#স্বপ্নের_চেয়ে_মধুর❤️
লেখাঃ সুমাইয়া ইসলাম মিম

পর্ব-নয়

.
রাইমাকে পাশে বসিয়ে হুমায়রা বলতে শুরু করলো,

-“রাফাত আর আমার বিয়েটা কিভাবে হয়েছে তা তো তোমার জানাই। আমিও ভেবেছিলাম সময়ের সাথে সাথে সবটাই হয়তো আমার হবে। রাফাত আমাকে মেনে নেবে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। রাফাত আমাকে মেনেই নিতে পারছে না। আর তার চেয়ে ভয়াবহ ছিল সে বেলাকে পেতে আরো বেশি পাগলামো শুরু করলো। যেই ভালোবাসা ছিল সবার আড়ালে তা এবার সবার সম্মুখেই প্রকাশ করতে লাগলো। সে প্রতিদিন বেলাকে জ্বালাতন করতো। বেলা রাফাতের কাজে কর্মে খুবই বিরক্ত ছিল। আমাকে সে কয়েকবার বলেছে রাফাতের কান্ডের কথা। কিন্তু আমিও বা কি করতাম? রাফাত আমাকে কোন দামই দেয় না। তার বেলাকে চাই যেকোন মূল্যে। আমি ডিভোর্স দিতে মানা করে দেওয়ায় সে বেলাকে দ্বিতীয় স্ত্রী করার কথা ভেবে ফেললো। তুমিই বলো কোন স্ত্রী নিজের স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে চাইবে?”

রাইমাকে বেশ ভাবুক দেখালো। বেশ হতাশার সাথে বললো,

-“আমার ভাইকে কখনো এমন ছ্যাচড়ামো করতে দেখিনি। সে ছোটবেলা থেকেই খুবই শান্ত মেজাজের। নিজের ভাগেরটুকুও বিলিয়ে দিতে দুবার ভাবতো না। সে কি না তোমার সাথে এমন অন্যায় করছে? সবটাই আজব লাগছে।”

-“জানো তো রাইমা। এরজন্যই বোধহয় কথায় আছে ভালোবাসলে মানুষ হিংস্র হয়ে ওঠে তার ভালোবাসার জন্য। কেই বা চাইবে তার ভালোবাসার মানুষটিকে হারাতে? কিন্তু ভাগ্য বলেও তো কিছু আছে! বেলা আপু রাফাতকে চায় না। সে রাফাতকে চাইলে হয়তো আমি দূরে সরে যেতাম যত কষ্টই হোক। যেখানে বেলা আপু রাফাতকে পছন্দই করে না সেখানে রাফাতের ভবিষ্যৎ কি? জোর করে কি ভালোবাসা আদায় সম্ভব? সম্ভব হলে আমি কেন পারছি না? রাফাত কেন আমার ভালোবাসা বুঝতে পারে না রাইমা?”

বলতে বলতেই কেঁদে দিল হুমায়রা। রাইমা আগলে নিলো তাকে। ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট সে কিছুটা হলেও জানে। তবে সবাই তো তার মতো কঠিন হৃদয়ের না। সবাই যে নিজেকে সামলাতে পারে না!

.
“আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে–
তুমি জান না, আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে॥
সে সাধনায় মিশিয়া যায় বকুলগন্ধ,
সে সাধনায় মিলিয়া যায় কবির ছন্দ–
তুমি জান না, ঢেকে রেখেছি তোমার নাম..”

কারো আগমনে চুপ হয়ে গেল বেলা। ঝুমাকে দেখে সে মৃদু হাসলো। ঝুমা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল তার দিকে।

-“বাহ! খুব সুন্দর গলা তো তোমার। গান শিখেছিলে নাকি?”

বেলা হালকা হেসে সায় জানালো।

-“হ্যাঁ। টুকটাক শিখেছিলাম। বাবার খুব পছন্দ রবীন্দ্রসংগীত। সেই সুবাদেই শেখা হয়েছিল। মন ভালো থাকলে গেয়ে ফেলি দু’এক লাইন।”

ঝুমা শাড়ি পরিহিতা বেলার দিকে নজর দিলো। মেয়েটাকে শাড়িতে একটু বেশিই ভালো লাগে। ঝুমাও বেলার মতো বারান্দার মেঝেতে বসলো।

-“তোমাকে শাড়িতে খুব ভালো লাগে বেলা। একদম ঘরনি মনে হয়।”

বেলা মুচকি হাসলো। তার নিজেরও যে শাড়ি খুব পছন্দের। তাকে না মানালেও বোধহয় সে শাড়িই পড়তো। গায়ের রঙ বেশ চাপা হওয়ায় তাকে নাকি মায়াবী লাগে খুব। কথাগুলো আত্মীয়দের বলা। গায়ের রঙের জন্য তার খুব একটা কথা শুনতে হয় নি। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের কন্যা হবার সুবাদে আদরের ভাগটাই বেশি ছিল। ছোট থেকে তাকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল সে মায়াবী, অসাধারণ, অনন্য। যার জন্য কখনোই মন খারাপ করে না সে৷ বরং নিজের মনের মতো সাজে সে। ভালো লাগে। সে নিজেও জানে আহামরি সুন্দর না হলেও তার মুখের আদলের জন্য অনেকের মুগ্ধতার কারণ হয়েছে সে।

-“ঝুমা আপু!”

