#সময়ের_পালাবদল
শামসুল ইসলাম
পর্বঃ- ৪
.
ভালোথাকো, ইনশাআল্লাহ্‌ অতিদ্রুত আমরা জান্নাতী সাথী হবো, আসসালামু আলাইকুম বলে তালহা বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
আব্দুল মজিদ দরজার পাশেই দাড়িয়ে ছিলো, তাহলাকে জিজ্ঞেস করলো-
« বাবা তাহেরার মতামত কি?
« আলহামদুলিল্লাহ সম্মতি পেয়েছি, আপনি সময় সুযোগ করে আমাদের আকদ সম্পন্ন করিয়ে দিন।
« আলহামদুলিল্লাহ বাবা! অতিশীঘ্র তোমার পরিবারের সাথে শলাপরামর্শ করে বিয়ের দিন তারিখ ধার্য করবো ইনশাআল্লাহ্‌।
« আপনাদের যেটা ভালো মনে হয় করুন, আমি আসি চাচা।
« কি বলো বাবা! রাতের খাবার না খেয়ে গেলে হবে না। এশার সালাত আদায় করে আমার সাথে এসে খেয়ে যাবে।

তালহা কিছুটা লজ্জিত অনুভব করছে, তাঁর বিয়ে নিয়ে এমন সরাসরি কথাবার্তা যা তাকে মনেমনে লজ্জা দিচ্ছে।
তবুও স্বাভাবিকভাবে আব্দুল মজিদকে বললো-
« ইনশাআল্লাহ্‌ চাচা আসবো, এখন আসি আসসালামু আলাইকুম।

তালহা চলে গেলো, ঐদিকে তাঁহেরা গোপনে বারান্দায় দাড়িয়ে তালহার পথপানে বিরহিণী ডাক হরিণির মতো চেয়ে থাকলো। আব্দুল মজিদ সেটা দেখে মুচকি একটা হাসি দিলো, তাহেরা সেটা বুঝতে পেরে দ্রুতপায়ে ঘরে প্রবেশ করলো।
আব্দুল মজিদ তাহেরাকে ডাক দিয়ে-
« মা তাহেরা এদিকে আয়?
« জ্বি আব্বু বলেন!!
« তালহা রাতে খেতে আসবে দ্রুততার সাথে তোর আম্মাদের সাথে জামায়ের জন্য খাবারদাবারের বন্দবস্ত কর।
তাহেরা বাবার মুখে জামায় শব্দটি শুনে লজ্জাই ওড়নায় মুখ লুকালো।
আব্দুল মজিদ বুঝতে পারছে তাঁর মেয়ে লজ্জা পেয়েছে, তাই সে বললো-
« মারে আজ ভীষণ খুশি ও আনন্দিত! এমন ছেলে পাওয়া খুবি দুষ্কর। তালহার সাথে বিয়ে হলে অনেক সুখি হবি মা।

তাহেরা আর লজ্জাই দাড়াতে পারলোনা বাবার সামনে, তখন বললো-
« যায় বাবা! আম্মাদের কথাটা জানিয়ে আসি।
« আচ্ছা যা।
তালহার সাথে বিয়ে ঠিক, আবার রাতে খেতে আসবে তাঁরমানে আবার তাঁর কাঙ্ক্ষিত পুরুষের মুখখানি দেখতে পাবে। এসব ভেবে আনন্দে আত্মহারা তাহেরা।

সেই রাতেই তাহেরা মাজায় ওড়না বেঁধে মায়েদের রান্নার কাজে সাহায্য সহযোগীতা করলো।
রুবি আজ লক্ষ্যকরে তাহেরার মনে আনন্দের লহরী বয়ে চলছে, মেয়ে চাকচিক্য মন দেখে রুবির মনেও পুলকিত হলো। মজা করে তাহেরাকে বললো-
« কি রে মা! আগে কখনোই তো আমাদের কাজে সাহায্য করিসনি, আজ হঠাৎ এতো ভক্তি কাজের প্রতি?

তাহেরা মায়ের কথায় লজ্জাই মুখটা চুপসে ফেলে, তবুও নিজে একটু ভাব সঞ্চার করে বললো-
« আব্বু বললেন বাড়িতে মেহমান আসবেন, তাই তোমাদের কাজে সাহায্য করতে এইজন্য করছি আর কি!!

