সংসার
লেখা:রাইসা
পর্ব:৬+৭

– রাজ কাগজটা হাতে নিয়েই দেখে মৌ এর পেগন্যান্সি রির্পোট। রাজের মাথায় রক্ত উঠে যায়।
– রাজ রির্পোট নিয়ে দৌড়ে বের হয়। রাজের মন চাচ্ছে কালনাগিনীটাকে এখনি মেরে ফেলি। রাজ রুম থেকে বের হয়েই দেখে, মৌ নামাযের মোনাজাতে। মোনাজাত শেষ করে যখন জায়নামায থেকে উঠে দাঁড়ায়। রাজ তখনি মৌ এর গালে সজোরে থাপ্পর বসিয়ে দেয়। মৌ মাথা ঘুরে জায়নামাযে পড়ে যায়। নাক ফেটে রক্ত জায়নামাযে পড়তে লাগে । মৌ এক হাতে নাক চেপে ধরে রাজের দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকায়। রক্তে হাত ভেসে যাচ্ছে।

– এই তুই কার সাথে পেট বাজিয়েছিস? আর কার সন্তান আমাকে গছিয়ে দিতে চাইছিস?

– মৌ কিছু বলতে পারছে না। ফ্যালফ্যাল করে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে।
– এই এভাবে তাকাবি না। তোর নষ্ট মুখ আমার দেখতে মন চাচ্ছে না। আমারটা খাস আমারটা পড়িস,। আমার বাড়িতে থাকিস তার পর অন্য ছেলের কাছে নিজের দেহ বিলিয়ে দেস।

– আপনি প্লিজ চুপ করেন। আমার গর্ভে যে সন্তান এটা আপনার কয়েক মিনিটের ভালোবাসার ফসল।
-এই চুপ কর, নষ্টা মেয়ে। আমি তোকে নিজ হাতে পিল খাইয়েছি। আর তুই কি না বলিস তুই প্রেগনেন্ট! একটা পাগলেও বলবে তোর গর্ভে একটা জারজ সন্তান।
– প্লিজ চুপ করবেন আপনি? আল্লার শপথ করে বলছি আমার গর্ভে যে সন্তানটা সেটা আপনারই। আপনি সেদিন যখন আপনি আমাকে পিল খাওয়ানোর জন্য পিল মুখে তুলে দেন। আমি তখন পিলটাকে খায়নি মুখেই রেখেছিলাম। পারিনি সেদিন পিল নামক ছোট্ট বিষটা আমার ভেতর জন্ম নেওয়া একটা জীবনকে হত্যা করতে। আমি পারিনি, আপনার দেওয়া পিল খেতে। আর আমার গর্ভে যে সন্তান বড় হচ্ছে সেটা আপনারই সন্তান। ভয় পাবেন না চুক্তি শেষ হলে চলে যাবো। আপনাকে আমার গর্ভের সন্তানের পরিচয় দিতে হবে না। তবুও জারজ বলবেন না। জন্মের আগে ওর নামে মিথ্যা অপবাদ আল্লাহ সহ্য করবে না। আর বিশ্বাস করেন আপনি ছাড়া কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আপনি আমাকে রক্ষীতা বা পতিতা যা কিছুই ভাবেন না কেন। আমি আপনাকে স্বামী হিসেবেই ভাবি। যতদিন চুক্তি আছে। ততদিন আপনি আমার স্বামী। মহান আল্লাহ তায়ালাকে সাক্ষী রেখে আপনাকে বিয়ে করেছি।

– মৌ এর মুখে এমন কথা শুনে, সুমাইয়া অগ্নি মূর্তি ধারন করে। মৌ এর বামগালে সজোরে থাপ্পর বসিয়ে দেয়।
– মৌ সুমাইয়াকে কিছু না বলে রাজের দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকায়। নিজের স্বামীর সামনে অন্য একটা মেয়ে তার গায়ে হাত তুলল। তাতে রাজের দৃষ্টিপাত হলো না। মৌ এর চোখের পানি আর বাধা মানলো না। চোখের পানি মুক্তোর দানার মতো টপটপ করে পড়ছে।

