#সুখ_সন্ধানী
পর্ব ৬
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno

আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম,
শর্ত একটা-ই,তা হলো আমরা এখন যে জমিতে আছি তা আমার ছেলের নামে লিখে দিতে হবে এবং দুটো ঘর করে দিতে হবে। যদি রাজি থাকেন তাহলে আমরা এমন অবৈধভাবে মেলামেশা না করে আল্লাহর শরিয়ত মোতাবেক একটা সম্পর্কে যায়। তাহলে অন্তত এইসব পাপ থেকে মুক্তি পাবো এবং পরপারে সুখে থাকবো।

আজিজ চাচা হয়তো আমার মুখে এমন প্রস্তাব আশা করে নি তাই কিছুটা হতবাক দেখাচ্ছিলো উনাকে। উনি আমাকে বললেন,, এই বয়সে বিয়ের কথা বললে ছেলে মেয়েরা কি ভাব্বে আর পাড়াপ্রতিবেশিরা কি ভাব্বেন। তার চেয়ে আমার দেওয়া প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাও। আনন্দ কি শুধু আমার একার হবে? তুমি ও এতো দিনের অপূর্ণ যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি পাবে আর আমিও। কেউ কিছু জানবেও না। টাকা পয়সা যায়গা জমি চাও দিবো কিন্তু এই বয়সে বিয়ে করা সমাজের চোখে খারাপ দেখায়।

উনার বলা কথা গুলো শুনেই বুঝতে পারছি কতটা নির্লজ্জ এবং অমানুষ,, মানুষের ভয়ে গোপনে পাপ করতে রাজি কিন্তু আল্লাহর ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকতে রাজি না। আমি উনাকে বললাম,, আপনার যথেষ্ট বয়স হয়েছে,, মানুষের হায়াত মওতের কথা বলা যায় না। এমন ব্যভিচার করার পরে আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবেন আপনি?? আমার কথা গুলো নিরিবিলিতে বসে একটু ভেবে দেখবেন।

আমি সেখান থেকে বেরিয়ে চলে আসলাম। হিমেল কে রেখে এসেছি, হয়তো এতোক্ষণ কান্না শুরু করেছে। যতদূর সম্ভব তারাতাড়ি বাড়িতে চলে আসি। মা আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করে,, এতোক্ষণ কই ছিলি??

আজিজ চাচার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম।

কেন? কি কথা বললি ওই বেয়াদব মানুষের সাথে?

নিজের প্রতিবন্ধী সন্তান এবং তোমাদের জীবনের এক বিন্দু সুখের জন্য সব করতে রাজি আমি, তাই উনাকে বললাম, যদি যায়গা দিয়ে আমাদের বাড়ি করে দেয় তাহলে আমি উনার কথা মতো চলবো।

সাথে সাথে মা আমাকে ঠাস্ করে থাপ্পড় মারেন এবং বলে!! নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস দিন দিন, দরকার হয় মা ছেলে সবাই মিলে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করবো তাও এইসব পাপের বাড়িতে থাকবো না।

মায়ের এমন কথাতে মনটা ভরে গেলো। এতো কষ্টের মধ্যে থেকেও নিজেদের সামান্য সুখের জন্য আমার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হতে দিতে নারাজ। মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে সব কথা খুলে বলি। এখনো মা আমাকে ওইসব কথা বলতে নিষেধ করে,,এতো বয়োস্ক মানুষের সাথে কোন ভাবেই আমাকে বিয়ে দিবেন না।হয়তো পৃথিবীর কোন মা-ই তার মেয়ের এতো বড় ক্ষতি চান না।

কেটে গেছে দুই তিন দিন, এখনো আজিজ চাচার লোকজন বা উনি নিজে আমাদের বাড়িতে বা আমার কাছে আসেন নি। হয়তো উনার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছেন। হয়তো বুঝতে পেরেছেন জীবনের শেষ প্রান্তে এমন পাপ করা ঠিক হবে না। বিকালে হিমেল কে নিয়ে বসে আছি এমন মুহুর্তে আজিজ চাচা বাবাকে বলে উনি আমাকে বিয়ে করতে চান। যেহেতু আমি আগে থেকেই বাড়ির সবাই কে বলেছি এমন প্রস্তাব আমি নিজে দিয়ে এসেছি তাই আপত্তি থাকলেও অমত করেনি কেউ।

আজিজ চাচা এই জমির কাগজপত্র ঠিক করে সামনের বুধবার রেজিস্ট্রি অফিসে যাবেন এবং আমাদেরও যেতে বলেন। যেহেতু আমার আর সুজনের এখনো তালাক হয় নি তাই আমাকে শরিয়ত মোতাবেক এখনই বিয়ে করা সম্ভব না। জমি রেজিস্ট্রার হওয়ার পরের দিন আমাকে দিয়ে তালাক কার্যকর করাতে চান তিনি তারপর আমাদের এই বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি করতে করতে ৯০ দিন (ইদ্দত) পুর্ন হবে।

