তুমি_আমারই_রবে
পর্ব_১১
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

–“এই পাঁচ মাসে হিমুর প্রতি তোমার কোনো ভালোবাসা জন্মায় নি?”

–“একজন ফ্রেন্ড হয়ে আরেকজন ফ্রেন্ডের উপর ঠিক যতটুকু ভালোবাসা থাকা উচিত হিমুর প্রতি ও আমার ঠিক ততটুকু ভালোবাসা হয়েছে। তাই তো চলে এলাম ফ্রেন্ডের হয়ে তার ভালোবাসার মানুষটাকে তার কাছে ফিরিয়ে দিতে।”

–“তোমার কথায় কোনো ছলনা নেই তো রূপা?”
0
–“না নেই। তুমি দয়া করো আমাকে নিয়ে ভেবো না। এতোদিন তো অনেক ভাবলে আমাকে নিয়ে, হিমুকে নিয়ে। এখন একটু নিজেকে নিয়ে ভাবো। নিজের জন্য ভাবো। নিজে কিভাবে ভালো থাকবে সেই চেষ্টা করো। জীবন তো একটাই তাই না?”

–“কতোটা বদ নসিব আমার বলো? এক জীবনেই আমাকে এতো তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে। জীবনকে সঠিকভাবে উপভোগ করার সময়টা ও পেলাম না। কতো শতো ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন অপূর্ণই রয়ে গেলো। এক বুক আপসোস নিয়েই আমাকে হুট করে একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।”

–“কেঁদো না নাবিলা। আল্লাহ্ চাইলে এই মরণব্যধি নিয়ে ও তুমি অনেক বছর বাঁচতে পারবে।”

নাবিলা ঢুকড়ে কেঁদে বলল,,,

–“আমি চলে গেলে আমার হিমুর কি হবে রূপা?”

হিমু হঠাৎ নাবিলাকে ঝাপটে ধরে কেঁদে বলল,,,

–“প্লিজ নাবিলা। অন্তত আমার সামনে এসব কথা বলো না। আমি নিতে পারি না। বুকে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। আল্লাহ্ না করুক তোমার যদি কিছু হয়ে যায় বাকিটা জীবন আমি তোমার স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকব।”

দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঢুকড়ে কাঁদছে। কিছুতেই যেনো তাদের কান্না থামছে না। তাদের দুজনকে একসাথে দেখে আমার চোখে ও জল চলে এলো। নিচের দিকে তাকিয়ে আমি চোখের জল ছাড়ছি। আমার কান্নাটা তাদের দুজনের ভালোবাসা দেখে নাকি হৃদয় ভাঙ্গার কারণে তা সঠিক বুঝতে পারছি না। নাবিলা ঢুকড়ে কাঁদছে আর হিমুকে বলছে,,,

–“এতগুলো মাস তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার খু্ব কষ্ট হয়েছে হিমু। দমটা বন্ধ হয়ে আসছিলো৷ বুকের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যেতো। নিদারুণ যন্ত্রণা হতো বুকটায়।”

–“এবার থেকে তোমার আর কষ্ট পেতে হবে না নাবিলা। কিছুদিন পর আমি সারাজীবনের জন্য তোমার হয়ে যাবো। তোমার সব স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা আমি পূরণ করব।”

হিমু নাবিলার সমস্ত মুখে চুমোয় চুমোয় ভরে দিচ্ছে। চোখের সামনে এসব নিতে পারছি না আমি। কান্না চেঁপে আমি হিমুকে বললাম,,

–“হিমু। আমি বাইরেই আছি। আপনি আসুন।”

হিমু কিছু বলল না। নাবিলাকে ঝাপটে ধরে বুকের মাঝে পুড়ে নিচ্ছে। আমি দৌঁড়ে কেবিন থেকে বের হতে যাবো অমনি ঐ দিনের নার্সটা দৌঁড়ে এসে কেবিনে ঢুকে পড়ল। এক প্রকার হাঁফাচ্ছেন উনি। আমি চোখে জল নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উনাকে কিছু বলার আগেই উনি কেবিনের সমস্ত লাইট, পাখা বন্ধ করে দিলেন। হিমু আর নাবিলা ও এবার চোখ তুলে নার্সের দিকে তাকালেন। অন্ধকার রুমে কিছু দেখা যাচ্ছে না। তবু ও এই অন্ধকারেই আমি নার্সকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,

–“কি হয়েছে নার্স? আপনি হঠাৎ কেবিনের লাইট, পাখা অফ করে দিলেন কেনো?”

