হৃদমোহিনী
পর্ব ৫
মিশু মনি
.
৬.
ট্রাকের উপর উঠে অদ্ভুত চোখে চারিদিকে একবার তাকালো মিশু। হেডলাইটের আলোয় সবকিছু একদম অন্যরকম লাগছে। হাইওয়েতে দ্রুতগতিতে চলতে শুরু করেছে ট্রাকটা। আশেপাশে দুই দিক থেকেই হুশ করে বাস ট্রাক চলে যাচ্ছে। কোনো কোনো গাড়ি আবার জোরে হর্ণ ও বাজাচ্ছে। যেদিকে চোখ যাচ্ছে দুদিকে সুন্দর গাছের সাড়ি, চাঁদের আলোয় সবকিছুই অন্যরকম রূপ ধারণ করেছে। এত সুখ লাগছে দেখতে যে মিশুর আনন্দে লাফালাফি করতে ইচ্ছে করছে।

মিশুকে ধরে এনে পিছনের দিকে একটা বস্তার উপর বসিয়ে দিলো মেঘালয়। ট্রাকের অর্ধেক পর্যন্ত বস্তাভর্তি। আর বাকিটা ফাঁকা। ইচ্ছে হলে দাঁড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে, আবার বসেও যাওয়া যাচ্ছে। মিশুর গায়ে একটা চাদর ছিলো,সেটাকে ভালোমতো গায়ে মুড়িয়ে নিয়েছে ও। তাই খুব একটা ঠাণ্ডা লাগছে না। যদিও শিরশিরে বাতাস এসে হাত পা ও কান শীতল করে দিয়ে যাচ্ছে।

মেঘালয় বস্তার উপর শুয়ে পড়লো। চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে লাগলো। মিশুও শুয়ে পড়লো মেঘালয়ের পাশেই। আকাশে শুক্লপক্ষের চাঁদ, লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র। মনেহচ্ছে তারাগুলো মিটিমিটি হাসছে আর হাত নাড়ছে ওদের দিকে। মিশুও হাত নাড়তে লাগলো। আর বললো, “আমি শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখছি আর মনেহচ্ছে বাতাসে ভেসে চলেছি। এমন হাইওয়ে ধরে শুয়ে শুয়ে যাবো আর আকাশ দেখবো এটা কক্ষনো কল্পনাও করিনি।”

মেঘালয় বললো, “মানুষ যা কল্পনাও করেনা, সেটা করে তাদেরকে চমকে দিতে আমার দারুণ মজা লাগে।”
-“হুম তাই তো মনেহচ্ছে। থ্যাংকস এটার জন্য। আমার এত আনন্দ হচ্ছে! আমি আজীবন গল্প শোনাবো সবাইকে যে, আমি শুয়ে থেকে আকাশ দেখতে দেখতে জার্নি করেছি। জোৎস্না স্নান করেছি ট্রাকের উপর শুয়ে। কি থ্রিলিং ব্যাপার!”

সত্যিই ব্যাপারটা দারুণ থ্রিলিং। ট্রাকে শুয়ে জোৎস্না স্নান, চাঁদের আলোয় শরীর মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে। নক্ষত্র গুলো হাসছে, চাঁদ টাও গল্প করতে চাইছে যেন। মনেহচ্ছে চাঁদের আলো গিলে খাওয়া যাবে। মুগ্ধ হতে হতে চরম পর্যায়ে পৌছে যাচ্ছে মিশু। হিমুর গল্পে ও পড়েছিলো একজন লোক হা করে গপগপ করে চাঁদের আলো খেয়ে ফেলে। মিশুর ও সেভাবে খেতে ইচ্ছে করছে। ও হাত বাড়িয়ে হাতের মুঠোয় চাঁদের আলো ধরে হা করে মুখে পুড়ে দিতে লাগলো যেন আলো গিলে খাচ্ছে। গপাগপ এভাবে আলো ধরে খেতে লাগলো। মেঘালয় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে মিশুর দিকে চেয়ে রইলো মুগ্ধ হয়ে। মেয়েটা জোৎস্না খাচ্ছে? কি অদ্ভুত!