তাহেরার বড়ো মা বললেন-
« বুঝি বুঝি মা, নতুন সংসারের স্বপ্ন দেখলে কাজের গতি বেড়ে যায়।
« রাখলাম কাজ! তোমরা করো আমি গেলাম।
রুবি হাসতে হাসতে বললো-
« পাগলী মেয়েন কাণ্ড দেখ!! তোর বড়ো মা তো ঠিক বলেছেন। তাছাড়া জামায়ের জন্যও তো রান্না শিখতে হবে তাইনা?
যদি এমন অকর্মা করে শশুরবাড়ি পাঠাই তাহলে আমাদের দুইবোনের কেলেঙ্কারির অন্ত নেই, সবাই বলবে তাহেরার দুইটা মা থাকতেও মেয়েকে কিছু শিখায়নি।

তাহেরা লজ্জামাখা কণ্ঠে বললো-
« আম্মু তোমরা কি শুরু করলে!! আমি লজ্জা পাচ্ছি।
তাহেরার বড়ো মা বললো-
« আচ্ছা মা তোর লজ্জা দিচ্ছিনা!! এই নে জামায়ের জন্য মাছের ভুনাটা কর, অন্ততপক্ষে জামায় বুঝতে পারুক আমাদের মেয়ে কিছু রান্নাবাড়া পারে।

তাহেরা লজ্জাই লাল হয়ে যাচ্ছে তাঁর দুইমা মেয়ের দুষ্টুমিমাখা ভালোবাসা সুলভ আচরণে।
তাহেরা মাথা নিচু করে বললো-
« বিয়ের পুর্বেই যদি এমন জামায়ের রান্নাবাড়া নিয়ে চিন্তাচেতনা করো, না জানি বিয়ের পর তোমরা দুজনে কি তুলকালাম কাণ্ডকারখানা করো!!

সেই রাতে দুই মা মেয়ের দুষ্টুমিমাখা কথাবার্তার মাধ্যমে সাধ্যমত রান্নাবাড়ার আয়োজন করলো।

সালাতুল এশা আদায় করে সোজা আব্দুল মজিদ তালহাকে তাঁর বাড়িতে আপ্যায়নের জন্য ধরে আনলো। ইতিপূর্বে তালহা অনেক খেয়েছে তাঁর বাড়িতে, কিন্তু আজ তাঁদের সাথে সম্পর্ক ভিন্ন পর্যায় পৌঁছাচ্ছে। এইজন্য আয়োজনটা একটু বেশি।
তালহা মনেমনে বেশ উৎফুল্ল, বিয়ের আগেই জামায় আদর বেশ মজার ভাবনাটা।
আব্দুল মজিদ তালহাকে নিয়ে বারান্দায় বসলো, রুবিকে খাবার দিতে বললো।
খাবার সবকিছু বারান্দায় এনে দিলো, তা নিজহাতে উঠিয়ে তালহাকে খাওয়াতে লাগলো আব্দুল মজিদ।
খাওয়ার মাঝ পর্যায় রুবি বড়ো একটি মাছের মাথা এনে তালহাকে দিতে বললো এবং বললো-
« তাহেরা নিজহাতে রান্না করেছে তালহার জন্য।
তালহা বেশ লজ্জা পেলো তাঁদের এমন জামায় আদর দেখে। ঐদিকে তাহেরা ঘরে চুপটি মেরে বসে আছে, জানালা দিয়ে তালহাকে দেখা যাচ্ছে। তাহেরা সুযোগ মিস করলো না দেখার, সুযোগে ইচ্ছামত তাকে দেখে নিলো।
জানালা দিয়ে তালহার দিকে তাকিয়েই আছে, হঠাৎ তালহার চোখটি জানালার ভিতর দিয়ে তাহেরার চোখে দৃষ্টি নিক্ষেপ হলো। সাথেসাথে তালহার গলাই খাবার আটকে গেলো, বেশ কিছুক্ষণ কাশি দিলো।
তাহেরা ঘরের ভিতর থেকে কাটা কবুতরের মত ছটফট করলে লাগলো, ইশ আমার এমন বেখাপ্পা তাকানোর জন্য আমার প্রিয়তম কষ্ট পেলো।
তালহার কাছে ছুটে যেতে মনচাই তাহেরার, কিন্তু এখানো তাঁরা অদৃশ্য বাধাই আবদ্ধ যার কারনে সম্ভবনা তাঁর কাছে যাওয়ার ও পানির গ্লাস সামনে ধরার।

এভাবে খাওয়াদাওয়া পর্ব পরিসমাপ্তি করে আব্দুল মজিদ তালহার সাথে বিভিন্ন গল্পগুজবে মেতে উঠলো।
তালহা একপর্যায় বললো-
« চাচা আমাদের ঘুমানো উচিৎ, এশার সালাতের পর রাসুল সাঃ দ্রুততার সাথে ঘুমিয়ে পড়তেন, ও সালাত ও খাওয়াদাওয়ার পর তিনি গল্পগুজব বা কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। তাই আমাতের উচিৎ নবী কারিম সাঃ এর এই সুন্নাতটা আঁকড়িয়ে ধরা।
« ঠিক বলেছো বাবা, তাহলে যাও ঘুমিয়ে পড়ো সকালে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ্‌।
সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে তালহা সেদিনের মতো বিদায় নিলো তাহেরার বাড়ি থেকে।


