হৃদমোহিনী
পর্ব ৪৯
মিশু মনি
.
বুঝে উঠতে সময় লাগলো অনেক্ষণ। গাড়ি ব্রেকফেইল করেছে। ভাগ্যিস হঠাৎ থেমে গেছে। নয়তো সামনের কোনো গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হলে কিংবা পাশের ডোবায় পড়ে গেলে বড়সড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারতো।

তন্ময় মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ব্যথা পেয়েছো?’
– ‘সামান্য। এটা ব্যাপার না, কিন্তু এখন কি হবে?’

সুপারভাইজার এসে জানালো অনেক সময় লাগবে ঠিক করতে। এমনিতেই সন্ধ্যে নেমে এসেছে। যদি এতক্ষণ সময় লাগে তাহলে বাসায় পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে। মিশুর মুখটা ছোট্ট একটু হয়ে গেছে। বারবার মেঘালয়কে বলেছিলো সাথে আসার জন্য। কিন্তু মেঘালয় এলো না। এত রাতে একা একা যাওয়াটাও রিস্কি হয়ে যাবে।
বাস থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলো দুজনে। বাসের মেরামত চলছে। মিশু নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। তন্ময় ওর পাশেই দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর মিশু বললো, ‘তুমি যেখানে যাবে সেটা কতদূর এখান থেকে?’
– ‘সিএনজিতে ঘন্টাখানেক লাগবে হয়ত।’
– ‘তাহলে তুমি চলে যাও।’
– ‘তুমি একা একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে? রাত নেমে এসেছে। আমিও বরং থাকি, তোমাকে বাসে তুলে দিয়ে তারপর চলে যাবো।’

মিশু কিছু বললো না। বড়সড় দূর্ঘটনা হয়নি তাতেই শোকরিয়া। কিন্তু এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। গাড়ি এমন একটা জায়গায় দাড় করিয়েছে যেখানে কোনো দোকানও নেই। খুব টেনশন বাড়ছে মিশুর।
তন্ময় বললো, ‘তোমাকে অন্য একটা বাসে তুলে দিই তুমি চলে যাও?’
মিশু একবার ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বললো না। ভালো লাগছে না ওর। মেঘালয়কে কল দিয়ে জানালো কিরকম সমস্যায় পড়েছে। কথাগুলো শুনে টেনশন ওরও বেড়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু তন্ময় পাশে থাকায় কিছুটা ভরসা পাচ্ছে। মেঘালয় মিশুকে বললো ফোনটা তন্ময়ের কানে দিতে।

তন্ময় রিসিভ করে বললো, ‘হ্যালো..’
– ‘ভাই তন্ময়, তুমি মিশুকে বাসা পর্যন্ত রেখে আসতে পারবে না?’
– ‘পারবো। কিন্তু অনেক রাত হয়ে যাবে, আমি আবার অত রাতে ফিরতে পারবো না। মিশুর বাবা মায়ের মুখোমুখি হতে চাচ্ছিলাম না।’
– ‘ওকে একা পাঠাতে চাইছিলাম না।’
– ‘আচ্ছা আমি নিজে গিয়ে রেখে আসবো, টেনশন কোরো না।’

প্রয়োজনীয় কথা সেরে ফোনটা রেখে দিলো মেঘালয়। মিশু ও তন্ময় দুজনে চাতকের মত রাস্তার দিকে চেয়ে রইলো। গাড়ির পিছনে বিশাল জ্যাম লেগেছে, আর কোনো গাড়ি ই চলাচল করতে পারছে না। ঠিক করতে কতক্ষণ লাগবে বোঝা যাচ্ছে না। অপেক্ষা করাটা বিরক্তিকর। তবুও অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
এমন সময় আকাশে মেঘ করে আসতে শুরু করেছে। যদি বৃষ্টি নামে তখন আরেক মুছিবত হবে। কারণ এভাবে ভিজে তো আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না। মিশুর চেহারায় চিন্তার ছাপ পড়লো।

