#প্রণয়_বর্ষণ (৩)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
___________
স্পর্শী আর রুদ্রকে একসাথে ভার্সিটিতে আসতে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে স্পর্শীর বন্ধুদল। রুদ্র আর স্পর্শী সা’প আর বে’জি। রুদ্র ডানে গেলে স্পর্শী মাস্ট বি বামে যাবেই। রুদ্রকে দুচোখের একচোখেও সহ্য করতে পারে না স্পর্শী। সেখানে স্পর্শী রুদ্রর বাইকে করে আসছে বিষয়টা হজম করতে কষ্ট হলো সবার। সামিরা তানিয়াকে চি’মটি কে’টে বলে,
‘দোস্ত রে আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখতেছি।’
তানিয়া দুম করে কি’ল বসায় সামিরার পিঠে। সামিরার আর্তনাদ করে ওঠে৷ তানিয়া কটমট করে বলে, ‘শাঁ’ক’চু’ন্নির মতো অতো বড় বড় নখ দিয়া খবরদার চি’ম’টি কা’টবি না আর।’
সামিরা কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে, ‘তাই বলে এতো জোড়ে মা’র’বি! নি’র্দ’য় বান্ধবী।’
নীরব বোকার মতো মাথা চুলকে বলে, ‘দোস্ত পশ্চিম দিক আর পূর্ব দিক কোনটা রে?’
সবাই এবার অবাক চোখে নীরবের দিকে তাকায়। একসাথে অবাক কন্ঠে বলে, ‘ব’ল’দ এখনো পূর্ব, পশ্চিম চিনিস না?’
নীরব বোকার মতো দাঁত বের করে হাসে। নাহিদ সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘এই ডান, বাম কোনটা এটা জানিস তো?’
নীরব তেজ দেখিয়ে বলে, ‘চিনমু না কেন হ্যাঁ? স্পর্শীরে রুদ্র ভাইয়ের বাইকে দেখে কনফিউজড হয়ে গেছি আজ সূর্য কোনদিকে উঠছে!’
সবাই নিজেদের মতো ঠিক হয়ে দাঁড়ায়। বো’কাটা সবসময় বো’কা বো’কা কথা বলবেই। বলবে মানে বলবেই। এই সময় স্পর্শী তাদের কাছে এসে দাঁড়ায়। রুদ্র কোনদিক গেছে তা কেউ দেখেনি। স্পর্শীর চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট হয়ে আছে। সামিরা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ঘুরে ঘুরে স্পর্শীকে দেখতে থাকে। স্পর্শী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
‘কি? সবাই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আর ক্লাস নাই আজ?’
নাহিদ বলে, ‘ক্লাস কইরা কি করমু? তুই যা দেখালি তারপর আর কোনো কিছুতেই মনে হয় না আমাদের মন বসবে!’
সামিরা, তানিয়া, নীরব সবাই তাল মিলাই। স্পর্শী কিছু বলতে নিলে সাফিনের আগমন হয়। সাফিন এসেই নীরব আর সামিরার পিঠে দুম দুম করে ২ টা কি’ল বসাই। দুজনেই আর্তনাদ করে ওঠে। সাফিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘তোরা আমার বন্ধু নাকি শ’ত্রু! আঙ্কেলের বাচ্চা নিরব্বা তোর এতো পেট প’চা ক্যা? তুই ফাঁস কইরা দিলি ক্যান? আর আব্বুর বাচ্চা সামিরা তুই না আমার যমজ বোন! তুই আমারে আম্মুর কাছে মা’ইর খাওয়াতে পারলি? পা’ষা’ণ।’
সামিরা ভেংচি কেটে বলে, ‘যখন নিজে মা’ইর খাওয়াস তখন!’
তানিয়া হাসতে হাসতে বলে, ‘ওলে ওলে বাবুটা। আন্টি তোমার কোথায় পি’টানি দিছে?’
সাফিন পিছনে দেখাতে গিয়েও গলা পরিষ্কার করে বলে, ‘বে’য়া’দ্দ’ব ম’হি’লা তোরে দেখামু ক্যা কই পি’টা’ইছে!’
