হৃদমোহিনী
পর্ব ১১
মিশু মনি
.
১৪
মিশু সুইসাইড করার জন্য ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচাচ্ছে। এভাবে পরিবার ও মেঘালয়ের অপমানের কারণ হয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করছে না। বাবা মা অনেক রেগে আছেন। আর মেঘালয়ের মত একজন মানুষের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে ও। ছেলেটা নিজের বাবা মাকে মুখ দেখাবে কিভাবে? আজীবন ব্যক্তিত্ব আর সম্মানের সাথে বেঁচে থাকা মানুষ টাকে সবার চোখে লজ্জার পাত্র বানিয়ে দিয়েছে। এসবের জন্য মিশু নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না। মেঘালয় ও নিশ্চয় ক্ষমা করতে পারবে না ওকে।

ওড়নার প্যাঁচে গলা ঢুকিয়ে পায়ের তলা থেকে টুলটা লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে এমন সময় মিশুর ছোটবোন মিতু পাশের রুম থেকে শব্দ শুনে চমকে উঠলো। মিশুর গলা থেকে অদ্ভুত আওয়াজ বেড়িয়ে এসেছে। মিতু দ্রুত দরজা খুলে দেখেই জোরে একটা চিৎকার ছাড়লো।
ঘরে দুটো দরজা ছিলো। একটা দরজা বারান্দার দিকে, আরেকটা ঘরের মাঝখান দিয়ে অন্য ঘরে যাওয়ার জন্য। মিশু মাঝখানের দরজাটা লাগাতে ভূলে গিয়েছিলো। মিতু এক ছুটে রুমে এসে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলো।

মেঘালয় ছুটে এসে দ্রুত ধরে ফেললো মিশুকে। মিতু গলার বাঁধন খুলে দিলো। মিশুকে বিছানায় নামানোর পর বাড়ির সবাই এসে হাজির। মেঘালয় কোনোকিছু না ভেবেই সবার সামনেই কষে একটা থাপ্পড় লাগালো মিশুর গালে। সকলেই হতভম্ব!

মেঘালয় চেঁচিয়ে বললো, ‘সবকিছুর একটা লিমিটেশন থাকে। কি ভেবেছো তুমি নিজেকে? তুমি মরলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে? এত বড় বোকামি করার অধিকার কে দিয়েছে?’

বাড়ির সবাই নিশ্চুপ। মিশুর বাবা মেঘালয়ের রাগ দেখে আর কিছু বললেন না। মেঘালয় রাগে রীতিমত ফুঁসছে। মিশুর কোনো ক্ষতি হয়নি। মাত্র গলায় ঝুলিয়ে দেয়ার পরেই মেঘালয় এসে ধরে ফেলেছে। একটু দেরি হলেই বড় রকমের বিপথ হতে পারতো।

মেঘালয় এরকম বোকামি একদম ই সহ্য করতে পারেনা। রেগে বললো, ‘যে বাবা মা জন্ম দিয়েছে তাদের কথা একবারও ভাব্বে না? যারা জন্ম দিলো তাদের জন্য কি করেছো যে তার আগেই মরতে চাইছো?’

মিশু কাঁদতেও ভূলে গেছে। স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে মেঝের দিকে। পাথরের মত কঠিন গলায় বললো, ‘আমি তো ওদের মান সম্মান সব নষ্ট করে দিয়েছি। আমার বেঁচে থাকার কি অধিকার আছে?’
– ‘মান সম্মান কিছুই নষ্ট হয়নি। একটা এক্সিডেন্ট মনে করে নিজেকে সামলে নাও। সম্মান কি আমার নেই? আমার পরিবারের নেই?’
– ‘আমি আপনার সম্মানটাও নষ্ট করে দিয়েছি। নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না আমি।’
– ‘বললাম তো একটা এক্সিডেন্ট ভেবে ভূলে যাও। জীবনে এরকম অনেক কিছুই ঘটে যা আমরা কখনো প্রত্যাশা করিনা।’

মিশু নিশ্চুপ হয়ে গেলো। মিশুর বাবা ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছেন এমন সময় মেঘালয় মিশুকে বললো, ‘তোমার বাবাকে একবার বুঝিয়ে বললেও বুঝতেন। কিন্তু সেই সুযোগ তো আমরা পাইনি। এখন মরে গেলে কি উনি বুঝবেন নাকি তার হারানো সম্মান ফিরে পাবেন?’