– বাহ! বাহ! দেখছো জান কেমন কান্নার অভিনয় করছে? আরে চুক্তি করছো ভালো কথা তাই বলে পেটে বাচ্চা নিতে হয়?আর শোনেন মিস মৌ রাজ জন্মগত ভাবেই আমার সম্পত্তি। আমার জান। আমরা পরিবার মেইনটেন করে খুব শ্রীঘই বিয়ে করছি। নেক্সটাইমে স্বামীর অধিকার নিয়ে রাজের দিকে হাত বাড়াবে না। রক্ষিতা, রক্ষিতার মতো থাকবে। চলো যান সময় নষ্ট হচ্ছে। জানি না কবে আমার জানকে সম্পূর্ণ আপন করে পাবে। আমার অনেক ভয় হয়। যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি। তাহলে আমি বাঁচবোই না।
– রাজ সুমাইয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলল’ কি রকম অলক্ষণে কথা বলছো। তোমার কিছু হলে আমি কি করে বাঁচবো।

– আচ্ছা চলো রুমে যাবো। আবার বাসায় যেতে হবে।

– সুমাইয়া আর রাজ তাদের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। দরজা বন্ধ করে দিয়েই সুমাইয়া রাজকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল বিছানায়। রাজের বুকের উপর শুয়ে রাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
– আচ্ছা সুমাইয়া তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেন?
– কই না তো ভালোবাসি না। তবে কি জানো রাজ? আমি যতবার নিঃশ্বাস নেয় তার চেয়ে বেশীবার আমার জানপাখিটাকে মিস করি। তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো তাহলে আমি সত্যি মরে যাবো। বিদেশের মাটিতে যখন ছিলাম তখন তোমার একটি ছবি বুকে নিয়ে ঘুমাতাম। আমার মনে হতো তুমি আমার সাথেই আছো। প্রতিনিয়ত তোমাকে মিস করতাম। জানো, জান তুমি কখনো ছেড়ে যেতে চাইলে আমায় গলা টিপে মেরে ফেল। তার পর ছেড়ে যেয়ো। আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে হারাতে পারবো না। সুমাইয়া কথাটা বলেই কেঁদে দিল। রাজের বুকের ভেতরটা কেমন যেন চিনচিনে ব্যথা করতে লাগল। সুমাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল ‘ পাগলী আমার। আমি মরে গেলেও আমার আত্মাটা তোমায় ভালোবাসবে। ‘
– মরতে হবে না, এই বলে সুমাইয়া তার ওষ্ঠ যোগল, রাজের ওষ্ঠযোগলকে সাদরে আলিঙ্গন করে নিল। দু’জনেই পান করল ভালোবাসার অমীয় সুধা।

– আচ্ছা রাজ তুমি কি যাদু দেখবা?
– যাদু সেটা আবার তুমি ক্যামনে?
– বলো দেখবে কি না?
– আচ্ছা তুমি কি আমেরিকা থেকে যাদু শিখে আসছো?
– রাগাবা না কিন্তু।
– রাগালে কি করবে?
– রাগালে কামড় দিবো।
– আচ্ছা কামড় দিতে হবে না। দেখাও যাদু।

– সুমাইয়া আস্তে আস্তে বুকের কাপড় সরাচ্ছে।
– এই এই কি করছো কাপড় খুলছো কেন?
– আহা যাদু দেখতে সময় কথা বলতে হয় না। চুপ করে দেখো।
– সুমাইয়া বুকের কাপড়টা অনেক সরাতেই রাজ দেখলো পেলো, সুসাইয়ার বুকের উপর ট্যাটু করা। রাজ মাই হার্ট!
– রাজ দেখেই কেঁদে ফেলল। কান্নাজনিত কন্ঠে বলল’সুমাইয়া এতো ভালোবাসো আমায়?
-কই ভালোবাসি না তো। আমি আমাকে ভালোবাসি। তুমি যে আমার জান। তোমাকে ছাড়া বাঁচব ক্যামনে?

