হৃদমোহিনী
পর্ব ৫২
মিশু মনি
.
৭৪
অন্যরকম ভাবে একটা নতুন সকালের সূচনা হলো। বিয়েবাড়ির সবাই তখন ঘুমে। মিশু ও মেঘালয় নামাজ শেষ করে বাইরে হাঁটতে বের হলো। স্নিগ্ধ সকালের ঠাণ্ডা পরিবেশে গ্রামটা ঘুরে এলো দুজন মিলে। বাসায় ফেরার সময় মেঘালয়ের বন্ধু’দের সাথে দেখা।
সবাই আড্ডা দিতে দিতে যখন বাসায় ফিরলো, দেখলো মিশুর বাবা ও মেঘালয়ের বাবা দুজনে মিলে জাল দিয়ে পুকুরে মাছ ধরছেন। খালি গায়ে লুঙী বেঁধে দুজনেই নেমেছেন। পাড়ে বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং বর্ষা আহমেদ। সবাই তো থ! ডাক্তার আজকে বালতি নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন, ভাবাই যায় না!
সায়ান, আরাফ ও পূর্ব তিনজন এসে পুকুরে নামতে নামতে বললো, ‘আমরাও মাছ ধরবো।’
মিশু’র বাবা বললেন, ‘প্যান্ট পড়ে নেমো না।’
পূর্ব সাথে সাথেই বললো, ‘তাহলে কি নেংটো হয়ে নামবো?’
হেসে উঠলো সবাই। আংকেল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, ‘আমার লুঙী দিচ্ছি, আমার মত বেঁধে নেমে পড়ো।’
সায়ান বললো, ‘আমি লুঙ্গি সামলাতে পারি না যে। যদি পুকুরে লুঙী হারিয়ে যায় তখন কিন্তু আমি দায়ী নই বাবা।’
সবাই আবারো হাসলো। বাবা আর কিছু বললেন না। ছেলেগুলো যা দুষ্টু, পারা যায় না কারো সাথে। উনি মিতুকে বললেন কয়েকটা লুঙি এনে দেয়ার জন্য। মিতু বাসায় গিয়ে বাবা ও চাচাদের ব্যবহৃত কয়েকটা লুঙী নিয়ে এলো। সবাই লুঙী পড়ে খালি গা হয়ে নেমে পড়লো পুকুরে।
ওদের দেখাদেখি মেঘালয়েরও ইচ্ছে করছে পুকুরে নামতে। সবাই মিলে জাল ফেলে মাছ ধরার আলাদা একটা আনন্দ আছে। নতুন জামাইয়ের মাছ ধরার দৃশ্যটা সবাই দেখতে আসবে সেটা চিন্তা করতে লাগলো। তারচেয়েও বড় কথা বুকে পিঠে মিশু’র আচঁড়ের দাগ থাকতে পারে। মেয়েটা যে পরিমাণে খামচি আর কামড় দেয়, তাতে অবস্থা বেহাল হয়ে যায় মেঘালয়ের। এসব ভেবে আর নামার সাহস করলো না।
আকাশ আহমেদ জাল ফেললেন পুকুরে। জাল টেনে তোলার সময় তিন বন্ধু ঝাঁপিয়ে পড়লো। জালের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে মাছ ধরতে লাগলো। সায়ান কিছুটা ভয় পাচ্ছিলো কিন্তু আরাফ ও পূর্বকে দেখে ওরও সাহস বেড়ে গেলো। বাবা মেঘালয়কেও ডাকলেন মাছ ধরার জন্য। কিন্তু মেঘালয় আপত্তি করলো বলে আর কেউ কিছু বলেনি। মৌনি ক্যামেরা নিয়ে এসে ফটাফট ফটোশুট করছে। পুকুরের উপরে বাঁকা হয়ে একটা গাছ ঝুলে আছে। মেঘালয় ও মিশু ছবি তোলার জন্য গাছে উঠে সেখানেই পা ঝুলিয়ে বসে আছে। সায়ান পুকুর থেকে কাঁদা তুলে ছুঁড়ে মারলো মেঘালয়ের গায়ে। সাদা পাঞ্জাবি কাঁদাময় ডিজাইন হয়ে গেলো একেবারে।
মেঘালয় আঁৎকে উঠে বললো, ‘এটা কি করলি ব্যাটা?’
