গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ১৯।
লেখাঃ #মেহের।

মারুফ এ কথা শুনে জমে গেছে মানে ওঁর শ্বশুর জেসিকাকে মেরে আধমরা অবস্থা করেছিল আর সে এ কথা জানতেও পারল না।
সে কেমন করে এত পাষাণ হলো।
এসব ভেবে মারুফের ভিতরে ছটফটানি শুরু হয়েছে।
নিজের অস্থিরতা কমাতে এক পলক জেসিকার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে।
এ কি হাল হয়েছে ওঁর বৌয়ের।
চোখ মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না ।
এখানে বসেই মারুফ দেখতে পাচ্ছে জেসিকার শরীর বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে।
শরীরের হাল দেখে
মনে হচ্ছে,
যে কোন মুহুর্তে কোন অঘটন ঘটে যায় কিনা!
আচ্ছা জেসিকা এত অসুস্থ্য তাকে তো বাসার কেউ বলল না।
মা না হয় রেগে আছে ওঁর উপরে কিন্তু আলো এবং আর সবাই তো আমাকে জানাতে পারতো।

আলোর কথা মনে হতেই কিছুক্ষণ আগে মায়ের বলা কথাগুলো মনে পড়ে মারুফের।
মারুফ ভেবে পাচ্ছে না তার সাথে কি হচ্ছে এসব!
এটাতো সত্যি যে মায়ের বলা কথাগুলো মিথ্যা নয়।
তবে কি ওকে আলো সেদিন যেসব কথা বলল সব মিথ্যা!

কিন্তু দাদুকে তো জেসিকাই ঝাল দিয়েছে।
ঝালে যে দাদুর সমস্যা এটাতো বাসার সবাই জানে।
তা জানা সত্ত্বেও জেসিকা রান্নায় ঝাল দিল কেন?
মারুফের মনে মধ্যে এ প্রশ্ন খচখচ করছে।

তাই মারুফ ওঁর দাদুকে বলল, দাদু তোমার মন বড় সেজন্য জেসিকার অন্যায় ভুলে তুমি ওকে থাকতে বলছো ভালো কথা।
কিন্তু ওকে জিজ্ঞাসা করোতো ঝালে তোমার সমস্যা জানা সত্ত্বেও সে এই কাজ কেন করেছে?

জেসিকার মা এ কথা শুনে বলল,তা মারুফ আমার মেয়ে ঝাল দিয়ে ভুল করেছে তার জন্য তো তুমি ওকে শাস্তি স্বরুপে বেল্ট দিয়ে মারতে মারতে রক্তাক্ত করেছিলে।

তাহলে এ প্রশ্ন করার মানে কি!
আর তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পার তোমার দাদু থাকতে বললেও আমার মেয়েকে মরার জন্য আমি এ বাসায় রেখে যাব না।

চাঁদনী বানু ও জেসিকার বাবা এ কথা শুনে চমকে উঠল জেসিকার মায়ের কথা শুনে!

কারণ তারা তো জেসিকার মারুফের হাতে মার খেয়েছে তা জানত না।

এ কথা শুনে জেসিকার বাবা রাগে ক্ষোভে ফুঁসছে, মারুফ তার মেয়েকে মেরে রক্তাক্ত করেছে আর তার স্ত্রী কিনা এখন বলছে।
এ কথা আগে বললে সে এদের একহাত দেখে নিতেন।

ইস্ এজন্যই তো মেয়েকে দেখতে এমন অসুস্থ্য লাগছে।
এরা আমার আদরের মেয়েটার কী অবস্থা করে দিয়েছে!

আর আমি কিনা আরোও এদের কথা শুনে জিদ করে সেদিন মেয়েটার গায়ে হাত তুলেছি।

যে মেয়েকে আমি আজ পর্যন্ত কখনো ধমকে কথা বলিনি ।
এদের কথা শুনে আমার সে মেয়েটাকে আঘাত করলাম।

মেয়েটার আজ এই অবস্থা দেখে বাবা হয়ে কিছু করতে না পেরে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।

এসব চিন্তা ভাবনা করে জেসিকার বাবা তার স্ত্রীকে বলল, এই তোমার লজ্জা শরম নেই ?
যেখানে মারুফ আমার মেয়েকে মেরে রক্তাক্ত করেছে ।
তা দেখেও মেয়েকে নিয়ে বাসায় না ফিরে ওদের বাসায় এখনও নির্লজ্জের মত পরে আছো?

