হৃদমোহিনী
পর্ব ৪১
মিশু মনি
.
৫৯
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেখে হৃদস্পন্দন অনেক বেড়ে গেলো মিশুর। বেশিরভাগ প্রশ্নই ওর জানা রুলসের মধ্যেই পড়েছে। দ্রুত একটা একটা করে গুছিয়ে উত্তর দিতে আরম্ভ করলো। অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক গুলো প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। মিশু মনোযোগ দিয়ে সমাধান করে যাচ্ছে। ধীরেধীরে সবগুলো উত্তর করা শেষ হয়ে গেলে আরেকবার পড়ে দেখলো। উত্তেজনায় বুকটা কাঁপছে মিশুর। অনেক আশা নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলো। প্রশ্নপত্র দেখে মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে ওর।
পরীক্ষা দিয়ে বাইরে এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। এখন দেখা যাক কি হয়। খুশিমনে চাচার বাসায় ফিরে এলো মিশু। রাতে ভালোমতো ঘুম হয়নি। ঘুমানো প্রয়োজন। গোসল সেরে খেয়েদেয়ে ঘুম দিলো একটা। টানা তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে আজকেও শরীরটা ফুরফুরে লাগছে। কিন্তু আজকে তো আর পড়াশোনার চাপ নেই। কি করা যায় তাহলে? বাসায় কবে যাওয়া যায় সেটা পরের বিষয়। এখন কি করা যায় সেটা আগে ঠিক করতে হবে।
কম্পিউটারে বসে গেমস খেললো কিছুক্ষণ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো বিভিন্ন স্টাইলে বেঁধে নিজেকে দেখছিলো কেমন দেখায়। সবসময় একই স্টাইলে চুল বেঁধে না রেখে মাঝেমাঝে ভিন্ন স্টাইলও করা যায়। এতে একটা আলাদা লুক চলে আসবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেক্ষণ খেলা করলো। রাতের খাবার খাওয়ার পর বুক সেলফ থেকে একটা বই নিয়ে পড়তে বসে গেলো।
কিছুক্ষণ পর মিফতা এসে ফোনটা দিয়ে বললো, ‘ভাইয়া ফোন দিয়েছে।’
উত্তেজিত হয়ে ফোন রিসিভ করলো মিশু। বললো, ‘কেমন আছেন?’
– ‘ভালো। আজকে রাজকন্যার মনটা খুব ভালো মনেহচ্ছে?’
– ‘হুম। দারুণ রকমের ভালো। আচ্ছা, গতরাতে আপনি ঘুমিয়েছিলেন?’
– ‘হুম। ফ্রেশ ঘুম দিয়েছি। প্রতিরাতে এভাবেই কথা বলবা তাহলেই ঘুম আসবে।’
– ‘আমি জানি আপনি কোলবালিশের সাথে লটর পটর করেছেন।’
হো হো করে হেসে উঠলো মেঘালয়। হাসতে হাসতে বললো, ‘দুষ্টু। তোমার চঞ্চল কণ্ঠ শুনলে ভালো লাগে আমার। সবসময় এরকম চঞ্চল ই থাকবা তো?’
– ‘হ্যা… ইয়াহ।’
– ‘এই পাঁজি, এরকম করছো কেন?’
মিশু হেসে ফেললো। আজকে মনটা খুব ভালো। খুবই আনন্দ হচ্ছে। এমন সময় ফোনে কল আসলো। নাম্বার সেভ করা ‘jaan’ নামে। মিশু মুখ ভেংচে মেঘালয়কে বললো, ‘আপুর বয়ফ্রেন্ড কল দিয়েছে। আমি আপুকে ফোন দিয়ে আসছি।’
– ‘আরেকটু কথা বলি না প্লিজ?’
– ‘ওর বয়ফ্রেন্ড আবার মাইন্ড করবে। সবচেয়ে বড় কথা, অন্যের ফোন ইউজ করতে আমার খারাপ লাগে। যাক ওসব, আমি রাখছি এখন।’
– ‘তুমি বলেছিলে আজকে সারারাত কথা বলবা। আন্টির ফোনটা নিয়ে আসো না?’
