গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ২৮‌।
লেখাঃ #মেহের।

বাহিরে এসে মারুফকে এমন অবস্থায় দেখে সবাই হতভম্ব হয়ে গেছে।
মায়া বেগম দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে ধরে বলল, বাবা তোর কি হয়েছে তোকে এমন লাগছে কেন?
রাশেদের মুখে ভাইয়া শুনে বাহিরে এসে মারুফকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে।
জেসিকা বাহিরে এসে যেখানে দাঁড়িয়ে মারুফকে দেখেছে মনে হচ্ছে ওখানেই জমে গেছে।
দুই পা মাটিতে আটকে গেছে।
নড়াচড়া করতে পারছে না।
জেসিকার বিশ্বাস হচ্ছে না মানুষটা ফিরে এসেছে নাকি ও জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে!

কিন্তু জেগে জেগে কি স্বপ্ন দেখা যায়?
আচ্ছা তাকে এমন দূর্বল দেখাচ্ছে কেন?
চোখে মুখে যেনো ঘুমের নেশা ভর করেছে ।
মারুফকে এমন ঘুমে আচ্ছন্ন দেখাচ্ছে কেন?
পাশে থাকা ছেলেটাই বা কে?
আর এই ছেলেটি ওনাকে কোথায় পেলো?
জেসিকার মনের মধ্যে চলা প্রশ্ন গুলো উসখুস করছে উত্তর জানতে।

এরমধ্যে চাঁদনী বানু ছেলেটাকে বলল,
তা ভাই তুমি কে?
আর আমার নাতিকে কোথায় পেলে?
মারুফের এমন অবস্থা দেখে চাঁদনী বানু মারুফকে ধরে রাখা ছেলেটার উদ্দেশ্য প্রশ্ন করল।

চাঁদনী বানুর প্রশ্ন শুনে ছেলেটি বলল, জী আমি জননী ক্লিনিক এর ওয়ার্ড বয়।

ছেলেটির মুখে হসপিটালের নাম শুনে সবার চোখে মুখে আতংকের ছাপ দেখা যাচ্ছে।

জেসিকার বাবা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে,বাবা তুমি মারুফকে কোথায় পেয়েছো?
ওঁর কি হয়েছে এমন দেখাচ্ছে কেন?

ছেলেটি মারুফের শ্বশুরের প্রশ্ন শুনে বলল, কালকে দুপুরের দিকে কিছু লোকজন ওনাকে রাস্তার পাশে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে আমাদের হসপিটালে নিয়ে আসে।
ডাক্তার ওনাকে চেকআপ করে বলেন, ওনাকে কড়া চেতনা নাশক ঔষুধ দেওয়া হয়েছে।

যে লোকেরা তাকে আমাদের হসপিটালে এনেছিলেন তারা
ওনার চিকিৎসার টাকা দেয়।

সে কালকে ঘুমের ঘোরে অজ্ঞান হয়ে ছিল।
ডাক্তার কালকে থেকে জ্ঞান ফিরাতে অনেক চেষ্টা করেন।

তাদের চেষ্টায় শেষ রাতে তার জ্ঞান ফিরে।
কিন্তু তখন ঘুমের ঘোরে কিছুই বলতে পারে নায়।
আজকে সকালে দিকে সে তার বাড়ির ঠিকানা দেন।
এবং তাকে এখানে দিয়ে যেতে বলেন।
তবে সবকিছু ঘোরে মধ্যে থেকেই বলছেন।

মায়া বেগম এ কথা শুনে হুহু করে কেদে উঠল।
তার ছেলেটা কালকে সুস্থ্য বাহিরে গেল।
আর তাকে কিনা অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে।
কেমন করে এসব হলো তাই বুঝতে পারছে না।

কিন্তু ছেলেটির কথা শুনে জেসিকার বাবা বুঝতে পারছে মারুফ মলম পার্টি বা ছিনতাইকারীর হাতে পরেছিল।
আল্লাহ রহমতে মারুফ এখনো সুস্থ্য আছে এটাই বড় কথা।

মায়া বেগমের কান্না কাটি শুনে মারুফ বিরবির করে বলছে,মা তুমি কাঁদছ কেন?
আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাব তো।

