গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
৫৫ ও শেষ পর্ব
লেখাঃমেহের।
এদিকে জেসিকা কথাটা বলেই মেয়ের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারে খাবার কথা বলায় তাদের কন্যা তার সাথে অভিমান করছে।
মায়া বেগম নাতনির মন বুঝতে পারছে তাই জেসিকাকে বলল,বারে আমাদের খেতে ইচ্ছে করলেই দোষ?
আর অন্য সবাই খেলে তাতে বুঝি দোষ নেই ,তাই না গো দাদু?
মায়া বেগমের কথা শেষ করে এর মধ্যে মারুফ ও রাশেদ তাদের দুই হাত ভরে খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে আসলো।
রাশেদ ও মারুফ খাবার বিছানায় রাখল।
খাবারের প্লেট রাখার পর মারুফ তাদের বলল,মা সবাই বাহিরে খেয়ে নিয়েছে ।
তোমরা তো বাহিরে যাবে না ।
তাই তোমাদের খাবার এখানেই নিয়ে আসলাম।
মায়া বেগম ছেলের কথা শুনে বলল, ভালো করেছিস বাবা।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, মুহিব কোথায় ওকে ডেকে নিয়ে এসো।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল,মুহিবকে ডাকতে হবে না।
রাশেদ ওকে খাওয়ায় দিয়েছে ।
এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে তাই তুমি আমার দুই মাকে নিয়ে যলদি খেয়ে উঠো।
মারুফ ওদের খেতে বলে রুমে থেকে চলে আসে।
অবশ্য আসার সময় জেসিকাকে এটাও বলে আসে খাওয়া শেষ হলে জেসিকা যেন মারুফের দুই মাকে নিয়ে ঝর্নার রুমে যায়।
আর সাবধান করে বলল,ভুলেও আজকে ঝর্নার কাছে জেসিকা একা যেন না যায়।
কারণ মারুফ তার চাচা চাচীকে কোন সুযোগ দিবো না।
আগের মত তার বৌকে ছোট করার।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আচ্ছা যাব না একা তবুও তুমি মন খারাপ কর না।
জেসিকার কথা শুনে মারুফ জেসিকাকে বলল,হম, আমি ঠিক আছি।
শুনো ,দাদু মারা যাওয়ার আগে তার যা গহনা ছিল সব তোমাকে দিয়েছে না?
জেসিকা বলল,হ্যাঁ , তোমার দরকার আনব সেগুলো ?
মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল,সব আনা লাগবে না। ওখানে থেকে একটা চেইন ঝর্নাকে দিয়ো।
আর মনে থাকে যেন একটায় কারণ এগুলো তোমার।
কথাটা বলে মারুফ বাহিরে চলে যায়।
চাঁদনী বানু দুই বছর আগে মারা যান।
মারা যাওয়ার আগে তিনি ওদের সাথে নিজের করা অন্যায় স্বীকার করে জেসিকা, মারুফ ও মায়ার কাছে ক্ষমা চায় ।
এবং মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই সারাক্ষণ তার কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
আর যেদিন মারা যাবে তার এক সপ্তাহ আগে নিজের সব গহনা জেসিকাকে দিয়ে যায়।
তার কথা সবাইকে সে আগেই তার গহনা থেকে টুকটাক দিয়েছে কিন্তু জেসিকাকে কিছু দেওয়া হয়নি তাই ওকে বাকি গহনা গুলো দিয়ে যায়।
চাঁদনী বানু মনে করেন জেসিকা তার গহনা যেমন করে যত্নে রাখবে আর কেউ তেমন করে রাখতে পারবে না।
শেষ সময়ে জেসিকাকে সবসময় সুখী থাকার দোয়া দিয়ে গেছে।
অন্যদিকে ঝর্না খাটে বসে ভাবছে এমন করে আগেও একবার বৌ সেজেছিল।
কিন্তু সেদিন বিয়ে হয়নি ।
তা অবশ্য নিজের দোষেই।
সেদিন মরিচীকার মোহে পরে মানুষ রূপি অমানুষের হাত ধরে চলে গিয়েছিল সুখের খোঁজে।
কিন্তু সুখ তা কি আদৌও মিলেছিল সে জীবনে!
