#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_১০
সেই কখন থেকে ফোনটা বেজেই যাচ্ছে সাব্বিরের।ফোনটা রিসিভ করার নুন্যতম ইচ্ছাটুকু নেই তার।সে জানে এই মুহূর্তে কে তাকে ফোন দিতে পারে।কিন্তু সে ফোনের অাপর প্রান্তে থাকা মানুষটাকে বুঝাতে চাচ্ছে সে এখন খুব ব্যস্ত আর তার প্রতি কোনে ইন্টারেস্ট নেই তার। ফোনটাকে সাইলেন্টে রেখে পুনরায় অফিসের কাজে মন দিলো সে।আজকের ভিতরেই প্রোজেক্ট ডিজাইন সাবমিট করতে হবে তার।ততখনে ফোন চলে আসলো অফিসের ল্যান্ডলাইনে। বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে গেছে সে।
“অসহ্য কতবার বলেছি মেয়েটাকে আমাকে আর ফোন না দিতে।এখন ফোনে পাচ্ছেনা বলে অফিস নাম্বারে ফোন দিল।না এভাবে হবে না।আজ এর একটা বিহিত করেই ছাড়বে সে।”নিজে নিজে কথাগুলো বলে রেগে গিয়ে টেলিফোনের রিসিভার তুলে নিয়ে কানে দিল সাব্বির।
“এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার, হ্যা।যখন দেখছ আমি তোমর ফোন রিসিভ করছিনা তার মানে আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোমার সাথে কথা বলার।”
“ওই ব্যাটা কি বলতেছ এইসব তুই?আর কোন মেয়ে তোরে ডিস্টার্ব করতেছে হ্যা,ওই সাব্বির…হ্যালো কি শুনতেছ?”
জিহানের কন্ঠ শুনে হুশ ফিরলো সাব্বিরের।
“না….মানে..কেউ না।”
“কেউ না মানে এখনি তো বললি….ওয়েট..ও….ও এখন বুঝলাম কে…হা হা হা….!”
“চুপ করবি।সব দিকে শুধু আজাইরা প্যাঁচাল। কি কথা আছে বলে শেষ কর আর হাসতে হলে ফোন কাটে দিয়ে তারপর হাস।তোর এইরকম বিচ্ছিরি হাসি শুনার একদম মুড নেই আমার।”
আচ্ছা..আচ্ছা যা আর হাসবোনা।তাহলে শুন কেন ফোন দিলাম।সেলিনা আন্টি ফোন দিছিলো আমারে।তোরেও নাকি অনেকবার দিছে বাট পাচ্ছেনা তোকে।আমিও তো কতবার দিলাম।কিন্তু তুই তো..।আচ্ছা যাই হোক, আজ রাতের ডিনার সেলিনা আন্টির সেখানে মনে রাখিস।”
“তুই যা আমি যাবো না।”
“বলেই হলো নাকি।সাপ্তাহ খানেক বাদে আসাদ আসবে।এইসব নিয়ে কথা বলতে আন্টি ডেকেছে।যেতে তো হবেই তোকে।”
“বললাম না যাবো না।আর তুই গেলেই তো হলো।পরে আমাকে ফোনে জানিয়ে দিস সব।”
তুই কি সাফার কারণে যেতে চাচ্ছিস না?”
সাফার নামটা শুনে মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেল সাব্বিরের।জীবনটা তেজপাতা করে দিচ্ছে মেয়েটা।
“জানিস যখন জিজেস করছিস কেন?রাখ ফোন।”
“সাব্বির ছোট একটা মেয়ে এমন করছিস কেনো বলতো?”