মেঘালয় বললো, “আমরা বন্ধুরা মিলে একবার সাজেকে ঘুরতে গিয়েছিলাম। রাত্রিবেলা যখন সবাই মিলে পাহাড়ের উপর শুয়ে আকাশ দেখছিলাম, মেঘ উড়ে এসে আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছিলো। কেবলই মনেহচ্ছিলো আকাশে একটা ঢিল ছুড়লেই সমস্ত তারা টুপ করে ঝরে পড়বে আমাদের গায়ের উপর।”

মিশু উত্তেজিত হয়ে বললো, “তাই! আমার অনেক ইচ্ছে সাজেকে যাওয়ার। আমি কখনো সাজেক যাইনি। তন্ময় বলেছিলো আমাকে সাজেক,বান্দরবান,রাঙামাটি এরকম সব পাহাড়ি এলাকায় আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে। আমি কত্ত প্লান করতাম ওর সাথে। কিন্তু হুট করেই এমন হয়ে যাবে সবকিছু, আমি ভাবতেও পারিনি। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।”

মিশু বসে পড়লো বস্তার উপর। ওর বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। গতরাতেই সারারাত বাসে ছিলো আর পুরোটা পথ তন্ময়ের সাথে ফোনে কথা বলেছে। একদিনের ব্যবধানেই সমস্ত কিছু ওলট পালট হয়ে গেছে। আর আজকে ও মেঘালয়ের সাথে ট্রাকে জার্নি করেছে। দুনিয়াটা বড্ড অদ্ভুত জায়গা। চোখের পলকে কত দ্রুত সবকিছু বদলে যায়!
মিশু মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনার ফোনটা কি একটু দেবেন? আমি একটু ফোন করতাম।”

মেঘালয় নিঃশব্দে ফোনটা বের করে মিশুর হাতে দিলো। মিশু ফোন নিয়ে তন্ময়ের নাম্বার তুলে ডায়াল করে কানে ধরতেই শুনতে পেলো তন্ময়ের ঘুম জড়ানো গলা। এত সুন্দর ঘুম জড়ানো আবেগমিশ্রিত কণ্ঠটা শুনে বুকটা আরেকবার মোচড় দিয়ে উঠলো। মিশু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, “আমি বলছি।”

অনেক্ষণ আর কোনো কথা শোনা গেলো না। কলটা কেটে গেলো হুট করে। মিশুর বুকে যেন সমুদ্রের তীরে আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউয়ের মতন একটা চাপা বেদনা এসে আঘাত করলো। ও আবারো কল দিলো তন্ময়কে। তন্ময় রিসিভ করে বললো, “তোমার সমস্যাটা কি? আমিতো ক্লিয়ার করে বলেই দিয়েছি এই রিলেশন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে পসিবল না। এখন কি আমার পায়ে ধরতে চাচ্ছো তুমি? পায়ে ধরলেও আর রিলেশন কন্টিনিউ করতে পারবো না।”

মিশুর কান্না এসে গেলো। গলাটা ধরে এলো। তবুও কষ্ট করে বললো, “তোমার কণ্ঠটা শুনতে খুব ইচ্ছে করছিলো।”

তন্ময়ের রাগত স্বর শোনা গেলো, “শুনার ইচ্ছে হইছিলো এখন তো শোনা হলো। এইবার দয়া করে ফোনটা রাখো। আর এতরাতে কল দিছো কোন আক্কেলে? তোমার জ্ঞান বুদ্ধি নাই? এইভাবে এতরাতে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করার কোনো মানে হয়? মাত্র ঘুমাইলাম আমি।”

তন্ময়ের রাগ আর এরকম কথাবার্তা শুনে মিশুর মরে যেতে ইচ্ছে করছে। গত রাতেও তো মিশু রংপুর থেকে ঢাকা আসার পথে সারারাত তন্ময়ের সাথে ফোনে কথা বলেছে। আর আজকেই সবকিছু বদলে গেলো? ভেতর থেকে ঠেলে কান্না আসতে চাইছে মিশুর। চুপ করে রইলো ও। আর বলার মত কিইবা থাকতে পারে। কলটা আবারো কেটে গেলো।

মিশুর ইচ্ছে করছে লাফ দিয়ে একটা গাড়ির চাকার নিচে চলে যেতে। এই যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকাটা খুবই কষ্টকর। তন্ময়কে ছাড়া একটা মুহুর্তও ভাবতে পারছে না সে। অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে ছেলেটা। ওকে বাদ দিয়ে কিভাবে বাঁচা সম্ভব?

