#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_০৭
রাবেয়ার মুখে বিয়ের কথা শুনে আসাদ কিছুটা বিস্মিত হওয়ার সাথে মন খারাপও হলো।মন খারাপের কালো মেঘ জমা হওয়া শুরু করল আসাদের মন আকাশে।কিন্তু মাথায় চলছে তার অন্য কথা।সাধারনত বিয়ের কথা মেয়েরা খুশি মনে বা না হয় লজ্জাস্বরে প্রকাশ করে।কিন্তু উনার কন্ঠ শুনে তেমন কিচ্ছুই মনে হচ্ছেনা কেন।তা হলে কি উনার এই বিয়েতে মত নেই।তাছাড়া এত অল্পবয়সে বিয়ে।না আর ভাবতে পারলো না আসাদ।কৌতুহল দমিয়ে না রেখে সে প্রশ্ন করে বসল রাবেয়াকে।
“আপনার কি মত নেই এই বিয়েতে?”
দৃষ্টি নত ছিল রাবেয়ার।এমন প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা সে।কারন এইটাতো তার মনের সত্য।আপনজনেরা কেউ বুঝলো না এই কথা।আর দুইদিনের পরিচয়ে কেমন বুঝে গেল সামনের মানুষটা।
“না..মানে….আসলে আমি….”
রাবেয়ার আড়ালে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল আসাদ।তারপর বলা শুরু করলো সে।
“মিস রাবেয়া,জীবনটা আমাদের।সুতরাং এই জীবনটাকে আমরা কিভাবে সাজাবো তা সম্পূর্ন আমাদের উপর ডিপেন্ড করে।সৃষ্টিকর্তার পাশাপাশি আমাদের উচিত নিজের উপরও বিশ্বাস রাখা।আমি জানি,আমরা এতটাও পরিচিত নই, যতটা পরিচয় প্রয়োজন এইধরনের কনর্ভাশেসনের জন্য।কিন্তু কেন জানি না মনে হচ্ছে এইসব কথা আপনাকে না বললে নই।”
ছোট একটি নিশ্বাস ফেলে আবার বলা শুরু করল সে।
“মিস রাবেয়া,আমাদেরকে নিজেদের জীবনের লক্ষ্য নিজেদের নির্ধারন করতে হয়।আর সেই লক্ষ্যের সাফ্যলতার জন্য নিজেকেই পরিশ্রম করতে হবে।সকল বাধা বিপত্তি গুলোর সাথে নিজেকেই লড়তে হবে একা।আপনার হয়ে অন্য কেউ এই লড়াই লড়বে না।নিজেকেই হতে হবে নিজের বড় সাপোর্ট। প্রতিটি পদক্ষেপে নিজেই নিজেকে মোটিভেট করতে হবে।কারো উপর ভরসা করে থাকলে জীবন কখনো আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেনা।আমি জানি আপনি সাহসী একজন মেয়ে।যে মেয়ে একাই অন্য কারো সাহায্য ছাড়া অন্যায় এর বিরোধীতা করতে পারে সে নিশ্চয় নিজের সাথে কোন অন্যায় হতে দিবে না।”
________________________
শূন্য চোখে আকাশ পানে চেয়ে রইল আসাদ।আশেপাশে পছন্ড নিস্তব্ধতা কাজ করছে তার।আসাদের কথা শেষ হওয়ার পর এক সেকেন্ডও আর ছিলোনা রাবেয়া।চলে গিয়েছিল সে।হঠাৎ কিছু না বলে কেন চলে গেল সে তার কারন জানা নেই আসাদের।
যত তাড়াতাড়ি হাটা সম্ভব হেটে চলছে রাবেয়া।বৃষ্টিতে ভিজে একাকার অবস্থা তার।তবুও থামছে না সে।আসাদের কথাগুলো শুনার পর আর এক সেকেন্ডও আসাদের সামনে দাঁড়ানো সম্ভব ছিলনা তার পক্ষে।আসাদের চোখের চাতক চাহনি ঘায়েল করা শুরু করছিল তাকে।তাই কিছু না বলে ছুটে চলে এসেছে সে।