অসুস্থ্য শুনে মেয়েকে দেখতে এসেছো ভালো কথা।
যখন দেখলে মেয়েটার এই অবস্থা করেছে ওঁরা
এটা দেখার পরেও আমাকে না জানিয়ে ওদের বাসায় রয়ে গেছো কেন?

এসেছো আছ কয়দিন ধরে মেয়েটার শরীরের কন্ডিশন দেখেও আমাকে না বলে এখানে এখনো রয়েছো কেন?
আমি কি মরে গেছি যে মেয়েকে নিয়ে এখানেই নির্লজ্জের মত পরে থাকতে হবে!
জেসিকার বাবা রাগে ক্ষোভে ফুঁসছে।
তার ইচ্ছে করছে মারুফকে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলতে।
তাই সে এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে চাচ্ছে না।
এখানে থাকলে কখন কি অঘটন ঘটে যায় বলতে পারবে না।
তাই এখানে থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেতে হবে।

মারুফ শাশুড়ি ও শ্বশুরের কথা শুনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে।
তখন কেন যে মাথা গরম করে ওকে মারতে গেলাম।
একটু আগেও জেসিকাকে বের করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু এখন ওঁর যাওয়ার কথা শুনে আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন?

মনে হচ্ছে আমার হৃদযটা় টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে দূরে পড়ছে।
আচ্ছা জেসিকা তুমি দাদুর সাথে এমনটা কেন করলে?
এসব না করলে তো আজকে আমাদের ভালোবাসায় ভরপুর মাখামাখি অবস্থায় থাকার কথা ছিল।

জেসিকা তার বাবার কথা শুনে মনে মনে বলল, বাবা মারুফ একা তো আমাকে আঘাত করেনি তুমিও তো করেছো!
অন্যায় করলে আমাকে শান্তি দেওয়ার রাইট আছে তোমাদের।
কিন্তু সেদিন কি অন্যায় করেছি তাই তো বুঝতে পারলাম না!
এখন আমার প্রতি তোমার এতো ভালোবাসা দেখাতে হবে না।
আমিতো খারাপ মেয়ে এবং খারাপ স্ত্রী ‌।

এদিকে জেসিকার বাবা জেসিকার কাছে এসে মেয়েকে ধরে দেখে তার মেয়ের শরীর কাঁপছে।
তাই শক্ত করে ধরে জেসিকার দাদুকে বলল, আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি মারুফকে বলবেন তালাকের কাগজে সাইন করে আমার বাসায় পাঠিয়ে দিলেই হবে।
মারুফ সামনে বসে আছে তবুও জেসিকার বাবা ওর সাথে কোন কথা বলল না।

জেসিকার অবস্থা দেখে এবং সবার কথা শুনে আলো ভীষণ খুশি হয়েছে।
জেসিকা এ বাড়িতে থেকে আজকে চিরতরে বিদায় নিবে এটা ভেবেই আলো খুশিতে আত্মহারা হয়ে আছে ।
সে তো এটাই চেয়েছিল এতদিন ধরে এখন সেই চাওয়া পূর্ণ হচ্ছে।
একটু আগে আলো খুব ভয় পেয়েছিল এই না তার কুকর্মের কথা ফাঁস হয়ে যায়।
কিন্তু ওদের এ বাড়িতে থেকে যাওয়ার জন্য দাঁড়াতে দেখে সেই চিন্তা দূর হয়ে গেছে।
এখন তো আলোর খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে।
সেজন্য তো মনের মধ্যে খুশি চেপে রাখতে চেষ্টা করছে।
মনের মধ্যে খুশিটা চেপে রাখতে চেষ্টা করলেও আলোর চোখে সেই খুশির ঝিলিক ঠিকই দেখা যাচ্ছে।

সেটা আর কেউ খেয়াল না করলেও চাঁদনী বানু ঠিকই ধরতে পেরেছে।
চাঁদনী বানু মনে মনে বলল,চুল তো আর বাতাসে পাঁকেনি।
এগুলো হচ্ছে এক একটা আমার অভিজ্ঞতার চিহ্ন।
তোকে দেখেই বুঝতে পারছি তোর মনে এই মুহূর্তে কি চলছে! তুই জেসিকার চলে যাওয়াতে কত খুশি হয়েছিস তাও আমার অজানা নয়।
কিন্তু তুই যা ভেবে মনে মনে মন কলা গিলছিস বা খুশিতে তোর নেচে উঠতে ইচ্ছে করছে তা তো আমি চাঁদনী বানু বেঁচে থাকতে তোর সে আশা পূরণ হবে না।
আজকেই তোর শেষ দিন আমার বাড়িতে।
চাঁদনী বানু আলোর থেকে নজর ফিরিয়ে জেসিকার দিকে তাকিয়ে দেখে ওঁরা চলে যাচ্ছে।

চাঁদনী বানু ওদের যেতে দেখে জেসিকার বাবাকে বলল, আমার কথা কিন্তু এখনো শেষ হয়নি উকিল।
তাই তুমি সবাইকে নিয়ে চুপচাপ বস।
আর তোমার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছি না!
তোমার এত সাহস হয়েছে কবে থেকে?
আমার বারণ সত্তেও এ বাড়ির বৌকে একবারেই নিয়ে যেতে চাচ্ছ?