হঠাৎ ঝর্না মনে মনে ভাবছে, যেখানে সম্পর্কটি হারাম ছিল।
সেই হারাম সম্পর্কে সুখ মিলবেই কী ভাবে ?
ঝর্না তা ভেবে এখন সব সময় আল্লাহকে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায় ,
আল্লাহ তাকে এই জীবনে নিরাশ না করে বাঁচার জন্য সঠিক রাস্তা দেখিয়েছেন।
ঝর্না মনে মনে বলল, আমার এবং আমার পরিবারের কর্মের ফল নিজের সম্মান দিয়ে ভোগ করেছি।
এতে একটা জিনিস পরিষ্কার যে সবাইকে তার নিজ নিজ কর্মের ফল ভোগ করতেই হয় ।
তার প্রমাণ আমি এবং আমার পরিবার।
ও মনে পড়েছে এরমধ্যে আরেকজন আছে।
রিফাতও তো তার কর্মের ফল ভোগ করছে।
নাহলে যে মেয়ে আর বন্ধুর জন্য রিফাত আমাকে নিঃশেষ করে দিল।
তারাই ওকে দোকা দিয়েছে।
ওর টাকা পয়সা রেখে ওকে ভারত থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে ওর কপাল ভালো যে দেশে আসার জন্য ওকে সামান্য কিছু টাকা দেয়েছিল ।
তা নাহলে ভিনদেশে পঁচে গলে মরতে হতো।
কিন্তু তা হয়নি তাইতো দেশের মাটিতে আসতে পেরেছে।
রিফাত দেশে আশার দের বছরের মাথায়
একদিন হঠাৎ করে আমাদের বাড়িতে এসে আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চায়।
এবং বলে ওর সব শেষ হয়ে গেছে ।
লোভ, লালসা ওর জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে।
যেদিন রিফাত ঝর্নার কাছে মাফ চায়তে আসে।
সেদিন কিভাবে যেন পুলিশ ওর খোঁজ জেনে যায়।
এরপর পুলিশ এসে রিফাতকে ধরে নিয়ে য়ায।
অবশ্য এতে রিফাতের কিছু যায় আসে না কারণ এখন ওর বাঁচা ও মরা সমান কথা।
তাইতো পুলিশের কাছে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে যেনেও ঝর্নার কাছে ক্ষমা চায়তে এসেছে।
তবে ঝর্না এখনো এত ভালো হয়নি যে রিফাতকে ক্ষমা করবে।
যার জন্য আজকে সবার কাছে ওর একটাই পরিচয় ধর্ষিতা।
রিফাতে কিছু কথা
—–+++—–
আমি দেশের আসার কয়েক মাস পর আবারো এক মেয়ের সাথে ফোনে আলাপ হয়।
মেয়েটার মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে আমার প্রেম প্রেম জাগে।
মেয়েটার নাম শিলা।
শিলার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে।
দেশে আসার পর অনেকবার নিষিদ্ধ পল্লীতে গিয়েছি।
কিন্তু শিলার সাথে কথা হওয়ার পর থেকে সেদিকে মন আর টানে না।শিলাকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করে।
তাই ওর সাথে দেখা করতে চায় তা ওকে জানায়।
শিলাও আমার সাথে দেখা করতে পাগল হয়ে আছে।
তবে ওর পরিবারের জন্য দেখা করতে পারে না।
সম্পর্কের ছয় মাসের মাথায় একদিন স
সুযোগ হলো ওর সাথে দেখা করার ও একান্তে কিছু সময় কাটানোর।
সেদিন কী আর জানতাম আমার ভালো থাকার সময় শেষ হয়ে আসছে।
শিলার ডাকে সারা দিয়ে ওর সাথে দেখা করতেএকটা আবাসিক হোটেলে যায়।
অবশ্য জায়গাটা আমারিই ঠিক করা।
সেদিন ওখানে গিয়ে আমার খুশির ঠিকানা ছিল না।
