গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৪০।
লেখাঃ #মেহের।

রেশমা মারুফের পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,মা ঝ …ঝ… ঝর্না ।

দোলা মেয়ের কথা শুনে বলল,এই তুই জেসিকার ঢং দেখে পাগল হয়ে গেছিস?
এখানে ঝর্না আসবে কোথায় থেকে?

রেশমা ওর মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল,দূর ঝালা পাগল হবো কেন?
মা ঝর্নাকে এইমাত্র আমি মারুফ ভাইয়ের রুমে যেতে দেখলাম!

দোলা বড় মেয়ের কথা শুনে বলল,চল মারুফের রুমে দেখে আসি।
তবে ওখানে ঝর্নাকে না পেলে তোর খবর আছে।

কথাটা বলে দোলা মারুফের রুমের দিকে যাচ্ছে।
মারুফ জেসিকাকে কোলে করে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে দেয়।

বিছানায় শুয়ে দিয়ে মারুফ পকেটে থেকে একটা সাদা রঙের নরম রুমাল বের করে।
জগে থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে
তারপর রুমাল ভিজিয়ে জেসিকার কপালের কাটা জায়গা মুছে দিচ্ছে।
মুছে দেওয়ার পর কোমলকে জিজ্ঞেস করে ডাক্তার কখন আসবে?
কোমল মারুফের কথা শুনে বলল, ভাইয়া শিরীন আপা তো বলেছে বিশ মিনিটের মইধ্যে আসছে।

কোমলের কথা শুনে মারুফ বলল,কোন শিরীন ?

মারুফের মুখে কোন শিরীন শুনে কোমল বলল, তুমি তাকে চিনো।
আরে আমাদের এলাকার গাইনী বিশেষজ্ঞ শিরীন শারমিন।
ভাইয়া ওই যে রাকিব নামে তোমার একটা বন্ধুর আছে না!
তার ছোট বোন ডাক্তার শিরীন শারমিন।

মারুফ কোমলের কথা শুনে, ওহ্ বলল।
এখনো জেসিকার জ্ঞান আসেনি তা দেখে মারুফ জেসিকার মুখে বার বার পানির ঝাপটা দিচ্ছে তাও জেসিকা চোখ খুলছে ।
জেসিকার এমন অবস্থা দেখে মারুফ ঘাবড়ে গেল।
এরমধ্যে মারুফ জেসিকার দিকে খেয়াল করে দেখে ওর দাঁতের দাঁত লেগে যাচ্ছে।
তা দেখে মারুফ ভয় পেয়ে ওঁর মা’কে বলল,মা জেসিকার দাঁত লেগে যাচ্ছে এখন কি করবো?

মায়া বেগম মারুফের কথা শুনে বলল, বাবা আমি দেখছি তোকে ব্যস্ত হতে হবে না।

মায়া বেগম জেসিকার মুখে ভিতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দাঁতের পাটি খুলার চেষ্টা করছে।
এদিকে দোলা ও রেশমা মারুফের রুমে এসে ঝর্নাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে।

দোলা তো মেয়েকে ধরে চিৎকার করে উঠল।
ঝর্না মা তুই এসেছিস!
আমায় রেখে এতদিন কোথায় ছিলি ?
ঝর্না ও ওঁর মা’কে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিল।
রুমের ভিতরে এতক্ষণ কেউই ঝর্নাকে খেয়াল করেনি।
কিন্তু দোলার মুখে ঝর্না শুনে সেদিক তাকিয়ে ঝর্নাকে দেখে সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।

চাঁদনী বানু ঝর্নাকে দেখে বলল,এই তুই কোথায় থেকে এলি? আর তুই কী একা কেন?
তোর প্রেমিক কোথায়?

ঝর্না আমতা আমতা করে বলল, দাদু আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
আর তোমাদের ভয়ে তোমার নাতনি জামাই তো এখানে আসেনি।

ঝর্নার বিয়ে হয়েছে কথাটা ঝর্নার মা বোন তেমন গুরুত্ব দিলো না।
দোলা বেগম তো ঝর্নার মুখ মন্ডলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,মা তোর এমন অবস্থা কেন?

