#গল্পঃ #হৃদয়ের বন্ধন।
#পর্বঃ১১।
#লেখাঃ#মেহের।

একসময় মারুফের শার্ট বুকে জরিয়ে ধরেই জেসিকা ঘুমিয়ে রইল।
জেসিকা ঘুমে থেকে উঠে মাগরিবের নামাজ পড়া শেষ হলে রুমের বাহিরে আসে।

বাহিরে এসে দেখে সবাই বসে গল্প করছে।
তবে জেসিকা ওঁর শাশুড়িকে সবার সাথে এখানে দেখল না।
মনে মনে বলল,হয়তো আম্মু তার রুমে আছে।

চাঁদনী বানু ও দোলা আলোর সাথে হেসে কি যেন বলছেন,
তাদের কথা শুনে আলো হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
সকালে মারুফের বকা খেয়ে আলোর যেটুকু মন খারাপ ছিল তা এদের কথা শুনেই হয়তো ভালো হয়ে গেছে।

চাঁদনী বানু আলোকে বলছে চিন্তা করার কিছু নেই বুবু মারুফের সাথে আমি তোমার বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।
তোমার গুনের কাছে ওই জুস ফুস বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না।
আলো বললো ,দাদু তোমার দোয়া থাকলে আমি অবশ্যই মারুফ ভাইয়াকে পাব।

এসব কথা শুনে জেসিকার খারাপ লাগছে।
সেতো মারুফকে ভালবেসে ফেলেছে।
তাই মারুফের ভাগ কারো সাথে করতে হবে শুনলেই কলিজার ভিতরে আঘাত লাগে।
সে না পাপ ও ভুল করেছে
সেজন্য সবাই কাছে তো ক্ষমাও চেয়েছে।
ক্ষমা না করল তাই বলে কি দাদু তার জন্য সতীন নিয়ে আসবে এটা কোন কথা হলো!

জেসিকা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিল তখন তাকে দাঁড়ানো দেখে চাঁদনী বানু দোলাকে বলেন, ছোট বউ যাও, একটু কালি নিয়ে আসতো ।

দোলা বলল, আম্মা এই সময়ে কালি দিয়ে কি করবেন?

চাঁদনী বানু বলে, আমার মনে হচ্ছে দূরে থেকেই আলোর উপরে ডাইনী বদনজর দিচ্ছে।
তাইতো কালি দিয়ে নজর কাটাবো।
জেসিকা এটা শুনে বুঝতে পারছে তাকেই ডাইনী বলা হয়েছে।
কিন্তু জেসিকা এটা ভেবে পায় না ওঁর নাহয় ইসলামের সম্পর্কে জ্ঞান নেই ।
সে নতুন নামায পড়া ধরেছে। কিন্তু তারা তো নিয়মিত নামাজ পরে দ্বীনের পথে চলে তাহলে তারা কিভাবে এটা বলতে পারে কালি দিয়ে নজর কাটাবে!

আল্লাহ প্রতি তাদের বিশ্বাস থাকলে কিভাবে অন্য বস্তু দিয়ে নজর কাটানোর কথা বলতে পারে!
সামান্য কালির কী এমন শক্তি আছে যে বদনজর কাটাবে?

এদিকে চাঁদনী বানু জেসিকাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আরও নানা কথাই বললেন।
এসব কথা শুনে জেসিকা তাদের এখানে আর দাঁড়ায়নি।

জেসিকা তার শাশুড়ি মায়ের কাছে গেল।

শাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে দেখে সে খাটে বসে তসবিহ পড়ছে।
এটা দেখে ওখানে থেকে চলে আসতে নিলে মায়া বেগম জেসিকাকে কাছে ডাকে।

জেসিকা কাছে গিয়ে বলল, আম্মু সরি এই সময়ে এসে আপনাকে বিরক্ত করলাম। এসে আপনাকে ব্যস্ত দেখলাম তাই চলে যাচ্ছিলাম।

আরে নাহ্ বিরক্ত হবো কেন।
আমি এমনিতেই বসে বসে তসবিহ পড়ছি।

তা এখন তোমার শরীর কেমন?
ব্যথা কী বেশি করছে?

শাশুড়ির কথা শুনে জেসিকা বলল,আম্মু ব্যথা অনেকটাই কমে গেছে।
আপনি সকালে যে ঔষুধ দিয়েছেন সেটা খাওয়ার পরে।

এ কথা শুনে মায়া বলল, ওহ্, ভালো। তবে ঔষুধ আমি আনায়নি।
আমিতো এসব ঔষুধ চিনিই না।
জেসিকা বলল,আম্মু তাহলে এগুলো কে এনেছে!