তালহার ঘরে যেতে হলে হাসুর ঘরের পাশ অতিক্রম করে যেতে হয়। তালহা লক্ষ্যকরে হাসুর ঘরের বারান্দায় বেশ কয়েকজনের আনাগোনা।
পা বাড়িয়ে একটু কাছে যেতে লক্ষ্যকরে কফিল মিয়া ও লালমিয়া! এরা দুজনই আব্দুল মজিদের প্রকাশ্য শত্রু।
প্রতিটা মানুষের কিছুনা কিছু শত্রু থাকবেই, একজন ব্যক্তি পৃথিবীতে সবার দৃষ্টিতে ভালো হতে পারেনা।
তেমনিভাবে আব্দুল মজিদ তাঁর উর্ধে নয়।

বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের কথাবার্তা হলো, সবায় গোপনে হাসুর বাড়ি ত্যাগ করলো। তালহার চোখে ঘুম উবে গেছে, আব্দুল মজিদের শত্রুপক্ষের লোকজন দেখে! নিশ্চয় হাসু তাঁদের সাথে বড়ো কোন ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এসব ভাবতে ভাবতে হালকা ঘুমের ঝুল আসে, বেশ কিছুক্ষণ পর হাসুর কণ্ঠে ডাক শুনতে পেলো তালহা।

তালহা হতচকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
« কে?
« তালহা ভাই বাইরে আসো আমি হাসু, কিছু কথা বলার আছে।
হালকা ঘুমের ঝিম এসেছিল এইজন্য তালহা চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরে বের হয়ে এলো।
হাসুকে বিস্ময় ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
« কি ব্যাপার এতো রাতে!!
« কেন আমি কি তোমার সাথে কথা বলতে পারি না?
« তাতো অবশ্যই পারো, কিন্তু কি এমন সকালে বলতে পারতে। এদিকে দিলে তো আমার কাঁচা ঘুমের এই এগারোটার সময় বারটা বাজিয়ে।
« দুঃখিত, তবে একটা ধন্যবাদ ও সাথে একটা দুঃসংবাদ দিতে এসেছি।
তালহা ভড়কে গেলো, না জানি এইরাতে আবার কি উল্টাপাল্টা কথা বলে!!
তবুও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে বললো-
« শুনাও তোর দুঃসংবাদ!! ধন্যবাদটা শেষে দিও।
« তেমন কিছু না হুজুর ভাই! তবে তোমার আসল চরিত্রের গোমর অতিদ্রুত ফাঁস হবে আশা করছি।
« হাহাহা হাসু ইদানীং দেখছি তুমি আব্দুল মজিদ চাচার শত্রুপক্ষের সাথে বেশ মজাচ্ছ। বিষয়টা কিন্তু ঠিকনা, যার নেমক খেয়ে বড়ো হচ্ছ গোপনে তাঁর শত্রদের সাথে হাত মিলাচ্ছ। আর শুনে রাখো কানখাড়া করে, তুমি আমার কিচ্ছু করার ক্ষমতা রাখো না, যদি আল্লাহপাক না চাহে, সুতরাং আমি যদি প্রকৃত দোষী হয়ে থাকি তা প্রকাশ্যে জনসম্মুখে প্রকাশ করে দাও তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু দয়াকরে এমন অপ্রিতিকর কথা বলো না যা আমার মটেই পছন্দ না, বিশেষ অনুরোধ হাসু তোমার প্রতি যাই করো না কেন! আল্লাহর প্রতি ভয় করো। তাছাড়া তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।

হাসু কথা বাড়ালো না, প্রসঙ্গ পাল্টে বললো-
« তোমার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।
« কেন!
« এই রাজ্যে থেকে রাজা ও রাজকন্যা দুইটাই বাগাতে পেরেছ।
« মানে বুঝলাম না হাসু!! পরিস্কার করে খুলে বলো?
« না বুঝার কি আছে তালহা সাহেব। এই যে তাহেরা ও তাঁর বাবাকে পটিয়ে তাকে বিয়ে করছো, তাঁদের সমস্ত সম্পত্তির একমাত্র মালিক হবে তুমি। তুমি তাঁদের হয়তো তাবিয কবজ করে তাঁদের বাগিয়ে নিয়েছ, যারজন্য তোমাকে বিয়ের পূর্বেই জামায় আদর করছে। তোমার এই উছিলায় আমার খাওয়াদাওয়া খুব একটা মন্দ হচ্ছে না, এইজন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
« একদম বাজে কথা বলবেনা, আমি কখনোই এসব চিন্তা করিনি। প্রস্তাবটি আব্দুল মজিদ চাচার পক্ষথেকে পেয়েছি।
« যাইহোক বুঝি তো!!
« আর কিছু বলবে হাসু?
« না আপাতত এতোটুকু।

তালহা আর কথা না বাড়িয়ে সালাম দিয়ে শোবার ঘরে প্রবেশ করলো………(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here