#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_১৪
#Saji_Afroz
-খুব বেশি দেরী করলাম না তো?
.
নিহিরের প্রশ্নে তায়শা জবাব দেয়, না না। আপনি যে এসেছেন এতেই আমি খুশি।
-গিফট কেনা হয়েছে?
-নাহ। ভাবলাম একসাথে নেব।
-আমার কিন্তু মেয়েদের জিনিসে আইডিয়া একেবারেই নেই। বোন নেই বলে হয়তো।
-বউ থাকলে হয়ে যাবে।
.
নিহির হেসে বলল, আগে কিছু খেয়ে নিই। কী বলুন?
-নিশ্চয়। বলুন কী খাবেন?
-আপনি বলুন।
-আজকে আমি খাওয়াব আপনাকে। তাই আপনি বলুন।
.
নিহির হেসে খাবার অর্ডার করলো। এদিকে নওয়াজও চলে আসে। তায়শা কে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে পেয়ে যায় সে। তায়শার সামনের চেয়ারে বসা ছেলেটিকে চেনার চেষ্টা করলো নওয়াজ। পরিচিত কেউ মনে হচ্ছে না। যদিও এটা তার বিষয় না। এই ভেবে তায়শার সামনে চলে যায় সে। নওয়াজ এসে বলল, কেমন আছ?
.
তায়শা সবেমাত্র জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়েছিল। নওয়াজ কে দেখে সে কাশতে শুরু করলো। নিহির ব্যস্থ হয়ে উঠলে সে বলল, আমি ঠিক আছি।
.
এরপর নওয়াজের উদ্দেশ্যে বলল, আপনি দেশে কবে এসেছেন?
-কালই মাত্র আসলাম।
-বসুন না।
.
নওয়াজ বসলো। নিহিরের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালে তায়শা নওয়াজ কে বলল, উনি আমার পরিচিত একজন। আপনি চিনবেন না।
.
আর নিহির কে বলল, আর উনি হচ্ছে আমাদের এলাকার বড়ো ভাই।
-ও আচ্ছা।
.
নওয়াজ তায়শা কে বলল, ফোন দিয়েছিলাম তোমাকে আমি। রিসিভও করেছিলে। বাট আমার ফোনের চার্জ শেষ।
-ওহ এটা আপনি ছিলেন!
-হু।
.
তায়শা ভাবলো সঠিক সময়ে ফোনটা রিসিভ করলে আজ নিহিরের সামনে এমন একটা পরিস্থিতি তে পড়তে হত না। বাহানা দিয়ে নওয়াজের সাথে পরে দেখা করতো সে। নওয়াজ বলল,
তোমার আপুকে নিয়ে কীসব শুনছি?
-কী শুনেছেন?
-সে না কি তোমার নাম দিয়ে কার সাথে প্রেম করেছে? এসব কী সত্য?
.
তায়শার ইচ্ছে করছে না নিহিরের সামনে বুশরার সম্পর্কে অন্তত নওয়াজ কে খারাপ কিছু বলতে। কিন্তু এই মুহুর্তে সে নিরূপায়। বাধ্য হয়ে সে ক্ষীণস্বরে বলল, হুম। সব সত্য।
.
বুশরা কে নিয়ে দ্বিতীয় কোনো কথা নওয়াজ জিজ্ঞাসা করলো না। শুধু বলল, আমি নাহয় প্রেমিক ছিলাম। প্রেমিক কে মানুষ ঠকাতেই পারে। কিন্তু তুমি? আপন বোনের মতো এত ভালোবাসতে। এরপরেও তোমার সাথে এটা করতে পারলো সে?
.
তায়শা চুপচাপ এসব কথা হজম করে মাথা নিচু করে ফেললো। নওয়াজ বলল, ভালোর সাথে ভালোই হয়। নিশ্চয় তোমার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
.
এই বলে সে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিহির বলল, উঠে পড়লেন যে? কিছু খেয়ে নিন প্লিজ।
-নাহ ভাই! আরেকদিন।
.
এই বলে নওয়াজ চলে যায়। তার পথের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো তায়শা। তায়শা কে দেখে মনেহচ্ছে, এখুনি তার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়বে। সে তায়শা কে শান্তনা দেওয়ার জন্য টেবিলের উপরে থাকা তার হাতের উপরে নিজের হাত রাখলো। তায়শা চমকে উঠে খানিকটা। নিহির বলল, সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
তায়শার খারাপ লাগাটা মুহুর্তেই যেন গায়েব হয়ে যায়। মনে হচ্ছে নিহিরের সামনে এটা ঘটেছে বলে ভালোই হয়েছে। নিহির তাকে আরও বেশি বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে এখন।
.