যে শিলাকে মোবাইলের দেখেছিলাম তার থেকে বাস্তবের শিলা বেশি সুন্দর ছিল।
কিন্তু একটা কথা মনে খটকা লাগছে,তা হল শিলাকে আমার কেমন চেনা চেনা লাগছে।
কোথায় দেখেছি তা মনে পরছে না।
কিন্তু এ বিষয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করতে চায় না।
সেদিন শিলার সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছি।
দুজনের খুনসুটিতে ভালোই সময় কেটেছে।
খুনসুটির এক পর্যায়ে কখন দুজন দুজনার কাছে এসেছি বলতে পারি না।
তবে শিলা বারবার বাঁধা দিচ্ছিল ।
সে সময়ে আদৌও কি কোন বাঁধা মানা যায়।
একান্ত কিছু সময় কাটিয়ে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে থাকে পড়লাম।
শেষ পর্ব
রিফাতকে ক্লান্ত দেখে শিলা ওর সাইড ব্যাগ থেকে একটা ড্রিংক বের করে রিফাতকে খেতে দেয় ।
তারপর আর কিছু মনে নেয়।
দুইদিন পর রাতে আমার জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হসপিটালের চার দেয়ালের মাঝে দেখলাম।
নিজেকে হসপিটালে দেখে চমকে গিয়ে উঠতে নিয়েও উঠতে পারেনি।
উল্টো সামান্য নড়াচড়া দেওয়াতে ব্যথায় আমার জান যায় যায় অবস্থা।
সেদিন আমার কাছে মনে হয় কেউ আমার পুরুষাঙ্গের নির্মম নির্যাতন করছে।
কিন্তু আফসোস কি হয়েছে তাও দেখতে পারছি না!
সে সময়ে একজন ডাঃ রুমে আসে।
কারণ আমার জ্ঞান ফিরেছে তা নার্স ডাক্তারকে জানিয়েছেন।
ডাঃ এসে রিফাতের কাছে ওর অভিভাবকদের ফোন নাম্বার ও ঠিকানা চায়।
রিফাত ডাঃ কে জানায় ওর অভিভাবক ও নিজেই।
তাই যা কথা বলার ওর সাথে বলতে হবে।
ডাক্তারের রিফাতের অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে কিন্তু রোগির সত্যটা জানা খুব দরকার।
তা ভেবে ডাঃ রিফাতকে বলেন, যদিও ব্যাপারটা কষ্ট দায়ক তবুও আপনার মনকে শক্ত রাখতে হবে।
দুই দিন আগে আপনার যে অবস্থা ছিল তাতে আপনার বাঁচার কথায় ছিল না।
আল্লাহ হয়তো আপনার হায়াত রেখেছে তাই এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন।
কিন্তু আপনার একটা দিক অকেজো হয়ে গেছে।
রিফাত ডাঃ কথা শুনে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,স্যার আমি কি প্যরালাইস হয়ে গেছি।
তাই উঠতে পারছি না।
ডাঃ রিফাতের কথা শুনে আমতা আমতা করে বলল,না।
তবে ইয়ে মানে আপনার পুরুষাঙ্গ ভারী কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।
আপনি আর কখনো সাধারণ জীবন যাপন করতে পারবেন না।
মানে আপনি কখনো বাবা হতে পারবেন ।
এক্সচুয়েলি সত্যি বলতে আপনি কোন দাম্পত্য জীবন শুরু করতে পারবেন না।
আপনার বাহিরে দেখতে সব ঠিকঠাক থাকলে ও ভিতরে শূন্য।
রিফাত ডাক্তারে কথা শুনে চিৎকার দিয়ে বলে সব মিথ্যা এ হতে পারে না।
আপনি মিথ্যা বলছেন।
দুই দিন আগে তো আমি ঠিক ছিলাম এ বলে রিফাত কাঁদছে।
ডাক্তারের কথা শুনে রিফাতের শরীর খারাপ হওয়াতে বেশ কিছুদিন হসপিটালে থাকতে হয়েছে ওকে ।