– ‘সরি পারবো না। অন্যের ফোন দিয়ে কথা বলতে ভালো লাগেনা, রাখছি। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবেন।’
মিশু ফোন কেটে দিলো হুট করে। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো মেঘালয়ের। মেয়েটা কত সুন্দর চঞ্চল কণ্ঠে বলেছিলো সারারাত কথা বলবে। মেঘালয় বিছানা থেকে উঠে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। বুথে ঢুকে কাজ সেরে সোজা মার্কেটে চলে এলো। চমৎকার একটা ফোন কিনে নিলো মিশুর জন্য। তারপর ফুলের দোকানে গিয়ে অনেকগুলো ফুল কিনে একটা কার্ড সহ এক ছেলেকে দিয়ে আসলো।
পরদিন সকালে
মিশুর ঘুম ভাংলো কলিংবেলের শব্দে। এত সকালে এই বাড়িতে কেউ ওঠেনা। কিন্তু এই সকাল সকাল কে এসেছে কে জানে! মিশু চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে এসে দরজা খুললো। দরজা খুলতেই বিস্ময়ে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো মিশুর। অনেকগুলো রঙিন ফুল দেখে মনটাও রঙিন হয়ে উঠলো। ও উৎফুল্ল হয়ে বললো, ‘এত সুন্দর ফুল!’
ছেলেটি বললো, ‘এই বাড়িতে মিশু নামের কেউ আছেন? এগুলো তার জন্য।’
মিশুর মুখটা আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো খুশিতে। এত সুন্দর রঙিন ফুলগুলো ওর জন্য! উত্তেজিত হয়ে ফুলগুলো নিতে নিতে বললো, ‘আমি ই মিশু। এগুলো কে পাঠিয়েছে?’
– ‘ফুলের উপরে এই গিফট প্যাকে লেখা আছে সব।’
– ‘ধন্যবাদ।’
মিশুর উত্তেজনা বেড়ে যাচ্ছে। এই শহরে ওর এমন কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী নেই যে এরকম ফুল সমেত গিফট পাঠাবে। ফুলগুলো নিয়ে রুমে চলে এলো। উপরে রাখা ছোট্ট প্যাকেট টা টান দিতেই একটা খামসহ উঠে এলো। আগে প্যাকেট টা খুললো মিশু। খুলতেই চমৎকার ফোনটা দেখে চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো। ফোন! মুখ তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে চোখ পিটপিট করলো মিশু। মেঘালয় কি তাহলে আজকে রাতেও ঘুমাতে পারেনি?
চোখে পানি আসতে চাইছে। আনমনা হয়ে খামটা খুললো মিশু। মেঘালয়ের হাতের লেখা চোখে পড়লো, ‘সিম লাগিয়ে দিয়েছি, নাম্বারও সেভ করে দিয়েছি। ফোনটা অন করে কল দিয়ে ঘুম ভাঙাও আমার। অপেক্ষায় আছি।’
অন্যরকম একটা বিষণ্ণতা এসে ভর করলো মনে। একইসাথে বিষণ্ণতা ও আনন্দ। চিনচিন ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা অন করলো মিশু। স্ক্রিণে মেঘালয়ের ছবি দেখে আর কান্না সামলাতে পারলো না। ফোনটা বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। চোখ মুছে দ্রুত কল দিলো মেঘালয়ের নাম্বারে। প্রথমবার রিং হয়ে কেটে গেলো। দ্বিতীয়বারের বেলায় রিসিভ হলো কলটা। মিশু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, ‘এটার কি দরকার ছিলো?’
মেঘালয়ের ঘুম জড়ানো গলা শোনা গেলো, ‘মিশুউউউ..’
এত সুন্দর করে কেউ ডাকতে পারে! শুনেই তো মন খারাপ ভাবটা দূর হয়ে যাচ্ছে। মিশু বললো, ‘ঘুম ভাঙালাম?’
– ‘ঘুম ভাঙানোর জন্যই তো এত সকাল সকাল ফোনটা পাঠাতে বলেছি।’
– ‘এটার কি দরকার ছিলো?’
