#সময়ের_পালাবদল
শামসুল ইসলাস
পর্বঃ-৮
.
তালহাদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলো গত দুদিন অতিবাহিত হলো!

কফিল মিয়া হাসুকে জানালো আজ রাতে আমার একমাত্র কন্যারর সাথে তোমার বিয়ে। হাসু মনেমনে বেশি খুশি নই, সম্পদের লোভের পাশাপাশি তাহেরার প্রতিও তাঁর লালসা ছিলো।কিন্তু কফিল মিয়ার জন্য তা হলো না।

হাসুর আপনজন এগ্রামে আর কেউ নেই, উপারে তাঁর নানা বাড়ি! সেখানে বর্তমানে তাঁর ছোটমামা জীবিত আছে, তাছাড়া তাঁর সাতকুলে কেউ নেই।

সন্ধ্যার আগে তাঁর মামাকে ডেকে আনলো হাসু, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করলো।
কফিল মিয়া বলেছে“ কিছু কিনতে হবেনা, সব ব্যবস্থা আমি করবো।”
কফিল মিয়া তাঁর মেয়েকে দিনের দিন বিয়ে দিলেও টুকটাক বড়ো একটা আয়োজন করলো।
গ্রামের গণ্যমান্য সকলকে দাওয়াত করলো, দাওয়াত না করে উপায় ছিলো না! কারন তাঁদের দিয়েই আব্দুল মজিদের সবকিছু ধ্বংস করেছে।
হাসু ও হাসিকে বিয়ে দেওয়া হলো, রাতারাতি আব্দুল মজিদের বাড়িতে তাঁদের পৌঁছে দেওয়া হলো।

সবাই যারযার আপন ঠিকানাই পৌঁছে গেলো, হাসু আর হাসি ছাড়া তাঁদের মাঝে আর কেউ নেই।
দুজনের মনেই এক অজানা অনুভুতি কাজ করছে। পরস্পর দুজনে অনেকক্ষণ চুপচাপ পিনপতন নীরবতা অবলম্বন করলো!
হাসু বললো-
« কেমন আছো?
« জ্বি ভালো।
তারপরে আবার চুপকরে থাকলো হাসি।
হাসু আবার জিজ্ঞেস করলো-
« কোনো সমস্যা? কথা বলছোনা যে!
« নাহ্! বরং মহা দুশ্চিন্তায় আছি!
« কিসের দুশ্চিন্তা!
« আমার মাথায় আসছেনা, আপনার সাথে কেন আমাকে বিয়ে দিলো।
« কি বলছো আবোলতাবোল!
« মটেই আবোলতাবোল না! আমি আমার পিতাকে চিনি, তিনি খুবি খারাপ মানুষ। লোভী, আমানতের খেয়ানতকারী, মানুষকে কুটকৌশলে ধ্বংস করী। না জানি তিনি আপনার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে কি স্বার্থ হাসিল করতে চাই!

হাসু ঘরের মধ্যে পড়ে গেলো, বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসিকে বললো-
« কি বলছো এসব?
« জ্বি ঠিকি বলছি! আমি এসব মটেই পছন্দ করিনা, আপনার সাথে আমার যেহেতু বিয়ে হয়েছে তো আজ থেকে আপনিই আমার সব। আমি চাইনা আপনার ক্ষতি হোক, আজ থেকে সাবধানে চলাফেরা করবেন।

হাসির মুখে এসব শুনে হাসু গভীর চিন্তাই ডুবে গেলো।

তাহেরার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো, খেয়াল করলো তালহা এক গ্লাস পানি নিয়ে দাড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
তাহেরা তালহার দিকে তাকাতেই বললো-
« দুঃখিত প্রিয়তমা, অনেক ডাকাডাকি করে তোমাকে জাগাতে পারিনি। বাধ্যহয়ে পানির ছিটা দিলাম তবেই ঘুম ছুটলো তোমার, চলো ওযু করে এসে আমার বাসররাত থেকেই তাহাজ্জত সালাত আদায়ের মাধ্যমে জীবনের পথচলা শুরু করি।
তাহেরার চেহারায় খুশির চাকচিক্য ভাব প্রকাশ পাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে খুব মধুর লাগছে তালহার মুখের কথা।
তাহেরা বললো-
« চলুন ওযু করে আসি।

গুজন বাইরে বের হলো, কলশীতে পানি খুঁজে পেলো না।
তালহা বললো-
« নদী থেকে পানি আনছি আমি, তুমি ঘরে যেয়ে বসো।
« সে কি একাএকা যাবেন!!
« হ্যাঁ সমস্যা দেখছি না তো!
« আমি যাবো আপনার সাথে, একাএকা যেতে দিব না।
তালহা মুচকি একটা হাসি দিয়ে তাহেরার নাকে মৃদু টেনে বললো-
« আমার পাগলী বউয়ের কাণ্ড দেখো! আমাকে বাচ্চা ভেবেছে মনে হচ্ছে ভয় পাবো।
তাহেরা লজ্জাই মাথা নিচু করে ফেললো, হঠাৎ তালহা তাহেরার ডানহাত ধরে টানদিয়ে বললো-
« চলো দুজনে জ্যোৎস্না বিলাসী করতে করতে নদী থেকে পানি আনি।
« চলুন।