মারুফ তাদের কথা শুনে বলল, দয়াকরে এখানে শব্দ না করলেই ভালো হয়।
ওর থেকে কিছু জানার থাকলে আপনি ওকে রুমের বাহিরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুন।

মারুফের কথা শুনে চাঁদনী বানু দোলাকে বলল, ছোট বৌমা কথা বলতে হয়লে তুমি ওরে বাহিরের রুমে নিয়া যাও।

চাঁদনী বানুর কথা শুনে ,দোলা ও রেশমা ঝর্নাকে নিয়ে রুমের বাহিরে আসে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাঃ শিরীন আসে।
মারুফকে দেখে শিরীন বলল, আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। কেমন আছেন?
মারুফ শিরীনের আওয়াজ শুনে বলল,ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
আলহামদুলিল্লাহ ,আল্লাহ যেমন রাখছে ভালোই রাখছে।
তুমি কেমন আছো?

আর বোন তোমার ভাবীর এখনো জ্ঞান ফিরেছে না তাড়াতাড়ি একটু
দেখোতো কি হয়েছে?

শিরীন মারুফের কথা শুনে বলে,জী ভাইয়া ভালো আছি।
আর আপনারা সবাই বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করেন আমি ভাবীকে চেকআপ করে দেখি ।

ডাঃ শিরীনের কথা শুনে মারুফ সবাইকে নিয়ে রুমের বাহিরে চলে আসে।

এদিকে ডাঃ শিরীন জেসিকার কপালে কাটা জায়গা পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করলো।
তারপর জেসিকার শরীর চেকআপ করলো।

চেকআপ করে কিছু একটা চিন্তা করে জেসিকার জ্ঞান ফিরাতে ওর হাতে ইনজেকশন পুশ করে দেয়।
জেসিকার শরীরে ইনজেকশন পুশ করার পর ডাঃ শিরীন রুমের বাহিরে আসে মারুফের সাথে কথা বলতে।

ডাঃ শিরীনকে বাহিরে আসতে দেখে মারুফ তার সামনে এসে দাঁড়ায় জেসিকার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে।

মারুফ ডাঃ শিরীনকে। বলল, বোন তোমার ভাবীর এখন কি অবস্থা?

ডাঃ শিরীন মারুফের কথা শুনে বলল, আসা করছি কিছুক্ষণের মধ্যেই ওনার জ্ঞান ফিরবে ।
তবে ভাইয়া একটা কথা ভাবীকে এভাবে আঘাত করা ঠিক হয়নি।
ব্যাপারটি যদিও আপনাদের পারিবারিক তারপরও রোগীর কথা চিন্তা করে আমাকে কথাটা বলতে হচ্ছে।
ভাবীর ফর্সা গালে হাতের ছাপ বসে গেছে।
কপালের একপাশে কেটে গেছে এভাবে একজন মেয়েকে আঘাত করা তো ঠিক না।
ডাঃ শিরীনের কথা শুনে মারুফের মনে হচ্ছে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে গেছে।

মারুফকে চুপচাপ দেখে শিরীন আবার বলে,মারুফ ভাই আপনার সম্পর্কে রাকিব ভাইয়ার কাছে যতটুকু শুনেছি আপনি খুবই নরম মনের মানুষ।
আঙ্কেল মারা যাবার পর থেকেই আপনি নিজে কষ্ট করছেন তবুও পরিবারের উপরে কখনো কোন কষ্টের ছাপ পড়তে দেননি।
কিন্তু এই মূহুর্তে ভাবীর অবস্থা দেখে সত্যিই আমি এটা ভেবে অবাক হয়ে যাচ্ছি ।
আপনি সেই মারুফ ভাইয়া কিনা!

