গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ২৯
লেখাঃ #মেহের।

কালকে রাতে সবাই জেগে ছিল
তাই আজকে তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে যায়।
জেসিকা সবকিছু গুছিয়ে রুমে আসলো।
রুমে এসে দেখে মারুফ ঘুমিয়ে গেছে।
জেসিকা ভেবেছে আজকে মারুফের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করবে।
কিন্তু জেসিকার কাজে শেষ হতে একটু দেরি হয়ে গেছে তাই আজকে আর গল্প করা হলোনা।
মারুফকে ঘুমানো দেখে জেসিকা মনে মনে বলল,
কালকে থেকে মারুফের শরীরের উপর অনেক ধকল গেছে সেজন্য হয়তো আমি আসার আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
আর ডাক্তার আঙ্কেলও তো বলেছে মারুফের রেস্টের দরকার তাই জেসিকা মারুফকে বিরক্ত না করে চুপচাপ মারুফের পাশে মিশে শুয়ে পরল।

আজকে মারুফের জেসিকা উঠার আগেই আযানের ধ্বনি শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়।
মারুফ ঘুম ভেঙ্গে নড়তে গিয়ে কিছুতে বাঁধা পেলো।
বাঁধার উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখে জেসিকা মারুফকে পাসবালিশের মতো করে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে।

নিজের এ অবস্থা দেখে মারুফ ডিম লাইটের আলোতে জেসিকার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

মারুফের কাছে এই আলো আঁধারিতে জেসিকাকে ঘুমন্ত অবস্থায় অপূর্ব সুন্দর লাগছে।
মারুফ চোখ ফেরাতে পারছে না।
ভালোবাসার দৃষ্টিতে মারুফ জেসিকার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে
মনে মনে ভাবলো, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করে।
নাহলে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে বাড়িতে থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে থাকতে হয়েছে বলেই তো জেসিকার মনের খবর জানতে পারলাম।
নাহলে তো জানা হতো না আমার স্ত্রীর মনে এখনো আমার জন্য ভালোবাসা আছে।

আমিতো ভেবেছি জেসিকার মনে আমার প্রতি অভিযোগ এবং অভিমান ছাড়া আর কিছুই নেই।
হঠাৎ করে এই অল্পক্ষণের দুরত্বে সেসব ধারণা যে কত ভুল ছিল তা তো আমার জানা হলো আর আমাকে কতটুকু ভালোবাসে তা জেসিকার মনে আকুলতা দেখেই বোঝা যায়।

এসব চিন্তা ভাবনা করে
মারুফের মনে হয় ভোরের এই স্নিগ্ধ পরিবেশে ভালোবেসে প্রিয়তমাকে শুদ্ধতার স্পর্শ দিলে মন্দ হয়না।
এটা ভেবে মারুফ জেসিকার আরেকটু কাছে গিয়ে কপালে শুদ্ধতার স্পর্শ একে দিয়ে আলতো করে জেসিকার বুকে নিজের মাথা রেখে শুয়ে ওঁর আঙ্গুল দিয়ে জেসিকার হাতে আঁকি ঝুঁকি করছে।

হঠাৎ ঘুমের মধ্যে জেসিকার মনে হচ্ছে ওঁর হাতে কেউ আঙ্গুল দিয়ে রেখা আঁকছে। তাতে ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে ভুত ভুত বলে ,চিৎকার করে উঠল।

মারুফ জেসিকার চিৎকার শুনে তাড়াহুড়ো করে বলে,বৌ চিৎকার করো না তাহলে এই ভোর রাতে সবাই এখানে এসে পরবে।
তখন লজ্জায় মাথা কাটা যাবে।

জেসিকা মারুফের কথার আওয়াজ শুনে ভীতু কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল,কে যেনো আমার হাতে রেখা এঁকেছে।
সেজন্যই তো আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
মারুফ মুচকি হেসে বলল,পাগলি তোমার আশেপাশের আমি ছাড়া আর কার সাহস আছে তোমার কাছে আসার?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বুঝতে পারছে তার সাথে এতক্ষণ মারুফ দুষ্টুমি করেছে।

তাই জেসিকা মুখে কপট রাগ দেখিয়ে চোখ পাকিয়ে শাসনের সুরে বলল, ঘুমের মধ্যে এমন কেউ করে?
এখন ভয় পেয়ে যদি হার্ট এ্যটাক মারা যেতাম তাহলে কি করতেন!
আমি ভয় পেয়ে মরলে তখন কি ভালো হতো !

জেসিকা কথা শুনে মারুফ গম্ভীর হয়ে বলল, তোমার সাহস তো কম নয় উল্টাপাল্টা কথা বলো!
তোমার জানা নেই এই সামান্য কারণে কেউ ভয় পেয়ে হার্ট এ্যটাক করে না?

