#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_২৮
#Saji_Afroz

ছাদে কাপড় শুকোতে দিতে এসেছে বুশরা। পাশের ছাদে রয়েছে নওয়াজ। বুশরাকে দেখে সে রেলিং এর পাশে এসে ফিসফিস করে তার নাম ধরে ডাক দেয়। আর বলে, আমার কিছু কথা আছে।
.
বুশরা বিরক্ত হয়ে বালতিসহ কাপড় রেখে নিচে চলে যায়। নাফিশাকে ওসব শুকোতে দিতে বলল।
এভাবেই বেশ কয়েকবার সে বুশরার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারেনি। বুশরা শুধু একটা কথাই বলেছে-
বিবাহিত ছেলেকে এসবে মানায় না। নিজের বউকে সময় দাও।
.
এদিকে তায়শাও নিহিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে। নানা নাম্বার থেকে তাকে ফোন দেয়। তার একটা কথাও শুনতে নিহির রাজি না। তায়শার কণ্ঠস্বর শুনেই ফোন রেখে দেয় সে। বাধ্য হয়ে তায়শা মেসেজও করেছিল অনেক। কিন্তু নিহির কোনো উত্তর দেয়নি।
নিহির এই ধোকাবাজ মেয়ের ফাঁদে আর পড়বে না, এটাই ঠিক করেছে।
.
.
ফাহমিদা বেগম বুশরার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। নিহির এসে মা কে শান্ত করার জন্য বলল, বুশরা তার বাসায় গেছে। এখানে আর কতদিন পড়ে থাকবে? তুমি চাওনা সে তার নিজের বাসায় ফিরে গিয়ে ভালো থাকুক? বিয়ে করে সংসার করুক?
.
এটা বলতেই ফাহমিদা বেগম লাফিয়ে বলে উঠলেন, তুমি বিয়ে করে নিয়ে এসো তাকে। তাহলে ও সবসময় আমার সাথে থাকবে।
.
এইবার হেসে ফেললো নিহির। ফাহমিদা বেগম ছাড়ার পাত্রী না। নিহির তাকে ওয়াদা না করলে তিনি তার হাত ছাড়বেই না। নিহির তাকে শান্ত করার জন্য বলল, নিয়ে আসব তাকে বউ করে। তুমি ততদিন ওয়েট করো। ঠিক আছে?
.
একথা শুনতেই তিনি তালি দিয়ে উঠলেন। তাদের কথোপকথন দরজায় দাঁড়িয়ে শুনছিলেন সেনোয়ারা বেগম। তিনি নিহিরকে কাছে ডেকে বললেন, জীবনসঙ্গিনী হিসেবে কিন্তু বুশরা খারাপ হবে না। ভেবে দেখতে পারো।
.
দুই মা এর একই কথা শুনে নিহির হাসলো। বুশরাকে নিয়ে সে এমন কিছু ভাবেইনি কখনো।
.
.
এভাবে কয়েকটা দিন কেটে যায়। কেনো যেন নিহির ফোন না করে থাকতে পারেনা বুশরাকে। তার খবরাখবর নেয় সে। ভালো আছে কি না, কোনোকিছুর প্রয়োজন কি না জিজ্ঞাসা করে৷ আর মাঝেমধ্যে ফাহমিদা বেগমের সাথে ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দেয়।
সেদিন রাত দু’টো। হঠাৎ বুশরাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় নিহিরের। কিছু না ভেবেই তাকে ফোন করে বসে। বুশরা ঠিক আছে শুনে শান্তি পায় সে। পরে অবশ্য এত রাতে ফোন করার জন্য লজ্জাও পেয়েছিল। কিন্তু মিথ্যে বলেছিল, তার মা চাচ্ছিলো কথা বলতে। এখন তিনি ঘুমিয়ে গেছেন।
.
আজও বুশরাকে ফোন করে তার হালচাল জিজ্ঞাসা করলো নিহির। তার বাবা কবে আসবে জানতে চাইলে বলল, বলেছিল খুব তাড়াতাড়ি। মনেহয় চলে আসবে।
-আচ্ছা।
.
বুশরা যাওয়ার পর গভীরভাবে তার শূন্যতা অনুভব করছে নিহির। প্রায় সে বুশরার রুমে যায়। কিছুক্ষণ সেখানে সময় কাটায়। তাকে মনে পড়লে ছবি দেখে৷
আর এসব বিষয় নিখিল বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্য করছে। সে বুশরার জন্য যেমনটা অনুভব করেছিল, তাই ভাইও কী তেমনটায় অনুভব করছে?
.
.
নওয়াজ ও তানিশার ডিভোর্স কার্যক্রম শুরু হয়। বিপত্তি ঘটলো একটা বিষয়ে। তিনমাস তাদের একসাথে থাকতে বলা হয়েছে। যার কারণে তানিশা এখন এই বাড়িতে আছে। তিনমাস অনেক বেশি সময়। এতদিন অপেক্ষা করা সম্ভব না নওয়াজের পক্ষে। তাই সে তানিশাকে বলল, আমি যদি এখুনি আরেকটা বিয়ে করে নিই তবে তোমার আপত্তি নেই তো?
-কিছুদিন পর আমি এমনেও আপনার বউ থাকব না। আপত্তি হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।
.