-হুম আমাকে নিয়েই বাঁচবে। আর শোনে তিন থেকে চারমাসের মাঝেই প্ল্যান সাকসেস হবে। মা বলছে তার শেয়ার আমার নামেই লিখে দিবে। তখন মা আর আমার সিদ্ধান্তের উপর কথি বলতে পারবে না। মৌকে ডির্ভোস দিয়ে দিবো। সত্যি বলতে মৌ এখন দাবার গুটি। ওকে দেখে শুনে চালতে হবে।

-হুম মাই জান। এখন আদর করো। পাপ্পি দাও।

– এদিকে মৌ নাকে মুখে পানি দিয়ে অন্য রুমে বসে আছে। মৌ পেটে হাত দিয়ে বলছে এই তুই শুনতে পাচ্ছিস? শুনতে পাচ্ছিস তুই? মা’র কথা শুনতে পাচ্ছিস? শোন না, তোর বাবাইয়ের কথায় রাগ করিস না কেমন? তোর বাবাইটা অনেক রাগি তাই না? আর হে শোন তুর বাবাই তোকে কোন কিছু বললে কান ধরে থাকবি। শুধু আমার কথা শুনবি মনে থাকবে? আর কাঁদবি না কেমন। তুই যদি কাঁদিস তাহলে আমিও কেঁদে দিবো। এই বলে মৌ ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। চোখের পানি আল্লাহ যে কত দিয়েছে, শুনেছি মা জন্ম দেওয়ার পরই দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে। মায়ের দুধটাও আল্লাহ আমার ভাগ্য রাখে নাই। জন্ম নেওয়ার পর পরই নাকি গগণ বিদায়ী কান্না করেছিলাম। আচ্ছা হে আসমান জমিনের প্রভু আমাকে কাঁদাতে কি তোমার ভালোলাগে? যদি ভালো লাগে সহ্য করবার ক্ষমতা দিয়ে আমি তোমার খুশির জন্য আমৃত্যু কেঁদে যাবো। আর মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় দাদির প্রতি ছোটবেলা বাবা যখন গলা চেপে ধরেছিল। তখন কেন বাঁচিয়েছে। অপয়া মেয়েদের বাঁচতে হয় না। অপয়া কারনেই মা’কে জন্মের পরপরই বাবার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছি। যে বাবা আমাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন দেখেছিল সে বাবাকেই কষ্ট দিয়েছি। বাবা আজও আমাকে মায়ের হত্যাকারী ভাবে। যদি আমি পৃথিবীতে না আসতাম তাহলে নাকি মা মরতো না।

– এদিকে মৌ এর পাশে রাখা তার ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বাজছে। ফোনটা একবার রিং হতেই দ্বিতীয়বার মৌ চোখের পানি মুছে ‘ ফোনটা রিসিভ করেই বলল’ মা আসসালামু আলাইকুম, আপনি কেমন আছেন?’
– হ্যাঁ মা তোর দো’আতে ভালই আছি। আমার মা টা কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ্! মা আপনার শরীর কেমন?
– ভালো। আচ্ছা রাজ কোথায়? বাসায় না অফিসে?
– মা রাজ বাসায় আমারর একা একা থাকতে কষ্ট হবে বলে রাজ অফিসে যায়নি।
– তাই বুঝি, সত্যিই মা আমি যা বাইশ বছরে পারিনি। তুই তা কয়েকদিনেই করে দেখিয়েছিলি। তোর প্রতি আমার বিশ্বাস ছিল। আচ্ছা হাদারামটা খেয়েছে? আর তুই খাইছিস মা?
– হ্যাঁ মা, জানো আজকে রাজ বিরিয়ানি এনেছিল। ওই নিজে হাতে আমাকে খাইয়ে দিয়েছে। বলেই মৌ আর কান্না আকঁটাতে পারলো না ফোন ধরেই চাঁপা কান্না করে দিল।

– কি হলো? মা তুই কাঁদছিস?
– না মা আপনার আর রিত্তের জন্য মন খারাপ লাগছে। তাই একটু।
– ধূর পাগলী কাঁদে না! আমরা তিন -চারদিন পর এসে পড়বো।
– আচ্ছা মা। নামায পড়বো। এখন রাখি।