মারুফ জেসিকাকে একথা বলল।
তারপর নিজে একা একা বিরবির করে বলল,আজব পাবলিক চেঁচামেচি করে আমার রোমান্টিক মুডটা নষ্ট করে দিল।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
সে কিভাবে মারুফের রোমান্টিক মুড নষ্ট করল তাই বুঝতে পারছে না!

জেসিকা কি নষ্ট করেছে তা মারুফকে জিজ্ঞেস করবে এমন সময় মারুফ বলল,বৌ দেরি হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি উঠ।
নামাযের ওয়াক্ত চলে যাবে।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে চটজলদি উঠে গেল।
এরপর ওয়াশরুমের গিয়ে ওযু করে আসছে।

শরীর কিছুটা দুর্বল সেজন্য আজকে মারুফ মসজিদে যায়নি তাই দুজনে একসাথে নিজের রুমে নামায পড়ল।

নামায পড়া শেষ হলে জেসিকা বলল, আপনাকে কি চা করে দিব?

মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল,চা দিলে মন্দ হয়না।
মাথাটা একটু ঝিম ঝিম করছে।
চা খেলে মনে হয় একটু কমবে।

এ কথা শুনে জেসিকা রান্না ঘরে গেল।
এর কিছুক্ষণ পর চা নিয়ে এলো।
মারুফ চা একটু খেয়ে রেখে দিল।
মাথা ঝিমঝিম বেড়েছে তাই বিছানায় শুয়ে পরল।

জেসিকা মারুফের অবস্থা দেখে মারুফের কাছে গিয়ে মাথা টিপে দিচ্ছে ।
মারুফ আরাম পেয়ে পেয়ে চোখ বুজে আছে।
এমন একটি দিনের প্রত্যাশা তো মারুফ বিয়ের পর থেকে করেছে।
জেসিকার আচরণে এক সময় ভেবেছে স্ত্রীর কাছে থেকে এসব সুখ কখনো বোধহয় পাবে না।
তবে এতো জলদি জেসিকাকে দিয়ে মারুফের প্রত্যাশা পূরণ হবে তা ভাবতে পারিনি।

জেসিকা মারুফের মাথা হালকা করে টিপে দিচ্ছে মারুফ আরাম পেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।
জেসিকা মারুফের দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমিয়ে গেছে।
তাই জেসিকা মারুফকে পাশে থেকে আস্তে করে উঠে বিছানায় থেকে নেমে গেল।
সকালে সবার জন্য নাস্তা বানাতে হবে সেজন্য বিছানায় থেকে নেমেই রান্না ঘরে চলে গেল।

মারুফের জন্য জেসিকা অপেক্ষা করছে।

মারুফ সকাল এগারোটা বাজে দোকানে গেছে।
বাসার সবাই নিষেধ করেছে এই শরীরের বাহিরে না যেতে।
কিন্তু মারুফের দোকানে আজকে একটা বড় অর্ডার পাওয়ার কথা তাই মারুফকে যেতে হয়েছে।
দুপুরের দিকে মারুফের বাসায় আসার কথা থাকলেও ফোন করে বলে, কাজের চাপ আছে তাই বাসায় আসতে দেরি হবে।

এ কথা শুনে জেসিকা মারুফের খাবার নিয়ে লোক পাঠাতে বলে।
মারুফ দোকানে থেকে
এক জন ছেলেকে খাবার নিয়ে যেতে পাঠিয়ে দিল।

জেসিকা দোকানের ছেলেটার কাছে মারুফের জন্য দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে।
জেসিকা ভেবেই পাচ্ছে না মারুফ নিজের শরীরের খেয়াল না রেখে কিভাবে কাজে এমন মত্ত হতে পারে।

এমনিতেই শরীর দূর্বল তার মধ্যে এতোক্ষণ ধরে দোকানে বসে আছে।
আর দোকানের কর্মচারী
গুলোর‌ সাধারণ কমনসেন্সটুকু নেই।
নিজেরা একা কোন কাজ করতে পারে না মারুফকে ছাড়া।

জেসিকা যখন এসব ভাবছিল সে সময়ে দোলা এসে বলে, বৌমা কি করছো?
জেসিকা দোলাকে বলল, চাচী মা কিছু করছি না।

এমনিই বসে আছি।
কেন কিছু লাগবে?

জেসিকার কথা শুনে দোলা বলল, চলতো বড় ভাবীর রুমে শুক্রবার কী,কী আনতে হবে তার হিসেব করি।
সময়মত সব কিছু আনতে হবে তো।

জেসিকা দোলার কথা মত শাশুড়ির রুমে গেল।
চাঁদনী বানু ও মায়া বেগম দুজনে কী ,কী করলে ভালো হবে তা নিয়ে আলোচনা করছে।

জেসিকা যাওয়ার পর ওঁর কাছেও জিজ্ঞেস করে খাবার আইটেম কী কী করলে ভালো হবে?

