হার্ট ব্লক-৩
নুর মুহাম্মাদ

এরপরে বৃহঃবার নিলয় সাহেব শেফার সাথে তাদের বাসায় গিয়েছিলেন । শেফার বাবার সাথে দেখা করেছিলেন। দীর্ঘক্ষণ তার সাথে কথা বলেছিলেন। তাকে অনেক করে বুঝাতে চেষ্টা করেছিলন। কিন্তু শেফার বাবার এক কথা, তুমি যে ভবিষ্যতে বড় ডাক্তার হতে পারবা। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবা তার গ্যারান্টি কি? নিলয় সাহেব সেইদিন তার কোন উত্তর না দিতে পেরে মাথা নিচু করে শেফাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।
এরপর আর শেফার সাথে নিলয় সাহেবের তেমন একটা মেশা হয় নি। প্রথম প্রথম ফোনে একটু আধটু কথা হত। কয়েকদিনের মধ্যে শেফার বাবা তার বিয়ে ঠিক করে ফেলে।এরপর একদিন শেফা এসে অশ্রুসিক্ত নয়নে নিলয় সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল। পরবর্তীতে নিলয় সাহেব শেফার এক বান্ধবীর কাছ থেকে জেনেছিল, বিয়ের দিন শেফা ভীষণ কান্নাকাটি করেছিল। একবার নাকি বেহুশও হয়ে পড়েছিল।
সেই থেকে আজ অবধি তাদের মাঝে আর দেখা সাক্ষাত তো দূরে থাক কখনো কথাও হয় নি। আজ নিলয় সাহেব শেফাকে এই করুণ অবস্থায় দেখে খুব আশ্চর্য হলেন। তিনি এতটা আশ্চর্য হয়ত জীবনে কোনদিনই হন নি। হয়ত ভবিষ্যতেও হবেন না। শেফার এই নাযুক অবস্থা দেখে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। তার পাশে উপস্থিত সবাই অবাক। কেউ কিছু বলার সাহস করতে পারল না।
নিলয় সাহেব অপারেশন থিয়েটারে আসার আগেই শেফাকে ইনজেকশন দিয় অজ্ঞান করে রাখা হয়েছিল। তাই শেফা নিলয় সাহেবর উপস্থিতি জানতে পারল না।
নিলয় সাহেব ভাবেন, শেফা যদি এই মুহূর্তে আমাকে দেখতো, কত খুশি হতো! পরক্ষণেই ভাবেন, খুশি তো নাও হতে পারত। হয়ত নিজেকে মানিয়ে নিতে পারত না। যাক আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তিনি আল্লাহর নাম নিয়ে অপারেশন শুরু করেন। পরম যত্নে অপারেশন শেষ করে হাসপাতালের সবাইকে শেফার প্রতি খেয়াল রাখার কথা বললেন। এবং সবচেয়ে বিশ্বস্ত দুজন নার্সকে শেফার সেবার জন্য নিযুক্ত করলেন। এরপর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে শেফার ছেলেকে নিয়ে বাসার পথ ধরেন।
নিলয় সাহেব বাসায় এসে শেফার ছেলে আয়মনকে সুন্দর করে গোসল করিয়ে দিলেন। পথে বসে আয়মন এবং তার আম্মুর জন্য কিছু কাপড়চোপড় কিনে এনেছিলেন। আয়মনকে সেগুলি থেকে একটি নতুন পান্জাবী পরিয়ে দিলেন। পান্জাবীটায় আয়মনকে বেশ মানিয়েছে। এরপর আয়মনকে সাথে নিয়ে এশার নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে শেফার জন্য খুব দুয়া করলেন। আয়মনকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন। আয়মন কিছুটা ইতস্তবোধ করছে। এত্ত বড় ডাক্তার তাকে এত এত আদর করছে! ভয়ে ভয়ে বলল, আমি আম্মুর কাছে যাবো।

–তোমার আম্মুর এখনো জ্ঞান ফিরেনি। ইনশাআল্লাহ সকালের দিকে জ্ঞান ফিরবে। এখন দুয়া করতে থাকো। সকালে তার জ্ঞান ফেরার আগেই আমরা তার কাছে চলে যাবো।
–আপনার বসায় আর কাউকে দেখছি না কেন?
–আমি একাই থাকি। কাজের বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যায়। আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পড়। সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। এরপর নিলয় সাহেব আয়মনকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। আজ অনেক বছর পর নিলয় সাহেবের একটু বেশিই ভালো লাগছে। একাকিত্বটা আজ অনুভব হচ্ছে না। আয়মনেকে ছোট রেখেই তার বাবা মারা যায় । তাই বাবার কথা আয়মনের তেমন একটা মনে নেই। আয়মনের মনে হচ্ছে, আজ সে যেন তার মৃত বাবাকে ফিরে পেয়েছে। যেন নিজের বাবার কাছেই যেন পরম সুখে ঘুমাচ্ছে।

নিলয় সাহেবের ফজরের নামাজটা বেশিরভাগ সময় পড়া হয় না। অনেক রাতে হসপিটাল থেকে আসার পর ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ফজরের সময় আর উঠতে মন চায় না। আজ খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলেন। ফজরের নামাজ পড়লেন। নামাজান্তে ভাবছেন, শেফার সাথে কী আজ দেখা করবেন নাকি শেফা সুস্থ হওয়ার পর? ক্ষানিক বাদে সিদ্ধান্ত নিলেন, আজই দেখা করবেন। তাকে দেখলে শেফা হয়ত নিজের ভেতর বল পাবে। এতে করে আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে। তাই সকাল সকাল নাস্তা সেরে
আয়মনকে নিয়ে হসপিটালে আসলেন। নার্সরা জানাল, শেষরাতে শেফার জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফেরার পর আয়মনকে দেখতে চেয়েছিল। নিলয় সাহেব আয়মনকে নিয়ে শেফার কেবিনে গেলেন। শেফা নিলয় সাহেবকে দেখে—–

চলবে—–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here