পনেরো দিন পর রিফাত হসপিটালে থেকে ছাড়া পেয়ে যে মেসে থাকতো সেখানে যায়।
মেসে এসেই রিফাত ওর প্রেমিকাকে ফোন দেয় কিন্তু নাম্বার বন্ধ।
হসপিটালে বসে অনেকবার ফোন দিয়েও শিলাকে ফোনে পায়নি।
ফেসবুকে গিয়ে দেখে ওর শিলার আইডি ডিএক্টিভ করা।
রিফাত বসে বসে ভাবছে ওর এতো বড় সর্বনাশ কে করলো।
তাকে পেলে রিফাত খুণ করে ফেলতে দ্বিধা করবে না।
রিফাত যখন এসব ভাবছে,সে সময়ে রিফাতের সাথে মেসে যে ছেলেটা থাকে সে ছেলে রুমে এসে রিফাতকে দেখে বলল,ভাই আপনি আইছেন!
এতদিন কোথায় ছিলেন?
একটা খোঁজ খবর ও দিলেন না।
রিফাত ছেলেটার কথায় বিরক্ত হয়ে বলল, দেশে গেছিলাম ।
রিফখতের কথা শুনে ছেলেটি বলল,ভাই আপনার একটা চিঠি আইছে দুই দিন আগে তারপর চিঠিটা বের করে দিয়ে বলল,এই নেন।
রিফাত চিঠি হাতে নিয়ে ভাবছে তাকে চিঠি কে দিল?
তার জানামতে চিঠি দেওয়ার মত কেউ নেয়!
কথাটা ভেবে চিঠি খুলে পড়তে শুরু করে।
চিঠির প্রথমের লাইন লেখা দেখেই চমকে উঠে!
কে এমন ধরনের চিঠি দিয়েছে তা জানতে পুরোপুরি পড়তে হবে ভেবে আবার প্রথম থেকে পড়া শুরু করে।
হারামী রিফাত
তুই কি ভাবছিস তোর মত হারামীকে প্রিয় রিফাত বলমু কখনেই না।
তুই এটুকু পড়ে ভাবছিস আমি কে তাইতো?
আমি তোর প্রেমিকা শিলা।
তবে আমার আসল নাম হচ্ছে, লামিয়া।
আমার নাম শুনে
মনে পরছে কিছু?
আরে আমি সেই লামিয়া যাকে তুই ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে গ্রাম থেকে শহরে এনে রুমে মধ্যে বন্দি রেখে ভোগ করেছিল দিনের পর দিন।
তোর আয়েশ মিটে গেলে আমাকে রনির কাছে ঠেলেই দিয়েছিলি।
ওই হারামজাদা আমাকে মাসের পর মাস ভোগ করেই খান্ত হয়নি ।
আমাকে নিষিদ্ধ পল্লীতে বিক্রি করে দেয়।
সেখানকার অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে প্রতিদিন হাজার বার আমার মনের মৃত্যু হয়েছে।
তখনেই ভেবে রেখেছিলাম তোকে আর রনিকে একবার হাতের মুঠোয় পেলে তোদের জীবন্ত লাশ বানিয়ে ছাড়ব।
আর দেখ সে সুযোগ কয়েক বছর পর হলেও আমার হাতে ঠিক এসেছে।
তাইতো সেদিন তোকে নিষিদ্ধ পল্লীতে দেখেই ঠিক করে ফেলি আমার কি করতে হবে।
তোর ফোন নাম্বার জোগাড় করে তোর মত করেই তোর সাথে প্রেমের অভিনয় করে তোকে শরীরের লোভ দেখিয়ে আমার কাজ হাসিল করলাম।
এখন আমার প্রতিশোধ পূর্ণ হয়েছে।
এখন আর কোন মেয়েকে তোর শিকার বানাতে পারবি না।
যে কদিন বাঁচবি শুধু আফসোস করবি কেন লামিয়াকে ধোকা দিয়েছে তা ভেবে।
হাহাহা।
এরপর চিঠিতে আর কিছু লেখা নেই
রিফাত চিঠি পরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
কারণ আজকে ওর এই অবস্থার জন্য ও নিজেই দায়ী।
রিফাত কাঁদছে আর মনে মনে ভাবছে,
নিজের পাপ ও ভুল এমন সময়ে এসে বুঝলাম যখন আমার সব শেষ হয়ে গেল।
