#মেঘের_আড়ালে_মেঘ”১৯”
#জেরিন_আক্তার_নিপা

মেহরীন বাড়ি ফিরে ঘরে দরজা লাগিয়ে বসে কতক্ষণ কাঁদল। ফোঁপাতে ফোঁপাতে মেহরীন বলছে,

“আমার উপর অনন্তর একটুও বিশ্বাস নেই! এতদিনেও আমি ওর বিশ্বাস অর্জন করতে পারলাম না! যে মানুষটাকে আমি ভালোবাসি, সে ভাবছে আমি তাকে ধোঁকা দেব!”

মেহরীন আজকের মত কষ্ট তাদের রিলেশন চলাকালীন সময়ে কখনও পায়নি।
বাবা মেহরীনকে ডাকলে মেহরীন চোখ মুছে উঠে দাঁড়াল।

“অনন্ত তার অবিশ্বাস নিয়েই থাকুক। আমি আর কখনও ওর সাথে কথা বলব না। দেখব আমার সাথে কথা না বলে ও কীভাবে থাকে।”

মেহরীন বাবার সাথে আয়ামকে স্কুল থেকে নিয়ে হাসপাতালে গেল। বাবার রুটিন চেকআপ করিয়ে বাড়িতে ফিরে এলো। সে বাড়ির সব কাজ করলেও অন্য দিনের মত আজ তার মন ভালো নেই। ইরফানও রাতে এই ব্যাপারটা লক্ষ করল। জিজ্ঞেস করবে না ভেবেও শেষে ইরফান না জিজ্ঞেস করে পারল না।

“বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি?”

মেহরীন বুঝতে পারেনি ইরফান কথাটা তাকে বলেছে কিনা।

“আমাকে কিছু বলছেন?”

“এখানে আপনি ছাড়া আর কে আছে?”

“শুনতে পাইনি।”

“মন খারাপ কেন? বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে?”

মেহরীন অনন্তর উপর আগে থেকেই রেগে ছিল। সেই রাগ এখন ইরফানের সাথে দেখাতে লাগল।

“পৃথিবীতে মন খারাপ হওয়ার জন্য কি ওই একটাই কারণ আছে? অন্য কারণে মন খারাপ হতে পারে না? আমার মন খারাপ হয়নি। আমি তো মনের সুখে দাঁত বের করে হাসছি। এই দেখুন।”

মেহরীন হেসে দেখাল। ইরফান বুঝল আজ মেহরীন একটু বেশিই রেগে আছে। সে মনে মনে বলল,

“সিরিয়াস ঝগড়া হয়েছে হয়তো।”

ইরফান হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বলল,

“মানুষ মনে হয় খুব বেশি খুশি হলে হাসলে তা কান্না করার মত দেখায়। তা আপনার খুশির কারণটা জানতে পারি?”

“কোন কারণ নেই। পাগল হয়ে গেছি আমি। তাই কারণ ছাড়া হুদাই মনে খুশি লেগেছে। আপনি এখান থেকে যান তো। আজ অত পেঁচাল পারছেন কেন? একটু শান্তি দিন না আমাকে।”

ইরফান বিড়বিড় করে বলল,

“অনন্তর মত বয়ফ্রেন্ড যার থাকে তার মন খারাপ হওয়ার জন্য নতুন করে কোন কারণ লাগবে না। ওই অমানুষ কারো যোগ্য না। আপনি যে কীভাবে এখনও ওর আসল চেহারা দেখতে পাচ্ছেন না। আমি সেটাই ভাবছি। গাধা মেয়ে গুলোর কপালেই এমন বয়ফ্রেন্ড মিলে। কাউকে ভালোবাসলে আর চোখে দেখে না এরা। চোখ কান বন্ধ করে অন্ধ হয়ে প্রেমে পড়ে।”

ইরফান মেহরীনের মুড ঠিক করার জন্য একটু মজা করতে চাইল।

“বাহ! আমার ঘর থেকে আপনি আমাকেই চলে যেতে বলছেন?”

