গল্পঃ হৃদয়ের বন্ধন।
পর্বঃ১০।
লেখাঃ #মেহের।

তোমার মত মানুষের সান্নিধ্য পেতে এই কষ্ট তো কিছুই না।

দিন দিন জেসিকার প্রতি চাঁদনী শাসন অত্যাচার বেড়েই চলেছে।

প্রতিদিন রান্না ঘরের আশেপাশে জেসিকাকে ঘুরঘুর করতে দেখে চাঁদনী বানু মনে মনে ফন্দি আঁটে।
একসময় চাঁদনী বানু জেসিকাকে রান্না ঘরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দেয়।
তবে তার মনে চলছিল অন্যকিছু তাতো জেসিকা জানে না।
জেসিকা দাদুর অনুমতি পেয়ে খুশি মনে রান্না ঘরে কাজ করতে যায়।
এদিকে চাঁদনী আলোকে ইশারায় কিছু বলল।
আলো তার ইশারা বুঝতে পেরে মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে।
জেসিকা কাজ করছিল তখন আলো গরম পানি নিয়ে রান্না ঘরে থেকে বাহিরে যাচ্ছিল। চাঁদনীর ইশারা মত হাতের থাকা গরম পানির পাতিলে থেকে কিছুটা পানি জেসিকার শরীরে ফেলা ধরলে জেসিকা কাজের জন্য অন্যপাশে ফিরলে ওঁর
হাতে গরম পানি পড়ে।

গরম পানি হাতে পরাতে জেসিকা চিৎকার করে উঠল।

ওঁর চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে রান্না ঘরে চলে এলো।

আলো সবাইকে দেখে বলল, আমি গরম পানি নিয়ে যাওয়ার সময় ভুলবশত ওঁর হাতে কিছুটা পানি পরে গেছে।

এরমধ্যে চাঁদনী বানু বলেন, আলো এখানে তোর কোন দোষ নেই এই জুসেই তো হঠাৎ করে তোর সামনে এসেছে।
নাহলে তো আর পানি পরতো না।
দোলা বলে,আরে বাপু একটু না হয় হাতে গরম পানি পরেছেই তার জন্য এভাবে চিৎকার করে আমাদের ভয় পাওয়াতে কে বলেছে?

জেসিকা এদের কথা শুনে কিছু না বলেই রুমে চলে গেল।
রুমে যেয়ে জামা খুলে দেখে বাম হাতের একপাশে অনেকখানি জায়গা লালচে হয়ে গেছে।
সেখানে ব্যথা ও জ্বালা করছে ।
জেসিকা ছোট থেকেই ননীর পুতুল মত মানুষ হয়েছে।

তাই সবার কাছে সামান্য মনে হলেও ওঁর কাছে এই ব্যথা সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে বলে কান্না করে দেয়।

জেসিকা রুমে আসার কিছুক্ষণ পরেই রুমে নক করার আওয়াজ পেলো।

জেসিকা কে এসেছে বুঝতে পারছে না।
তাড়াহুড়ো করে জামা পরে দরজা খুলে দেখে ওঁর শাশুড়ি মা দাঁড়িয়ে আছে।

জেসিকা শাশুড়ি মাকে দেখে বলল,আম্মু কিছু লাগবে?

মায়া জেসিকার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বলল, জামা খুলে ওড়না জরিয়ে এদিকে এসে বসোতো।

জেসিকা শাশুড়ির কথা শুনে লজ্জা পেয়েছে এবং অবাক হয়েছে!

মায়া আবার তাড়া দিল ওড়না জরিয়ে বসতে।
জেসিকা শাশুড়ির কথা মতো জামা খুলে ওড়না জরিয়ে তার সামনে বসল।
মায়া হাতের উপরে থেকে ওড়না সরিয়ে লালচে হওয়া জায়গায় আলতো করে বার্ন মলম দিয়ে দিল।
জেসিকা শাশুড়ি মাকে ধরে কান্না করছে।
মায়া জেসিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে, কাঁদে না ।
তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি।
একটু সহ্য কর মা ব্যথা কমে যাবে।
জেসিকা তার শাশুড়ির মায়ের কথা শুনে কিছুটা শান্ত হলো।

মায়া বলল, চিন্তা কর না ব্যথা কমে যাবে‌।
আর এখন আমি বাহিরে যাচ্ছি তুমি দরজা বন্ধ করে রেস্ট নেও।

