#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ১০
#ফারজানা_আক্তার

শোভা এসে বসতে বসতে বলল “কই বললেনা তো”।
~কী বলবো?
একটু থেমে থেমে বলে শিরুফা।
~ওই যে কে কার প্রেমে পড়েছে?
~তেমন কিছুনা,আমি তো প্রকৃতির কথা বলছিলাম।।
~ওও

আদিবা তুলিকে নিয়ে বাগানে হাঁটছিলো এমন সময় নিহান এসে বলে ” আচ্ছা ভাবি তোমার বোন টা এমন কেনো?
~কেনো? কিছু কী বলেছে শিরু তোমায়?
চিন্তিত সুরে বললাম নিহানের দিকে তাকিয়ে, নিহানের চেহারায় বেশ বিরক্ত দেখতে পেলাম
~আরে নাহ ভাবি।।
~তো??
~তোমার বোন আমাকে ভাইয়া ডাকবে কেনো? বেয়াই ডাকতে পারেনা?

ওর কথা শুনে এবার আর হাসি চেপে রাখতে পারলাম নাহ,, কুটকুট করে হেসে দিলাম।
~ধুর এই বাড়িতে আমার কোনো দামই নেই,, এইদিকে কত্ত বড় একটা দূঃখের কথা
শুনালাম তোমাকে আর তুমি কুটকুট করছো।।

এবার আরো জোরে হাসি ফেলো, আমার হাসির শব্দ শুনে শোভা ছাদ থেকে জিজ্ঞেস করছে আমাকে জ্বিনে টিনে পেলো কিনা আবার, আমি শোভাকে বললাম “নাহ বোন, আমি তুলি আর নিহানের সাথে হাসি।

নিহান একরাশ বিরক্তি নিয়ে চলে যায় আমার সামনে থেকে। নিহান চলে গেলে আমিও ঘরে চলে যায়।



কয়েকদিন পর__

সন্ধ্যায় আমার ভালো লাগতেছিলো নাহ,, বেশ ক্লান্তি নিয়ে শুয়ে আছি।। এমন সময় উনি রুমে প্রবেশ করতেই চোখ মেলে তাকালাম উনার দিকে,, বেশ চমক দেখতে পেলাম উনার চোখে,, উনাকে দেখে উঠে বসতে চাইলে উনি বললেন “তোমার শরীর ভালোনা, শুয়ে থাকো তুমি”
অবাক হলাম আমি, সত্যিই অবাক হলাম আমি আমার প্রতি উনার চিন্তাধারা দেখে। মনে মনে খুব খুশি হলাম। উনি জামা কাপড় খুলে কিছুক্ষণ বসেছিলো খাটে, পরে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

ফ্রেশ হয়ে এসে বলে “এক কাপ কফি হবে”?
নাহ করতে পারলাম না, খারাপ লাগলেও উঠে দাঁড়ালাম, কফি আনতে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই উনি আমার হাতে হেঁচকা টান দিয়ে মিশিয়ে নেন আমায় উনার বুকের সাথে।। আমি একটু নড়াচড়া করতেই উনি বললেন “আরে চিল,এতো চটপট করছো কেনো? তুমি কফি নিয়ে বেলকনিতে আসো,,, কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে। আর হ্যাঁ তোমার জন্যও এনো এক কাপ রেশমাও রোজ সন্ধ্যায় আমার সাথে কফির আড্ডায় বসতো।। আমার নাকের সাথে নাক ঘসে কথাগুলো বললে নউনি।