মেহরীন দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলল,

“আপনার ঘরে আপনিই থাকুন। আমিই গেলাম। অসহ্য লোক একটা। পৃথিবীর সব গুলা পুরুষ এরকম অসহ্য। ভাল্লাগে না ছাতা।”

মেহরীন গটগট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ইরফান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

“আস্ত গাধা মেয়ে। মাথায় গোবরও নেই। গোবর থাকলেও ঘাস গজাত। এই মেয়ের মাথা ফাঁকা। কিচ্ছু নেই ভেতরে।”
.
মেহরীন অনন্তর কল তুলছে না। অনন্ত আর থাকতে না পেরে মেহরীনের সাথে দেখা করার জন্য ইরফানের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। মেহরীনকে কল করে বাইরে আসতে বলবে। মেহরীন না এলে সে নিজেই ভেতরে যাবে।

“শালার শর্তের গোষ্ঠী কিলাই। মেহুর সাথে এখন দেখা করতে না পারলে আমি দম বন্ধ হয়ে মরে যাব।”

ইরফান তখন তার স্টাডি রুমের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের নিস্তব্ধ পরিবেশ উপভোগ করছিল। তার চোখ অনন্তর উপর পড়ল। অনন্তর অস্থিরতা স্পষ্ট বুঝতে পারছে সে।

“বাটপারটাকে আরেকটু শিক্ষা দিয়ে আসি। মেহরীনের সাথে আজ কোনো ভাবেই তোমার দেখা হবে না চাদু। আসছি আমি। ওয়েট করো।”

ইরফান কাউকে কিছু না বলে মেইন ডোর বন্ধ করে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। অনন্ত ইরফানকে দেখে কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ইরফান নিজে থেকেই বলল,

“আরে মিস্টার অনন্ত! এই রাতের বেলা আপনি আমার বাড়ির সামনে কী করছেন? এদিক দিয়েই কোথাও যাচ্ছিলেন বুঝি?”

অনন্ত হাসার চেষ্টা করে বলল।

“না। আসলে মেহু… মেহু আমার কল তুলছে না। তাই… তাই ওকে দেখতে চলে এলাম। ভাবলাম ওর অসুখ করেনি তো।”

“না,না। একদম চিন্তা করবেন না। আপনার গার্লফ্রেন্ডের কিছুই হয়নি। উনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। আর এখন আমার ছেলের পাশে শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন। তাই আপনার কল তুলতে পারছেন না।”

“মেহরীন ঘুমিয়ে গেছে!”

“হ্যাঁ। সেই কখন!”

“মেহু এত জলদি ঘুমিয়ে গেছে! আগে তো বেশ রাত করে ঘুমাত।”

“মানুষের অভ্যাস বদলায় মিস্টার অনন্ত।”

“ওকে একটু ডেকে দিতে পারবেন? আমি ওর সাথে কথা বলব।”

“এখন তো উনাকে ডাকা সম্ভব হবে না। উনি জাগলে আমার ছেলেও জেগে যাবে। আপনি বরং কাল সকালে আসুন। এখন তো রাতও হয়েছে। বাড়িতে আমার বাবা আছেন। উনার ছেলের বউ রাত বিরাতে বাইরে বের হলে এটা উনি ভালো ভাবে নেবেন না।”

ইরফান মনে মনে ভীষণ এনজয় করছে। অনন্ত ইরফানের চাল বুঝতে পারছে না। সে ইরফানের সব কথাই বিশ্বাস করে নিয়েছে। তার সাথে রাগ করে মেহু হয়তো আজ জলদি ঘুমিয়ে গেছে। ঘুমানোর আগে কেঁদেছেও হয়তো।

“আচ্ছা। আমি তাহলে কালই ওর সাথে দেখা করব।”

“জি।”

“আসছি তাহলে। ”

“আসুন। গুড নাইট মিস্টার অনন্ত।”

অনন্ত চলে গেলে ইরফান হাসি হাসি মুখ করে বাসায় ঢুকেই মেহরীনের সামনে পড়ে গেল। ওকে একা একা হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে মেহরীন জিজ্ঞেস করল,

“একা একা হাসছেন যে! ভূত পেত্নী ভর করেছে নাকি? আর রাতের বেলা বাইরে কোথায় গিয়েছিলেন?”

“হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। আজকে বাইরের পরিবেশটা উপভোগ করার মতন। হালকা বাতাস হচ্ছে। মনে হয়ে রাতে বৃষ্টি নামবে।”

ইরফান এখনও নিজের হাসি থামাতে পারছে না। মেহরীন মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বলল,

“ব্যাটার উপর সত্যি সত্যিই পেত্নী ভর করেছে। আজ অনেক রোমান্টিক মুডে আছে মনে হচ্ছে। যা বজ্জাত বেডা, তুই পেত্নীর সাথে বৃষ্টিতে ভিজে রোমান্স কর।”
.
পরের দিন,
আজ ইরফান একটু দেরি করে অফিসের জন্য বের হচ্ছে। মেহরীনও ঘরের কাজ শেষ করে নাচের ক্লাসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। বাড়ি থেকে আলাদা আলাদা বের হলেও, লিফটে ওরা দু’জন সামনাসামনি হয়ে গেল।
ইরফান কিছু না বলে আড়চোখে মেহরীনকে দেখল। রাতে তো মুডের বারোটা বেজে ছিল। এখন মুড ঠিক হয়েছে কি-না কে জানে। মেহরীন ইরফানের আগে লিফটে ঢুকতে গেলে জুতা ছিড়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। ইরফান ধরতে ধরতে মেহরীন নিচে বসে পা ধরে চিৎকার করতে লাগল।

