#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_১৮
তুলিকে নিয়ে গাড়িতে বসে আছে রাবেয়া।তখনের বলা মামীর কথাগুলো এখনও ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়।পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,”যা হবে ভালোর জন্য হবে।নিশ্চয় আল্লাহ আমার জন্য ভালো কিছু রেখেছেন।”
“এই আপু কি ভাবছ এতো বলতো।” তুলির কথায় ধ্যান ভাঙল রাবেয়ার আর বলল,”হুম…তেমন কিছুনা।আজকের তোর লিপস্টিকের কালারটা একটু ডিপ হয়ে গেলনা। ডু ইউ থিংক ইটস সুইটেবল ফর কলেজ?”
“কলেজে তো সবাই কমবেশি এইসব দিয়ে যায়।ওটা কোন সমস্যা হবেনা।আমরা ইয়াং এইগুলো আমরা করবো না তো কে করবে বলো।”
“তুলি কিছু কথা বলি মন দিয়ে শুনবি কিন্তু।আচ্ছা তোর এই সাজসজ্জা এইগুলো তোকে কি দেয়?”
“কি দিবে আবার কিছুই তো না।”
“উহুম..হয়নি। কিছু না কিছু তো মাস্ট দেয় তা না হলে তুই ঘন্টার উপর ঘন্টা এইসবে ব্যয় করতি না।যেমন আমার পর্দা আমাকে সেইফটি,কমফার্ট দেই আর গুনাহ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে তাই আমি এই পর্দা করি। তাছাড়া পর্দা মেয়েদের জন্য ফরজ তাই করি।তুই এইসব কেন করিস?তোর কি কমফার্ট ফিল হয়।”
“মাঝে মাঝে খুব অস্বস্তি ফিল করি।” মাথা নিচু করে বলল তুলি।
“একি কেন!!তোকে তো খুব সুন্দর দেখায়।তাহলে কেন এমন ফিল করিস?”
“কলেজের ছেলে গুলো যখন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে তখন এমন ফিল হয়।”
“এখানে ওই ছেলেগুলোর কি দোষ? তোরা মেয়েরা যদি খোলামেলা ভাবে চলাফেরা করে নিজের রুপ দেখাতে পারিস তাহলে তারা তা উপভোগ করতে পারবেনা কেন?সুন্দর জিনিসের উপর চোখ যাবে এইটা তো চোখের ধর্ম।আর কয়জন বা তোদের দেখে চোখ নিচু করে রাখবে?সব ছেলে তো আর পর্দা মানে না।
কিহ মনে হয় মানে?”
মাথা দুলিয়ে না প্রকাশ করল তুলি।
“আচ্ছা মনে কর তোর মূল্যবান জিনিস আছে যা অনেক দামী।তো তুই কি সবসময় সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে রাখবি সেইসেই দামী জিনিসটা নাকি সযত্নে তুলে রাখবি বা লুকিয়ে রাখবি যাতে কোন ক্ষতি না হয় বা কারো কুনজর না পড়ে।কোনটা করবি?”
“সযত্নে রাখব।সবাইকে দেখিয়ে রাখলে তো কারো না কারো খারাপ নজর তাতে পড়বেই।কেউ সেটার ক্ষতি করতে চাইবে তো কেউ সেটা চুরি।এটাতো পাগলেও বুঝে।”
“একদম ঠিক।আমরা মেয়েদের জন্য আমাদের রুপ হলো অতি মূল্যবান দামী জিনিস।তাই এটাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নিজেকে পর্দার আওতায় আনতে হবে।সবাইকে প্রদর্শনের জন্য তো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের এই রুপ দেননি।নিজের জন্য কি ভাল সেটাতো পাগলেই বুঝে কিন্তু আমরা মেয়েরা বুঝিনা।আধুনিকতার নামে দিন কে দিন আমরা মেয়েরা নিজেদের রুপ এইভাবে বিলিয়ে দিচ্ছি।এটাতো ঠিক না।”
রাবেয়ার কথা শুনে মুখটা নিচু করে রাখলো তুলি।এতে তার মনোভাব কি সেটা আর বুঝতে পারলোনা রাবেয়া।
কিন্তু তুলি যখন গাড়ি থেকে নামার আগে টিস্যু দিয়ে ঠোঁটা মুছে গলায় ফেলা রাখা ওড়নাটা মাথায় দিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো তখন রাবেয়া বুঝতে পারলো তুলিকে বলার কথাগুলো বিফলে যায়নি।
সাফাকে কলেজে নামিয়ে দিতে গিয়ে বিপাকে পড়ল আসাদ।তাকে নাকি এখন কলেজের ভিতরেও এগিয়ে দিতে হবে সাফাকে।বোনের আবদার ফেলার মতো নয়। তাই আগত্য আসাদকে কলেজের ভিতরে যেতেই হলো।তুলির সাথে তার ডিপার্টমেন্টর সামনে দাড়িয়ে ছিলো রাবেয়া।তুলি অপেক্ষা করছে সাফার জন্য।এদিকে হাসপাতাল যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে রাবেয়ার।তাই সে তুলিকে বিদায় দিয়ে চলে যাচ্ছিলো।যেই পথ দিয়ে রাবেয়া চলে যাচ্ছিল সেই পথ দিয়ে কলেজে ঢুকছিলো আসাদ।অজান্তে পাশ কেটে গেল রাবেয়া।দুই জোড়া অপেক্ষারত চোখ দেখতে পেলোনা একে অপরকে।দীর্ঘায়িত হলো অপেক্ষার দিনকাল।সময়ও প্রবহমান।তবে কি হবেনা তৃষ্ণাতুর দুইজোড়া নয়নের মিলনমেলা?