উনি কোনো কথা না বলেই আমার মুখের উপর কেবিনের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। হিমু জলদি উঠে এসে যেই না কেবিনের দরজা ধাক্কাতে যাবে অমনি নাবিলা পেছন থেকে বললেন,,,

–“হিমু প্লিজ থেমে যাও।”

হিমু নাবিলার দিকে তাকাতেই নাবিলা বলল,,

–“আসলে এই হসপিটালে কিছুদিন পর পরই চাঁদাবাজি হয়। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ চাঁদা না দিতে চাইলেই উনারা পেশেন্টদের ক্ষতি করে। তাই পেশেন্টদের সেইফটির জন্য ডক্টর আর নার্সরা মিলে এসব করা। সমস্ত কেবিনের লাইট, পাখা বন্ধ করে বাহির থেকে কেবিনের দরজা বন্ধ করে দেয়।”

–“আশ্চর্য! হসপিটাল কতৃপক্ষ পুলিশের আশ্রয় নেন নি? এভাবেই তাদের ছেড়ে দিচ্ছে? তাছাড়া আমি কখনো শুনি নি চাঁদাবাজরা হসপিটালে এসে এভাবে চাঁদা নিতে বা পেশেন্টদেে ক্ষতি করতে।”

–“ছাড়ো না এসব হিমু। প্লিজ আমার পাশে এসে বসো। আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে।”

–“আসছি নাবিলা।”

হিমু ধীর পায়ে হেঁটে নাবিলার কাছে এসে বসলেন। আর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,

–“রূপা। এখানে এসো। অন্ধকারে ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”

–“হিমু আমি এখানেই ঠিক আছি। আপনারা কথা বলুন।”

হিমু কিছু বললেন না। নাবিলার সাথে কথায় মগ্ন হয়ে গেলেন। প্রায় আধ ঘন্টা পর নার্স এসে রুমের দরজা খুলে রুমের লাইট, পাঁখা অন করে দিলেন। আমি তাড়াহুড়ো করে কেবিন থেকে বের হয়ে ব্যালকনীর গ্রীল ধরে দাঁড়ালাম। জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে আমি গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে নিলাম। কেবিনটাতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। বুকের ভেতর তোলাপাড় হচ্ছিলো। কেবিন থেকে ছাড়া পেতেই নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলাম। চোখের নিচে জমে থাকা জল গুলো দু হাত দিয়ে মুছে নিলাম। চোখ বুজে আমি মস্তিষ্ককে শান্ত করতে উঠে পড়ে লাগলাম। জানি না এভাবে কতোক্ষণ নিজেকে শান্ত রাখতে পারব। তবু ও নিজেকে ভালো রাখার জন্য একটু চেষ্টা তো করতেই হবে।

কেটে গেলো প্রায় অনেক গুলো ঘন্টা। দুপুর দুটোর কাছাকাছি হয়ে গেছে। আকাশে খুব মেঘ ধরেছে। যেকোনো সময় তুমুল ঝড় হতে পারে। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে সেই ঝড়ের অপেক্ষা করছি। খুব বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে আমার। আকাশের মতো আমার মনটা ও ভীষণ খারাপ। মন খারাপের অসুখটা খুব ভালোভাবেই চেঁপে ধরেছে আমায়। বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণার ঝড় উঠছে। যে কোনো সময় আমার মনে ও তীব্র বৃষ্টি হতে পারে। কেনো জানি না এই মুহূর্তে আমার খুব ইচ্ছে করছে আকাশের গাঁয়ে লেগে থাকা বৃষ্টিতে ভিজতে, রাস্তার একপাশ ধরে নিরিবিলি হাঁটতে, ফুটপাতের টং দোকানে দাঁড়িয়ে চা খেতে, রিকশায় বসে দু হাত মেলে বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটাকে শরীরে মাখিয়ে নিতে। মোট কথা, ভিতরের কষ্ট দূর করার জন্য এই মাধ্যম গুলো খুব উপকারী।

তখনই হিমু কেবিনের দরজা খুলে কেবিন থেকে বের হয়ে এলো। আমি পিছু হিমুর দিকে তাকালাম। হিমু খুব হেঁসে বলল,,,

–“থ্যাংকস রূপা। তোমার জন্যই আজ নাবিলার সাথে আমার সব ভুল বুঝাবুঝি মিটে গেলো।”

আমি বিনিময়ে মলিন হাসলাম। হিমু হঠাৎ ব্যালকনির গ্রীল দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে আমার হাত চেঁপে ধরে বললেন,,,