“ও বাবা গো! আল্লাহ, আমার পা মনে হয় ভেঙেই গেছে গো। এই মরার জুতা ছেড়ার আর সময় পেল না। আহ! আল্লাহ, ব্যথা গো।”

মেহরীন পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে দেখে ইরফানের খারাপ লাগল। আবার ওর বিলাপ শুনে হাসিও পাচ্ছে। যতটা না ব্যথা পেয়েছে তার থেকে বেশি নাটক করছে। ইরফান মেহরীনের সামনে বসল। ও যে পায়ে ধরে চিৎকার করে সে পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

“বেশি ব্যথা লেগেছে?”

“বেশি ব্যথা না লাগলে আমি নাটক করছি? আল্লাহ, আমি আমার জ্বালায় মরে যাচ্ছি আর আপনি সন্দেহ করছেন! উহ, আপনি মানুষ, না অন্য কিছু? মায়া দয়া কিচ্ছু নেই মনে।”

ঠোঁট বাঁকিয়ে কেঁদে কেঁদে মেহরীনের বলা শেষের কয়টা কথা শুনে ইরফান ফোঁস করে হেসেই ফেলল। মেহরীন রেগে গিয়ে তার ব্যাগ ইরফানের গায়ে ছুড়ে মারল।

“পাষাণ আপনি। আমাকে কাঁদতে দেখে হাসছেন! ও মা…

ইরফান উঠে দাঁড়িয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,

” চলুন উঠোন। হাত ধরুন।”

মেহরীন ঠোঁট বাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে ইরফানকে দেখল। সে বোঝার চেষ্টা করছে, ইরফান তার সাথে মজা করছে না তো।
মেহরীন হাত বাড়িয়ে ইরফানের হাত ধরলো। ইরফান ওকে তুলতে নিলে মেহরীন চেঁচিয়ে উঠলো। ইরফান ভয় পেয়ে গিয়ে বলল,

“কী হলো! আবার চেঁচালেন কেন?”

মেহরীন নাকি কান্না করে বলল,

“দাঁড়াতে পারছি না। উঠতে নিলে পায়ে ভীষণ ব্যথা লাগছে। আমি মনে হয় আর কখনও হাঁটতে পারব না। পা-টা একেবারেই ভেঙে গেছে।”

ইরফান কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে কিছু ভাবল।

“সত্যিই দাঁড়াতে পারছেন না?”

মেহরীন তেতে উঠল,

“মিথ্যা বলছি নাকি আপনার সাথে? উঠে দাঁড়াতে পারলে আমি এমন করতাম নাকি। আপনার এখনও মনে হচ্ছে আমি নাটক করছি! কী বাজে লোক আপনি! ”

মেহরীন আবার কাঁদতে লাগল। ইরফান কিছুটা বিরক্তি মাখা গলায় বলল,

” আপনাকে নিয়ে তো ভালো ঝামেলা হলো।”

কথাটা বলেই সে মেহরীনকে কোলে তুলে নিল। মেহরীন সব ব্যথা ভুলে গিয়ে বিস্ময়ে চোখ বড় করে ইরফানের মুখের দিকে তাকাল,

“কী করছেন আপনি?”

“দেখতেই তো পারছেন। তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?”

“আপনি আমাকে এভাবে নাচের ক্লাস পর্যন্ত দিয়ে আসবেন!”

“এহহ ভাঙা পা নিয়েও নাচার শখ কত! দাঁড়াতে পারছেন না, নাচবেন কী করে? রুমে দিয়ে আসছি। আজ বাসায় রেস্ট করুন।”

ইরফান মেহরীনকে রুমে নিয়ে এসে ফ্রিজ থেকে বরফ এনে ওর পায়ে ধরে রাখতে বলল। পেইনকিলার এনে মেহরীনের হাতে দিয়ে ওর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিল।

“নিন খান।”

“আপনি আমাকে এভাবে অর্ডার করছেন কেন?”

