গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ৩১।
লেখাঃ #মেহের।

জেসিকা ঝর্নাকে বোনের মত ভালবাসে।
তারপরও যদি চাচী শাশুড়ির কাছে এসব কথা শুনতে হয়।
তখন, মনটা আসলেই খারাপ হয়ে যায়।
সেজন্য জেসিকার মন খারাপ ছিল।

জেসিকার মন খারাপ দেখে মায়া বেগম বললেন,শুনো বৌমা ছোটর কথায় মন খারাপ করো না।
ও মনের দিক থেকে খারাপ না শুধু একটু রাগ বেশি এই যা।
রাগ উঠলে ভালো মন্দ ভেবে কথা বলে না।
তুমি ওঁর কথায় কষ্ট পেও না মা।

জেসিকা শাশুড়ির কথা শুনে বলল,আম্মু আপনি চিন্তা করবেন না তো আমি চাচীর কথাতে মোটেও কষ্ট পায়নি।

মায়া বেগম জেসিকার কথা শুনে বলল,এই তো লক্ষী মায়ের মত কথা।
আচ্ছা তুমি নাকি অসুস্থ্য মারুফ সকালে বলল!
আর দেখতেও তোমাকে কেমন ক্লান্ত ক্লান্ত লাগছে তা কি হয়েছে তোমার ?

জেসিকা শাশুড়ির কথা শুনে লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।
ওঁর শরীর কেন খারাপ হয়েছে তা কি শাশুড়ি কে আদৌও বলার বিষয়।
কি দরকার ছিল মারুফের শাশুড়ি মায়ের কাছে অসুস্থ্য কথাটা বলার এখন জেসিকা কি উত্তর দিবে!
শাশুড়িকে কি বলবে তা ভেবে পাচ্ছে না !
এরমধ্যে ওঁর শাশুড়ি বলল,কি হয়েছে মা বললে না।

শাশুড়ির কথা শুনে জেসিকা আমতা আমতা করে বলল,আম্মু ভোর রাতে হালকা জ্বর এসেছিল আমার তাই হয়তো আপনার ছেলে অসুস্থ্যর কথাটা বলছে।
মায়া বেগম জেসিকার কথা শুনে তড়িগড়ি করে ওঁর কপালে হাত দিল জ্বর এখনো আছে কিনা তা দেখার জন্য।
কপালের হাত দিয়ে দেখে হালকা গরম আছে।

তা দেখে মায়া বেগম জেসিকাকে কড়া ভাষায় আজকে কোন পানির কাজ করতে নিষেধ করল।

শুধু শুকনো কাজ করতে বলল।
এবং জেসিকার সামনেই বুয়াকে ডেকে বলল,তোর ভাবীর শরীর অসুস্থ্য তাই রান্নার সময়ে কাটা,বাছা এবং ধোঁয়ার কাজ করে দিস।
বুয়া মায়া বেগমের কথা শুনে বলল,খালাম্মা আপনি চিন্তা করবেন না তো আমি আছি তো নাকি?
বুয়ার সাথে কথা শেষ হতেই
মায়া বেগম জেসিকাকে আবারো সাবধান করে চাঁদনী বানু কাছে গেল।

শাশুড়ি চলে গেল জেসিকা রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।
আজকে রান্নার আয়োজন কম তাই বেশি দেরি লাগবে না।
নারিকেল দিয়ে চিংড়ি ভাপে,গরুর গোশত ভুনা, বড়ই দিয়ে টক ডাল এবং ফুলকপি বাঁধাকপি গাজর, আলুর সাথে সামান্য পালংশাক দিয়ে সবজি করবে।
জেসিকার মাঝে মাঝে ভাবতে অবাক লাগে বিয়ের পরেও সে কোন রান্না করতে জানতো না।
আর আজকে দিনে এসে মোটামুটি সবকিছুই রান্না করতে পারে।
আর এসব কিছু হয়েছে ওঁর চেষ্টায় ।
মানুষ চেষ্টা করলে কি না পারে।

মায়া বেগম চাঁদনী বানুর কাছে গিয়ে বলল, আম্মা আপনি কিছু খাবেন এনে দিবো?
চাঁদনী বানু মায়া বেগমের কথা শুনে বলল,তা বাফু তোমার এতক্ষণে মনে হয়েছে আমার কিছু দরকার কি না?