মিশু হাসতে হাসতে বললো, ‘দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তাহলে তো দাগই ভালো।’
কথাটা বলেই পাঞ্জাবির কাঁদা হাতে লাগিয়ে মেঘালয়ের গালে, নাকে, কপালে সবখানে লাগিয়ে দিলো। খিলখিল করে হাসতে হাসতে মিশু কাঁদা মাখিয়ে দিচ্ছিলো ওর গালে। দৃশ্যটা এতটা হৃদয় কাড়লো যে কিছুক্ষণের জন্য আকাশ আহমেদও থমকে গেছেন। উনি যৌবনে ভীষণ রোমান্টিক ছিলেন। ওনার আবারো সেই সময়গুলো ফিরে পেতে ইচ্ছে করছে। মিশু মেঘালয়, দুজনের গায়েই হলুদের রং টকটক করছে। বরের গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, বউয়ের পড়নে কমলা রঙের শাড়ি। ঘোমটা টানা নতুন বউটা বরের বুক থেকে কাঁদা নিয়ে খিলখিল করে হাসছে আর তার বরের গালে মাখিয়ে দিচ্ছে। এই ভয়ংকর সুন্দর দৃশ্যটা ক্যামেরায় বন্দি করতে ভূল করলো না মৌনি।
অর্ধেক বালতি ভরতি করে মাছ ধরার পর সবাই পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি শুরু করলো। মুরুব্বিরা সবাই বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন। তিন বন্ধু মিলে সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে। পুকুরের ঘোলা পানিতেও ওরা লাফালাফি করা বাদ দিচ্ছে না বরং লাফালাফি করে পানি আরো ঘোলা বানিয়ে ফেলছে।
পুকুর পাড় ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পর মেঘালয় গাছ থেকে লাফ দিলো হঠাৎ। মিশু একাই পা দোলাতে লাগলো। ওর পা দুলিয়ে বসে থাকার ছবিগুলোও মৌনি সুন্দরভাবে ক্যামেরায় ধারণ করে নিলো। মেঘালয় পুকুরে নামার পর চারবন্ধু মিলে শুরু করে দিয়েছে সাঁতার প্রতিযোগিতা। মিশু শুধু উপরে বসে বসে দেখছে। মেঘালয়কে যত দেখে, কিছুতেই মন ভরে না যেন।
অনেক্ষণ সময় নিয়ে লাফালাফি করলো ওরা। সবাই বাড়ির ভেতরে চলে গেছে। মেঘালয় পাঞ্জাবি খুলে সাঁতার শেষ করে আবার পাঞ্জাবি পড়লো। তারপর ওরাও চলে এলো বাড়িতে।
মেঘালয় গোসল শেষ করে ঘরে এসে দেখলো মিশু গুণগুণ করে গান গাইছে। চুলগুলো পুরো পিঠের উপর ছড়িয়ে আছে। ও দরজার পর্দাটা ভালো মত টেনে দিয়ে এসে মিশু’র সামনে বসলো। খালি গায়ে টাওয়েল পড়ে আছে মেঘালয়। মিশু ওর দিকে একবার তাকিয়েই আর তাকাতে পারলো না। চোখ ধাঁধিয়ে যায় ওর।
মেঘালয় বললো, ‘তোমার গালে হলুদের রংটা যা মানিয়েছে! প্রতিবার বিবাহবার্ষিকীতে তোমাকে হলুদ মাখাতে হবে।’
– ‘কি যে বলেন!’
– ‘তুমি হুট করেই অনেক বড় হয়ে গেছো মিশমিশ। আমার নিজের চোখকেও অবিশ্বাস্য লাগছে। এত বড় হয়ে গেলে কি করে?’