যেই কথা সেই কাজ,, গতকাল জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে আর আজ আমাকে কাজির কাছে এনেছেন তালাক করাতে। স্বামী স্ত্রী নামক সম্পর্ক টা আমার আর সুজনের আদৌও ছিলো না। কিন্তু তারপরও কেন আমার এতো কষ্ট হচ্ছে তালাক দিতে। কান্না গুলো জমা হয়ে গলার মাঝে আটকে থেকে ব্যাথা দিচ্ছে। কোন রকম চোখের পানি সামলে কাগজে সই করে বেরিয়ে আসি। বাড়ির কাজ সম্পুর্ন করতে ইট বালি আসতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝে আজিজ চাচা বাজার করে পাঠিয়ে দেন। গ্রামের মানুষ আমাদের দু চোখের কুটে দেখতে পারে না আর।

আমার নামে গ্রামের মানুষের মুখে মুখে হাজারো নিন্দা কথা। এবার নাকি রাঘব বোয়ালে হাত দিয়েছি,, অনেক আগে থেকেই আমাদের সম্পর্ক ছিলো কিন্তু এতোদিন মানুষ বুঝতে পারেনি এমন নানান রকম নিন্দা কথা। যেসব মানুষ আমাকে এতো দিন কু-নজরে দেখেছিলো তারা এখন উঠে পরে লেগেছে শেষ মুহূর্তে একটু মজা নিতে। বুড়োর চেয়ে বেশি সুখ দিতে পারবে এমন কিছু কিছু খারাপ কথা নির্দ্বিধায় বলে ফেলে।

প্রায় একমাস পরে সুজনের কাছে তালাকনামা পৌঁছায়। সুজন এই তালাক মানতে রাজি না তাই সে আজ আমাদের বাড়িতে এসে ধমকাধমকি শুরু করে।আমি এই তালাক মানি না, আমার বউকে আমি এখনি নিয়ে যাবো এই সেই অমুক তমুক ইত্যাদি। হঠাৎ করে আমাদের বাড়িতে এমন সার্কাস চলা দেখে বিনা পয়সার অনেক দর্শক জমেছে। আমি ঘরের মধ্যে হিমেলকে নিয়ে চুপচাপ বসে আছি। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার উপক্রম কিন্তু সুজনের নাটক শেষ হচ্ছে না। কিছুক্ষন পরে আজিজ চাচা বেশ কিছু লোকজন নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসেন এবং সুজনকে শাসিয়ে তাড়িয়ে দিলেন।

ওইদিনের পরে সুজন আর কখনো ফিরে আসেনি। কিন্তু আজিজ চাচা মাঝে মাঝে আসেন, চুলে এবং দাড়িতে কলপ দিয়ে আসেন। হয়তো অল্পবয়সী মেয়েকে বিয়ে করার আনন্দে উনারও শখ,বয়সকে লুকানোর। মাঝে মাঝে হিমেল কে জিনিসপত্র দেওয়ার অজুহাতে আমার সাথে কথা বলেন আমি কথার ফাঁকে চাচা বললে উনি রেগে যেতেন আর চাচা ডাকতে নিষেধ করতেন।

আজ আজিজের স্বপ্ন পুরোনের দিন,, চুপিচুপি আজ আমাদের বিয়ে সমাপ্ত হলো,, কুঁড়ে ঘরের আসমানী এখন রাজরানী। লোক মুখে শোনা যায়, বয়স্করা নাকি বউকে বেশি আদর করে। হয়তো আমিও এমন সোনায়সোহাগা বউ হবো। এতো দিন পরে হয়তো একটু ভালো পোশাক ভালো খাবার ভালো ঘরবাড়ি পাবো। সারাজীবন দুঃখের মধ্যে থেকে থেকে ভুলেই গেছি সুখ কি, দেখতে কেমন। তা-ই-তো সুখ সন্ধানী জীবন আমার নতুন স্বপ্নের আলপনা আঁকতে শুরু করেছে।

হ্যাঁ অবশেষে বিয়ে হয়ে গেছে এই বুড়ো মানুষের সাথে। উনাকে দেখে আমার গা ঘিনঘিন করছে। এই মানুষ কে কিভাবে নিজের শরীর দেখাবো। স্বামী স্ত্রী মিলনে কি শুধু শরীরের মিলন হয় নাকি মনেরও মিলন হয়। যদি মনের মিলন হয়েই থাকে তাহলে সেই মিলন আমার এই জীবনে আর আসবে না।