“তাহলে কি অনুরোধ করব? পায়ে আপনি ব্যথা পেয়েছেন। পেইনকিলার নিলে আপনার ব্যথা কমবে। পেইনকিলার নিতে না চাইলে আপনার কষ্ট বাড়বে। এখানে আমার কিছুই এসে যায় না। তাই অনুরোধ করারও প্রয়োজন বোধ করছি না।”

“আপনি সত্যিই একটা পাষাণ।”

মেহরীন ইরফানের হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পেইনকিলার খেয়ে নিল। ইরফান বাবাকে বলে অফিসে জন্য বেরিয়ে গেল।
রাস্তায় বের হয়েই অনন্তর সামনে পড়ল সে।
ইরফান অনন্তকে দেখেই বলল,

“মিস্টার অনন্ত! অহ্, আপনি তো আসতে একটু লেট করে ফেলেছেন। আপনার গার্লফ্রেন্ড তো একটু আগেই বেরিয়ে গেল। এতক্ষণে ডান্স ক্লাসে পৌঁছেও গেছে হয়তো।”

“মেহু চলে গেছে!”

“হ্যাঁ। অনেকক্ষণ আগেই বের হয়েছে।”

“ওহ। আমি তাহলে মেহুর ডান্স ক্লাসে যাচ্ছি।”

“হুম, হুম যান।”

অনন্ত চলে গেলে ইরফান গাড়িতে উঠে বসল।গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,

“দু’জন ভালোবাসার মানুষকে আমি কখনও আলাদা করতে চাইতাম না,যাদি মানুষ দু’জনের ভালোবাসা সত্যি হতো। অনন্ত একটা ফ্রড। মেহরীনের মত মেয়ে অনন্তকে কখনও ভালোবাসতে পারে না। অনন্ত মেহরীনের যোগ্যই না। মেহরীন এই লোকের থেকে যত দূরে থাকবে ততই ওর জন্য ভালো হবে। এই লোক টাকার জন্য মেহরীনকে বেঁচে দিতেও দু’বার ভাববে না। অনন্ত মেহরীনকে কখনও সুখী রাখতে পারবে না। সারাজীবন ওকে চোখের পানিই উপহার দিয়ে যাবে।”
.
মেহরীনকে না দেখতে পেয়ে অনন্তর অবস্থা পাগল প্রায়। চুল এলোমেলো। চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে। ফ্যাকাশে মুখ। অনন্তকে দেখলে এখন যে কেউ বলবে, খুব প্রিয় কাছের কাউকে হারিয়ে ওর এই অবস্থা হয়েছে। সে মেহরীনের অপেক্ষায় অনেকক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। প্রায় এক ঘন্টা পরেও যখন মেহরীন বের হচ্ছে না তখন ও নিজেই ভেতরে গেল। আজকের আগে অনন্ত আর কোনোদিন ভেতরে যায়নি। দরকার পরেনি তার। সে মেহরীনের জন্য বাইরে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করেছে।
ভেতর থেকে বের হয়ে অনন্তর চোখ রক্তবর্ণ হয়ে গেল। সে ভেতরে গিয়ে জানতে পেরেছে মেহরীন আজ ক্লাসে আসেনি।

“মেহু আজ ক্লাসেই আসেনি। তাহলে ওই ইরফান আমাকে মিথ্যে বললো কেন? কেন বলল মেহু অনেক আগে বেরিয়ে গেছে! ওই লোক কি মেহুর সাথে আমাকে দেখা করতে দিতে চায় না! গেম খেলছে আমার সাথে। এই অনন্তর সাথে গেম খেলা! ইরফান কাজটা তুমি ঠিক করোনি। মেহুর থেকে আমাকে দূরে রাখার চেষ্টা করা তোমার মোটেও ঠিক হয়নি। কার সাথে লাগতে এসেছ তা তুমি নিজেও জানো না। শেষ করে দেব। তোমাকে পুরোপুরি শেষ করে দেবার ক্ষমতা এই অনন্ত রাখে।”

অনন্ত মেহরীনের সাথে দেখা করার জন্য ইরফানের বাড়ি যাচ্ছে। আর কোন শর্ত মানবে না সে। লোকটার যা করার করুক এবার। সে-ও দেখবে কার দৌড় কতদূর।
.
হুমায়রা গাড়ির ভেতর থেকে অনন্তকে দেখে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলল,

“ড্রাইভার সাহেব! ড্রাইভার সাহেব গাড়ি থামান। হ্যাঁ, হ্যাঁ। এখানেই দাঁড়ান। আরে আপনাকে থামাতে বলছি, আপনি থামান।”

গাড়ি থামলে হুমায়রা নেমে গিয়ে দৌঁড়ে অনন্তকে ডাকতে ডাকতে ওর দিকে এগোলো।

“অনন্ত! অনন্ত!”