নাহিদ উত্তেজনা নিয়ে সবাইকে থামিয়ে বলে, ‘দোস্ত আজকের ব্রেকিং নিউজ শোন আগে।’
‘বল।’
‘আরেহ আজকে স্পর্শী রুদ্র ভাইয়ের বাইকে করে ভার্সিটি আসছে।’
সাফিন ঠা’স করে বসে পড়ে মাটিতে। সবাই হকচকিয়ে যায়। সাফিন গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, ‘ওহ মাই আল্লাহ আজকে কি সূর্যই ওঠা বাদ দিছে নাকি?’
স্পর্শী ঠা’স করে সাফিনের পায়ে পা’ড়া দেয়। সাফিন আর্তনাদ করতে থাকে। স্পর্শী দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘তোদের নাটক দেখলে অভিনেতারাও লজ্জা পাবে। ওঠ হা’রা’মি।’
সাফিন পা ডলতে ডলতে বলে, ‘তুই রুদ্র ভাইরে সহ্যও করতে পারোস না আবার উনার বাইকে করে আসিসও আর আমরা কিছু বললেও দোষ!’
‘বিপদে না পড়লে জীবনেও ওই লোকের বাইকে তো দুর আশে পাশেও থাকতাম না।’
নাহিদ ভাবুক কন্ঠে বলে, ‘বুঝলাম না আগে শুনেছি ছেলেরা নারী বিদ্বেষী হয় এখন দেখি তুই পুরুষ বিদ্বেষী!’
স্পর্শী সাফিনের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে বলে, ‘এই দেখ এই সাফিন প্রত্যেকদিন নতুন নতুন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে সেই জন্যই তো আমি পুরুষ বিদ্বেষী বুঝছোস!’
বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসে। সবাই বোকার মতো তাকায়। স্পর্শী হাত নাড়িয়ে ‘টাটা’ দেখিয়ে হাঁটা লাগায়। স্পর্শীর পেছন পেছন দৌড় লাগায় তানিয়া। বাকি গুলো ফাকিবাজ ক্লাস করবে না। তানিয়া স্পর্শীর পাশাপাশি এসে বলে,
‘তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
‘পারমিশন নেওয়ার কি আছে? জিজ্ঞেস কর!’
‘রুদ্র ভাই তোকে একটু আলাদা প্রায়োরিটি দেয় বলে মনে হয় না?’
‘জানি না। দিলেও আমার যায় আসে না।’
‘তুই উনাকে এতো অপছন্দ কেন করিস?’
‘পুরোটাই তোর জানা।’
তানিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বলে, ‘সবাই তো আর এক না। তুই তোর বাবা, দাদী, সৎ মা, ফুপির মতো রুদ্র ভাইকেও কেন মনে করিস? উনি তো আলাদাও হতে পারে।’
‘হতেই পারে তাতে আমার কিছু না। ওই বাড়িতে থাকতেও আমার ঘৃ’ণা হয়।’
‘তাহলে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে যা।’
স্পর্শী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আনমনা হয়ে বলে, ‘আমার ভয় করে রে। প্রণয়, পুরুষ এই দুইটাই আমার কাছে আ’তঙ্ক। বার বার মনে হয় যদি আমার পরিণতিও মায়ের মতো হয়!’
তানিয়া মুচকি হাসে। স্পর্শীর কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘শোন সবাই এক হয় না। কেউ শুধু ভালোবাসি বলেই ভালোবাসে না আর কেউ কেউ ভালোবাসি না বলেও চরম ভালোবাসে। আচ্ছা শোন আজকে ভার্সিটি শেষে দুজনে এক জায়গায় যাবো।’
‘কোথায়?’
‘গেলেই দেখতে পাবি৷ এখন চল!’
______________
ভার্সিটি শেষ করে তানিয়া, স্পর্শী, সাফিন, সামিরা, নাহিদ, নীরব একসাথে বের হয়। সামনেই বাইকে হেলান দিয়ে ফোন স্ক্রল করতেছে রুদ্র। সবাই স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে চাপা হাসে আর স্পর্শী বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকায়। সাফিন, সামিরা, নাহিদ, নীরব চলে যায়। তানিয়া আর স্পর্শীও এগোতে নিলে টুং করে ফোনে এসএমএস আসে। স্পর্শী ফোন চেইক করে দেখে রুদ্র তাকে টেক্সট করেছে। ভ্রু কুঁচকায় স্পর্শী। তানিয়া জিজ্ঞেস করে,
‘কি হলো? যাবি না!’