আজকে আমারও সুন্দর একটা পরিবার থাকত কিন্তু পাপ এতো বেশি হয়ে গেছে যার জন্য এই জীবনে পরিবার ও স্ত্রী সন্তান নামক সুখ গুলো আমার কাছে আর আসবে না।
সুখ নামক বস্তুটা সারাজীবনের জন্য আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
এখন যে কয়দিন বাঁচবো আমাকে ধুঁকে ধুঁকে বাঁচতে হবে।
এর থেকে মৃত্যু্ হলেও ভালো ছিল।
আস্তে আস্তে যখন নিজের করা পাপ কাজ গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
তখন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু সাহস হয় না ।
নিজের পাপের তাড়নায় ঝর্নার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেই পুলিশের হাতে আটক হয়।
জেলে বসে রিফাত এখন ভালো মন্দের হিসেব করতে ব্যস্ত।
অন্যদিকেদিকে কিছুক্ষণ আগেই ঝর্না ও রাজিবের বিয়ে হয়ে গেছে।
মারুফ ও বাড়ির বড়রা সবাই ওদের নতুন জীবনের জন্য দোয়া করছে।
মারুফ বোনকে বিদায় দিয়ে বাবুর্চিদের সাথে কথা বলতে যায়।
এদিকে জেসিকা ওর শ্বাশুড়ির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে বাহিরে এসে কাজের মেয়ের সাথে বাড়ি ঘর গুছাতে সাহায্য করছে ।
মারুফ বাহিরের কাজ শেষ করে।
কালকে ঝর্নার শ্বশুর বাড়িতে কি কি আগেই পাঠাবে তা রাশেদকে নিয়ে লিষ্ট করছে ।
আর কালকে কত টাকা লাগতে পারে তারও হিসেব করতে বসেছে।
এরমধ্যে জেরিন ও মুহিব সেখানে এসে ওদের পাশে বসলো।
রাশেদ ও মারুফ ওদের দেখে মুচকি হেসে নিজেদের কাজে মনোযোগ দিচ্ছে।
মুহিব রাশেদকে হিসেবে করতে দেখে বলল,ও ছোট বাবা তুমি খাতা কলম দিয়ে কী করছো?
রাশেদ হাতে থেকে কলমটা রেখে মুহিবকে কোলে নিয়ে বলল, আব্বাজান তোমার ঝর্না ফুফিদের বাসায় কি কি নেওয়া হবে আমি তার লিষ্ট করছি।
আর কত টাকা লাগবে তারও হিসেবে করছি।
মুহিব রাশেদের কথা শুনে এমন ভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলল মনে সে তার ছোট বাবার কথা সব বুঝে গেছে।
রাশেদ মুহিবের মাথা ঝাঁকানো দেখে ওর গালে চুমু দিয়ে হেসে বলল, ভাইয়া দেখছো মাশআল্লাহ আমাদের আব্বাজানের কত বুদ্ধিমান অল্পতেই সব বুঝে যায়।
রাশেদের কথা শুনে জেরিন বলল, ছোট বাবা ভাইয়ুর থেকে আমার বেশি বুদ্ধি ভাইয়ু তো না বুঝেই শুধু মাথা ঝাঁকায় হুঁ।
মারুফ জেরিনের কথা শুনে বলল,তাহলে তো আমাদের আম্মাজানের অনেক বুদ্ধি।
কিন্তু আম্মাজান আপনার মানতে হবে আমাদের বাবাও বুদ্ধি মান।
জেরিন ওর বাবার কথা শুনে বলল,না না ভাইয়ুর থেকে আমার বেশি বুদ্ধি।
বনুর কথা শুনে মুহিব মন খারাপ করে তা দেখে রাশেদ ওকে সুরসুরি দিচ্ছে।
মুহিব সুরসুরি পেতেই মন খারাপের কথা ভুলে হেসে দেয়।
বাচ্চারা মুহুর্তের মধ্যে হাসতে পারে ।
আবার মুহুর্তের কেঁদে কারো কানের পোকা নড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা বাচ্চাদের আছে।
এদিকে ভাইয়ু আর ছোট বাবাকে হাসতে দেখে জেরিন মারুফকে বলল,আব্বু ও আব্বু?
