#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_১১

হারবার ব্রিজে দাড়িয়ে আছে আসাদ আর এ্যাভা।অস্ট্রেলিয়ার পুরাতন নিদর্শনের মধ্যে এটি একটি।এই ব্রিজে দাড়ালেই অনুভব করা যায় হারবার নদীর স্বচ্ছতা।ঝলমলে আলোতে জ্বলতে থাকা অপেরা হাউসের সৌন্দর্য্যটাও খুব চোখে পড়ে এইখান থেকে।
অনেকবার আসতে চেয়েছিল আসাদ কিন্তু পড়াশুনা আর কাজের চাপের কারনে কখনো সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আজ হলো,এ্যাভার কারনে।কিন্তু আসাদ ভাবছে অন্য কথা।আসাদের চিন্তাভাবনার পরিসমাপ্তি ঘটল এ্যাভার কথায়।

“তাহলে তুমি সত্যিই চলে যাচ্ছ।”

“নিজ দেশে ফিরে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়।”

“না গেলে কি হয়না?”এ্যাভার চোখে মুখে এক অন্যরকম চাহনি। সেই চাহনি উপেক্ষা করে আসাদ বলল,”না এ্যাভা,এটা হয়না।আর তুমি যেটা চাচ্ছো সেটাও কখনে হওয়ার নয়।”

“কিন্তু কেন, এ্যাসাদ?কেন নয়?আমি কি দেখতে এতটায় খারাপ!”

“না এ্যাভা। আমি সেটা বলতে চাইনি।তুমি আর আমি অনেকটা আলাদা একে অপরের থেকে।আমাদের মধ্যে অনেক কিছুর মিল নেই এ্যাভা।না ধর্মের, না মনের।”

“তার মানে তুমি বলতে চাইছ যে তুমি অামাকে পছন্দ করো না।”

“অব্যশই তোমাকে আমি পছন্দ করি তবে তা শুধুমাত্র একজন সহকর্মী এবং মানুষ হিসেবে।তুমি খুব ভাল মনের মানুষ আর খুব ভাল একজন ডাক্তার।এর চেয়ে বেশি কিছু কখনো আমি তোমার জন্য অনুভব করিনি এ্যাভা।”

“তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?”

“তা আমি জানি না।কিন্তু একজনকে ভালোবাসার সুযোগ পাওয়ার খুব ইচ্ছে হয় আমার।আর যার কাছে সেই সুযোগটা চেয়ে নিতাম,এখন না সে আছে আর না সেই সুযোগটা চাওয়ার সময়।দুইটাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি আমি বড় অবেলায়।”

“তাহলে কেন তুমি আমাকে সেই সুযোগটা দিচ্ছনা?”

“আমি দুঃখিত এ্যাভা!আমি সত্যিই দুঃখিত!”

অাসাদের কথা শুনে চোখটা নিচে নামিয়ে নিলো এ্যাভা।কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে এ্যাভা বলল,
“এ্যাসাদ, এয়ারপোর্টে তোমাকে সি অফ করতে কি
আমি আসতে পারি?”

_______________________________

ডিনার টেবিলে বসে আছে জিহান,সেলিনা মীর ও শামীম আফজাল মীর।আসাদ দেশে আসার খুশিতে ছোটখাট একটা পার্টি থ্রো করতে চাইছেন শামীম সাহেব।শহরের বড় বিজনেস টাইকুন এর ছেলে দেশে আসছে তাও আবার ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে আর পার্টি হবে না।এমন তো হওয়ার কথা নয়।তাই সে বিষয়ে আলোচনা চলছে তাদের মধ্যে।তার মাঝেই সেলিনা বেগম দিনুকে উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,”যা তো দিনু গিয়ে তোর ছোট আপাকে ডেকে নিয়ে আয় তো।এখনও কেন নিচে আসছেনা সে?”

সেলিনা বেগমের কথা শুনে দুইতলায় গিয়ে সাফার রুমের সামনে এসে কয়েকবার “ছোট আফা” বলে ডাক দিল দিনু।জবাব না আসাতে পুনরায় ডাক দিলে রুমের ভিতর থেকে রুক্ষকন্ঠে জবাব আসলো,”দিনু আরেকবার যদি ডাকতে এসেছিস তুই,তাহলে ভাইয়ার ব্যাট দিয়ে তোর মাথাটা ফাটিয়ে দেবো আমি।যা এখন এখান থেকে।” সাফা থেকে এক দফা ঝাড়ি খেয়ে নিচে নেমে এলো দিনু সাথে প্রস্তুুতি নিলো আরেকদফা ঝাড়ি খাওয়ার জন্য।

“বড় ম্যাডাম,আফাতো কইছে তিনি আইবো না এহন।”

“কেন? আসবেনা কেন?ডিনার কি করবেনা মেয়েটা?”

“সেটাতো মোরে কই নাই ছোট আফায়ে।”

দিনুর কথা শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল সেলিনা বেগমের।আজকাল মেয়েটার মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছেননা তিনি।

“এই মেয়েকে নিয়ে আমি কি করবো বলতো।তোমার আশকারা পেয়ে মেয়েটা দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছে।”

স্ত্রীর কথা শুনে খাবার খাওয়া থেকে মনোযোগ সরিয়ে সেদিকে তাকালেন শামীম সাহেব আর বললেন,”দশটা না একটা মাত্র মেয়ে আমার।এখন কি তাকে আদরও করতে পারবোনা আমি?”

