গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৫১ ।
লেখাঃ# মেহের

মুহিবকে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে জেসিকা মারুফ বলে চিৎকার করে উঠল।
মারুফ হঠাৎ করে নিজের নাম শুনে বুঝতে সমস্যা হলো না এটা ওর প্রিয়তমার গলার স্বর।
প্রিয়তমার গলার স্বর মনে হতেই মারুফ তড়িগড়ি করে সামনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল!
মারুফের মনের মধ্যে তখন একঝাঁক প্রশ্ন এসে হানা দিচ্ছে ।
সামনে যা দেখছে তা কি আদৌও সত্যি না স্বপ্ন?
কারণ আট মাসের বেশি সময় ধরে, ওর প্রিয়তমা হাঁটাচলা তো দূরের কথা সামান্য হাতটুকু নাড়াতে সক্ষম কখনো ছিল না ?
কিছু বলতে পারত না ?
সে কিনা
এই মুহূর্তে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে তাদের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
আবার তার নাম ধরে ডেকেছে কথাটা ভেবেই জেরিনকে বুকে নিয়েই জেসিকা ও মুহিবকে একসাথে জড়িয়ে ধরল।
মারুফ আল্লাহ্ আকবার বলে জেসিকাকে জড়িয়ে ধরেই ওর সারা মুখে চুমু দিচ্ছি আর বলছে ,বৌ আল্লাহ্ পাক আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন।
তোমাকে সুস্থ্য করে দিয়েছে।
আল্লাহ তোমাকে অসংখ্য শুকরিয়া আমার মনের কথা শুনেছে।
আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছো।

এদিকে মারুফ জেসিকাকে বাচ্চাদের সহ জড়িয়ে ধরায়, দু’জনের মাঝে বাচ্চারা থাকায় ওদের শরীরে একটু চাপ পড়াতে মুহিব কেঁদে দিল।
মুহিবের কান্না শুনে মারুফ জেসিকাকে ছেড়ে ওদের দুজনকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে বলল, কাঁদে না সোনারা কথাটা বলেই মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে মা,মা, আব্বু কে কোথায় আছেন ?
তাড়াতাড়ি আস দেখে যাও!
এখানে একটা চমৎকার হয়েছে এসে দেখো!

জেসিকা মারুফের কথাগুলো শুনে বিছানায় থেকে উঠতে নেয়।
কিন্তু তার শরীর তাকে সাপোর্ট না করাতে উঠতে পারছে না।
জেসিকা ভাবছে মারুফ এভাবে ডাকছে কেন?
সে ঘুমে থেকে মাত্র উঠেছে তাই বলে ডাকতে হবে?
মারুফের কোলে কার বাচ্চারা?
আর আমার সাথে এত মেশিন পত্র লাগানো হয়েছে কেন?
জেসিকা যখন এসব ভাবছে তার মধ্যে মারুফের ডাক শুনে সবাই জেসিকার রুমে দৌড়ে এসেছে।
জেসিকার মা আগের তুলনায় এখন একটু সুস্থ্য আছে তবে মারুফের ডাকার শব্দ শুনে ভয় পেয়েছে ।
একটু আগেই তো মারুফ জেসিকার রুমের দিকে গেল কিছু মুহূর্তের মধ্যে হঠাৎ করে কি হয়ে গেল?