ডাঃ শিরীনের কথা শুনে মারুফ কিছু বলার আগেই রাশেদ বলল,আপু ভাইয়ার এখানে কোনো দোষ নেই।
আপনি ভুল বুঝছেন।
ভাইয়া তো এতক্ষন বাসায় ছিল না তাই ভাবীর অবস্থা কিছুই জানে না।
পরিবারের একটু ভুল বুঝাবুঝির কারণে ভাবীর এমন অবস্থা হয়েছে।
কিন্তু আপু আপনি ভাববেন না ভাইয়া এসে গেছে তাই ভাবী ভাইয়াকে দেখলে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে যাবে।
আর ভাবীর খেয়াল রাখতে আমার ভাইয়া যথেষ্ট।

মারুফ মনে মনে বলল, জেসিকার গায়ে নিশ্চয় চাচী হাত তুলেছে।
আজকে এর একটা বিহিত করতেই হবে।
একবার আমার বৌয়ের জ্ঞানটা ফিরুক তারপর এ বিষয়ে কথা বলবো।
অনেক অন্যায় হয়েছে ওর প্রতি আর কোনো অন্যায় মেনে নিবো না।

ডাঃ শিরীন মারুফের সাথে কথা বলে জেসিকার কাছে আসে।
এসে দেখে জেসিকার জ্ঞান ফিরেছে মাত্র।
জেসিকা নিজের রুমে অপরিচিত একজন মেয়েকে দেখে বিচলিত হয়ে যায়।

ডাঃ শিরীন জেসিকার কাছে বসে নিজের পরিচয় দেয়।

আর বলে সবাই রুমের বাহিরে আছে ।
জেসিকাকে বিশ্রাম করতে বলল আর কোনো বিষয়ে চিন্তিত হতে নিষেধ করে।

জেসিকা ডাক্তারের কথা শুনে চুপচাপ শুয়ে আছে।

জেসিকার দিকে তাকিয়ে ডাঃ শিরীন জেসিকাকে ওর শরীরে কোন কোন বিষয়ে সমস্যা আছে তা ওর কাছে জানতে চায়।

জেসিকা ডাক্তারে কথা শুনে বলল, আপু আমি কিছু খেতে পারি না, খাবার দেখলে নাখে গন্ধ ভেসে আসে।
শরীর দূর্বল লাগে ,মাথা ঘুরিয়ে উঠে।

ডাঃ শিরীন জেসিকার কাছে ওর সমস্যার কথা শুনে ওর হাতে ছোট একটি প্যাকেট দিয়ে ওয়াশ রুমে পাঠায়।
এবং প্যাকেটের গায়ে লেখা নিয়ম অনুযায়ী সব করতে বলে দেয়।

জেসিকার ডাঃ শিরীনের কথা অনুযায়ী সব করা শেষ হলে প্রেগনেন্সির কিট হাতে নিয়ে রুমে আসে।
জেসিকার কাছে থেকে ডাঃ শিরীন কিটটা নিয়ে নেয়।
জেসিকার সাথে এ বিষয়ে ডাঃ শিরীন আরও কিছুক্ষণ কথা বলেন।

জেসিকার কথা বলার পর ডাঃ শিরীন সবাই ভিতরে আসতে বলল।

মারুফ ভিতরে এসে জেসিকার কাছে গিয়ে কপালে চুমু দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, সোনা তোমার অবস্থা দেখে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছি।
আমার কথা ভেবে হলেও তোমার নিজের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত ।
জেসিকা মারুফের কথা শুনে মুচকি হেসে বলল, হম,তা ঠিক।
তবে চিন্তা নেই আমি এতো যলদি মরবো না।

মারুফ জেসিকার কথা শুনে ওর দিকে রেগে তাকিয়ে বললো,সবাই বাহিরে যাক তারপর এ কথার জন্য তোমাকে শাস্তি দিবো মনে রেখো।
জেসিকা ও মারুফ নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।

এরমধ্যে চাঁদনী বানু রুমের ভিতরে এসেই ডাঃ শিরীনকে উদ্দেশ্য করে বলে, নাতনি নাত বৌয়েরে দেখা শেষ হলে খেতো আসো।
তোমার ভাবী হাতের রান্না না খেলে আফসোস করবে।

