা থেকে নিজেকে বাচানোর আর্তনাদ বেড়িয়ে এলো।

— প্লিজ এখানে কেউ আছেন। থাকলে সাড়া দিন। কেন আমাকে এখানে আনা হয়েছে?? যেতে দিন আমাকে?

অন্ধকারে চোখে কালো কাপর আর হাত বাধা থাকা অবস্থায় অঝোরে কাদতে লাগল তুর। কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছে না। শুধু মুখ থেকে একটা কথাই আসছে….

— আব্বু তুমি কই? আমাকে নিয়ে যাও। অন্ধকারে ভয় লাগছে আমার। আম্মুকে বলো না তুর আর কোনোদিন দুষ্টমি করবে না। তবুও আমাকে নিয়ে যাও… আমার খুব ভয় করছে এই অন্ধকার আমার চোখের বাধনটা কেউ একটু খুলে পানি দেও আমাকে……

[ ওর বাবা মাকে ডাকছে আর কাদছে। কিন্তু ও জানেনা ও চাইলেও ওর ডাক কারো কাছে পৌছাবে না। কয়েকঘন্টা আগে যে লাইফের জন্য তুর নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করছে কয়েকঘন্টার ব্যবধানে তা অভিশপ্ত হয়ে গেছে…. ]

— প্লিজ যেতে দিন। নাহলে আমাকে একটু পানি খেতে দিন। তেস্টায় গলা শুকিয়ে মরে যাচ্ছি আমি। একটু পানি দিন।

কিন্তু কেউ ওকে পানি দিতে এগিয়ে এলো না। ওর কথা কারো কানেই গেল না। তখনি নিজের শরীরে সুচের মত কিছু ফিল করল তুর। আর মাথাটা ঘুরে ওখানেই পরে গেল। হ্যা ওই দুজন লোক এসেছে তুরের শব্দ শুনে ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে দিয়েছে।

— ইসস বেচারি একটু পানি দিলেই হতো।

— আরে ছাড়তো। যেখানে পাঠাব সেখানে পানি চিতকার শোনার মত কেউ থাকবে না।

— তা ঠিক। আচ্ছা বাদ দে.. মুখের কাপরটা সরা মুখটা তো দেখি। দেখি চলে কিনা। বিনা পয়সার জিনিস বলে কথা। [ শয়তানি হাসি দিয়ে ]

মেঝেতে পরে আছে তুর। তুরের মুখের কালো কাপড়টা সরাতেই ২ জন লোকের ঝটকা খাওয়ার মত অবস্থা। ওরা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ী করল। নিজের অজান্তেই প্রথম লোকটির মুখে মাসাল্লাহ শব্দটি বেড়িয়ে এলো। এতটা স্নিগ্ধ আভা ফুটে আছে তুরের মুখে। চেহারার বাচ্চামির আদোলটা এখনও যায়নি।

— এই এইটা মেয়ে নাকি পরী রে…. [ উচ্চস্বরে হেশে ] এরকম মেয়েকে কেউ বিনা পয়সায় ছাড়ে। আরে এরজন্য ৩/৪ গুন না যা ডিমান্ড করা হবে তাই দেবে।

— লোকটা কি পাগল নাকি? এমন মেয়েকে কেউ হাত ছাড়া করে তাও আবার বিনা পয়সায়। একদম অল্প বয়সী। আহারে মনে হয় শত্রুতার বলি হয়েছে মেয়েটি।

— ছাড় তো আমাদের কি? আমাদের লাইনে এসব চলে না। বিনা পয়সায় চাদ পেয়েছি কোনোমতে নিয়ে যেতে পারলেই হয়।

— চল গিয়ে কথা বলে মেয়েটাকে নিয়ে যাই।

,
,
,
,,
,
,

,
,তারপর ওরা চলে গেল। আর মেঝেতে পরে তইল তৃষ্ণার্ত চেতনা হারানো তুর… যার কোনো ধারনাই নেই কি হতে যাচ্ছে তার সাথে।। তাকে হায়নাদের মাঝে বলি দেবার তরজোর চলছে সবার। তাহলে হয়ত সে নিথর ভাবে পরে থাকত না। তবে জেগে থাকলেই বা কি করত এই পরিস্থিতিতে। লোকগুলো ভালোই করেছে ওকে ঘুম পাড়িয়ে, কিছুক্ষনের জন্য হলেও শান্তি পাবে ও…….
,

,#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 06…….