সে ভেবেছে তার মেয়ে বোধহয় আর নেয় সেজন্য তার মেয়ের রুমে এসে এভাবে মারুফ চিৎকার করছে।
তাই জেসিকার মা মারুফের ডাকা ডাকিতে পাগলের মত দৌড়ে জেসিকার রুমে এল সাথে উকিল সাহেবও এসেছে।
তারা রুমে এসে মেয়েকে তাকিয়ে থাকতে দেখে দৌড়ে মেয়ের কাছে যায়।

উকিল সাহেব ও তার স্ত্রী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে।
তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না জেসিকা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে এবং তাদেরকে দেখেই আম্মু,বাপি বলে ডাক দিয়েছে।
জেসিকার মা তো মেয়ের কপালে, গালে থুতনিতে একের পর এক চুমু খেয়ে যাচ্চে।
আল্লাহ্ মে তার বুকের ধনকে বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
জেসিকার বাবা মা দুজনেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
জেসিকার বাবা মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে ডাঃ দিলীপ সাহাকে কল করতে বাহিরে গেছে।
জেসিকা ওর মাথার কাছে মায়া বেগমকে দাঁড়িয়ে কান্না করতে দেখে বলল,আম্মু তুমি দাঁড়িয়ে এভাবে কাঁদছ কেন?
বাপি মাও কাঁদছে আর তোমার ছেলের চোখেও পানি আমি না হয় ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরিই করে ফেলছি এজন্য তোমরা এভাবে কাঁদবে নাকি?
তোমাদের দেখে কোমল ও রাশেদও কাঁদছে এটা কোন কথা হল?
জেসিকার কথা শুনে চাঁদনী বানু মায়া বেগমকে বলল,বৌমা নাতবৌ এসব কোন ঘুমের কথা বলছে?
জেসিকা চাঁদনী বানুর কথা শুনে বলল, দাদু ভুলে গেছো নাকি আজকে দুপরেই তো মা আমাকে খাওয়ালো
তারপর আমাকে ঘুমাতে বলল।
আর আমিও মায়ের লক্ষী মেয়ের মত ঘুমাতে গেলাম।

চাঁদনী বানু জেসিকার কথা শুনে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল মারুফ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, দাদু ওকে তোমার এখন কিছু বলতে হবে না।
এরপর মারুফ মুহিব ও জেরিনকে তার কোলে থেকে রাশেদ ও কোমলের কোলে দিয়ে জেসিকার কাছে এসে দাঁড়ায়।
জেসিকার মা ও শ্বাশুড়ি দু’জনেই জেসিকাকে ধরে ছিল।
কিন্তু তারা মারুফকে জেসিকার কাছে আসতে দেখে ওখানে থেকে সরে যায়।
এদিকে জেসিকার সামনে একটা চেয়ার টেনে মারুফকে বসতে দেখে জেসিকা বলল,এই তুমি সকালে তো ভালো বাহিরে গেলে তাহলে একদিনের মধ্যে এমন শুকিয়ে গেছ কি করে?
আর চোখ মুখ এত ভিতরে ঢুকলো কি করে?
মারুফ জেসিকার কথা শুনে বুঝতে পারছে, জেসিকা ঘটনার দিনের ঘুমানোর আগে কথা বলছে।
ঘুম থেকে জাগার পর কী হয়েছে তা ওর মনে নেই।
মারুফ চায়ও না জেসিকা এসব মনে করুক।
তাই মারুফ জেসিকাকে বলল, আমি ঠিক আছি তো বৌ। আমার আবার কি হবে?
এরমধ্যে জেসিকা মারুফকে বলল,এই আমি বিছানায় থেকে উঠতে পারছি না কেন?
কিছু ঘন্টার মধ্যেই কি বেশি মোটা হয়ে গেলাম আর আমি এতক্ষন ধরে বকবক করছি আমার বাবুরা শান্ত হয়ে আছে ঘটনা কি?
কথাটা বলেই জেসিকা নিজের পেটে উপর হাত বুলিয়ে চিৎকার করে উঠল।
এই মারুফ আমার পেট এতো ছোট কেন?
আমার বাচ্চারা কোথায়?
জেসিকা পাগলের মত চিৎকার চেঁচামেচি করছে আর তার বাচ্চারা কথায় তা জানতে চাচ্ছে?
মারুফ জেসিকাকে জড়িয়ে ধরেই বুঝতে চেষ্টা করছে,বাবুরা এখানেই আছে।
তুমি চিন্তা করো না।
জেসিকা মারুফের কোন কথা শুনছে না।
তাই মারুফ জেরিন ও মুহিবকে দেখিয়ে বলছে ,বৌ সামনে তাকিয়ে দেখো রাশেদ ও ছুটকির কোলের এরাই আমাদের সন্তান।