মায়া বেগম শাশুড়ির কথা শুনে বলল, ইয়ে আম্মা ভুল হয়ে গেছে আমার আরও আগেই আপনার কাছে আসা উচিত ছিল।

চাঁদনী বানু মায়া বেগমের কথা শুনে বলল, হয়েছে এখন এসব ঢং বাদ দিয়ে আমার চুলে বিলি কেটে দাও তো।
মায়া বেগম বলল, এখনেই দিচ্ছি আম্মা।
মায়া বেগম শাশুড়ির চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলো সে সময় চাঁদনী বানু বলে, জেসিকাকে বিলি কেটে দেওয়ার কথা কখনো তো বলতে হয়না।
কিন্তু আমার বেলায় সব বলে করাতে হয় কি ভালো ভাগ্য আমার।

চাঁদনী বানুর কথা শুনে মায়া বেগমের হাসি পেয়ে গেল।
কিন্তু শাশুড়ির ভয়ে হাঁসার সাহস দেখাইনি।

মায়া বেগম মনে মনে বলল, মানুষ ঠিকই বলে, বুড়ো হয়লে মানুষের স্বভাব চরিত্র বাচ্চাদের মত হয়ে যায়।
তা না হলে ভাবা যায় তার শাশুড়ি জেসিকাকে হিংসা করছে।
তাও সামান্য চুলে বিলি কেটে দেওয়াতে।
এদিকে চাঁদনী বানু ভাবছে তার বড় বৌয়ের মত মেয়ে হয়না।

তাইতো চাঁদনী বানু মায়া বেগমকে দোলার থেকেও বেশি ভালো বাসে।
কারণ বউ হয়ে আসার পরে থেকে মায়া বেগম কখনো তার অবাধ্য হয়নি।
চাঁদনী বানুকে মায়ের মত সম্মান ও ভালোবাসা দিয়েছে।
সংসারের পিছনে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছে।
ইসহাককে ছোট ভাইয়ের মত দেখেছে, দোলাকে ঝাল না ভেবে ছোট বোন মত রেখেছে।
নিজের এবং ঝালের ছেলে মেয়েদের মাঝে কখনো তফাৎ করেনি।
এমন ছেলের বৌ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
এসব ভাবতে ভাবতেই চাঁদনী একসময় বানু ঘুমিয়ে গেছে।

চাঁদনী বানু ঘুমানোর আগেই মায়া বেগমকে বলেছে তিনি ঘুমিয়ে গেলে যেন মায়া বেগম চলে যায়।

মায়া বেগম শাশুড়ি ঘুমিয়ে গেছে দেখে তার রুমে থেকে বাহিরে আসে।
এসে দেখে মারুফ বাজার নিয়ে মাত্র এসেছে।
বাজার করতে যেয়ে ছেলেটার ঘামিয়ে নাজেহাল অবস্থা।

মারুফ বাজার থেকে আনা জিনিস পত্রগুলো মাকে এবং চাচীকে দেখিয়ে বলল, আরও কিছু বাকি আছে কিনা তা বলতে।

মারুফের চাচী বলল, মারুফ বাবা দুধ তো আনতে মনে হয় ভুলেই গেছ?
মারুফ দোলা চাচীর কথা শুনে বলল, না চাচী ভুলিনি।
রাজুকে কালকে সকালে আট কেজি গরুর দুধ বাসায় দিতে বলেছি।

নভেম্বর মাসে বেশি গরম না হলেও মারুফ বাজার করতে গিয়ে ঘেমে জুবজবে হয়ে গেছে।
মারুফের মা ছেলের ঘেমে জুবজবে অবস্থা দেখে বলল, বাবা সরবত দেয় ।
মারুফ মায়ের কথা শুনে বলল, ঠিক আছে দাও। এই ফাঁকে আমি হাত মুখ ধুয়ে ফেলি‌।

মা তুমি সরবতটা জেসিকাকে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলেই হবে।

কথাটা বলে মারুফ রুমে চলে গেল।

মারুফের সাথে কথা শেষ করে মায়া বেগম রান্না ঘরে গেল।
সেখানে গিয়ে দেখে জেসিকা রান্নায় ব্যস্ত হয়ে আছে।

জেসিকা ওঁর শাশুড়িকে বলল, আম্মু কিছু লাগবে?