কিন্তু তানিশা থাকা অবস্থায় বুশরা যে কোনোভাবে বিয়েতে রাজি হবে না জানে নওয়াজ। তিনমাস অবধি দেশে সে থাকতেও পারবে না। তাই সে তায়শাকে ফোন করে এসব জানায়। যদিও তায়শার জন্য আজ তার এই অবস্থা। কিন্তু বিপদে মাঝেমধ্যে প্রতারকদের সহায়তা প্রয়োজন হয়। কারণ তারা হয় স্বার্থপর। নিজের স্বার্থের জন্য তারা সবই করতে পারে।
সব শুনে তায়শাও বলল-
ডিভোর্স হয়ে গেলে সে এই বিষয়ে ভেবে দেখতো বুশরা। এখন বউ ঘরে নিয়ে আসছেন আপনি। কীভাবে এটা সম্ভব হবে?
-আমি যদি ওকে কলঙ্কিত করি, তবে তো সম্ভব হবে?
-মানে?
-মানে তখন যেটা ভুলবশত হয়েছিল এখন তা ঠিকই হবে। বুশরাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করব আমি। আমি জানি ওর সাথে আমি যা করেছি ভালো করিনি। কিন্তু তানিশাকে তো ছেড়েই দিচ্ছি আমি। সারাজীবন বুশরাকে হারানোর ব্যথা বয়ে বেড়াতে পারব না। ওকে আমার চাই। তাই এটা আমাকে করতেই হবে। আর এতে আমাকে সাহায্য করবে তুমি।
.
তায়শা মাথায় নতুন বুদ্ধি খাটিয়ে ফেললো। নওয়াজ তাকে তুলে নিয়ে যাবে কিন্তু সে নিহিরকে বলবে, বুশরা পালিয়েছে। এরপর মনভাঙা নিহিরকে শান্তনা দিয়ে আবারও সে তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবে।
তায়শা নানাভাবেই নিহিরের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি। নিহির তার কোনো কথা শুনতেই চায় না।
তাই এখন এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। চোখের সামনে তার প্রিয় মানুষ অন্যের হবে এটা সে মানতে পারে না। বুশরা তো নওয়াজকেই ভালোবাসে। তায়শার জন্যই ওদের ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। নওয়াজের বিয়েটা এক্সিডেন্ট হিসেবে ধরে নিলেই হয়!
তায়শা তাদের সম্পর্কের ফাটল সৃষ্টি করেছিল, এখন সেই সেই সব ঠিক করবে। বুশরার অভিমান ভাঙিয়ে তাকে নওয়াজের করবে। আর নিজেকে করবে নিহিরের!
.
.
বুশরা আজও ছাদে আসে। তবে কাপড় শুকোতে দিতে নয়৷ ফুফুর কথাতে আচার শুকোতে। পাশের ছাদে তানিশাকে দেখে সে। চুল শুকোতে ব্যস্ত তানিশা। বুশরা তাকে না দেখার ভান করতে চেয়েও পারলো না। তানিশা তাকে ডেকে বলল, ভালো আছেন আপু?
.
বুশরা তার দিকে এগিয়ে এসে বলল, হুম। তুমি?
-চলছে কোনো রকম।
-বিবাহিত জীবন কেমন কাটছে?
-আপনি যেন কিছুই জানেন না? শুনলাম সামনে আপনার আর নওয়াজের বিয়ে।
.
একথা শুনে হেসে উঠলো বুশরা। সে জিজ্ঞাসা করলো, কে বলেছে?
-নওয়াজ।
-রসিকতা করেছে মনেহয়।
-নাহ। সে আপনাকেই ভালোবাসে।
-আর তুমি?
.
তানিশা একটু থেমে বলল, তিন মাস পর আমি এমনিতেও চলে যাব। মেহমান হিসেবে এখানে আছি।
-নিজের জায়গা এভাবে ছাড়তে নেই।
-তবে আপনি কেনো ছাড়লেন?
-আমার অগোচরে হয়েছে যা হলো। নাহলে কখনোই ছাড়তাম না।
-যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে থেকে কী করব?
– স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মিলমহম্মবত হতে সময় লাগে না।
-আপনি এসব বলছেন?
-কারণ আমি চাইনা তুমি তোমার সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হও। সময় থাকতে নিজের জায়গাটা শক্ত করে নাও তানিশা। আমি নওয়াজকে আর ভালোবাসি না। তুমি ওকে ছাড়লেও আমি গ্রহণ করব না।
.
আড়াল থেকে এসব শুনলেন নওয়াজের মা। নাহ! বুশরাকে তিনি খারাপ মনে করলেও মেয়েটা ওমন নয়। একটা সংসার যে মেয়ে নষ্ট করতে চায় না, সে নিঃসন্দেহে ভালো মেয়ে। বিষয়টা তিনি দেরীতে বুঝলেন।
তানিশা একটু ভেবে বলল, আপনার ফোন নাম্বার পেতে পারি? আমার মনে হচ্ছে সামনে আপনার সহায়তা প্রয়োজন।
.
বুশরা তাকে নাম্বার দিয়ে নিচে নেমে আসে। বুশরার কথাতে তানিশা তার যেন এক আশার আলো দেখতে পেল। সে ভালোবাসার দু’টি মানুষকে আলাদা করতে চায়নি। কিন্তু বুশরা নওয়াজকে চায়না। তবুও নওয়াজ তার পেছনে পড়ে আছে।
আত্ম-সম্মানের কাছে হার মানতে চেয়েছিল তানিশা। এটা ভেবে দেখেনি, এখন সে নওয়াজের বিবাহিতা স্ত্রী। যার প্রতি রয়েছে তার অগাধ ভালোবাসা। তার ভালোবাসা দিয়ে নওয়াজকে আলগে রাখে পারে সে। আর বুশরার কথা শুনে মনে হলো, তার এটাই করা উচিত। নিজের বিবাহিত জীবনে আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিত। তাতে করে হোক না তার অপমান!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here