বাবা কথাটা শুনে থমকে দাঁড়ালেন। একবার মেঘালয় ও মিশুর দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবলেন। ওনার মনেহচ্ছে এখানে কোনো ব্যাপার আছে। যদি মিশু মেঘালয়ের কাছেই গিয়ে থাকে তাহলে অযথা মরতে চাইবে কেন? বরং মেঘালয়কে প্রাপ্তির কারণে আনন্দিত হওয়ার কথা। কোনো রহস্য নেই তো?
মিশু বললো, ‘আমি কি করবো এখন?’
– ‘কিছুই করতে হবেনা। তোমার সমস্ত দায়ভার এখন আমার। যা করার আমি করবো, তুমি চুপচাপ থাকো।’

চমকে উঠে একবার মেঘালয়ের দিকে তাকালো মিশু। তারপর আবারো মাথাটা নিচু করে ফেললো। মিশুর বাবা এগিয়ে গিয়ে মেয়েকে বললেন, ‘এরকম পাগলামি আমার বাসায় থেকে করতে পারবে না। যা করার বাড়ি থেকে চলে গিয়ে করো। আর অন্তত এখন নতুন কোনো নাটক কোরোনা।’

মিশু চুপ করে গেলো। মেঘালয় বললো, ‘একবার কথা বলার সুযোগ দিলে অন্তত এখন নতুন নাটক করার প্রয়োজন হতোনা।’

মিশুর বাবা রীতিমত রেগে গিয়েই মেঘালয়ের দিকে তাকালেন। কিন্তু মেঘালয়ের চেহারায় এমন এক ধরণের মায়া আছে যে দেখেই প্রশান্তি লাগে। এই ছেলেটা কখনো মিথ্যে বলতেই পারেনা। উনি রাগটা সামলে নিয়ে বললেন, ‘কি বলার আছে তোমাদের?’

মিশু বললো, ‘আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক কখনোই ছিলোনা। আমি ধর্ষণের হাত থেকে কোনোরকমে পালিয়ে বেঁচে এসেছি। তারপর আমার কোনো হুশই ছিলোনা। এই লোকটাই আমাকে বাঁচিয়েছে আর তাকেই বিপদে ফেলে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলে তোমরা। অন্য গ্রামের লোকজন কি বললো সেটাই তোমাদের কাছে সবচেয়ে বড় সত্য হয়ে ধরা দিলো? আর তোমাদের মেয়ের কথা শোনার কোনো প্রয়োজন মনে করলে না?’

মিশুর বাবা মা দুজনেই এবার থ। এসব কি বলছে ও? অবাক হয়ে মিশুর দিকে তাকালেন দুজনে। মিশু আবারো বললো, ‘আমার একটা অন্যায় হয়েছে ঠিকই সেটা হচ্ছে আমি তোমাদেরকে না বলে তন্ময়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তন্ময় আমাকে দেখার পর পছন্দ করেনি, ফিরিয়ে দিয়েছে আমাকে। তারপরই ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হয়েছিলাম। এই লোকটা একেবারেই নির্দোষ। আমরা একে অপরকে চিনিও না।’

বাবা নিজে এগিয়ে এসে মিশুকে ধরলেন। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া লাগলো। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে পুরো ঘটনাটা খুলে বললো সবাইকে। সব শুনে কেউই আর কোনো কথা বলতে পারলো না। নিজেদের একটা বড় ভূল হয়ে গেছে বলে মেঘালয়ের কাছে ক্ষমা চাইলেন উনি।