কিন্তু জেসিকা সেসব কিছুই শুনতে চাচ্ছে না।
তার কথা এক দুপুরের মধ্যেই বাচ্চারা বড় হয়ে যায় না।
মারুফ অন্যের বাচ্চকে কেন ওদের বাচ্চা বলছে?
মারুফ তাকে মিথ্যা বলছে কেন?
জেসিকা যখন মারুফের কাছে এসব অভিযোগ করছিল।
সে সময়ে হঠাৎ করে জেসিকার মনে পড়ল আজকে দুপুরেই তো একজন মুখোশ পরা লোক তার উপরে ঝাপিয়ে পড়েছিল।
জেসিকা তখন নিজেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টাও করেছিল কিন্তু সে সময়ে লোকটা তাকে জোরে ধাক্কা দিলে তারপর থেকে ওর আর কিছু মনে নেয়।
মারুফ জেসিকার অবস্থা দেখে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,বৌ এমন করে না।
তুমি মাত্র গুরুতর অসুস্থতার মধ্যে থেকে বের হয়েছো এখনও পুরোপুরি সুস্থ্য হওনি তারমধ্যে এমন করলে আরও অসুস্থ্য হয়ে পরবে।
তোমার কিছু হলে আমাদের কী হবে ?
আমরা যে তুমি বিহীন অচ…

জেসিকা মারুফের পুরো কথাটা না শুনেই মারুফকে নিজের কাছে থেকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল।

তারপর জোরে জোরে কাঁদতে বলল, আমি পাপী আমায় তুমি ছুঁয়েও না।
তাহলে তুমি নোংরা হয়ে যাবে।
মারুফ আবারও জেসিকার কাছে গিয়ে বলল,বৌ তুমি এসব কি বলছো?
আস সোনা তোমার মারুফের বুকে আস সব ঠিক হয়ে যাবে।

জেসিকা মারুফের কাছে থেকে দূরে সরছে আর বলছে,মারুফ তোমার জেসিকাকে ওরা নষ্ট করে ফেলেছে।
আমি নিজেকে বাঁচাতে পারিনি আমার বাচ্চা দুটোকে ও ওরা মেরে ফেলেছে।
আমি পঁচে গেছি তুমি আমায় ছুঁয়েও না।

জেসিকার অবস্থা দেখে মারুফ দিকবিদিক শূন্য হয়ে পড়েছে।
মারুফ বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে কি করে জেসিকাকে শান্ত করবে।
এমন উত্তেজিত হলে তাকে বাঁচাবে কি করে?
এরমধ্যে জেসিকার বাবা ডাঃ দিলীপ সাহাকে নিয়ে জেসিকার রুমে ঢুকল।
জেসিকা তখনও পাগলামি করছিল ডাঃ রুমে ঢুকে সবাইকে রুমে থেকে বের হতে বলল।
সবাই ডাঃ দিলীপ সাহার কথা শুনে রুমে থেকে বাহির এসে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ডাঃ জেসিকার রুমে থেকে পাক্কা একঘন্টা পরে বের হয়।
ডাক্তারকে জেসিকার রুমে থেকে বের হতে দেখে সবাই ডাঃ এর কাছে আসলেন ।
উকিল সাহেব ডাঃকে বলল,ও এমন করছে কেন?
মারুফ বলল,ডাঃ আঙ্কেল জেসিকা হঠাৎ কি হলো?
আর সব ঠিক আছে তো?

