#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_২৪
সকাল থেকে অফিসের কাজের চাপে দম নিতে পারছেনা সাব্বির।তার মধ্যে পিয়ন এসে বলো কে জানি দেখা করতে এসেছে।অফিস আওয়ারে কেই বা দেখা করতে আসবে।পিয়নকে মানুষটাকে ভিতরে নিয়ে আসতে বলে পুনরায় লেপটপে মন দিল সে।দরজায় নক করাতে সেদিকে দেখে কিছুটা অবাক হলো সে।এইসময়ে এই মানুষটাকে সে কখনো অফিসে আশা করেনি।
“আসতে পারি?”
“তুমি এই সময়ে এখানে?”
“কিছু কথা ছিল আপনার সাথে।”কথাটা বলতে বলতে ভিতরে ঢুকল সাফা।
“বলো কি বলবে।” লেপটপের দিকে চেয়ে বলল সাব্বির। সৌজন্যতামুলক ভাবে সাফাকে বসতেও বলল না সে।সাব্বিরের এই অবহেলার ধরন সাফার জানা।তাই তা আর গায়ে মাখলো না সে।মাথা নিচু করে রইল সে।
“কি হলো বলছ না যে?”সাব্বির আবার তাগাদ দিল সাফাকে।
“বাসায় আমার বিয়ের কথা চলছে।”সাফার এই কথাটা শুনে কিছুটা থমকে গেল সাব্বির।রুমে কিছুটা নিরবতা ছেয়ে গেল।সাব্বির নিজের ক্রাচে ভর দিয়ে ওঠে জানালার দিকে মুখ করে দাড়াল আর বলল,”ছেলে ভাল হলে বিয়ে করে নাও।”
“আপনি এইটা বলতে পারলেন!”
“এখানে বলতে না পারার মতো কি আছে?বিয়ে তো একদিন করতেই হবে।তো এখন করলে সমস্যাটা কি?”
“আপনি জানেন না সমস্যাটা কি?নাকি ইচ্ছা করে বুঝতে চাইছেননা।”
“আপাতত আমি এই বিষয় নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাইছিনা।এখন তুমি যেতে পারো।”
“আমি আপনাকে ভালোবাসি সাব্বির।”
সাফার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনে চোখগুলো বন্ধ করে ফেলল সাব্বির।নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার।কিন্তু কিছু করার নেই।
“আমার একটা অনুরোধ রাখবে?”
“আপনার একটা কেন সব অনুরোধ রাখবো আমি।শুধু বলেই দেখুন না।”
“এই বিয়েটা করে নাও তুমি।” এই কথাটা বলতে গিয়ে গলাটা সামান্য কেঁপে উঠলো সাব্বিরের।কিছুক্ষন চুপ থেকে সাফা বলল,”সত্যিই কি আপনি এইটা চান?”
“হ্যা।”
“ঠিক আছে তাহলে।আপনার কথাই রাখলাম তাহলে।আসলে কি জানেন আপনাকে ভালোবেসে কখন যে নির্লজ্জ হয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না।নাহলে কোন মেয়ে বারবার অপমানিত হয়ে আবার ফিরে আসে অপমানিত হওয়ার জন্য।ভালো থাকবেন আসি।”কথাটা বলে চোখের পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সাফা।এতোদিন ক্ষীন একটা আশা ছিল তার মধ্যে।আজ সাব্বিরর সব ভেঙে দিয়েছে।
জানালা থেকে ফিরে সাফার যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকলো সাব্বির।সাফা যদি একটিবার পিছনে ফিরে তাকাতো তাহলে দেখতে পেত সাব্বিরের চোখের নোনাজল।ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট পেতে দেখতে কারই বা ভালো লাগে।
হদদন্ত হয়ে সাব্বিরের অফিস রুমে ঢুকলো জিহান। জিহানকে দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিল সাব্বির।
“আরে তুই এই সময়!লাবনীর কি অবস্থা এখন।”
“লাবনীর কথা বাদ দে।সাফাকে দেখলাম নিচে।এক প্রকার দৌড়ে বের হলো সে।কান্না করছিলো বোধ হয়।এতো ডাকলাম শুনলো না।” জিহানের কথা শুনে চুপচাপ নিজের জায়গায় বসে গেল সাব্বির।জিহানও এসে বসলো আর বলল,”কি হয়েছিলো এখানে সাব্বির?”