মারুফ আজকে কাজের চাপে দুপুরে বাসায় আসতে পারে নায়।
ওঁর বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে যায়।
রাতে এসেই আগে মায়ের সাথে দেখা করতে গেলো।
যেয়ে দেখে কোমল মাকে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারাচ্ছে।

তাই কোন শব্দ না করেই মায়ের রুমে থেকে বাহিরে এসে পড়ল।

ফ্রেস হয়ে টেবিলে এসে খাবার দেওয়া দেখে সেখানে থেকে কোন রকমে কিছু খেয়েই রুমে চলে গেল।
মারুফের আজকে সারাদিন অনেক পরিশ্রম হওয়াতে শরীর বেশ ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেল।

জেসিকার ইদানিং রাতে ঘুম আসে না।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় মারুফের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাতে।
জেসিকা মারুফের একটু ছোঁয়া পেতে কাঙাল হয়ে আছে।
জেসিকার মনে দিন দিন মারুফের জন্য শক্ত জায়গা তৈরি হয়েছে।
জেসিকার আজকাল মনে হয় মারুফকে ভালবেসে ফেলেছে।
মারুফকে একটু কাছে পেতে বা মারুফের মুখে দুটো কথা শুনতে মন অস্থির হয়ে থাকে ।
কিন্তু নিজের করা পাপের জন্য তা কখনো সম্ভব হবে কিনা জেসিকার জানা নেই।

জেসিকার দিন দিন মনে হচ্ছে মারুফকে না পেলে সে পাগল হয়ে যাবে।
জেসিকা আশ্চর্য হয়ে যায় এটা ভেবে যে কখনো তো ঐ শয়তানটার জন্য এমন লাগেনি !
তাহলে মারুফের জন্য ওঁর মন এত আঁকুপাঁকু করে কেন?

মারুফ ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করে মায়ের রুমে যায়।

সেখানে গিয়ে মারুফ দেখে তার মা রুমে নেই।
রুমে থেকে বাহিরে এসে দেখে ওঁর মা জেসিকার রুমে থেকে বের হয়েছে।
মারুফ ভেবে পাচ্ছে না এতো সকালে তার মা জেসিকার রুমে কি করছিল!

এদিকে মারুফকে দেখে মায়া বলল,বাবা আমার রুমে আয় কথা আছে।

মারুফ মায়ের পিছনে পিছনে তার রুমে গেল।
মায়া বেগম খাটে বসে পা মেলে বসল।
মারুফ তার মাকে বসতে দেখে মায়ের পায়ের উপরে মাথা রেখে শুয়ে বলল,মা একটু বিলি কেটে দাও তো।

মায়া বেগম মারুফের মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলো আর টুকটাক কথা বলছিল।

মারুফ তার মাকে বলল, মা সকালে উঠেই ঐ রুমে যাওয়ার কী দরকার ছিল ?
মারুফের মা ছেলের প্রশ্ন শুনে বলল, বাবা মেয়েটা চেষ্টা করছে ভালো হতে দ্বীনের পথে আসতে আমাদের উচিত ওকে সাহায্য করা।
আর তাছাড়া অসুস্থ্য শরীরে নামায পড়তে উঠছে কিনা তা দেখতে গিয়েছিলাম।
জেসিকা অসুস্থ্য শুনে মারুফের বুকের ভিতরে অস্থির লাগছে।

মারুফ তার বুকের ভিতরের অস্থিরতা সহ্য করতে না পেরে মাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,মা জেসিকার কী হয়েছে?

ছেলের প্রশ্নে মায়া বেগম একে একে কালকের ঘটা সব ঘটনা মারুফকে খুলে বলল।

মারুফের সবকিছু শুনে বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা আলো ইচ্ছে করে করেছে এতে তার দাদুর যথেষ্ট মধক রয়েছে।
মারুফের আলোর উপরে অনেক রাগ উঠেছে ।
ও জেসিকার জন্য খুব খারাপ লাগছে।
এই মূহুর্তে মারুফের
জেসিকাকে এক নজর দেখতে ইচ্ছে করছে ।
কিন্তু যাবে কিনা তা নিয়ে মনের মাঝে দ্বিধা কাজ করছে।

মারুফের চোখে মুখে দ্বিধা দেখে মায়া বেগম বললেন,মারুফ স্ত্রীর ভালো মন্দ দেখা কিন্তু একজন ভালো স্বামীর দায়িত্ব।