“আদর করতে তো মানা করিনি।কিন্তু শাসনও তো করতে দেখিনা তোমাকে।”

স্ত্রীর কথাটা শুনেও না শুনার অভিনয় করে জিহানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন শামীম সাহেব।”জিহান,সাব্বির এলো না যে?”

জিহান তখন মেইন কোর্স শেষ করে ডিজার্টে মন দিচ্ছিল।শামীম সাহেবের প্রশ্ন শুনে মুখ তুলে তাকালো সেদিকে।ভালো করেই বুঝতে পারছে সে এখন আংকেল কি করার চেষ্টা করছেন।আন্টির কথার জাল থেকে নিজেকে বাঁচাতে টপিক পালটাছেন তিনি।দ্রুত টপিক পালটাতে করাতে জবাব নেই এনার।তেমন পরিস্থিতি সামলাতেও।

“জ্বি আংকেল,আসলে আজকে খুব ব্যস্ত ও। একটা খুব জরুরি প্রোজেক্ট সাবমিট করতে হচ্ছে আজ তাই।”

“ছেলেটার সাথে একদম দেখায় হয়না। আগে যাও আসতো কিন্তু গত দুইবছর ধরে একদম দেখাই পাওয়া যাচ্ছেনা ওর।কি ব্যাপার বলো তো?”

“আসলে আংকেল বোঝেনই তো নতুন চাকরি তাই একটু সময় দিচ্ছে।”

“হুম তা তো বুঝলাম।কত করে বললাম ছেলেটাকে আমার অফিসে জয়েন করতে।কিন্তু শুনলনা।”

তার মাঝেই সেলিনা বেগম বলে উঠলেন,”ছেলেটা আত্নমর্যাদা সম্পন্ন।নিজ পায়ে দাড়াতে চাইছে নিজের যোগ্যতাতে। তাইতো এই সিদ্ধান্তটা নিলো।”

“ওর বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে।আমি তো একপ্রকার বলেই দিলাম মঞ্জুরকে যে আর অফিসে আসার দরকার নেই।রিটাইমেন্ট নিয়ে নাও।কিন্তু না। সে বলল,স্যার শরীরে যতদিন শক্তি আছে ততদিন পরিশ্রম করে খেটে রোজগার করবো।বাপ বেটা দুইটায় একরকম।কেউ কথা শুনেনা আমার।”

বারান্দায় পায়চারি করছে সাফা।আজকে সারাটাদিন মানুষটাকে এত ফোন দিলো কিন্তু একবারও রিসিভ করলো না।তিনি কি বুঝেননা যে উনার এমন ব্যবহারে তার কষ্ট হয়।

“এই যে টিউবলাইট।”

কারো কন্ঠস্বর শুনে পিছনে ফিরে তাকালো সাফা।দেখতে পেল জিহানকে।জিহান তারর কাছে এগিয়ে এসে বলল,”কিরে নিচে যাসনি কেন ডিনার করতে?”

“ভালো লাগছেনা ভাইয়া।”

“তা কেন ভালো লাগছেনা আমার ছোট বোনটার?”

“সেটা তোমার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলেই ভাল হবে।”

“হুম…..শুনলাম খুব নাকী জ্বালিয়ে মারছিস আমার বন্ধুটাকে তুই।”

“তোমার বন্ধুও তো কম যায় না।সে যে আমাকে এত কষ্ট দেই সেইটা?”

“তুই কেন মানতে চাইছিস না যে তুই যা চাচ্ছিস তা কখনো সম্ভব না।”

“কিন্তু কেন?”

“এদিকে এসে বসতো।”জিহানের ডাকে তার পাশের সোফায় বসে পড়ল সাফা।

“দেখ,তুই এখনো অনেক ছোট।আর তুই তো জানিস সাব্বির আর তার পরিবারকে শামীম আংকেল কতটা সাহায্যের করেছে।সেলিনা আন্টির কারনেই তো সুমা আপুর ডির্ভোসটা অনেক সহজে হয়ে গেছিল।যার কারনে সাব্বির অনেকটা কৃতজ্ঞ তোর মা বাবা দুইজনের উপর।আর উনারাও খুব বিশ্বাস করে সাব্বিরকে।তাই তো সে…”

“তো এখানে সমস্যা কোথায়?আমার সাথে সম্পর্কে জড়ালে কি বাবার সম্মান কমে যাবে নাকি বাবার তার উপর বিশ্বাস ভেঙ্গে যাবে?তুমি বলো ভাইয়া,কাউকে ভালোবেসে সেই মানুষটাকে আপন করে নিতে চাওয়া কি ভুল?”

জিহান উওরে কিছু বলল না।কিন্তু চাপা এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার।

চলবে…..

®নওশিন সালসাবিল

[ “যে নিজের মর্যাদা নিজে বুঝেনা অন্যেও তাকে মর্যাদা দেয় না “
-হজরত আলী ( রাঃ)♥]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here