মিশু মেঘালয়ের সামনে কাঁদতেও পারছে না। ফোনটা মেঘালয়ের হাতে দিয়ে উঠে এসে ট্রাকের পিছনের দিকে দাঁড়ালো। রাস্তায় অনেক বাস চলাচল করছে। হেডলাইটের আলোয় রাস্তা দেখতে দেখতে চোখ মুছলো। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে পড়ছে। গলাও ভিজে যাচ্ছে চোখের পানিতে। এরা যদি আজীবনের জন্য পাশে নাই থাকবে তাহলে জীবনে আসে কেন? একটা মেয়ের জীবনটা নিয়ে এভাবে খেলা করার কোনো মানে হয়?

-“কার জন্য কাঁদছো?”

চমকে উঠলো মিশু। মেঘালয় এসে দাঁড়ালো ওর পাশে। একদম কাছ ঘেষে দাঁড়িয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলো। মিশু চোখ মুছে বললো, “আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। পারছি না সহ্য করতে।”

মেঘালয় বললো, “এত তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিলে কি হবে? জীবন তো মাত্র শুরু। সামান্য একটা ছেলের জন্য তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে?”
-“হ্যা যাবে। আমার ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দিতে। মরে যেতে ইচ্ছে করছে। তন্ময়কে ছাড়া আমি ভাবতে পারিনা কিছু। আমার সুইসাইড করতে ইচ্ছে করছে।”

মেঘালয় একটু এগিয়ে মিশুর মুখের কাছাকাছি এসে বললো, “তবে তখন ওভাবে ছুটছিলে কেন? নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রাণপণে ছুটছিলে কি কারণে বলো? তুমি তো বললে একটা লোক তোমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছিলো। পালালে কেন তার হাত থেকে? নিজেকে ছেড়ে দিতে,সে তোমাকে মেরে ফেলতো। ভালোই হতো তাইনা?”

মিশু মেঘালয়ের চোখের দিকে তাকালো। কান্না থেমে গেলো হঠাৎ করে। সত্যিই তো, কেন নিজেকে রক্ষা করার জন্য ওভাবে ছুটছিলো ও? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো।
মেঘালয় বললো, “তুমি পালিয়েছো শুধুমাত্র একটা কারণে সেটা হচ্ছে তুমি তোমার নিজেকে অনেক বেশি ভালোবাসো। যাকে ভালোবাসতে, তারচেয়েও বেশি ভালোবাসো তোমার নিজেকে। ঠিক সে কারণেই নিজের কোনো ক্ষতি করতে চাওনি। প্রাণপণে ছুটে পালিয়ে এসেছো। তুমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসো, বুঝেছো?”

মিশু মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, “হ্যা। আমি আমাকে ভালোবাসি। আমি চাইনি আমার অকাল মৃত্যু হোক।”
-“তাহলে এখন কেন বলছো মরে যেতে ইচ্ছে করছে? লজ্জা করেনা এটা বলতে? মরতে চাইলে বলো আমি একটা বাসের সামনে তোমাকে তুলে ছুড়ে ফেলে দিবো। বাস তোমাকে পিষে চলে যাবে। রাজি?”

মিশু উত্তেজিত হয়ে উঠলো। না,এখন একদমই মরতে ইচ্ছে করছে না। কেন মরবে সে? এত সুন্দর জীবনটাকে এত সহজে শেষ করার কোনো মানে হয়না। নিজেকে কষ্ট দিতে পারবে না ও। কিছুতেই পারবে না।

মেঘালয় বললো, “মানুষ কখনো অন্যকারো জন্য আত্মহত্যা করেনা। মানুষ আত্মহত্যা করে নিজের জন্য। কারণ নিজের অপমান সহ্য করতে পারেনা কেউ। তাহলে নিজেকে মেরে ফেলতে চায় কেন? ওরকম নির্বুদ্ধিতার কোনো মানে হয়?”

