#স্বপ্নের_চেয়ে_মধুর❤️
লেখাঃ সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব-শেষ
.
শুরু হলো প্রণয়ের মূহুর্ত শুদ্ধ-বেলার। প্রতিদিন দেখা করা, সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়া, একে অপরের বিশ্বাস, ভরসা হওয়া। বেলা এখন আলাদা একটা বাসায় থাকে বাবা মাকে নিয়ে। বাবা মাকে শুদ্ধর বিষয়ে বললে তারাও সম্মতি জানান তাদের প্রণয়ে। দুই পরিবার মিলে ঠিক করলো কোন এক শুভদিন দেখে চারহাত এক করে দেবেন।
.
স্পর্শ বসে আছে এক রেস্তোরাঁয়। তার মুখোমুখি হয়ে আছে তন্নি।
-“তন্নি সবটা কি তুমি বলবে নাকি আমিই রিপিট করবো?”
কাচুমাচু করতে থাকা তন্নি মনে মনে কথা গুছিয়ে নিচ্ছে যেন। তার দৃষ্টি টেবিলের উপর থাকা ছবি এবং চলমান ছবির দিকে। সে বুঝতে পারছে না, এভাবে ধরা পড়ে যাবে। হঠাৎ একটা ফাইল তার মুখে উপর ছুড়ে দিলো পূণ্য। স্পর্শ, তন্নি দুজনেরই দৃষ্টি পূণ্যর দিকে। কঠোর মুখখানা দেখে আরো চুপসে গেলো তন্নি।
-“উফফ! এতো ভালো মানুষী দেখতে তো ভালো লাগছে না তন্নি আপা। চাচাজানের সুপুত্রী, ভালোয় ভালোয় সবটা বল স্পর্শকে। সত্যিটা জেনে যদি স্পর্শ তোকে আপন করে। আমি নিজে প্রমিস করছি তোদের জীবন থেকে চলে যাবো।”
স্পর্শ ফাইলটা নিয়ে খুলতেই যেন চমকে গেলো।
-“ম্যারেজ সার্টিফিকেট?”
পূণ্য হাসলো। হঠাৎই তন্নির গালে চড় বসিয়ে দিলো সে। চড় খেয়ে ফুপিয়ে উঠে বলতে শুরু করলো,
-“হ্যাঁ আমি বিবাহিত,নয় বছর ধরে। কিন্তু স্পর্শ বিশ্বাস করো আমি তোমাকে…”
-“আমি তোমাকে ধোকা দিয়েছি এবং আমার একটা পাঁচ বছর বয়সী কন্যাও আছে! যে আপাতত বাবার কাছে থাকে। তাই না? তন্নি আ..পা..!”
পূণ্যর কথা শুনে স্পর্শ হেসে দিয়ে বলল,
-“ওর ছেলের কথা তাহলে তুমি জানো না?”
পূণ্য অবাক হয়ে তাকালো স্পর্শর দিকে। ছেলে মানে? পূণ্যর মতো তন্নিও যেন আকাশ থেকে পড়লো। স্পর্শ কিভাবে জেনে গেল?
-“কিভাবে ভাবলে তন্নি একটা বছর তুমি আমার থেকে এক প্রকার লুকিয়ে থাকবে আর আমি খোঁজ নেব না! আমাকে এতোই ভদ্র মনে হয়? আমি তোমার এ টু জেড অপরাধ জানি। কিভাবে তুমি আমাকে ফাসিয়েছো, আমার অনুভূতি নিয়ে খেলেছো আর কিভাবে পূণ্যকে আমার কাছে খারাপ বানিয়েছো! এখন আমার একটাই প্রশ্ন কেন করেছো এসব? কোন এক্সকিউজ চাই না এক্সপ্লেনেশন চাইছি।”
তন্নি বুঝতে পারলো পানি হাতের বাইরে চলে গেছে। না চাইতেও স্বীকার করলো,
-“হিংসা। পূণ্যর জিনিসে আমার বরাবরই নজর থাকতো। কেননা মনে হতো ও সবথেকে বেস্ট জিনিসগুলোই পায়, যেখানে ওর প্রিয় বস্তুগুলোই ছাড়তাম না সেখানে ওর প্রিয় মানুষকে কিভাবে ছাড়তাম? তাই যখন জানতে পারি তোমার কথা। আমি তোমাকে ওর বিরুদ্ধে উস্কানি দেই যেন তুমি ওকে ঘৃণা করো।”
পূণ্যর ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি। স্পর্শ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তন্নির দিকে। শুধুমাত্র হিংসার জন্য সে তার জীবনের চারটা বছর নষ্ট করে দিলো? শুধু শুধু ভুল বুঝলো মেয়েটাকে। স্পর্শ করুণ চোখে তাকালো পূণ্যর দিকে। পূণ্য একবার স্পর্শর দিকে তাকিয়ে উঠে চলে গেল। আপাতত এখন তার একটু শান্তির প্রয়োজন। যা একাকিত্বই তাকে দিবে। স্পর্শ তন্নিকে কিছু কথা বলে ছুটলো পূণ্যর পিছনে। আজ সে পূণ্যকে হারালে হয়তো সারাজীবন এর মতোই হারিয়ে ফেলতে হবে। অন্যায় তো সেও করেছে। অন্য কারো কথা শুনে। একটু ধৈর্য ধরে যদি পূণ্যকেই জিজ্ঞাসা করতো তবেই আর পরিস্থিতি এতোদূর গড়াতো না। এখন এই অভিমানিনীর অভিমান কিভাবে ভাঙাবে সে?
