শেষটা_সুন্দর পর্ব___২৩
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)

তরীর হাত থেকে একটা বই নিয়ে নির্ঝর গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘বিকেলে কতটুকু পড়া শেষ করেছ?’

‘দেড় পেইজের মতো পড়েছি।’

‘বাহ! দারুণ। টানা তিন ঘন্টা বই নিয়ে বসে থেকে দেড় পেইজ পড়েছো? আমি হলে তো আধ পেইজের উপরে এক লাইন যেতাম না।’

তরী মুখ ভোঁতা করে চেয়ে রইলো। নির্ঝর হঠাৎ ধমকে বলল,

‘পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ১০ ঘন্টা সময় চলে গেছে। এত সময়ে তুমি মাত্র দেড় পেইজ পড়েছো। তাহলে সম্পূর্ণ বই শেষ করবে কখন? ও হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম। বোর্ড পরীক্ষা শেষে তো লং টাইমের একটা ছুটি পাচ্ছো। তখন শেষ করে নিও!’

‘বাড়ি ফেরার পর কত কাজ করলা…….’

‘এই একদম চুপ! পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি এসে কি করেছ তুমি? দুপুরের খাবার আমি রুমে এনে খাইয়ে দিয়েছি। শাওয়ারের পর তোমার কাপড় ধুয়ে শুকাতে দিয়েছি। বিছানা গুছিয়ে বই খাতা বের করে দিয়েছি। তাছাড়া যা যা প্রয়োজন সব আমি করেছি। আর তুমি কাজের অজুহাত দেখাচ্ছো? সত্যি করে বলো তো, বই হাতে নিয়ে কি চিন্তা করেছ? কার কথা চিন্তা করেছ?’

তরীর মুখে লজ্জার রক্তিম ছায়া পড়লো। সে যথাসম্ভব মাথাটা নিচু করে ফেলল যেন তার এই লজ্জা মিশ্রিত মুখোভঙ্গি নির্ঝরের নজরে না পড়ে। সে মিনমিন করে বলল,

‘পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’

নির্ঝর বার কয়েক তরীর দিকে তাকালো। শ্বাস টেনে বলল,

‘বইপত্র নিয়ে টেবিলের বসে পড়ো।’

‘না!’

‘না? না কেন? টেবিলে বসে পড়লে পড়া মনে থাকবে। টেবিলে যাও!’

‘আমি টেবিলে বসে পড়তে পারি না। কতবার বলবো আপনাকে?’

‘নো অজুহাত। তোমার মতলব আমি বুঝি না মনে করেছ? বিছানায় বসে পড়বে কিছুক্ষণ। তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়লে আমার ঘুম দেখে হিংসে হবে তোমার। হিংসায় জ্বলেপুড়ে কিছুক্ষণ আমার ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে থাকবে। তারপর নিঃশব্দে পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। এসব কিচ্ছু হবে না তরী। টেবিলে গিয়ে পড়তে বসো।’

তরী নড়ল না। জিদ ধরে বসে রইলো। নির্ঝরের পাশে বসেই সে পড়বে। দূরে যাবে না। এক হাতের বেশি দূরে যাবে না মানে যাবে না। এমনকি হাত তিনেক দূরেও নয়।

নির্ঝর হাল ছেড়ে দিল। হতাশ সুরে বলল,

‘যাবে না তো?’

‘না।’

‘হার মেনে নিলাম। এবার এখানেই পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ো।’

তরী খাতার পেইজ উল্টাল। নির্ঝর ঘড়ির দিকে তাকালো। অনেক রাত হয়ে গেছে। উঠে গিয়ে দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে দিল। তারপর চুপচাপ বিছানার কিনার ঘেঁষে আস্তে করে শুয়ে পড়লো। তরীর মনোযোগে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য পায়ের নিচ থেকে পাতলা কম্বলটা গায়ের উপর দিল। তরী মুখ নেড়ে পড়া শুরু করতে কম্বল দিয়ে মুখসহ সম্পূর্ণ নিজেকে ঢেকে ফেলল।কম্বলের নিচে চোখজোড়া বন্ধ করতে তরী তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,

‘এই গরমে কম্বল পেঁচিয়ে রয়েছেন কেন?’

‘এমনি!’

‘এমনি মানে? জ্বর এসেছে আপনার?’

‘না! শুধু শুধু জ্বর আসতে যাবে কেন?’

‘শুধু শুধু মানে? সকাল বেলা বৃষ্টির ফোঁটা মাথায় পড়েছিল আপনার।’

নির্ঝর কম্বলের তলা থেকে মুখ বের করলো। কপাল কুঁচকে বলল,

‘বললাম তো জ্বর আসেনি। এমনি গায়ে কম্বল জড়িয়েছি।’

‘আপনার গায়ে জ্বর এসেছে।’

‘জ্বর আসেনি।’

‘জ্বর এসেছে।’

নির্ঝর বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘ধুর। তরী চড় খাবে কিন্তু। বলছি না যে জ্বরটর নেই। জোর করে জ্বর আনবে নাকি?’