কারো কন্ঠে নিজের নাম শুনে অনন্ত দাঁড়াল। আশেপাশে খুঁজে দেখল ওকে কে ডাকে। হুরায়রা এতক্ষণে অনন্তর কাছে চলে গেছে।

“আপনি… আপনি গ্রাম থেকে কবে ফিরেছেন? আর আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কী হয়েছে আপনার? নিজের কী অবস্থা করেছেন! আপনি ঠিক আছেন অনন্ত? ”

অনন্ত রাগ চেপে রেখে মনে মনে বলল,

“এই আপদ এবার এখানে কোথায় থেকে এসে পড়ল? এখন এর সাথে ফালতু পেঁচাল পেরে সময় নষ্ট করতে পারব না। একে তাড়াতে হবে।”

“আপনি ঠিক আছেন?”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি ঠিক আছি।”

“আপনি আমাদের বাসায় যাচ্ছিলেন?”

“হুম। তুমি মনে হয় কোথাও বের হয়েছিলে। আমি তাহলে আজ বাসায় চলে যাই। কাল তোমাদের বাসায় যাব।”

“দুলাভাইদের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এখন যাব না। আপনি আমার সাথে চলুন।”

“কোথায়?”

“আগে চলুন না। গেলেই দেখতে পারবেন।”

অনন্ত না চাইতেও তাকে যেতে হলো। হুমায়রা তার হাত ধরে গাড়ির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অনন্ত কিছু বলতেও পারছে না। তাকে মেহুর সাথে দেখা করতে হবে। যে করেই হোক মেহুর সাথে দেখা তাকে করতেই হবে।

“আপনি ফিরেছেন কবে?”

“আজ সকালেই।”

“ফোন অফ ছিল কেন আপনার?”

“গ্রামে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।”

“চেহারার এই অবস্থা কী করে হলো?”

অনন্ত এবার সত্যিই রেগে যাচ্ছে। এই মেয়ে তাকে কী পেয়েছে হ্যাঁ? এনগেজমেন্ট হয়েছে বলে নিজেকে তার বউ ভাবতে শুরু করেছে। গাধা মেয়ে। অনন্ত তাকে বিয়ে করলে তো!
ড্রাইভার ওদেরকে ইরফানের বাড়িতে নিয়ে এলো। হুমায়রা ধমকের সুরে ড্রাইভারকে বলল,

“এখানে নিয়ে এসেছেন কেন আমাদের? ”

“আপা আপনি তো এখানেই আসতে চেয়েছিলেন। বলেন নাই তো আবার বাড়ি ফিরে যেতে।”

হুমায়রা ড্রাইভারের সাথে রাগারাগি করছে। অনন্ত এক পলক বাইরের দিকে তাকিয়ে বাড়িটা দেখল। তার গলা শুকিয়ে আসছে। এটা তো ইরফানের বাড়ি। এখানে মেহু থাকে৷ তার মানে ইরফানই হুমায়রার দুলাভাই! হুমায়রা তাকে এখন ভেতরে নিয়ে যাবে!

“না, না। আমি কিছুতেই হুমায়রার সাথে মেহুর সামনে যেতে পারব না। যে করেই হোক আমাকে এখান থেকেই ফিরে যেতে হবে। ভেতরে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে। মেহু আমাকে ভুল বুঝবে। আমার থেকে দূরে সরে যাবে। নাহ, আমি এমনটা হতে দেব না।”

“কিছু বলছেন?”

“না।”

অনন্তর নিজের গালে কয়েকটা চড় লাগাতে ইচ্ছে করছে।

“ইরফান হুমায়রার দুলাভাই এটা আমি আগে কেন জানলাম না। শিট! হামনার পরিবারের ব্যাপারে কোন খোঁজ খবর কেন নিলাম না আমি? ইরফান হয়তো এখনও জানে না আমার সাথে হুমায়রার বিয়ে হচ্ছে। আল্লাহ, সব ঝামেলা তুমি আমার কপালেই লিখে রেখেছো! এত বড় দুনিয়ায় ইরফানই কেন হুমায়রার দুলাভাই হলো! ওই শালা আমার ব্যাপারে কতটুকু জানে কে জানে। কিছু না জানলে আমার থেকে মেহুকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে কেন? ব্যাটা নিশ্চয়ই আমার সম্পর্কে কিছু জেনেছে।”

চলবে___
বানান ভুল ক্ষমা করবেন।
নাইস,নেক্সট কমেন্ট না করে গঠনমূলক কমেন্ট করুন।
গল্প সম্পর্কিত সকল আপডেট পেতে গ্রুপে জয়েন করুন।
👇
https://www.facebook.com/groups/928548141001685/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here