মেঘের_আড়ালে_মেঘ”১৪”
#জেরিন_আক্তার_নিপা

অনন্ত ইরফানের সামনের চেয়ারে বসে আছে। ইরফান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তার সামনে বসে থাকা মানুষটাকে দেখছে। দীর্ঘদিন উকালতি পেশায় থেকে মানুষ চেনার চোখ তার ভীষণ পরিষ্কার হয়ে গেছে। মানুষের মুখ দেখে তার চরিত্র সম্পর্কে বলতে ইরফানের বেশি সময় লাগে না। এই তো এখন তার সামনে যে লোকটা বসে আছে। তার সম্পর্কেও মনে মনে কিছুটা ধারণা করে নিয়েছে। মানুষটা সুবিধার না। কিন্তু এই লোক তার কাছে আসার কারণ কী? ফোনে বলেছিল, তার সাথে নাকি কথা আছে।

“জি বলুন, কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি।”

অনন্ত হাসল। ইরফানের সাহায্য তার লাগবে না। সে বলল,

“আপনার সাথে একটা ডিল করতে চাই।”

ইরফান অনন্তর কথা বুঝলো না। অচেনা একটা লোকের সাথে কিসের ডিল করবে সে!

“মানে? আমি আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।”

“বুঝবেন। একটু ভেঙে বললেই বুঝবেন।”

” আচ্ছা তার আগে বলুন তো, আপনি কে? আপনার পরিচয়টা আগে দিয়ে নিন।”

“আমার পরিচয় দিলেও আপনি আমাকে চিনবেন না। আর দেবার মত আমার তেমন পরিচয় নেইও। তবে একটা পরিচয় দিলে আপনি আমাকে কিছুটা চিনতে পারবেন।”

“তাহলে সেটাই দিন। সম্পূর্ণ অচেনা কারো সাথে ডিল করা যায় না। এটাও নিশ্চয়ই জানেন আপনি। আপনার নামধাম পরিচয় পেলে তবেই আপনার সাথে আমার কথা আগানো সম্ভব হবে। নইলে আমি আমার ব্যস্ত সময় আপনার পেছনে নষ্ট করতে পারব না।”

ইরফানের লোকটাকে মোটেও পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু সোজা কথায় চলে যেতেও বলতে পারছে না।
অপমানটা নীরবে গায়ে মেখে নিল অনন্ত। নিজের স্বার্থের জন্যই এই অপমানটা সহ্য করতে হলো তাকে। অনন্ত ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,

“না,না। আপনার মূল্যবান সময় আমি নষ্ট করব না। আপনার কাজেই এসেছি আমি।”

“আমার কাজে! খুলে বলুন তো।”

“আচ্ছা আগে আমি আমার পরিচয় দিয়ে নিই। আমার নাম অনন্ত। মেহরীন আমার গার্লফ্রেন্ড।”

মেহরীন! হ্যাঁ হামনার মত দেখতে মেয়েটার নাম মেহরীন। ওই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড তার কাছে এসেছে! কেন?

“তা আমার সাথে আপনার কী কাজ।”

“আপনি মেহরীনের সাথে একটা ডিল করতে চেয়েছিলেন।”

“হুম। কিন্তু উনি মানা করে দিয়েছেন।”

“আমি ওকে রাজি করাব।”

এই কথাটা শুনে ইরফান হতভম্ব হয়ে গেল। এই লোকের মাথা ঠিক আছে! নিজের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ডিল করতে এসেছে। তাও আবার অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে। সত্যিকারের বিয়ে না হোক। মিছেমিছিই, তবুও তো নিজের গার্লফ্রেন্ডকে অন্য কারো বউ হিসেবে কল্পনা করতে পারত না সে। এই লোক কত সহজ ভাবে বলছে, আমি ওকে রাজি করাব।

“আপনি যা বলছেন ভেবে বলছেন তো?”

“জি। কিন্তু সেক্ষেত্রে ডিলটা আপনাকে আমার সাথে করতে হবে।”

“মানে? আপনার সাথে কীভাবে? আপনার কথা উনি শুনবেন।”

“অবশ্যই।”

“উনি আপনার কথায় রাজি হবেন এটা আমি কীভাবে বিশ্বাস করব?”

“এখন বিশ্বাস করতে হবে না। রাজি হয়ে গেলে বিশ্বাস করবেন তো?”

