গল্পঃহৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ ১৪।
লেখাঃ #মেহের।

একথা শুনে চাঁদনী বানু বলে, তা তোমার বৌকে আমাদের সাথে তুলনা দিচ্ছ ভালো কথা কিন্তু দাদু ভাই তুমি কী তোমার সাথে এবং আমাদের সাথে হওয়া সকল অপমান ভুলে গেছ?

চাঁদনী বানুর কথা শুনে মারুফের কিছুটা মন খারাপ হয়ে যায় ‌।
আসলে জেসিকা কাজেই এমন করেছে যা ভুলে যাওয়া বা ক্ষমা করা এতো সহজ না।
কিন্তু দাদুকে এই মুহূর্তে নিজের দূর্বলতা বুঝতে দেওয়া যাবে না।

তাই মারুফ মুচকি হেসে চাঁদনী বানুকে বলে, দাদু মানছি ও ভুল করেছে কিন্তু তাই বলে।
আমরাও তো ওঁর মত করতে পারি না।
আমারা যদি ওঁর মতই এখন খারাপ আচরণ করি তাহলে ওঁর এবং আমাদের মধ্যে তফাৎ কোথায় দাদু।
তাছাড়া ওঁর ভুলগুলো যেহেতু বুঝতে পারছে এটাই তো বড় কথা!

আর আমাদের জেসিকার ভুলগুলো ধরে জিদ করে বসে থাকতে হবে এমন তো কোন কথা নেই।
আমি তো ওকে ক্ষমা করে দিয়ে আপন করে নিয়েছি।
তাই আমার মনে হয় তোমাদের উচিত জেসিকাকে ক্ষমা করে দেওয়া।

মারুফের কথা শুনে চাঁদনী বানু ক্ষেপে বলে, তুমি ক্ষমা করে ভুল করেছো দাদু ভাই।
এই মেয়ে সুযোগ পেলেই আবার নিজের রং দেখাতে শুরু করবে।

দাদুর কথা শুনে মারুফ বলল, দাদু আমিও জানতে চায় আসলে আমার বৌ কেমন রং দেখাবে!
তবে আমি তো ওঁর স্বামী তাই একটু হলেও ওকে চিনি।
দেখো তুমি আল্লাহর রহমতে জেসিকা ওঁর ভালবাসা দিয়ে আমাদের এই পরিবারকে আগলে রাখবে।

চাঁদনী বানু বেশ বুঝতে পারছে এই জুস এক রাতেই কেল্লাফতে করছে।
নাতি তার শেষ পর্যন্ত জুসের দিওয়ানা হয়ে গেছে।
এসব ভাবতে ভাবতে চাঁদনী বানু রান্না ঘরে আসে।
রান্না ঘরে এসে দেখে জেসিকার নাস্তা বানানো শেষ।

চাঁদনী বানু জেসিকার দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখে জেসিকা এখনোও কালকে পোশাক পড়েই আছে।
এইটা দেখে চাঁদনী বানুর মনে হচ্ছে তার শরীরে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।
বাড়ির বৌ ঝি এমন হলে তো আমার এতো যতনের সংসার ভেসে যাবে।
আর আমার নাতি কিনা এই অসভ্য মেয়ের গুণগান গাচ্ছে !

এসব চিন্তা ভাবনা করে চাঁদনী বানু জেসিকাকে ডেকে বলল,এই জুস মারুফ রাতে তোর ঘরে ছিল?
জেসিকা এ কথা শুনে লজ্জা পেয়ে আমতা আমতা করে বলল,জী দাদু।
এরপর চাঁদনী বানু জেসিকাকে জিজ্ঞেস করে, জেসিকা গোসল করে রান্নাঘরে ঢুকেছে কিনা?
জেসিকা চাঁদনী বানুর কথা শুনে মনে মনে বলছে, সকাল সকাল দাদু আমার গোসল নিয়ে পড়ছে কেন এটাই তো বুঝতে পারছি না!

মুখে বলল,দাদু আমিতো প্রতিদিন দুপুরে গোসল করি।
আর এতো সকালে আমার গোসলের অভ্যাস নেই।
একথা শুনে চাঁদনী বানু তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো ।

স্বামীর সাথে সারারাত ঘুমাইয়া না পাক শরীরে সারা বাড়ি ঘুরছে একটা অসভ্য খচ্চর মেয়ে মানুষ কোথাকার বলে বকাঝকা শুরু করে।

চাঁদনী বানুর বকাঝকা শুনে জেসিকা ভয় পেয়ে গেল।
কারণ ওঁর জানামতে এখন এমন কিছুই করেনি যে দাদু বকবে ।
তবুও দাদু ওকে বকছেন কেন তাই বুঝতে পারছে না!