মিশু কোনো জবাব দিলোনা। শরীরটা কাঁপছে ওর। মেঘালয়ের গলায় তেজ বেড়েছে। রাগী রাগী গলার কথাগুলো শুনতে শুনতে ভেতরটা কেঁপে যাচ্ছে। নতুন ভাবে নিজেকে বুঝতে শিখছে যেন।

মেঘালয় একদম মিশুর সামনা সামনি এসে দাঁড়ালো। মিশু ট্রাকের পিছনে হেলান দিয়ে মেঘালয়ের চোখে চোখ রেখে তাকালো। মেঘালয় দুহাত মিশুর দুদিকে দিয়ে ওকে হাতের বন্ধনে বেঁধে ফেলে বললো, “একটা কথা তোমাকে বলি? কার ভালোবাসা পেতে চাও তুমি? যার ভালোবাসা পেতে চাও তার ভালোবাসা পাওয়ার কতটা যোগ্যতা তোমার আছে? এটা ভেবে তবেই ভালোবাসার সম্পর্কে এগোনো উচিৎ। যদি তোমার যোগ্যতা তার চেয়ে কম থাকে,তাহলে তারজন্য না কেঁদে নিজেকে অনেক বেশি যোগ্য করে গড়ে তুলে তারপর তার ভালোবাসা চাইবে।কারণ তুমি অযোগ্য হলে সে কেন তোমাকে ভালোবাসবে? সে অবশ্যই নিজের যোগ্যতার সমান কাউকেই চাইবে। আর যদি তোমার যোগ্যতা তারচেয়ে বেশি থাকে,তাকে হারানোর জন্য কেন এভাবে কাঁদবে? সেই কাঁদবে তোমার মত একটা রত্নকে হারানোর জন্য। কখনোই অন্যের কাছে নিজেকে এতটা সস্তা করে তুলোনা যতটা সস্তা হলে সুইসাইড করার ইচ্ছে জাগে। প্রত্যেকের উচিৎ নিজেকে ভালোবাসা। বুঝেছো?”

মিশুর মগজ যেন ঝালাই হয়ে যাচ্ছে। মাথার ভেতর বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। প্রবল বাতাসে ওর চুল উড়ে মেঘালয়ের মুখের উপর গিয়ে পড়ছে। তবুও মেঘালয় চুল সরাচ্ছে না। সামনা সামনি দাঁড়িয়ে দুহাতে মিশুকে আটকে ফেলে চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলেই চলেছে।

আবারো বললো, “তুমি তোমার যোগ্যতা আর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানো। তাহলে কেন অন্যের জন্য নিজেকে শেষ করে দিবে? তোমার ভেতরের আলোয় নিজেকে রাঙাও। সমাজকে রাঙাও, পৃথিবীকে রাঙাও। এদেশে ভালো দেশপ্রেমিকের বড়ই অভাব। দেশের জন্য কিছু করো। এ সমাজকে একটু উন্নত না করে মরার কথা ভাবতে লজ্জা লাগেনা? তুমি কি মানুষ?”

মিশুর কান্না পাচ্ছে। এভাবে অপমানিত কখনো হয়নি ও। কিন্তু এই অপমানজনক কথাগুলোও মধুর মত কানে বাজছে। এত সুন্দর করে কখনওই কেউ বলেনি তো। এত সুন্দর করে কাউকে ভাবতেও দেখেনি মিশু।

মেঘালয় বললো, “তোমার বাপ মা আর এই দেশ তোমার কাছে অনেক কিছুই আশা করে। বাপ মা বলতে পারে কিন্তু দেশের তো মুখ নেই তাই বলতে পারেনা। প্রকৃতি চায়,তাকে তুমি আগলে রাখো। পৃথিবী চায়,তাকে তুমি সুন্দর রাখো। কিন্তু পৃথিবী তো সেটা বলতে পারেনা,কারণ পৃথিবীর কথা বলার শক্তি নেই। পৃথিবীর কাজ হচ্ছে নিজ কক্ষপথে ঘোরা। যদি পৃথিবীর কথা বলার শক্তি থাকতো, তবে সে কাঁদতে কাঁদতে বলতো এই সমাজটাকে এতটা নোংরা করে দিওনা। একটু সুন্দর করে যাও।”

মিশু মুগ্ধ হয়ে গেলো এবার। ইস! এতটা সুন্দর করে কেউ কথা বলতে পারে! মুগ্ধতার চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে সে। বিস্ময়ে চোখের পলক ও পড়ছে না।

মেঘালয় বললো, “সমাজের জন্য কি করেছো? দেশের জন্য কি করেছো? পৃথিবীর জন্য কি করেছো? বাবা মায়ের জন্য দুটাকা ইনকাম করে তার হাতে দিলে তারা খুশি হয়। কিন্তু এই দেশে তোমার জন্ম,এই পৃথিবী,এই প্রকৃতি নিজ হাতে তোমাকে আগলে রেখেছে তার জন্য কি করেছো তুমি? আছে কোনো জবাব? যে তোমাকে আগলে রেখেছে তার জন্য কোনো মায়া হয়না?”