ইরফান কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল। লোকটা কতটা নীচ,স্বার্থপর, লোভী ভাবতেই ইরফানের গা ঝিমঝিম করছে।

“মিস্টার অনন্ত, আপনি যে আমার কাছে এসেছেন এটা মিস মেহরীন জানেন?”

“না। আমি চাইও না এই বিষয়ে মেহু কিছু জানুক।”

ইরফান বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল,

“মেহু! এই স্বার্থপরের মুখে মেহু ডাকটা একদম শোভা পাচ্ছে না। লোকটা জাত কেউটে।”

অনন্ত উৎসুক নজরে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান পায়ের উপর পা তুলে বসে বলল,

“ধরুন যদি আপনার গার্লফ্রেন্ড আমাদের ডিলের ব্যাপারে জানতে পারে!”

“কে জানাবে ওকে?”

“আমি যদি উনাকে বলে দেই।”

অনন্ত শরীর কাঁপিয়ে হাসল। হাসতে হাসতেই বলল,

“হাসালেন মিস্টার ইরফান। মেহু আপনার কথা বিশ্বাস করবে? আপনার কি ধারণা ও আমার কথা না শুনে আপনার কথা শুনবে। আর তাছাড়া আপনি চাইলেও ওকে কিছুই জানাতে পারবেন না। আপনার ছেলের জন্য মেহুকে আপনার দরকার। আপনি ওকে জানালে আমি মেহুকে আপনার বাড়ি থেকে নিয়ে যাব।”

অনন্তর হাসি দেখে ইরফানের গায়ে আগুন জ্বলছে। নিজেকে শান্ত রাখতে চেয়েও পারছে না। ইচ্ছে করছে লোকটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তার অফিস থেকে বের করে দিতে।

“আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডকে ঠকাচ্ছেন মিস্টার অনন্ত।”

“সেটা নাহয় আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডই বুঝে নেব। কে কাকে ঠকাচ্ছে। আপনি কি আপনার মন পরিবর্তন করে নিয়েছেন? নাকি অফারটা এখনও আছে। এক বছর আপনার বাবার সামনে মেহু আপনার বাড়িতে আপনার ওয়াইফ সেজে থাকবে।”

দুনিয়ায় কত ধরণের মানুষ আছে! ইরফান এর আগেও অনেক চোর, বাটপার মানুষ দেখেছে। কিন্তু এই লোক তাদের সবার থেকে এক ধাপ উপরে। মেয়েটা একে ভালোবাসে! সে হয়তো জানেই না তার ভালোবাসার মানুষটা তাকে কীভাবে ঠকাচ্ছে। ইরফান ভাবল, মেহরীনকে বিয়ে না করলেও বাবা অন্য মেয়েকে তাকে বিয়ে করতে বলবে। বাবা আর আয়ামের জন্য কি সে লোকটার সাথে চুক্তিতে আসবে। রাজি হয়ে যাবে সে? কিন্তু মেয়েটাকে এভাবে অন্ধকারে রেখে তাকে নিয়ে কীভাবে একটা ভণ্ড লোকের সাথে চুক্তি করবে।

“আপনি রাজি আছেন তো?”

ইরফান চুপ করে রইল। অনন্ত বলল,

“আপনার নীরবতাকে আমি হ্যাঁ ধরে নেব?”

“আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আমি মিছেমিছিই বিয়ে করলাম। সত্যিকারে আমাদের বিয়ে না হলো। তবুও কিন্তু তাকে আমার ঘরে থাকতে হবে। আমি একজন পুরুষ মানুষ, আমি যদি আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে সুযোগ নিতে চাই। ”

কথাটা শুনে অনন্তর চোখ ধপ করে জ্বলে উঠল। ইরফান ভেবেছিল আর কিছু না করলেও লোকটা রেগে তার উপর ঝাপিয়ে পড়বে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। অনন্ত জলন্ত চোখে শীতল গলায় বলল,

“আপনি এমনটা করবেন না। আমি খুব ভালো করেই জানি, আপনি আপনার মৃত স্ত্রীকে কতটা ভালোবাসেন। একজনকে মন থেকে ভালোবেসে ফেললে পৃথিবীর অন্য কোন মেয়ের শরীরের প্রতি আর কোন মোহ থাকে না।”

“ডিলটার জন্য কী চান আপনি?”

