গল্প :- সঙ্কোচ
পর্ব :- ০২
লেখা :- কাব্য আহম্মেদ
.
.
-:”মিরা সকালে রুমের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়েই দেখলো কাব্য দাঁড়িয়ে আছে। মিরাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো সে। তারপর মিরার কানে কানে বলতে লাগলো,

–“তুমি এমন কেন করলে মিরা আমার সাথে। তুমি জানো না, তোমাকে ছাড়া আর কাউকে চাই নি আমি?

মিরাও তখন চুপচাপ কাব্যর বাহুডোরে বাঁধা রইলো কিছুক্ষণ। এরপর আস্তে আস্তে বললো।

–“একটা কথা বলবো তোমায়।

–“কি কথা?

তারপর মিরা রাত্রেও সবটা খুলে বললো কাব্যকে। এটা শুনে কাব্য যেন মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলল, বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে রইলো মিরার দিকে। তখন কোনোরকমে শুধু একবার বললো।

–“কি বলছো এসব?

–“সব সত্যি বলছি।

কাব্য তখন ম আর দাঁড়ালো না। মিরাকে সাথে নিয়ে তখনই বেরিয়ে পড়লো ডাক্তারের চেম্বারের যাওয়ার জন্য, নাস্তা না করেই।

তারপর ডাক্তার সব শুনে কিছু টেস্ট দিলেন। টেস্টের রেজাল্ট হাতে পেতে বিকেল হয়ে যাবে। মিরা আর কাব্য বাসায় ফিরলো না, পার্কের বেঞ্চে গিয়ে বসে রইলো দুজনে চুপচাপ। টেস্টের রেজাল্ট না দেখে বাসায় ফিরবে না তারা।

পার্কের বেঞ্চে চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ কাব্য মিরাকে জিজ্ঞেস করলো।

–“তোমার ‘মনে আছে মিরা, এখানেই আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো?

–“হ্যাঁ।

–“তুমি হুমায়ুন আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ পড়ছিলে।

–“‘আর তুমি হাভাতের মতো এসে জিজ্ঞেস করলে, এখানে একটু বসতে পারি?’

কাব্য তখন সাথে সাথেই হেসে ফেলল। এরপর হাসি থামিয়ে বললো।

–“সব কেমন বদলে গেল, তাই না?

মিরা আর কিছু বললো না।

তখন কাব্য হঠাৎ মিরার হাত ধরে বললো।

–“আমি কিছুই বদলাতে দেবো না মিরা। আশার সাথে সম্পর্ক করি নি আমি। ওকে আমি তালাক দেবো। আবার শুধু আমরা দুজন, তুমি আর আমি, এর মাঝে কেউ আসবে না। (কাব্য)

ঠিক এ ভয়টাই পাচ্ছিলো মিরা। কাল সারারাত এ নিয়েই ভেবেছে সে। আশা মেয়েটার কষ্টের শেষ নেই। মিরার পাশে তো তাও কাব্য ছিলো তার দুঃখের ভাগীদার হয়ে, কিন্তু আশার পাশে কেউ ছিলো না। তার বাবার সংসারে আসল চালক ছিলো দুভাই, দুজনেই আশাকে বোঝা মনে করে দূরে দূরে ঠেলেছে। কাব্যর সাথে বিয়েতেও তার মত ছিলো না, মিরাই জোর করে রাজি করিয়েছে তাকে।

এখন যদি আবার ডিভোর্সের কলঙ্ক লাগে, মেয়েটা আর বাঁচবে না। এতো বড় জুলুম কি করে মিরা করবে মেয়েটার উপর?

মিরা তখন কাব্যকে বলল।

–“‘আচ্ছা কাব্য যদি সত্যি আমি কনসিভ করি, তবে আমায় কোনো গিফট দিবে না?

–“‘অবশ্যই। তুমি যা চাইবে তাই দিবো। বলো কি চাও?

–“‘আশাকে ডিভোর্স দেবে না তুমি।

–“কেনো? (অবাক হয়ে বললো কাব্য)

–“মেয়েটার এমনিই অনেক কষ্ট। আর ওর কষ্ট বাড়াতে চাই না।

–“‘ঠিক আছে, দিবো না। কিন্তু ও আমার কাছে স্ত্রীর মর্যাদা পাবে না, সাধারণ ফ্যামিলি মেম্বার হয়েই থাকতে হবে ওকে।

–“আচ্ছা তা পরে দেখা যাবে।
.
.
.
তারপর বিকেলে ওরা টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে গেল ডাক্তার কাছে। ডাক্তার উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো…

–“বাহ: কংগ্রেচুলেশনস। আপনি তো মিরাকল মম। সত্যি সত্যি কনসিভ করেছেন আপনি।

–“আমি আসলে বুঝতে পারছি না ডক্টর, এটা কিভাবে সম্ভব। (কাব্য)