–“আকাশের খুব মেঘ ধরেছে রূপা। চলো আজ আমরা বৃষ্টিতে ভিজি।”

হিমু আমার হাত ধরে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হসপিটাল থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে এলো। আমি অবাক হয়ে উনাকে দেখছি। খুব প্রফুল্ল লাগছে উনাকে। খুব প্রাণোচ্ছ্বল একটা মানুষ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এই মানুষটার শরনাপন্ন হয়ে আমারো বড্ড ভালো লাগছে। তবে আমি এটা বুঝলাম না, উনি কিভাবে আমার মনের কথা পড়ে নিলেন? না বলতেই বুঝে গেলেন আমি ও আজ বৃষ্টিতে ভিজতে চাই?

রাস্তায় পা রাখতেই শুরু হলো প্রবল বর্ষণ। ঝুম বৃষ্টিতে পুরো শহর ভেসে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর বিজলি ও চমকাচ্ছে। হিমু আমার হাত ধরে রাস্তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনই এতোক্ষনে ভিজে একাকার হয়ে গেছি। পিটপিট চোখে আমি হিমুর দিকে তাকাচ্ছি। হিমু সামনের চুল গুলো ঠিক করে পিটপিট চোখে রাস্তার এপাশে ওপাশে তাকাচ্ছে। বৃষ্টির তান্ডবে কেউই ঠিক ভাবে চোখ মেলে তাকাতে পারছি না। আপনা আপনিই চোখ বুজে যাচ্ছে। আনমনে আমি হিমুর হাতটা ধরে বললাম,,,

–“আজ আমরা হেঁটে বাড়ি যাবো হিমু। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে।”

হিমু একগাল হেসে বললেন,,

–“তাহলে আর দেরি কিসের? চলো হাঁটা ধরি।”

–“আপনার বাইক?”

–“বাইক পরে এসে নিয়ে যাবো।”

–“যদি চুরি হয়ে যায়?”

–“তোমার ইচ্ছের চেয়ে, বাইক বেশি জরুরি নয়।”

আমি অবাক হয়ে লোকটার চোখের দিকে তাকালাম। এই দুচোখের ভাষা মাঝে মাঝেই আমার খুব অপরিচিত হয়ে যায়। চাইলে ও পড়তে পারি না। হিমু এক ভ্রু উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,

–“কি হলো? কোথায় হারিয়ে গেলে? চলো!”

হিমু আমার হাতটা আঁকড়ে ধরে রাস্তার পাশ ঘেঁষে হেঁটে চলছেন। খুব আপন করে উনি আমার হাতটা ধরেছেন। মনে হচ্ছে আমি উনার খুব কাছের মানুষ। যাকে কোনো সংকোচ ছাড়াই এভাবে আঁকড়ে ধরা যায়। কতোটা অধিকার নিয়ে উনি আমার হাতটা ধরলেন। অথচ এই অধিকারটা যদি উনি আমার জীবনে খাটাতেন তাহলে হয়তো আমার জীবনটা খুব সুন্দর আর গুছানো হতো! আমি বৃষ্টির চেয়ে ও উনাকে বেশি উপভোগ করছি। কিছুতেই আমার দৃষ্টি উনার থেকে সরছে না। ভেজা অবস্থায় উনাকে আরো বেশি শুভ্র লাগছে। দেখতে খুব পবিএ লাগছে। দুচোখ ভরে আমি লোকটাকে দেখে নিচ্ছি। এভাবে হয়তো আর কখনো দেখা হবে না। বৃষ্টির পানির সাথে আমার চোখের পানি মিশে যাচ্ছে। কেউ ধরতে ও পারবে না আমি কাঁদছি। হঠাৎ ই হিমু আমার হাত ধরে দৌঁড়াতে শুরু করল। আর হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

–“দৌঁড়াও রূপা। যত পারো দৌঁড়াও। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করো। দেখবে দেহ, মন সব প্রফুল্ল হয়ে যাবে।”