স্পর্শী উত্তর না দিয়ে তানিয়ার হাত ধরেই হাঁটা লাগায় রুদ্রের কাছে। তানিয়া ফিসফিস করে বলে, ‘বডি বিল্ডারের কাছে কেন যাচ্ছিস?’
স্পর্শী উত্তর দেয় না। সরাসরি রুদ্রের সামনে দাড়িয়ে বলে, ‘সমস্যা কি আপনার?’
রুদ্র চোখ তুলে তাকায়। শান্ত গলায় বলে, ‘আমার আবার কি সমস্যা?’
‘তাহলে আমার জীবনটা এমন তেজপাতা করতেছেন কেন? কোনো রিক্সাওয়ালা আমাকে নিয়ে যাবে না মানে টা কি?’
‘মানে সিম্পল! তোকে আগেই বলেছি তুই আমার সাথে যাবি আর আমার সাথে আসবি।’
স্পর্শী ফোঁস করে ওঠে। তানিয়া অবস্থা বেগতিক দেখে ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘ভাইয়া আমি না ওকে একটু নিয়ে যাবো। ‘ও’ না হয় কাল থেকে আপনার সাথে যাবে!’
রুদ্র কপালে ভাজ ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধায়, ‘কোথায় যাবে?’
পাশ থেকে স্পর্শী ফট করে বলে, ‘ওর শ্বশুরবাড়ি যাবো। আপনার কোনো সমস্যা?’
রুদ্রও ফট করেই বলে, ‘আমিও যাবো ওর শ্বশুরবাড়ি।’
তানিয়া আ’তঙ্কে হাত চেপে ধরে স্পর্শীর। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, ‘কি বলছিস উল্টা পাল্টা? মাথা কি গেলো নাকি!’
স্পর্শী ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়। বলে, ‘তুই চুপ থাক। আর এই যে আপনি? ওর শ্বশুরবাড়ি আপনাকে কেন নিয়ে যাবো?’
‘তুই কেন যাবি?’
দুজনে যে এখন চরম ঝ’গড়া শুরু করবে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না তানিয়ার। স্পর্শীর মুখ চেপে ধরে বলে, ‘আচ্ছা ভাইয়া আপনিও চলুন। তবুও ঝ’গড়া থামান দুজন।’
স্পর্শী রাগী দৃষ্টিতে তাকায় তানিয়ার দিকে। তানিয়া ঢোক গিলে চোখ দিয়ে ঈশারা করতে থাকে। রাগে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। রুদ্র বাইকে বসে একটা রিক্সা ডাকে। তারপর দুজনকে রিক্সায় উঠিয়ে নিজেও বাইক স্টার্ট দেয়। রিক্সায় বসে তানিয়ার ওপর সব রাগ ঝাড়ে স্পর্শী। বেচারা রুদ্র গরুর গাড়ির মতো বাইক চালাচ্ছে।
তানিয়ার দেওয়া ঠিকানায় পৌছে গেলে দুজনেই রিক্সা থেকে নামে। ভাড়া দিয়ে রুদ্রর দিকে তাকায়। রুদ্র শান্ত গলায় বলে, ‘তোমরা ভেতরে যাও আমি এখানেই আছি।’
স্পর্শী খানিকটা অবাকই হয়। তানিয়াও হাফ ছেড়ে বাঁচে। ভেতরে গেলে কি না কি মনে করতো তাই বা কে জানে! স্পর্শী আর তানিয়াও কথা বাড়ায় না। এমনকি একবারও বলে না ভেতরে যেতে। অবশ্য সে আশাও রাখে না রুদ্র। হাড়ে হাড়ে চেনে সে এই দুটোকে। তানিয়া কলিং বেল দিতেই দরজা খুলে দেয় একটি ২৬-২৭ বছরের যুবক। তানিয়াকে দেখে সৌজন্যমূলক হেঁসে বলে,
‘আরেহ তুমি! আসো ভেতরে।’
বাইরে থেকে রুদ্র দেখলো যুবকটিকে। তবুও সে কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া করে না। নিজের মতো ফোনে মন দেয়। তানিয়া আর স্পর্শী ভেতরে ঢুকতেই সে বসতে দেয়। তানিয়া মৃদু হেঁসে বলে, ‘ফিহা কোথায় ফয়সাল ভাই?’
