#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_২০
একমনে কি যেন ভাবছে আসাদ।তার ভাবনা দেখে জিহাদ বলল,”কি এতো ভাবছিস সেই তখন থেকে বলতো?”একপলক জিহানের দিকে তাকিয়ে পুনরায় আসাদ চিন্তায় ডুবে গেল।সে এটা নিশ্চত যে মেয়েটা রাবেয়া ছিল।কিন্তু ও এখানে কিভাবে?তাহলে সেইদিন ব্লাড কেম্পিং এর দিন ঐ মেয়েটা রাবেয়ায় ছিলো।কিন্তু ওর নাম সাবিহা নূর কেন?আচ্ছা ও কি তাহলে বিয়েটা করেনি নাকী বিয়ের পর স্বামীর সহযোগিতায় সে তার পড়ালেখা পুনরায় শুরু করেছে।পরে মনে পড়ল জিহান অব্যশই জানবে এই ব্যাপারে।
“একটা কথা বলতো এই যে ডা.সাবিহা নূর,তাকে কখন থেকে চিনিস?”
জিহান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল,”এটা কেমন প্রশ্ন?যখন থেকে জয়েন করেছে তখন থেকে চিনি।কেন?”
“ওর পুরো নামটা কি?”
“সাবিহা নূর।”
“ও কি ম্যারিড?”আসাদের এই প্রশ্ন জিহানের মনে সন্দেহ জাগলো।সেই সন্দেহ থেকে সে জিজ্ঞাসা করল, “কেন বলতো?”
জিহানের প্রশ্নের প্রতি উত্তরে আসাদ তাকে সব খুলে বললো।সেই কথা শুনে জিহান যেন আকাশ থেকে পড়ল।তারপর বলল,”বলিস কি?এই ডা.সাবিহা তোর রাবেয়া।!!আই কান্ট বিলিভ ইট!!”
“এবার তো বলল ও ম্যারিড কিনা?”
“জানি না দোস্ত। ওর সাথে আমার তেমন কোন কথায় কোনদিন হয়নি।মেয়েটাকে কোনদিন কারো সাথে অপ্রয়োজনীয় কোন কথা বলতে দেখিনি।” জিহানের উত্তরে কিছুটা হতাশ হলো আসাদ।সকালে তখন হঠাৎ রাবেয়ার আচমকা সামনে এসে যাওয়ায় আসাদ আর কিছুই ভাবতে পারছিলনা।মনে হচ্ছিল ভুল কিছু দেখছে সে।রাবেয়া শুধুমাত্র মিনিট তিনেক ছিলো সেখানে।তাদের মাঝে কোন কথায় হতে পারেনি।সব কথা ডা.এনাম হকই সেরেছেন।পরে আসাদ ভেবেছিল রাবেয়ার সাথে দেখা করে ওর সাথে কথা বলবে।কিন্তু সুযোগই হয়ে উঠছিলো না আর।
কিছু একটা মনে পড়াতে জিহান বলল,”ওয়েট ওর খবর পাওয়া যাবে ডা.রুমি থেকে।ওরে ফোন লাগায় আমি।”যে কথা সে কাজ।ডা.রুমির সাথে যখন জিহান কথা বলছিল তখন আসাদ নিজের হার্টবিট নিজেই শুনতে পারছিলো।জিহান ফোন রাখার পর তার দিকে তাকিয়ে ছিলো আসাদ।জিহান মন খারাপের ভঙ্গিতে ফোন হাতে নিয়ে ঘুরাতে লাগলো আর আসাদের উদ্বিগ্ন হওয়া চেহারা দেখে মনে মনে হাসছিলো।পরে অদ্ভুদ এক চিৎকার দিয়ে হেসে উঠল আর বলল,”দোস্ত ট্রিট চায়।ভাবী এখনো সিঙ্গেল!”