বড় একটি শিউলি গাছের নিচে দাড়িয়ে আছে রাবেয়া।আর কিছুদূর পর তার বাসা।পুরো শরীর কাপঁছে তার।কারন তার জানা নেই।বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে দুচোখ থেকে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।কেনো যে অসময়ে ভালোলাগা,ভালোবাসার মতো দুর্লভ অনুভূতিরা জীবনে অাসে।এই অসময়ের অনুভূতিগুলো কে যে মনে ঠাঁয় দেওয়া বড়ই কষ্টকর। এই অনুভূতিগুলো যে মানুষের ভিতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা করে দেয়।চোখের পানি মুছে আবার হাটা শুরু করল রাবেয়া।কিন্তু পা যেন অচল হয়ে গেছে তার।চলা সম্ভব হচ্ছেনা তার পক্ষে।দাড়িয়ে রইল সেই জায়গায়।চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে তার।কিন্তু কিছু ইচ্ছে যে পূরন হওয়ার নয়।
“না, আমি দুর্বল নয়।আমি এইভাবে দুর্বল হতে পারি না।এইটা শুধুই নিছক এক অনুভূতি ছিল যার কোন ভবিষ্যৎ নেই।”কথাটা বলেই হাটা শুরু করল সে।
যাত্রা শুরু করল এক অসহ্যকর সত্যের দিকে।
_______________________
নিজের রুমের বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে আসাদ।একহাত পকেটে রেখে অন্যহাতে গ্রিল ধরে রেখেছে সে।রুমের স্টাডি টেবিলের উপর পেপার ওয়েটে চাপা পড়ে আছে দ্যা ইউনিভার্সিটি ওফ সিডনি স্কুল ওফ মেডিসিন থেকে আসা স্কলারশিপ লেটার।আসাদ জানে এখন তাকে কি করতে হবে।তবুও কিছু ভাবতে পারছেনা সে।এই স্কলারশিপটা তার ও তার মা-বাবার স্বপ্ন।আর এই স্বপ্ন পূরণের এতটা কাছে এসে সে পিছপা হতে পারবেনা।
“কিরে কি ভাবছিস এত? “জিহানের কথায় ধ্যান ভাঙ্গল আসাদের।
“না তেমন কিছু না।”
“তো কি ডিসিশন নিলি”
“এইখানে ডিসিশেন নেওয়ার কি আছে জিহান।আসাদ এইটা তোর স্বপ্ন ভুলে যাস না।”
“সাব্বির তোর কি মনে হয় আমি তা ভুলে যাবো।কখনো না। আর আমি ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি,আমি যাব।”
“এই না হলি আমার বন্ধু।শালা তোর…”
জিহানের মুখে শালা কথাটা শুনে দুই বন্ধু চেয়ে তাকালো তার দিকে।সেটা দেখে কেশে উঠল জিহান।
“না মানে সাব্বিরে শালা…না মানে তোর দুলাভাইয়ের….আরে ধুর বাদ দে তো….কি বলতে কি বলে ফেলতেছি….”জোর পূর্বক হেসে কথাটা বলল সে।
“ওর কথা বাদ দে আসাদ।ওর মিস প্যারা ওর মাথাটাকে শেষ করে ফেলতেছে।তুই বল কয়েকদিন ধরে এমন মনমরা হয়ে থাকিস।রাত জাগিস।কি ব্যাপার।”
“আমিও খেয়াল করেছিলাম।কিরে আসাদ কি হইলো তোর বলতো।জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলিস না। এমন তো আগে করতি না।”
“আরে চিল করতো।তেমন কিছু হয়নি।এই
স্কলারশিপটা নিয়ে একটু টেনশনে ছিলাম।নাও অল ওকে।”
“সত্যি তো।তুই চাইলে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারিস।”