জিহানের এই প্রশ্নে সব খুলে বলল সাব্বির।সব শুনে রাগে দাড়িয়ে গেল জিহান।
“তুই কি বলতো?মেয়েটা তোকে ভালোবাসে জেনেও তুই এইরকম করলি?কেন?”
“সব কেন এর উত্তর হয়না জিহান।”
“তুই কি নিয়ে বসে আছিস বলতো।কি দোষ মেয়েটার যে তুই ওকে এইভাবে কষ্ট দিছিস?”
“দোষ ওর না।দোষ আমার।আমি আমার এই পঙ্গুজীবনের সাথে ওকে জড়াতে পারবোনা জিহান।”সাব্বিরের এই কথায় থমকে গেল জিহান।
“তুই সাফাকে ভালোবাসিস?” প্রতিউত্তরে কিছু বললনা সাব্বির।নিষপল্ক দৃষ্টিতে সে চেয়ে রইল বাইরে।কিছু কথা ভাবনার জগতে থাকাই ভাল।কারণ বাস্তবতার চিত্রটা ভিন্ন।
______________________________
হাসান সাহেবের বুকের ব্যাথাটাও দিন দিন বেড়েই চলেছে।একা যে ডাক্তারে কাছে যাবে সেই শক্তিটাও পাচ্ছেননা তিনি।নিলুফা বেগম স্বামীর এই অবস্থা দেখে কি করবে বুঝতে পারলেন না।প্রথমে ভাবলেন রাবেয়াকে জানাবে।কিন্তু কোন মুখে জানাবেন মেয়েকে।তাই বাধ্য হয়ে মেঝ মেয়েকে ফোন দিলেন তিনি।যদি জামাইটা এসে উনাকে ডাক্তারের কাছে একটু নিয়ে যায়।মেয়েকে দুবার কল দেওয়ার পর তৃতীয়বারে কল রিসভ করলো সে।
“হ্যা মা বলো।কি প্রয়োজনে ফোন দিলে?”
“আমি তোকে প্রয়োজনে ফোন দি শুধু।”
“না…মানে।বাদও তো। বলো কেন ফোন দিয়েছ?”
“তোর বাবার বুকের ব্যাথাটা একটু বেড়েছে।তুই যদি জামাইকে একটু বলতি উনাকে ডাক্তাররের কাছে…”
“উনার এতো সময় কই মা।উনি তো পারবেনা।তুমি নিয়ে যাওনা বাবাকে।”
“আমি একা নিয়ে যেতে পারলে কি তোকে বলতাম।একটু বলে দেখনা জামাইকে।”
“বললাম তো সে পারবে না।তুমি ছোটকে ফোন দাও।এখন রাখি।”
ফোন কান থেকে নামিয়ে পুনরায় ছোট মেয়ের নাম্বারে ডাইল করতে গিয়ে হাসান সাহেবের কন্ঠ শুনে থেমে গেলেন তিনি।
“আর কাউকে ফোন দিওনা। কারো প্রয়োজন নেই আমার।” কথাটা বলেই চলে গেলেন হাসান সাহেব।নিলুফা বেগম সেদিকে চেয়ে রইলেন।কখন যে হাসান সাহেব এসে দাড়িয়ে সব শুনে ফেললেন তিনি টেরও পেলেননা।এইদিকে হাসান সাহেবের আজ একজনের কথা খুব মনে পড়ছে।সকাল আর রাতে খাবারের আগে মনে করে টেবিলে গ্যাস্টিকের ঔষধের পাতাটা রেখে যেতো মেয়েটা।পেশার একটু বেড়ে গেলে তেঁতুলের শরবত বানিয়ে চুপচাপ রেখে চলে যেত সে।বাসায় দেরিতে আসলে খাবার গরম করে টেবিলে রেখে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে থাকতো সে।আজ বড়ই অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে হাসান সাহেবের।অনুতাপের অাগুনে জ্বলছে তার মন।শুধুমাত্র কালো বলে মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে না দিলেও পারতেন তিনি। কিন্তু আফসোস!!