তুমি কি ভুলে যাচ্ছ আমার বড় ছেলে তোমার বন্ধু ছিল।
তুমি কিন্তু তার মায়ের কথা অমান্য করছো।
বন্ধুর মা কিন্তু তোমারও মায়ের মত বড় উকিল সাহেব হয়েছো দেখে এ কথা ভুলে যেও না।

জেসিকার বাবা তো আর জানে না মারুফের দাদু এখন এতো ভালো ব্যবহার করছে কিন্তু কিছুদিন আগেই সেও জেসিকার সাথে খারাপ আচরণ করতেন এবং নানাভাবে ওকে কষ্ট দিয়েছে ।
তবে মনে হচ্ছে চাঁদনী বানু অসুস্থ্য হয়ে মারার ঘরে থেকে ফিরে এসেছে তাই নিজেকে বদলাতে চায়ছে।
নাহলে আলোর স্বভাব চরিত্র দেখে জেসিকার প্রতি করা তার অন্যায়গুলো তাকে ভিতরে ভিতরে অনুশোচনায় দগ্ধ করছে।
কারণ যাই হোক না কেন? বাংলাতে একটা প্রবাদ আছে শেষ ভাল যার সব ভালো তার।
সেটায় বড় কথা।

জেসিকার বাবা চাঁদনী বানুর এসব কথা শুনে , কিছুটা লজ্জা পেয়েছে।
সে তো মৃত বন্ধুর মাকে অসম্মান করতে চায় না।
তাই জেসিকাকে নিয়ে গম্ভীর হয়ে বসল।
জেসিকার বাবা আজকে সবকিছুর শেষ দেখেই ছাড়বেন।

জেসিকাদের বসতে দেখে মারুফের চাচা ও চাচী বললেন,মা এই মেয়েকে এখানে রেখে আমরা আপনার ক্ষতি হতে দিতে চাচ্ছি না।
তাই ও গেলেই সবার জন্য ভালো।
চাঁদনী বানু এ কথা শুনে বলল, আজকাল তোরা দেখছি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছিস? আচ্ছা তাহলে এক কাজ কর আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দে।
তাতেই তোরা তোদের ইচ্ছে স্বাধীন মত চলতে পারবি।
নিজের মত করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবি।
কেউ বাঁধা দিতে আসবে না।

মারুফের দাদুর কথা শুনে মারুফের চাচা বলল,মা তুমি একদম এসব কথা বলবে না।
তোমার সব সিদ্ধান্ত আমরা বিনা বাক্য মেনে নিবো।
তবুও তুমি এমন কথা আর কখনো বলবে না।
আমরা গাছ হলে তুমি হচ্ছো তার শিকড়।
শিকড় ছাড়া গাছ কি বাঁচে!

ছেলের কথা শুনে মারুফের দাদু বলল, হয়েছে আমাকে আর মাখন দিতে হবে না।
এখন এসব বাদ দিয়ে আমি তা বলবো তা মনযোগের সাথে শুন।
তোরা কী জানিস?
আমার খাবারে জেসিকা ঝাল দেয়নি আলো দিয়েছে।

চাঁদনী বানুর কথায় মনে হচ্ছে ঘরের মধ্যে এই মাত্র বোমা বিষ্ফোরণ হয়েছে।
সবাই চোখ বড় বড় করে আছে।
সবাই ভাবছে আলোর মত এতো নরম ভদ্র মেয়ে এই কাজ করতেই পারেনা।
হয়তো চাঁদনী বানু কোথাও ভুল হচ্ছে।

আলো এসব করেছে শুনে মারুফের মনে চাচ্ছে আলোকে
ইচ্ছে মত ধোলাই দিতে।
কিন্তু একবার ভুল মানুষকে শাস্তি দিয়েছে তাই এবার কিছু বলার আগে শিওর হতে চায়।
সেজন্য মারুফ ওঁর দাদুকে বলল, দাদু তুমি এতো সিওর হচ্ছ কি করে যে আলোই তোমাকে ঝাল দিয়েছে!
কারণ রান্না তো জেসিকা করেছে।
মারুফ মনে মনে বলল, আল্লাহ আমার বৌ যেন সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হয়।
এমনিতেই ওকে ভুল বুঝে।
অনেক শাস্তি দিয়েছি। ওঁর থেকে দুরত্ব সহ্য করতে করতে আমি এখন বড্ড ক্লান্ত।