ডাঃ দিলীপ সাহা ওদের কথা শুনে বলল, আছে কোন রকম।
তবে ওর সাথে যখন সেদিন ঘটনা ঘটে তখন জেসিকা মাত্র ঘুম থেকে জেগেছিল।
তবে ঘুম থেকে জাগলেও সেসময়ের জেসিকা ঘুমের ঘোরের মধ্যে ছিল।
একটা গর্ভবতী মেয়ে এই সময়ে এমনিতেই বিভিন্ন ডিপ্ররেসনের মধ্যে থাকে ।
তারমধ্যে এই অবস্থায় সেদিন ঐ মানুষ রূপি কুকুরটা ওর উপরে ঝাপিয়ে পড়েছিল।
ও নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে এক সময় জ্ঞান হারায়।
তাই ওর কাছে মনে হচ্ছে কুকুরটা তার কাজে সফল হয়েছে ।
সে ধর্ষিত হয়েছে নিজের সম্মান বাঁচাতে পারেনি।
আর ধর্ষণের কারণে ওর বাচ্চারা ওর থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।
আর ওর কাছে আরও মনে হয়েছে আজকে সবকিছু হয়েছে।
এতসব চাপ একসাথে নিতে পারেনি তাই এমন করছিল।
আমি ওকে সেদিন কি হয়েছে বুঝিয়ে বলেছি।
আজকে প্রায় আট মাস ধরে অসুস্থ্য তাও বলেছি।
এসব শুনে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছিল তাই ওকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করেছি।
এখন কথা হচ্ছে ওর ঘুম ভাঙ্গার পর বোঝা যাবে আমার কথা কতটুকু বিশ্বাস করেছে তা ।
আমি আশা করি জেসিকা তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে যাবে সবার কেয়ার ও ভালোবাসা পেলে।
আর মারুফ বিশেষ করে তুমি আর বাচ্চারা ওর আশেপাশে সারাক্ষণ থাকতে চেষ্টা করবে।
এই সময়ে তোমার কেয়ার ও ভালোবাসা ওর জন্য বেশি দরকার।
আর একজন মা তার বাচ্চাদের স্পর্শ চিনতে কখনো ভুল করে না।
তাই বাচ্চাদের ওর কাছে কাছে রাখতে হবে যাতে ও সব খারাপ ঘটনা দু্রস্বপ্ন ভেবে ভুলে যায়।
জেসিকা যেহেতু এতদিন কোমায় ছিল তাই এখনেই আগের মত হাঁটাচলা করতে পারবে না বা হুট করে উঠে বসতেও পারবে না।
মালিশের জন্য একটা অয়েল লেখে দিচ্ছি ওটা দিয়ে
ওর হাত পায়ে ম্যাসাজ করতে হবে এবং ওকে ধরে ধরে হাঁটাচলা করাতে হবে ।
আর ওকে সবসময় হাসি খুশি রাখতে হবে এবং এখন ওকে কেউ বিরক্ত করবে না।
ওর ঘুম পুরো হলে নিজেই জেগে যাবে।

আমি আবার কাল সকালে একবার এসে ওকে দেখে যাব।
কথাটা বলেই ডাঃ চলে যায়।
মারুফ জেসিকার কাছে না গিয়ে ওদের রুমে যায়।

মারুফ ওযু করে নামাযের জন্য দাঁড়ালো।
আল্লাহ্ ওর প্রিয়তাকে নতুন জীবন দিয়েছেন তার শুকরিয়া আদায় করতে হবে তো