.
নিখিল সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে। হঠাৎ সে পা পিছলে পড়ে যায়। ভাগ্য ভালো ছিল প্রায় নিচেই নেমে এসেছিল সে। নতুবা বড় একটা অঘটন ঘটতে পারতো। এখনো যে ব্যথা পায়নি তা নয়! তার হাতে কফির মগ ছিল। কফি খেতে খেতেই নিচে নামছিল সে। কফির মগটা ভেঙে গেছে। ভাঙা কাচের উপরে পা পড়েছে তার। এতেই সে আঘাত পায়। রক্ত বেরুচ্ছে। এদিকে সে কাউকে ডাকার শক্তিটাও যেন হারিয়ে ফেলেছে। চোখে দেখছে অন্ধকার। সেই মুহুর্তে সেখানে উপস্থিত হয় বুশরা। নিখিল কে এইভাবে দেখে তার কাছে ছুটে যায় সে। এরপর চেঁচিয়ে মায়া কে ডাকে। মায়া আসলে তাকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসতে বলল। নিখিল কে উঠতে সাহায্য করে বুশরা। তাকে সোফায় বসিয়ে দেয়। মায়া আসলে তার কাছ থেকে বাক্স নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এরপর ডাক্তার কে ফোন করতে বলে। খানিকবাদে ডাক্তার আসে। তেমন কিছু হয়নি বলে জানায় বুশরা কে। এরপর নিখিলের পায়ে ব্যাণ্ডেজ় করে মেডিসিন দিয়ে চলে যায়। নিখিল বলল, মা কোথায়?
-উনি বাসায় নেই।
-খালেক চাচা?
-তিনিও নেই।
-আমি রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে চাই। ড্রয়িংরুমে বসে থাকা সম্ভব না।
-কিন্তু আপনি এখন উপরে যাবেন কীভাবে?
-আমি পারব।
.
এই বলে সে উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু কিছুদূর যেতেই পায়ের ব্যথায় মুখে শব্দ করে উঠে। বুশরা এসে তার হাত নিজের কাধের উপরে দিয়ে বলল, চুপচাপ আমার সাথে চলুন।
-কোথায়?
-নিচের কোনো রুমে! আপনার রুম কেউ নিয়ে যাচ্ছে না।
.
বাধ্য ছেলের মতো নিখিল বুশরার সাথে দক্ষিণের একটা রুমে আসে। বুশরা তাকে বিছানায় শুতে সাহায্য করে। এরপর এসি চালিয়ে দিয়ে বলল, আমি একটু আসছি।
.
বুশরা খানিক বাদে এক বাটি স্যুপ হাতে ফিরে আসে। নিখিল তা দেখে নাক ছিটকে বলল, রোগীর খাবার নিয়ে এসেছেন?
-এটা খেলে গায়ে জোর পাবেন।
-তাই বলে ভেজিটেবল স্যুপ?
-হুম। নাহলে তখন উঠতে গিয়ে যে পারেন নি, এই অবস্থা হবে।
-খোটা দিচ্ছেন?
-বলতে পারেন।
-ব্যথা বেশিক্ষণ থাকবে না।
-আমিও চাই না থাকুক।
.
নিখিল আর কিছু বলল না। বুশরা বাটি টা রেখে চলে যায়। আজ বুশরার সাথে আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না নিখিলের। ইচ্ছে করছে তাকে থামিয়ে ধন্যবাদ জানাতে। কিন্তু সে পেরে উঠছে না।
.
.
তায়শা ফ্রেন্ডের জন্য সহ নিজের জন্য যা কিছু নিয়েছে, সবকিছুরই বিল নিহির পরিশোধ করেছে। যা দেখে তায়শা আরও বেশি খুশি হয়ে যায়।
ছোট্ট একটা জীবনে কীসের প্রয়োজন? সুখের। আর সুখের জন্য এমন একটা ছেলেই যথেষ্ট। যার টাকা পয়সা থাকার সাথে সাথে খরচ করার মন-মানসিকতাও আছে। তায়শার কাছে ভালোবাসা মানে ভালো থাকা। আর ভালো থাকা মানে টাকা-পয়সা।
ভালোই হলো আশিক তার জীবন থেকে সরে গেছে। নতুবা নিহির কে কী সে পেত?