– ‘চুপ, কাছে আসো তো। তোমাকে না কতবার বলেছি, আমি যতক্ষণ বিছানায় থাকবো ততক্ষণ উঠবা না আমাকে ফেলে।’
– ‘আহা। এভাবে কেউ বলে? আমার কান্না পায়।’
– ‘আসো আরেকটু কাঁদাই। তোমার নিচের ঠোঁটটা খুব ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে মিশু।’
মিশু শিউরে উঠলো। এমনিতেই ঘুম জড়ানো গলা, তার উপর যদি এভাবে বলে, পাগল হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যায় না?
লাজুক স্বরে মিশু বললো, ‘কি বলছেন এসব?
– ‘উহ চুপ করো তো। কাছে আসো। তোমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে শরীরের ঘ্রাণ নিবো। আসো না।’
– ‘প্লিজ থামুন। ঘুমের ঘোরে উলটা পালটা বলছেন।’
– ‘ঘুমের আদরে চুমু খেতে খুব ভালো লাগে। ঠোঁটে ঠোঁটে কথা হয়। ঠোঁটের ভেতরে, ঘুমের আদরে।’
মিশুর হার্টবিট বাড়তে আরম্ভ করেছে। মেঘালয় এসব কি শুরু করলো হঠাৎ করে! ঘুমের ঘোরে সে এসব বলে! আগে জানা ছিলো না মিশুর। একদিকে মজা লাগছে, অন্যদিকে লজ্জা।
মিশু বললো, ‘উঠবেন কখন?’
– ‘চা এনেছো?’
– ‘না, গরুর মুত এনেছি।’
রেগে হাত পা ছোঁড়াছুড়ি শুরু করলো মেঘালয়। ফোঁস করে বললো, ‘ধেৎ, দিলে তো আরামটা নষ্ট করে। কি সুন্দর ইম্যাজিন করছিলাম। তোমাকে কাছে পেয়ে ডট ডট ডট। পাঁজি মেয়ে, ফোন রাখ।’
হেসে উঠলো মিশু। হাসি থামিয়ে বলল, ‘রাখবো?’
– ‘রেখে দ্যাখ দেখি কত বড় সাহস। তুলে আছাড় মারবো পুঁচকে বাচ্চাটাকে।’
– ‘বাহ! একটু আগেই তো আদুরে গলায় কাছে ডাকছিলেন।’
– ‘আদরে আদরে বাঁদর বানাচ্ছি। একটা সকাল ও তোমাকে ছাড়া শুরু করতে ইচ্ছে করেনা। এত কষ্ট কেন দিচ্ছো আমায়?’
– ‘ভালোবাসা বাড়াচ্ছি। আপনার নেক্সট প্লান কি?’
– ‘দশ বছর পর বাচ্চা নিবো। বাচ্চা না হলে নাই। আমার মিশু পিচ্চিটাকে দশ বছর কোলে নিয়ে থাকবো। এর ভাগ কাউকে দেয়া যাবেনা।’
– ‘ধুর। কি খারাপ একটা লোক। আমি জানতে চেয়েছি এখন কি করার প্লান করছেন?’
– ‘হানিমুন কোথায় যাবো?’
– ‘আপনি দেখছি দারুণ দুষ্টু। আমি এসব জানতে চাইনি। আপনার প্রফেশন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।’
মেঘালয় একটা ছোট্ট নিশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘ওহ আচ্ছা। অফিসে বসবো ভাবছি। বিজনেস টা দেখাশোনা শুরু করি। আর কক্সবাজারে একটা নতুন রিসোর্ট হচ্ছে, সেটাতে শেয়ার দিতে বলছে। দিবো?’
