#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_২৮(শেষ পর্ব)

আজ শীত একটু বেশিই অনুভূত হচ্ছে রাবেয়ার।এতক্ষন গাড়ীর ভিতরে ছিল বলো অনুভূত হয়নি কিন্তু এখন সে শীতটা ভালোই টের পাচ্ছে।
“আরে কি করছেন কি আপনি? কোট খুললেন কেনো?ঠান্ডা লেগে যাবে তো।আমি ঠিক আছি। ” কথাটা বলে গায়ে থেকে আসাদের দেওয়া কোট সরিয়ে নিতেই আসাদ আবার তা ভালোভাবে রাবেয়ার গায়ে জড়িয়ে দিল।
“অস্ট্রেলিয়ার শীত সহ্য করেছি যেখানে সেখানে এই শীত কিছুই না।”
“আর কতদূর?”
“এই তো সামনে।চলে এসেছি।”
গাড়ী থেকে নেমে আসাদ আর রাবেয়া একে অপরের হাত ধরে হাঁটছিলো এতক্ষন।আসাদ রাবেয়াকে যে জায়গায় নিয়ে আসলো তা দেখে খুশিতে ভরে গেল রাবেয়ার মন।ঢাকা শহরে এমন জায়গা আছে বলে রাবেয়ার জানা নেই।রাবেয়ার চোখের সামনে একটা নদী।নদীর ঠিক পাড়ে একটা ডিঙ্গী নৌকা বাধা।চারদিকে সবুজ ঘাস।মাঝখানের একটা বড় গাছের সাথে দোলনা লাগানো।দোলনায় ঝুলে আছে নানারঙের ফুল ও লতাপাতা।রাতের অন্ধকারেও রাবেয়া সব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে কারন ঘাসের উপর ছোট ছোট ইলেকট্রিক দিয়া।আকাশের চাঁদটাও খুব সুন্দর আজ।যা পরিবেশটাকে আরো মনোরম করে তুলেছে।
রাবেয়া সামনে যেতে নিতেই পিছন থেকে রাবেয়ার হাতটা ধরে ফেলে আসাদ।রাবেয়া পিছনে ফিরে তাকাতেই আসাদ চোখের ইশারায় তাকে জুতা খুলতে বলে।রাবেয়াও দ্বিমত করেনি।বরং দু’জনেই খুলে ফেলল জুতাজোড়া।নরম নরম শিশিরসিক্ত ঘাসের উপর হাটছে নব বিবাহিত কপোত কপোতী। রাবেয়া আবেশে আসাদের একহাত আঁকড়ে ধরেছে।রাবেয়ার এতো কাছে আসাটা খুব উপভোগ করছে আসাদ। মৃদ্যু হলদে আলোয় আর চাঁদের আলোয় রাবেয়ার এই খুশি মুখখানা দেখতে খুব ভালো লাগচ্ছে আসাদের।মনে মনে বলল,’যাক পরিশ্রম সফল হলো!’

আসাদ তার পা কে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে দোলনা দোলাচ্ছে আর রাবেয়া পরম সুখে আসাদের কাধেঁ মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।
“ভালোবাসি।”
হঠাৎ থমকে গেল আসাদের পা জোড়া।এতোদিন এই শব্দটা শুনতে চেয়েছিল সে।রাবেয়াকে কোনদিন বলা না হয়নি কিন্তু খুব ইচ্ছে ছিল তার এই শব্দটা শুনার।রাবেয়া চোখ বন্ধ করেও বুঝতে পারছে আসাদ তার দিকে চেয়ে আছে।রাবেয়া আস্তে করে কাঁধ থেকে মাথাটা তুলে টুপ করে চুমু খেল আসাদের গালে।একের পর এক ধাক্কা খাচ্ছে আজ আসাদ।রাবেয়া তখনও নিজের কপাল লাগিয়ে রেখেছে আসাদের গালের সাথে।ধীরে ধীরে ভিজতে শুরু করলো আসাদের কাঁধ।তার মানে রাবেয়া কান্না করছে।পরম আবেশে আবার চুমু খেল রাবেয়া আসাদের গালে।তারপর ধীর গলায় বলল,”ভালোবাসি আপনাকে আসাদ।অনেক ভালোবাসি।”
আসাদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা।শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তার ভালোবাসার মানুষ তার স্ত্রী রাবেয়াকে।এইভাবে কতক্ষন ছিলো জানা নেই তাদের।রাবেয়াকে ছেড়ে দিয়ে তার চোখে চোখ রাখলো আসাদ।রাবেয়ার চোখে মুখে পড়ছে আসাদের গরম নিশ্বাস।
“আমিও ভালোবাসি তোমাকে।”
রাবেয়া অস্তিত্বে মিশে যাচ্ছে আসাদ।রাবেয়া খামছে ধরলো আসাদের শার্ট আর আসাদ পরম ভালোবাসায় দখল করে নিচ্ছে নিজ মালিকানা।বেদখল হতে লাগলো রাবেয়ার অধরযুগল।