মারুফ মেয়ের কথা শুনে বলল,কি হয়েছে আম্মাজান?
জেরিন বাবার গলা জরিয়ে ধরে বলল,আব্বু আম্মুর পেট ফুটবলের মত ফুলবে কবে?
জেরিনের কথা শুনে দুই ভাই হতভম্ব হয়ে গেছে।
মারুফ নিজেকে সামলে মেয়েকে কোলে বসিয়ে বলল, তোমার আম্মুর পেট ফুলবে কেন?
জেরিন বাবার কথা শুনে বলল,এ বাবা তুমি কত বোকা! কিছুই জানো না।
পিকুর ফুফুর পেট ফুটবলের মত ফুলা।
পিকু বলেছে মেয়েদের বিয়ে হলেই পেট ফুটবলের মত ফুলে যায়।
আর আমাদের আম্মুরও তো বিয়ে হয়েছে তাহলে তার পেট ফুটবলের মত ফুলা না কেন?
রাশেদ ভাতিজির কথা শুনে কাশতে কাশতে মুহিবকে নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ভাইয়া পরে হিসেবে করব আমি এখন যায়।
কথাটা বলেই বিদ্যুৎ গতিতে মুহিবকে নিয়ে ওখানে থেকে চলে যায়।
জেসিকা দূরে দাঁড়িয়ে ওদের অবস্থা দেখে ও মেয়ের কথা শুনে মিটমিট করে হাসছিল ।
মারুফ তা দেখে মেয়েকে বলল,মা তোমার দাদু তোমাকে বোধহয় খুঁজে যাওতো মা দাদুর সাথে দেখা করে এসো।
জেরিন বাবার কথা শুনে বলল, আমাকে তাড়াতে আব্বু তুমি চিটিং করছো তাইনা ?
মেয়ের কথা শুনে মারুফের কপালে হাত মেয়েটা এত পাকনি বুড়ি যে ওকে উল্টা পাল্টা বুঝ দিয়ে ওর কাছে থেকে কাটা মুশকিল হয়ে পরে।
মারুফ কিছু একটা ভেবে মেয়েকে বলল,মা সবার পেট ফুটবল হয় না।
যাদের অসুখ থাকে তাদের শুধু এমন হয়।
জেরিন তার মন মতো উঃ পেয়ে বাবার ওখানে থেকে দাদুর কাছে চলে যায়।
মেয়ে ওখানে থেকে যাওয়ার পর মারুফ জেসিকার কাছে এসে ওকে পিছনের থেকে জরিয়ে ধরে ঘারে নাক ঘষে ফিসফিস করে বলল,বৌ এটা তো ঠিক না দূরে দাঁড়িয়ে আমাকে নাস্তানাবুদ হতে দেখে না বাঁচিয়ে আবার মজা নেওয়া হচ্ছে?
জেসিকা মারুফের কথা শুনে প্রতিবাদ করে বলল, আশ্চর্য মজা কোথায় নিলাম?