‘দেখি কপালে হাত রাখতে দিন তো। কনফার্ম হই।’

এতক্ষণে নির্ঝর তরীর মতলব ধরতে পারলো। সে একলাফে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো। তরী অতি আবেগিক মেয়ে। সে পাশে থাকলে আবেগে ভেসে যাবে। এর আবেগকে যত পাত্তা দিবে তত প্রশ্রয় পেয়ে যাবে। পড়াশোনা লাঠে উঠবে। সে উঠে গিয়ে বেলকনিতে পা রাখলো। তরী পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলল,

‘ঘুমাবেন না আপনি? কোথায় যাচ্ছেন আবার?’

নির্ঝর উত্তর দিল না। বেলকনির ভেতরে ঢুকে কাচ ঠেলে পুনরায় বন্ধ করে দিল। অন্ধকার বেলকনিতে সে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো। এখান থেকে তরীকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সেদিকে চেয়ে থাকতে থাকতে তার দু চোখে মুগ্ধতা এসে ভর করলো। কেমন ঘোরের মতো চলে গেল। তার এই ঘোর সহজে কাটবে না। তরী পড়া শেষ করে না ঘুমানো পর্যন্ত সে এখান থেকে এক পা নড়বে না।

__________________

পরীক্ষা শেষে তরী ধীরে সুস্থে রুম থেকে বের হলো। মন ভার হয়ে আছে তার। আজ রিটেন পরীক্ষার শেষদিন ছিল। দুদিন গ্যাপ রেখে প্র্যাক্টিক্যাল শুরু হবে। তার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে কারণ আজকের পরীক্ষায় ফুল মার্কস আনসার করতে পারেনি। অথচ প্রিপারেশন অনেক ভালো ছিল। বলতে গেলে গত পরীক্ষাগুলোর চেয়ে আজকের প্রিপারেশন ভালো ছিল। অথচ আজকে আশানুরূপ ফল করতে পারলো না।

পা দুটো চলতে চাইছে না। টেনে টেনে সে এগিয়ে চলল। মাথা নিচু করে রেখেছে সে। যাতে পরিচিত কারো সাথে কথা বলতে না হয়। চোখে চোখ পড়লে কথা নন বলে পারা যায় না। কিন্তু আজ তার মনের যা অবস্থা, সে চাইছে না পরিচিত কারো সাথে দেখা হোক! ভাব বিনিময় হোক। জোরপূর্বক দু চারটে কথা হোক!

করিডোর পেরিয়ে মাঠে নামলো সে। মাঝারি আকারের মাঠ। মাঠের কাছ ঘেঁষে উঁচু বাউন্ডারি। বাউন্ডারির পাশ দিয়ে লম্বা লম্বা গাছ। তরী পায়ের নিচের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে উত্তর দিকে এগিয়ে চলল। উত্তর দিকে বহির্গমন গেট।

গেটের কাছে মানুষজনের ভীড় বাট্টা কমে এসেছে। কাছাকাছি এসে তরী মাথা উঁচু করলো। ছোট একটা শ্বাস ফেলে চোখ তুলে সামনে তাকাতে তার পা থেমে গেল। শরীরের রক্ত হিম হয়ে এলো। না চাইতেও বুকের ভেতর অজানা আতংকে কেঁপে উঠলো।

তার থেকে কিছুদূরে আশিক দাঁড়িয়ে আছে। চোখে কালো সানগ্লাস। মাথার চুল পরিপাটি করে গোছানো। বা কানে ছোট্ট একটা দুল ঝুলছে। গলার শিকলের মতো মোটা চেইনটা উন্মুক্ত বুকের উপর ঝুলছে। শার্টের সামনের বেশ কয়েকটা বোতাম খোলা। উপর্যস্তু বাম হাতের আঙুলের ভাঁজে সিগারেট ধরে ভুসভুস করে ধোঁয়া ছাড়ছে।

আশিকের যেই মাফিয়া লুকটা তরীর মনে দূর্বলতার সৃষ্টি করেছিল আজ সেটা তীব্র ভয় হয়ে মনে দানা বিঁধলো। ভয়ার্ত চেহারায় সে হাতের ফাইলটা চেপে ধরলো। আশিক তাকে এখনো দেখেনি। রাস্তার অপজিটে মুখ ঘুরিয়ে কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করছে। তরীর মস্তিষ্ক কাজ করতে সে প্রায় দৌঁড়ে গেটের ডান দিকে সরে গেল। এখন গেট দিয়ে বাইরে বের হওয়া মানে আশিকের হাকে নিজেকে ধরিয়ে দেওয়া। সে এইটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছে যে আশিক তার জন্যই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