অন্যদিকে চাঁদনী বানুর চিল্লাচিল্লি শুনে মায়া বেগম,দোলা বেগম ও আলো রান্না ঘরে চলে এলো।
জেসিকা এদের দেখে অসহায়ের মত তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
দোলা ও আলো তো মনে মনে খুশি হচ্ছিল জেসিকা বকা খাওয়াতে।
মায়া শাশুড়িকে বললেন,আম্মা কি হয়েছে ?
আপনি ওঁর উপরে সকাল সকাল এতো রেগে আছেন কেন?
বড় বউয়ের কথা শুনে চাঁদনী বানু রেগে বলল, আমার কপাল হয়েছে।
তোমার ছেলের বৌ গোসল না করে রান্না ঘরে ঢুকে আমার রান্না ঘর অপবিত্র করে দিয়েছে।
এইসব মেয়ে মানুষের জন্যেই তো সংসারে অলক্ষী ঢুকে।

শাশুড়ির কথা শুনে মায়া বেগম বলল,আম্মা আমি আর ছোটো তো রান্না ঘরে গোসল না করেই আসি কয় তখন তো কিছু বলেন না!
মায়ার কথা শুনে চাঁদনী বানুকে আর পায় কে?
বড় বৌ আমারতো এখন সন্দেহ হচ্ছে যে তুমি আসলে ছেলের মেয়ের মা হয়লা কেমনে।
তোমার কথা বার্তা শুনে মনে হয় কিছুই বুঝতে পারছ না আমি কি বলেছি।
মায়া বেগম বুঝতে পারছে সামান্য কথায় শাশুড়ি তার উপরে ক্ষেপে উঠছে কেন!
চাঁদনী বানু বললেন, তোমার ছেলের বৌ স্বামীর সাথে সারারাত রঙলীলা করে সকাল সকাল ভাষি শরীর নিয়ে রান্না ঘরে আসছে আর তুমি কিনা আমারে জিগায়তে আসছো কি হয়েছে!
একথা শুনে আলোর হাসি মুখে নিমিষেই আঁধার নেমে এসেছে।
এতোক্ষণ জেসিকার বকা খাওয়াতে যেটুকু খুশি হয়েছিলো কিন্তু বকার খাওয়ার কারণ জানার পরে আলোর হাতে পায়ে বল পাচ্ছে না।
মনে হচ্ছে শরীর আসাড় হয়ে গেছে।
নড়াচড়া করার সামান্য শক্তিটুকু নেই।
আলো বুঝতে পারছে না, কালকেও তো সব ঠিকঠাক ছিল তাহলে এক রাতেই কেমন করে জেসিকা তার স্বপ্নের পুরুষকে তার থেকে আরও দূরে সরিয়ে দিল।
এখন কি মারুফ তাকে আর নিজের জীবনে ঠাঁই দিবে?
আলো এইসব চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে।

এদিকে মায়া ছেলের বৌয়ের সামনে শাশুড়ির এসব কথা শুনে লজ্জায় তার কান লাল হয়ে যাচ্ছে।
তবে মায়া বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে ছেলের ও ছেলের বৌয়ের মাঝে আদৌও মে এমন কিছুই হয়নি।
তাই হয়তো জেসিকা গোসল করেনি।
কিন্তু সে তার শাশুড়িকে এটা বুঝতে দিলো না।
কারণ সে এটা জানতে পারলে ওদের দুজনকে আলাদা করতে আরও বেশি তোরজোর করতে শুরু করবে।
তাই নিজের লজ্জাকে এক সাইডে রেখে জেসিকাকে বলল, জেসিকা মারুফ তোমার কাছে থাকলে আর কখনোই গোসল ছাড়া রুমে থেকে বের হবে না।

জেসিকা এদের সবার কথা শুনে এখন বুঝতে পারছে দাদু ক্ষেপে আছে কেন।
তাই সে বলতে নেয় যে তাদের মাঝে এমন কিছুই হয়নি।
কিন্তু মায়ার ধমকে সে কথা বলতে পারে না।
মায়া ধমকের সুরে বলল, এখানে দাঁড়িয়ে এই বিষয়ে আর কথা না বলে যলদি গিয়ে গোসল কর।
জেসিকা ওঁর শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিল।