সবার দিকে তাকিয়ে দেখার পরে চাঁদনী বানু বলে, তোমাদের সবার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি আমাকে সবকিছু খুলেই বলতে হবে।
কারণ তোমাদের মনে হচ্ছে আলোর মত নরম ভদ্র মেয়ে এটা কি করে করতে পারে।
আলো নরম ভদ্র তা অবশ্য আমিও তো এতদিন এটাই মনে করতাম।
কিন্তু নিজের চোখের দেখা তো অস্বিকার করতে পারিনা।

সেদিন জেসিকা নাস্তা বানানো শেষ হলে ঝাল, লবণ সবকিছুই ঠিক আছে কিনা আমাকে তা দেখতে দেয়।
আমিও চেকে দেখলাম।
তখন অবশ্য সব ঠিকঠাক ছিল।
ও আরেকটি কথা সকালে দিকে আমি আলোকে বাগানে গিয়ে বোম্বে মরিচ ছিঁড়ে আনতে দেখেছি।
তখন ভেবেছিলাম ও হয়তো এগুলো দিয়ে আচার করতে ছিঁড়েছে,
তাই তখন কিছু বলিনি।

কিন্তু জেসিকা নাস্তা বানানো হয়ে গেলে নিজেদের রুমে গেল।
আর নাস্তা দেওয়ার সময় কিছুটা দেরি করে বের হয়।
তাতে আমি বকা দিলে জেসিকা তড়িগড়ি করে সব এনে আমাদের নাস্তা দেয়।
তাহলে তোমরাই বলো এরমধ্যে ও ঝাল মিশাতে সময় পেল কখন?

আর অন্য দিকে জেসিকা রুমে যাওয়ার পরেই আলো রান্না ঘরে যায় তাও মরিচ হাতে।
আমি তো আর জানি না সে দেখতে নরম ভদ্র হলে কি হবে!
তার মনের মধ্যে শয়তান বাসা বেঁধেছে।
সে জেসিকাকে বাড়িতে থেকে বের করার জন্য আমাকে নিশানা বানাবে।

চাঁদনী বানুর কথা শুনে, মারুফের মাথায় রক্ত উঠে গেছে।
এই মেয়ের জন্য সে তার বৌকে বিনা দোষে মারছে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে।
জেসিকা কী তাকে এজন্য মাফ করতে পারবে?
আলোর জন্য সব হয়েছে তাই এই মেয়েকে আজকে জন্মের মতো শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে। এসব ভাবতে ভাবতে মারুফ আলোর কাছে যাচ্ছে।
কিন্তু মারুফ আলোর কাছে যাওয়ার আগেই মায়া বেগম তার শাশুড়ির কথা শুনে সহ্য করতে না পেরে আলোকে চর থাপ্পর মারতে শুরু করে।
এবং বলতে থাকে তোর এতো সাহস তুই আমাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল!

তুই আমার আপন ভাইয়ের মেয়ে হয়ে এ কাজ করতে পারলি কী করে?
ছিঃ ছিঃ এমন দিন দেখার আগেই আমি মারা গেলে ভালো হতো।
মারুফের মা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে মারুফ এসে তার মাকে ধরে ফেলল।
মারুফ ওঁর মা’কে সোফায় বসিয়ে দিয়ে শান্ত হতে বলল।

আর আলোকে উদ্দেশ্য করে বলে, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করে।
তোর মত কাল নাগিনী আমার বৌ হয়ে আসলে ।
তোর বিষে এই পরিবার শেষ হয়ে যেত।
এ কথা বলেই মারুফ তার মামাকে ফোন করে এই মূহুর্তে এসে তার খুনি মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেন।

এদিকে জেসিকা বাবার এক কথা সে কোনভাবেই এই মেয়েকে ছাড়বেন না।
এই মেয়ের জন্য তার একমাত্র আদরের মেয়েকে মার খেতে হয়েছে।
তাই সে সবার সামনেই পুলিশে ফোন করে।
তা দেখে জেসিকা বাবার কাছে থেকে মোবাইল নিয়ে কল কেটে দেয়।
এরপর বলে তুমি ওকে পুলিশের কাছে দিতে পার না।