জেসিকার কথা শুনে মায়া বলল, এগুলো তো সকালে মারুফ পাঠিয়েছে
দোকানের লোক দিয়ে।

এই একটা কথা শুনে মূহুর্তের মধ্যেই জেসিকার মন চঞ্চল হয়ে উঠল।
বুকের ভিতরে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে।
তার জন্য মারুফ ঔষুধ পাঠিয়েছ।
তার মানে মারুফ তার জন্য একটু হলেও ভাবে এটা কল্পনা করলেই জেসিকার কেমন সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে।

এমন হাজার কষ্ট মারুফের জন্য জেসিকা সহ্য করতে পারবে।

হঠাৎ মারুফের নাম শুনে জেসিকা মুখে চঞ্চলতা দেখা দিয়েছে সেটা মায়ার বুঝতে একটুও অসুবিধা হচ্ছে না।

তিনি শাশুড়ি হয়েও ছেলের বৌয়ের মনের অবস্থা ঠিক বুঝতে পেরেছে।
মারুফের মা খুশী হয়েছে জেসিকা যে তার ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে শুধরে নিয়েছে সেজন্য ‌।
এই মূহুর্তে জেসিকাকে দেখে ঠিকেই বুঝতে পেরেছেন তার শান্ত ছেলেটা এই দস্যি মেয়ের মনে অনেকটাই জায়গা দখল করে নিয়েছে।
মায়া মনে মনে বলছে, আমার ছেলেটা কবে যে জেসিকাকে মেনে নিবে তা আল্লাহ মালুম।
মায়া মনে মনে ছেলের জন্য দোয়া করলেন।
আল্লাহ তুমি ওঁর মনে জেসিকার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দাও।
যাতে মেয়েটা এই সংসারের কুটনৈতিক চাল থেকে বাঁচে।

মায়া ভাবল,আম্মাকে এসব থেকে থামানোর সাধ্য আমাদের নেই।
শুধু মারুফ তার দাদুকে থামাতে পারবে ।
জেসিকা শাশুড়িকে অনেকক্ষণ চুপচাপ দেখে বলল, আম্মু আপনার শরীর কী খারাপ লাগছে ?
মায়া বলল,নাহ্ শরীর ঠিকেই আছে।

জেসিকা শাশুড়ির সাথে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে নিজের রুমে চলে গেল।

একমাস পর,,,,
ইদানিং জেসিকার খুব কান্না পায়।
মারুফের একটু ভালোবাসা পেতে মনটা ছটফট করে।
কিন্তু ভালোবাসা তো দূরের কথা মারুফের সাথে দেখাই হয়না।
মানে মারুফ ওঁর আশেপাশেও আসে না।
মনের কষ্টগুলো ভাগাভাগি করার একটা মানুষও নেই।
শাশুড়ি মা ছাড়া এ বাসায় কেউ জেসিকার সাথে কথা বলে না।
জেসিকা বুঝতে পারে কোমল তার সাথে কথা বলতে চাই ।
তবে কোমলকে ওঁর সাথে দাদু কথা বলতে দেয় না।
দাদু ও আলো একজোট হয়ে এ বাসার সবাইকে আমার কাছে থেকে সরিয়ে রাখে।
দাদুর প্রশ্রয় পেয়ে আলো এখনো এই বাড়ি থেকে যায়নি।

দাদু ও আলো একজোট হয়ে আমার সঙ্গে সব সময় খারাপ আচরণ করে ।
তারা দুজন আমাকে সবসময় অপদস্থ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এভাবেই জেসিকার দিন পার হচ্ছে।
এই একমাসে জেসিকার বাবা দুবার দেখা করতে এসেছিল ।
জেসিকা ওঁর বাবাকে এসব কিছুই বলেনি।
ওঁ জানে এসব শুনলে ওঁর বাবা এ বাড়ির সবাইকে একহাত দেখে নিবেন।
তাতে মারুফ রাগ হয়ে ওকে ছেড়েও দিতে পারে।

আর জেসিকা সেটা চায় না। জেসিকা কিছুতেই এখন মারুফকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
মারুফ কখনো জেসিকার কাছে বা রুমে আসে না।
তাতেও জেসিকার ভালোবাসা কমেনি বরংচ বেড়েই চলেছে।
জেসিকা এ পর্যন্ত লুকিয়ে লুকিয়ে মারুফের মে কত ড্রেস এনে নিজের ঘরে জমা করেছে।

রাতে মারুফের সেই জামাকাপড় গুলো বিছানায় নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
মারুফকে কাছে না পেলেও মারুফকে জামাকাপড় থেকে মারুফের ঘ্রাণ শুঁকে নিজের মনকে সান্তনা দিচ্ছে।
কতরাত ছটফট করছে মারুফকে একটু কাছে পেতে কিন্তু সাহেবের হয়তো মনেই নেই ঘরে তার একটা বৌ রয়েছে।
আচ্ছা আমার শাস্তি কি এই জীবনেও মারুফের কাছে শেষ হবে না?
নাহ্ আর এসব ভেবে সময় নষ্ট করা যাবে না।
ওকে তো রান্না করতে হবে।
কিছুদিন হয়েছে ওকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করায়।
কিন্তু ও ঠিক মত করে কাজ করতে পারে না তাই চাঁদনী বানু তার কথার ফুলঝুরি ছাড়ে।