তিন মাস পর।
দোলার এখন প্রতিটি দিন কাটে মানুষের গঞ্জনা শুনে।
বাড়ির উঠানে যেতেও আজকাল ভয় পায়।
দোলাকে দেখলে প্রতিবেশীরা তাকে শুনিয়ে বলে, ছিঃ ছিঃ আজকাল কি দিনকাল আসলো মা -বাবা বাড়িতে বসেই বিয়ের নাম করে ছেলে ও ছেলের বন্ধুদের নিয়ে এসে মেয়েকে দিয়ে ব্যাবসা করায়।
আর মেয়ে দশজনের সাথে রঙ লীলা করতে যেয়ে রক্তারক্তি কান্ড ঘটায়।
পরিবারের লোকেরা তা আড়াল করে মানুষকে বোঝাতে চায় তাদের মেয়ের সাথে জবরদস্তি হয়েছে।
তাদের মেয়েকে জোর করে ধর্ষণ করেছে।
দোলা এসব কথা শুনে মনে হয় ওর কানের ভেতর ঘরম সীসা ঢেলে দিয়েছে কেউ।
ভালো হোক বা খারাপ কোন মা তো চায় না তার মেয়ে ধর্ষিতার খেতাব পাক।
দোলার এসব কথা শুনে মরে যেতে ইচ্ছে করে ।
কিন্তু এমনিতেই এত পাপ করেছে আত্মহত্যা করে পাপের বোঝা আর বাড়াতে চায় না।
আজকে মারুফের একটা কথা দোলার খুব মনে পড়ছে।
মারুফ সেদিন ওর চাচ্চুকে বলেছিল,এই সমাজ ধর্ষককে নয় ধর্ষিতাকে ঘৃণা করে।
সেদিন যদি মারুফের কথাগুলো বুঝতে চেষ্টা করতো।
জেসিকার সাথে খারাপ আচরণ না করতো?
মেয়েদেরকে শাসনের মধ্যে রাখতো ?
তাহলে হয়তো এমন কিছু হতে পারতো না।
রিফাত নামের জানোয়ার ওদের জীবন তছনছ করে দিয়ে ওদের পথের ভিখারি করে ছেড়েছে।
দোষ তো সব ঐ জানোয়ারকে দিলে হবে না তার ইন্ধন না পেলে সামান্য একটা রাস্তার ছেলের এত সাহস হতো না তাদের এমন অবস্থা করতে ।

এদিকে জেসিকা মুহিব ও জেরিনকে বুকে জড়িয়ে ধরে আছে।
যেন ছেড়ে দিলেই কোথাও হারিয়ে যাবে ওর বাচ্চারা?
হ্যাঁ ,ওর বাচ্চা ।
ডাঃ আঙ্কেল জেসিকাকে বলেছেন ,এরাই ওর বাচ্চা।
ডাঃ যাওয়ার পর জেসিকা ঘুম থেকে উঠলে মারুফ জোর করেই সেদিন ভোরে মুহিব ও জেরিনকে জেসিকার বুকে দেয়।
সেদিন ওদের বাচ্চা দুটো জেসিকার বুকের সাথে মিশে যাচ্ছিল আর জেসিকাকে হামি দিচ্ছিল জেসিকার অজান্তেই ওর হাত দিয়ে বাচ্চাদের জরিয়ে ধরে।
জেসিকার সেই মুহূর্তে বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরায় মনে হয়েছিল ওর হৃদয়ের বাচ্চাদের কাছে পাওয়ার জন্য যে দাঊ দাঊ আগুন জ্বালছে ।
এই বাচ্চারা বুকে এসে নিমেষেই সে আগুন নিভিয়ে দিয়েছে বাচ্চাদের শীতল পরশে।