“কিছু হলেই তো শেয়ার করবো।তোদের কাছে কি লুকাবো বল।”কথাটা বলে আড়ালে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল আসাদ।
“আরে যাহ ভুলেই গিয়েছিলাম।তোকে তো ফারদার আর জিজ্ঞাসা করা হয়নি, দেখা হয়েছিল জনাবের তার মায়াবী চোখের রমনীর সাথে?”দুষ্টুমির সুরে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল জিহান।
জিহানের কথা শুনে আসাদের মনে পড়ে গেল রাবেয়ার কথা। হয়তো এতদিনে বিয়েও হয়ে গেছে রাবেয়ার।এখন অন্যকারো ঘরের রমনী সে।কথাটা মাথায় আসতেই মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল সে।
“আরে হ্যা তো।কিরে ব্যাটা প্রগ্রেস কতদূর?কোনো আপডেটও দিলি না আর।”
“তার সাথে দেখা হয়নি আমার।আর বাদ দে তো সেই সব কথা।মাথায় স্কলারশিপের টেনশেন আর তোরা পড়ে আছিস কি নিয়ে।”
আসাদের কথাটা শুনে জিহান আর সাব্বির মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো দুইজন দুজনের।তারা বুঝতে পারলো আসাদ এই টপিকটা এভয়েড করতে চাইছে। তাই তারা আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না তাকে।
আরো কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে আসাদের রুম থেকে রের হয়ে আসলো জিহান আর সাব্বির।
“কি হলো বলতো আসাদের।আমি সিলেট যাওয়ার আগেও তো অনেক খুশি মনে ছিল সে।আর এই প্রথম কোন মেয়ের প্রতি আগ্রহ দেখলো।এখন আবার…”
“আমার কি মনে হয় জানিস, ব্যাটা নিশ্চত ছ্যাকা খাইছে।”
“ফালতু কথা বলিস না তো।কলেজের সিনিয়র থেকে শুরু করে জুনিয়রদের থেকে প্রোপোজাল পেয়ে রিজেক্ট করে দেওয়া ছেলে ছ্যাকা খাবে।ইউ ওয়ান্ট মি টু বিলিভ দ্যাট?”
“হুম তাও ঠিক।তাহলে ঘটনা ঘটলো কোন জায়গায়?”
“যাই হোক জিহান।এই বিষয় নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করিস না আর। ও যেহেতু এভয়েড করছে তাহলে নিশ্চয় কোন কারন আছে।ওর যখন মনে হবে বিষয়টা আমাদের সাথে শেয়ার করা উচিত তখনও নিজ থেকে করবে।”
“হুম…ঠিক আছে।চল ঘুমিয়ে যায়। এখন আবার আমার মিস প্যারা…হু….হু…না মানে আমার গার্লফ্রেন্ডরে কল দিতে হবে।”
“তুই আর তোর এই প্যাঁচাল রিলেশনশিপ।বিয়ে করেনে গাধা।গুনাহ থেকে বাঁচা নিজেকে।”
“আমারটা গুনাহ না আর তুই যে লুকিয়ে লুকিয়ে
একজনকে মন দিল সব দিয়ে রেখেছিস সেইটা।”
” জিহান, খুব বেশি বাড় বাড়েছে তোর।”
“ওয়েট আমারও একদিন সময় আসবে,দেখিস তুই…”
কথাটা বলে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল জিহান।
চলবে…..
®নওশিন সালসাবিল
[ সুন্দর বিদায় হলো ক্ষতি না করে বিদায় নেয়া, সুন্দর ক্ষমা হলো বকা না দিয়ে ক্ষমা করা, সুন্দর ধৈর্য হলো অভিযোগ না রেখে ধৈর্যধারণ করা।
– ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)♥]