–“খুবই সম্ভব। যদিও রেয়ার, তবুও এমন কেস ঘটে থাকে। এমনও দেখা গেছে যার মা হওয়ার সম্ভাবনাই নেই সেও গন্ডা গন্ডা বাচ্চা নিয়ে জীবন পার করেছে। আসলে আমাদের ওপরেও তো একজন আছেন, তার লীলা বোঝার ক্ষমতা তো আমাদের নেই।
.
.
তারপর কাব্য আর মিরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় ফিরলো, খুশির খবরটা সবাইকে তাড়াতাড়ি দিতে চায় তারা।

তারপর বাসায় ফিরে ওদের খুশীর খবর শুনে পরিবারে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। মা-বাবা খুশিতে ওদের জড়িয়ে ধরলেন। একের পর এক ফোন আসতে লাগলো কংগ্রেচুলেশনস জানিয়ে। প্রতিবেশীরাও এসে ভিড় করলেন বাড়িতে। কাব্যর বাবা বেরিয়ে পড়লেন, দশ কেজি মিষ্টি কিনে বিলিয়ে তবেই বাড়ি ফিরবেন।

তখন মিরা দেখলো এ খুশির দিনেও একজনের মন খারাপ, সে আশা। ব্যাপারটা বুঝতে পারলো সে। আসলে আশার বিয়েটাই হয়েছিলো মিরার বেবি হচ্ছে না সে জন্য। এখন যদি মিরা কনসিভ করে, তবে তো বিয়েটার কোন ভিত্তিই থাকে না। আশার ভয় পাওয়া বা মন খারাপ করাটা স্বাভাবিক।

কিন্তু তখন একটা কথা উঁকি দিলো মিরার মনে। ডুবতে থাকা মানুষও তো খড়কুটো পেলে আঁকড়ে ধরে। আশা কি তার শেষ আশ্রয়টুকু বাঁচানোর চেষ্টা করবে না? কিন্তু শুধু একটা উপায়েই তা করা যাবে, তা হলো মিরার বেবিটার ক্ষতি করে। আশা যদি মিরার বেবির খারাপ কিছু করে?

“ছিঃ, এসব কি ভাবছি’, নিজেকে নিজেই বকছে মিরা, ‘আশা এমন মেয়েই না। ও খুব ভালো। ও কিছুই করবে না আমার।’

কিন্তু চিন্তাটা বারবারই ঘুরতে লাগলো মিরার মনে, কোনোভাবেই ওটাকে তাড়াতে পারলো না।

এখন মাঝরাত। মিরা কাব্যর পাশে শুয়ে আছে। সন্ধ্যাতেই কাব্য আশাকে গেস্টরুমে পাঠিয়ে দিয়েছিলো, সে এখন থেকে এ বাসায় থাকবে সাধারণ পরিবারের সদস্য হিসেবে, কাব্যর বউ হিসেবে না।

মিরা অনেকক্ষণ জেগে ছিলো। তার এতো দিনের স্বপ্ন, আকাঙক্ষা পূরণ হচ্ছে, খুশিতে তার চোখে ঘুম আসছিলো না। এবার তার নিজের এক বাবু হবে। বাবুটা হাসবে, খেলবে, ছোট ছোট হাত পাগুলো ছুড়তে থাকবে, সে বাবুটাকে কোলে নিয়ে ঘুরবে, একদম ছোট্ট সুন্দর পুতুলের মতো হবে বাবুটা। সে একমুহূর্ত ও কোল ছাড়া করবে না তার পুতুলটাকে। এসব ভাবতে ভাবতেই কখন তার চোখ লেগে এলো, বুঝতে পারলো না।

হঠাৎ মাঝরাতে কিসের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল মিরার। দেখল তার বিছানার পাশে অন্ধকারে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। মিরা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো।

–“কে? কে ওখানে?

কিন্তু কোনো উত্তর এলো না।

রুমের অন্ধকার চোখে একটু সয়ে আসতেই ওকে চিনতে পারলো মিরা। আশা। একদৃৃষ্টিতে মিরার দিকে তাকিয়ে আছে সে।

মিরা খুব ভয় পেল, প্রচন্ড ভয়। তখন ও ফিসফিস করে বললো।

–“আশা, তুমি কেন এসেছো এখানে?

কিন্তু আশা কোনো কথা বললো না। কেবল তার হাতটা সামনে এগিয়ে আনলো। মিরা দেখলো তার হাতে কিছু একটা চকচক করছে। একটা তীক্ষ্ণ ধারালো ছুরি। আতঙ্কে মিরা পাথরের মতো জমে গেল, চিৎকার করবার সময়টুকুও পেল না।

আশা ছুরিটা দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে আমূল বিধিয়ে দিলো মিরার পেটে- যেখানে তার ছোট বাবুর ভ্রূনটা পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলো।
.
.
চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here