তন্ময় সবকিছু ভেবে বললো, ‘মিশু, তুমি বরং আমার সাথে চলো। তোমার কোনো সমস্যা হবেনা, আমার কাজিনের বাসা। রাতটা থেকে কাল সকালে তোমাকে বাসে তুলে দেবো।’

মিশু আপত্তি জানালো। তন্ময়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতেই ওর অপ্রস্তুত লাগছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতে পারলেই যেন বাঁচে। তন্ময় মেঘালয়ের কাছে ফোন দিলো আরেকবার।
মেঘালয়কে কথাটা বলামাত্রই ও বললো, ‘এটা তো অনেক ভালো কথা। এত রাতে একা ওকে পাঠানোর প্রয়োজন নেই, আর তোমারও তাহলে ওর সাথে যেতে হবে না। তুমি বরং ওকে সাথে নিয়ে যাও, সকালে বাসে তুলে দিও।’

মেঘালয়ের সাথে তন্ময়ের অনেক ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। একজন আরেকজনকে অনেক বেশি বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছে। সেখানে মিশুকে বাসায় পৌঁছে দেয়াটা এখন তন্ময়ের দায়িত্ব। মেঘালয় সরল মনে মিশুকে ওর সাথে পাঠিয়ে দিলো।

তন্ময়ের দূর সম্পর্কের বোনের বাসা। বাসায় মেয়েটা ছাড়া আর কেউ নেই। রাস্তায় থাকা অবস্থাতেই বৃষ্টি নেমেছে। ওরা বৃষ্টিতে ভিজে সেখানে পৌঁছালো রাত নয়টায়।

৭১
ভেজা কাপড় বদলে একটা আকাশী রঙের কামিজ পড়েছে মিশু। চুলে তোয়ালে বেঁধে খাবার টেবিলে আসলো। ওর সদ্য স্নাত চেহারার দিকে তাকিয়েই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো তন্ময়ের। হার্টবিট টা লাফ দিয়ে অনেকখানি বেড়ে গেলো যেন। মিশুকে বাসে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো। তার উপর ঘাম, জার্নির ধকল, ধূলাবালি আর এলোমেলো চুলে খুব মলিন দেখাচ্ছিলো। অথচ এখন ওর চেহারায় যে লাবণ্যময়তা ফুটে উঠেছে তা দেখে যে কারো দৃষ্টি আটকে যাবে। বাইরে হাওয়ার ঝাপটানির সাথে সাথে বুকের ভেতরেও ঢিপঢিপ করতে আরম্ভ করেছে।
টিনের চাল হওয়ার কারণে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্লেটে খিচুড়ি দেখে মিশুর চোখদুটো ঝিকমিক করে উঠলো। উৎফুল্ল হয়ে টেবিলে বসে পড়লো ও। তন্ময় ওর প্রফুল্ল মুখটা যতবার দেখছে, ততবার খুন হয়ে যাচ্ছে।

মিশু খিচুড়ি মুখে দিয়ে বললো, ‘উম ইয়াম্মি। আপু, লেবু নেই বাসায়? লেবু থাকলে আরো মজা হতো।’
– ‘লেবু আছে, আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।’

মেয়েটা লেবু আনার জন্য রান্নাঘরে ছুটে গেলো। তন্ময় পলক না ফেলে তাকিয়ে আছে মিশু’র দিকে। যেন প্রথমবার দেখছে ওকে। দৃষ্টিটা ওর মায়াবী মুখেই আটকে আছে, বিন্দুমাত্র নড়ানো যাচ্ছে না। মিশু খিচুড়ি খেতে খেতে বললো, ‘আজকের সন্ধ্যাটা অনেক সুন্দর না তন্ময়?’

তন্ময় চমকে উঠলো। মেয়েটা খুব সুন্দর করে ওকে ডাকে, কতদিন পর এভাবে নাম ধরে ডাকলো!

