#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_০১

সেই সকাল থেকে আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে অথচ বৃষ্টির দেখা এই ভ্যাপসা গরমে দগ্ধ প্রকৃতি এখনো পেল না।আবার মাঝেমধ্যে আকাশ তার গতিপথ পরিবর্তন করে তীব্র রোদ্দজ্বল ন্যায় জেগে উঠছে।

“আকাশের হঠাৎ আজ কি হল?”

“কোন আকাশের কথা বলতেছস তুই?”

“কেন?এই যে মাথার উপর ঠায় দাড়িয়ে থাকা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগা এই বিশাল আকাশের কথা?”

“ও ও আমিও বলি তুই কোন না কোন আকাশের কথা বলতেছস।” কথাটা বলেই রিকশারর হুডটা তুলে দিল নুপূর।তার ঠিক পাশে বসে থাকা নিকাবে আবৃত মেয়েটি তখনও তার দৃষ্টি মেলে চেয়ে রইল আকাশের পানে।
“তুমিও কি আমার মত দ্বিধা দন্ধে জ্বলছ?” মনে মনে সে মেয়েটি বলে উঠল। প্রতি উওরে আকাশ কোন ইঙ্গিত না দিলেও হঠাৎ তার রুপ বদলে পুনরায় মেঘলা হওয়া শুরু করল।

নুপূরকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে রিকশা কিছুদূর যেতেই সে ডাক দিয়ে উঠল,”রাবেয়া দাড়া”
নুপূরের ডাক শুনে রিকশা থামিয়ে পিছনের হুডটা তুলে দিল সে। নুপূর দৌড়ে এসে বলল,”তোর নোটটা তো আমার কাছে।ভুলে গেলি।এই নে।”
রাবেয়া কিছু না বলে নোটখাতাটা নিয় রিকশাওয়ালাকে বলল,”চাচা চলেন।”

রাস্তার মোড়ে আসতেই ঘটল এক বিপত্তি।আচমকা এক মোটরবাইকের সাথে ধাক্কা খেয়ে রিকশাটা উল্টে গেল।আর রিকশা হতে ছিটকে পড়ল রাবেয়া।পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করল সে।নিজের পায়ের দিক চোখ দিবে সেই মুহূর্তে চোখে পড়ল এক অন্যরকম দৃশ্যপট।তড়াতাড়ি করে ভীড় ঠেলে সামনে গেল সে।সেখানে গিয়ে দেখতে পেল মোটরবাইক আরোহী ব্যাক্তিটি সেই রিকশাচালকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে এবং মারার জন্য উদ্যত হচ্ছে।অবাক করার দৃশ্য সেইটা না অবাক করার দৃশ্য হলো,আশাপাশের কোনো মানুষ এই অসভ্যতামির কোন ধরনের প্রতিবাদ না করে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

“ভদ্রতা বলতে কি কিছু নেই আপনার মধ্যে? এগুলো কোন ধরনের ব্যবহার করছেন আপনি এই বৃদ্ধ মানুষটির সাথে?”

চোখ তুলে তাকল লোকটি। তারপর মুখটাকে বিকৃত করে বলে উঠল,”ওই সমইস্যা কি আপনের হ্যা।আপনের কি?যান গিয়া নিজের রাস্তা মাফেন।”

“দেখতে পাচ্ছেননা ওনি কি পরিমান আঘাত পেয়েছেন।তবুও অভদ্রদের মতো ব্যবহার করেই যাচ্ছেন।”

লোকটি রাবেয়ার কথাকে পাত্তা না দিয়ে পুনরায় বৃদ্ধকে শাসিয়ে বলতে লাগল,”তোরে আরেকবার কইমু বুইড়া এর মইধ্যে টেহা বাহির না কইল্লে তোর একটা হড্ডিরও মুই আসত রাখুমনা।কইয়া দিলাম।”

“সামান্য টাকার জন্য আপনি এমন ব্যবহার করছেন? ছিঃ, ওনার আঘাত আপনার চোখে না পড়লেও ওনার বয়স তো চোখে পড়ার কথা।বৃদ্ধ মানুষের সাথে আপনি এমন ব্যবহার করতে পারেননা।”

“লেকছার না মাইরা এই বুইড়ারে কন আমার টেহা দিতে নাইলে ছাড়ুম না আমি।”

সামান্য গাড়ির হেডলাইটের ক্ষতিপূরনের জন্য এই দুর্ব্যবহার ভাবতেই মেজাজ তুঙ্গে ওঠে গেল রাবেয়ার।কোনমতে সেই বৃদ্ধা রিকশাচালক কে একায় মাটি থেকে তুলে দাড় করালো ।একা উনিশ বছরের মেয়ের জন্য তা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হলেও সে একায় কাজটি করল।কারন সাহায্যের জন্য আশেপাশে দাড়িয়ে থাকা কেউ এগিয়ে আসছিল না।

বর্তমানে আমাদের দেশে এই এক ছবি প্রতিনিয়ত দেখতে পাওয়া যায়।প্রভাবশালী লোকেরা ক্ষমতার বলে গরীবদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে নিজের দাম্ভিকতার পরিচয় দিয়ে থাকে।এই আর নতুন কি!মনে মনে ভাবল রাবেয়া।

“কত টাকা ক্ষতিপূরণ লাগবে আপনার” পিছন থেকে এক পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসল রাবেয়ার কানে।

চলবে…….

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here