জেসিকার কথা শুনে মায়া বেগম বলল, মারুফ বাজার নিয়ে এসেছে।
জানিস মা ছেলেটা আমার ঘেমেনেয়ে যা তা অবস্থা হয়েছে।

জেসিকা কথাটা শুনে বলল, আম্মু তাহলে ওনাকে সরবত দিয়ে আসি।

মায়া বেগম বললেন,যা দিয়ে আয় মা।
আমি এদিকে দেখছি।
জেসিকা লেবুর রস ,চিনি ও এক চিমটি লবণ মিশিয়ে সরবত বানিয়ে মারুফের জন্য নিয়ে যায়।

মারুফ হাত মুখ ধুয়ে তোয়ালে ভিজিয়ে শরীর মুছে নিল।
এরপর তোয়ালে বারান্দায় মেলে দিয়ে বিছানার বসেছে।

জেসিকা মারুফের জন্য সরবত নিয়ে রুমে এসে দেখে মারুফ বিছানায় খালি গায়ে বসে আছে।
হঠাৎ করে জেসিকা মারুফকে খালি গায়ে দেখে লজ্জা পেল।

জেসিকা আস্তে আস্তে মারুফের কাছে গিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে সরবত এগিয়ে দিয়ে বলল,এই নিন।

মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে বলল, সোনা তুমি নিচে কি দেখছো?
আমি তো বিছানায় বসে আছি।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, রান্না চুলায় বসিয়ে এসেছি তো।
সরবতটা এগিয়ে দিয়ে বলে,আপনি নিন আমি রান্না করতে যায় ।
মারুফ জেসিকাকে ইশারায় ঠোঁট দেখিয়ে বলে, আমি তো নিতেই চায় তুমিই তো দিতে চাও না।

জেসিকা মারুফের ইশারা বুঝতে পেরে বলল, সবসময় আমাকে লজ্জা দিতে আপনার ভালো লাগে তাই না?

মারুফ জেসিকার কথা শুনে কিছু না বলে জেসিকার হাতে থেকে একহাত দিয়ে সরবত নিল অন্য হাত দিয়ে জেসিকার হাত ধরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
তারপর মারুফ গ্লাসে চুমুক দিয়ে অর্ধেক সরবত নিজে খেলো আর অর্ধেকটা জেসিকাকে জোর করে খাওয়ালো।

সরবত শেষ করে জেসিকা উঠতে নিলে মারুফ বাঁধা দেয়।
জেসিকা কিছু বুঝার আগেই ওঁর ওষ্ঠ দখল করে নেয়।

মারুফের এমন আচমকা আক্রমনে জেসিকার বেহাল দশা।
এদিকে মারুফ জেসিকার ওষ্ঠের সুধা পানে বাস্ত।
অন্যদিকে মারুফের ওষ্ঠের ছোঁয়া পেয়ে জেসিকা ঘোরের মাঝেই মারুফের পিঠে খামচে ধরলো।
দুজনে এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর মারুফ জেসিকার ওষ্ঠ ছেড়ে দিল।

ওষ্ঠ ছাড়ার পর জেসিকা ও মারুফ দুজনে হাঁপাতে লাগলো।

আরেকটু হলেই বোধহয় দমবন্ধ হয়ে যেতো জেসিকার।

জেসিকা মারুফকে কপট রাগ দেখিয়ে বললো, আরেকটু হলেই তো আমার দমবন্ধ হয়ে যেতো।

মারুফ জেসিকাকে বুকে নিয়ে জরিয়ে ধরে বলল, দমবন্ধ হতে দিলে তো।
বৌ দেখো তুমি আমার পিঠে কি অবস্থা করেছো।
আমি কি তোমাকে এজন্যই কিছু বলেছি বলো।
আর তুমি আমার ওষ্ঠের ছোঁয়ায় সহ্য করতে পারছো না।

দেখে সোনা কালকে রাতে খামচে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো এখনতো কয়টা বাজিয়েছো তা আল্লাহ মালুম।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে নিজেকে মারুফের বাহুডোরে থেকে ছাড়িয়ে ওঁর পিঠের কাছে গিয়ে দেখে আসলেই সারা পিঠে আচরের দাগগুলো লাল হয়ে গেছে।
তা দেখে জেসিকা মন খারাপ করে বলল,সরি ভুল হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারিনি এমন হবে।