মিশু বললো, ‘এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? খিচুড়ি খাও, দারুণ মজা হয়েছে খেতে।’
– ‘মিশু..’
– ‘হুম বলো।’
– ‘এই মোমের আলোয় তোমাকে অনেক মায়াবতী লাগছে।’

চোখ তুলে তন্ময়ের দিকে তাকালো মিশু। ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তন্ময়। এ চোখে কোনো কামনা নেই সত্যি, কিন্তু ভালোবাসা আছে। ভালোবাসার দৃষ্টিগুলো সবসময়ই ভয়ংকর হয়। সহজে এড়ানো যায় না। বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠলো মিশু’র। ও প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বললো, ‘আচ্ছা বাস টা কি এখন ঠিক হয়েছে? যদি ঠিক না হয় তাহলে যাত্রীরা কিভাবে কে কি করছে বলোতো? আমার তো টেনশন হচ্ছে সবার জন্য।’

তন্ময় একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বললো, ‘টেনশন কোরো না। বোধহয় ঠিক হয়ে গেছে।’
– ‘খিচুড়ি টা অনেক মজা হয়েছে না?’
– ‘হুম অনেক মজা হয়েছে।’

আপু লেবু এনে দিলো। মিশু লেবু নিয়ে খুব আয়েশ করে খিচুড়ি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে অনেক আগেই। এখানে ঝড় বৃষ্টি হলেই আর বিদ্যুৎ থাকে না।

তন্ময়ের সামনে বসে থাকতে অপ্রস্তুত লাগছে বলে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করলো মিশু। তারপর, ‘মাথা ব্যথা করছে’ বলে দ্রুত পাশের একটা রুমে চলে এলো। আসার সময় একটা মোম সাথে করে এনেছে। মোমটা টেবিলের উপর রেখে চুল থেকে তোয়ালে খুলে ফেললো। তারপর হাত দিয়ে ঝুল ঝাড়তে ঝাড়তে আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে একবার দেখলো। মনেমনে বললো, ‘আজ আমাকে সত্যিই একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে না? নাকি আবহাওয়ার কারণে এমন মনেহচ্ছে?’

ফোনটা নিয়ে মেঘালয়ের নাম্বারে কল দিলো মিশু। এদিকে মিশুকে দেখার প্রবল আকাঙ্ক্ষাকে দমাতে পারেনি তন্ময়। দরজায় এসে হা করে তাকিয়ে আছে। যত দেখছে, তত বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে ওর। প্রতিমুহুর্তে মনেহচ্ছে, ‘মেয়েটা তো আমারও হতে পারতো। ও তো সবকিছু উজার করে আমাকেই ভালোবাসতো।’

মেঘালয় ফোন রিসিভ করে বললো, ‘মিশু, তন্ময়কে পেয়ে আমাকে ভূলে গেছো না?’
– ‘এটা আবার কেমন কথা। এজন্যই আমি এখানে আসতে চাইনি। কতটা ভালোবাসি জানেন ই তো, তবুও এই কথা?’
– ‘আচ্ছা বাবা মজা করেছি। এবার বলো তো কি করছো?’
– ‘খুব জোরে বৃষ্টি নেমেছে গো। চুলগুলো ভেজা বলে বেশি রোমান্টিক ফিল করছি।’
– ‘বাবা গো তাই নাকি?’
– ‘হুম। অনেক রোমান্টিক ওয়েদার। চারিদিক অনেক নিস্তব্ধ, শুধু টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ শোনা যায়।’
– ‘আমাকে মিস করছো না?’
– ‘শুধুই কি মিস? আপনার জন্য রীতিমত আমার কান্না পাচ্ছে।’

টেবিলের উপর মোম জ্বলছে। তার সামনে নিচু হয়ে এসে কথা বলছিলো মিশু। মুখটা ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিলো। ওর লাজরাঙা মুখটা দেখে তন্ময়ের ভেতরে এমন সব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে যা বলে বোঝানো সম্ভব না। ছেলেটা গলাকাটা পশুর মত ছটফট করছে শুধু। বৃষ্টির শব্দের কারণে মিশু’র কথা কানে আসছে না। অজান্তেই কি বলছে শোনার জন্য কাছে এগিয়ে এলো তন্ময়।
মিশু উঠে এসে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।