মিশুর মা মেঘালয়কে জিজ্ঞেস করলেন ওর পরিবার মেনে নিবে কিনা।’

মিশু বললো, ‘ওনার ফ্যামিলি মেনে নেয়ার প্রশ্নটা পরে আসছে। সবার আগে যেটা সেটা হচ্ছে উনি নিজে কখনো আমাকে মেনে নিতে পারবেন না। আমিও পারছি না।’

বাবা মা দুজনে স্তব্ধ। যদি ছেলে মেয়ে উভয়ই বিয়েটা মানতে না পারে তাহলে বাকি জীবনটা কাটবে কিভাবে? সত্যিই এদেরকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অনেক বড় ভূল হয়ে গেছে। কিন্তু বিয়েটা হয়েই গেছে এখন আর কিইবা করার আছে?

বাবা সমস্ত রাগ ভূলে মেয়েকে বুকে চেপে ধরে আছেন। বিশেষ করে সেই বিপদের কথা শুনে ভয়েই বুক শুকিয়ে গেছে ওনার। বেঁচে ফিরেছে বলে শোকরিয়া আদায় করলেন উনি।

মিশু বললো, ‘আব্বু তুমি ওনাকে ছেড়ে দাও। উনি চলে যাক বাসায়। আমাদের বিয়ের কথাটা কখনোই কাউকে বলোনা। ওনাকে আমরা ছেড়ে দেই?’

প্রশ্ন শুনে বাবা থমকে তাকালেন মেয়ের দিকে। মেঘালয় অবাক হয়ে গেলো। মিশুর কথার অর্থ কি হতে পারে একবার ও কি ভেবে দেখেছে মেয়েটা?

মিশু বললো, ‘আব্বু প্লিজ। উনি অনেক ভালো মানুষ। বিয়েটা হয়ে গেছে তাতে কি? বিয়ের কথা কেউ তো জানেনা। ওনাকে যেতে দাও। আমি আমার মত পড়াশোনা করি, জীবনে বড় হই। আর ওনার জীবন ওনার মতই থাকুক। অযথা আমার জন্য কারো জীবনে দূর্ভোগ নেমে আসুক চাইনা।’

মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বোধ করছেন বাবা। কিন্তু বলার মত কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না। দুটো মানুষ যদি দুজনকে মন থেকে গ্রহণ করতেই না পারে তাহলে সংসারেও কখনো সুখী হবেনা। অনেক বড় ভূল হয়ে গেছে সত্যিই।
মিশু করুণ গলায় বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আব্বু। কোনোদিনো কখনো তোমাদের কথার অবাধ্য হইনি। কখনো কোনো মিথ্যে বলিনি। একটা ভূল করেছি আর তার ফলটাও পেয়েছি। কিন্তু আমাদের ভূলের জন্য এই মানুষ টার জীবনটা নষ্ট করতে পারিনা। ওনাকে যেতে দিই?’

মেঘালয় এতক্ষণ চুপ থেকে শুনছিলো। এবার অবাক চোখে মিশুর দিকে তাকিয়ে রইলো। সবকিছু কি এত সহজে মিটিয়ে নেয়া যায়? আজকে চলে গেলে দুজন কি কখনো ভূলতে পারবে এই অপ্রত্যাশিত বিয়েটার কথা? প্রশ্নটা করতে চেয়েও করতে পারলো না।

মেঘালয়ের সাথে চোখাচোখি হতেই মিশু কঠিন গলায় বললো, ‘আমি ডিভোর্স দিতে চাই আপনাকে। আপনি ডিভোর্স দিলে আমার আত্মীয় স্বজন নানান কথা বলতে পারে। তাই আমিই দিয়ে দিবো যাতে আপনার কোনো সমস্যা না হয়। আপনি এখনি বাসায় চলে যান, ডিভোর্স পেপার রেডি করে পাঠিয়ে দেবেন।’