অনন্ত হেসে বলল,

“টাকা ছাড়া আর কী চাইব মশাই? মানুষ পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন তো তার এই একটা জিনিসের প্রতিই আকর্ষণ থাকে।”

“কারো কারো লোভও থাকে। যাক, কত টাকা চান আপনি?”

“দশ লাখ।”

“দশ লাখ! ”

“বেশি বলে ফেললাম নাকি? আপনি সরকারি উকিল মশাই। আপনার একটা ক্লাইন্টের থেকেই তো বেশ মোটা অংকের টাকা কামিয়ে নিতে পারেন। আচ্ছা যান কিছুটা কম করে দিলাম। আট লাখ।”

“এক বছরের জন্য। আট লাখ!”

“আট দিতে পারবেন না? ঠিক আছে সাত। এর থেকে নিচে নামতে পারব না আমি।”

“আমি কাগজপত্র রেডি রাখব। আপনি দু’দিন পর আসুন।”

“ঠিক আছে। আর আমার যে কিছু শর্ত আছে।”

“শর্ত! কী শর্ত?”

“শর্ত নাম্বার এক, আমাদের আজকের দেখা করার বিষয়ে বা আমাদের মধ্যে যা যা কথা হয়েছে তার কিছুই মেহু জানতে পারবে না। আপনি কোন অবস্থাতেই ওকে এসব জানাবেন না। আপনি আমাকে চেনেন না। আর আমিও আপনাকে চিনি না। কোনদিনও আমাদের দেখা হয়।”

“হুম। আর?”

“এক বছরে আপনি একবারও আমার মেহুর গায়ে হাত দিবেন না।”

হাসল ইরফান। বলল,

“এই ভয় আপনার আছে! থাকলে নিশ্চয়ই মেয়েটাকে নিয়ে সওদা করতে আসতেন না। আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবেন এটা দেখে ভাল লাগল। ভয় পাবেন না। উনাকে ছোঁয়া তো দূর উনার দিকে চোখ তুলে তাকাবও না।”

“ধন্যবাদ। ওকে আপনি এখন মাসে মাসে যেমন স্যালারি দিচ্ছেন। আগেও দিয়ে যাবেন। সেই টাকা অবশ্য এই টাকা থেকে কেটে যাবে। মেহু যেন ভাবে সে জবই করছে। শুধু আপনার বাবার কথা ভেবে আপনাকে সাহায্য করতে রাজি হয়েছে। যেহেতু আপনি এখন কাউকে বিয়ে করবেন না।”

“হুম। আরও কিছু? ”

“না।”

“আমারও তাহলে কিছু শর্ত আছে।”

“জানতাম। বলে ফেলুন।”

“আপনি এক বছরে কোনদিনও আমাদের বাড়িতে মিস মেহরীনের সাথে দেখা করতে আসতে পারবেন না।”

“ঠিক আছে। আর?”

“সারাদিনে উনাকে দুই বারের বেশি কল করতে পারবেন না। আর খুব বিশেষ দরকারে কল দিলেও দশ মিমিটের বেশি কথা বলতে পারবেন না।”

“এটা কেন?”

“বলছি। রোজ রোজ দিনে অনেকবার করে কল দিয়ে লম্বা সময় পর্যন্ত কথা বললে একদিন না একদিন বাবার চোখে ঠিকই ভাসবে। বাবা উনাকে সন্দেহ করুক এটা আমি চাই না। আর আয়ামের জন্য উনাকে রাখা। আমি চাই উনি উনার পুরোটা সময় আয়ামের উপর মনোযোগ দিক।”

“হুম।”

“লাস্ট শর্ত, এই এক বছরে মিস মেহরীন আমার বাড়ি থেকে কোথাও যেতে পারবেন না। কোন আত্মীয় বা ফ্রেন্ডদের বাড়িতে গিয়ে রাতে কেন, দিনেও থাকতে পারবেন না।”

“ডান। ওর আত্মীয় বা তেমন ফ্রেন্ড কেউ নেই,যার বাড়িতে গিয়ে মেহু একদিন থাকবে। কিন্তু এক বছর হয়ে গেলে উনাকে আপনি নিজে আপনার বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ করে দিবেন। আপনার বাবা বা ছেলে যেন না আটকায়।”

“অবশ্যই।”

