#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_০৬

ঝুম বৃষ্টি নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে আকাশ।বাইরে ধীরগতিতে বাতাস বইছে। হাসপাতালের ক্যানটিনের এক কোনায় বসেছে আসাদ আর রাবেয়া। ক্যানটিনের চারপাশ কাচ দিয়ে ঘেরা। যার কারনে বাইরের আবহাওয়া সহজে চোখে পড়ছে দুইজনের।সামনে তাদের ধোয়া ওঠা দুই কাপ কফি।

রাবেয়া চেয়ে আছে বাইরের দিকে।নেকাবটা এখনো খুলেনি সে।আর আসাদ চেয়ে রয়েছে সামনে বসে থাকা মায়াবী চোখের রমনীর দিকে।

“বাইরের আবহাওয়াটা খুব সুন্দর লাগছে তাই না।” আসাদের কথায় বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে আনল রাবেয়া।

“ঝড়ের পূর্বাভাস এইটা।হয়তো বড় একটা ঝড় হবে তাই আবহাওয়া এই রুপটা নিচ্ছে।”

“হয়তো” মৃদু হেসে জবাব দিলো আসাদ।

খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল রাবেয়া।নেকাব খুলবে কি খুলবে না তা নিয়ে।কিন্তু কফিতো খেতেই হবে।যদি সে কফি না খেয়ে বসে থাকে তাহলে হয়তো দুইজনই অস্বস্তির সমুখীন হবে। তাই সে নেকাবটি খুলে তার পাশে রাখল।
আসাদ এই প্রথম সামনাসামনি দেখতে পেল রাবেয়াকে।আজকে সকালে যখন দেখেছিল তখন এতটা খেয়াল করতে পারেনি।ধ্যান ভাঙ্গতেই চোখ সরিয়ে নিল সে।পাছে যদি রাবেয়া তাকে খারাপ ভাবে।তবুও আবার চেয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তার।মন আর মস্তিকের যুদ্ধে মনকে জয়ী ঘোষনা করে পুনরায় চেয়ে রইল রাবেয়ার মায়াবী চেহারার পানে।মেয়েটার শুধু চোখ না চেহারাতে এক অন্যরকম মায়া আছে।নাকে তার বিন্দু বিন্দু ঘামের কনা জমে আছে। থুতনির উপর একটু বামপাশে কালো একটা তিল আছে। যা এই
মেয়ের রুপ লাবণ্যকে বহুগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আর বেশিক্ষণ তাকালো না সে। সামান্য কেশে বলে উঠল,” কফিটা নিন।ঠাণ্ডা হয়ে গেলে খেতে ভাল লাগবে না।আমাদের হাসপাতাল ক্যানটিনটা ফেমাস কিন্তু এই কফির জন্য।”

“তাই নাকি?” মৃদু হসে বলল রাবেয়া।
আসাদ খেয়াল করল রাবেয়া হাসলে তার গালের দুইপাশে টোল পড়ে।কিন্তু ওইটা তার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে না।তার সৌন্দর্য্য আরো প্রকাশিত হচ্ছে থুতনির কালো তিলটার জন্য।কালো মেয়েদের রুপ লাবন্য নিয়ে কবিদের এত কবিতা, এত উপন্যাস তা সবই আজ সচ্ছ সত্য মনে হচ্ছে আসাদের।

“কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি আপনাকে?”

“হ্যা করুন না।”

“চাচার কাছ থেকে শুনলাম আপনি নাকি ওনাকে প্রায় দশহাজার টাকা দিয়েছেন।কিন্তু কেন?এইভাবে…”

“মিস রাবেয়া,চাচাকে আরো একটা মাস সম্পূর্ন রেস্টে থাকতে হবে।যার কারনে তিনি রিকশা চালাতে পারবেন না। এই একটা মাস তিনি কেমন করে বিনা অর্থে কাটাবেন, সেটা ভেবেই এই টাকাটা দেওয়া।টাকাটা কিন্তু আমি দয়া করে দেইনি ওনাকে।মানুষ হিসেবে সাহায্য করেছি।মিস রাবেয়া, আমি বিশ্বাস করি আমাদের যদি প্রয়োজনের তুলনায় কিছু বেশি থেকে থাকে তাহলে সেই বেশি কিছুটা যাদের আসলেই প্রয়োজন তাদের দিয়ে দেওয়া উচিত।তাছাড়া তাদের হক আছে আমাদের উপর।”মৃদু হেসে কথাগুলো বলল আসাদ।