মেঘালয় বেশ চমকালো। একসাথে এতগুলো ধাক্কা সামলাতে না পেরে মেয়েটার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে। একদিকে তন্ময়ের প্রতারণা, ধর্ষণের মত পাশবিক অত্যাচারের শিকার হতে হতে বেঁচে যাওয়া, রাস্তায় পাগলের মত পড়ে থাকা, একটা রাত জার্নি করে গায়ে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলেছে তার উপর বাবা মায়ের সম্মান আর মেঘালয়ের সম্মান হানির কারণ হলো। একটার পর একটা ধাক্কা, ছোট্ট মেয়েটার মনটা আর ভাবতে পারছে না কিছু। মিতু না দেখলে আজকে একটা দূর্ঘটনা সত্যিই ঘটিয়ে ফেলত। মেঘালয় একবার ভাবলো মিশুর প্রস্তাব টা রাখা যায় কিনা? কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো, এই মেয়েটা এখন অনেক অসহায়। নিজের ভালোর জন্য আজকে ওকে এভাবে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেলে প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় হয় পাগল হয়ে যাবে নয়ত আত্মহত্যা করে বসবে। এটা কখনোই হতে দেয়া যায়না। তাছাড়া এরকম একটা কাজ করলে মেঘালয় নিজেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। আজীবন ছোট হয়ে থাকবে বিবেকের কাছে। মেয়েটার তো একার দোষ দেয়া যায়না।

মিশুর মা বললেন, ‘এটাই ভালো হবে। আমাদের নিজের ভালোর জন্য দুটো জীবন নষ্ট হোক সেটা চাইনা। আমরা ভেবেছিলাম মেয়ে নিজেই নিজের পছন্দকে বেছে নিয়েছে, তাই বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু যার সাথে আজীবন থাকবে সে যদি মেয়েকে দুদিন পর ছেড়ে দেয়, তাহলে মেয়েটার ভাগ্যটা আরো খারাপ হয়ে যাবে। তারচেয়ে বরং এখনি ওরা আলাদা হয়ে যাক। ছেলেটাকে আমরা ছেড়ে দেই, সে বাসায় ফিরে যাক। ডিভোর্সের ব্যবস্থা সে চাইলে করতে পারে নয়ত আমরাই করবো।’

মেঘালয় অবাক হয়ে একবার মিশুর দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার তাকাচ্ছে ওর বাবা মায়ের দিকে। ওনাদেরকে যতটা খারাপ ভেবেছিলো ততটা নয়। অবশ্য খারাপ বলাও যায়না। মানুষ গুলো নিজেদের সুখের জন্য অন্যের খারাপ করতে চাইছে না। এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণত বাবা মা ই ছেলের সাথে মেয়েকে পাঠিয়ে দেয়। আর ওনারা ছেলেকে ছেড়ে দিতে চাইছেন! অদ্ভুত তো!

মিশু মেঘালয়কে বললো, ‘আপনি বিয়েটা ভূলে যাবেন। ভাব্বেন একটা দুঃস্বপ্ন ছিলো। আপনার এই অপমানের কথা কেউ কোনোদিনো জানবে না। সবকিছুর জন্য আমি ক্ষমা চাইছি হাতজোর করে। আপনার জীবন আগের মতই সুন্দর থাকবে।’

মেঘালয় এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না। অন্য কোনো ছেলে হলে আনন্দে নাচতে নাচতে বাড়ি চলে যেতো কিন্তু সেটা মেঘালয় কখনোই পারবে না। বিবেকের আদালতে আজীবন জ্বলতেই থাকবে। শুধু যে ডিভোর্স দিলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে সেটা তো নয়। মিশুকে আদর্শ একজন স্ত্রী বানিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়েতে রূপান্তর করলেও তো পারে। মিষ্টি মেয়েটা মেয়ে হিসেবে যতটা সুন্দর, স্ত্রী হিসেবেও ততটাই সুন্দর হবে। আর কারো জীবন বদলে দেয়ার মাঝেই যে জীবনের সার্থকতা সেই সুখটুকু মেঘালয় কেন ছাড়তে চাইবে?