মায়া বেগম সে সুযোগ না দিয়ে ধমকে বলল , এখান থেকে যাও।

শাশুড়ির ধমক শুনে জেসিকা গোসল করতে চলে যায়।

জেসিকা গোসল করে ওয়াশ রুমে থেকে বের হয়ে দেখে মারুফ ডেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে ঘড়ি পড়ছে।

জেসিকা গোসল করছে তা দেখে মারুফ যদি কিছু বলে,তাই জেসিকা মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে রুমের ভিতরে এসে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে।

মারুফ জেসিকাকে ওয়াশ রুম থেকে বের হতে দেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ডেসিং টেবিলের আয়নার দিকে।

সেখানে জেসিকাকে দেখা যাচ্ছে।
মারুফ মনে মনে বলল,বৌ তোমাকে এই মূহুর্তে খুব স্নিগ্ধ লাগছে।
মনে হচ্ছে সদ্য ফোঁটা কোন ফুল।
তোমার ঠোঁটের যে বিন্দু বিন্দু পানি দেখা যাচ্ছে তা শুষে নিতে মনে চাচ্ছে।
তোমার চোখের ভেজা পাপড়িতে পরশ বুলিয়ে দিতে আমার মন ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছে।
নাহ্ এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না।
এখানে বেশিক্ষণ থাকলে তোমার এই রূপ আমাকে ঘায়েল করতে সক্ষম হয়ে যাবে যা আমি এই মুহূর্তে চায় না।

মারুফ এসব ভেবে ঘড়ি পড়া শেষ হলেই তাড়াহুড়ো করে রুমে থেকে বাহিরে যেতে নেয়।

জেসিকা মারুফকে দেখে লজ্জা পাচ্ছিল তাই এতোক্ষণ মাথা নিচু করে এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিল।
কিন্তু মারুফকে বাহিরে যেতে দেখে ডেকে বলল, এই যে শুনছেন?
মারুফ জেসিকার ডাক শুনে জমে গেছে।
মারুফ বিরবির করে বলছে, আবার রাতের মত শুরু করবে না তো।
তাহলে মারুফ আজ তুই শেষ।

জেসিকা মারুফকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, শুনছেন কিছু জানার ছিল?
জেসিকার কথা শুনে মারুফ বলল,হ্যাঁ ,কি হয়েছে বল?
মারুফ চাচ্ছে তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে এখানে থেকে কেটে পড়তে।
জেসিকা বলল,ঐ রুমে থেকে আপনার জিনিসপত্র এই রুমে নিয়ে আসি?
এ কথা শুনে মারুফ ঘুরে জেসিকার দিকে তাকিয়ে আছে।
তা দেখে জেসিকা ভয় পেয়ে বলে, আসলে আপনার জিনিসপত্র ঐ রুমে থাকলে সবাই কি না কি ভাবে তাই বলছিলাম।
মারুফ জেসিকার কথা শুনে বলল, ঠিক আছে আমার জিনিসপত্র সব এই রুমে নিয়ে এসে গুছিয়ে রেখো।
মারুফ এ কথা বলে তাড়াহুড়ো চলে যায়।

সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো।
এপর্যন্ত আলো কিছইু মুখে তুলেনি ।
আলোর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে জেসিকা আর মারুফ এক হয়ে গেছে সেজন্য।
আলো বিরবির করে বলছে,ছোট থেকেই একটাই স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়েছি একদিন মারুফ ভাইয়ের বৌ হবো।
আমার সব আশা নিমেষেই ভেঙে গেল।
চাঁদনী বানু প্রথমে মারুফ ভাইকে বিয়ে করতে বাধ্য করছে এরপর জেসিকার খারাপ আচরণ দেখে আমাকে আবারো নাতি বৌ করার আশা দিয়েছে।

কিন্তু বুড়ি এতো দিন শুধু মুখেই বড় বড় কথা বলেছে।
এ পর্যন্ত তো জেসিকা এই বাড়িতে থেকে তাড়াতেই পারল না।
বুড়ির জন্য আমি মারুফ ভাইকে হারিয়ে ফেলেছি।
এগুলো বলছে আর মুখে বালিশ চেপে কান্না করছে।
জেসিকার আজকে চাঁদনী
বানুর করা দূর ব্যাবহার খারাপ লাগছে না।

কারণ জেসিকার মনে হচ্ছে এই মানুষগুলোর সাথে সে যা করেছে সেদিক থেকে ভাবলে ওঁর জন্য এ শাস্তি কমেই।

এরপরেও যে মারুফ তাকে মাফ করেছে এটাই ওঁর ভাগ্য।
জেসিকা এসব ভাবছে আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখছে।
মারুফ এখনও আসছে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here