গল্প :- সঙ্কোচ
পর্ব :- ০৫
Writer :- Kabbo Ahammad
.
.
-:”এদিকে কাব্য ঘরে ঢুকে দেখলো মিরা বিছানায় বসে আছে। কাব্যকে দেখে মিরা বললো।

–“কে এসেছিলো?

–“মামা।

–“ওহ। কোনো কাজে?

–“হ্যাঁ। একটা জমির দলিল দেখাতে।

–“আমার কথা কিছু বলেছেন?

–“দেখতে আসতে চাচ্ছিলেন। আমি ভেবেছিলাম তুমি ঘুমাচ্ছো। তাই আসতে দিলাম না।

–“ঘুমাচ্ছিলাম না আমি। আসতে বললেই পারতে।

কিন্তু কাব্যর তো মনে হচ্ছিলো এই বুঝি মিরা আশার কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু মিরা কিছু বললো না। উল্টো কাব্যকে হাতছানি দিয়ে বললো।

–“সারারাত তো ঘুমাওনি মনে হয়। এসো ঘুমাবে।

হ্যাঁ আসলেই কাব্য কাল সারারাত ঘুমায়নি। মিরার চিন্তায় ঘুম আসেনি তার। এখন, সবকিছু যখন শান্ত, কাব্যর দুচোখে তখন রাজ্যের ঘুম নেমে আসছে। তারপর মিরার কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।

মিরাও কাব্যর চুলে বিলি কাঁটতে কাঁটতে ভাবতে লাগলো, কাব্য কেন মিথ্যা বলছে তার সাথে? আশাকে যে পাওয়া যায়নি তা কাব্যকে দেখেই বুঝতে পেরেছিলো সে। কারন কাব্য মিথ্যা বললে ওর দুচোখের পাপড়ি ফেলতে থাকে ঘনঘন, আজ যেমন ফেলছিলো আশাকে পাওয়ার খবর বলতে গিয়ে। আশার জন্য খুব খারাপ লাগছে ওর। ঐ স্বপ্নটা দেখার পর থেকেই ওর মনে হয়েছে, আশা আর বেঁচে নেই। হয়তো সত্যি হয়ে গেছে ওর স্বপ্নটা।

তখন কাব্যর আম্মু ঘরে গিয়ে ওর বাবাকে বললেন।

–“তোমার ছেলেটা এতো বউ ন্যাওটা হয়েছে। কাল সারারাত ওর পাশে বসে সেবা করেছে। এখন ওদের ঘরে গিয়ে দেখলাম, মিরার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। এদের ঢং দেখলে গা জ্বলে।

–“তাতে কি হয়েছে? (বাবা বললেন)

–“কিছু হয়নি? এই বউই ছেলের মাথাটা খাচ্ছে। এতোগুলো ঘটনা ঘটলো সবই তো ওর জন্য। আশার সাথে কাব্যর বিয়ে দেয়ার কি দরকার ছিলো? ভাইয়ের কাছে মানসম্মান সব গেল আমাদের।

–“মিরার কি দোষ? একটা বাচ্চা নেওয়ার জন্যই তো ও বিয়েটা দিলো।

–“তুমি কিচ্ছু বুঝোনা। মিরা পুরো কাজটা করেছে ভাইয়ের কাছে আমাকে ছোট করার জন্য। ওসব নালি টালি কাটা সব মিথ্যা, ইচ্ছা করেই বাচ্চা নেয়নি এতোদিন। তোমার কি মনে হয়, যেদিন বিয়ে হলো, সেদিনই ও টের পেল ওর বাচ্চা হবে। একটা ছোট বাচ্চাকে এ কথা বললেও তো ও হাসবে। তোমার ছেলেকে পুরো ভেড়া বানিয়ে রেখেছে, কিচ্ছু বোঝে না ছেলেটা।

বাবা তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টিভি দেখায় মন দিলেন। কারন তার বউ সারাজীবনই সন্দেহবাতিক। আগে তার পিছনে লাগতো, এখন বউয়ের পিছনে লাগছে। একে প্রশ্রয় দেয়া ঠিক হবে না।

তখন কাব্যর মা রেগে বললেন।

–“বিশ্বাস করছো না, তাই না। দাঁড়াও, আমি প্রমাণ করে দিবো সব কথা। মিরা যে ইচ্ছা করে বাচ্চা নেয়নি এতোদিন, এটাও বুঝিয়ে দেবো। একটু অপেক্ষা করো শুধু, আমার ভাইয়ের সামনে অপমান করার শোধ নেবো আমি।
.
.
.
ওদিকে আশার জ্ঞান ফিরতেই সে দেখলো অচেনা এক বাড়িতে শুয়ে আছে সে। একটা মেয়ে ওকে চোখ খুলতে দেখেই, “ঘুম ভেঙেছে, ঘুম ভেঙেছে’ বলে লাফাতে লাফাতে অন্য ঘরে চলে গেল। আশা এখন একা, কি ভাবে এ বাড়িতে আসলো বুঝতে পারছে না। সে কাল রাতে তার সাথে কি ঘটেছিলো তা মনে করার চেষ্টা করলো।