উনার হাত ধরে দৌঁড়াচ্ছি আমি। খুব জোরে জোরে দৌঁড়াচ্ছি। মুহূর্তের মধ্যে আমার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল৷ বৃষ্টির মধ্যে এভাবে দৌঁড়ানোটা খুব এন্জ্ঞয় করছি। নিজেকে নতুন রূপে আবিষ্কার করছি। বহুদিনের ইচ্ছেটা আজ আমার পূরণ হলো। আজ আমি একাই বৃষ্টিতে ভিজছি না। আমার পাশে কেউ আছে। যে আমার হাত ধরে হাঁটছে। হয়তো সে ও আমার মতো বৃষ্টি বিলাসী। হাসতে হাসতে আমি হিমুর দিকে তাকালাম। উনি ও খুব হাসছে আর দৌঁড়াচ্ছে৷ কিছুক্ষন পর পর সামনে আসা চুল গুলো এক হাত দিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছে। কিছু দূর দৌঁড়ানোর পর আমরা দুজনই হাঁফাতে লাগলাম। বৃষ্টির গতি আরো বেড়ে গেলো। তুমুল ঝড় শুরু হলো। রাস্তার পাশে বড় একটা বট গাছের নিচে হিমু আর আমি ঠাঁয় নিলাম। ঠান্ডায় কিছুটা কাঁপছি আমি। দুহাত দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছি আমি। হিমু গাঁ থেকে বৃষ্টির পানি গুলো ঝাড়ছে আর ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে,,

–“খুব ঠান্ডা লাগছে না?”

–“হুম।”

দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ লেগে গেছে আমার। মুখ দিয়ে কথা ও বের হচ্ছে না। হিমু বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,,,

–“ইসস তুমি তো আমার চেয়ে বেশি কাঁপছ। তার মানে তোমার ঠান্ডা লাগছে বেশি।”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালাম। উনি তাড়াহুড়ো করে উনার গাঁ থেকে শার্ট খুলে আমার গাঁয়ে জড়িয়ে দিলেন। আমি চিন্তিত চোখে উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনার গাঁয়ে আরো একটা টি-শার্ট আছে। তার মানে শার্টের নিচে উনি টি-শার্ট পড়েছেন। আমি উনার শার্টটা আঁকড়ে ধরে গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। উনি বেশ ব্যস্ত স্বরে বললেন,,

–“তুমি এখানেই দাঁড়াও রূপা। আমি দেখি সামনে কোনো টং দোকান আছে কিনা। গরম চা খেলে হয়তো তোমার কাঁপুনীটা একটু কমবে।”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উনি রাস্তার অপর পাশে দৌঁড়ে গেলেন। আমি বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছি। কিছুটা সামনে এগিয়ে যাওয়ার পর উনি একটা টং দোকান খুঁজে পেলেন। বৃষ্টি তখন একটু একটু করে কমছিলো। খানিক বাদে উনি প্লাস্টিকের দুটো কাপে করে চা নিয়ে রাস্তার এইপাশে দৌঁড়ে এলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে উনাকে দেখছি। না চাইতেই উনি আমার সব ইচ্ছে পূরণ করে দিচ্ছেন। কয়েকটা ভালো ভালো মুহূর্ত আমাকে উপহার দিচ্ছেন। উনি অস্বীকার করলে ও আমাদের মনের যে একটু হলে ও মিল আছে তা আমি বেশ বুঝতে পারছি!

দু হাতে চায়ের কাপ নিয়ে উনি আমার সামনে দাঁড়ালেন। এক গাল হেসে উনি আমার দিকে একটা চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বললেন,,,

–“চা টা তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। এতক্ষনে হয়তো ঠান্ডা ও হয়ে গেছে। বৃষ্টির ফোঁটা পড়েছে তো তাই।”

আমি উনার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিলাম। আর একটু একটু করে চায়ে চুমুক দিতে লাগলাম। উনি ও আমার পাশে দাঁড়িয়ে খুব বড় করে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর চা খাওয়া শেষে আমরা আবার বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলাম। বৃষ্টি এতোক্ষনে অনেকটাই কমে গেছে। পা দুটো ধরে আসছিলো আমার। সামনের দিকে আর হাঁটতে পারছিলাম না। ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে হিমু ব্যতিব্যস্ত হয়ে আমাকে বললেন,,

–“রিকশা নিবো?”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালাম৷ আমার ডান হাতটা আকঁড়ে ধরে উনি দাঁড়িয়ে পড়লেন। আর রাস্তায় তাকিয়ে রিকশা খুঁজতে লাগলেন। কিছুক্ষন পর একটা খালি রিকশা পেয়ে উনি আমাকে নিয়ে রিকশায় উঠে পড়লেন। হিমু রিকশার হুড উঠাতে নিলেই আমি হিমুকে থামিয়ে বললাম,,,

–“থাক না হিমু। হুড ছাড়াই ভালো লাগছে।”

হিমু মলিন হেসে বললেন,,

–“ওকে।”