‘ফয়সাল’ নামটি শুনে চমকে তাকায় স্পর্শী। চোখে মুখে তার বিশাল অবাকতা। ফয়সাল কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলে, ‘আর বলো না! দোলনায় শুইয়ে রেখে আসছি। আজকে আপাও আসেনি তাই বাচ্চাটাকে সামলে আবার ঘর সামলাতে ভীষণ হিমশিম খাচ্ছি।’
এর মধ্যেই বাচ্চার কান্না ভেসে আসে। ফয়সাল ছুট লাগায় সেদিকে। তানিয়া আর স্পর্শীও পেছন পেছন যায়। স্পর্শী পুরো বাড়িতে আর কাউকে না দেখে খানিকটা অবাকই হয়। বেড রুমে ঢুকতেই চোখে পড়ে ফয়সাল একটি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কান্না থামাচ্ছে। কিন্তু বাচ্চাটার কান্না কোনোমতেই কমছে না। তানিয়া ব্যাগ রেখে এগিয়ে যায় ফয়সালের কাছে। নিম্ন স্বরে বলে,
‘ফিহাকে আমার কাছে দিন ভাইয়া।’
‘ও’ তো কান্না করছে!’
তানিয়া কথা না বাড়িয়ে নিজেই ফিহাকে কোলে তুলে নেয়। বুকে আগলে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করে। অদ্ভুত ভাবে আঁকড়ে ধরে ফিহা। কান্নাটাও থেমে যায়। তানিয়ার বুকে মাথা রেখে একটা আঙুল মুখে পুড়ে তাকিয়ে থাকে স্পর্শীর দিকে। স্পর্শী আর ফয়সাল খানিকটা অবাক হয়। বাচ্চাটা এত সহজে থেমে গেলো! তানিয়া হেঁসে হেঁসে কথা বলতে থাকে ফিহার সাথে। ফয়সাল চুপ করে খানিকটা দেখে বলে,
‘তানিয়া কিছু মনে না করলে একটু হেল্প করবা?’
তানিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। স্পর্শী শুধু দেখতেছে তার মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ফয়সাল ইতস্তত করে বলে,
‘আসলে তুমি যখন এসেছো ওকে একটু রাখবে! আসলে আমি একটু শাওয়ার নিতাম।’
তানিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘এখনো শাওয়ার নেন নি?’
‘নাহ৷ আসলে ফিহা আজ সারাদিনে একটুও ঘুমায়নি। অনেক জ্বালিয়েছে। ওকে সামলে, রান্না করতে করতেই সময় কেটে গেছে। ভেবেছিলাম রাতে ওকে ঘুম পাড়িয়ে শাওয়ার নিবো। তুমি যখন আসলে তাই…’
‘আপনি শাওয়ার নিন। আমি ওকে রাখতেছি।’
ফয়সাল কৃতজ্ঞতা মিশ্রিত হাসি দেয়। তারপর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তার আগে বলে যায় ‘কিচেনে ফল কাটা আছে একটু নিয়ে নিও প্লিজ!’ তানিয়া কিছু বলে না। ফয়সাল ওয়াশরুমে ঢুকতেই স্পর্শী চেপে ধরে। আস্তে করে বলে, ‘এটা কার বাড়ি? এখানে আর কেউ থাকে না? এখানে কেন আনলি আমাকে? আর এই বাচ্চার মা কই?’
তানিয়া এতগুলো প্রশ্ন শুনে দীর্ঘশ্বাস নেয়। ফিহাকে কোলে নিয়েই স্পর্শীকে বলে, ‘আমার সাথে আয়।’
স্পর্শীও কিছু না বুঝে তানিয়ার সাথে যায়। পাশের রুমের দরজা খুলে দুজনেই ঢোকে। দেওয়ালে বড় করে একটি মেয়ের ছবির ফ্রেম বাঁধানো। হাস্যজ্জল চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে ক্যামেরার দিকে। স্পর্শী বলে, ‘এটা কে?’
‘ফিহার মা!’
