#গোধূলী_শেষে_তুমি_আমি
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ৫

পল্লবের কথায় রজনী বোকার মতো বসে রইলো। মানুষটা যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছে। কি খারাপ ধূর ভালো লাগে না। ওদিকে পল্লব কিছুটা দূর গিয়ে আবারও রজনীর কাছে ফিরে এলো। রজনী অন্যমনষ্ক ছিলো তাই পল্লবের ফিরে আসা খেয়াল করেনি। পল্লব রজনীর চোখের পাতাটা টেনে ধরলো। এবার ভয়ে রজনী চেয়ার থেকেই পড়ে গেলো। এটা দেখে পল্লব হাসতে হাসতে শেষ। আর রজনী ওমাগো বলে বিলাপ করছে।

_ এই আপনার কি ছোঁয়াচে রোগ আছে নাকি! ছুঁয়ে দিলেই এভাবে ভয় পান।

_ আপনার মতো বাজেলোক আমি একটাও দেখিনি পৃথিবীতে। কথায় কথায় মেয়েদের ছোঁয়া কি আপনার অভ্যস নাকি।

_ আপনি নিজে থেকে যদি সব বলতেন, তাহলে আমাকে এতোবার আপনাকে ছুঁয়ে দিতে হতো না।

_ আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি আমাকে নিয়ে আপনার এই ভাবনা ভাবনি বন্ধ করুন। আপনাদের মতো এই বড়লোক মানুষ শুধু আমাদের মতো মেয়েকে দয়া দেখায়! যে দয়া আমার চাই না।

_ রজনী আপনি ভুল ভাবছেন।

_ আমি ভুল ভাবছি না,আপনি এই মুহূর্তে আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাবেন।

_ যাবো,তাঁর আগে বলুন তো আপনার চোখে কি হয়েছে? সেদিন তো চোখের সমস্যার জন্য আমার চেম্বারে গিয়েছিলেন।

_ আমার কিছু হয়নি।

_ আমি তো আপনার চোখটা দেখলাম, মনে হয় আপনার চোখে কেউ হয়তো আঘাত করেছে।

_ আপনায় বলেছে তাই না।একধাপ বেশি বোঝা কি আপনার রোগ নাকি। আমি চোখে কুঞ্চির গুঁতো খেয়েছি। তারপর চোখের কোণে রক্তজমাট বেঁধেছিলো! ঔষধ খাওয়ার পর ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু এখন চোখ থেকে পানি পড়ছে। তাই—

_ হয়েছে আর বলতে হবে না,আমি বুঝে গেছি।

তারপর হাসতে হাসতে পল্লব ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আর রজনী বোকা হয়ে তাকিয়ে রইলো। সে এতোক্ষণ কীভাবে সবটা বলে দিলো সেটা ভেবে অবাক হলো। উনি কি আমায় তাঁর বসে নিয়ে নিয়েছে নাকি। আল্লাহ এই ছেলে এমন কেন?

—————–

পৃথিবীতে দিনের আলো ফুরিয়ে রাতের আঁধারে ঢেকে গেছে। পাখিরা যে যাঁর নীড়ে ফিরে গেছে। এবার পল্লবও নিজের চেম্বারে ফিরে যাবে। লিমা বেগম সবাইকে চা-নাস্তা দিয়েছে,সাথে নিজেও বসে আছে। সোফায় বসে মা-ছেলে নিজেদের বিষয়ে কথা বলছে। আর রজনী নিজের মতো করে ভাবনায় বিভোর হয়ে আছে। হঠাৎ ফোনের রিংটোনে সবার ধ্যান ভেঙে গেলো। সবাই সেদিকে তাকিয়ে পরলো। রজনী নিজের ফোনটা হাত তুলে নিলো। কারণ তাঁর ফোনটাই বাজছে। রিসিভ করে সে একটু দূরে সরে গেলো।

_ হ্যা নিলি বল,কেমন আছিস।

_ আমি ভালো আছি,তোর কি খবর বল?

_ এই তো ভালোই, বাবা-র কি খবর বল তো?

_ কাকু ভালো আছে,আমার সাথেই আছে।

_ তোদের বাড়িতে আব্বু এই অসময়ে। কিছু কি হয়েছে?

_ কাকু কিছু বলবে তোকে। বাড়িতে বসে বলতে পারবে না,তাই এখানে এসেছে ।

_ আচ্ছা দে

_ কাকু এই নাও,রজনী কথা বলবে।

_ রজনী

_ হ্যা বাবা বলো,কেমন আছো।

_ আলহামদুলিল্লাহ, তুই কেমন আছিস।

_ আমি ভালো আছি বাবা। তোমার শরীর কেমন এখন,পায়ের ব্যথা কমেছে।

_ হ্যা এখন ভালোই আছি। তোকে একটা কথা বলার ছিলো?