– ‘বিয়ের পর সব মেয়েই হুট করে বড় হয়ে যায়।’
– ‘হুম তা বটে। এই, তোমার বিয়ে হয়েছে?’
– ‘শুধু বিয়ে? পরপর দু বার বিয়ে হয়েছে।’
– ‘কিহ! তুমি দুটো বিয়ে করেছো? এজন্যই বলি মাঝেমাঝে আমার বউয়ের ফোন কেন বন্ধ দেখায়?’
মিশু উঠে এসে মেঘালয়কে মারতে মারতে বললো, ‘শুধু ফাজলামি তাইনা?’
মেঘালয় ওকে টেনে নিয়ে কোলের উপর বসালো। তারপর একহাতে ধরে বললো, ‘তুই তো একটা বাচ্চা রে। কি পিচ্চি, কোলে নিয়ে মনেহয় পুতুল কোলে নিয়েছি।’
– ‘তা তো মনে হবেই। আপনি কত বড় আর আমি কত পুঁচকে।’
– ‘সেটাই। আমি তো ভাবছি এখন যদি আমার একটা বাচ্চা হয় তাহলে কেমন হবে? আমাকে তো একসাথে দুটো বাচ্চা পালতে হবে।’
মিশু হেসে বললো, ‘হুম। বাচ্চা হোক আর কাচ্চা হোক আমি বুঝিনা। আমাকেও কোলে নিয়ে বসে থাকতে হবে বলে দিলাম। আমি কখনো আলুর বস্তার মত মোটা হয়ে গেলেও আমাকে কোলে নিতে হবে।’
– ‘তখন তো আলুর বস্তাকে কোলে নিবো, তোমাকে না। এই মুহুর্তে বাচ্চা হলে আমার কি যে জ্বালা হবে বাবাহ।’
– ‘কেন? দুটো করে আইসক্রিম আনবেন। একসাথে দুজনকে কোলে নিয়ে থাকবেন। আমাকে কোলে আর আমাদের বাচ্চাকে ঘাড়ে।’
– ‘কাম সারছে। তোমাকে দেখে মনেহয় তুমি সারাজীবন এরকম বাচ্চাই থাকবা। দুটো বাচ্চাকে সামলাতে সামলাতে আমি বুড়া হয়ে যাবো।’
মিশু হেসে বললো, ‘খুব মজা হবে। তোমার এক ঘাড়ে ভর দিয়ে আমি বলবো, এই আমার আইসক্রিম আনছো? আর আমাদের বাচ্চাটা তোমাকে আরেকপাশে টানতে টানতে বলবে, বাবাই আমার আইসক্রিম আনছো? আমি বলবো এই মেঘমনি, আমাকে কোলে নাও। আমাদের বাচ্চাটাও বলবে, এই মেঘমনি আমাকে কোলে নাও। তুমি বুঝবা ঠ্যালা। চাপ সামলানোর জন্য রেডি হও এখন থেকে।’
মেঘালয় মিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এত জ্বালাবা? আমাদের মেয়েটাও তোমার মত দূরন্ত হবে। আর দু্ষ্টুও হবে।’
– ‘আমাদের ছেলে হবে। ছেলেটা তোমার মত নাদুসনুদুস গুল্টুস গাল্টুস হবে। আমি তো ছোট, ওকে কোলে নিয়ে থাকতেই পারবো না। তাই ওকে তুমি কোলে নিবা। আর তুমি আমাকেও কোলে নিবা।’
– ‘হ্যা, আমার তো আর কাজ নাই। সারাক্ষণ তোমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকবো।’
– ‘হ্যা, নাই ই তো। সেজন্যই তো এখন কোলে নিয়ে বসে আছেন। আমি কি বলেছিলাম আমাকে কোলে নিতে?’