পানির পিপাসায় কাতর হয়ে মেঝেতে পরে রইল তৃষ্ণার্ত চেতনা হারানো তুর… যার কোনো ধারনাই নেই কি হতে যাচ্ছে তার সাথে।। তাকে হায়নাদের মাঝে বলি দেবার তরজোর চলছে সবার। তাহলে হয়ত সে নিথর ভাবে পরে থাকত না। তবে জেগে থাকলেই বা কি করত এই পরিস্থিতিতে। লোকগুলো ভালোই করেছে ওকে ঘুম পাড়িয়ে, কিছুক্ষনের জন্য হলেও শান্তি পাবে ও…….
,
,
,
,

,
,

,
,
ওদিকে সকালের সময় নিমী আর ননী বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে গেল তীব্রের লোকেরা। ওরা বাসায় যেতেই সবার ভয় কেটে গেল। সবাই ওদের কাছে এসে কান্না করে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু সবাই আবার হতবাক হয়ে গেল তুর নেই বলে। সবাই ওদের তুরের কথা জিজ্ঞেস করলে ননী আর নীমী বলে, ” তুর ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়েছে। আর যার জন্য ও নিজে সমেত আমাদের কিডন্যাপ করিয়েছে ওর বয়ফ্রেন্ডের দ্বারা। আর তাই ওদের ফিরিয়ে দিয়ে গেছে আর তুর ফেরেনি। আমরা ওকে বাড়িতে ফিরে আসার কথা বলব বলে আমরা আসার সময় একবারো আমাদের সাথে কথা বলতে আসেনি। ওর বয়ফ্রেন্ড বলেছিল। কিন্তু ও আমাদের সামনে আসেনি। কতটা স্বার্থপর মেয়ে হয়ে গেছে দেখেছ আমাদের তুর। ” বলেই নিমী আর ননী কান্নায় ভেঙে পরল। ওদের বা দোষ কি ওরাও তো ছোট। তীব্রের লোক ওদের এমনভাবে ব্রেন ওয়াস করেছে যাতে ওরা যা বলেছে নীমি আর ননী তাই বিশ্বাস করে তাই বলছে। কথাগুলো শোনা মাত্রই তুরের মা ওখানেই জ্ঞান হারালো। সবাই ওনার জ্ঞান ফেরানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলেন। ওনার জ্ঞান ফিরল তুরের কথা ভেবে চিতকার করে কাদতে থাকে। ওনি কেন কেউ মানতে পারছে না তুর এমন করবে। ওর যদি কাউকে ভালো লাগে তাহলে বললো না কেন? কিন্তু যদি কিডন্যাপ করার হত তাহলে ওদের কেন ছেড়ে দিল। কারো মাথায় কিছু আসছে না। সবকিছু মিলালে এটাই বোঝা যায় তুর ইচ্ছে করে করেছে।

কিন্তু তবুও তারা পুলিশের কাছে গেল। পুলিশ সবকিছু শুনে বলল,” যেহেতু বাকি দুজন ফিরে এসেছে তারমানে ও ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথেই গেছে কিন্তু তবুও যখন ওনারা চাইছেন ওনাদের মেয়ে কোনো বিপদে আসে কিনা ওনারা খোজ করবেন। কারন তখনো তুরের ১৮ বছর হয়নি।

ওদিকে লোকগুলো সকালে তুরকে দেখে চলে গেছে তারপর আর কেউ তুরের দরজা খোলেনি। ও কি অবস্থায় আছে তার কোনো খবর কারো নেওয়ার প্রয়োজন হইনি। কারন তীব্রের কড়া নির্দেশ ওর প্রতি কেউ যাতে দয়া না দেখায়। এমনকি লোক গুলো যতক্ষন না এসে নিয়ে যায় ততক্ষন যেন দরজা কেউ না খোলে। ও চায় না তুরের নিশ্বাসে চারদিক বিষাক্ত হয়ে যাক। হয় পারলে নিশ্বাস আটকে ওকে মেরে ফেলা হত তীব্রের বাড়িতে শ্বাস নেওয়ার অপরাধে কিন্তু তীব্রের উদ্দেশ্য তুরকে মারা নয় বরং তুরকে বাচিয়ে মেরে রাখা।