মিশু একটা ঢোক গিলে বললো, “হ্যা হয়।”

মেঘালয় তেজি গলায় বললো, “তাহলে এখনি মরতে চাচ্ছো কোন বালের জন্য? মরার আগে অন্তত এই সমাজ আর দেশের জন্য একটু কিছু অবদান রেখে তারপর মরবা। আগে একটু অবদান রাখো তারপর নাহয় আত্মহত্যা করো। আমি নিজে তোমার মরার ব্যবস্থা করে দিবো।”

মিশু হেসে বললো, “যখন সমাজের জন্য কিছু করতে পারবো তখন তো আমার সম্মান অনেক বেড়ে যাবে। তখন ইচ্ছে হবে হাজার বছর বাঁচি। আর তো মরতে ইচ্ছে হবেনা।”

মেঘালয় মাথা ঝাকিয়ে বললো,”এটাই পয়েন্ট। নিজেকে সম্মানিত করো, নিজের জায়গাটাকে উন্নত করো। বাবা মায়ের সম্মান বাড়াও। তারপর দেখো, জীবন কত সুন্দর। সবার ভালোবাসা অর্জন করতে পারলে ওই একটা বয় ফ্রেন্ডের ভালোবাসা জাস্ট কচুপাতার পানি মনে হবে। বুঝেছো?”

মিশু জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে মেঘালয়ের হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। মগজে বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। এত সুন্দর করে কেউ কক্ষনো অনুপ্রাণিত করেনি ওকে। মেঘালয়ের প্রতি আরো কয়েক গুণ সম্মান বেড়ে গেলো ওর। এত সুন্দর করে যদি সবাই ভাবতো, সত্যিই পৃথিবিটা বদলে যেতো! আর সবাই কি করবে জানিনা, কিন্তু এই দেশের প্রতি আমি আমার দায়িত্ব টুকু অবশ্যই পালন করে যাবো। এ সমাজটাকে একটু সুন্দর করে তারপর মরবো, তার আগে নয়। কথাগুলো মনেমনে প্রতিজ্ঞা করে ফেললো মিশু।

মেঘালয় আরেকটু এগিয়ে এসে মিশুর মুখের একদম কাছে চলে এলো। মেঘের গরম নিশ্বাস মিশুর নাকের উপর পড়ছে। চোখ মেলে থাকতে পারছে না মেয়েটা।

মেঘালয় বললো, “রাগ করলে?”

মিশু ঝটপট উত্তর দিলো, “না না। আমার খুব ভালো লাগছে এখন। আর মনেহচ্ছে আমি কি পরিমাণ বোকার মত কথা বলেছি।”

মেঘালয় হেসে আরেকটু এগিয়ে এসে বললো, “পৃথিবীটা অনেক বড়। নিজের জগতটাকে অত ছোট করে রেখো না। নিজেকে অতটা সস্তা বানাইয়ো না। নিজের চিন্তা ভাবনার পরিধি বাড়াও। নিজের পৃথিবীটাকে বিশাল করে তোলো। জীবনকে উপভোগ করতে শেখো।”

মিশু উত্তেজনায় কাঁপছে। কত সুন্দর জীবন দর্শন মেঘালয়ের। সত্যিই নতুন ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে করছে ওর। আসলেই জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর। এইযে কত সুন্দর জোৎস্না, চারিদিকে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো! রাস্তার দুধারে গাছের সাড়ি, কত সুন্দর সবকিছু! চুল উড়ছে, মনটাও উড়তে চাইছে। উড়ে ভেসে যেতে ইচ্ছে করছে। মনের পাখা গজিয়েছে নাকি?

মিশুর বড্ড সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে। মেঘালয় একটা নতুন জীবনের স্পর্শ দিলো যেন। সবকিছুই সুন্দর লাগছে, সবকিছুকে রঙিন লাগছে। জীবনকে উপভোগ করতে জানলে জীবন সুন্দর! হেডলাইয়ের আলোয় হাইওয়ে দেখতেও ভালো লাগছে, মুখের সামনে একটা ভালো মানুষের মুখ ও মুগ্ধ চোখ দেখতে ভালো লাগছে। বাতাসে ভেসে যেতেও ভালো লাগছে। উফফ কি সুখ সুখ লাগছে!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here