স্বীকৃতি
পর্ব_২
#Saji_Afroz
.
.
.
সকালের মিষ্টি রোদটা চোখেমুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো আরহামের।
মোবাইল ঘাটাঘাটি করতে করতে কখন যে চোখদুটো লেগে এসেছিলো বুঝতেই পারেনি সে।
আস্তেধীরে উঠে বসলো সে। মোবাইল চালু করতে গিয়ে দেখলো, চার্জ না থাকার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কটা বাজতে পারে এখন? এই পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ ঘুম ভাঙার পর ঘড়ি দেখতে চায়। কাজের মানুষ যেমন ঘড়ি দেখে তেমনি অকাজের মানুষও ঘড়ি দেখে। ঘুম কখন ভাঙলো এটা জানা যেনো খুবই জরুরী! আরহাম এই দুই দলের মাঝে একটিতে পড়ে। তার রুমেই বিশাল একটা দেয়াল ঘড়ি রয়েছে। ঘুমোতে যাবার আগে ও পরে সে সময় দেখে নেয়।
.
চৌকি ছেড়ে উঠে পড়লো আরহাম। এগিয়ে যেতে থাকলো নিচের দিকে। রাত্রিযাপন করা গেলেও এই রোদের মাঝে দিনযাপন করা যাবেনা ছাদে।
.
.
ড্রয়িংরুমে আসতেই আরহাম দেখা পেলো সে আফসানার। দাঁত ব্রাশ করার জন্য ব্রাশে মাত্রই পেস্ট লাগিয়েছে সে।
আরহামকে দেখে তার দিকে এগিয়ে এসে বললো-
রাতে কোথায় শুয়েছিস ভাইয়া?
-ছাদে।
-চৌকিতে?
-না মেঝেতে।
.
ভাই এর রাগান্বিত মুখ দেখে আফসানা মুচকি হাসলো। তা দেখে আরহাম বললো-
হাসছিস কেনো?
-তুই কি সারাজীবন বোকা থেকে যাবি? ভাবী না হয় জ্ঞান হারিয়েছে সেটা তোর সবাইকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে জানাতে হয়েছে কেনো? নিজে সামলাতে পারলি না? তাহলে আর রুম ছাড়তে হতোনা আর ভাবীর সঙ্গও থাকতে হতোনা। যা ভাবী রুমে একা আছে এখন।
.
আফসানার কথা শুনে ভ্রু জোড়া কুচকে আরহাম বললো-
আমি তোর কি হই?
-ভাই!
-মনেতো হয় আমি তোর বন্ধু।
.
মুখটা বাঁকিয়ে আফসানা বললো-
আপন ভাই বন্ধু হয়না বুঝি?
-হয় কিন্তু মাঝেমাঝে এমন আচরণ করিস যেনো তোর আর আমার মশকরা করার সম্পর্ক!
.
ভাই এর কথা শুনে ব্রাশটা মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে আফসানা বললো-
হু! আমি আর কথাই বলবো না তোর সাথে।
.
.
নিজের রুমে এসে বিছানার উপরে খুশবুকে বসে থাকতে দেখলো আরহাম।
খুশবু চোখ জোড়া বন্ধ করে বসে আছে। দেখে মনেহচ্ছে বসে বসে ঘুমোচ্ছে সে।
আরহাম ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো, আসলেই ঘুমোচ্ছে খুশবু!
ফিক করে হেসে দিলো আরহাম।
তার হাসির শব্দে চোখ খুলে দাঁড়িয়ে পড়লো খুশবু।
আরহাম হাসি থামিয়ে গম্ভীরমুখে বললো-
আপনি বসে না ঘুমিয়ে শুয়েই ঘুমোতে পারেন। সমস্যা নেই কোনো।
.
ঘুমঘুম কণ্ঠে খুশবু জবাব দিলো-
না, ঠিক আছে। আমি কি ওয়াশরুমটা এখন ইউজ করতে পারি?
-হুম।
.
লাগেজ থেকে নিজের কাপড় আর তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো খুশবু।
.
.
.
আনোয়ার হোসেন সকালের নাস্তায় একটি ডিম দিয়ে শুকনো রুটি খান। স্ত্রীর হাতের না হলে চলবেনা আবার!
নাস্তা শেষ করেন তিনি ঠিক সাতটায়। নাস্তা করার পরে প্রায় আধ ঘণ্টা ছাদে হাঁটাহাঁটি করেন। তারপর এসে বসেন তার লাইব্রেরি রুমে। চিনি বিহীন এক কাপ দুধ চা খেতে খেতে বই পড়েন তিনি। এই সময়টা একা থাকতেই পছন্দ করেন। এই কথা সবারই জানা। তবুও আজ খালেদা শারমীন এসেছেন এই সময়ে।
চেয়ারটা টেনে চুপচাপ আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন বইটা টেবিলের উপরে রেখে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন-
কিছু বলবে?
-হুম।
-পরে বললে চলবেনা?
-নাহ।
-তাহলে বলো শুনি?
-আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে খুশবু কে নিয়ে।
-কিসের চিন্তা?
-ওয়াদা করিয়েছি মেয়েটিকে, যেনো কারো সামনে ফারাজের নামটাও উচ্চারণ না করে। বাধ্য করেছি বিয়েটা দিতে। এখন ওখানে কি চলছে তা ভেবে অস্থির লাগছে।
-গিয়ে দেখে আসলেই পারো।
-কাল বিয়ে হলো, আজ যাবো? কেমন দেখায় না?
-ফোন দিতে পারো খুশবুকে।
-দিয়েছিলাম। বন্ধ পাচ্ছি।
.
চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে আনোয়ার হোসেন বললেন-
তাহলে খুশিকে পাঠাও কারো সাথে।
.
মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে খালেদা শারমীন বললেন-
এটা তুমি মন্দ বলোনি! বোন তো যেতেই পারে। তাইনা?
-হু।
.
.
.
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে মাথায় পেচানো তোয়ালে টা খুলে, চুলগুলো মুছতে লাগলো খুশবু।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করছিলো আরহাম। রুমের ভেতরে এসে খুশবুকে এভাবে দেখে সে যেনো অন্য কিছু উপভোগ করছে!
ভেজা চুলে মেয়েদের এতো সুন্দর লাগে আগে জানা ছিলোনা আরহামের।
পেছনে ফিরে আরহামকে দেখে খুশবু বললো-
আমার শেষ। আপনি যেতে পারেন।
.
সে কথার উত্তর না দিয়ে হেসে উঠলো আরহাম।
খুশবু খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো-
হাসছেন যে?
-উল্টো শাড়ি পরেছেন আপনি।
-ওহ।
-ওয়াশরুমে যেতে হবেনা আর। এখানেই বদলে নিন। আমি বাইরে আছি।
.
রুমের বাইরে বেরিয়ে আসতেই আরহামের মনে পড়লো কালকের ছবিটির কথা।
এতোক্ষণ এই কথাটি কি করে সে ভুলে গিয়েছে মনে হতেই নিজের উপর রাগ হতে লাগলো তার।
সে আবার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে বুঝতে পারলো, ভেতর থেকে খুশবু দরজা বন্ধ করে রেখেছে।
হতাশমনে সে বিড়বিড়িয়ে বললো-
একটু পরেই নাহয় জিজ্ঞাসা করবো।
.
.
বেশখানিকক্ষণ কেটে গেলেও রুমের দরজা খুললো না খুশবু। আরহাম এগিয়ে যেতে চায়লে আফসানা এসে বললো-
তুই বস ভাইয়া। আমিই ডেকে আনছি ভাবীকে। তুই গেলে খাবার গুলো ঠান্ডা হয়ে যাবে।
-কেনো?
-রুমে ঢুকলে আর নাস্তা করতে বের হবি? মনে তো হয়না দুপুরেও বের হতে পারবি।
.
আফসানার কথায় উপস্থিত সকলে হেসে উঠলেও আরহামের মেজাজটা চরম খারাপ হলো।
রুম ভর্তি মানুষের সামনে কি এসব বলার কোনো দরকার আছে!
.
একটু পরেই আফসানার সাথে ডাইনিং রুমে হাজির হলো খুশবু। তাকে দেখে আরহামের খালা হেসে উঠলেন।
তা দেখে আফসানা বললো-
আমি কি কোনো জোকার কে সাথে নিয়ে এসেছি খালা? হাসছেন কেনো?
-আরে নতুন বউ উল্টো শাড়ি পরে আছে।
.
খুশবুর দিকে তাকিয়ে আফসানা দেখলো, আসলেই সে উলটো শাড়ি পরেছে।
মুচকি হেসে আফসানা বললো-
ভাইয়া হেল্প করেনি তো তাই এই অবস্থা।
.
মাথাটা নিচু করে খুশবু বললো-
আমি শাড়িটা ঠিক করে আসি।
.
এদিকে খুশবুর উপরে রাগটা আরো এক গুণ যেনো বেড়ে গেলো আরহামের।
অনেক আগেই সে খুশবুকে শাড়ি ঠিক করে নিতে বলেছিলো! এতক্ষণ পরেও একই অবস্থা। এই মেয়েটা এতো ভাবলেশহীন কেনো?
.
.
.
মায়ের কাছে বোনের বাড়ি যেতে হবে শুনে খুশি তৈরী হতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
তার মা কাউকে সাথে নিতে বলেছে। কাউকে বলতে খুশি তো অনন্ত কেই সাথে নিবে।
অনন্ত…
খুশিদের পাশের বাসায়ই তার বাসা। খুশবুর সমবয়সী হলেও খুশির সাথেই ভালো সম্পর্ক তার। খুব ভালো বন্ধু তারা। কিন্তু কখন যে খুশি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে বুঝতেই পারেনা। যদিও মনের কথা মনেই থেকে গিয়েছে তবুও সে জানে, অনন্তও তাকে ভালোবাসে।
জামা পরার আগেই খুশি ফোন দিলো অনন্তকে।
ওপাশ থেকে রিসিভ করতেই খুশি বললো-
উঠেছো তো ঘুম থেকে?
-তুমি তুলে দিলে।
-সরি! এটা বলবো ভেবেছো তো? মোটেও বলবোনা।
.
খুশির কথা শুনে মৃদু হেসে অনন্ত বললো-
এতো সকালে ফোন কেনো?
-আপুর বাসায় যাবো।
-কোন আপু?
-আমার আপু কয়টা?
-কালই মাত্র বিয়ে হলো ওর।
-তাতে কি! আমার বোনের সাথে আমি যখন খুশি দেখা করতে পারি। তাই তুমি নিয়ে যাবা আমাকে। বলো নিবেনা?
-তোমার কথা কি আমি উপেক্ষা করতে পারি! কেনো নিবোনা? তৈরী হয়ে নাও।
.
.
.
নিজের রুমে এসে শাড়িটা ঠিক করে নিলো খুশবু।
এতোক্ষণ যাবৎ কেনো যে সে ঠিক করলোনা এটা তার নিজেরই জানা নেই।
হঠাৎ মনে এলো তার নিজের মোবাইলটার কথা। লাগেজ থেকে মোবাইলটা বের করে অন করলো সে।
মেসেজ টাইপ করে পাঠিয়ে দিলো ফারাজের নাম্বারে-
Onner bou hoye giyeci ami. Kosto paccona tumi?
.
(চলবে)