হার্ট ব্লক পর্ব-১
নুর মুহাম্মাদ

আস-শেফা ক্লিনিকের ম্যানেজার ডাক্তার নিলয় সাহেবকে ফোন দিয়ে জানাল, দশ বছরের এক কিশোর তার মাকে নিয়ে ক্লিনিকে এসেছে। তার মা ভীষণ অসুস্থ। কিন্তু তাদের কাছে টাকা পয়সা নেই বললেই চলে। ছেলেটা কান্নাকাটি করছে আর বলছে, ডাক্তার আমার মায়ের চিকিৎসা করেন। আমি কাজ করে সব টাকা পরিশোধ করে দেব।
নিলয় সাহেব খানিক ভেবে বললেন, তার চিকিৎসা শুরু কর। তার চিকিৎসার সব ব্যায় আমাদের ক্লিনিক বহন করবে।
নিলয় সাহেবের বাড়ি খুলনায়। ছোটবেলা থেকেই একটু ধার্মিক টাইপের। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠা। পারিবারিক দৈন্যের কারণে তার পক্ষে কোনভাবেই ডাক্তারি পড়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু তার মেধা ও সৃজনশীলতা স্যারদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়। তার মিতব্যয়িতা এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে এখানে এনে দিয়েছে। আজ তিনি ক্লিনিক করেছে। বাড়ি করেছে। গাড়ি করেছে। সবই করেছে। শুধু বিয়েটা করেনি। হয়ত কোনদিন করবেনও না। কেউ কখনো বিয়ের প্রসঙ্গ উঠালে তিনি সযত্নে এড়িয়ে যান। কেন এড়িয়ে যান? তা জানতে হলে আমাদের আরেকটু পেছনে যেতে হবে। ডাক্তারি পড়া অবস্থায় তিনি এক মেয়েকে ভালবেসে ফেলেছিলেন। মেয়েটিও তার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিয়েছিল। তাদের দিন ভালোই চলছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটল যখন বিয়ের প্রসঙ্গ এলো। নিলয় সাহেবের সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় তার বাড়ি নেই বলে মেয়ের পরিবার তাদের মেয়েকে অন্যত্র বিয়ি দিয়ে দেয়। সেই থেকে আজ অবধি ডাক্তার সাহেব ভুলেও কোন মেয়ের দিকে তাকান না।
দুপুরবেলা। ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ডাক্তার নিলয় সাহেব ক্লিনিকে এসেছেন। তিনি রুমে ঢুকে বসতেই ম্যানেজার সাহেব কতগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষার ফাইল তার সামনে ধরে বলল, এগুলো সেই মহিলার, যার কথা বলেছিলাম । মহিলার হার্ড ব্লক হয়ে গেছে। অনেক ব্যয়বহুল খরচ। এত টাকা তো আমরা এক অপরিচিত মহিলার পেছনে নষ্ট করতে পারি না।
নিলয় সাহেবের চেহারায়ও চিন্তার রেখা ফুটে উঠল। তিনি মনে করেছিলেন, অল্পসল্প টাকাতেই হয়ে যাবে তাই বলেছিলেন, আমরাই চিকিৎসার ব্যয় বহন করন। কিছুটা চিন্তা করে বললেন, তুমি ঐ ছেলেটাকে ডেকে পাঠাও। ম্যানেজার চলে গেলেন। দু’তিন মিনিট পর
সালাম দিয়ে জীর্ণ শীর্ণ মলিন পোশাক পরা একটি ছেলে ভেতরে আসল। নিলয় সাহেব সালামের উত্তর নিয়ে বললেন, কেমন আছো বাবু?
— আলহামদুলিল্লাহ। ভাল।
–তোমার নাম কি?
— আয়মন।
–তোমার আব্বু কই?
–মারা গেছে।
–তোমরা থাকো কই?
ছেলেটিঃ ঐ বস্তিতে।( হাতে ইশারা করে)
–তুমি কি কর?
— লেগুনার হেল্পারি করি।
–পড়াশোনা করো না কেন?
–আব্বু থাকতে মাদরাসায় পড়তাম।
আব্বু মারা যাওয়ার পর আম্মু আর পড়াতে পারেন নি।
–দেখি একটা সুরা পড়ে শুনাও তো আমাকে।

ছেলেটি মধুর স্বরে কুরআন পড়তে থাকে। ডাক্তার সাহেব শুনতে শুনতে মুগ্ধ হন। মুগ্ধ হতে হতে শুনেন। এক পর্যায় তিনি আবেগে ছেলেটাকে বুকে টেনে নেন। বলেন, তোমার আম্মুর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগবে। তা আমি দেখব। তবে তোমাকে একটা শর্ত মানতে হবে, কি পারবে তো?
–কী বলেন!আমার মায়ের জন্য আমি পৃথিবীর সবকিছু করতে পারব।আপনার যে কোন শর্ত মানতে পারব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here