সেদিনের ছোট ছোট হাতের স্পর্শে ওর হৃদয়ের নাড়া দিয়ে উঠছিল।
তারপর থেকে জেসিকার খুব একটা সময় লাগেনি এটা বুঝতে এরাই ওর নাড়ি ছেঁড়া ধন।
সেদিন এটা বোঝার পরে জেসিকা পাগলের মত ওদের ঝাপ্টে ধরে চুমু দিচ্ছিল আর কেঁদে বলছিল , আমার বাচ্চারা আমি তোদের চিনলাম না কি করে?
সোনা তোদের মা পঁচা তাই ভুল করেছ তোরা আমাকে মাফ করে দে।
জেসিকার কথা শুনে সেদিন মারুফের চোখে পানি চলে আসে তবে দুঃখের নয় আনন্দের।
তার সন্তানদেরকে আর মায়ের আদর থেকে বঞ্ছিত হতে হবে না।
সেদিনের পর থেকে মারুফের একমাত্র চেষ্টা ছিল তার বাচ্চাদের মা যেনে আগের মত সুস্থ্য হয়ে যায়।
সেজন্য নিজেই জেসিকার হাত পা ম্যাসাজ করে দিয়েছে দিনে তিন থেকে চার বার।
নিজে হাত ধরে জেসিকাকে হাঁটাতো, জেসিকার গোসল, খাওয়া দাওয়া সব মারুফ নিজের হাতে তুলে নিয়েছে।
জেসিকাকে সেদিনের ঘটনা মনে করার সময় দিতো না।
ওকে খুনসুটিতে মাতিয়ে রাখতো ।
কখনো কখনো নিজে হারিয়ে যেতে জেসিকার ওষ্ঠের মাঝে।
আবার কখনো জেসিকার অজানা আতঙ্কে অস্থির হয়ে থাকতো।
মারুফ জেসিকার অস্থিরতা কমাতে তার কোমল ওষ্ঠকে নিজের শুষ্ক ঠোঁটের মাঝে বিলীন করতে ব্যস্ত হয়ে পরত।মারুফ সবসময় চেষ্টা করতো জেসিকা যাতে শারীরিক ভাবে ও মানসিক ভাবে সুস্থ্য হয়ে উঠে।
মারুফের সে চেষ্টা সফল হয়েছে।
জেসিকা এখন সুস্থ্য আগের মত হাঁটাচলা করতে পারে।
আর এসব কিছুই হয়েছে আল্লাহর রহমতে আর মারুফের অক্লান্ত পরিশ্রমে।
মারুফ আজকে দোকানে গিয়েছে এই তিন মাস বাসায় বসেই দোকানের খোঁজ খবর নিয়েছে এবং ফোনের মাধ্যমেই এতদিন দোকানের মালপত্র কেনতো ।
জেসিকা এক সপ্তাহ হল সুস্থ্য হয়েছে ।
তবুও জেসিককে রেখে যায়নি।
কিন্তু এভাবে তো সবসময় চলবে না ।
ঘরে বসে খেলে রাজার ভান্ডারও খালি হাতে সময় লাগে না।
তাই এসব ভেবে মারুফ আজকে দোকানে গেল।
মারুফ মনে করে,
এখন যে তাকে শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে ।
তাকে তার পরিবারের ঢাল হয়ে দাঁড়াতে হবে।
হোক তা আর্থিক বা শারীরিক।

মারুফের কথা হচ্ছে নিজের পরিশ্রমের এক টাকাও লাখ টাকার সমান কারণ এই এক টাকা নিজে কষ্ট করে উপার্জন করেছে।
শ্বশুরের টাকা পয়সা তার দেখলে চলবে না।
তার সন্তানরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে থেকে নিজেদের অবস্থান , চাওয়া পাওয়ার মাপকাঠি বুঝতে হবে।
তাদের বাবার পরিচয়ে পরিচিত হবে নানার টাকায় নয়।
তাইতো মারুফ আজকে থেকে দোকানে যাওয়া শুরু করেছে।

জেসিকার কিছু ভালো লাগছে না বারবার,,,,

নোটঃ একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবে আমরা অন্যায় পাপ কাজ যত গোপনেই করি না কেন?
একজন সব দেখেন শুনেন ,তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানআল্লাহ।

পাঠক ভাই ও বোনেরা কালকে গল্প দিতে না পারলেও আজকে তিন পর্বের সমান এক পর্ব দিয়েছি।
আপনারা খুশি তো?

বিঃদ্রঃ আমার লেখা যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লাইক ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন।
আর লেখায় ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here