– ‘এগুলার আমি কি বুঝি? আপনার ইচ্ছা। জানেন আপনার ঘুম জড়ানো কণ্ঠটা অস্থির লাগছে শুনতে।’
– ‘জানি। অয়ন্তিকা বলেছে।’
রেগে গেলো মিশু। রাগে গজরাতে গজরাতে বললো, ‘আমি তো আপনাকে ছেড়েই দিয়েছি। এখন ওই মেয়ের সাথে প্রেম করুন যান। ওকে বিয়ে করে ফেলুন। আমার সাথে ভূলেও যোগাযোগ করবেন না। বাই ফর এভার।’
বলেই টুক করে লাইন কেটে দিলো মিশু। কেটে দিয়ে এক মুহুর্ত দেরি না করে ফোন এয়ারপ্লেন মুড করে রাখলো। এখন বুঝুক কেমন মজা। মেঘালয় বারবার ফোন দিয়ে বন্ধ পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। গালে হাত দিয়ে বললো, ‘আপাতত এভাবেই খুনসুটিময় প্রেম চালাতে হবে।
৬০
মিশু ফ্রেশ হয়ে এক্সারসাইজ করতে লেগে গেলো। কয়টাদিন ব্যায়াম করা হয়নি। শরীরটা ভারি ভারি লাগছে। এক ঘন্টা সময় নিয়ে ব্যায়াম করলো ও। মিফতা ওর ব্যায়াম করা দেখে বললো, ‘তোর যা ওয়েট, আবার ব্যায়াম করছিস কেন?’
– ‘শরীরটা ফিট রাখতে। ব্যায়াম কি শুধু ওজন কমাতেই করে? সুস্থতার জন্যও করতে হয়।’
– ‘চল জিমে যাই তোকে নিয়ে। দুই ঘন্টা সব ধরণের ব্যায়াম করবি। আকর্ষণীয় ফিগার গড়ে উঠবে।’
মিশু একটু ভেবে বললো, ‘আচ্ছা চল। ব্রেকফাস্টের পর যাই।’
জিমন্যাশিয়ামে সময় কাটিয়ে বিকেলের দিকে বাসায় ফিরলো ওরা। বেশ উদ্দীপনা কাজ করছে মিশুর ভেতরে। অনেক ভালো ও লাগছে শরীরটা। বেশ ঝরঝরে লাগছে। গোসলের পর একটা লম্বা ঘুম দিলো। ঘুম থেকে উঠে কফি খেতে খেতে একটা বই নিয়ে বসল। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যেই।
মিফতা এসে মিশুর পাশে বসে বললো, ‘কিরে কি পড়ছিস?’
– ‘দ্য ভিঞ্চি কোড বইটা। অসম্ভব সুন্দর রে আপু। তোর বুক সেলফে অনেক বই। আমি সব বই পড়ে ফেলবো।’
– ‘হুম পড়। ভাইয়ার সাথে আরো কথা হয়েছে?’
মিশু চমকে উঠলো। সকালে ফোনটা এয়ারপ্লেন মুডে রাখার পর আর জেনারেল মুড করা হয়নি। ছেলেটা বোধহয় সারাদিন কল দিয়েছে। ধেৎ, কি যে করিনা আমি।
মিশু ফোনটা নিয়ে এয়ারপ্লেন মুড অফ করে দিলো।
তারপর মিফতাকে বললো, ‘খুব ভালো রে মানুষটা।’
মিফতা বললো, ‘সেটা তো বুঝেই গেছি। নয়ত আইফোন পাঠিয়ে দেয়? এনিওয়ে, তোর ফোনটা কিন্তু জোশ হইছে।’
– ‘আর আমার মানুষটা?’
– ‘হিংসে হচ্ছে হিংসে। মানুষটাকে হারাতে দিস না মিশু, নয়তো অনেক বড় কিছু হারিয়ে ফেলবি। কোনোদিনো পারবি না সুখী হতে।’
মিশু আনমনা হয়ে গেলো। মানুষটাকে সন্তুষ্ট করার জন্যই তো এতকিছু। মিশু তো নিজেকে নিয়েই খুশি ছিলো। সেই মানুষটার পাশে দাঁড়ালে যেন মানায়, মানুষটা যেন সবসময় প্রশান্তি নিয়ে মিশুর সাথে চলাফেরা করতে পারে সেজন্যই এতকিছু করছে মিশু। মেঘ যেন মন থেকে খুশি থাকে। একটা স্মার্ট ছেলে সবসময় স্মার্ট মেয়েকেই চাইবে এটাই স্বাভাবিক। মেঘের যেন কখনো মন খারাপ না হয় ওকে নিয়ে, তাইতো এত কষ্ট স্বীকার করছে ও।
এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। মিফতা হেসে বললো, ‘তোর মানুষটা ফোন দিয়েছে। নিশ্চয়ই সারাদিন কল দিয়েছিল।’
মিফতা হাসতে হাসতে উঠে চলে গেলো। ফোন রিসিভ করে চুপ করে রইলো মিশু। মেঘালয় উত্তেজিত কণ্ঠে বললো, ‘থাপ্পড় চেনো?’