ডাঃ শিরীন চাঁদনী বানুর কথা শুনে মুচকি হেসে বলল, দাদু আজকে তো না খেয়ে যাচ্ছিই না।
তবে যায় খাওয়ান তার সাথে কিন্তু মিষ্টি খাওয়াতে হবে।

মারুফ শিরীনের কথা শুনে বলল, বোন সামান্য মিষ্টি খাবে ভাই আনবে না তা হয়।
এই রাশেদ যা তো দোকানে থেকে আমাদের ডাঃ শিরীন আপুর জন্য মিষ্টি নিয়ে আয়।

রাশেদ যেতে নিলে শিরীন বলল, রাশেদ দাঁড়াও কি জন্য মিষ্টি খাবো তা তো জেনে যাও!

শিরীনের কথা শুনে রাশেদ দাঁড়িয়ে গেল।

এদিকে শিরীন মারুফের দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইয়া একটা খুশির খবর আছে ।
আপনি বাবা হচ্ছেন আর ভাবী মা।
শিরীনের কথা শুনে মারুফ চমকে উঠে।
তা দেখে শিরীন বললো,ভাবী প্রেগন্যান্ট ।

রাশেদ খবরটি শুনেই ইয়াহু বলে চিৎকার দিলো।
এরপর শিরীনকে বলল,আপু আপনি একটু অপেক্ষা করেন আমি ছোট বাবা হচ্ছি আর আপনাকে মিষ্টি না খাওয়ালে চলে আমি এক্ষণি মিষ্টি নিয়ে আসছি।
কথাটা বলে রাশেদ দেরি না করে মিষ্টি আনতে চলে যায়।

রাশেদ যাওয়ার পর মারুফ কোমলকে জেসিকার জন্য খাবার নিতে পাঠিয়ে দিল।

আসলে মারুফ কোমলের সামনে পিরিয়ড নিয়ে শিরীনের সাথে আলাপ করতে চায়নি।
তাই ওকে এখানে থেকে সরিয়ে দিল।

কোমল যাওয়ার পরে মারুফ শিরীনের দিকে তাকিয়ে শব্দ করেই বলল , শিরীন এটা কী করে সম্ভব?
জেসিকা মারুফের কী শুনে কান চেপে ধরেছে।

মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে শিরীনকে বলল, এই তো কয়েকদিন আগেই ওর পিরিয়ড হয়েছে তাহলে প্রেগন্যান্ট হয় কী করে?

আর আমি যতদূর জানি কনসিভ করার পরে নিচের পক্ষে ২৮ দিনের পর ছাড়া জানা যায় না।
মারুফের কথা শুনে শিরীন বললো, ভাইয়া জেসিকা ভাবীর পিরিয়ড হয়নি ।
ভাবী যেটা পিরিয়ড মনে করেছিলো এটাকে স্পার্টি বলে।

গর্ভাবস্থায় খুব কম মহিলাদের এমন রক্তক্ষরণ হয়।
যেটা এক বা দুই দিন থাকে অনেকে সেটা ভুল করে পিরিয়ড ভাবে।

এটা সাধারণত হরমোনের সমস্যা হলে বা আরও অনেক কারণেই হতে পারে।
অনেকের তো রক্তক্ষরণ বেশি হলে মিসক্যারেজ হয়ে যায়।

মারুফ শিরীনের কথা শুনে বলল, তাহলে আমাদের বাবু এখনও কী ঠিক আছে ?