_ বলো বাবা,আমি শুনছি।

_ মঈনুল জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেছে। কে বা কারা ওকে ছাড়িয়ে নিয়েছে জানতে চেয়েছি,কিন্তু ওরা আমায় থানায় ঢুকতে দেয়নি। তাঁর আগেই আমায় হুমকি দিয়েছে। বলেছে তোকে খুঁজে না পেলে আমাকে বন্দী করবে।

_ কি বলছো বাবা

কথাটা রজনী চিৎকার করে বললো। সাথে ওর হাত-পা হঠাৎ করেই কাঁপতে শুরু করলো। রজনীর চিৎকারে পল্লব এবং তাঁর মায়ের কথায় ব্যাঘাত ঘটলো। তাঁরা রজনীর দিকে তাকাতেই রজনীর বেহাল অবস্থা দেখতে পেলো। দেখতে পেলে রজনীর অস্থিরতা। রজনীর পুরো শরীর খারাপ ভাবে কাঁপছে।

_ এবার আমি কোথায় লুকাবো বাবা। ও আমায় ধরে ফেলবে। ও আমায় এবার মেরেই ফেলবে। আমি কি করবো এবার। আমাকে ও মেরেই ফেলবে। আমি আর তোমাকে দেখতে পাবো না! আমায় না পেলে তোমায়ও ওরা মেরে ফেলবে। পরের মেয়ের জন্য আজ তোমাকেও বিপদে পরতে হচ্ছে। আমাকে তুমি সেদিন কেন মেরে ফেললে না। আমার জন্য ওরা তোমার নিলির ক্ষতি করবে। আমি কি করবো! আল্লাহ আমি এবার কি করবো,ওরা নিশ্চয়ই জেনে গেছে আমি এখানে। ওরা আমার ঠিকা—

আর কিছু বলতে পারলো না রজনী, সেন্স হারিয়ে ফেললো। ততোক্ষণে রজনীর অবস্থা দেখে পল্লব এবং লিমা বেগম এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাঁরা কিছু বোঝার আগেই রজনী ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো। লিমা বেগম দৌড়ে গিয়ে রজনী নিজের হাতের উপরে নিলেন। আর পল্লব দৌড়ে গিয়ে ফোনটা তুলে নিলো। ফোনে এখনো রজনীর বাবা রজনী,রজনী বলে চিৎকার করছে। পল্লব ফোনটা কনে তুললো।

_ হ্যালো আঙ্কেল, হ্যালো, হ্যালো

_ কাকু বাহিরে মঈনুলের লোক দেখতে পেলাম, ফোনটা কেটে দিন।

টুথটুথ করে ফোনটা কেটে গেলো। উপরের ওই কথাটাই শুনতে পেলো পল্লব। মঈনুল, কে এই লোক যাঁর জন্য—

_ পল্লব একগ্লাস পানি নিয়ে আয়।

পল্লব দৌড়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো। রজনীর চোখেমুখে ছিটিয়ে দিতেই, রজনী চোখ খুললো। চোখ খুলতেই হঠাৎ লিমা বেগমকে আঁকড়ে ধরলো আর বলতে রইলো।

_ আন্টি ওরা আমায় তুলে নিয়ে যাবে। আমাকে লুকিয়ে ফেলুন। ওরা আমায় মেরে ফেলবে। এবার আমি আর বাঁচতে পারবো না। ওই মঈনুল আমাকে মেরে ফেলবে আন্টি। আমাকে না পেলে ওরা বাবা-র ক্ষতি করে দিবে। আমাকে মেরে ফেলবে। ওই মঈনুল আমার সব—

কথা শেষ হলো না,আবারও সেন্স হারিয়ে লিমা বেগমের বুকে মিশে রইলো রজনী । লিমা বেগম আর পল্লব যেন কিছুই বুঝতে পারলো না। কি এমন হয়েছে যে রজনী এতো ভয় পেয়েছে। মা-ছেলে যেন দিশেহারা হয়ে বসে রইলো। হঠাৎ লিমা বেগম চিৎকার করে উঠলো–

_ পল্লব, রজনীর শরীর অসম্ভব গরম হয়ে আসছে।

_ কি বলছো মা,কই দেখি।

পল্লব রজনীর কপালে হাত দিতেই বুঝতে পারলো,অস্বাভাবিক ভাবে রজনীর শরীর গরম হতে শুরু করেছে। অতিরিক্ত ভয় থেকে রজনীর এমন অবস্থা হয়েছে তা পল্লব ভালোই বুঝতে পারলো। সে তাঁর মা’কে বললো।

