গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৫৩
লেখাঃ মেহের।

আর এখন বলছো কি হয়েছে?
যতসব ঢং!
তাও তোমার সাথে ও আড়ি….

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল, ঢং করি আর যায় করি না কেন!
সব কিন্তু আমার সোনা ময়নাটার সাথেই করি।
মারুফ কথাটা বলে জেসিকার চোখের পানি নিজের ওষ্ঠ দিয়ে শুষে নেয় তারপর জেসিকার গোলাপি ঠোঁট দুটো নিজের ওষ্ঠ দ্বারা লক করে দিল।
এভাবে কেটে গেল কিছু মুহূর্ত।

কিছুক্ষণ পরে দুজনেই হাঁপাচ্ছে ।
জেসিকা মারুফকে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,এখনেই তো দমবন্ধ হয়ে যেতো!
মারুফ জেসিকার কথা শুনে জেসিকার কপালে চুমু দিয়ে বলল,দম বন্ধ হতে দিলে তো।
আর আদর করলেও দোষ না করলেও দোষ তাহলে চলবে কেমনে সোনা?
মারুফের কথা শুনে জেসিকা লজ্জা পেয়ে মারুফের বুকে মিশে যায়।

এক সপ্তাহ পর।
জেসিকা বাচ্চাদের নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত থাকে আর মারুফ দোকান নিয়ে।
এর মধ্যে ফোনে দুজনের কথা হয় তিন চারবার।
মারুফ ফোন করে জেসিকাকে সময় মত নামায আদায় করার কথা বলবে।
মারুফ ভাবে বাচ্চাদের খেয়াল রাখতে গিয়ে সময় মত নামায আদায় যদি না করতে পারে।
তাই সব সময় ফোন করে মনে করিয়ে দেয় ওয়াক্ত মত আগে নামায পড়বে তারপর অন্য সব।
অবশ্য জেসিকা মারুফ ফোন না করলেও সময় মত নামায আদায় করতে চেষ্টা করে।

অন্যদিকে মারুফের ইদানিং অনেক খাটুনি যাচ্ছে এতদিন দোকানে সময় দিতে না পারায় অনেক কিছু এলোমেলো হয়ে আছে।
তা ঠিক করতে করতে আজকাল বাসায় যেতে রাত হয়ে যায়।
অবশ্য ওদের বাড়িতে থেকে দোকান কাছে তাই আগে দুপুরে বাসায় খেতে আসতো।
আবার যখন মন চায়তো বৌকে দেখতে বাসায় হাজির হয়ে যেতো।
কিন্তু এখন রাত ছাড়া বৌ বাচ্চাদের দেখা পায় না।
কারণ বৌ বাচ্চা ঢাকায় শ্বশুর বাড়িতে আছে।
সেজন্য দুপুরে খেতে যায় না।
দোকানেই কিছু কিনে খায়।

মারুফ বাহিরের খাবার খেতে পারে না তা ইসহাক জানে।
তাই ভাতিজাকে অনেক অনুরোধ করেছেন তার সাথে দুপুরে বাসায় খেতে।
কিন্তু মারুফ রাজি হয়নি।
ইসহাক এখন বুঝতে পারছে বৌয়ের কথা শুনে সে তার জীবনের শক্তিশালী দিক হারিয়ে ফেলেছে।

মারুফের মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে দুপুরে সবার সাথে খেতে কিন্তু সময়ের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
এমনিতেই প্রতিদিন গাজীপুর থেকে ঢাকা যেতে জ্যামে পরতে হয় সে কারণে বাসায় পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়।
মারুফ সেজন্য জেসিকার বাবার সাথে জেসিকাকে গাজীপুর নিয়ে আসতে চায় সে কথা বলেছিল।

জেসিকার বাবা মারুফের বাড়িতে তার মেয়েকে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে।
তার ধারণা মারুফের বাড়িতে গেলে জেসিকার ক্ষতি হতে পারে।
মারুফ জোর দিয়ে কিছু বলতেও পারছে না আগের দুর্ঘটনার জন্য।
তাই এখন কতদিন শ্বশুর বাড়িতে থাকতে হবে বুঝতে পারছে না।