জিহানের কথা শুনে যেন দেহে প্রান ফিরে পেল আসাদ।স্বস্তিতে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ল সে।এইবারে আর কোনমতে সে রাবেয়াকে হারাতে পারবেনা।মন এক অজানা সুখে শিহরিত হলো তার।
বারান্দায় একরাশ মন খারাপ নিয়ে বসে ছিলো রাবেয়া।একদিকে অপেক্ষা শেষ হওয়ার খুশি অন্যদিকে…।আজ হসপিটালে বেশিক্ষন ছিলোনা সে।মাথা ব্যথার অজুহাত দিয়ে দুপুরের পর বাসায় চলে এসেছিল সে।আসাদের কেবিন থেকে চলে আসার পর এক অন্যরকম খুশি অনুভূত হচ্ছিলো রাবেয়ার।কারন আসাদের চাহনি বলে দিচ্ছিল যে সে রাবেয়াকে চিনতে পেরেছে।কেয়েক মুহূর্ত একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকার পর চোখ নিচে নামিয়ে এনেছিল সে।আসাদও বুঝতে পেরে চোখ সরিয়ে ফেলেছিল।কিছুক্ষন পর সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছিলো তাকে।আসাদের কেবিন থেকে বের হয়ে যখন করিডোর দিয়ে হাঁটছিলো তখন কিছু হসপিটাল কর্মচারী কথা কানে এলো তার।কথার গুলো মমার্থ এই দাড়ায় যে, বিদেশ থেকে কোন এক ডাক্তার মেয়েকে বিয়ে করেছে আসাদ।কথাগুলো ঝড়ো হাওয়ার ন্যায় রাবেয়ার মনে আসাদের নামে বানানো হৃদকুটিরে প্রবল আঘাত করছিল।যার কারনে এক মুহূতও সেখানে ছিলো না সে।বাসায় এসেও মন স্থির করতে পারছিলো না।তাই তাড়াতাড়ি দুই রাকাত সালাতুল হাজতের নামজ আদায় করে নিল।সালাতুল হাজাত বা ‘প্রয়োজনের নামাজ’ একটি বিশেষ নফল ইবাদত।মানুষের যখন বিশেষ কিছুর প্রয়োজন হয় কিংবা শারীরিক মানসিকভাবে কোনো দুশ্চিন্তা দেখা দেয় তখন এ নামাজ পড়তে হয়।নামাজ আদায়ের পর কিছুটা ভাল লাগছিলো রাবেয়ার।
“ভর সন্ধ্যায় এখানে বসে আছিস যে।গায়ে তো কোন গরম কাপড়ও নেই ঠান্ডায় লেগে যাবে তো।”বারান্দার দরজায় দাড়িয়ে কথাটা বললেন স্বপ্না চৌধুরী।
“এমনি মামী।তুলি কই?এসে দেখলাম না ওকে।”
“নিজের রুমে আছে।গল্পের বইয়ে ডুবে আছে।কালকে কিছু মেহমান আসবে বলেছিলাম তোকে মনে আছে?”
মামীর কথা শুনে মন খরাপের আকাশে কালো মেঘ আরো জমতে লাগলো রাবেয়ার।মাথা নিচু করে বলল, “জ্বী মামী মনে আছে।”
“ছুটি নেয়েছিস তো!”
“হ্যা নিয়েছি।” রাবেয়ার মনমরা জবাব শুনে তার পাশে এসে বসলেন স্বপ্না চৌধুরী আর বললেন,”তোর মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি।আর আমরা তোর সাথে কোনরকম জোর জবরদস্তি করবোনা।তারা আসবে।তোকে দেখে যাবে।তোর পছন্দ হলে আমরা কথা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো।তুই তোর মামা মামীকে বিশ্বাস করিস তো?”
“এইসব কি বলছ তুমি?এই পৃথিবীতে আমার কাছে আপন বলতে শুধু তোমরা।আমি তোমাদেরকে নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি।”
“তাহলে সেই বিশ্বাস থেকে বলছি আমরা যা করব তোর ভালোর জন্য করবো আর তোর মতামত নিয়ে করব।তাছাড়া এই মেহমানদের তুই চিনিস।”মামীর কথা শুনে কিছুটা আবাক হলে রাবেয়া। স্বপ্না চৌধুরী হেসে বললেন, “তুলির বান্ধবী সাফার মা বাবা আর ভাই আসবে কালকে।”
রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে পুনরায় এয়ারপোর্টে যেতে হলো আসাদকে।আজ শামীম মীর ফিরে আসছেন।গাড়ী ড্রাইভ করছে আসাদ আর তার পাশের সীটে বসে আছেন শামীম সাহেব।টুকটাক সব জিজ্ঞাসা করার পর শামীম সাহেব বললেন,”কাল আমাদের এক জায়গায় যাওয়ার কথা আছে।মনে আছে তো?”