______________________________________

দুইবছর পর,

‘আসসালামু আলাইকুম, আমি ডা.সাবিহা নূর রাবেয়া।ধন্যবাদ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন কে যে তারা আমাকে এই এওয়ার্ডেরর যোগ্য মনে করেছেন।আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে শুকরিয়া জানাচ্ছি যে উনি প্রতিটা পদক্ষেপে আমাকে সাহায্য করেছেন।আমাকে হতাশ হতে দেননি।আজ এখানে অনেক মেডিকেল স্টুডেন্টরা আছে যারা অনেক কষ্ট করে,অনেক পরিশ্রম করে আজ এই জায়গায় আছে।অনেকে হয়তো পরিশ্রম করে আশানুরুপ ফল পায়নি।তাদের বলছি হাতাশ হবেনা।জীবন এখানে শেষ না।মূলত জীবন যুদ্ধটা এখান থেকে শুরু।হোচঁট খাওয়া ভাল শুধু খেয়াল রাখবে মাথাটা যেন না ফাটে।তোমাদের মনে রাখতে হবে হোঁচট খেয়ে তোমাকে আবার দাড়াতে হবে,আবার চলতে শুরু করতে হবে।থামাথামির কোন সুযোগ নেই জীবন যুদ্ধে।আমাকে আমার মেন্টর একবার বলেছিলেন,’মিস রাবেয়া,আমাদেরকে নিজেদের জীবনের লক্ষ্য নিজেদের নির্ধারন করতে হয়।আর সেই লক্ষ্যের সাফ্যলতার জন্য নিজেকেই পরিশ্রম করতে হবে।সকল বাধা বিপত্তি গুলোর সাথে নিজেকেই লড়তে হবে একা।আপনার হয়ে অন্য কেউ এই লড়াই লড়বে না।নিজেকেই হতে হবে নিজের বড় সাপোর্ট। প্রতিটি পদক্ষেপে নিজেই নিজেকে মোটিভেট করতে হবে।কারো উপর ভরসা করে থাকলে জীবন কখনো আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেনা।’ আমার মেন্টরের সেই কথাগুলো আমাকে অনুপ্রেরনা দিয়েছিল এই জীবন যুদ্ধে চলার জন্য।জানতে চান না কে সেই মেন্টর?”
একটু চুপ থেকে রাবেয়া আবার বলতে শুরু করলো, “তিনি হলেন আমার স্বামী,সিনিয়র হার্ট সার্জেন ডা.আসাদ মীর।”

দর্শক সারিতে বসে ছিলো আসাদ।রাবেয়াকে তার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে প্রশস্ত হাসি উপহার দিলো।তার পাশেই বসে ছিল সেলিনা মীর, শামীম সাহেব, মিনহাজ চৌধুরি, স্বপ্না চৌধুরি, নিলুফা বেগম এবং হাসান সাহেব।সবার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক।সাফার কোলে আছে আটমাসের একটি ফুটফুটে বাচ্ছা।