– ‘তোকে দেখলেই কোলে বসিয়ে গাল টানতে ইচ্ছে করে রে পিচ্চি।’
মিশু মেঘালয়ের গাল দুটো দুহাত দিয়ে ধরে দুটো দুপাশে টানতে টানতে বললো, ‘আজকে আমি গাল টানি। আপনার গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি থাকলে কি যে মারাত্মক সুন্দর লাগে! অবশ্য ক্লিনসেভেও মারাত্মক স্মার্ট লাগে। আজকে আপনি খয়েরি রংয়ের পাঞ্জাবিটা পড়বেন আচ্ছা?’
– ‘আচ্ছা। আমরা তো একটু পরেই বেরিয়ে পড়বো। এটুকু সময় বাবা মাকে দাও যাও।’
– ‘আচ্ছা যাচ্ছি। এই মেঘমনি, আমাদের এখনি একটা গুলুমুলু বাবু হলে ভালো হবে না?’
– ‘ধুর পাগলী। তোমার বয়স বিশ হোক আগে। এর আগে সন্তান নেয়া উচিৎ না।’
– ‘ওহ আচ্ছা..’
মিশু মেঘালয়ের কোল থেকে নেমে ছুটে পাশের রুমে চলে গেলো। মেঘালয় হাসতে হাসতে বডি স্প্রে করে খয়েরি রংয়ের পাঞ্জাবি ও কালো জিন্স পড়লো। চুলগুলো আঁচড়ে আয়নায় তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিলো। মিশু’র চোখে কাজল টেনেছে আজ, একচোখে কাজল মোটা হয়েছে আর অন্যচোখে চিকন। তবুও ওকে সুন্দর লাগছে। কেন যেন মনেহচ্ছে এরকম এলোমেলো সাজেই মেয়েটা সুন্দর। নিঁখুত সাজে ওকে মোটেও ভালো লাগবে না। রোবট রোবট লাগবে। একটু পাগলী পাগলী তো বলেই এত মায়া লাগে।
৭৫
খাওয়াদাওয়ার পর কিছুক্ষণ আড্ডা ও বিয়ে বিদায় পর্ব চললো। মিশু কেঁদেকেটেই অস্থির। আজ থেকে পুরোপুরিভাবে ওকে অন্যের বাড়িতে থাকতে হবে। আর আব্বু আম্মুর সাথে আগের মত খাওয়াদাওয়া, গল্প করা কোনোটাই হবে না। মিতুর গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমানো হবে না। বাসায় ঢোকার সময় আম্মু আম্মু বলে চেঁচানো হবে না। কি যে কষ্ট হচ্ছে!
মেঘালয় পুরোটা সময় ওকে আগলে রাখার চেষ্টা করলো। আকাশ আহমেদ মিশু’র বাবার হাত ধরে দুশ্চিন্তা করতে বারণ করলেন। গাড়িতে ওঠার পরও মন খারাপ করে বসে রইলো মিশু। মেঘালয় মিশু’র মাথাটা নিজের কাঁধের উপর নিয়ে বললো, ‘ঘুমাও। সারারাত তো গল্প করেই কাটালে।’
– ‘মিথ্যে কথা বলো কেন? শুধু গল্প করেছি? তুমি তো খালি দুষ্টুমি.. ‘
মেঘালয় ওর মুখ চেপে ধরে বললো, ‘চুপ। এসব কেউ বলে? গাড়িতে ফ্রেন্ডরা আছে আমার। চুপ করে ঘুমাও। কোথায় কি বলতে হয় তাও জানে না।’
মিশু আর কথা বললো না। এমনিতেই খানিকক্ষণ আগে কেঁদেছে। এখন আবার মন খারাপ হচ্ছে। গাল ফুলিয়ে বসে রইলো ও। মেঘালয়ের কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিছুক্ষণপর ঘুমিয়ে পড়লে নিজেই ঢলে পড়লো মেঘালয়ের বুকে। এসিটা বাড়িয়ে দিতে বলে মেঘ নিজেও ঘুমিয়ে পড়লো।
ঘুম ভাঙার পর বাকি পথটা কয়েক বন্ধু মিলে হাসাহাসি করে কাটলো। ঢাকায় পৌঁছে রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিলো সবাই। এরপর ক্লান্ত শরীরে বাসায় পৌঁছাতে এগারোটা বেজে গেলো। বাসায় পৌঁছেই প্রত্যেকে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে গেলো। এদিকে মেঘালয়ের ঘরে ঢুকেই মিশু’র চোখ চড়কগাছ! এত সুন্দর করে বাসর ঘর সাজানো হয়েছে যে কিছুক্ষণ চোখের পলক আটকে যায়। আজকে আবার বাসর! ঘুম বলে কি আদৌ কিছু হবে না?