সারাদিন এভাবেই বন্ধ দরজার অন্ধকারে কেটে যায়। লোকগুলো কাল ওকে নিয়ে যাবে। আজি নিয়ে যেত। কিন্তু তীব্র নিয়ে যাওয়ার ব্যপারে কিছু না বলায় ওর ম্যানেজার তুরকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেইনি। ম্যানেজার মধ্য বয়সী একজন মানুষ। তীব্রের বিশ্বাস্ত। অনেক আগে থেকেই তীব্রের সাথে আছে। ওর সবকিছু ওনি সামলায়। কিন্তু তীব্রের এমন রুপ আগে কখনো ওনি দেখেনি। তবে তীব্রকে কিছু বলার সাহস নেই। কারন চাকরি যাওয়ার ভয়।

,
,
,
,

,
,
সেদিন সারাদিন তীব্র বাড়ি ফেরে না। প্রায় মাঝরাতের দিকে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে ঢুকে রুমে দিকে এগোতেই তীব্র চাপা কন্ঠে কারো আর্তনাদ শুনতে পায়। রাতের এই নির্জনতায় যেখানে নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাওয়া যায় সেখানে তুরের চাপা কন্ঠের আর্তনাদ যে তীব্রের কানে পৌছাবে এতে কি? কিন্তু কিছু বুক ফাটা আর্তনাদ কয়েকটা মানুষের কান পর্যন্ত পৌছালেও হৃদয় পর্যন্ত পৌছায় না।

তীব্র আওয়াজটা শুনে বুঝতে পারল কিসের আওয়াজ হচ্ছে। তীব্র না চাইতেও ওই দরজার দিকে গেল। দরজাটা খুললেই আর্তনাদের শব্দটা বেড়ে গেল। তীব্র বেশ বিরক্ত নিয়েই দরজাটা দুম করে আটকে নিজের রুমে চলে গেল।

বড্ড রাগ লাগছে তীব্রের ওই মেয়েটার প্রতি না নিজের প্রতি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না …. ও রেডি হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে।

কিছুক্ষন পর বিছানা থেকে উঠে পরে। সারাদিনের এত ক্লান্তি কিন্তু চোখে এক ফোটায় ঘুম খুজে পাচ্ছে না। না চাইতেও বার বার মেয়েটার আর্তনাদ তীব্রের কানে বাজছে। না পেরে তীব্র নিজের কানে বালিশ চাপা দেয়। কিন্তু লাভ হয় না। মনে হচ্ছে কেউ ওই মেয়েটার চিতকার রেকর্ড করে তীব্রকে শোনাচ্ছে। অথচ এই ঘর থেকে মেয়েটা ঘরের দুরত্ব এতটাই বেশি ওখানে দরজার ভিতরে গলা ফাটালেও তীব্রের রুম থেকে শুনতে পাওয়ার কথা না। তবুও তীব্রের কানে তা বাজছে। যেন ইচ্ছে করে তীব্রকে তা শুনতে বাধ্য করছে এই নির্দোষ মেয়ের আর্তনাদ।

একসময় তীব্রের প্রচন্ড পরিমানে রাগ উঠে যায়। না চাওয়া সত্ত্বেও তীব্র তুরের রুমে যায়। খুব রেগে গেছে তীব্র। মেয়েটা কিছুতেই শান্তি দিচ্ছে না।

কিন্তু ভিতরে ঢুকেই তিনি তীব্র হতবাক হয়ে গেল তীব্র। পুরো বাড়িতে বাইরের আবছা আলো থাকলেও তুরের রুমে আলোর লেশ নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখন আর আওয়াজ আসছে না। কিন্তু অন্ধকারটা যেন খুব টানছে তীব্রকে। কি মনে করে নিজের অজান্তেই অন্ধকার রুমে ঢুকে পড়ল তীব্র। দরজাটা ছেড়ে দেওয়া মাত্র তা বন্ধ হয়ে গেল। তীব্র অন্ধকারে কিছু একটা খোজার চেষ্টা করছে ওর হাতে মোবাইল আছে কিন্তু তা জালানোর কথা ভুলে গেল। ও কি খুজছে নিজেই জানে না।