মারুফের কথা শুনে রাশেদ তার মাকে বুঝিয়ে বলল, ভাইয়ের এখন বিশ্রাম দরকার তাকে এখানে দাঁড় করিয়ে না রেখে রুমে নিতে হবে।

ছেলেটি তাদেরকে বলল,ডাক্তার সাহেব বলেছেন ওনি এখন বিশ্রাম নিলে রাতের আগেই ঠিক হয়ে যাবে।
চিন্তার কোন কারন নেই।

এদিকে ইসহাক তাদের ডাক্তারকে ফোন করে মারুফের ঘটনা পুরোপুরি বলল।
সবশুনে তাদের পারিবারিক ডাক্তারও মারুফের রেস্ট দরকার সে কথা বলেন।

সবাই মারুফের সাথে বাড়ির ভিতরে গেল।
ছেলেটিকেও ভিতরে আসতে বললে সে জানায় তাকে হসপিটালে যেতে হবে।
চাঁদনী বানু ও মায়া ছেলেটাকে দোয়া করলেন মারুফকে বাসায় দিয়ে যাওয়ায়।

মারুফকে বাসায় দিয়ে যাওয়ায় জেসিকার বাবা ছেলেটির হাতে বেশ কিছু কিছু টাকা দিলেন।

মারুফ আসার পরে থেকেই ওঁর রুমে ঘুমিয়ে আছে।
মারুফের একপাশে চাঁদনী বানু ও অন্য পাশে মায়া বেগম বসে আছে।
জেসিকা এখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল।
ওঁর বুকের ভিতরে অস্থির লাগছে মনে হচ্ছে মারুফকে জরিয়ে ধরলে তা কমে যাবে।

কিন্তু শাশুড়ির সামনে তো মারুফকে জরিয়ে ধরতে পারছে না।
তাই দাঁড়িয়ে আছে।
চাঁদনী বানু ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, নাতবৌ এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে মারুফ এবং সবার জন্য তাড়াতাড়ি রান্না করতে যাও।
কালকে থেকে প্রায় সবাই না খাওয়া।
চাঁদনী বানুর কথা শুনে,জেসিকা মন খারাপ করে রান্না ঘরে চলে গেল।
সবাই এই রুমে এসে বারবার দেখে যাচ্ছে মারুফের ঘুম ভেঙ্গেছে কিনা।
কোমল তো এসে বারবার ভাইয়ের আঙ্গুল ছুঁয়ে দেখছে ।
তা দেখে মায়া বেগম মারুফকে বিরক্ত করতে নিষেধ করে।
কোমল খুশি মনে চলে গেল।
তার ভাই ফিরে এসেছে তার তাতে মনে শক্তি ফিরে এসেছে।

সবাই বারবার মারুফের কাছে যাওয়া আসা করাতে সবকিছু জেসিকার একা হাতে রান্না করতে হচ্ছে।
তাতে জেসিকার অনেক সময় লেগেছে এরমধ্যে মারুফের কাছে সে একবারও যেতে পারেনি।
মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে।
কেন তার মনের অবস্থা কেউ বুঝতে পারছে না?
এসব ভাবতে ভাবতে জেসিকা
রান্না শেষ করে নিজের রুমে আসলো।
জেসিকাকে দেখে মায়া বেগম নামাজের জন্য যায়।

মায়া বেগম যাওয়ার আগে বলেন, বৌমা রান্না যেহেতু শেষ হয়েছে তো মারুফকে জাগিয়ে গোসল করিয়ে দাও।
এরপর ওকে নামাজ পড়তে বল এবং তুমি ও নামাজ পড়ে ফেলো।
তারপর না হয় সবাইকে খাবার দেওয়া যাবে।

জেসিকার শাশুড়ি রুমে থেকে বের হলে জেসিকা রুমের দরজা বন্ধ করে দৌড়ে মারুফের কাছে চলে আসে।
এতক্ষণের চাপা কষ্ট মারুফকে কাছে থেকে দেখে নিমেষেই পানি হয়ে গেছে।
জেসিকা মারুফকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারল না। দুই হাত দিয়ে মারুফকে জরিয়ে ধরে চুমু দিয়ে কান্না করছে।