সেদিন মাছ কাটতে গিয়ে হাত কেটেছিল সে জন্য চাঁদনী বানু মুখে যা এসেছে তাই বলেছেন।
এমনকি কাটা হাত বাঁধতে দেয়নি ।
অনেক রক্ত বের হয়েছিল।
অবশ্য শাশুড়ি মা সেদিন দাদুকে রাগে বলেছিল, মেয়েটাকে এতো কষ্ট না দিয়ে একবারে মেরে ফেলেন তাহলে ভালো হবে।
এ কথার জন্য শাশুড়ি মাকে দাদুর বকাও খেতে হয়েছে।

তবে নিজের সংসারের কাজ করতে খারাপ লাগছে না।
এসব ভাবতে ভাবতে জেসিকার মনে পড়ল ওঁর দেরি হচ্ছে।
তাই তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছে আর বিরবির করছে,
ইস্ দেরি হয়ে যাচ্ছে যলদি গিয়ে কাজে নেমে পরি নাহলে দাদু আমায় আর আস্তো রাখবে না।

এদিকে মারুফ রাতের খাবার খেয়ে রুমে পায়চারি করছে।
ইদানিং কাজের চাপ বাড়ছে তাই দুপুরে বাসায় এসে খেতে পারে না।
কিন্তু বাসায় যতটুকু সময় থাকে জেসিকার গতিবিধি খেয়াল করে।
মারুফ খেয়াল করে দেখেছে বাসার প্রায় সব কাজেই ওকে দিয়ে করাচ্ছে দাদু।
বেচারিকে দিয়ে রান্না বান্না করাচ্ছে।
অবশ্য রান্নার হাত খুব কাঁচা এজন্য দাদু ওকে আজেবাজে কথা বলে।
সবই শুনি তো
এমনকি দাদু ওকে দিয়ে বুয়ার কাজও করায় মারুফ নিজে দেখেছে ।

মারুফ এতদিন এসব দেখে কিছুই বলেনি কিন্তু যেকোনো কিছুর সহ্যের সীমা অতিক্রম করতে নেই।
জেসিকার পরিবর্তন মারুফ টের পায়।
যে মেয়ের আড্ডাবাজী করে দিন যেত সে আজকাল সংসারের জন্য ভার্সিটিতে ও যাচ্ছে না।
তবে জেসিকা পড়াশোনা নিয়ে অবহেলা করুক সেটা মারুফ চায় না।
আজকেই এ বিষয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে।
মারুফ জেসিকার রুমে যাওয়ার আগে শার্ট খুঁজতে লাগল পড়তে।
দোকানে থেকে এসেই নোংরা শার্ট প্যান্ট খুলে রেখেছে।
তাই অন্য শার্ট খুচ্ছে পড়তে।
মারুফ একমাস ধরে খেয়াল করেছে তার জামাকাপড় উধাও হয়ে যাচ্ছে।
মারুফ ভেবে পায়না কার আবার তার পরনের জামাকাপড়ের প্রয়োজন হল।
নাহ্ এটা পরে ভাবলেও চলবে এখন কিছু একটা পড়ে জেসিকার সাথে আগে কথা বলে আসি মারুফ বিরবির করে নিজের সাথেই কথা বলছিল।
মারুফ জেসিকার রুমে নক করে ঢুকলো।
জেসিকা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এরমধ্যে নক করার শব্দ পেয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে মারুফকে রুমে ঢুকতে দেখল।
জেসিকার বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে মারুফ তার রুমে এসেছে।
জেসিকাকে বোকার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে মারুফ বলল, তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
জেসিকা মারুফের আওয়াজ শুনে বিশ্বাস হলো সত্যি যে মারুফ ওঁর রুমে এসেছে।

জেসিকা মনে মনে বলছে,কিন্তু মারুফ যে বলল,সে নাকি আমার সাথে কথা বলতে এসেছে।
আচ্ছা মারুফ আবার আমাকে এ বাড়িতে থেকে বের করে দিতে চাইছে না তো?
আমি যে ওকে ছাড়া থাকতে পারব না।
ও চাইলেও আমি কিছুতেই এ বাড়ি ছেড়ে যাব না।
যদি যেতেই হয় আমার লাশ যাবে।
জেসিকা মনে মনে এসব ভাবছিল এরমধ্যে মারুফ বলে উঠল,,,,,

বিঃদ্রঃ এতো কষ্ট করে গল্প দেখি আপনাদের তেমন রেসপন্স পাচ্ছি না।
দয়াকরে নেক্সট না লিখে গঠন মূলক মন্তব্যে করুন।
গল্পে ভুল ত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দিতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here