শিরীন মারুফের কথা শুনে বলল,হ্যাঁ, তবে ভাবীর বিশেষ যত্ন নিতে হবে ।
তাকে দুই মাস সম্পূর্ণ বেডরেষ্টে থাকতে হবে।
আর হসপিটালে এসে দুই একদিনের মধ্যেই কিছু টেস্ট করতে হবে দেখার জন্য সব পুরোপুরিভাবে ঠিক আছে কিনা।
আর এ সময় ভাবীকে মানসিক ও শারীরিক সুস্থ থাকাটা জরুরি।
মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে শিরীনকে বলল, আল্লাহ সহায় হলে জেসিকা এবং আমার বাচ্চার কোনো ক্ষতি হবে না।
মায়া খবরটি শুনে জেসিকা কাছে গিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলল,মা, আমার অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করার জন্য কি চাস আমার কাছে?
জেসিকা ওর শ্বাশুড়ির হাত ঠোঁটের কাছে নিয়ে চুমু খেয়ে বলল, তোমার দোয়া চাই আম্মু।
এছাড়া আমার আর কিছু লাগবে না।
চাঁদনী বানু খবরটা শুনে খুশিতে নিজের গলার চেইন খুলে জেসিকাকে পরিয়ে দিতে নিলে মারুফ বাঁধা দেয়।
মারুফ চাঁদনী বানুরকে বলল, দাদু এটা রেখে দাও ।
চাচ্চুর মেয়েদের বাচ্চা
হলে দিয়ো।
কারণ তারা তো আবার তোমার একমাত্র দায়িত্ব।
আমরা না তাইতো ছোট থেকেই দেখে আসছি চাচ্চু এবং তার পরিবারের দিকে তোমার বিশেষ নজর ।
মারুফ ওর দাদুর সাথে কথা বলছিলো এরমধ্যে কোমল জেসিকার জন্য প্লেটে খাবার নিয়ে এলো।

মারুফ ওর দাদুর সাথে কথা বলা শেষ করে ।
মারুফ কোমলের হাতে খাবার দেখে হাত ধুতে ওয়াশ রুমে গেলো।

চাঁদনী বানু মারুফকে কথা শুনে জমে গেছে।
হয়তো এবার বেশি হয়ে গেছে নাহলে মারুফ এমন কথা বলতো না।
মায়া বেগম শিরীকে নিয়ে বাহিরে এসে তাকে জোর করেই খেতে বসায়।

অন্যদিকে মারুফ ওয়াশ রুমে থেকে হাত মুখ ধুয়ে আসলো।

জেসিকা খাবার দেখে ওয়াক ওয়াক শুরু করে দিয়েছে।
মারুফ জেসিকার অবস্থা দেখে বলল,লক্ষীটি কষ্ট করে হলেও অল্প একটু খাও।
তারপর মারুফ ভাতে লেবুর রস দিয়ে মেখে জেসিকাকে খাওয়াচ্ছে ,
আর নিজেও খাচ্ছে।

ওদের খাওয়া শেষ হলে মারুফ জেসিকার মুখ ধুয়ে দিল।

এরপর জেসিকাকে বুকে ভিতরে চেপে ধরে আছে।
সে বাবা হবে খবরটা শুনার পরে থেকে জেসিকাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে মন অস্থির হয়ে ছিল।
এখন বুকে নিতে পেরে কিছুটা শান্তি পাচ্ছে।
জেসিকার শরীরের অবস্থা দেখে মারুফের দুচোখে পানি টলটল করছে।

অন্যদিকে জেসিকার শরীর ক্লান্ত থাকায় মারুফের বুকের মধ্যে যাওয়ার পরেই ঘুমিয়ে গেছে।
মারুফ জেসিকার সারা শব্দ না পেয়ে জেসিকার দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমিয়ে আছে।
ঘুমে দেখে মারুফ আস্তে করে জেসিকাকে বুকে থেকে নামিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়।
মারুফ জেসিকার ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর জেসিকার কপালে,গালে চুমু দেয়।

চুমু দিয়ে মনে মনে বলল, আজকে কি কারণে আমার বৌয়ের শরীরে হাত তুলা হয়েছে তা আমায় জানতেই হবে?
কথাটা ভেবে মারুফ রুমে থেকে বের হয়ে আসে।