জেসিকা তাদের কথা শুনেছে নিজের কিছু মতামত দিয়েছে।

এরপর চাঁদনী বানু কথা মত যা আনতে হবে তার লিষ্ট করেছে।
কথা বলতে বলতে কত সময় গিয়েছে তার বুঝতে পারে নায়।
অনেক রাত হয়ে গেছে।
সময় দেখা জেসিকা মায়া বেগমকে বলল আম্মু ওনি তো এখনও এলো না?
জেসিকা কথা বলে সেখানে থেকে আসতে নিবে সেসময় মারুফ ওখানে এসে বলল, সেই কখন বাসায় এসেছি সে খবর কারো আছে?
রাতের খেতে কি দেওয়ার ইচ্ছা নেই না কি?

জেসিকা মারুফের কথা শুনে বলল, আপনি এসেছেন বলবেন না!
ইস্ কতখানি দেরি হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি টেবিলে চলেন খেতে দেয়।
মারুফ জেসিকাকে খাবার সাজাতে বলে, চাঁদনী বানু ও মায়া বেগমকে নিয়ে খেতে আসে।

খাওয়া দাওয়া শেষ হলে মারুফ রাশেদের সাথে ওঁর রুমে যায়।
দুই ভাই একসাথে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিতে।

আর এদিকে জেসিকা কাজ শেষ হলে রুমে গিয়ে দেখে মারুফ এখনও রুমে আসেনি।

জেসিকা আজকে শাড়ি পরে মারুফকে চমকে দিতে চায়!
সেজন্য আলমিরা থেকে নীল শাড়ি ,ব্লাউজ ,অলংকার এবং আরও যা কিছু প্রয়োজনী জিনিস ছিল তা বের করে।
শাড়ি দেখে জেসিকার পছন্দ হয়েছে।
তাই চটজলদি শাড়ি পড়ে নেয়।

আর শাড়িটি জর্জেট হওয়ায় কুচি করতে সমস্যা হয়নি।
শাড়ি পড়া শেষ হলে জেসিকা সাজতে বসল।

আজকে প্রথম জেসিকা মারুফের জন্য নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত।

অন্যদিকে মারুফ রাশেদের সাথে গল্প শেষ হলে ওদের রুমের দিকে যাচ্ছে।
কিন্তু দরজায় সামনে দাঁড়িয়ে দেখে রুমে ডিম লাইট জ্বালিয়ে রাখা দেখে মারুফ ভেবেছে জেসিকা ঘুমিয়ে গেছে।
তাই মারুফ কোন শব্দ না করে আস্তে আস্তে রুমে ঢুকলো।

রুমে ঢুকে মারুফের মনে হচ্ছে কারেন্টর ঝটকা খেয়েছে।
মারুফ ভাবতে পারেনি ওঁর জন্য রুমে সারপ্রাইজ রয়েছে।
মারুফ বিরবির করে বলছে,রুমে পরী এলো কোথায় থেকে?
তাও আবার নীল পরী!

মারুফ বসে থাকা পরীর দিকে তাকিয়ে ভালো মতো খেয়াল করে দেখে বসে থাকা নীল পরী আর কেউ না তার বৌ!

সেজে গুজে মারুফের জন্য ওঁর প্রিয়তমা স্ত্রী বিছানায় বসে আছে।
তা দেখে মারুফ দরজা বন্ধ করে রুমের লাইট জ্বালিয়ে জেসিকার কাছে গিয়ে বসে বলছে, আমার রুমে পরী বসে আছে আর জানিই না!
এটা কিছু হলো তাই বলো?

মারুফের কথা শুনে জেসিকা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।

জেসিকার লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখে মারুফ বুকে হাত দিযে দেখিয়ে বলে, তোমার লজ্জা রাঙ্গা মুখ দেখলে এখানে লাগে,
তখন মনে চায় আমার ভালোবাসা তোমার সারা শরীরে ছুঁয়ে দিতে ।
বৌ তুমি কি জাদু করলা আমায় যে তোমার রূপ দেখে ঘায়েল হয়ে গেছি।

জেসিকা মারুফের কথা শুনে লজ্জায় কথা বলতে পারছে না।
মারুফ জেসিকার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,বৌ আজকে তোমার সব লজ্জা আমি শুষে নিতে চায়।

মারুফের কথা শুনে জেসিকা বলল, আমার সবকিছু আপনার তা আপনি কি করবেন তা আপনে জানেন।
মারুফ জেসিকার দিকে তাকিয়ে আছে,
জর্জেট শাড়িটা পাতলা হওয়ার কারণে জেসিকার ফর্সা পেট দেখা যাচ্ছে।

মারুফ তা দেখে এবং জেসিকার কথা শুনে মনে হচ্ছে ঘোরের মধ্যে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here