দুজনে পানি এনে পবিত্রতা অর্জন করে সালাত আদায় করলো, পরে তেলায়ত শুরু করলো। তাহেরা তালহার দিকে চেয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পবিত্র কালাম শ্রবণ করলো। কিছুক্ষণ পর দুরের মসজিদ থেকে ক্ষীণ সব্দে ভেসে এলো “ আসসালাতু খইরুম মিনান নার”
তাহলা জবাবে পড়লো আযানের জবাবে পড়লো- “ আসসালাতু খইরুম মিনান নার”

তাহেরা বললো-
« আযানের জবাব তো শুনেছি “আসসালাতু খাইরুম মিনান নার” এর পরিবর্তে “সদাকতা অ বারার তা” বলতে হয়।
« না, বরং অসংখ্য সহিহ হাদিসে আসছে মুয়াজ্জিন যা বলবে আমাদের তা বলতে হবে, শুধু মাত্র “হায়্যালাস সালাহ, ও হায়্যালাল ফালাহ” এর পরিবর্তে “ লা হাওলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলতে হবে।

তাহেরা তাঁর কাজল কালো চোখের ভ্রু টানাটানা করে বললো-
« তাহলে তো শুনেছি! রাসুল সাঃ এর নাম শুনলেই তাঁর প্রতি “ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াস সাল্লাম” বলে দুরুদ পাঠ করতে হয়, তাহলে আযানের জবাবে কি বলবো?
« শুধু মাতো আযানের ক্ষেত্রে “আসহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” জায়গাতে এটাই বলতে হবে। এটা হাদিসের নির্দেশ, আর দুরুদ তো আযান শেষেই তাঁর প্রতি পড়ছি যা আমরা আযানের পর পড়ি।

« কোন দো’আ! ! আমার তো মনে নেই!
« তাহলে শুনো! হাদিসের ভাস্য অনুযায়ী আবার বলছিঃ-
“ আযানের দো’আ সমুহ

মুয়াযযিন যা বলে শ্রোতাও তা বলবে, তবে

حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ وَحَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ

নামাযের দিকে আসো, কল্যানের দিকে আসো

হাইয়্যা ‘আলাস্‌সালাহ, হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ’

…এর সময় বলবে,

لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ

আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই। [১]

লা-হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ

মুয়াযযিন তাশাহহুদ (তথা আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার…) উচ্চারণ করার পরই শ্রোতারা দো’আটি বলবে,

وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبَّاً، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً، وَبِالْإِسْلاَمِ دِينَاً

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। আমি আল্লাহকে রব্ব, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে রাসূল এবং ইসলামকে দীন হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট। [২]

ওয়া আনা আশ্‌হাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু, রাদীতু বিল্লা-হি রব্‌বান, ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসূলান, ওয়া বিলইসলা-মি দীনান

মুয়াযযিনের কথার জবাব দেওয়া শেষ করার পর বলবে,

اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّداً الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحمُوداً الَّذِي وَعَدْتَهُ، [إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ]

হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের রব্ব! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ওসীলা তথা জান্নাতের একটি স্তর এবং ফযীলত তথা সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন। (নিশ্চয় আপনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।) [৩]

আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াস সালা-তিল ক্বা-’ইমাতি আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাতা ওয়াব্‘আছহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদতাহ, (ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আদ)

[১] বুখারী, ১/১৫২, নং ৬১১, ৬১৩; মুসলিম, ১/২৮৮, নং ৩৮৩।
[২] মুসলিম ৩/১৫৫৭, নং ১৯৬৭; বায়হাকী ৯/২৮৭, দু ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ বাইহাকী থেকে, ৯/২৮৭, ইত্যাদি। তবে সর্বশেষ বাক্যটি ইমাম মুসলিমের বর্ণনা থেকে অর্থ হিসেবে গৃহীত।
[৩] আহমাদ ৩/৪১৯, নং ১৫৪৬১, সহীহ সনদে। আর ইবনুস সুন্নী, নং ৬৩৭; আরনাঊত তার ত্বাহাভীয়ার তাখরীজে এর সনদকে বিশুদ্ধ বলেছেন, পৃ.১৩৩। আরও দেখুন, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১০/১২৭।
[৪] বুখারী, ১/১৫২, নং ৬১১, ৬১৩; মুসলিম, ১/২৮৮, নং ৩৮৩। মুসলিম ১/২৯০, নং ৩৮৬। ইবন খুযাইমা, ১/২২০। মুসলিম ১/২৮৮, নং ৩৮৪। তিরমিযী, নং ৩৫৯৪; আবূ দাউদ, নং ৫২৫; আহমাদ, নং ১২২০০; আরও দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, ১/২৬২]”

তারপরে দুজনে ফজরের সালাত আদায় করলো, কয়েক পৃষ্টা কোরআন পড়ে তাহেরা রান্নার জন্য তাঁর মাকে ডাকতে গেলো।
এদিকে তালহা একটু ঘুমানোর জন্য বিছানাই গা এলিয়ে দিলো।……(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here