ক্ষীপ্র পায়ে পুবদিকের শহিদ মিনারের দিকে এগিয়ে চলল তরী। এদিকে থাকলে আশিকের মুখোমুখি হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। সেইফ জোনে পৌঁছে সে বুক ভরে শ্বাস নিল। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ উঠছে তার। এরকম একটা জঘন্য ছেলের সাথে প্রেম করেছে, ফোনে কথা বলেছে! আশিকের ব্যাপারে যাও একটু ভালো ধারণা তার ছিল তা গায়েব হয়ে গেছে এক সপ্তাহ আগে। সপ্তাহখানেক আগে তার ক্লাসমেট রিতুর সাথে কথা হয়েছিল। এক পর্যায়ে রিতু বলেছিল যে সে আশিকের থেকে ধোঁকা খেয়েছে, আশিক একটা মেয়েবাজ! আরো অনেককিছু। সেসব শুনার পর থেকে আশিককে তার ঘেন্না হয়। সাথে প্রচন্ড ভয়।

এক সেকেন্ড, দু সেকেন্ড করে সময় অতিক্রম হচ্ছে। তরী এবার চিন্তায় পড়ে গেল। গেটের কাছে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। আবার প্রতি ক্ষণে ক্ষণে ভয় হচ্ছে যে আশিক বুঝি ভেতরে ঢুকে তাকে খুঁজে বের করবে। দুচোখে আতংক নিয়ে সে নির্ঝরের অপেক্ষায় রইলো।

কিছুক্ষণ পর তরী আড়ালে থেকে সরে এলো। এতক্ষণে আশিকের চলে যাওয়ার কথা। সে হিজাবের উপর দিয়ে গায়ের ওড়নাটা মাথায় দিল। লম্বা করে ঘোমটা দিয়ে ভয়ে ভয়ে এগিয়ে চলল। দূর থেকেই অফ হোয়াইট শার্ট পরিহিত সুদর্শন একজনকে দেখে তরী শরীরে শক্তি ফিরে পেল। বুকের ভার নেমে গেল। চোখের আতংক যেন এতক্ষণে জল হয়ে ঝরতে চাইলোম টলমল চোখে সে দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করলো।

নির্ঝর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। আশপাশে একবার তাকিয়ে খুঁজতে তরীর চোখে চোখ পড়লো। সে হাঁটা থামাল না। মাথার চুলগুলোয় আঙুল চালিয়ে তরীর দিকে এগোল। নির্ঝরের কাছাকাছি আসতে তরীর চোখ ফেটে জল বের হতে চাইলো। সে অতি কষ্টে অশ্রুগ্রন্থির বিরুদ্ধে লড়ে গেল। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পড়লো নির্ঝরের সামনে।

‘এত দেরি হলো কেন তরী? ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেছিলাম।’

নির্ঝরের উদ্বিগ্ন কন্ঠ। মানুষটার দুশ্চিন্তাগ্রুস্থ চেহারা তরীর দেখার লোভ জাগলো। কিন্তু নির্ঝরের চোখে চোখ রাখলে সে নিজেই ধরা পরে যাবে। ফেঁসে যাবে সে। তাই আর চোখ তুলে তাকাল নাম নিচু সুরে শুধু বলল,

‘বান্ধবীর সাথে কথা বলছিলাম একটু।’

‘এত ভয় পাচ্ছো কেন তরী? বান্ধবীর সাথে কথাই তো বলেছ, মানুষ খুন করোনি। চলো তো!’

‘হুঁ!’

নির্ঝর তরীর হাত থেকে ফাইল নিয়ে নিল। তরীকে একটু সামনে রেখে হাঁটা শুরু করলো। গেটের কাছাকাছি আসতে সে নিজে থেকে তরীর হাত চেপে ধরলো। তরীর মনের ভয় সম্পূর্ণ কেটে গেল। এতক্ষণে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে জানে, যাই হয়ে যাক না কেন, এই মানুষটা তাকে ছাড়বে না। সব বিপদে সে এই আঙুল গুলো আঁকড়ে ধরে বেঁচে যাবে। এই হাতের মালিক তার একমাত্র ভরসার স্থান। একমাত্র কমফোর্ট জোন। সে ঠোঁটের কোণে প্রশান্তির হাসি ঝুলিয়ে নির্ঝরের দিকে তাকালো। দুপুর সূর্যের কড়া রোদ নির্ঝরের মুখে এসে পড়েছে। ফর্সা ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে যেন। কেমন ঝলমলে চেহারা মানুষটার। সে নির্ঝরের দিকে তাকিয়েই সামনে হাঁটতে লাগলো।

নির্ঝরের দৃষ্টি এক জায়গা থেমে নেই। চারপাশে ঘোরাফেরা করছে। কিছু একটা খুঁজছে যেন। সে রাস্তার বাম পাশে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠলো,

‘কিছু বলবে তরী? তাকিয়ে আছো কেন?’