.
ফোনটা কেটে দিতেই চোখ যায় তাদের রুমের দিকে। দরজাটা এখনো আঁকটানো। মনে হচ্ছে কেউ মৃত্যুর যন্ত্রনা দিচ্ছে। বাঙালি মেয়ে সব পারলেও নিজের স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না । হঠাৎ ঘড়ির কাটা জানান দিল, দু’টা বাজে। মৌ তাড়াহুড়া করে অযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। নামায শেষ করে রুম থেকে বের হতেই দেখে, রাজ আর সুমাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।
– কিছু বলবেন আপনি?
– রান্না করছো?
– নামায শেষ করলাম। আপনারা একটু বসেন আমি রান্না করে নিয়ে আসছি।
– কি! তার মানে এখনো রান্না হয়নি?
– রাজ এই মেয়েকে তুমি বাড়ির রাণী করে নিয়ে আসছো?এই শোন আধা ঘন্টার মাঝে যেন রান্না করে নিয়ে আসা হয়। না হলে তোর কাপড় গা থেকে খুলি পেটাবো। ক্ষুধারে আমার পেট জ্বলে যাচ্ছে।

চলবে””””’
সংসার
পর্ব:৭
লেখা:রাইসা

বাঙালি মেয়ে সব পারলেও নিজের স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না । হঠাৎ ঘড়ির কাটা জানান দিল, দু’টা বাজে। মৌ তাড়াহুড়া করে অযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। নামায শেষ করে রুম থেকে বের হতেই দেখে, রাজ আর সুমাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।
– কিছু বলবেন আপনি?
– রান্না করছো?
– নামায শেষ করলাম। আপনারা একটু বসেন আমি রান্না করে নিয়ে আসছি।
– কি! তার মানে এখনো রান্না হয়নি?
– রাজ এই মেয়েকে তুমি বাড়ির রাণী করে নিয়ে আসছো?এই শোন আধা ঘন্টার মাঝে যেন রান্না করে নিয়ে আসা হয়। না হলে তোর কাপড় গা থেকে খুলি পেটাবো। ক্ষুধারে আমার পেট জ্বলে যাচ্ছে। মৌ কিছু না বলে চলে গেল। শরীরটাও খারাপ লাগছে মাথাটা কেমন যেন জীম জীম করছে। তবুও তাড়াহুড়া করে রান্না করে যাচ্ছে আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। যেন রান্নাটা শেষ করতে পারে। কিন্তু কেমন যেন সময় যাচ্ছে শরীরটা আরো অস্তির হয়ে আসছে। আজ শরীর থেকে অনেক ব্লাড গিয়েছে। শরীরটা যেন ক্রমশ অবস হয়ে আসছে। চোখ দু’টি বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও রান্নার কাজ করে যাচ্ছে মৌ। কিন্তু আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। মৌ রান্না ঘরের মেঝেতে বসে পড়ল। বসে পরে শরীরটা নিয়ে আর দাঁড়ানোর ক্ষমতা পেল না। চোখ দু’টি কখন যে বন্ধ হয়ে গেছে খেয়াল নেই।
– এদিকে সুমাইয়া রাজের বুকে শুয়ে শুয়ে বলছে ‘ জান তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেন?
– এতো সুন্দর বউ এর দিকে ফিরেও তাকাও না।
– কি বলো? সুইট হার্ট আমার চোখে তুমিই পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। তুমি আমার নিশ্বাস।
– হুম আমার জান। লাভিউ। জান আমার না ক্ষুধা লাগছে। প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল রক্ষিতাটার এখনো খবর নেই।
– সুইর্ট হার্ট রাগ করো না। দেখছি বিষয়টা কি ।
– তোমার যেতে হবে না। আমি দেখছি।
– সুমাইয়া রাজের কপালে চুমু দিয়ে চলে গেল রান্না ঘরে। রান্না ঘরে তাকিয়ে দেখে কোথাও মৌ নেই।
– সুমাইয়া জোরে জোরে রাজকে ডাকতে লাগল। এই রাজ তুমি কোথায় দেখে যাও তোমার ভাড়া করা মেয়েটা পালিয়েছে। রাজ দৌড়ে রান্না ঘরে আসে। সত্যিই তো রান্না বসিয়ে রেখে কোথায় গেল। হঠাৎ সুমাইয়ার চোখ রান্না ঘরের মেঝের দিকে তাকাতেই দেখে মৌ অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে।
– রাজ দেখছো সামান্য কাজ দেখেই অসুস্থতার বান ধরেছে।
– সুমাইয়া চুপ করো। দেখি কি হয়েছে। রাজ মৌ এর কাছে বসতেই বুঝতে পারলো মৌ অজ্ঞান হয়ে গেছে।
– রাজ মৌকে কুলে নিয়ে বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়। সুমাইয়া এসব দেখে রাগে ফুলসে ওঠছে।