এদিকে জেসিকার আজকাল নিজের
শ্বশুর বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে।
জেসিকা চায় ওর বাচ্চারা দাদার বাড়িতেই বেড়ে উঠুক।
দরকার হলে নানা বাড়িতে মাঝে মাঝে বেড়াতে আসবে।
ওরা বড় হচ্ছে আস্তে আস্তে ভালো মন্দ বুঝতে শেখবে তাই ওদের নিজের শিকড়ের কাছে রাখা উচিত।
তাছাড়া মারুফেরও তো কষ্ট হচ্ছে প্রতিদিন গাজীপুর থেকে ঢাকা আসা যাওয়া করতে।
জেসিকা বাচ্চাদের কথা ভেবে গাজীপুর যেতে চায়। নিজের মাকে বুঝিয়ে বলেছে এখন শুধু বাবাকে রাজি করাতে হবে।
জেসিকা কিছুদিন ধরেই গাজীপুর যেতে,ঝর্নাকে দেখতে মন টানছে কিন্তু যেতে পারছে না।
মাঝে মাঝে ঝর্নার জন্য জেসিকার খুব খারাপ লাগে কারন জেসিকা কোমল আর ঝর্নাকে কখনো আলাদা ভাবতো না।
এরমধ্যে কয়েকদিন আগে রেশমা একদিন এখানে আসে।

রেশমা এখানে এসেই মারুফ ও জেসিকার পা ধরে মাফ চেয়েছে।
জেসিকা রেশমাকে মাফ করে বুকে জড়িয়ে ধরলেও মারুফ রেশমাকে কড়া সুরে বলেছে, আমার বৌ তোকে মাফ করেছে ভালো তবে এরপর থেকে ওর আশেপাশেও তোকে দেখতে চায় না।
তুই ছোট বোন তাই আমি তোকে মাফ করলাম কিন্তু তোর সাথে আমার বা আমার পরিবারের সম্পর্ক আগের মত হবে না।
তাই আমাদের থেকে দূরে থাকবি।
সেদিন রেশমা বুঝতে পারছে ওর পাপের জন্য বাবার মত বড় ভাইকে হারালো।
রেশমা যাওয়ার আগে জেসিকাকে ঝর্নার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলেছে।
তা শুনার পর থেকেই ঝর্নাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।

জেসিকা গত সপ্তাহে মারুফকে বলছিল চাচা চাচী যেমন ভুল করেছে ঠিক তেমনি তারা তাদের শাস্তিও পাচ্ছে। তাই এখন তুমি ওদের মাফ করে দাও।
আবার এক পরিবারের মধ্যে ওদের নিয়ে আসো আমরা সবাই মিলেমিশে একসাথে থাকি আগের মত।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলছে, তারা আমার গুরুজন তাই তাদের আমি আরও আগেই মাফ করে দিয়েছি।
তাদের প্রতি আমার যা দায়িত্ব আছে তা হাসিমুখে পালন করবো।
কিন্তু আর কখনো আমরা এক পরিবার হবো না।
তোমার কাছে আমার অনুরোধ তুমি কখনো এই বিষয়ে আমাকে জোর করো না।
আমি চায় না অন্যকে নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন ঝামেলা হোক।
জেসিকা মারুফের কথা শুনার পর থেকে জেসিকা মারুফের সাথে এ বিষয়ে আর কোন আলোচনা করেনি।
জেসিকা জানে ওর থেকেও তাদের জন্য মারুফের কষ্ট বেশি হয়।
তারপরও যেহেতু মারুফ চাচ্ছে না এ ব্যাপারে আলাপ করতে তাহলে শুধু এ বিষয়ে ওকে খুঁচিয়ে আহত করে লাভ নেই।

দুইদিন পর

রাতে মারুফ খাওয়া দাওয়ার করে কিছুক্ষণ শ্বশুরের সাথে গল্প করার পর রুমে আসলো।
এসে বিছানার দিকে তাকিয়ে বিছানায় বাচ্চাদেরকে না দেখে মারুফ জেসিকাকে জিজ্ঞেস করলো, বৌ আমার কলিজার টুকরোগুলো কোথায়?
এতক্ষণে তো ওদের ঘুমিয়ে পরার কথা ছিল!