রাশেদ আরো আগেই মিষ্টি নিয়ে এসেছে।
মিষ্টি নিয়ে জেসিকাকে খাওয়াতে গেলে মারুফ জানায় জেসিকা ঘুমিয়ে গেছে।
ভাইয়ের কাছে কথাটা শুনে ভাবীকে আর বিরক্ত করতে ওদিকে যায়নি।

এদিকে শিরীন খাওয়া দাওয়া শেষ করে যেতে নিলে মারুফের মা ওর হাতে এক প্যাকেট মিষ্টি দিয়ে দেয় ।
শিরীন নিতে না চায়লে জোর করে মায়া বেগম দিয়ে দেয়।
শিরীন যাওয়ার পরে মারুফ সবাইকে ড্রইং রুমে ডাকে।

সবাই ড্রইং রুমে আসার পর সবাইকে জিজ্ঞেস করে
জেসিকার গায়ে কেন হাত তুলা হয়েছে ?
মারুফের কথা শুনে রাশেদ ও কোমল আজকের পুরো ঘটনা ভাইকে খুলে বলে।

মারুফ ওদের সব কথা শুনে রাগ উঠে গেছে।
মারুফের চোখ দেখে মনে হচ্ছে আগুন জ্বলছে।
সেই আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

মারুফের রাগ খেয়াল না করেই রেশমা বলল, ভাইয়া ঝর্নাকে তুমি কোথায় থেকে নিয়ে এলে?

রেশমার কথাটা বলতে দেরী হয়েছে মারুফের হাত উঠতে দেরি হয়নি।
সবাই স্তব্ধ হয়ে গেছে।

রেশমা মারুফের হাতে থাপ্পর খেয়ে হতভম্ব হয়ে গেছে।

মারুফ রেশমাকে উদ্দেশ্য করে বল, ঝর্নার বিষয়ে পরে কথা বলছি।
আগের হিসেব আগেই করে নেয়।
রেশমা মারুফের দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইয়া তুমি আমার গায়ে হাত তুলতে পারলে?

রেশমার কথা শুনে মারুফ বলল,আমি তোর মতো মেয়ের ভাই না।
যে মেয়ে বড় ভাইয়ের স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে পারে ।
আমি তার মতো জঘন্য মানুষের ভাই হতেই পারি না।

এরপর মারুফ চাঁদনী বানুকে উদ্দেশ্য করে বলে,দাদু আমার মা এবং বৌ আপনার ছোট ছেলের পরিবারের দাসী না।
তাদের সাথে যেমন ইচ্ছে তেমন ব্যবহার করবে।

তাই একটা কথা সবাইকে বলছি আজকে এই মূহুর্তে থেকে আমার এবং চাচ্চুর পরিবার আলাদা।
আগামী কালকে থেকে দুই পরিবারের আলাদা রান্না হবে।
আর কেউ এমন করতে বাঁধা দিলে আমি আমার পরিবারকে নিয়ে এ বাড়িতে থেকে একবারের জন্য চলে যাব।

চাঁদনী বানু মারুফকে কথা শুনে বলল দাদু ভাই এসব কি বলছো?

মারুফ তার দাদুর কথা শুনে বলল, রেশমা এবং চাচীর অধঃপতন হয়েছে তোমার লায় পেয়ে তাই এ বিষয়ে আমাকে ভুলেও ,,,

নোটঃ শান্ত মানুষ সহজে রাগে না তবে একবার রাগলে তাদের সহজে বাগে আনা যায় না।
ছোট ছোট অন্যায় কাজের শাসন না করলে বড় অন্যায় করতে সাহস পেয়ে যায়।
যেমন , রেশমাকে আগে থেকেই শাসন করলে ভাবীর গায়ে হাত তুলতে সাহস হতো না।
অপরাধের শাস্তি সবাইকে পেতে হয় দুইদিন আগে বা পরে।

,,,,

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমার লেখা যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে লাইক ও কমেন্ট করে সাথে থাকবেন।

লেখা সম্পূর্ণ হলে এমনিতেই গল্প দিবো নেক্সট বলা লাগবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here