ওঁর কান্নার শব্দে মারুফের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
তবে ঘুমের ঘোর এখনো আছে।
তবে জেসিকার কান্নাকাটি দেখে মারুফ বলল,বৌ তুমি কাঁদছ কেন?
কাছে আসলে তো দূরে সরিয়ে দেও সবসময় ।
আমি না থাকলেই তোমার ভালো তো।
মারুফের কথা শুনে জেসিকা মারুফের ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল,আর কখনো এমন কথা বলবেন না।
তাহলে আপনার খবর আছে।
মারুফ এতক্ষণ খেয়াল করেছে জেসিকা ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।
তা দেখে মারুফ বলল,তা বৌ তুমি আমাকে হঠাৎ কি মনে করে জড়িয়ে ধরলে।

জেসিকা মারুফকে কথা শুনে বলল, জানি তো আপনাকে কাছে আসতে না দিয়ে এতদিন আমি আপনার সাথে অন্যায় করেছি।
তাই আপনি কষ্ট পেয়ে এসব বলছেন।

মারুফ মনোযোগ দিয়ে জেসিকার কথা শুনছে।

জেসিকা মারুফের দিকে তাকিয়ে আবার বলে,আমাকে মাফ করে দিন
আর কখনো আপনাকে কষ্ট দিবো না।
আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই চলবো।
তবুও আমাকে ছেড়ে আর কোথাও যাবেন না।
আমি আপনাকে ছাড়া যে এক মুহুর্ত থাকতে পারব না।

মারুফ ঘোরের মাঝে থাকলেও বুঝতে পারছে তার বৌ তাকে কতটা ভালবাসে।
তাই সে নিজেই জেসিকা কে পরম আবেশে জরিয়ে ধরে।

নামাজের দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই জেসিকা মারুফকে ধরে গোসল করতে ওয়াশরুমে রুমে নিয়ে গেল।

গোসলের পর মারুফের ঘুম ঘুম ভাবটা কিছুটা কেটে গেছে ‌
গোসল শেষে দুজনে নামাজ আদায় করে।
জেসিকা মারুফকে ফিরে পাওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে।

নামায শেষে জেসিকা রুমে থেকে বের হতে গেলে মারুফ ওঁর হাত ধরে টেনে বুকে নিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল।

মারুফের কাছে থেকে জেসিকা আজকে দূরে সরে যাচ্ছে না বরং চোখ বুজে মারুফের উষ্ণতা অনুভব করছে।

মারুফ কিছুক্ষণ জরিয়ে ধরার পরে জেসিকার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো।

জেসিকার শরীরে মারুফের স্পর্শে মনে হয় কারেন্ট লেগেছে।
জেসিকা মারুফের এমন ঝটকা খেয়ে মারুফের চুল খামচে ধরলো।

চুলে টান পড়ায় মারুফ মাথা তুলে জেসিকার দিকে তাকাল।

জেসিকার দিকে তাকিয়ে মারুফের ঘুমের নেশা কেটে সেখানে মনে হচ্ছে জেসিকার নেশায় আসক্ত হচ্ছে।

মারুফ জেসিকার ওষ্ঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সে সময় বাহিরে থেকে দরজা ধাক্কা দিয়ে মারুফ ও জেসিকা কে ডাকছে চাঁদনী বানু।

দাদুর ডাক শুনে মারুফ জেসিকার কাছে থেকে সরে দাঁড়ায়।
জেসিকা জামা কাপড় ঠিকঠাক করে দরজা খুলে দিল।

চাঁদনী বানু জেসিকার পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে বলেন, আমার দাদু ভাই কোথায়?