জেসিকা বিছানা ঠিক করছিল তাই মারুফ যে রুমে এসেছে তা খেয়াল করেনি।
মারুফের আওয়াজ শুনে পিছনে তাকিয়ে ওকে দেখে বলল, তোমার কলিজার টুকরোগুলো তাদের নানা ভাই আর নানু আপুর কাছে ঘুমাচ্ছে।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল,এই কি বল?
ওরা রাতে কেঁদে ওঠতে পারে আম্মু এমনিতেই প্রেসারের রোগী ঘুম নষ্ট হলে সমস্যা হবে।
তাই ওদের নিয়ে আস।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আমি দিতে চায়নি গো কিন্তু মা যেভাবে জোর দিয়ে বলল তাতে না দিয়ে আর পারলাম না।

মারুফ অবাক হয়ে বলল,তা মা হঠাৎ ওদের নিয়ে ঘুমাতে চাচ্ছে কেন?
কথাটা বলেই কিছু একটা ভেবে মারুফ মুচকি হেসে বলল,
নাকি শ্বাশুড়ি মা মেয়েকে সুযোগ দিচ্ছে বরের আদর নেওয়ার জন্য?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, তুমি সব কিছু বেশি বুঝ।
আসল কথা হচ্ছে আমরা তো আর তিনদিন পর আমাদের বাড়িতে যাবো।
তাই তোমার শ্বাশুড়ির সখ হয়েছে তার ভাই বোন আপন নীড়ে ফেরার আগে তার সাথে দুই রাত রাখবে।
আম্মুর ধারণা তার কাছে বাচ্চাদের রাখলে ওরা তাকে বেশি বেশি মনে করবে।
আর তাহলে তুমি এখানে ওদের নিয়ে আসবে।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল,বৌ ওরা মনে করুক আর না করুক কিন্তু আমি প্রতি মাসে তোমাকে দুইদিনের জন্য বেড়াতে নিয়ে আসব।
কারণ আমার বাচ্চাদের ছাড়া আমি এক মুহুর্ত থাকতে পারি না।
যেখানে ওদের বয়স মাত্র এগারো মাস হয়েছে।
আর তোমাকে তারা কত যত্ন করে ২০ বছর আগলে রেখেছে।
আর তুমি তাদের একমাত্র সন্তান।
তাহলে তোমাকে ছাড়া থাকতে তাদের কতটা কষ্ট হয়।
তা নিজে আজ সন্তানদের বাবা না হলে বুঝতে পারতাম না।
তাই আমি আগেই ভেবেছিলাম আব্বু আম্মুর কথা।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে ওর বুকে মাথা রেখেই বলল, তুমি এতো ভালো কেন?
তোমার মত করে সবাই যদি ভাবতো তাহলে কোন সংসারের আর কোন অশান্তি সৃষ্টি হত না।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল,বৌ তুমি শুধু শুধু বারিয়ে বলছো।
আমি এমন কিছুই বলিনি বা করিনি যে আমার এত সুনাম করতে হবে।
মারুফের কথা শুনে জেসিকা ওর বুকের সাথে আরও মিশে যায়।

মারুফ তা দেখে জেসিকার নাক টিপে বলল,বৌ তুমি গাজীপুর যাওয়ার বিষয়ে আব্বুকে যেভাবে রাজি করিয়েছো না !তা সত্যিয় প্রশংসনীয়।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, জনাব আমাদের সন্তানদের তো শিকড়ের সাথে পরিচিত করাতে হবে সেটা আব্বুকে বুঝিয়েছি আব্বু বুঝতে পেরেছে তাই এখানে আমার কোন অবদান নেই।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল, যেখানে বাবা গাজীপুর যাওয়ার বিষয়ে আমার কথা শুনেই মানা করছে।
সেখানে তুমি তাকে রাজি করাতে কম রুটি যে বেলতে হয়নি তা বুঝি।
আর তুমি এখন যায় বল না কেন আসল কথা তো আমিতো জানি সোনা।
তাই তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চায় না।
তবে অন্য কিছু দেওয়ায় যায় কী বল?