তরী লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল। অন্যমনস্ক হয়ে পা ফেলতে পড়ে যেতে নিল। শেষ মুহূর্তে নির্ঝর এক হাতে তাকে সামলে নিল। তরী সোজা হয়ে দাঁড়াতে কড়া কন্ঠে বলল,

‘মনোযোগ কোথায় থাকে?’

নির্ঝরকে আজ চুপচাপ মনে হচ্ছে। তার সাথে কথা বাড়ানোর জন্য তরী পাল্টা প্রশ্ন করলো,

‘আপনার মনোযোগ কোথায় থাকে?’

‘কি?’

‘কি কি করছেন কেন? আপনার চোখ দুটো ক্রমাগত লাটিমের মতো ঘুরছে। কাকে খুঁজছেন?আপনার মেলায় হারিয়ে যা-ওয়া বোনকে?’

‘জ্বি না ডিঙিরানি। দেখছি তোমার সতীন বানানোর মতো কাউকে খুঁজে পাই কি না। জানো তো, ছোটবেলায় এক জ্যোতিষি আমার হাতের রেখা দেখে বলেছিল আমার তিনটে বিয়ে কপালে আছে।’

তরী ব্যঙ্গ করে বলল,

‘মাত্র তিনটে? ডজন খানেক বউ থাকলে আরো ভালো হয়।’

নির্ঝর নিরবে হাসলো। ছোট করে শ্বাস ফেলে সম্পূর্ণ মনোযোগ পাশের এই তোলপাড় করে দেওয়া মেয়েটির দিকে দিল। ডান হাতে মুষ্টিবদ্ধ তরীর হাতটা একটু উঁচু করে দেখলো। বিড়বিড় করে বলল,

‘তোমার হাত এত নরম তাহলে মন এত সঠিক কেন?’

তরী হঠাৎ সুর পাল্টে খুশিমনে বলল

‘আজ রিটেন শেষ পরীক্ষা ছিল। আর রাত জেগে পড়তে হবে না।কি যে আনন্দ লাগছে!’

‘এডমিশন টেস্টের পড়া কি আমি পড়বো? পরীক্ষা কি আমি দিবো?’

‘অ্যা? এডমিশনের জন্য পড়তে হবে?’

‘তুমি যদি না পড়ে চান্স পেয়ে যাও তাহলে পড়তে হবে না। এরকম কনফিডেন্স আছে?’

তরী কোনো উত্তর দিল না। ঠোঁট উল্টে মাথা নিচু করে এগিয়ে চলল। গাড়ির কাছে পৌঁছাতে নির্ঝর তার হাত ছেড়ে দিল। দরজা খুলে তরী ভেতরে গিয়ে বসলো।

_______________

ডিনার শেষে তরী দীর্ঘক্ষণ ড্রয়িং রুমে ছিল। জীবন ভাইয়ার বউ দিবা ভাবী দুদিন হলো এ বাড়িতে এসেছে। তরীর মেয়েটিকে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আগে থেকে চিনতো, কিন্তু কখনো তেমন করে কথা হয়নি। অথচ গত দুদিনে এতটা ক্লোজ হয়ে গেছে যে দুজন একে অপরকে ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। সবাই খাওয়া শেষ করে যার যার রুমে গেছে অনেক আগে। এতক্ষণে অনেকে ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। শুধু সে আর দিবা ভাবী টেলিভিশন দেখছিল এতক্ষণ। রাত অনেক হতে দিবা উঠে পড়লো। তরী তারও কিছু সময় পর রুমের দিকে পা বাড়াল।

রুমের দরজা খোলা ছিল। তরী পা টিপে টিপে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো। ছিটকিনি লাগানোর সময় সামান্য শব্দ হতে সে ঘাড় ঘুড়িয়ে বিছানার দিকে তাকালো। নির্ঝর উঠে পড়ে কি না সেই ভয়!তবে নির্ঝর নড়লো না। তার মানে ঘুমিয়ে পড়েছে।

রুমের লাইট অন রেখে বিছানার দিকে এগোল। বিছানার কাছে এসে তরীর কিছু একটা নাই মনে হলো। কিছুক্ষণ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে মনে পড়লো দুজনের মাঝখানে থাকা কোলবালিশটা নেই। নিজের অজান্তে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বাম কাতহয়ে নির্ঝরের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে সে শুয়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে বন্ধ চোখে, ভারী গলায় নির্ঝর বলে উঠলো,

‘রাত বারোটার বেশি বাজে। এত দেরি হলো কেন?’

(চলবে)

রিচেক করা হয়নি।🤎

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here