এটা দেখে মারুফ ও বাকি সবাই জেসিকার দিকে তাকিয়ে আছে।
যে মেয়ের এতোক্ষণ কোন হেলদোল ছিল না।
সে কিনা আলোকে বাঁচাতে কথা বলছে।

জেসিকা বাবা মেয়ের উপরে ক্ষেপে গিয়ে বলল,তোর এই মেয়ের জন্য এতো দরদ আসছে কোথায় থিকে।
জেসিকা ওঁর বাবাকে বলল,দরদ না এটা সম্মানের প্রশ্ন। আলোকে পুলিশের কাছে দিলে ওঁর পুরো পরিবারকে বদনাম হতে হবে।
আর ওঁর পরিবারের সাথে কিন্তু আমার শাশুড়ির নাম জরিয়ে আছে।
তাই বেঁচে থাকতে তার অসম্মান হতে দিতে পারিনা।

আলো ভাবতেও পারিনি সে এভাবে জেসিকার কাছে হেরে যাবে।
এই মেয়ে আর বুড়ির জন্য ওকে ফুফুর হাতে মার খেতে হলো।
ইস্ বুড়িটা কেন যে বেঁচে ফিরলো।
বেঁচে এসেছিস ভালো কথা চুপচাপ বসে থাকবি তা না এসেই ওঁর সব প্লান নষ্ট করে দিল।
মার খেয়ে যা কষ্ট না হচ্ছে তার থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে মারুফকে আর পাবেনা এটা ভেবেই ।

সবাই জেসিকার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
এতদিন এই মেয়েটিকে সবাই কষ্ট দিয়েছে সেই কথা ভাবতেই সবার লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে মারুফ তো জেসিকার কথা শুনে মনে মনে গর্ব বোধ করছে।
জেসিকা ওঁর বৌ বলে।

এ কথা ভাবতেই শরীরের শিরা উপশিরায় কেমন চঞ্চলতা সৃষ্টি হয়েছে।
ওঁর বৌ ওঁর মায়ের সম্মান বাঁচাতে আলোর মতো মেয়েকে শ্বশুরের হাতে থেকে বাঁচিয়ে দিল।
মারুফের চাচা ও চাচী জেসিকার বাবা ও মায়ের কাছে নিজেদের ব্যাবহারের জন্য মাফ চেয়েছে।
উকিল সাহেব মেয়ের সুখের কথা ভেবে এদের মাফ করে দিয়েছে।
কিন্তু মেয়েকে সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
চাঁদনী বানু বলল, জেসিকাকে সাথে নিয়ে যেতে চায় এবং মেয়েটা সুস্থ্য হলে সে নিজেই এসে ওকে দিয়ে যাবে।

শ্বশুরের কথা শুনে মারুফ বিরবির করে বলছে, দাদু তোমার নাতি কিন্তু বৌ ছাড়া এক রাতও আর থাকতে পারবে না।
প্লিজ প্লিজ তুমি ওকে যেতে অনুমতি দিও না।
আমার মন বলছে তোমার নাতবৌ একবার আমার থেকে দূরে গেলে এই জীবনে আমার কাছে আর ধরা দিবে না।
মারুফের এই মুহূর্তে মনে চাচ্ছে জেসিকাকে বুকের ভিতরে জরিয়ে ধরে পিষে ফেলতে।
মারুফ মনে মনে বলল, সোনা তোমাকে আর কোন কষ্ট দিব না।
এতো আদর আর ভালবাসা দিব যে তুমি আমার দেওয়া সব কষ্ট ভুলে যাবে।
কিন্তু আমি যে তোমাকে বিশ্বাস করিনি তার জন্য তুমি আমায় ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিবে না তো?
আচ্ছা বৌ তুমি আমার অপরাধ গুলো মাফ করবে তো?

বিঃদ্রঃআমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত দুইদিন গল্প দিতে পারিনি বলে।
কষ্টের কথা কি আর বলব দুই বার গল্প লেখার পর কপি করার সময় ডিলেট হয়ে গেছে।
এখন আবার নতুন করে লেখে দিতে হয়েছে।
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর একটা অভিযোগ হচ্ছে গল্প পোষ্ট করার পরেই কেউ কেউ কমেন্ট করে নেক্সট তখন মনে হয় আমাকে এরা রোবট ভাবছে না তো।
কারণ এইটুকু দেখতেই আমার কয়েক ঘন্টা লাগে।
এরপর বাচ্চা ও সংসার সামলাতে হয়।
গল্প দেওয়ার সময় হলে এমনিতেই দিবো নেক্সট বলা লাগবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here