সাফার সাথে আসাদকে দেখে একটু আবাক হলো তুলি।তাদের দিকে এগিয়ে এসে তুলি বলল,”আরে ভাইয়া আপনি!কেমন আছেন?”
“আমি ভাল আছি।তুমি কেমন আছ?”
“এই তো।”
তুলির সাথে সৌজনতামূূলক কথা সেরে সাফা থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল আসাদ।গন্তব্য এখন সাব্বিরে অফিস।কারন হসপিটাল জয়েন করতে এখনও কয়েকদিন বাকী আছে তার।তাই এই সময়টা বন্ধুদের সাথে কাটাবে বলে ঠিক করেছে সে।
ক্লাস শেষে করিডোরে বসে আছে সাফা আর তুলি।তুলি বলল,”তুই বলিস নি কেন যে আজ কলেজে ভাইয়া আসবে।তাহলে তো আপুকে আরো কিছুক্ষন দাড়াতে বলতাম।দেখা হয়ে যেত ওদের।”
“কিহ!!আপু এসেছিলো আজ।তুই আমাকে আগে বলবি না।”
“আচ্ছা বাদ দে।এইরকম চলতে থাকলে তো ওদের দেখায় হবে না কখনো।তাছাড়া তোরা আমাদের বাসায় কখন আসবি?
“আব্বু এই সপ্তাহে মালেশিয়া যাচ্ছে।আর পরের সপ্তাহে ভাইয়ার হসপিটালে জয়নিং। ভাইয়ার জয়নিং এর পর তোদের বাসায় যাবে বলে ঠিক করেছে আম্মু।”
“তাহলে তো অনেক দেরি।”কিছুক্ষন চিন্তায়য়মগ্ন হলো দুই বান্ধবী।কিছু একটা মনে পড়তেই দুই বান্ধবী একসাথে বলে উঠলো,”আইডিয়া!!”
রাতে শামীম সাহেবের মালেশিয়ার ফ্লাইট তাই সেলিনা মীর ব্যস্ত ব্যাগ গুছাতে।তখনই শামমী সাহেব
বললেন,”কথা হয়েছে তোমার সাফার সাথে?”
“এখনও বলতে পারিনি।সময় করে বলবো আমি।”
“হুম।রফিকুল সাহেব আজও ফোন দিয়েছেন।আমি তাকে বলে দিয়েছি মেয়ের সাথে কথা বলে তাকে জানাবো।তিনি চাইছেন ওনার ছেলে ফাহাদ লন্ডন ব্যাক করার আগে এনগেজমেন্ট করে রাখতে।”
“আমার তো ছেলেকে ভালোই লেগেছে।আসাদের বিয়ে ঠিক করার পরই সাফার দিকটা সেরে নেওয়া যাবে।”
“কিন্তু আমি সাফার মতামতকে প্রধান্য দিতে চায়।আমার মেয়ে যেমনটা চাইবে ঠিক তেমনটাই হবে।”
“আচ্ছা বাবা বুঝলাম।আমি সময় করে ওর মতামত জেনে নিবো।”
_____________________________
“ভাইয়া আসবো।”
আসাদ তখন বিছানায় হেলান দিয়ে বইটি পড়ছিল।সাফার ডাক শুনে উঠে বসলো সে। আর বলল,”তুই কখন থেকে অনুমতি নেওয়া শিখলি।আয় ভিতরে আয়।”
“একটা কথা ছিলো তোমার সাথে।কাল তুমি ফ্রি আছো?”
“হুম পরশু পর্যন্ত আছি। এর পর থেকে হসপিটাল শুরু হবে কেনো বলতো?”
“তাহলে কালকে তুমি আমাকে শপিং নিয়ে যাবে।কালকে আমরা কেনাকাটা করবো আর আমার ফ্রেভারিট দম বিরিয়ানি খাবো।”
“হঠাৎ শপিং এর ভূত মাথায় ঢুকলো কেন তোর?কাল বাবা ব্যাক করছেন দেশে।উনাকে ফোন দিয়ে বল।”
“উফ এতো কথা কেন বলো তুমি!!যাবা কিনা বলো?”
“হা…হা….হা!!এতো অল্পতে রেগে যাস কেন?আচ্ছা যা যাবো।কয়টায় বের হবি?”
“১১টায়।তুমি এতো ভালো কেন?”
“হয়েছে আর তেল দিতে হবে না।যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়”
আসাদের রুম থেকে এসে সাফা ফোন দিলো তুলিকে।
“কিরে তোর ওখানের কি খবর?আমি ভাইয়াকে রাজি করে ফেলেছি।”
“অনেক কষ্টে আপুকে রাজি করালাম।কিন্তু আপু বেশিক্ষন থাকতে পারবে না।তাড়াতাড়ি চলে আসিস।”
“দোস্ত আমার না ভয় করছে।এইটা করা কি ঠিক হবে?”
“ভাইয়ের বন্ধুকে দিল দিয়ে বসে আচ্ছ তুই।তোরটা তো বাঘের কলিজা।আর তুই কিনা ভয় পাচ্ছস।”
“না মানে….”
“আরে বাদ দে তোর মানে তানে।কাল দেখা হচ্ছে তাহলে সকাল ১১টায় যমুনা ফিউচার পার্কে।”
চলবে….
®নওশিন সালসাবিল
[ কি মনে হয় এই দুই বান্ধবী কি প্ল্যান করছে?? ]