#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_০৯
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর।এই শহরে যেমন আছে আধুনিকতার ছোয়া তেমন রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরুপ দর্শন।দেশটির বড় শহরগুলোর মধ্যে একটি হল সিডনি।সবচেয়ে প্রাচীন,বৃহত্তম এবং ব্যস্ত শহর হিসেবে খ্যাত রয়েছে এই শহরের।পাহাড় কেটে তৈরী এই শহরকে ঘিরে রয়েছে মনোরল সৌন্দর্য্য।এই ডিসেম্বর মাসটাতে প্রচুর গরম থাকে এখানে।আর এই সময়টাতে শহরটা মুখরিত থাকে পর্যটকে।অথচ বাংলাদেশের আবহাওয়ার চিত্রটা এখন ঠিক উল্টো।হয়তো এখন বাংলাদেশে হিম শীত অনুভব হচ্ছে।
বিকেলের সময়টাতে খুব ভীড় থাকে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে।আলফ্রেড স্ট্রিটের সিডনি ক্যাফে নামক কাঁচে ঘেরা এক রেস্টুরেন্টের সাইডরোড টেবিলে বসে আছে আসাদ।আজ বিকেলটা তার অবসরে কাটছে।তাই তো বের হয়েছিল একটু শহরটা ঘুরে দেখতে।গত ৫ বছর সে এই শহরটাতে আছে।কিন্তু তেমন একটা ঘুরে দেখা হয়নি তার।আর মাত্র কয়েকটা দিন এই শহরে তারপর সে ফিরে যাবে তার চিরচেনা বাংলাদেশে।সিডনির কিছু স্মৃতি কোনোদিনই মন থেকে মুছতে পারবেনা আসাদ।এই শহরটা তাকে অনেক আপন করে নিয়েছিল। তবুও দেশের প্রতি এক আলাদা টান প্রতিবারেই অনুবভ করে সে।পিএইচডি সে তো অনেক আগে শেষ তার।এখন সে সিডনির রয়েল প্রিন্স আলফ্রেড হাসপাতালে হার্টস্পেশালিষ্ট হিসেবে কর্তব্যরত রয়েছে।কিন্তু সে এখানে থাকতে চাই না।ফিরে যেতে চাই নিজ দেশে।যে দেশ তাকে এত কিছু দিয়েছে তার কৃতজ্ঞতা স্বরুপ কিছু ফেরত দিতে চাই সে।
রেস্টুরেন্টে বসে কফিতে চুমুক দিতে দিতে সোনালী বিকেল উপভোগ করছে সে আর হিসেব মিলাচ্ছে পাঁচটা বছরের পূর্নতা আর অপূর্নতার। এই হিসাবটাতে পূর্নতাই বেশি ঠায় পেয়েছে।তবুও কোথাও যেন এক অপূর্নতা কাজ করছে তার। হয়তো কাউকে ভালোবাসার সুযোগটা না পাওয়ার।খুব মনে পড়ে ১৯ বছরের শ্যাম বর্ণের মেয়েটাকে।হয়তো এখন সে ব্যস্ত তার স্বামী ও সংসার নিয়ে। কিছু মানুষকে কখনো ভুলা যায় না।তাই সে চেয়েও ভুলতে পারেনি সে মায়াবী চোখের রমনীকে।এখন সে মাঝে মাঝে ভাবে সাহস করে যদি সেদিন রাবেয়ার হাতটা ধরে তাকে বলতো,”এই বিয়ে করবেননা আপনি।অপেক্ষা করবেন আমার জন্য।”তাহলে কি উওর দিতো রাবেয়া।
এইটা করা কি তখন অনাধিকার চর্চা হয়ে যেতো না?যেখানে অনুভূতিরা কোনো নাম পায়নি,মুখে স্বীকারউক্তি পাইনি সেখানে কাউকে অপেক্ষা করা বলাটা বেমানান নয় কি?
কফির বিলটা পে করে ওঠে দাড়ালো আসাদ।কিছুদূর হেটে আসার পর বেজে উঠলো তার ফোনটা।পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলো হসপিটাল থেকে এসেছে।মাস্ট কোনো ইমার্জেন্সি হয়েছে।যেতে হবে তাকে।
সকাল থেকে পুরো ঘরকে মাথায় তুলে রেখেছেন সেলিনা মীর।ছেলে তার ৫ বছর পর দেশে আসবে।তাই খুশির ঠিকানা নেই তার।তিনি নিজে দাড়িয়ে থেকে কাজের মানুষদের দিয়ে পরিষ্কার করে নিচ্ছেন ছেলের রুম।সাজাচ্ছেন নিজের ইচ্ছে মতো করে।সেখানের কাজ শেষ করে তিনি চলে এসেছেন সামনের বসার রুমে।
“হ্যা, পর্দাটা নামিয়ে ফেল।আমার আব্বাটা এই রং একদম পছন্দ করে না।নামিয়ে ফেল।আর এই ফুলের ভার্সগুলো তে সব সময় তাজা ফুল রাখবি,বুঝলি।”
মাথা চুলকিয়ে সেলিনা মীরের কথার সাথে হ্যা তে হ্যা মিলাছে দিনু।
“বড় ম্যাডাম,আপনে এত চিন্তা কইরেন না তো।মুই সব কাম সবাড় কইরা দিমু।”
“কি বললি তুই?সাবাড় করবি মানে?”