আর কিছু বললাম নাহ,, উনি আমায় ছাড়তেই চলে আসলাম রান্নাঘরে কফি বানাতে। কিছুটা চিন্তাও ঘিরে ধরেছে আমায়, কি এমন কথা বলবেন উনি? কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে যায় আমার। মুখটা ফেঁকাসে করে কফি বানাচ্ছিলাম এমন সময় শিরু এসে বলল ” আপু কি করস?
~তোর জিজুর জন্য কফি বানায়,, তুই খাবি?
~হুম,, আমার খুব মজা লাগে।।
একরাশ খুশির সাথে বলে শিরু কথাটা,, আসলে আমরা তো গরীব, এসব খাওয়া তো দূরের কথা কখনো ছুঁয়েও দেখার সৌভাগ্য হয়নি,, তাই বোনটা আমার এতো তৃপ্তি নিয়ে আছে এখানে। কিন্তু আমার ভাগ্য হলেও এখানে থাকার আমার বোনটার ভাগ্য হবেনা,, কিন্তু দোয়া করি আমি আমার বোনটা যেনো আমার চেয়েও অনেক সুখের একটা সংসার পায়।।

~আরে এই আপু, কোথায় হারিয়ে গেলি?

হঠাৎ শিরুর কথায় ঘোর কাটে, ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসি।
~নাহ বোন, কিছুনা। আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়ছিলো।।
~হুম আপু আমারো ভালো লাগছেনা আব্বু আম্মুকে ছাড়া, আমি কাল সকালেই চলে যাবো।
~ধুর পাগলী কি বলস এগুলো,, থাক নাহ আরো কয়েকদিন,,
~নাহ আপু,, এখানে এতোদিন থাকা ভালো দেখায়না।

কেনো?আমরা কী তোমার পর? আমাদের কে বুঝি তোমার আপন মনে হয়না?

আমার শ্বাশুড়ি আম্মু রান্নাঘরে এসে কথাটি বলে শিরুর মাথায় হাত ছোঁয়ায়,, শিরু কি বলবে বুঝতে পারছে না, তাই আমিই বললাম যে শিরু আব্বু আম্মুকে মিস করতেছে তাই চলে যেতে চাই,, শ্বাশুড়ি আম্মু বললেন আর কিছুদিন থেকে যেতে, শিরু আর না করলো নাহ। শ্বাশুড়ি আম্মু পানি নিয়ে চলে গেলেন, তারপর শিরুকে এক কাপ কফি দিয়ে আর দুইকাপ কফি নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায় আমি।

বেলকনিতে গিয়ে দেখি উনি রেলিং ধরে আকাশের পানে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ধীরে ধীরে উনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি, উনি আমার দিকে না তাকিয়েই হেঁসে বললেন “আসছো তুমি”?
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়িয়ে উনার দিকে এক কাপ কফি এগিয়ে দিলাম, উনি আমার দিকে তাকালেন,মুচকি হাসলেন,, জুড়িয়ে গেলো প্রাণটা আমার,, কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার মন খারাপ হয়ে গেলো, ভয়ে শুকিয়ে আসছে গলা।।।

উনি ইজিচেয়ারে বসলেন এবং উনার সামনে একটা টুল রেখে আমায় বললেন উনার মুখোমুখি হয়ে বসার জন্য,, আমি চুপচাপ বসে পড়লাম, এক পলকে তাকিয়ে আছি উনার দিকে, উনিও কেনো জানিনা একনজরে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। উনি কফিতে চুমুক দিলেন আর আমায় বললেন ” কিছু কথা বলবো তোমায়, মনোযোগ দিয়ে শুনবে,, কিন্তু তার আগে আবারো ওইদিন রাতের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আমি সত্যিই খুব লজ্জিত ওইদিন রাতের জন্য “।।

আমি কিছু বলতে পারছি না শুধু বাকরুদ্ধ হয়ে শুনছি উনার কথা গুলো।।

~কি হলো কিছু তো বলো,, ক্ষমা পাবো তো আমি??
~হুম
মৃদু সুরে নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম।

~তো যেটা বলবো এখন
~বলুন
~আমি রেশমার শেষ কথা রাখার জন্যই তোমায় বিয়ে করেছি এবং ওরই শেষ কথা রাখার জন্য তোমার সাথে নতুন করে সংসার শুরু করতে চাই,, আমার অনুভবে শুধুই রেশমা।

উনার কথাগুলো শুনে চট করে মাথা উঁচু করে তাকালাম উনার দিকে, চোখ দু’টো কেনো জানি ভিজে আসছে হঠাৎ। কিছুই বললাম না শুধু চুপ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম উনার চোখের দিকে, উনি আবারো বললেন “কি ভাবছো?