– হঠাত সুমাইয়ার ফোনটা বাজতে লাগে। সুমাইয়া ফোন ধরেই বললো বাবা?
– মারে তুই কোথায় আছিস?
– বাবা রাজের সাথে তাদের বাসায়।
– মা’ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
– সুমাইয়া ফোন কেটে দিয়েই বললো ‘ জান এখন আসি। কাল সারাদিন তোমার সাথে থাকবো। মনে হয় বাবার শরীরটা আবার খারাপ করেছে। আমি আসি কেমন?
– এই বলেই সুমাইয়া রাজকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলল’ আসি জান?
– আচ্ছা।
– সুমাইয়া যখন চলে যাবে এমন সময় রাজ সুমাইয়ার হাতটা ধরে টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল এবার যাও।
– সুমাইয়া মুচকি হেসে চলে গেল।
– সুমাইয়া চলে গেলে রাজ এর দৃষ্টি পড়ল মৌ এর উপর। মৌ এর ফর্সা গালটা লাল হয়ে আছে। গালের ভেতর বুঝা যাচ্ছে পাঁচ আঙুলের ছাপ। রাজ কি করবে বুঝতে পারছে না। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে সত্যি মায়া লাগছে। মুখটা মায়াবী লাগছে। নাকে এখনো রক্ত জমাট বেঁধে আছে। না এভাবে থাকলে যদি মেয়েটা মারা যায়। জানি না মেয়েটা কেন যেন সন্তান কন্সিভ করলো। বাচ্চাটা কি নিয়ে আমাকে ফাঁসাতে চাইছে । না আপাতত দেখি জ্ঞান ফিরাতে পারি কি না।
– রাজ পানি নিয়ে এসে মৌ এর মুখে ছিটিয়ে দিতেই মৌ মিটিমিটি করে তাকালো। মৌ চোখ খুলেই প্রথমে রাজের মুখটা দেখতে পারলো। মৌ বুঝতে পারলো তার মাথাটা রাজের উরুতে।

-খুব লজ্জা লাগছে মৌ এর! সারাদিনের নির্যাতন। রাজের থাপ্পর যেনো রাজের মুখের দিকে তাকাতেই সব ভুলে যায় মৌ। মৌ এর হাতটা রাজ ধরতেই চমকে যায়। হাত-একদম হিম শীতল হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ল ছোটবেলায় শুনেছে মানুষ মরে যাওয়ার আগে নাকি শরীর একদম বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। এদিকে মৌ এর হাত-পা তো বরফের মতো হয়ে যাচ্ছে। মৌ যদি সত্যিই মরে যায় তাহলে কেমন হবে? না এ হতে দেওয়া যাবে না। এদিকে মৌ এর শরীরে কাঁপনি দিয়ে জ্বর আসছে। রাজ রান্না ঘর থেকে সরিষার তেল এনে, মৌ এর হাতে পায়ে লাগাচ্ছে। তার পরও মৌ এর শরীর গরম হচ্ছে না। কাঁপুনি যেন বেড়েই চলছে। মৌ জ্বরে আর তাকাতে পারছে না। মনে হচ্ছে দিনে চর আর রক্ত যাওয়ার জন্য জ্বর এসে পড়ছে। রাজ মৌ এর উপর কম্বল জড়িয়ে দিয়ে হাত পায়ে তেল মালিশ করতে লাগল। কিন্তু শরীর গরম হওয়ার কোন নাম নেই। এদিকে হসপিটালে নিতে গেলেও তিন ঘন্টার মতো লাগবে। রাতো অনেক হয়ে গেছে। হঠাৎ মনে পড়ল পুরুষের স্পর্শে মেয়েদের শরীর গরম হয়। রাজ কোন কিছু চিন্তা না করেই কম্বলের ভেতর ঢুকে গেল। মৌ এর শরীরটা কাপঁছে। রাজ মৌকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তারপরও মৌ এর কাপনি কমছে না। রাজ এবার মৌ এর উর্বর ঠোঁটে তার ঠোঁট খানা মিলিয়ে হারিয়ে গেল অন্য ভূবনে। মৌ কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে। এদিকে এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর মৌ এর শরীরটা অনেকটা গরম হয়ে যায়। রাজ এবার মৌকে ছাড়তে চেয়েও ছাড়তে পারছে না। কোন এক অজানা মায়ার যেন আকঁটে যাচ্ছে। মৌ ঘুমের ঘরেই রাজকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরল। রাজও রেসপন্স করল। রাজের কাছে কেমন যেন লাগছে। নিজেকে মাতাল মাতাল লাগছে। চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এসেছে।