“সকলে বলে প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে একজন নারীর আবদান থাকে।আমার জীবনে উল্টো।আমার এই সাফল্যের পিছনে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে একজন নয় তিনজন পুরুষের অবদান আছে।আমার স্বামী,আমার মামা এবং আমার বাবা।আমাকে এই মানুষগুলো সবসময় সাহস জুগিয়েছে কাঁধে রেখেছে ভরসার হাত।তাই আজ আমি সফল একজন মানুষ।আর আমাকে নারী হিসেবে সম্পূর্ন করেছে আমার মেয়ে রায়েদা বিনতে আসাদ। আমি যেমন একা নয় ঠিক তেমনি আপনারাও একা নন।যদি আপনার চারপাশে কেউ না থাকে মনে রাখবেন,’যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন।’জাজাকাল্লাহি খাইরান।”

রাবেয়ার বক্তব্য শেষে করতালিতে ভরে গেল পুরো গ্যালারি।সাফার কোল থেকে মেয়েকে সযত্নে কুলে নিয়ে নিলো সে।আশেপাশে আসাদকে কোথাও দেখল না।ততক্ষনে তুলিও এসে গেছে।ভাগ্নিকে আদর করে বোনকে অভিনন্দন জানিয়ে বান্ধবীর সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়লো তুলি।কারন আর এক সপ্তাহ পরেই সাফার বিয়ে।সাব্বিরকে কাছ থেকে আসাদের খোঁজ জানতে পেরে রাবেয়া পা বাড়ালো সেদিকে।
সাফার সামনে এসে সাব্বির বলল,”ফোন রিসিভ করছো না কেনো?”
“আমার ইচ্ছা।”
“তোমার ইচ্ছা মানে!!আমার কিন্তু রাগ উঠছে।”
“আমারও ঠিক এমন রাগ উঠতো যখন আপনি আমার ফোন রিসিভ করতেন না হুহ।”বলে চলে গেল সাফা।
“বেস্ট অফ লাক ভাইয়া।” তুলিও হেসে চলে গেল।
এইটা দুইটা বছর কম ভোগায়নি মেয়েটা।তবুও ভালো সাব্বিরের।সাফার সব অভিমান ভাঙাতে রাজী সে।ভালোবাসা তো এমনই হয়!!

“এখানে দাড়িয়ে আছেন যে।আমরা মা মেয়ে আপনাকে খুঁজে হয়রান।”
“তোমার অপেক্ষা করছিলাম।”মেয়েকে কোলে নিয়ে একহাতে রাবেয়া জড়িয়ে ধরে বলল আসাদ।
“কিভাবে জানতেন যে আমি আসবো?”
“মন বলছিলো তুমি আসবেই।”
“ভালোবাাসি।”
“আমিও ভালোবাসি।”
“আপনাকে বলিনি আমি আমার রায়েদাকে বলেছি।”
“কিন্তু আমি আমার মেয়ের মাকে বলেছি।আবারো বলছি ভালোবাসি।”
লজ্জায় লাল হয়ে গেল রাবেয়ার চেহারা।বিয়ের পর থেকে লজ্জা যেন আরো বেড়েছে রাবেয়ার।অন্তত তাই মনে হয় আসাদের।
“একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”রাবেয়া বলল।
“এখনই করতে হবে?”
“হ্যা।”
“আচ্ছা করো।”
“আমাদের যদি সেদিন হঠাৎ করে দেখা না হতো তাহলে কি হতো?”
“গল্পটা অন্যরকম হতো কিন্তু ভালোবাসাটা ঠিক একই থাকতো বুঝলে আমার মেয়ের মা।”
“জ্বী বুঝেছি আমার ডাক্তার সাহেব।”

সমাপ্ত।

[গল্প লিখতে প্রচুর ধৈর্য্য লাগে।আর আমার যে একটা গল্প লিখার মতো ধৈর্য্য ছিল সেটা এই গল্প লেখার সময় জানতে পারলাম। আলহামদুলিল্লাহ যেরকম চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবে শেষ করতে পেরে আমি খুশি।সবাইকে ধন্যবাদ পাঠক হিসেবে সাথে থাকার জন্য।যেহেতু আজকেই শেষ পর্ব ছিলো আমি চাই আজ অন্তত আপনারা এই গল্প পড়ে কে কি অনুভব করলেন তা জানাবেন।আরেকটা কথা শেয়ার করি সামনে আরেকটা নতুন গল্প আসছে।ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, সুস্থ থাকুন আর সর্বদা খুশি থাকুন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here