ক্যান্টিনে মুখোমুখী বসে আছে জিহান আর আসাদ।আসাদ কি ভাবছে তার কিছুই বোধগাম্য হচ্ছেনা জিহানের।
“কিছু ভেবেছিস?”
“সাব্বির সহজ সরল সেটা জানতাম।কিন্তু এতো বড় গর্দভ সেটা আজ জানলাম।”
“তাহলে এখন কি করবি তুই?”
“যেটা ঠিক সেটা।”
ডাক্তারে সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করছেন হাসান সাহেব।বুকের ব্যথা সহ্য করতে না পেরে অবশেষে নিলুফা বেগমকে নিয়ে একাই চলে এসেছেন তিনি।ডাক্তারের চেম্বার থেকে ডাক পড়ায় দুইজনই ভিতরে ঢুকলেন।চেম্বারে ঢুকার সাথে সাথে আসাদকে দেখে চমকে উঠলেন নিলুফা বেগম।আসাদও কিছুক্ষনের জন্য আবাক হয়ে গেল নিলুফা বেগমকে দেখে। সাথে সাথে দাড়িয়ে সালাম দিয়ে বসতে বলল তাদের।হাসান সাহেবও কিছুটা আবাক হলেন এইটা দেখে যে ডাক্তার ওনাকে সালাম দিচ্ছে।আসাদ নিজ ডাক্তারি কর্তব্য স্বরুপ রোগী হাসান সাহেবের সব কথা শুনল এবং কিছু মেডিসিন পেসক্রাইব করল।তার সাথে কিছু টেস্টও করতে দিল।হাসান সাহেবর সাথে কথা বলে আসাদ বুঝতে পারলো ইনি আর কেউ নন রাবেয়ার বাবা।
আসাদের ফোন কল পেয়ে রাবেয়া তার কেবিনে আসলো দেখা করতে।আসাদ তখনো দোটানায় ছিলো রাবেয়াকে জানাবে কি জানাবেনা নিয়ে।তখনই রাবেয়ার আগমন ঘটল।
“আসতে পারি?”
“প্লীজ আসুন।”হেসে জবাব দিল সে।রাবেয়া এসে তার সামনে বসল।
“লাবনী ভাবি কেমন আছেন এখন?”
“আলহামদুলিল্লাহ এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক।আশা করা যায় নরমাল ডেলিভারি করানো যাবে।নন্দী আপা তো সেইটায় জানালেন।জিহান ভাইয়া একটু বেশিই টেনশেন নিচ্ছেন।”
“ফার্স্ট চাইল্ডের জন্য সবাই এইরকম ফিল করে।জিহান যে পুরা হাসপাতাল মাথায় তুলে নেয়নি সেটায় অনেক।”
“সবাই না ডাক্তারসাহেব।প্রথম সন্তানদের জন্য সবাই একরকম ফিল করেনা।” আসাদ রাবেয়ার মনের অবস্থা বুঝতে পারলো।তাই সে তাড়াতাড়ি কথা পালটে ফেলল।
“কি ডাকলে তুমি আমাকে?”
“হুম…আমি!!”
“জ্বি আপনি।”
“ডাক্তারসাহেব।” ছোট করে জবাব দিল রাবেয়া।সে জানে এখন আসাদ তাকে লজ্জায়য় ফেলবে।
“তো ম্যাডাম আপনার কাঁপাকাঁপি রোগের চিকিৎসা করবো বলে কি সবসময় এই নামেই ডাকবেন?আমার কিন্তু আরেকটা নাম আছে।”
হঠাৎ রাবেয়া দাড়িয়ে গেল আর বলল,”আমার রাউন্ডে যেতে হবে।আমি এখন আসি।”
রাবেয়া চলে যেতে নিলে আসাদ তাকে থামালো আর বলল,”বাসায় আমি তোমাকে ড্রপ করে দিবো ওকে।”
“আচ্ছা।” বলে চলে গেল রাবেয়া।আসাদের এই কাজটা করতে খুব ভাল লাগে রাবেয়াকে লজ্জা দিতে কিন্তু মাথায় এখন তার অন্য কথা কিভাবে সামাল দিবে এই দুই পরিস্থিতি সে।
চলবে…..
©নওশিন সালসাবিল।