-“পূণ্য! প্লিজ কথা শুনো। পূণ্য!”
পূণ্যর রাগ উঠে গেলো। পিছন ফিরেই সে স্পর্শকে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। স্পর্শ থাপ্পড় খেয়ে অবাক বনে গেলো।
-“এখন পূণ্য পূণ্য করছেন কেন? আমি তো খারাপ মেয়ে তাই না? ঠিকই! আমিই খারাপ! ছয়টা বছর ধরে আপনার পিছে কুত্তার মতো পড়ে ছিলাম। আমি তো খারাপই। আমি ভাবতেও পারি নি আমার উপর আপনার ঠিক কিসের ক্ষোভ ছিল। কাছাকাছি গেলে, কথা বলার চেষ্টা করলেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতেন। আমার ভালোবাসার মূল্য তো দেনই বরং আপনি আমার আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানলেন স্পর্শ? কিভাবে পারলেন? আজ যখন আপনার প্রেমিকার আসল রূপ দেখতে পেলেন ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে আপনার পূণ্যকে মনে পড়লো? কি মনে হয় পূণ্য এতো সস্তা? আমি আগেই বলেছি ফিরে পাবেন না আপনার নীড়ে আর আমাকে!”
পূণ্য স্থানত্যাগ করলো তৎক্ষনাৎ। ফেলে গেলো স্পর্শকে হাজারো দোটানার মাঝে।
.
রাফাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হাতের কাগজটার দিকে। চোখের কোনে না চাইতেও জল ভীর করেছে। এ কি খুশির জল? বাবা হওয়ার খুশি? তার সামনে বসে হুমায়রা কান্না করছে। শব্দহীন কান্না। সে বুঝতে পারছে না রাফাতের অনুভূতি! তার ইচ্ছে হচ্ছে কোথাও পালিয়ে যেতে। এতো দোটানা তার আর ভালো লাগছে না।
-“হুমা!”
হুমায়রা অবাক হলো। রাফাত তাকে হুমা সম্বোধন করেছে? সে কি স্বপ্ন দেখছে? অবাক চোখে সে রাফাতের দিকে তাকাতেই সে হুমায়রাকে জড়িয়ে ধরলো।
-“প্লিজ হুমায়রা মাফ করে দেও। একটা সুযোগ দেও প্লিজ! কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না। তুমি জানো না আমি কতটা খুশি হয়েছি। আমাদের বাবু আসবে? আমাদের ছোট একটা বাবু? এই ও তো এখানেই আছে তাই না? আমাদের বাবু। আমার অস্তিত্ব! হুমায়রা! আমি.. আমি..বুঝাতে পারবো না আমার অনুভূতি। হুমায়রা একটা সুযোগ দেও, আমি বেস্ট স্বামী হয়ে দেখাবো। হুমায়রা আমি বেস্ট বাবা হতে চাই, বেস্ট স্বামী হতে চাই। আমাকে সাহায্য করো প্লিজ!”
হুমায়রা নির্বাক তাকিয়েছিলো রাফাতের দিকে। হুট করে রাফাতের বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো সে। এ যে সুখের কান্না। এভাবে রাফাত তার হয়ে যাবে সে স্বপ্নেও ভাবে নি। তবে বাস্তবে তা ঘটেছে। বাস্তবটা যে স্বপ্নের চেয়েও মধুর মনে হচ্ছে তার কাছে। এক অসহায় স্বামী তার অন্তসত্বা স্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে ধরে আছে, দুজনের চোখেই আজ আনন্দ অশ্রু, কিছু পাওয়া না পাওয়ার অশ্রু। এখন একটা কাজই বাকি রয়ে গেলো৷ বেলার থেকে ক্ষমা চাওয়া। তাও হয়তো কোন এক শুভক্ষণে চেয়ে নেবে। বেলা আপাতত তার খোঁজের বাইরে। কখনো বেলার খোঁজ পেয়ে গেলে বউ বাচ্চা সমেত তার কাছে ক্ষমা চাইতে যাবে সে। বেলার বাবা মা ও আর এখানে থাকেন না। তাই চাইলেই পারবে না সে বেলার নিকট পৌঁছাতে।
কয়েক বসন্ত পেরিয়ে,
বৃষ্টিস্নাত এক বিকেলে ছাদের দোলনায় বসে আছে শুদ্ধ এবং বেলা। শুদ্ধ তাকে এক হাত জড়িয়ে। বেলার ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। দুজনেই অপেক্ষাকৃত তাদের অস্তিত্বের।
-“শুদ্ধ! কি ভাবছো?”
-“ভাবছি এটা স্বপ্ন কিনা!”
বেলা হাসলো।
-“এটা স্বপ্ন নহে মশাই। বাস্তব।”
-“এবং বাস্তবটা স্বপ্নের চেয়েও মধুর!”
বেলা সায় দিলো শুদ্ধর কথায়। বেশ খানিক প্রেমময় বাক্য বিনিময়ের পর বেলা হুট করেই বলল,
-“এবার বাবুর বাবা আপনি বাবুর চাচুর একটা ব্যবস্থা করে দিন। কম তো হলো না। পূণ্যকে মানাতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে দেবর মশাইকে। এবার পূণ্যকে তুমি বোঝাও। আর এক করে দেও ওদের। আমার বাবু কিন্তু তার চাচিমনিকে তার কাছে দ্রুত নিয়ে আসতে চাইছে।”
-“যথাআজ্ঞা বাবুর আম্মু!”
শুদ্ধ-বেলা দুজনেই তৃপ্তির হাসি দিলো।
(সমাপ্ত)