.
শপিং শেষে তারা বেরুচ্ছে। এমন সময় দোতালা থেকে তাদের দিকে চোখ যায় আশিকের। একই শপিংমল এ আশিকও এসেছিল। তাদের বেরুতে দেখে আশিক নিচে নেমে আসে। কিন্তু ততক্ষণে তায়শা বিলাশ বহুল এক গাড়িতে উঠে বসে এক ছেলের সাথে। আশিকের কেন যেন ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। বিয়ে ভাঙার কারণে সে কষ্টে আছে। আর তায়শা? অন্য এক ছেলে এরইমধ্যে জোগাড় করে ফেলেছে?
আশিক মাথা ঠান্ডা করে। তায়শার সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কারণ সে ভেবে দেখেছে, তাকে ছাড়া চলা কষ্ট হয়ে পড়ছে আশিকের জন্য। তায়শা আর যাই করুক, বিয়ে তো তাকেই করতে চেয়েছিল। এখনো আবার সবকিছু ছেড়ে তার কাছে ফিরে আসতে বলবে সে তায়শা কে। পরিবারের বিষয়টা পরে ভেবে দেখা যাবে। এমনটা ভেবে তায়শার ফোন নাম্বার ব্লক লিস্ট থেকে খুলে দেয় আশিক। আজ রাতেই তায়শা কে ফোন দিয়ে আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেবে সে।
.
.
এদিকে তায়শা বাড়ি ফিরতেই তার হাতের দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয় নাফিশা বলল, এত শপিং?
-হু। মন ভালো ছিল না। তাই ভাবলাম কেনাকাটা করি।
-টাকা পেলে কই?
-জমানো টাকা দিয়ে করেছি।
-তুমি আবার টাকাও জমাও না কি?
.
এই বলে মুখ টিপে হাসে নাফিশা। তায়শা তার দিকে শপিংব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল, এসব রুমে নিয়ে যা। আমি পানি খেয়ে আসি।
.
তায়শা রান্নাঘরে এসে ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে পানি খেয়ে নেয়। এরপর ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় পা তুলে বসে। ক্লান্ত লাগছে তার। আলিয়া খাতুন নিজের রুম থেকে এসে তায়শা কে দেখে বললেন, এসেছিস! ভালোই হলো। চল আমার সাথে রান্নাঘরে কাজে হাত লাগাবি। ভাবছি দুপুর আর রাতের রান্না এখন থেকে একবারেই করে ফেলব।
-কেনো? আগে তো দু’বার চুলো জ্বালাতে হত।
-বুশরার কোনো কাজ ছিল না বলে ও করতো। আমার বাবা ওত সময় নেই।
-সে তো পড়াশোনা করতো। তুমি আর করোটা কী?
-সেটার জবাব তোকে দিতে হবে? আয় বলছি।
-দেখছ আমি বাইরে থেকে এসেছি!
-একজন বাইরে থেকে এসেছে, আরেকজনের পরীক্ষা। এই বয়সে একা এত কাজ করতে পারি?
-না পারলে বুয়া রেখে দাও।
.
এই বলে তায়শা রুমের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু আলিয়া খাতুনের ডাকে থামতে হয় তাকে। তিনি বললেন, পাশের বাড়ির নওয়াজ এসেছে।
-জানি।
-আচ্ছা! সে আমেরিকায় জব করে। জানিস?
-হু।
-দেখতেও সুন্দর।
-তো?
-তোর কথা বলে দেখব না কি?
-বুঝিনি?
-মানে প্রস্তাব দেব বিয়ের?
.
তায়শা বিরক্ত হয়ে বলল, মাথা ঠিক আছে? তাকে আমি বিয়ে করতে যাব কেনো?
-অসুবিধা কোথায়?
-সেটা তোমাকে বলা গেলে তো বলতামই।
-কেনো বলা যাবে না?
-ওতকিছু বলতে পারব না। উনার কথা আমায় আর বলবে না।
.
এই বলে রেগেমেগে রুমে চলে যায় তায়শা। আলিয়া খাতুন নিজের মনে বলল, কথা তো আমি তুলবোই। তোর ভালো এইবার আমি বুঝব।
.
চলবে