ঝুমা দূরে অন্ধকার পাহাড়ে তাকিয়ে ছিল। বেলার ডাকে পাশ ফিরলো।

-“হুম বলো।”

-“অনেকদিন তো হলো এখানে থাকছি। এখন একটা বাসা নেব ভাবছি। চাকরিটাও বেশ চলছে।”

ঝুমার চোখেমুখে আঁধার নামলো যেমন।

-“এখানে কি কোন সমস্যা হচ্ছে বেলা?”

-“এমা! না! না! আপু আমার কোন অসুবিধে হবে কেন? মানে বলছিলাম কি তোমার বাসায়ও তো গেস্ট আসে। আমি সেই রুমটা দখল করে থাকছি প্রায় ছয় মাস। তোমার ভাই আসে, তাকে থাকতে দেও সেই ড্রয়িং রুমে। বিষয় টা ভালো দেখায় না। তার চেয়ে বরং আমি ছোটখাটো একটা ফ্ল্যাট দেখি। তাছাড়া বাবা মাকেও আনবো ভাবছিলাম। ছয় মাস তাদের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই।”

ঝুমার মন খারাপ হলেও পরিস্থিতিটা বুঝলো। এবং বললো,

-“যা ভালো মনে করো তাই করো। তবে মনে রেখো তোমার এই বোনের দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা।”

বেলা মুচকি হাসি দিল, কিছু বললো না। ঝুমা উঠে যেতেই সে শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো। যাক ঝুমাকে বুঝানো গেছে।

পরদিন সকালে তৈরি হয়ে বের হলো বেলা। তার সকালের শিফটে ক্লাস। ছাই রঙা শাড়ি পড়ে আধোভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। কাজল দিতে সে কোনকালেই ভুলে না। স্কুলে আসতেই ছোট্ট শিফা দৌড়ে এলো তার কাছে। বেলাও হাটু গেড়ে বসলো তার সামনে। হাঁপাতে হাঁপাতে শিফা বলল,

-“মিষ্টি ম্যাডাম! গুড মর্নিং। আজকে আমি সবার প্রথমে আপনাকে গুড মর্নিং উইশ করেছি।”

বেলা হাসলো। মেয়েটা তাকে খুব পছন্দ করে। বেলাকে নাকি তার মায়ের মতো লাগে অনেকটা। তাই স্কুলে আসলেই সে তার পিছু পিছু ঘুরে। বেলা তার দিকে একটা চকলেট এগিয়ে দিয়ে আঙুল ঠোঁটে রেখে চুপ বুঝালো। শিফাও হেসে বেলার গালে হুট করে একটা চুমু দিয়ে দৌড় ক্লাসে। বেলা হাসলো শিফার কান্ড দেখে।

দূর থেকে এই মিষ্টি মুহূর্তটা কেউ ক্যামেরা বন্দী করতে ভুললো না। তার নিজের ঠোঁটেও হাসি ফুটেছে।

টিচার্স রুম থেকে বেলা ক্লাসে এসেই হাসিমুখে বলল,

-“আসসালামু আলাইকুম মাই স্টুডেন্টস! হাউ আর ইউ অল?”

সবাই সমান সুরে বলল,

-“ওয়া-আলাইকুমুস সালাম ম্যাম, উই আর এবসোলিউটলি ফাইন।”

একটা স্বর বেশ অবাক করলো বেলাকে। পিছন ফিরে চাইতেই দেখলো বাচ্চাদের পিছনে একটা লোক বসা। ভালোমতো খেয়াল করেই তার চোখ কপালে উঠলো। স্পর্শ এখানে? কেন? সে স্পর্শের দিকে তাকাতেই দেখে হাসিমুখে সে সামনে এগিয়ে আসছে। বেলা থমকে দাঁড়িয়ে রইল। সে এসে বেলার সামনা সামনি দাঁড়িয়ে বলল,

-“আমাকে হেল্প করবেন ম্যাম?”

বেলা অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো।

-“স্পর্শ! আপনি..”

বেলার কথা মাঝপথে থামিয়ে বলে উঠলো সামনের ব্যক্তি,

-“শুদ্ধ! শুদ্ধ আহমেদ! নাম আমার।”

বেলা যেন বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইলো তার চোখে। হ্যাঁ এইতো! এই মুগ্ধতাটাই তো তার চেনা। খুব চেনা!

(চলবে)..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here