গতকাল রাতে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার অনেকক্ষণ পর, এক অচেনা জায়গা দিয়ে যাবার সময় টের পায়, কিছু লোক ওর পিছু নিয়েছে। খুব ভয় পেয়ে যায় তখন ও। পেপারে এতোদিন ধরে পড়া রেপ কেস বা অজ্ঞাত তরুণীর লাশ উদ্ধার- এ ধরনের খবরগুলো ওর চোখে ভাসতে থাকে। প্রাণপনে দৌড়াতে শুরু করে ও, পিছনের লোকগুলোও এবার ছুটে আসতে থাকে ওর দিকে। আশা বুঝতে পারে আজ ওর রক্ষা নেই, বাসা থেকে এভাবে বের হয়ে আসার জন্য নিজেকে নিজেই গালি দিতে থাকে ও। এসব ভাবতে ভাবতে আর প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে, কখন যে ও হাইওয়েতে উঠে গেছে আর কখন যে এক গাড়ির সামনে এসে পড়ে গেছে, কিছুই টের পায়নি সে। গাড়িটা সময় মতোই ব্রেক করেছিলো, কিন্তু তবুও আশার সাথে ধাক্কা খাওয়া এড়াতে পারলো না। ধাক্কা খেয়ে আশা জ্ঞান হারায়, এরপর আর কিছু মনে নেই ওর।

তখন একজন মহিলা ঘরে এসে বললেন।

–“এইতো, ঘুম ভেঙেছে তোমার। বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। (অচেনা এক মহিলা)

–“আমি কিভাবে এলাম এখানে? (আশা জিজ্ঞেস করলো)

মহিলাতো আর বলতে পারেন না, ওর ছেলের গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেই জ্ঞান হারিয়েছে ও। মেয়েটাকে চিনে না, জানে না, শেষে কোন বিপদে পড়ে কে জানে। তাই মিথ্যা করেই বললেন।

–“তুমি রাস্তায় পড়েছিলে । আমার ছেলে তোমাকে নিয়ে এসেছে উঠিয়ে।

–“ওহ। অনেক ধন্যবাদ আপনাদেরকে। এতো কিছু করলেন আমার জন্য।

–“এটা কিছুই না। এখন বলো তোমাদের বাসা কোথায়? খবর পাঠাতে হবে তো যে তুমি এখানে আছো।

আশা তখন ঢোক গিললো। বাসা থেকেই তো পালাতে চাইছিলো সে। এখন আবার কি সেই বাসাতেই ফিরে যেতে হবে? না, ও আবার ফিরতে চায় না সেখানে।

তখন মহিলাটি আবার বললেন।

–“কি হলো, বলো তুমি কোথায় থাকো?

–“আসলে আমার কোনো বাড়ি নেই।

–“মানে?

–“আমি এতিমখানাতে বড় হয়েছি। সেখান থেকেই পড়ালেখা শেষ করে এক স্কুলে জব নেই। আমাদের এলাকার এক প্রভাবশালী লোক আমাকে বিয়ে করতে চান, উনার স্ত্রী থাকার পরেও। আমি বিয়েতে রাজি ছিলাম না, তাই পালিয়ে যাচ্ছিলাম। তখনই উনার গুন্ডারা আমার পিছু নেয়। আর পালাতে গিয়ে আমি একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খাই।

কথাগুলো বলেই মন খারাপ হয়ে গেলো আশার। কারন একসঙ্গে এতোগুলো মিথ্যে কখনো বলেনি সে।

–“আচ্ছা বুঝলাম। কি নাম তোমার? (মহিলাটি বললেন)

–“দিপা।

–“শোনো দিপা, তোমার কি কেউ পরিচিতই নেই যাকে তোমার খবর জানাতে পারি আমরা?

–“জ্বী আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওরা আমি কোথায় একথা জানতে পারলে ঐ লোকটিও জানতে পারবে।

–“হুম। আচ্ছা, তোমার সাথে পরে এ ব্যাপারে কথা বলবো। তুমি এখন বিশ্রাম নাও।

তারপর রাতে ও বাসায় অন্য একঘরে আশাকে নিয়ে আলোচনা বসে। আলিফের মা, যিনি আশার সঙ্গে কথা বলেছিলেন সন্ধ্যায়, আশার ব্যাপারে সব বলেন সবাইকে। শুনে আলিফের বাবা বলেন।

–“মেয়েটার কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। ও ওর আসল পরিচয় দেয়নি, এমনকি ওর নাম যে দিপা, এটাও আমার মিথ্যাই মনে হচ্ছে। আলিফ, তুই কালকে মেয়েটার একটা ছবি নিয়ে থানায় জিডি করে আসবি।

এদিকে আশার বাবাও আশা হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করে এসেছিলেন। আলিফ যদি থানায় জিডি করে আসে, তবে পুলিশি তদন্তে আশার আসল পরিচয় বেরিয়ে আসবে। আশাকে ফিরে যেতে হবে ওর বাবার বাসায়, যেখান থেকে পালিয়ে যাবার জন্য ও এতো কিছু করলো। এরপর বাকি জীবনটুকু আশাকে ভাইদের সংসারে লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মধ্যে বা একা একা নিঃসঙ্গভাবে কাটিয়ে দিতে হবে। এভাবেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে আশার গল্প।

কিন্তু এটাই কি ঘটতে চলেছে আশার ভাগ্যে?
.
.
চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here