মেঘালয়ের কথা শুনতে শুনতে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতে শুরু করেছে ওর। দেয়ালে হেলান দিয়ে একটা পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালো ও। তারপর মেঘালয়কে বললো, ‘আমার একদমই ভালো লাগছে না। বিয়ের প্রোগ্রামটা তাড়াতাড়ি হচ্ছে না কেন? সবসময় আপনাকে আমার কাছেকাছে রাখবো।’
– ‘এইতো পাগলী, আর দুটো দিন ধৈর্য ধরো।’
– ‘শুনুন, আমি কিন্তু আপনাকে ছাড়া একটা মুহুর্তও একা থাকতে পারবো না বলে দিচ্ছি। আপনি যদি বিজনেসের কাজে দূরে কোথাও তিনদিনের জন্যও যান, সেখানেও আমাকে নিয়ে যেতে হবে বলে দিলাম।’
– ‘ওরে পাগলীটা রে, তিনদিনের জন্য গেলেও নিয়ে যাবো?’
– ‘হ্যা নিয়ে যেতে হবে। এখন একটু কাছে আসুন তো।’
– ‘এখন কিভাবে কাছে আসবো?’

মিশু চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। এদিকে তন্ময় আরো কাছে চলে এলো ওর। মিশুর কথা শোনার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে তন্ময়।

মিশু ফোনে বললো, ‘মনেমনে কাছে আসুন। আমার না আপনাকে খুব জড়িয়ে ধরে থাকতে ইচ্ছে করছে। শুধু জড়িয়ে থাকা না, আপনার উপরে উঠে খামচাখামচি, কামড়াকামড়ি করতে ইচ্ছে করছে। শক্ত করে জাপটে ধরে আপনার শরীরটা খামচি দিয়ে দিয়ে একেবারে শেষ করে দিতাম।’
– ‘ওরে পাগলী টা, এভাবে বললে আমি থাকতে পারবো না রে। আর তো মাত্র দুটো দিন, ধৈর্য ধরো। এরপর দেখবো কেমন পারো।’
– ‘উফফ! বাসর রাতে আপনাকে কামড় দিয়ে দিয়ে মেরেই ফেলবো আমি। আমার না ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে।’
– ‘বুঝতে পারছি রে। এত কাছে পাওয়ার পর কি এভাবে দূরে থাকা যায় বলো?’
– ‘উহু যায় না। এরপর আর কক্ষনো আমি আপনাকে দূরে যেতে দিবো ই না যে। এই মেঘমনি..’
– ‘হুম বাবুইপাখি, বলো।’
– ‘আমার না আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। জড়িয়ে ধরে থাকতে ইচ্ছে করছে। আপনার কোলে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে খুব। খুব খুব।’
– ‘আর বলিস না রে, কষ্ট হচ্ছে আমার।’

মিশুর চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। ও আর্দ্র কণ্ঠে বললো, ‘প্রচণ্ড মিস করছি মেঘমনি। আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যান না আপনার কাছে। আপনার থেকে দূরে থাকতে পারবো না আমি। নিয়ে যান না তাড়াতাড়ি।’
– ‘এভাবে ডাকলে কিন্তু এই রাতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়বো।’
– ‘না না এত রাতে এমন পাগলামী করতে হবে না। আমি ধৈর্য ধরে লক্ষী মেয়ে হয়ে যাচ্ছি।’

তন্ময় মিশুর সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনতে শুনতে ক্ষোভে, ক্রোধে আগুন হয়ে উঠছে। মিশুকে এখনো প্রচণ্ড ভালোবাসে ও। আর মিশু অন্য একজনকে এভাবে ভালোবাসবে সেটা কিভাবে সহ্য হবে ওর? এতটা রাগ হচ্ছে যে সবকিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে। না পারছে কাউকে বলতে, না পারছে সহ্য করতে। শুধু দগ্ধ হচ্ছে ক্রমশ ই।