অনন্ত ইরফানের থেকে বিদায় নিয়ে ওর সাথে হাত মিলিয়ে চলে গেল। লোকটার সাথে হ্যান্ডশেক করতেও ইরফানের রুচিতে বাঁধছে। একটা মানুষ কীভাবে নিজের ভালোবাসা নিয়ে দরদাম করতে পারে! লোকটার কাছে তার প্রেমিকার মূল্য মাত্র সাত লাখ টাকা! টাকাই কি জীবনে সব? ভালোবাসা কিছু না? কীভাবে পারল লোকটা! হামনা মারা যাবার পরও হামনার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারছে না সে। আর এই লোকটা জীবিত অবস্থায় নিজের গার্লফ্রেন্ডকে অন্য কারো বউ হয়ে নাটক করার জন্য টাকা নিচ্ছে! এই লোক যদি দশ লাখেই এঁটে থাকত তবুও ইরফান অসুখী হতো না৷ কিন্তু লোকটার কাছে মেয়েটার মূল্য অনেক সস্তা।

“আমি মেহরীনের সাথে অন্যায় করে ফেলছি না তো? না, কিসের অন্যায়! অন্যায় তো করছে ওর বয়ফ্রেন্ড। আমি শুধু টাকা দিয়ে আমার বাবা আর ছেলের খুশি কিনে নিচ্ছি। আমি কাউকে জোর করিনি। মেয়েটা যদি তার বয়ফ্রেন্ডের চক্রান্ত বুঝতে না পারে তাতে আমার কী করার আছে। আমি বাইরের লোক। অনন্তর আসল রূপ ওই মেয়েকে দেখালেও সে আমার একটা কথা বিশ্বাস করবে না। আবার এ-ও হতে পারে এই ডিলের ব্যাপার পুরোটাই ওদের দু’জনের সাজানো। টাকার জন্য গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড দু’জনে মিলে এই প্ল্যান করেছে। আজকাল টাকার জন্য মানুষ সব করতে পারে। মেয়েটাকে ইনোসেন্ট ভাবার তেমন কোন কারণ নেই।
.
অনন্ত রিকশায় বসে আছে। কাল রাতে মেহু রাগে গজগজ করে তাকে সব জানিয়েছে। কাজ ছেড়ে দেবার কথাও বলেছিল একবার।

” লোকটার কত বড় সাহস! বলে কিনা আমি টাকার জন্য উনার সাথে হাজবেন্ড ওয়াইফ সেজে নাটক করি। আঙ্কেলকে বোকা বানাই। তুই বিয়ে করবি না ভালো কথা। নিজের বাপকে বোঝা। সে কী করতে চাইছে! বাবাকে ধোঁকা দিয়ে আমার সাথে চুক্তি করতে চাইছে। টাকার কত গরম। কথায় কথায় টাকা টাকা করে।”

“হয়েছেটা খুলে বল না। এভাবে বললে আমি কিছু বুঝব?”

“কী বলব তোমাকে আর! মানুষ এতটা স্বার্থপর হতে পারে! নিজের বাবাকে মিথ্যে বলে অন্ধকারে রাখবে। তুমি তো জানোই, আমি ওই লোকের স্ত্রী হামনার মত দেখতে। উনার স্ত্রী মারা গেছে। আঙ্কেল মনে হয় আমাকে উনার জন্য পছন্দ করেছেন। উনি এখন আমার সাথে ডিল করতে চাইছেন। আমি টাকা নিয়ে ওনার স্ত্রী হিসেবে নাটক করি। নিজের বাবাকে না করতে পারছে না। তাই এসব প্ল্যান করছে। আমি কাজই ছেড়ে দেব। এমন মানুষের বাড়িতে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। ছোট মন মানসিকতার লোক।”

“শোন, শোন। কাজ ছাড়িস না। ওই ছোট ছেলে,কী যেন নাম। উম, আয়াম। ওই বেচারার তো কোন দোষ নেই। তুই কাজ ছেড়ে দিলে ওর কষ্ট হবে।”

“হুম। তা ঠিক। আয়ামের অনেক কষ্ট হবে। ও তো আমাকেই তার মা মনে করে।”

অনন্ত এখন ভাবছে মেহরীন নকল বিয়ের জন্য কী বলে রাজি করাবে।

“মেহুটা বোকা। কিছু একটা বলে ঠিক রাজি করিয়ে ফেলব। টাকাগুলো হাতে পাই। আমাদের নিজেদের বাড়ি কিনব মেহু। বিয়ের পর তোকে নিয়ে সেই বাড়িতে থাকব। আমাদের ছেলেমেয়েরা পুরো বাড়িতে ছুটাছুটি করে খেলবে।”