মারুফ মায়ের কথায় কিছু বলল না।
মায়ের সাথে আরও কিছুক্ষণ গল্প করল।
এরপর মায়ের রুমে থেকে বাহিরে এসে মারুফ জেসিকার রুমের দিকে গেল।
জেসিকার রুমে গিয়ে দেখে জেসিকা ঘুমাচ্ছে।

মেয়েটা অসুস্থ্য তাই ঘুমাচ্ছে দেখে জেসিকাকে না জাগিয়ে রুমের বাহিরে এসে পড়ল।
নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল।

এদিকে জেসিকার ঘুম ভাঙল চিল্লাচিল্লি শুনে।

জেসিকা বাহিরে এসে দেখে মারুফ তার মা ও কাকিকে বলছে আলো ছাড়া কি এই বাসায় আর কেউ নেই।
আমাকে খাবার দিতে ওকেই কেন বলা হয়।
তোমরা খাবার দিতে না পারলে বলে দিও বাহিরে থেকে খেয়ে নিবো।
চাঁদনী বানু বুঝতে পারছে না তার নাতি হঠাৎ করে আলোকে নিয়ে এমন রাগারাগী করেছে কেন?

কিন্তু এই মূহুর্তে নাতির সাথে এ বিষয়ে কথা বলে আর ঝামেলা বাড়াতে চায় না।
তাই চুপচাপ নাতির কথা হজম করছে।
সকালে মারুফ রাগ হয়ে নাস্তা না করেই দোকানে চলে গেল।

জেসিকা অনেক খুশি হয়েছে আলোকে বকা দেয়াতে ।
তবে মারুফ না খেয়ে যাওয়ায় ওঁর মনটা একটু খারাপ আছে।
জেসিকার চিন্তা হচ্ছে মারুফ দোকানে গিয়ে খেয়েছে কিনা তা ভেবে।
সবাই কাজে ব্যস্ত শুধু জেসিকা রুমে বসে আছে।
শাশুড়ি মা তাকে রুমে বসে রেস্ট নিতে বলেছেন।
দুপুরের পরে জেসিকার রুমে বসে থাকতে আর ভালো লাগছিল না ।
তাই ছাদে হাঁটাহাঁটি করতে গেল।
সেখানে গিয়ে দেখে মারুফের কিছু শার্ট ও প্যান্ট ধুয়ে শুকাতে দেওয়া হয়েছে ।
জেসিকা কাপড়গুলো ছুঁয়ে দেখে ওগুলো শুকিয়ে গেছে ।
কাপড় চোপড়গুলো নিতে গিয়ে
আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কেউ আছে কিনা।
যখন দেখলো আশেপাশের কেউই নেই।
তখন মারুফের কাপড়গুলো নিয়ে ভো দৌড়ে নিচে নেমে এলো।
তারপর কাপড় গুলো লুকিয়ে আস্তে আস্তে নিজের রুমে গেল।

রুমে এসে দরজা লাগিয়ে কাপড় চোপড় গুলো নিয়ে খাটে বসল।
জেসিকা মারুফের শার্টে হাত বুলাচ্ছে আবার বারবার নাকে কাছে নিয়ে শার্ট থেকে মারুফের শরীরের ঘ্রান পেতে ওগুলো শুঁকছে ।
কখনো কখনো আবার চুমু দিচ্ছে।
জেসিকা শার্ট প্যান্ট গুলোকে জরিয়ে ধরে মনে মনে বলল, তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে না পাড়লেও তোমার পড়া শার্টের ঘ্রান তো নিতে ও ছুঁতে পারচ্ছি এইতো আমার জন্য অনেক।
তোমার শার্ট জরিয়ে ধরলে মনে হচ্ছে তোমাকে জরিয়ে ধরেছি।
আচ্ছা তোমাকে জরিয়ে কী কখনো জরিয়ে ধরতে দিবে আমায়?
জেসিকা মারুফের শার্ট জরিয়ে ধরে আজকে সব না বলা কথা গুলো বলছে।
একসময় মারুফের শার্ট জরিয়ে ধরেই জেসিকা শুয়ে রইল।

বিঃদ্রঃ এতো কষ্ট করে গল্প দেখি আপনাদের তেমন রেসপন্স পাচ্ছি না।
দয়াকরে নেক্সট না লিখে গঠন মূলক মন্তব্যে করুন।
গল্পে ভুল ত্রুটি থাকলে তা ধরিয়ে দিতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here