মিশু বললো, ‘এখন এই লক্ষী মেয়েটাকে একটু জড়িয়ে ধরুন তো। জড়িয়ে ধরে.. এই মেঘমনি, আমার না প্রচণ্ড চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।’

ক্ষোভে, হিংসায় শরীরটা কাঁপছে তন্ময়ের। এমনিতেই অন্ধকার রাত, তার উপর ঝড় বৃষ্টি। মিশুর মুখে অন্য কারো জন্য এমন ভালোবাসা সহ্য করতে পারছে না তন্ময়। আরো কাছে এগিয়ে এসে খপ করে মিশুর কোমরে হাত দিয়ে চেপে ধরে ওকে কাছে টেনে নিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞানশূন্য হওয়ার মত অবস্থা মিশু’র। হাত থেকে পড়ে গেলো মোবাইলটা। ভয়ে চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে উঠলো। গলাটা শুকিয়ে গেলো মিশু’র। গলা দিয়ে একটা অস্ফুট আওয়াজ বেরিয়ে এলো শুধু, ‘তুমি!’

তন্ময়ের চোখে প্রতিহিংসার আগুন। আগুনচোখে বললো, ‘তোমাকে আমি অন্য কারো হতে দিতে পারবো না। আমার সহ্য হচ্ছে না।’

মিশু রেগে বললো, ‘আমি তো অন্য কারো হয়েই গেছি, আর কি হতে দেবে না? ছাড়ো আমাকে।’

তন্ময় মুখটা আরো কাছে এনে বললো, ‘কিচ্ছু জানিনা। আজ থেকে তোমাকে আমি আর কারো হতে দিচ্ছি না।’

মিশু গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো, ‘আমাকে ছাড়ো। তুমি পাগল হয়ে গেছো।’
– ‘ছাড়বো কেন? তোমার না চুমু খেতে ইচ্ছে করছে?’
– ‘আমি আমার স্বামীকে বলেছি। মেঘালয় আমার স্বামী, আমার সব, আমার সবকিছু।’

মিশুকে ছেড়ে দিয়ে ঠাস করে ওর গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো তন্ময়। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গাল ধরে বিছানার উপর বসে পড়লো মিশু। তন্ময় আরো কাছে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো। ফোনটা বেজে চলেছে অনেক্ষণ ধরে। মেঝে থেকে ফোনটা তুলে কল রিসিভ করার সাহসটাও পাচ্ছে না মিশু। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘালয় কল করেই যাচ্ছে।
মিশু নিচু হয়ে ফোনটা তোলার চেষ্টা করতেই তন্ময় আগে তুলে নিলো সেটা। তারপর খুব জোড়ে দেয়ালে আছাড় মারতেই স্ক্রিন ফেটে নিচে পড়ে গেলো। ভয়ে আঁৎকে উঠলো মিশু। কদিন আগেই মেঘালয় কিনে দিয়েছে ফোনটা। চোখের সামনে এভাবে ভেঙে ফেললো! মিশু’র বাকরুদ্ধ হওয়ার মত অবস্থা।

এমন সময় তন্ময়ের ফোন বেজে উঠলো। মেঘালয় ফোন করেছে। তন্ময় ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে বললো, ‘ওর কল ধরা যাবে না। কল দিতেই থাকুক।’

মিশু চেঁচিয়ে ডাকলো, ‘আপু, এই আপু..’

মিশুর মুখটা চেপে ধরে তন্ময় বললো, ‘চেঁচাবা না। একদম চিল্লাচিল্লি করবা না।’

মিশু’র মুখটা চেপে ধরে রেখেছে তন্ময়। এদিকে তন্ময়ের ফোনে বারবার কল দিয়ে যাচ্ছে মেঘালয়। ফোনের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে কেঁদে ফেললো মিশু। আজকে ও অনেক অসহায়, এই অসহায় অবস্থা থেকে আদৌ পরিত্রাণ পাবে কিনা জানেনা। দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় জল গড়াতে লাগলো। এতটা মানসিক চাপ নিতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে তন্ময়ের হাতেই পড়ে গেলো মিশু।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here