রিকশা ওয়ালা রিকশা ছেড়ে দিলেন। আমি আর হিমু পাশাপাশি বসে আছি। কোনো ফাঁক নেই আমাদের মধ্যে। দুজন দুজনের গাঁ ঘেঁষে বসে আছি। বাইরের কেউ দেখলে বুঝতেই পারবে না, আমাদের মধ্যে আকাশ সমান দূরত্ব আছে, বিচ্ছেদের জ্বালা আছে। সত্যি বলছি, আজকের এই দিনটা আজীবন আমার মনে গেঁথে থাকবে।

কিছুক্ষন পর আমরা বাড়ি এসে পৌঁছে গেলাম। দুজনই ভেজা শরীরে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লাম। মা-বাবা ইচ্ছে মতো আমাদের বকাঝকা করলেন। আম্মুর বকা খেয়ে ও হিমু মিটিমিটি করে হাসছিলো। বকাবকির শেষ পর্যায়ে শ্বাশুড়ী আম্মু ক্লান্ত হয়ে আমাদের সামনে থেকে প্রস্থান নিলেন। হিমু ও হাসতে হাসতে আমাকে নিয়ে আমাদের রুমে চলে এলেন। রুমে ঢুকেই হিমু আমার দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু হেসে বললেন,,,

–“আজকের দিনটা কখনো ভুলব না রূপা। স্মরনীয় হয়ে থাকবে। এই প্রথম আমি কারো সাথে বৃষ্টিতে ভিজলাম।”

–“কেনো? নাবিলার সাথে এর আগে কখনো ভিজেন নি?”

উনি মন খারাপ করে বললেন,,,

–“নাবিলার এসবে কখনো ইন্টারেস্ট ছিলো না।”

যে কয়েকদিন আমি এখানে আছি উনার মন খারাপ দেখতে চাই না। তাই আমি কথা ঘুড়ানোর জন্য বললাম,,

–“হিমু আপনার বাইকটা?”

–“ওহ্ হ্যাঁ। ভালো কথা মনে করেছ। একটু পরেই বাইকটা নিয়ে আসব।”

কাবার্ড থেকে শাড়ি নামিয়ে আমি ওয়াশরুমে চলে গেলাম৷ হিমু টাওয়াল নিয়ে বাড়ির অন্য ওয়াশরুমে চলে গেলেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে হিমু বাইক আনতে বের হয়ে গেলেন। হয়তো নাবিলাকে ও একবার দেখে আসবেন। সেই সুযোগে আমি খাতা, কলম নিয়ে ইয়া বড় একটা চিঠি লিখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কারণ, আজই এই বাড়িতে আমার শেষ দিন। আর চিঠিতেই আমার সমস্ত মনের কথা ব্যক্ত থাকবে। যা আমি হিমুকে কখনো মুখ ফুটে বলতে পারি নি! না আগামীতে বলতে পারব। তবে আমি চাই আমাদের মধ্যে অসীম দূরত্ব থাকুক তবে কখনো বিচ্ছেদ না আসুক। স্বামী স্ত্রীর পবিএ সম্পর্ককে আমি কখনো বিচ্ছেদে রূপ দিতে পারব না! উপর ওয়ালা নারাজ হবেন আমার উপর। এতো পাপ নিয়ে আমি বাঁচতে পারব না। হিমু নাবিলাকে দ্বিতীয় বিয়ে করুক। ইসলামে পুরুষদের একাধিক বিয়ে করার বৈধতা আছে!

,
,

রাতের খাবার খেয়ে প্রতিদিনের ন্যায় আমি আজ ও শোফায় শুয়ে পড়লাম। আর হিমু বিছানায়৷ অবশ্য আজ হিমু খুব জোরাজুরি করেছিলো উনার পাশে বিছানায় শুতে৷ মাঝখানে কোল বালিশ দেয়াল হিসেবে থাকবে। তবে আমি ইচ্ছে করেই শুই নি। আসলে মায়া বাড়াতে চাইছি না আর। হীতে ক্ষতিটা আমারই হবে!

রাত যতো বাড়তে লাগলো বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো৷ সারা রাত সজাগ ছিলাম আমি। অপেক্ষা করছিলাম কখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে। যখন বুঝতে পারলাম বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে ঠিক তখনই তাড়াহুড়ো করে শোয়া থেকে উঠে আমি ড্রিম লাইটের হালকা আলোতে কাবার্ড থেকে আমার কয়েকটা ব্যবহারিক শাড়ি নিয়ে ল্যাকেজে গুছালাম।

#চলবে,,,,?

(আজকের পর্বে সব পাঠকদের গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here