~না তো কিছুনা।
আমতাআমতা করে বললাম নিচের দিকে তাকিয়ে।
~হুম কিন্তু আমি তোমাকেও অনুভব করতে শুরু করেছি, জানিনা কবে থেকে। আমি চাইনি রেশমা ছাড়া আর কাউকে অনুভব করতে আরেকটা সত্যি হলো ওইদিন তোমাদের বাসায় তোমার হাতের রান্না খেয়ে খুব খুব রাগ হয়েছিলো তোমার উপর, কিভাবে একজনের সাথে অন্যজনের এতো গভীর মিল থাকতে পারে ভেবে পাচ্ছিলাম না আমি।।

~মানে, ঠিক বুঝতে পারিনি আমি।।
ভেজা নয়নে বললাম উনার দিকে তাকিয়ে।
~মানে তোমার হাতের কফি,তোমার হাতের রান্না সব কিভাবে যেনো মিলে যাচ্ছে রেশমার সাথে, আর সবচেয়ে বড় কথা হলো রেশমার শরীরের গন্ধটাও তোমার সাথে মিলে গেলো,,কিভাবে সম্ভব এটা??তুমিই বলো..
আর সেই রাগের কারণেই ওইরাতে তোমার উপর ওই বাজে অত্যাচার করতে বাধ্য হলাম। আই এম সরি।

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি,কিছু বলার ভাষা নেই আমার, উনার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখের কোণে জমে থাকা পানিগুলো মুছতেছেন আর কেমন জানি ছোট বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কাঁদছেন, আমি উনার হাতের উল্টো পিটে হাত রেখে বললাম থাক না এসব কথা।। উনি বললেন ” নাহ,, সময় এসেছে সব বলার।।

উনি আমার হাত দু’টো উনার দুই হাতের ভাজে বন্দি করে নিলেন।। আমি অবাক চোখে দেখেই যাচ্ছি শুধু উনাকে।

~তুমি যদি চাও আমরা আবারো একটা নতুন জীবন শুরু করতে পারি, জীবনের এখনো অনেকটা পথ বাকি আছে,,
আমার হৃদয়ে খুদাই করে রেশমার যে নাম লেখা আছে সেই নামের পাশে আমি তোমার নামটা লিখতে চাই,, শুধু কখনো বলো না রেশমার নামটা মুছে ফেলতে,, কারণ এটা কিছুতেই সম্ভব নয়।।।
থেমে থেমে কথাগুলো বলেন উনি।

~আমিও জানি এটা সম্ভব নয়। তাই আমিও চাইনা রেশমা আপুর জায়গা।। আমি চাই আমার জন্য একটা আলাদা জায়গা হোক আপনার হিয়া মাঝে।।। আর আমিতো সেই কবেই ভুলে গেছি ওই রাতের কথা। কারণ আপনি আমার স্বামী আর আমাদের মাঝে এসব স্বাভাবিক।

খুশির ঝলক আমার চোখেমুখে।। এতদিনে পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে যে আমাদের সম্পর্ক।। খুব খুব খুশি আজ আমি। উনিও আমার কথায় হেঁসে দিলেন অশ্রুচোখে।। উনি আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন আর মিশিয়ে নেন বুকের সাথে।



চারিদিকে অন্ধকার,, আকাশে একদম চিকন নতুন বাঁকা মতো চাঁদ। খোলা চুলে একা একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে শিরুফা।। চুলগুলো উড়ছে বেশ।।

হঠাৎ শিরুফার মনে হলো কেউ তার দিকে এগিয়ে আসছে,, ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে ওর।। কেউ শিরুফার কাঁদে হাত রাখতেই শিরুফা তুই এখানে বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারায়।।।

#চলবে_ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here