_ মা উনাকে এখনি ঘরে নিয়ে যেতে হবে। আর আমার মনে হচ্ছে উনার এই অস্বাভাবিক জ্বরের জন্য যখন তখন খিঁচুনি উঠবে। এই ঠান্ডা ফ্লোরে থাকলে বেশি ভয়।

_ ধর ওকে,ঘরে নিয়ে চল। আল্লাহ মা মরা মেয়েটার সাথে কেন এমন হচ্ছে।

পল্লব আর লিমা বেগম ধরাধরি করে রজনীকে ঘরে নিয়ে এলেন। রজনীকে শুয়ে দেওয়ার কিছু সময় পর,সত্যি সত্যি রজনীর খিঁচুনি উঠলো। কম্বল কাঁথা দিয়ে রজনীকে চেপে ধরলো লিমা বেগম। অনেকটা সময় যেতে রজনী স্বাভাবিক হলো। কিন্তু রজনীর জ্বর নামার কোন নাম নিলো না। ঘড়ি তখন রাত নয়টার ঘরে ঠেকেছে। লিমা বেগম খুব ভয় পেলেন।

_ পল্লব এখন উপায়,

_ মা উনি ভয়ে আছেন,এই ভয় ভেতর থেকে দূর না হওয়া অবধি এমনই হবে। কিন্তু কি এমন ঘটনা আছে যা উনাকে ভেতর থেকে এভাবে ভেঙে দিচ্ছে।

_ আমাদের ওর বাবা-র সাথে কথা বলতে হবে। আমার মনে হয় রজনী কিছু জানাবে না।

_ আমারও তাই মনে হয়।

—————

সময় রাত তিনটে। রজনীকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হ’য়েছে। রজনীর জ্বর নামার কোন নামই নিচ্ছিলো না। তাই পল্লব বাধ্য হয়ে তাঁর একজন ডাক্তার বন্ধুকে খবর দিয়ে এনেছিলো। সে এসে রজনীকে ঔষধ এবং ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে। এখন রজনীর জ্বর একটু কম। রজনীর পাশে লিমা বেগম শুয়ে আছে। আর বেলকনিতে বসে চিন্তায় মগ্ন পল্লব। তাঁর বন্ধু তাঁকে জানিয়েছে! অতিরিক্ত ভয় থেকেই রজনীর এই জ্বরটা এসেছে। আর এই ভয় ভেতর থেকে যদি না কাটে,তাহলে হয়তো এমন জ্বর সব সময় আসবেই। যদি ভয়ের আসল কারণটা পল্লব জানতো,তাহলে হয়তো রজনীর ভয়টা একটু হলেও কাটিয়ে দেওয়া যেত। পল্লবের আকাশ-কুসুম চিন্তায় ছেৎ পড়লো ফোনের আওয়াজে। পকেট থেকে নিজের ফোন বের করতেই বুঝতে পারলো তাঁর ফোন বাজছে না,অন্য কারো ফোন। বেলকনি থেকে তারাহুরো করে পল্লব ঘরে এলো! কারণ ফোনের আওয়াজে লিমা বেগম বা রজনীর ঘুম নষ্ট হতে পারে। পল্লব ঘরে এসে দেখলো,রজনীর ফোন বাজচ্ছে। সে তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে তুলে নিলো। হাতে নিতে নিতেই ফোনটা কেটে গেলো। কেটে যাওয়ার কিছু সময় পর ফোনটা আবারও বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে পল্লব বেলকনিতে চলে গেলো,যেন ওদের ঘুমের ব্যাঘাত না হয়। ফোনটা রিসিভ করবে কি করবে না ভাবতে রইলো। কারো পার্সোনাল জিনিসে হাত দেওয়া অনুচিত কাজ। কিন্তু কি যেন ভেবে পল্লব ফোনটা রিসিভ করে কানে তুললো । পল্লব হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো একজন পুরুষের কন্ঠ।

_ রজনী,জান আমার! তুমি নাকি আমার ভয়ে লুকিয়ে আছো। তুমি পাতালেও যদি লুকিয়ে থাকো,এই মঈনুল সেখান থেকে তোমায় খুঁজে বের করবে। তুমি আমাকে চেনো না। আচ্ছা জান,তোমার ঘাড়ের ক্ষতটা কি সেরে গেছে। তোমায় আমি বলেছি না,তোমার ক্ষত শুকানোর আগে আমি জেল থেকে বেরিয়ে যাবো। দেখলে জান আমি বেরিয়ে গেছি। এবার তোমাকে খুঁজে নিবো!যেমন তোমার বান্ধবীকে দু’টো থাপ্পড় দিয়ে তোমার নাম্বার জোগাড় করেছি। এবার তোমাকে খুঁজে পাবার পালা। ভালো থেকো। হা হা হা হা।

চলবে,,

সরি দেরি হবার জন্য। খুব তাড়াহুড়ো করে লিখেছি। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here