– ‘চিনি। আমাদের এলাকার এক লোকের নাম চড়, তার ভাইয়ের নাম থাপ্পড়।’
– ‘মজা নিচ্ছো?’
– ‘হ্যা নিচ্ছি। খুব মজা পাচ্ছি।’
– ‘ I love you Mishu.’
মিশু চমকে উঠলো। এই প্রথম মেঘালয়ের কণ্ঠে এই কথাটা! হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো টুপ করে। নিশ্বাস দ্রুত হতে লাগলো। কাঁপা কাঁপা গলায় মিশু বললো, ‘আপনি পাগল হয়ে গেছেন।’
মেঘালয়ের ঝটপট উত্তর, ‘যে ভালোবাসায় পাগলামি থাকবে না, সেটাকে ভালোবাসা বলেনা। ভালোবাসলে যেকেউ পাগল হতে বাধ্য। যারা হবেনা, তারা প্রেমিক ই নয়।’
– ‘হয়েছে। এতদিন স্বামী ছিলেন, আজকে প্রেমিক হয়ে গেছেন।’
– ‘তুমি দূরে গিয়ে ভালো ই হলো। ধীরেধীরে প্রেমে পড়ছি, সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছো। এটার দরকার ছিলো।’
– ‘হুম। মিশু এখন গুড গার্ল, সে সঠিক কাজটাই করে।’
মেঘালয় সমর্থন করে বললো, ‘হুম মিশু। তুমি দূরে না গেলে এভাবে তোমাকে ফিল করতেই পারতাম না। তোমার জন্য বুকটা কিভাবে ফাটে বুঝাতে পারবো না। সবসময় ছটফট লাগে, দেখতে ইচ্ছে করে। তোমার কাছে ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে।’
– ‘প্রেমে পড়লে এমন হয়।’
মেঘালয় হাসলো। হাসতে হাসতে বললো, ‘এই মেয়ে, প্রেম করবি আমার সাথে?’
– ‘হুহ, আপনি একটা খারাপ ছেলে। আপনার মত ছেলের সাথে আমি প্রেম করিনা।’
– ‘আহারে, বালিকা রাজি হয়ে যাওনা। আর কতদিন কোলবালিশের সাথে লটর পটর করবো?’
– ‘যতদিন ইচ্ছে। আমি প্রেম করবো না। আমি বাচ্চা মানুষ। আগে বড় হই তারপর।’
– ‘বাচ্চা? তুমি বাচ্চা? এরপর কাছে পেলে বাচ্চার মা.. থাক বাকিটা আর বললাম না।’
শিউরে উঠলো মিশু। লজ্জায় নীল হতে শুরু করলো। এত লজ্জা লাগছে যে ইচ্ছে করছে বালিশের তুলার ভেতর মাথাটা ঢুকিয়ে দেই। নীল থেকে গাঢ় নীল হয়ে যাচ্ছে।
মেঘালয় বললো, ‘আহারে, সেকি লজ্জা। লাজুক মুখটা দেখাও তো দেখি। ভিডিও কল দিই?’