আপনি বসুন আমি এখুনি মলম দিয়ে দিচ্ছি।

জেসিকার কথা শুনে মারুফ জেসিকাকে জরিয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,চুপ পাগলি ।
আমি তো দুষ্টুমি করেছি আর পিঠের দাগের কথা বলছো এগুলো আমাকে দেওয়া তোমার ভালোবাসার উপহার।
মানে ভালোবাসা চিহ্ন বুঝতে পারছ।

জেসিকা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বুঝায়।
মারুফ জেসিকাকে জরিয়ে
ধরেই বলল,বৌ তুমি আমায় আজকে থেকে মানে এখন থেকেই তুমি করে বলবে মনে থাকে যেনো।

নাহলে শাস্তি স্বরুপ আমি তোমার ঠোঁট লাল করে ফেলবো।

জেসিকা মারুফকে বলল,আমার দেরি দেখে আম্মু কি মনে করছে বলেন তো?

মারুফ জেসিকার কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলল তোমার কোন টালবাহানা চলবে না গো সোনা।
জেসিকা মারুফের সাথে কথায় না পেরে বলল,এই ছাড়ো না।
মারুফ মুচকি হেসে জেসিকার কপালে চুমু দিয়ে ছেড়ে দিয়ে বলল, আমার সোনা জাদুটা।
জেসিকা মারুফের কাছে থেকে ছাড়া পেয়ে চলে যায়।

মায়া বেগম জেসিকার মুখ দেখেই বুঝতে পারছে আসতে দেরি হয়েছে তাই বৌমা তলজ্জা পাচ্ছিল।
সেজন্য মায়া বেগম দেরি হওয়ায় জন্য জেসিকা কে কিছু বলল না।

মায়া বেগম বুঝতে পারছে তার ছেলে জেসিকার ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে।
এখন আর ছেলেকে নিয়ে তার কোন চিন্তা নেই।
ছেলে মেয়ে সুখে থাকলে মা বাবাও শান্তি তে থাকে।

পরেরদিন

দুপুরের দিকে ঝর্নাকে দেখতে পাত্র পক্ষেরা এসেছে।

চাঁদনী বানু তাদের বলল,পাত্রী দেখার আগেই খাওয়া দাওয়া করে নিতে।
তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে না হয়
ধীরে সুস্থে তার নাতিকে দেখতে পারবে।

রাশেদ,এবং মারুফ মেহমানদের খেয়াল রাখছে।
জেসিকা শুধু খাওয়ানোর সময় এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছিলো।

এদিকে ঝর্না ও কোমল সমবয়সী হওয়ায় ।
কোমলকে তাদের সামনে আসতে নিষেধ করেছে মারুফ।
তার কথা এমন অনেক হয়েছে একজনকে দেখতে এসে অন্যজনকে পছন্দ করেছে।
তাই কোমলকে আজকে এসব থেকে দূরে রেখেছে।

অন্যদিকে পাত্র দেখার পরে থেকে জেসিকার কাছে মনে হয়েছে পাত্রের বয়স ঝর্নার তুলনায় বেশি মনে হচ্ছে।

কিন্তু দোলা চাচীর ভয়ে কথাটা বলতে সাহসে পায়নি।
তাদের খাওয়া দাওয়া‌ শেষ হলে জেসিকা সবার হাতে এক এক করে ফিরনির বাটি তুলে
দিচ্ছিল।

সে সময় জেসিকা পাত্রের ভাইয়ের হাতে ফিরনি বাটি দেওয়ার সময় ছেলেটি ইচ্ছে করে বাটি নেওয়ার বাহানায় জেসিকা হাত ছুঁয়ে দেয়।

ছেলেটির এমন ব্যাবহারে জেসিকার রাগ উঠে যাচ্ছিলো ।
জেসিকা খেয়াল করছে এ বাসায় আসার পরে থেকেই ছেলেটা ওকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিল।
তাদের খাওয়ার সময়ও ছেলেটা জেসিকার দিকে কেমন করে তাকিয়ে ছিল।
এই লোকটা দোলা চাচীর আত্মীয় না হলে আজকে ছেলেটাকে শিক্ষা দিয়ে ছাড়তো।
এসব ভাবছিল সে সময়ে ছেলেটা উঠার বাহানায় জেসিকার সাথে ধাক্কা,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here