“ইয়ে… মানে..সাবাড় করুম মানে শেষ কইরা ফেলামু। আপনে টেনশেন নিয়েন না।”
“আমার ছেলে এত বছর পর তার নিজের বাসায় আসবে আর তুই আমাকে টেনশেন করতে মানা করছিস।এক নাম্বারের গর্দভ তুই !”
সোফায় বসে খবরের কাগজে মন দিচ্ছিলেন শামীম আফজাল মীর।কিন্তু তার স্ত্রী ও দিনুর কার্যকলাপের কারনে তা আর হলো না। খবরের কাগজ নামিয়ে তিনি তার স্ত্রীর দিকে তাকালেন।কোমরে শাড়ি বেঁধে কাজ করছেন।কে বিশ্বাস করবে এই মহিলা একজন বিখ্যাত এডভোকেট।ছেলে আসার খুশিতে একদম কোমর বেঁধে নেমেছেন তিনি।
অফিসের জন্য বের হওয়ার সময় স্ত্রীকে ডাক দিলেন শামীম সাহেব।স্বামীর ডাক শুনে দিনুকে সব বুঝিয়ে দিয়ে সেদিকে চলে গলেন সেলিনা বেগম।
“আজতো আপনার সময়ই হচ্ছেনা আমার জন্য,বেগমসাহেবা।”
“কাজের সময় এতো কথা বলোনাতো।দেখছনা এখনও কত কাজ বাকী।”
“যাক তোমার ছেলের আসার খবরের কারনে তোমার এমন পুরাতন রুপ আবার দেখতে পেলাম।”
“আমার পুরাতন রুপ মানে?”
“মানে এখন দেখতে তোমাকে একদম ৩০ বছর আগের মতো দেখাচ্ছে।”
“৩০ বছর আগের মতো বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছো তুমি?”
“ঐ যে ৩০ বছর আগের যেমন শাড়ি কোমরে বেঁধে আমার ছোট সংসারেটা সামলাতে ঠিক তেমনই দেখাচ্ছে তোমাকে এখন।এডভোকেটের কোটের আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিল তোমার এই রুপ।”
স্বামীর এমন কথা শুনে একগাল হাসি উপহার দিলেন তিনি।তারপর শামীম সাহেবকে বিদায় দিয়ে পুনরায় কাজে নেমে পড়লেন তিনি।
চলবে…….
®নওশিন সালসাবিল
[হাদিসের বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শরিফকে খুব ভালোবাসতেন। কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদিনার সীমান্তে উহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজীর চেহারাতে আনন্দের আভা ফুটে উঠত এবং তিনি বলতেন, এই উহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি। (বুখারি, মুসলিম)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে স্বদেশকে ভালোবেসে আমাদের জন্য দেশপ্রেমের অনুকরণীয় আদর্শ রেখে গেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্বদেশ মক্কাকে ভালোবাসতেন, মক্কার জনগণকে ভালোবাসতেন। তাদের আল্লাহর পথে আনার জন্য তিনি অপরিসীম অত্যাচার সহ্য করেছেন। তারপরও কখনো স্বদেশবাসীর অকল্যাণ কামনা করেননি। তায়েফে নির্যাতিত হওয়ার পরও কোনো বদদোয়া করেননি।
তাফসিরে কুরতুবিতে বর্ণনা করা হয়েছে, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্মভূমি মক্কা নগরী ত্যাগ করে মদিনায় হিজরত করছিলেন, তখন তার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল। দেশের জন্য, জন্মভূমির জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মায়া ও ভালোবাসা ছিল অকৃত্রিম। পরবর্তীতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় হাবিবের মাধ্যমে মক্কাকে মুশরিকদের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে, স্বাধীনতা দিয়ে ধন্য করেছেন।
হিজরতের পর মদিনায় হজরত আবুবকর (রা.) ও হজরত বেলাল (রা.) জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তাদের মনে-প্রাণে প্রিয় স্বদেশ মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠেছিল। তারা জন্মভূমি মক্কার কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। এ অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের মনের এ দুরবস্থা দেখে প্রাণভরে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি তার চেয়েও বেশি মদিনার ভালোবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন।’ (বুখারি শরিফ)♥ ]