– ‘না। আমি যতদিন চাইবো না, ততদিন নো মুখ দেখাদেখি।’
এরপর খুনসুটিময় ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো। ঝগড়া চলতেই লাগলো রাত এগারোটা অব্দি। দুজনে একসাথেই খাবার খেতে চলে গেলো। খাবার খেয়ে আসার পর আবারো শুরু হলো ফোনালাপ। রাত তিনটা পর্যন্ত ফোনালাপ চললো। মুহুর্তগুলো যেন সুখে রাঙা হয়ে উঠেছে। কাছে থাকার এক ধরণের সুখ, দূরে থেকে ফোনে ফোনে খুনসুটির আরেক রকম সুখ। ফোন রাখার পর তাকে অনুভব করে মিটিমিটি হাসা। সুন্দর একটা মুহুর্ত কাটছে দুজনের।
৬১
পরদিন
জিমে এসে মৌনির সাথে দেখা হয়ে গেলো মিশুর। মৌনি অনেক্ষণ কথাই বলতে পারলো না মিশুকে দেখে। বুকে চেপে ধরে আদুরে গলায় বললো, ‘বাচ্চাটা কেমন আছিস তুই?’
মিশু হেসে বললো, ‘ভালো আছি আপু। তুমি?’
– ‘ভালো রে। তোদের এসব শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। রাতে যখন দেখলাম ভাইয়া সারারাত ফোনে প্রেম করছে আর হাসছে, তখন তো মহাখুশি হয়েছি। তুই তিনটায় ফোন রাখার পর তো বাকিরাতটা আমি আর ভাইয়া গল্প করেই কাটালাম।’
মিশু লাজুক স্বরে বললো, ‘কি করবো বলো? চেয়েছিলাম যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিতে। ও ফোন দিলে আমি কি কথা না বলে থাকতে পারি?’
– ‘হুম চালিয়ে যা। আমি তো পাশে আছি ই। তবে আমাদের বাসায় থেকেও ভালো কিছু করলে কোনো সমস্যা ছিলোনা। অযথা মেঘকে দূরে সরিয়ে রেখেছিস।’
মিশু একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘আসলে তোমাদের বাসায় থেকে কিছু করলে তার ক্রেডিট তোমার ফ্যামিলি নেবে। আমি চাই আমার একার শক্তিতে কিছু করতে।’
– ‘কি করার চিন্তা ভাবনা করছিস?’
– ‘আপাতত রেস্ট নিচ্ছি। ধীরেসুস্থে ভাব্বো।’
দুজনে কথা বলতে বলতে ব্যায়াম শুরু করলো। শেষ করার পর সোফায় বসে রেস্ট নিচ্ছিলো। মৌনি জানতে চাইলো এখন কোথায় যাবে? মিশু উত্তরে বললো, ‘একবার পার্লারে যাবো মিফতা আপুর সাথে। তারপর বাসায়।’
মৌনি বললো, ‘পার্লারে তুই কিছু করবি নাকি?’
মিশু কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো, ‘কেন?’
মৌনি মিশুকে বুঝিয়ে বললো, ‘তুই ন্যাচারাল মেয়ে। ভূলেও শহুরে ফ্যাশন গায়ে মাখতে গিয়ে ন্যাচারাল লুকটাকে নষ্ট করিস না। পার্লারে রেগুলার গেলে একদম কৃত্রিম লুক চলে আসবে। তোর আপত্তি না থাকলে আমি তোকে একজন ভালো বিউটিশিয়ানের কাছে নিয়ে যাবো। কিভাবে স্কিন ন্যাচারালি সুন্দর রাখা যায়, চেহারার উপর যে ধূলাবালি পড়ে সেটার ময়লা কাটাতে হয় কিভাবে এগুলো জানলেই হবে। ন্যাচারাল থাকবি, সুন্দর থাকবি। আর ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ এক ফ্রেন্ড আছে, ওর কাছে জেনে নিবি তোর হাইট ও ওয়েটের সাথে মানানসই হবে কোন ধরণের ড্রেস। গায়ের কালারের সাথে যে রংটা ফুটবে, সেটাও জেনে নিবি। এইগুলো করতে পারলেই এনাফ। নো ফেসিয়াল, নো হেয়ার কালার, নো এক্সট্রা মডার্ন। অলওয়েজ বি ন্যাচারাল।’
মিশু চঞ্চল ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ‘আচ্ছা ঠিকাছে। কবে যাবো?’
– ‘আগামীকাল বিকেলে যাবো।’
– ‘তোমার ভাইকে এসব বলবে না কিন্তু।’
মৌনি মুচকি হেসে বললো, ‘আচ্ছা বাবা বলবো না।’
চলবে..