“ছোট মেয়ে!২২ বছরের মেয়েকে তোর ছোট মনে হয়।ছোটবেলা থেকে দেখছিস বলে এখনো তোর ছোট মনে হয় ওকে।জ্বালিয়ে মারছে আমাকে তোর সেই ছোট মেয়ে।”
সাব্বিরের কথা শুনো জোরে হাসা শুরু করল জিহান।
সেই হাসি শুনে আরেকদফা মেজাজ খারাপ হলো সাব্বিরের।
“ওই ব্যাটা, একদম হাসবিনা।”
“আচ্ছা বাবা যা আর হাসলাম না।তোকে যখন এত জ্বালাচ্ছে তাহলে সে যেমন চায় তেমন কর।”
“সে পাগলামো করছো বলে কি আমাকেও পাগল হতে হবে নাকি?আর তুই ওকে সাপোর্ট করছিস।আমার বন্ধু হয়ে তুই ওকে সাপোর্ট…।”
“থাম তো তুই।উফফ,কাউকে সাপোর্ট করছিনা আমি।অাচ্ছা বাদ দে সাফার কথা।এখন তুই কি আসবি? ”
“না,আমি আসবো না।আমার তরফ থেকে আন্টিকে সরি বলে দিস।আর আসাদকে কখন এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যেতে হবে আমাকে জানিয়ে দিস।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।রাখছি আমি।আল্লাহ হাফেজ।”
ফোনটা রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো সাব্বির।মাথাটা তার ভীষন ধরেছে।কড়া লিকার দিয়ে এক কাপ চা প্রয়োজন এখন তার।
______________________________
তিন ঘন্টার সার্জারি সাকসেসফুল ভাবে সম্পন্ন করে ওটি থেকে বের হয়ে আসলো আসাদ। নিজের কেবিনে
বসে চোখদুটুকে সামান্য আরাম দেওয়ার চেষ্টা করছিল সে।দরজায় নক হওয়াতে চোখ খুলে তাকালো সেদিকে।
“আমি কি ভিতরে আসতে পারি,ডক্টর এ্যাসাদ।”
দরজায় দাড়িয়ে আছে এক রুপসী ব্রিটিশ নারী।
“অব্যশই ডক্টর এ্যাভা।”
মিষ্টি হেসে কেবিনে ডুকে পড়লো ডক্টর এ্যাভা।আসাদের কলিগ এবং একজন নিউরোসার্জেন সে। হালকা বাদামী চোখের এই রমনী মূলত আমেরিকান হলেও ছোটকাল থেকে তার বসবাস এই সিডনি শহরে।
” কনগ্র্যারেচুলেশন ফর আনাদার সাকসেসফুল সার্জারি। ” কথাটা বলেই বসে পড়লো সে আসাদের সামনের চেয়ারে।
“ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।”
“তো কখন ফ্লাইট তোমার?”
“এইতো আর তিনদিন পর।”
“এক্সসাইটেড দেশে যাওয়ার জন্য।”
“হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়।”হালকা হেসে জবাব দিলো আসাদ।
“হুম…”শব্দটা করেই চোখ নামিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ডক্টর এ্যাভা।
“এ্যাভা,কিছু কি বলতে চাও তুমি?”
“হ্যা…..আসলে…”
“এত সংকোচবোধ করছো কেন।বলে ফেল। ”
“তোমার ব্যস্ত সময় থেকে একটা সন্ধ্যা কি আমায় দিতে পারবে তুমি?”
কথাটা শুনে কিছুটা চিন্তিত ফিল করলো আসাদ।এমনটা নয় যে সে জানেনা এ্যাভা তার জন্য কি ফিল করে।কিন্তু সেই অনুরুপ কিছুই ফিল করেনা আসাদ এ্যাভার জন্য।
“এ্যাভা আসলে আমি….”
“এ্যাসাদ একটা বিকেলই তো চাচ্ছি তোমার কাছে।আই প্রমিজ বেশি সময় নিবো না তোমার।”
এ্যাভার কথাটা শুনে কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছেনা আসাদ।সে চাইনা এমন কিছু করতে যাতে এ্যাভার মনে না হওয়া কোন অনুভূতি নিয়ে ক্ষীণ আশাও যেন জন্মায়।কিন্তু মেয়েটাকে কষ্ট দিতেও মন সায় দিচ্ছেনা।শত হলেও ভালো ও বন্ধুত্বসুলভ সহকর্মীর সম্পর্ক রয়েছে তাদের মধ্যে।
চলবে…..