“কোথায় বাবা?”
“কেন তোর মা তোকে কিছু বলেনি?মিনহাজ চৌধুরীর বাসায়। তোর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে।”
হঠাৎ মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা মনে পড়াতে আসাদ চাইছিলো নিজের মনের কথা বাবার সাথে শেয়ার করতে।সে কিছু বলার আগেই শামীম সাহেব কথা বলতে লাগলেন,”দেখ আসাদ,মেয়ে আমাদের দেখা।সেদিনের জন্য মেয়েটার কাছে আমি ও তোর মা অনেক কৃতজ্ঞ।সেদিন আল্লাহ ওকে আমাদের সাহায্যের জন্য পাঠিয়েছিলেন।তাছাড়া আমি মিনহাজ সাহেবকে কথা দিয়ে দিয়েছি।আর তুু্ই জানিস কথার বরখেলাপ করা আমার পছন্দ নয়।কিন্তু তুই চিন্তা করিস না।তোর মেয়ে পছন্দ হলেই আমরা সামনে এগাবো।আই হোপ তুই কাল যাবি আমাদের সাথে।”
বাবার কথার প্রতিউত্তরে আসাদ তার মনের কথা বলতে পারলো না।আর নীরবতা সম্মতির লক্ষন মনে করে শামীম সাহেব আসাদের সম্মতিতে খুশি হলেন।
____________________________________
দুপুর থেকে রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্বপ্না চৌধুরি।সন্ধ্যায় আসবে মীর পরিবার।আপ্যায়নে কোন কমতি রাখতে চান না তিনি।ঘরকে সাজিয়ে তুলছেন নতুন সাজে।একবার এসে রাবেয়াকে দেখেও গেলেন তিনি।দুপুরের খাবার খেয়ে মেয়েটা যে নামাজে বসেছে আর উঠছেই না।কতবার ডাকলেন।শুধু উত্তরে রাবেয়া বলল,”মামী আজ অবসর সময় আছে তাই নফল নামাজ আদায় করছি।”এই কথা শুনে আর কিছু বলেনি তিনি।রাবেয়ার এই দিকটা খুব ভালো লাগে তার।মেয়েটা অনেক ধার্মিক।
“কি হলো রওনা দিলি?”
“ভাইয়া মাত্রই হসপিটাল থেকে এসেছে।ভাইয়া রেডি হলেই রওনা দিবো।”
ফোনটা কেটে দিয়ে সাফা ভাবল দুনিয়ার সব মানুষ তার খোঁজখবর নিবে শুধু একমাত্র সেই নিবে না।সবাই কারো না করো জন্য অপেক্ষা করছে।একমাত্র সেই করছেনা।ভালো লাগেনা।
সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসেছে আসাদ।আজকে হসপিটালে কোনমতে রাবেয়ার দেখা পেল না সে।পরে জানতে পারলো আজকের জন্য ছুটি নিয়েছে রাবেয়া।এদিকে রাবেয়াকে না মা বাবাকে কাউকে কিছু বলতে পারলো না আসাদ।নিজের চুল নিজেই ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে তার।মাগরিবের আযান দেওয়া আজ ঘরেই নামাজ সারলো সে।
চৌধুরী ম্যানশনের বড় ড্রয়িং রুমে বসে আছে মীর পরিবার ও চৌধুরী পরিবার।মিনহাজ সাহেব ও শামীম সাহেব ব্যস্ত তাদের ব্যবসায়িক আলাপ নিয়ে।মাঝে মধ্যে আসাদের সাথেও চলছে তাদের আলাপচারী। স্বপ্না চৌধুরি ব্যস্ত আগত মেহমানদের আপ্যায়নে।সেলিনা মীর বারবার তাকে এতো কষ্ট করতে মানা করেই যাচ্ছেন।কিন্তু তাতে একটু কর্নপাত করছেন না তিনি।তুলি সাফাকে উপরে তাদের মিষ্টি আপুর রুমে নিয়ে এসেছে।রাবেয়াকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরলো সাফা।
