#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_০৩

রাবেয়ার বিস্মিত কন্ঠস্বর শুনে আসাদ কি জবাব দিবে বুঝতে পারছিলনা।
“জ্বি আমি। আসলে তখন আমি আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম যে চাচাকে আমি হাসপাতালে নিয়ে আসবো। কিন্তু আপনি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে এলেন।”

চোখের সামনে সকালের ব্ল্যাকশার্ট পরিহিতা পুরুষকে ডাক্তারের পোষাকে দেখে অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে এখন রাবেয়া।
“আসলে তখন এতটা প্যানিক ছিলাম যে বুঝতে পারছিলাম না কি করবো, তাই।” সামান্য লজ্জা নিয়ে কথাটা বলল রাবেয়া।

“ইটস ওকে।হয়ে থাকে এইরকম। কোন ব্যাপার না।”

“আপনি কি ডাক্তার?”

“দেখে কি মনে হয়?।”মৃদু হেসে জবাব দিল আসাদ।

“ডাক্তার!”

“আসলে আমি এখন ইন্টার্নিং করছি।”

“ওও.. আচ্ছা।”

“আমি চাচাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছি আর ওনার পায়ে ব্যান্ডেজও করিয়ে দিচ্ছি। কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে ওনার।”

“ও আচ্ছা। কত টাকা খরচ হবে বলতে পারবেন?” কিছুটা দ্বিধা নিয়ে প্রশ্নটা করল রাবেয়া। কারন তার কাছে আপাতত দুই হাজার টাকা আছে যা তার টিউশনির ইনকাম। যেটা দিয়ে তাকে কোচিং এর বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে।

রাবেয়ার অস্বস্তিটা বুঝতে পারলো আসাদ।
“সেইটা নিয়ে আপনি টেনশেন করবেন না। ওইদিকটা আমি সামলে নিবো। তবে আপনাকে এখন একটা কাজ করতে হবে।”

“কাজ করতে হবে! কি কাজ?”

“এই যে এইটার ব্যবস্থা করতে হবে।” কথাটা বলে রাবেয়ার পায়ের দিকে ইশারা করল আসাদ।

আসাদের ইশারাকে অনুসরণ করে নিজের পায়ের দিকে চোখ নিয়ে গেল রাবেয়া। পায়ের গোড়ালি কিছুটা ছিঁড়ে গেছে তার এবং তা হতে রক্ত পড়ছিল যা এখন অনেকটা শুকিয়ে গেছে।

“ও এইটা…! সমস্যা নেই আমি বাসায় গিয়ে ঔষধ লাগিয়ে নিবো।”

“হাসপাতাল থাকতে বাসায় গিয়ে ঔষধ লাগাবেন,এইটা কেমন কথা? একটু অপেক্ষা করুন,আমি আসছি।” কথাটা বলে চলে গেল আসাদ।

এর মধ্যে চাচাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলো। আর রাবেয়া সে জায়গায় চেয়ারে বসে রইল। কিছুক্ষন পর আসাদ আসলো সাথে একজন নার্সকে নিয়ে।
“মিনু আপা ওনার পায়ের ক্ষত জায়গাটা ড্রেসিং করে দিন আর ব্যান্ডেজ করে দিন,ঠিকাছে।
আর মিস…..”

“রাবেয়া” ছোট করে জবাব দিল রাবেয়া।

“তো মিস রাবেয়া একটু ধৈর্য্য সহকারে বসে ড্রেসিংটা করে নিন। আমি আসছি।” কথাটা বলে চলে গেল আসাদ।

আসাদের চলে যাওয়ার পানে চয়ে রইল রাবেয়া।একরাশ ভালো লাগা কাজ করলো তার মনে। মায়ের পর এই প্রথম কেউ তার আঘাত খেয়াল করল।নিকাবের ভিতরে মুচকি হেসে কথাগুলো ভাবছিলো সে। পরে মনে পড়ল আরে সে তো ডাক্তার। তার কাজই তো আঘাত খেয়াল করা। মনে মনে নিজেকে পাগল বলে বকতে লাগল সে।

“কিছু বলছেন আপনি?” নার্স বলে উঠল।

“জ্বি!..না..মানে কিছু না….।”

মিনিট পাঁচেক হলো ওয়ার্ড রাউন্ড থেকে ঘুরে ইর্ন্টান ডাক্তাদের ওয়েটিং রুমের জানালার পাশে নিজের চেয়ারে বসেছিল আসাদ। পুরো নাম আসাদ মীর।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের একজন ইর্ন্টান। চেয়ারে বসা মাত্রই চোখজোড়া বন্ধ করে ভাবনার সাগরে ডুব দিল আসাদ। ঐ নিকাবে আবৃত মানবীর ঘন পাপড়িযুক্ত চোখ দুটি কেমন জানি। সেই চোখের চাহনির ভাষা কেমন যেন ধারাহীন,নিস্তেজ। যেন কোন নিশ্চুপ প্রবাহমান স্রোতধারা। খুব টানছিল সেই মায়াবী চোখের চাহনি আসাদকে। তাই তো সে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেনি ঐ নিস্তেজ চোখ দুটির দিকে ।

“কিরে এখানে এসে বসলি যে” কথাটা বলেই আসাদের কাঁধে হাত রাখল জিহান। সে ও আসাদের মতোই এই হাসপাতালের একজন ইর্ন্টান ডাক্তার।
জিহানের কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো আসাদের।

“এইমাত্র এসে বসলাম। তুই কখন এলি?”

“যখন তুই কারো ভাবনায় ডুবে ছিলি তখন। তা কার কথা ভাবা হচ্ছিল মীরজাফর সাহেব” কথাটা বলেই হাসা শুরু করলো জিহান।

“আমি কোনদিন তোর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলাম যে তুই সবসময় আমাকে এই ফালতু নামে ডাকিস।”

“ওমা মনে নেই তোর? এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি?”