স্পর্শী ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তানিয়া ফিহার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, ‘ফিহার বয়স ৯ মাস আর ওর মায়ের মৃ’ত্যুও ৯ মাস আগে হয়েছে।’
স্পর্শী চোখ বড় বড় করে তাকায়। তানিয়া ফের বলে, ‘ফিহাকে জন্ম দিতে গিয়েই মা’রা গেছেন উনি। ফয়সাল ভাই আর উনার প্রণয়ের বিয়ে ছিলো। ২ বছর সংসারের পর ফিহার আগমন। কিন্তু সেদিনই অতিরিক্ত ব্লাডিং এর জন্য মা’রা যায়। ভাইয়ার পরিবার থেকে উনাকে বিয়ে করতে বলে। ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে তখন উনি পাগলের মতো হয়ে গেছে। পিচ্চি বাচ্চাটাকে সামলানোর জন্য কাউকে তো দরকার। তাই তারা ২য় বারের মতো ফয়সাল ভাইকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু সে সরাসরি নিষেধ করে দেয়। বাড়ির লোকদের অতিরিক্ত ঘ্যানঘ্যান থেকে বাঁচার জন্য মেয়েকে নিয়ে সে চলে আসে এই ছোট্ট ফ্ল্যাটে। একজন কাজের মেয়ে রাখে। সে বাচ্চার দেখাশোনা+রান্না করে দেয়। ফয়সাল ভাই বেশির ভাগ টাইমই বাড়িতে থাকার চেষ্টা করে। নিজেদের বিজনেস হওয়ায় তেমন প্রবলেম হয় না।’
স্পর্শী অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তানিয়া হেঁসে বলে, ‘এরপরও বলবি সব প্রণয় এক? সব পুরুষ এক? দেখ আমি জানি তোর ভেতরে একটা ভয় কাজ করে। তাই বলে কিন্তু সবাই এক না। তোর বাবা মাও হয়তো ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলো তবুও তোর মা মা’রা যাওয়ার ৩ দিনের দিনই সে বিয়ে করে নেয়। অথচ ফয়সাল ভাই গত ৮ মাস একা একাই মেয়েকে বড় করতেছে তার মৃ’ত স্ত্রীর স্মৃতি স্মরণে রেখে।’
স্পর্শী মাথা নিচু করে কাঁপা গলায় বলেন, ‘আমি মানি সবাই এক নয় কিন্তু যদি আমি ফয়সালের ভাইয়ের মতো এমন প্রণয়ের মানুষ না পাই?’
‘বিষয়টা তো এমনও হতে পারে স্পর্শী। তোর বাবার মতো যদি প্রণয়ের মানুষ না পাস! তাহলে তো তুই সুখী!’
স্পর্শী কিছু বলে না। তানিয়া হাসে। ফিহা ঘুমিয়ে গেছে দেখে রুম থেকে বের হয় দুজন। রুমের দরজা লাগিয়ে ফিহাকে নিয়ে গিয়ে দোলনায় আলতো করে শুইয়ে দেয়। ফিহা শক্ত করে ধরে আছে তানিয়ার ওড়নার এক কোণ। তানিয়া হেঁসে আস্তে করে হাত ছাড়িয়ে নেয়। স্পর্শী শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘এটাই সেই ফয়সাল ভাই তানু?’
তানিয়া চমকায়। দ্রুত পায়ে স্পর্শীর কাছে এসে মুখ চেপে ধরে। চাপা গলায় বলে, ‘এসব কথা বলিস না স্পর্শী। উনি জানলে আর কখনো এখানে ঢুকতেও দিবে না।’
পেছন থেকে ফয়সালের কন্ঠ ভেসে আসে, ‘কাকে কি বলতে বারণ করতেছো তানিয়া?’
তানিয়া আঁতকে উঠে। এই পুরুষটিকে গত ৩ বছরের বেশি সে ভালোবাসে। কিন্তু বোকা মানবটি কখনোই বোঝেনি তা। সে ছিলো অন্য এক নারীতে আসক্ত এবং পরবর্তীতে ওই নারীটিই হয়েছিলো মানুষটির জীবনসঙ্গী। তারপর থেকেই তো গুটিয়ে নিয়েছিলো নিজেকে। কখনোই প্রকাশ করেনি নিজের অনুভূতি। আজ আবার জেনে যাবে না তো সে যে ফয়সাল ভাইকে ভালোবাসে!….
চলবে..