#বর্তমান

বাড়ির ভিতর থেকে গেট আটকানো। অনেক বড় দালান বাড়ি। অনেক ডাকাডাকির পরে প্রায় আমার সমবয়সী একটা মেয়ে গেইট খুলে দিলো। মনে হয় এটা ছেলের বউ। মেয়েটা গেইট খুলেই চলে গেছে আর উনার ছেলে কি কি সব কথা বলে গালাগালি করা শুরু করেছে। বাপ ছেলের ঝগড়া দেখে বুঝতে পারলাম সুখ কেমন তা কখনো দেখতেই পাবো না। ঘরে এসে দেখি ঘরে কোন জিনিসপত্র নেই। একটা পুরনো চৌকি তাতে দুটো বালিশ আর একটা আধাপুরনো কাঁথা। এমন বড় বাড়িতে ঘরের জিনিসপত্র দেখে অবাক হলাম। এই ঘর আর সুজনের ঘর প্রায় একই ছিলো শুধু এটা পাকা বাড়ি। আজিজ হয়তো বুঝতে পারছে আমি কি ভাবছি তাই সে বলেন, আরিফ (আজিজের ছেলে) ওর মাকে খুব ভালোবাসে তাই ওর মায়ের ব্যাবহার করা জিনিসপত্র নিয়ে গেছে।

আবারও বুঝলাম কি সহ্য করতে হবে আমাকে। ছেলে মেয়েরা নানান রকম ভাবে বাঁধা সৃষ্টি করেছে বিয়ে আটকাতে কিন্তু কোন ভাবে সফল হয় নি।তারা ভাবছে আমার পাল্লায় পড়ে ওদের বাবা খারাপ হয়ে গেছে তাই সব দোষ আমাকে দিচ্ছে। আজিজের চাহনি, খুসখুস করে নড়াচড়া দেখে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। এমন সময় একটা পিল এনে খেতে বলে আমাকে। আমি তো অবাকের শীর্ষস্থানে পৌঁছে গেলাম। উনার কি একটুও লজ্জা করছে না, মেয়ের বয়সী একটা মেয়ের সাথে এইসব করার কথা ভেবে। ছেলে মানুষ হয়তো এমনই হয়। যায়হোক আমি উনাকে বললাম এইসব খেতে হবে না। কিন্তু উনি কোন রিক্স নিতে চান না। উনার ছেলে মেয়েরা নাকি শর্ত দিয়েছেন বাচ্চা আর ওদের মায়ের কোন জিনিস আমার নেওয়া যাবে না।

বিয়েটা যখন হয়েই গেছে তখন জোর খাটিয়ে দূরে থাকা সম্ভব না। সম্পুর্ণ একতরফা ভাবেই আজিজ তার চাহিদা পুরোন করে নিলো। আজিজ ঘুমিয়েছে কিন্তু ঘুম নাই আমার চোখে। পুরো জীবনের হিসাব কষতে বসেছি। একদিন দুইদিন নয় বাকিটা জীবন কি আমি এইভাবে থাকতে পারবো।

হিমেল হয়তো অনেক কান্না করছে। আল্লাহ গরীবদের জীবন কে এতো দূর্বিষহ করেন কেন। কোন রকম জেগে জেগে রাত পার করলাম। খুব ভোরে পবিত্র হয়ে আজিজ নামাজ পড়তে মসজিদে যায় এবং আমাকেও পড়তে বলেন।

সকাল হতে না হতেই আজিজের মেয়ে দরজায় তালা দিয়ে দেয়। ওইটা ওর মায়ের ঘর তাই ওই ঘরে আমার মতো মেয়েকে ঢুকতে দিবে না। মেয়েটার মুখের ভাষা এতো খারাপ, যা মুখে আসে তাই বলে দিচ্ছে। এমন সময় আজিজ বাড়িতে আসে আর মেয়েকে থাপ্পড় মারে সাথে সাথে মেয়েটার হাতের কাছে থাকা কাচের জগ আমার দিকে ছুড়ে মারে আর আমার কপালে লেগে অনেক খানি যায়গা কেটে গড়গড়িয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে।

স্পষ্ট বুঝতে পারছি ছেলে মেয়ের অমতে আমাকে বিয়ে করেছে আর আমি শুধু শুধু নিজের সন্তান এবং বাবা মায়ের কথা ভেবে আবারও আগুনে ঝাপ দিলাম। আমি হাত দিয়ে কপাল শক্ত করে চেপে ধরে আছি আর অন্য দিকে আজিজের ছেলে মেয়েরা আমাকে তালাক দেওয়ার জন্য ঝগড়া করে চলেছে।

চলবে,,

আগামী পর্বে গল্পের নতুন মোড় আসবে,,
আর দয়া করে সবাই লাইক কমেন্ট শেয়ার করে আমার ছোট্ট পেইজটি বড় করতে সহায়তা করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here