“আমি আবার কখন কি করলাম?”প্রশ্নটা করেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে ফেলল আসাদ।

“কেন মনে নেই তোর কলেজে সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় তুই আমার সাথে কি করেছিলি?বিশ্বাসঘাতক কোথাকার?”

“ফিজিক্স পরীক্ষার দিন বায়োলজি পড়ে আসতে কি তোকে আমি বলেছিলাম?”

“না তা বলছ নাই। কিন্তু পরীক্ষার হলে বলেছিলি,দোস্ত টেনশন নট আম হেয়ার দ্যান হোয়ায় ফিয়ার।শালা তোর উপর ভরসা রেখে পরীক্ষা দিতে বসেছিলাম।আর তুই কি করলি?”

“হ্যা বলেছিলাম। সাহায্যও করতাম। পরে ভেবে দেখলাম না তোকে প্রতিবার এইভাবে সাহায্য করলে তুই অতি শীঘ্রই গোল্লায় যাবি। তোকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার।”

“ফকির বাবা ধন্য করলেন আমাকে আপনি।শালা, উচিত শিক্ষাটা পরে দিলে চলতো না তোর?”

“না চলতো না। দেখ উচিত শিক্ষাটা দিয়েছিলাম বলে আজ তুই কোথায়। ভেবে দেখ। এই হিসেবে তোর প্রতিদিন আমাকে ধন্যবাদ দেয়ার কথা। আর তুই কিনা আমাকে….ছি: জিহান ছি:!!!”

“ওরে সাধু বাবা আমার! এই বিশ্বাসঘাতকতার বদলা একদিন আমি নিবো। দেখিস তুই।”

“দেখা যাবে।” কথাটা বলেই গম্ভীরভাব কাটিয়ে দুই বন্ধু হাসা শুরু করল। হাসি থামিয়ে জিহান বলল, “এখন বল চোখ বন্ধ করে তখন কার কথা ভাবছিলি?”

জিহানের কথায় মুচকি হেসে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল আসাদ।

“ওহ তাহলে এই কথা।” মুখে হাসি নিয়ে বলল জিহান।

“বিশ্বাস কর প্রথম যখন সেই মেয়েটাকে দেখলাম,তার চোখ দুটি দেখে থমকে গিয়েছিলাম কয়েক সেকেন্ডের জন্য। তার চোখে এক অন্যরকম মায়া ছিল রে।
বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারিনি চোখ দুটির দিকে।নিশ্চিত আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলে প্রেমে পড়ে যেতাম আমি।”

“ওরে বাবা। আমার সমানে কে এইটা। শালা তুই ডাক্তার নাকী প্রেমিককবি হ্যা! এত ডিটেইল তো কোন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও খেয়াল করে না রে।”

“তার জন্য আমি চক্ষু বিশেষজ্ঞ হতেও রাজী।”

“ব্যাটা ভুলে যাস না তুই ভবিষ্যৎ এ হার্ট স্পেশালিষ্ট হবি আই স্পেশালিষ্ট না।”

“আমি বলি কি আর তুই বুঝছ কি।মাথামোটা কোথাকার।”

“ওরে শালা। তা মায়াবী চোখের নারীটি দেখতে কেমন?”

“জানি না।আমি শুধু তার চোখ দেখেছি।”

“কি বুঝলাম না ব্যাপারটা।”

“আরে মেয়েটা নেকাব পড়া ছিল তাই।”

“কি?? শুধুমাত্র চোখ দেখে ফিদা হয়ে গেলি তুই?”

“তোকে কি আর আমি এমনি এমনি মাথামোটা বলি।ভাব যার চোখ এত সুন্দর সে নিজে কতটা না সুন্দর হবে। আর তাছাড়া আমি মেয়েটার চোখ দেখে না ওর পার্সোনালটি দেখে ফিদা হয়ছি। মেয়েটা অনেক হেলপফুল। তা না হলে সামান্য একজন রিকশাচালককে এতটা সাহায্য করতো না। যখন ঐ আসভ্য লোকটা বৃদ্ধ বয়সী মাানুষটার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিলো তখন সেখানে দাড়িয়ে থাকা কেউ কিছু করছিলো না আর অন্যায়ের বিরুদ্ধতাও করছিলনা। সে একাই সব সামলে নিচ্ছিল। আই এম ইমম্পেসড বাই দ্যাট। বুঝলি!”

“বুঝেছি বুঝেছি। বন্ধু আমার প্রেমের সাগরে ডুবেছে।কূল কিনারা হারিয়েছে।”কথাটা বলে হাসতে লাগল জিহান।

আসাদ আর একমিনিটও দাড়ালো না সেখানে। কারন জিহান এখন ফুল মুডে আছে তাকে পঁচানোর।

রাবেয়া হেঁটে গিয়ে দেখে আসলো চাচাকে।আসার সময় পাঁচশত টাক দিল চাচার হাতে। এইতে সুখে পানি চলে আসলো সেই বৃদ্ধচাচার চোখে। ওর্য়াডের দরজায় দাড়িয়ে সবটা দেখলো আসাদ। চাচাকে বিদায় জানিয়ে চলে অাসার জন্য পিছনে ফিরতেই দেখা পেল রাবেয়া আসাদের।আসাদকে দেখে এগিয়ে গেল সে। কিছুটা দুরুত্ব নিয়ে দাড়ালো সে।

চলবে……

®নওশিন সালসাবিল

[ “অপরের কষ্ট দূর করার জন্য কষ্ট করার মাঝে রয়েছে মহত্বের প্রকৃত নির্যাস।”
— আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ♥]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here