-সকাল বেলা মৌ এর ঘুম ভাঙতেই দেখে কোন এক প্রাচীরে সে আবদ্ধ। যে প্রাচীরে সে সারাজীবন থাকতে চাই। প্রাচীরটা আর কোন কিছুই না রাজের বুক। মৌ তার সকল কষ্ট ভুলে গেছে। দিনে রাজ আর সুমাইয়া কি বললা তার মনে নেই। মনে হচ্ছে রাজের বুকটা তার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মৌ এর চোখে জল এসে যায় কাঁদতে কাঁদতে রাজের শার্টটা ভিজে যায়। রাজ সজাগ পেয়েই দেখে মৌ তার বুকে। রাজ মৌকে বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে ‘ সরি আমি ইচ্ছা করে করিনি এসব। কাল রাতে আপনার শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তাই এসব করি। মৌ কিছু বলে না। লজ্জায় তার মুখটা লাল টুকটুকে হয়ে যায়। রাজেরর হঠাত করেই মনে পড়ে সুমাইয়ার কথা। সে আজ রাতে কি করলো?এটাতো তার আমানত। সুমাইয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

-সকাল বেলা রাজ শাওয়ার নিতে চলে যায়।
– রাজ শাওয়ার নিয়ে বের হতেই মৌ শাওয়ার নিতে চলে যায়।
-মৌ শাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখে, রাজ নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি পরেছে। রাজকে দেখে মৌ প্রেমে পড়ে যায়। হঠাত মৌ এর মনে পড়ে, সে মিথ্যা স্বপ্ন দেখছে। আকাশের চাদ যে আর ধরা যায় না। তাকে দূর থেকেই দেখা লাগে।
– হঠাৎ রাজ মৌ এর দিকে তাকিয়েই চিৎকার দেয়।
-মৌ তার দিকে চেয়েই দেখে গোসল নিয়ে যে টাওয়াল পরেছে তা ফ্লরে। মৌ এবার এক চিৎকারে চেঞ্জিং রুমে চলে গেল। কোন রকম গায়ে কাপড় জড়িয়ে বের হতেই, রাজ মৌ এর গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো’রাত্রে যা করেছি তা সবকিছু তোকে বাঁচাতে। এ ভাবে সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন হয়ে আমাকে তোর বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রদর্শন করালে কি আমি তোর প্রেমে পড়ে যাবো?রাজ কখনো রাস্তার রক্ষিতার দিকে ফিরেও তাকায় না। আর হ্যাঁ কোনদিন যদি আজকের মতো করতে দেখি, তাহলে তোর কি হবে আল্লাহ জানে। রক্ষিতা কথাকার।

– রাজের মুখে রক্ষিতা কথাটা শুনে মৌ এর গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। মৌ কান্না থামাতে পারছে না। কান্না জড়িত কন্ঠে বলল’ আপনি তো জানেন আমি শাড়ি পরতে পারি না । আর টাওয়াল তো আরো পরতে পারি না। এমন সময় পিছন থেকে কে যেন বললো’কি হয়েছে জান? রক্ষিতাটা তোমায় কিছু বলেছে।

চলবে ””

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here