চোখ বন্ধ করে ওদের ভবিষ্যতের সুখের দিনগুলো কল্পনা করতে লাগল অনন্ত।

“এই এক বছরে হুমায়রা আর রিমার গল্পও শেষ হয়ে যাবে।”

রিমা মেয়েটার সাথে নতুন পরিচয় হয়েছে তার। হুমায়রার ঝামেলা শেষ হলেই রিমাকে নিয়ে ভাববে সে। এসবে এক বছর তো কেটেই যাবে।
.
মেহরীনের সাথে তাদের পছন্দের জায়গায় দেখা করতে এসেছে অনন্ত। অনন্ত এসে অনেকক্ষণ ধরে মেহরীনের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু মেহরীন এখনও আসছে না। বিরক্ত হয়ে অনন্ত বলল,

“মেহুটা এখনও আসছে না কেন? কোথায় রয়ে গেল মেয়েটা? আজ তো বাড়ি থেকে বের হতে ওর কোন সমস্যা হবার কথা না। ”

দূর থেকে মেহরীন দৌঁড়ে আসতে আসতে বলছে,

“এসে গেছি। সরি, সরি আমার লেট হয়ে গেছে। তুমি রাগ করোনি তো। আয়াম সাথে আসার জন্য জেদ করছিল। অনেক কষ্টে ওকে রেখে এসেছি।”

“হুম।”

ওরা অনেক্ষণ হাটল। অনন্ত চুপচাপ আছে। মেহরীন বকবক করে যাচ্ছে। অনন্ত হঠাৎ করে বলে উঠল,

“ওই লোকটার কথায় রাজি হলি না কেন?”

“হ্যাঁ? কোন কথায়? ”

“ওইযে নকল বিয়ের ব্যাপারটা…

” পাগল তুমি! একটা মিথ্যা বললে সেই মিথ্যাকে ঢেকে রাখতে আরও একশোটা মিথ্যা বলতে হয়। আঙ্কেলকে খুশি করার জন্য এখন মিথ্যা বিয়ের নাটক করলে, সেই নাটক চালিয়ে যেতে যেতে কত কিছু যে করা লাগবে তা ভাবো একবার।”

“তবুও বুড়ো মানুষ। কতদিনই বাঁচবে? মরার আগে একটু খুশি পেয়ে গেলে সমস্যা কী?”

“সেই খুশি মিথ্যা হোক সেটা আমি চাই না অনন্ত। এই কয়দিনে আঙ্কেলকে আমি আমার বাবার জায়গা দিয়ে ফেলেছি।”

“তাই তো বাবাকে খুশি রাখার জন্য হলেও তোর রাজি হওয়া উচিত।”

“এক বছর পর যখন আঙ্কেল জানতে পারবে সব নাটক ছিল। তখন কতটা কষ্ট পাবে ভেবে দেখো। এক বছরের সব খুশি এক ঝটকায় শেষ হয়ে যাবে।”

“ভবিষ্যতে কী হবে তা আমরা কেউ জানি না? তাই ভবিষ্যত নিয়ে ভেবে বর্তমানের খুশি নষ্ট করার কোন মানে হয় না।”

“তুমি রাজি হতে বলছো? তুমি! ”

“হ্যাঁ। আমাকে অন্য কারো বউ হবার কথা বলছো তুমি! ”

“গাধা নাটক করতে বলছি। সত্যি সত্যি আমি তোকে অন্য কারো বউ হতে দিলে তো।”

“নাটক করার কথাই বা কেন বলছো তুমি? ওই লোককে আমি একটুও সহ্য করতে পারি না। ওর সাথে স্বামী স্ত্রীর নাটকও করতে পারব না। না মানে না।”

অনন্ত মনে মনে বলল,

“রাজি তো তোকে হতেই হবে মেহু। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য হলেও তোকে রাজি হতেই হবে।”

চলবে___

নিন, পুরো পর্বটাই আপনাদের অনন্তকে নিয়ে দিলাম। সবাই ওর আসল রূপ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেছিলেন। এবার সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। নইলে নেক্সট পর্ব আসতে দেরি হবে 😶😑

বিঃদ্রঃ নেক্সট পর্বে ইরফান আর মেহরীনের মিছেমিছি বিয়েতে সবার দাওয়াত রইল।🤗

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here