আসাদের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলো রাবেয়া।মানুষটা আসলেই অন্যরকম ব্যাক্তিত্বের অধিকারী।বর্তমান যুগে এমন চিন্তাচেতনা কয়জনই বা রাখে।

“আপনি কিছু মনে না করলে আমিও একটা প্রশ্ন করি আপনাকে?”

“জ্বি বলুন না।”

“আপনার সম্পর্কে জানতে…..
আসাদের কথার মাঝখানে রাবেয়ার ফোন বেজে উঠল।তড়িঘড়ি করে ফোনটা রিসিভ করল রাবেয়া।বাইরে বৃষ্টি পড়া শুরু করেছে।ফোনটা কেটে দিয়ে উঠে দাড়াল রাবেয়া।

“একি দাড়িয়ে গেলেন যে।”

“বাড়ি থেকে ফোন এসেছে আর তাছাড়া বৃষ্টি পড়ছে।এখনই বের হতে হবে। নাহলে খুব বেশি দেরি হয়ে যাবে।”

সাথে সাথে আসাদও দাড়িয়ে পড়ল আর বলল,” চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”

রাবেয়াও আর না করল না। একটু সামনেই হাসপাতালের মেইন গেট। রাবেয়া দাড়িয়ে পড়ল সেখানে আর বলল,”ডাক্তারসাহেব বাকি রাস্তাটুকু আমি একা যেতে পারব।এত ভাল কফি খাওয়ানোর জন্য ধন্য…”

“প্লিজ এখন আবার ধন্যবাদ দিবেন না।”

কথাটা শুনে হেসে দিল রাবেয়া।
“আচ্ছা তাহলে আসি।আল্লাহ হাফেজ”

রাবেয়া যেতে নিলেই পিছন হতে ডাক দেয় আসাদ আর বলে,”আবার দেখা হবে তো আমাদের?”
এই প্রশ্নটা শুনে কিছুটা বিস্মিত হলো রাবেয়া।

“দেখা….হয়তো হবে। হয়তো হবে না।অথবা হয়তো একদিন হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে।”

“ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় কিন্তু মিস রাবেয়া।”

“ইচ্ছা তারা রাখে যাদের ইচ্ছাটা পোষনের ক্ষমতা আছে।আমার সেই ক্ষমতা ও সামর্থ্য দুইটায় নেই, ডাক্তারসাহেব।”

“এমন করে বলছেন কেন?”

“কিভাবে বলবো বলুন তো।আপনজন বলুন আর ভাগ্যে কারো কাছে আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই। তা না হলে কি….”

কথাটা সম্পূর্ন করলো না রাবেয়া।চোখ দুটি নিচে নামিয়ে ফেলল সে।চোখের কোণে মেঘ জমতে শুরু করছে তার।এই মেঘজমাট অশ্রু কাউকে দেখাতে চাই না সে।

“তা না হলে….বলুন মিস রাবেয়া।”
আসাদের কথায় চোখ তুলে তাকাল রাবেয়া।ঝুমঝুম বৃষ্টি ভাসিয়ে নিচ্ছে সব।শুরু হয়ে গেছে মেঘগর্জন। সাথে আছে ঝরো হাওয়া।আজ বৃষ্টি শুধু আকাশ থেকে নয়, ঝরছে রাবেয়ার দুচোখ হতে। যা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা আসাদ।

আসাদ আবার বলে উঠল,”তা না হলে..”

“কয়েকদিন পর আমার বিয়ে, ডাক্তারসাহেব।”

চলবে….

®নওশিন সালসাবিল

[“দুনিয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করা অন্তর হলো অন্ধকারাচ্ছন্ন,
আখিরাত নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করা অন্তর হলো আলোকিত”

— উসমান ইবনে আফফান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)♥]

জাজাকাল্লাহি খাইরান সবাইকে গল্প লিখতে এত
♥ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য।♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here