সামনের দিকে এগোতেই তীব্র কিছু একটার সাথে বেধে তার উপর পরে যায়। আর তখনী খুব জোরেই কেউ চিতকার করে উঠে। তীব্র কি করবে তা ভেবে না পেয়ে দ্রুত মোবাইলের টচটা অন করে। টচ মেরে সামনে দেখতেই তীব্র থমকে যায়। অন্ধকারের লাইটের পুরো ফ্লাসটা তুরের মুখের উপর পরল। তীব্র তুরের উপর পরেছে। তীব্রের সম্পুর্ন ভর তুরের উপর। একটা মেয়ের এতটা কাছাকাছি হওয়ার কারনে তীব্রের কেমন অস্বস্তি লাগছে। ঠিক তখনি চেয়ে চোখ মুখ খিচে তুর আবার আবছা আর্তনাদ করে। যাতে তীব্রের বুঝতে বাকি থাকে না মেয়েটির কষ্ট হচ্ছে। তীব্র তুরের উপর থেকে উঠার চেষ্টা করতেই তীব্র আবার পড়ে গেল তুরের উপর। কারন তুর ওর টি-শার্ট টেনে ধরেছে। তীব্র কি করবে বুঝতে পারছে না। ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে হলে তুরকে স্পর্শ করতে হবে যা তীব্র চায় না। ও কোনোমতে নিজেকে ছাড়িয়ে একহাত দুরে সরে হাপাতে থাকে।

তীব্র গিয়ে রুমের লাইট জালায়। লাইটা জালাতেই দেখে তুর উল্টোভাবে শুয়ে আছে। তীব্র চলে যেতে চায় কিন্তু তার আগেই তুরের আবছা ডাক তীব্রের কানে যায়। কেমন জানি লাগছিল তীব্রের। তীব্র নিজের অজান্তেই তুরের কাছে গেল। ওর কাছে গিয়ে শোনার চেষ্টা করে তুরকি বলতে চাইছে….

— ” প্লিজ আমাকে একটু পানি দেও। তেস্টায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ”

তুর বার বার পানি চাইছে। তীব্রের কেমন জানি লাগল। তীব্র ওর হাত ধরে পালস চেক করল। ক্ষিদা তৃষ্ণা আর এসবের কারনে একদম নেমে গেছে। বুঝতে পারল এভাবে থাকলে মেয়েটা ওদের হাতে যাওয়ার আগেই মারা যাবে। কিন্তু তীব্রের উদ্দেশ্য মেয়েটাকে যন্ত্রণা দেওয়া। তাছাড়া ওকে মেরে ওর কি লাভ। এমনিতেও ওর উদ্দেশ্য কাউকে মেরে ফেলা নয়। তুরের জন্য মায়া নয় কিন্তু নিজেকে ছোট লাগছে। কারন ওর কাজ মানুষকে বাচানো। যতই অন্যায় করুক না কেন। তীব্র কখনোই চাইবে না তার সামনে কেউ মারা যাক। তাহলে এটা তার দায়িত্বের খেলাপ।

তাই তীব্র রুম থেকে বেড়িয়ে পানি নিয়ে আসে। আর ওর অবস্থা কেমন তা জানার জন্য তুরের কাধ ধরে সোজা করতেই বড়সড় জটকা খেলে তুরের মুখটা দেখে।এই প্রথম তুরের মুখটা দেখল তীব্র। অদ্ভুত এক মায়া ফুটে উঠেছে তুরের মুখে। স্থীর হয়ে গেছে তীব্র… কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে তুরের কাছে যায়। অদ্ভুত চাওনিতে দেখতে থাকে তুরকে। তুরের সম্পর্কে যেমন ধারনা করেছিল তীব্র এখানে সবটাই তার বিপরীত। তীব্রের বিশ্বাস হচ্ছে না মেয়েটা এমন কিছু করতে পারে। মেয়েটির মুখের সাথে তায়্যিরাতের কোনো মিল খুজে পেল না তীব্র। কিন্তু ওকে দেখে অদ্ভুত এক অনুভুতি কাজ করল তীব্রের।তুরের মুখের এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে কানের নিচে গুজে দিল। আলত করে তুরের গাল স্পর্শ করল। যেন অনেকদিনের স্বপ্নটা বাস্তবে দেখে তা সত্য কিনা যাচাই করছে তীব্র……

তুরের ডাকে ঘোর ভাঙে তীব্রের…. ও তুরকে উচু করে পানিটা খাওয়ায়। সারাদিনের তৃষ্ণার্ত তুর পানি পেয়ে এক নিমিষেই শেষ করে তীব্রের বুকেই লুটিয়ে পরে। তীব্র এমন ঘটনায় একটু থমকে যায়। কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর দ্রুত তুরের মাথা নিচে রেখে চলে আসতে চায়। কিন্তু এবারো তুর আটকে দেয়।