মিশুর বাবা কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু মেঘালয় তার আগেই বললো, ‘দায় এড়ানোর মত মানুষ আমি নই। আমি স্ত্রী হিসেবে তোমাকে মন থেকেই গ্রহণ করছি। বাকিটা ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।’

মিশুর গলা অনেক কঠিন হয়ে গেছে৷ হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘প্রচন্ড মানসিক চাপে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷’
– ‘আমি চিন্তা ভাবনা করেই বলছি।’
– ‘আমিও চিন্তাভাবনা করেই বলছি। আমি আপনার সাথে কখনোই যেতে পারবো না। তন্ময় আমাকে যে অপমান করেছে সেই অপমান আবারও কাউকে করার সুযোগ দিতে পারিনা।’

মেঘালয় অবাক হয়ে বললো, ‘আমিও ওরকম অপমান করবো বলে মনে হয়?’
মিশু ক্রুদ্ধ গলায় বললো, ‘না করলেও আমি যাবো না। এই সম্পর্ক মেনে নেয়ার ইচ্ছে আমার নেই। কারণ আমাদের মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান। আজকে বিবেকের কথা শুনে হয়ত বাসায় নিয়ে যাবেন। কিন্তু দুদিন গেলে একবার ঠিকই খোঁটা দিয়ে বলবেন এরচেয়ে ভালো মেয়ে পেতাম আমি।’

মেঘালয় ভ্রু কুঁচকেই তাকিয়ে আছে মিশুর দিকে। একটা ঘটনায় এত দ্রুত মেয়েটা পাথরের মত হয়ে গেছে। নাকি থাপ্পড় খেয়ে এই সিদ্ধান্ত নিলো? অবুঝ!

মিশু বললো, ‘আমি জানি আমার সীমাবদ্ধতা কোথায়। আপনার পাশে দাঁড়ানোর মত কোনো যোগ্যতাই আমার নেই। আমি আর এই সম্পর্কটাকে হাস্যকর করে তুলতে চাইনা। আপনি মুখে না বললেও মনেমনে বলবেন অনেক ভালো মেয়ে পেতেন। সেটাও হতে দিতে পারিনা আমি।’
মেঘালয় বললো, ‘আমি ভেবেচিন্তে দায়িত্ব নিতে চাইছি। তারমানে এই নয় যে আজীবন নিজের স্ত্রীকে ছোট করে রাখবো। আমাকে দেখে এই বোধটুকু নিশ্চয় হয়েছে তোমার?’

মিশু একটু চুপ থেকে বললো, ‘আপনার ফ্যামিলি বলবে আমি আপনাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছি। আর কোনো অপমানই মানতে নারাজ আমি।’

মেঘালয় আর কিছু বললো না। মিশুর বাবা মা সবাই ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলো ছেলেটা তোকে নিয়ে যেতে চাইলে তুই যা। কিন্তু মিশু কিছুতেই রাজী নয়। সে মেঘালয়কে গ্রহণ করতে পারবে না। যতদিন না মেঘালয়ের সমান হচ্ছে,ততদিন ওর পাশে দাঁড়ানোর কথা ভাবতেও পারছে না সে।

মেঘালয় নিশ্চুপ হয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মিশুর দিকে। মেয়েটার অদ্ভুত পরিবর্তন মুগ্ধ করছে ওকে। একটু আগেই আত্মহত্যার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া মেয়েটার হঠাৎ পরিবর্তন সত্যিই মুগ্ধকর! ভেতরে তেজ আছে বলতে হবে।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here