মারুফ চাঁদনী বানু কথা শুনে সামনে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল কি হয়েছে দাদু?
চাঁদনী বানু মারুফকে জরিয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে
বলল, তুমি তো আমাদের ভয় পাওয়ায় দিয়েছো ভাই‌।

মারুফ ওঁর দাদুকে জড়িয়ে ধরে বলল, দাদু আমি তো ঠিক আছি তুমি কান্না কাটি করনা।
এতে অসুস্থ্য হয়ে যাবে।
চাঁদনী বানু কান্না থামিয়ে বলল, দাদু ভাই তোমার জন্য বাড়ির সবাই কালকে থেকে না খেয়ে আছে।
জেসিকা তো না খেয়ে আমাদের সবাইকে সালাম দিয়েছে।
মারুফ ওঁর দাদুর কথা শুনে, জেসিকার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কৃতজ্ঞতা জানাই।
ওঁর জীবনে বৌ হয়ে আসাতে।
মারুফ ওঁর দাদুর সাথে রুমে থেকে বাহিরে আসে।

চাঁদনী বানু ওদের নিয়ে খাবার টেবিলে বসে।
আজকে মায়া বেগম নিজ হাতে ছেলেকে খাওয়াচ্ছে।
জেসিকা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।
আর তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে মারুফের জীবন যেমন পরিবারেই সবাই।
তেমনি এই পরিবারের সবার শক্তির উৎস হচ্ছে মারুফ।

সন্ধ্যায়

সন্ধ্যায় সবাই মারুফের রুমে বসে আছে কি ভাবে কি হয়েছে তা জানতে?
জেসিকা বাবা ও মাও এসেছে।
সকালে কিছুক্ষণ থেকে চেম্বারে চলে যায়।
সেখানে থেকে বাসায় গিয়ে জেসিকার মাকে নিয়ে আসে
মারুফের সাথে দেখা করতে ‌।

মারুফ সবাইকে এক এক করে কালকের ঘটনায় খুলে বলল।

কালকে সকালে দিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে কিছু ইন্ডিয়ান থ্রিপিস এবং ফতুয়ার বায়না করতে যাচ্ছিল সিএনজিতে করে।

মারুফ সিএনজিতে বসেই মালের ব্যাপারে ফোনে কথা বলছিলো।

হঠাৎ করে খেয়াল করে দেখে যে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার কথা সেটা দিয়ে না গিয়ে সিএনজি চালক অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল।

মারুফ তা চালককে বলতে নিলে সিএনজি চালক বলল,ভাই সামনে রাস্তা ভালো তাই এদিক দিয়ে যাচ্ছি।

আমিও তা বিশ্বাস করি।
কিন্তু একটু সামনে গিয়ে সিএনজি তে হঠাৎ দুজন লোক লাফিয়ে আমার দুপাশে উঠে বসে ‌।
তারা আমার দিকে চেপে বসে আমার পেটের দিকে ছুড়ি ঠেকিয়ে জোরপূর্বক আমার কাছে থেকে সবকিছু নিয়ে যায়।
এরপর আমার মুখে কি যেন একটা স্প্রে করে।
তারপর আর কিছু মনে নেয়।
এরপর যখন জ্ঞান ফিরেছে নিজেকে হসপিটালে দেখলাম।
তার পরে কি হয়েছে তা তো ছেলেটার কাছে জানতে পেরেছেন।

মারুফের কথা শুনে সবাই বুঝতে পারছে মারুফ কালকে ছিনতাইকারীর হাতে পরেছে।

জেসিকা,মায়া বেগম , চাঁদনী বানু আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল মারুফ সহি সালামতে বাসায় ফিরেছে তাই।

জেসিকার বাবা মা আরো কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়।

মারুফের ঘুম পাচ্ছে দেখে ওকে খাওয়ায় দিল মায়া বেগম।
তারপর ছেলের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিলো।
কিছুক্ষণ মধ্যে মারুফের দুচোখে ঘুম নেমে এল।

কালকে রাতে সবাই জেগে ছিল
তাই আজকে তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার রুমে ঘুমাতে চলে যায়।
জেসিকা সবকিছু গুছিয়ে রুমে এসে দেখে মারুফ….

বিঃদ্রঃ এতো কষ্ট করে গল্প দেখি আপনাদের তেমন রেসপন্স পাচ্ছি না।
দয়াকরে নেক্সট না লিখে গঠন মূলক মন্তব্যে করুন।
গল্পে ভুল ত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দিতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here