কথাটা বলেই মারুফ জেসিকাকে কোলে তুলে নেয়।
জেসিকা ভয় পেয়ে মারুফের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,এই কি করছো!
পরে যাব তো আমাকে কোলে থেকে নামাও।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে মুগ্ধ নয়নে জেসিকার দিকে তাকিয়ে বলল, সোনা আজকে মনে হয় আমার কোলে নতুন চড়লে যে পরে যাবে বলছো?
তাছাড়া শ্বাশুড়ি মা সুযোগ করে দিয়েছে তা কার্যকর না করলে চলবে কেমনে?
কথাটা বলে মারুফ জেসিকাকে নিয়ে বিছানার। দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মারুফ জেসিকাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে জেসিকার গলায় মুখ গুঁজে দিল।
জেসিকা মারুফকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে শুয়ে আছে।

এদিকে জেসিকা জড়িয়ে ধরায় মারুফ জেসিকার সারা পেয়ে ওর গলায়, সারা মুখে, কপালে আদর দিচ্ছে।
জেসিকা মারুফের আদর পেয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
মারুফ তা দেখে জেসিকার ওষ্ঠ দখল করে নেয়।

এরপর জেসিকার ওষ্ঠ ছেড়ে আস্তে নিচে নামতে থাকে ।
মারুফের আদরে জেসিকা দিশেহারা অবস্থা হচ্ছে।

তা দেখে মারুফ জেসিকার পেটে নাক ঘষে দেয়।
তাতে জেসিকা মারুফের চুল খামচে ধরে।
চুলে টান পড়ায় মারুফ জেসিকার দিকে নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকায় ।
তারপর কিছু একটা ভেবে মারুফ পায়ের কাছে থেকে চাদর টেনে নিজেদের ঢেকে দেয়।
বছর শেষে মনের সমুদ্রে ভালোবাসার বান ডেকেছে সে বানে দুজন দুজানার মাঝে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।

চার বছর পর।
মা ও মা বাবা আর তোমার বিয়েতে আমাকে সাথে রাখলে না কেন?
মুহিবের কথা শুনে জেসিকার হেঁচকি উঠে গেল।
এর মধ্যে জেরিন মায়ের রুমে মুখ গোমড়া করে ঢুকলো।
মেয়ের মুখ গোমড়া দেখে জেসিকার হেঁচকি থেমে যায়। জেসিকা মেয়েকে কাছে ঢেকে বলল,কি হয়েছে আমার সোনার?
মুখ ভার কেন?
মুহিব বোনের মুখ ভার দেখে চুপচাপ বসে রইলো।
কারণ মায়ের বনুর সাথে কথা শেষ হলে নিশ্চয় তার প্রশ্নের উত্তর দিবে ।
এদিকে জেরিন মায়ের কথা শুনে বলল,মা বাবার সাথে আমার আড়ি ।
জেসিকা মেয়ের কথা শুনে বলল,তা আমার পাখিটা হঠাৎ বাবার উপর ক্ষেপলো কেন?

জানো মা পিকু সবার সাথে কত মজা করছে।
ছোট বাবাও পিকুকে কোলে নিয়ে আদর করেছে।
পিকু বাবার সাথে এসে বাবা ও মায়ের বিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে।
সবার সাথে মজা করছে।
কিন্তু তোমার আর বাবার বিয়েতে বাবা আমাকে নিয়ে আসিনি তাই বাবার সাথে আমার কাট্টি।
জেসিকা মেয়ের কথা শুনে বলল,…কী?

হৃদয়ের বন্ধন গল্পটা আগামী পর্বে সমাপ্ত হয়ে যাবে।
বিঃদ্রঃ আমার লেখা যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লাইক ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।
লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দিলে খুশি হবো।
আশাকরি ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here