এবার তীব্রের নিজের প্রতি রাগ লাগছে কেন আসতে গেল ও এখানে? মেয়েটা তো ওকে ছাড়ার নাম নিচ্ছে না। আবার তীব্রের টি-শার্ট আকড়ে ধরল। তীব্রে ওকে ছাড়াতে গেলেই দেখল তুর আধো আধো চোখ খুলে দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওর চোখ আর সায় দিতে চাচ্ছে না। তাই বার বার বন্ধ হয়ে আসছে।

তীব্র কিছু বলবে তার আগেই তুর অনেক কষ্টে উঠে বসে…. তারপর তীব্রের গাল ধরে কয়েকটা ঢোগ গেলে। লোভাতুর ভাবে তীব্রের দিকে তাকায় তুর। এবার তীব্রের আকাশ থেকে পরার অবস্থা। তুরের চাওনি আর ঢোক গেলা তীব্রের একটুও ভালো লাগল না। তুর নিজের হাতে তীব্রের দুগাল ধরে আছে যা আরো অস্বস্তি লাগল তীব্রের। ও তুরকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীব্রকে কাছে টেনে তীব্রের ঠোঁটে প্রচন্ড কামর দেয় তুর।

হঠাৎ এমন আকস্মিক কাজের দরুন তীব্রের কেমন রিয়েক্ট করা উচিত বুঝতে পারল না। কিন্তু এটা বুঝতে পারল মেয়েটা আজ ওর ঠোঁট ছিড়েই ফেলবে। তাই বাধ্য হয়েই তুরের দু আঙুল দিয়ে তুরের গাল চেপে ধরে তীব্র। সাথে সাথে তুর ওকে ছেড়ে দেয়। আর তীব্র ধাক্কা মেরে ফেলে দিতেই তুর কান্না করে উঠে…..

— দিল না রে দিল না। আমার এত ক্ষিদে পাইছে কিন্তু আমারে আমার স্যান্ডউইচ দিল না। কেড়ে নিয়ে গেল রে…. 😭😭

তীব্র অসহায়ের মত নিজের ঠোঁটে হাত রাখে। রক্ত পরছে তা দিয়ে যা তুরের ঠোঁটে লেগে আছে। তীব্রের এবার রাগ উঠল। পরক্ষনেই আবার হাসি পেল যে মেয়েটা তার ঠোঁটটাকে স্যান্ডউইচ ভেবে কামরে খেতে চেয়েছে। রাগ থাকা সত্ত্বেও বুঝতে পারল ক্ষিদের কারনে কিছু বুঝতে পারছে না।

তীব্র কিছু একটা ভেবে তুরের জন্য কিছু ফল নিয়ে এসে ওকে খাইয়ে দিল। খাওয়া শেষে এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করেই ওখান থেকে বেড়িয়ে এলো।

নিজের রুমে গিয়ে রাগে দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাড়ালো। চোখ বন্ধ করা মাত্রই তখনকার কথা মনে পরল। আর তীব্র রাগে দেয়ালে একটা ঘুষি দিল। এই প্রথম কোনো মেয়ের স্পর্শ পেয়েছে ও। তাও সেই মেয়ের যাকে হয়ত সবচেয়ে জঘন্য মনে করে।

হঠাৎ করেই তীব্রের নিজের ঠোঁটের কাটার দিকে নজর পরল। ও তাতে হাত দিয়েই আহহ করে উঠল। আরেকটু হলে কেটেই যেত। নিজের মনে আবারো হেসে উঠল। মুখের হাসির ছিটা নিয়ে আয়নায় তাকাতেই চমকে উঠল তীব্র। ও হাসছে তাও একটা মেয়ের এমন কান্ডতে যেখানে ওর রাগ উঠার কারনে। নিজের প্রতি রেগে গেল তীব্র। আর কিছু না বলে গজ গজ করতে করতে বিছানায় গেল।

কিন্তু কেন জানি তীব্রের ঘুম পাচ্ছে না
বার বার মুড়ামুড়ি করছে। চোখ বন্ধ করতেই তখনকার কথা মনে পরছে, “যে একটা মেয়ে তার ঠোঁটটাকে স্যান্ডউইচ ভেবে খেতে চেয়েছে…….
,
,
,
,
,
,

,
,
,,
কিন্তু নিজেকে কিছুতেই মানাতে পারল না। বেশ বিরক্তি নিয়েই তীব্র….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here