“উফ মিষ্টি আপু তোমাকে যে এতো সুন্দর লাগছে বলার মতো না !”সাফার করা প্রসংশায় মুচকি হাসি উপহার দিল রাবেয়া।অথছ মনে তার বিরাজ করছে ঘন মেঘ।রাবেয়া আজ তার জলপাই রঙের জিলবাহবটা পড়েছে।মামী তা দেখে বলেছিলেন,”এটা কেন পরলি? একটা শাড়ি পড়।একটু সাজ না মা।”উত্তরে রাবেয়া বলেছিল,”ইসলাম শরীয়তে পাত্রপক্ষের সামনে যতটুকু সতর ঢাকতে বলা হয়েছে ততটুকুই ঢেকেছি আমি।বিয়ের উদ্দেশ্যে মুখ ও হাত দেখা যায়েজ আছে মামী।তাই আজ আমি কোন নিকাব বা হাতমোঁজা পড়িনি।এর বেশি কিছু করতে আমায় ফোর্স করোনা প্লিজ।”
রাবেয়ার এমন কথায় তখন আর কিছু বলতে পারেননি স্বপ্না চৌধুরি।
আলাপ আলোচনার মাঝে সেলিনা বেগম বললেন,”আপা আমরা তো মেয়েকে অনেক আগে দেখেছি আমাদের আর দেখার প্রয়োজন নেই বরং আপনি আসাদের সাথে ওর দেখা করানোর ব্যবস্থা করে দিন।” সেলিনা বেগমের কথা অনুযায়ী স্বপ্না চৌধুরী পাত্র পাত্রীর সাক্ষাৎ এর ব্যবস্থা ছাদে করলেন।কিন্তু এটাও ঠিক হলো যে তাদের সাথে সাফা তুলিও থাকবে।যেই বলা সেই কাজ।তুলি আসাদকে ছাদে নিয়ে গেল।ছাদের এক কোনায় রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে আসাদ।মন আর মস্তিক এখন তার আন্দোলনে ব্যস্ত।সন্ধ্যার বিবর্ণ রঙে ছেয়ে গেছে আকাশ।দূরে কোথাও থেকে একঝাক পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে আসছে।এক হাত পকেটে রেখে নিরবভঙ্গিতে দাড়ানো আসাদের মন বলছে,”ধর যদি হঠাৎ সন্ধ্যে,তোমার দেখা আমার সঙ্গে।”হঠাৎ পিছন থেকে মৃদু কন্ঠে কারো সালাম শুনতে পেল আসাদ।পিছনে ঘুরে তাকালো সে।জীবনের দ্বিতীয় ধাক্কাটা খেল আজ সে।প্রথমে মনে হচ্ছিলো বিভ্রম হচ্ছে তার যার কারনে সে রাবেয়া কে সামনে দেখতে পারছে।পরক্ষনে তার সেই ধারনাটা ভুল প্রমানিত হলো।কারন তার সামনে সত্যিই দাড়িয়ে আছে রাবেয়া।প্রথমে দৃষ্টি নত ছিলো বলে সামনের জন কে তা রাবেয়া বুঝতে পারেনি।কিন্তু যখন পিছন থেকে তুলি ‘আসাদ ভাইয়া’ বলে ডাক দিল তখন সে চোখ উপরে তুলে সামনের ব্যক্তিটার দিকে তাকালো।এই মুহূর্তে এই পরিস্থিতে পাত্রের জায়গায় আসাদকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো রাবেয়া।
চলবে…..
©নওশিন সালসাবিল।
[ আজকে পাঠকদের অনুভূতি জানতে চায়। ]
[ সেটা দুই লাইন হলেও চলবে। ]