মেঘালয় দরজা লাগিয়ে দিয়ে বললো, ‘চলো গোসল করে ঘুমাবো, অনেক টায়ার্ড লাগছে।’
– ‘শিওর আপনি ঘুমাবেন?’
মেঘালয় হেসে বললো, ‘আগামী দুমাসের জন্য রাতের ঘুমটা বাদ দাও। সমস্ত ফ্যান্টাসিগুলোকে বাস্তবে পরিণত করার সময় এখনই।’
মিশু একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বাথরুমে চলে গেলো। গোসল শেষ করে এসে দেখলো মেঘালয় রুমে নেই। ও চুল মুছতে মুছতে বিছানার কাছে এগিয়ে আসতেই দেখলো বিছানার উপর চাঁদর থেকে সিলিং পর্যন্ত একটা সাদা কাপড় পড়া মানুষ। হাত দুটো ইয়া বড় বড়, আর মুখটা কি বিশ্রী দেখতে। ভয়েই একটা বিকট চিৎকার দিয়ে মেঝের উপর ঢলে পড়লো মিশু।
বাড়ির সবাই ছুটে এলো মেঘালয়ের রুমে। এসে দেখে মিশু মেঝেতে পড়ে আছে আর মেঘালয় পাশে বসে পানি ছিটাচ্ছে ওর মুখে। খানিকক্ষণ পর চোখ মেললো মিশু। চোখে মেলে মুখের উপর মেঘালয়কে দেখে চিৎকার করে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ভূত! ভূত!’
– ‘কোথায় ভূত?’
মিশু বিছানার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। সবাই হা হয়ে দেখলো সেখানে ফুল ছাড়া কিছুই নেই। মেঘালয়কে সবাইকে চলে যেতে বললে চলে গেলো সবাই। মেঘালয় মিশুকে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে খাটের নিচ থেকে একটা বিশাল সাদা কাপড় বের করলো। মিশু আঁৎকে উঠে বললো, ‘ও মাগো! এটা কি?’
হো হো করে হেসে উঠলো মেঘালয়। মিশু এতক্ষণে বুঝতে পারলো এটা মেঘালয়ের কান্ড। ও ক্ষেপে গিয়ে মেঘালয়ের চুল টেনে ধরে বললো, ‘কি খারাপ লোক একটা।’
মেঘালয় হাসতে হাসতে মিশুকে বুকে টেনে চেপে ধরে বললো, ‘একটু শয়তানি করলাম। বিশ্বাস করো, এখন তোমার ঘুম একেবারে পালিয়ে গেছে। নয়তো গোসল শেষ করে এসেই ঘুমিয়ে পড়তে।’
মিশু মেঘালয়কে মারতে মারতে বললো, ‘এত দুষ্টু ক্যান আপনি? যান তো এখান থেকে।’
মেঘালয় মিশুকে সরিয়ে দিয়ে বললো, ‘কোথায় যাবো? আমি বাইরে গেলে ভালো লাগবে?’
– ‘না। আপনি কাছে থাকলেও জ্বালা, দূরে গেলেও জ্বালা।’
– ‘মরণ..’
বলেই হো হো করে হেসে উঠলো মেঘালয়। মিশু হাসবে নাকি রাগ করবে বুঝতে পারলো না। মেঘালয়ের হাসি দেখে ওর সব রাগ, ক্ষোভ হাওয়াই মিঠাইয়ের মত উড়ে উড়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
চলবে..