মজা নেওয়ার হলে তো ওখানে গিয়ে মেয়েকে বলতাম, মা’রে আমারও তো পেটটা ফুটবলের মত ফোলাতে ইচ্ছে করে ।
ইচ্ছে করে সুখের অসুখ বানাতে তোর বাবাই তো রাজি হয় না।
তাহলে দেখতেন নাস্তানাবুদ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী?
সব আপনার আম্মাজান আপনাকে ভালো মত বুঝিয়ে দিত।
কথাটা বলে জেসিকা হেসে দিল।
এদিকে মারুফ ওর বৌয়ের কথা শুনে বৌকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নাক টিপে বলল,বৌ আমি একবার তোমাকে হারাতে হারাতে পেয়েছি ।
তাই আর এমন পরিস্থিতিতে পরতে চায় না।
তাছাড়া আল্লাহ আমাকে মা ও বাবা দুজনকেই দিয়েছে আর দরকার নেই।
মারুফের কথা জেসিকা বলল, আমার কষ্ট হয় মারুফ যখন মনে পরে, ওদের জন্মের পর ওদের জন্য সে সময়ে কিছুই করতে পারিনি।
মা হয়ে সন্তানকে তাদের হকের খাবার টুকু দিতে পারিনি।
তাইতো আমি আবার মা হতে চায়।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে শক্ত করে চেপে ধরে বলল,বৌ তুমি অসুস্থ্য ছিলে আর তুমি যে বললে না ওদের হকের পাওয়া টুকু দিতে পারনি হয়তো ওদের রিযিক ছিল না।
তাই বলে আবার তোমাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারব না।
দুজনকে মানুষের মত মানুষ করে নেও তার পর না হয় অন্য কিছু ভেবো।
মারুফের কথা শুনে জেসিকা ভেংচি কেটে নিজের রুমে চলে গেল।
তা দেখে মারুফ জেসিকার পিছনে পিছনে রুমে যায়।
রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে মারুফ জেসিকাকে বলল,এই ভেংচি কাটলে কেন?
জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল,কেটেছি বেশ করেছি।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল,বৌ গো জামানা অনেক খারাপ হয়ে গেছে তাইতো আমারে ভালা থাকতে দিল না বুঝলা ?
জেসিকা মারুফের কথা শুনে কিছু বলতে গিয়ে অনুভব করল বরারের মত ওর ঠোঁট জোড়া বেদখল হয়ে গেছে।
এই যে পাঠক পাঠিকা আপনারা এখনো এখানে কী করছেন ?
অন্যের ঘরে উঁকি দিতে নেয় তো!
ওরা দুজনে না হয় ভালোবাসা আলিঙ্গনে সিক্ত হোক।
আর ওদের ভালোবাসার মূহুর্তে আমরা বিরক্ত না করে বিদায় হয়।
নোটঃ মানুষ যত বড় লোক বা ক্ষমতাসীন হোক না কেন?
যখন তার পতন শুরু হবে তখন টাকা ও ক্ষমতা দিয়ে তা ফিরাতে পারবে না।
কর্ম খারাপ করে ভালো ফলের আসায় থাকা বৃথা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ কর্ম অনুযায়ী ফল দেন।
আর জ্ঞানীগুণী গন বলেছেন,জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো।
বিঃদ্রঃ আপনারা ধৈর্য ধরে এতদিন গল্পটা পড়েছেন এজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
গল্পটা পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে তা গ্রুপে রিভিউ দিয়ে জানালে খুশি হব।
রিভিউ আপনারা নেগেটিভ ও পজিটিভ দুই ধরনেরেই দিতে পারবেন।
আমার লেখা যদি আপনাদের মনে সামান্য দাগ কাটতে পারে তাহলেই লেখাটি সার্থক হবে।
সামনে নতুন গল্পতে আশাকরি লাইক ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।
আরেকটি কথা কষ্ট করে গল্প লেখে আপনাদের রেসপন্স না পেলে মনে। লাগে।
তাই নতুন গল্পে সবাইকে পাশে পাব সেই আশাতেই অপেক্ষায় থাকলাম।